আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ আপনাকে স্বাগতম

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ 1
মুহতারাম, আস-সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: নামাজ শিক্ষার জন্য আমার একটি ভাল বই দরকার।
24 Dec 2025
আস-সুন্নাহ পালিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে, মা-শা-আল্লাহ। সংগ্রহ করুন।
প্রশ্নঃ 2
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্নটা হলো আমি (ছেলে) তাকবিরে তাহরিমাতে হাত কতদূর উঠাবো? আপনি কোনটার পরামর্শ দেন? আর আপনি personally কতটুক পর্যন্ত হাত উঠান? জানালে উপকৃত হতাম! জাযাকাল্লাহ খাইর!!!
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তাকবীরে তাহরীমাতে হাত কাঁধ কিংবা কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। যে কোন একটি পদ্ধতিতে আমল করলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। নিচের হাদীসদুটি দেখুন: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِىُّ وَسَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِى شَيْبَةَ وَعَمْرٌو النَّاقِدُ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ وَابْنُ نُمَيْرٍ كُلُّهُمْ عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عُيَيْنَةَ – وَاللَّفْظُ لِيَحْيَى قَالَ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ – عَنِ الزُّهْرِىِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ مَنْكِبَيْهِ وَقَبْلَ أَنْ يَرْكَعَ وَإِذَا رَفَعَ مِنَ الرُّكُوعِ وَلاَ يَرْفَعُهُمَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ. অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখেছি, যখন তিনি সালাত শুরু করতেন তখন দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন…। সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৮৭। حَدَّثَنِى أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِىُّ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ نَصْرِ بْنِ عَاصِمٍ عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ فَقَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ. অর্থ: মালিক ইবনে হুয়াইরিস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. যখন তাকবীর দিতেন তখন দুই হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন…। সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৯১। উপরের হাদীসদ্বয় দ্বারা স্পষ্ট যে, যে কোন পদ্ধতিতে হাত উঠালেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। তবে কান পর্যন্ত উঠালে উভয় হাদীসের উপরই আমল হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ 3
সালাত বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন বইগুলো (বাংলা) দেখতি পারি? এ বিষয়ে আপনার বই কবে বাজারে আসবে?
24 Dec 2025
নিরপেক্ষ ভাবে লেখা বাংলা নামাযের বই চোখে পড়ে না। এই বিষয়ে আস-সুন্নাহ পালিকেশন্স থেকে একটি বই শীঘ্রই বাজারে আসবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ 4
আসসালামু আলায়কুম । শাইখ আসরের সলাত কখন পড়া উত্তম? আমার কাছে একটা সলাতের চিরস্হায়ী সময়সূচি আছে, সেখানে আসরের সলাত আমাদের দেশের আযানের প্রায় একঘণ্টা পূর্বে হয় এবং আমি একটা হাদিস পড়েছি, সেখানে ফজরের ও আসরের সলাত দ্রুত আদায় করতে বলা হয়েছে । এক্ষেত্রে আসরের সলাত কখন পড়ব?
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আসরের সালাত মসজিদে জামাআতের সাথে আদায় করবেন ।উল্লেখিত দুটি সময়ের যে কোন সময় আসরের সালাদ আদায় করা যায়। তবে সর্বাবস্থায় জামাআতের সাথে আদায় করা জরুরী।
প্রশ্নঃ 5
মুহতারাম, আস-সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: এলাকার মসজিদের ঈমাম যদি সবসময় হাতেগুনা কয়েকটা সূরা (৫-৬ টা) দিয়েই ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরান, ফরজ নামাজের পরে হাত তুলে মুনাজাত করান, আখেরি ওয়াক্তে নামাজ পরান এবং নামাজে দ্রুত রুকু ও সিজদা দেন তবে কি এই অজুহাতে জামাত ত্যাগ করা যাবে? বিশেষ করে সেই ব্যাক্তি তার বিপরিতে ইনফিরাদী নামাজ পরলে অধিক সুন্নতের কাছাকাছি হতে পারে।
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। না, এই অজুহাতে জামাআত ত্যাগ করা জায়েজ হবে না। ইমাম পাপী হলেও তার পিছনে নামায পড়তে হবে। জামাআতে নামায পড়া আবশ্যক।
যদি কোন মসজিদের নিয়মিত নিযুক্ত ইমাম পাপী হন তবে তার নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ পাপী হবেন। সাধারণ মুসল্লি যদি অন্য কোন ভাল ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের সুযোগ পান তাহলে ভাল, নইলে এরুপ পাপী ইমামের পিছনেই সালাত আদায় করতে হবে। নেককার ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কুফর-শিরক না পাওয়া পর্যন্ত কোনো অজুহাতে জামাআত বা জুমুআ ত্যাগ করা যাবে না। ঐক্য বজায় রেখে উত্তম ইমামের জন্য চেষ্টা করতে হবে। আর আপনি যে শিরকের কথা উল্লেখ করেছেন সম্ভবত তা এমন নয় যে, তার পিছনে সালাতই আদায় করা যাবে না। কারণ শিরকের অনেক পর্যায় আছে। সব শিরকই এই পর্যায়ের নয় যে, শিরক কারীর পিছনে সালাত আদায় করা যাবে না। প্রসিদ্ধ কালামবিদ ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী র. (৩২৪হি.) বলেন, ومن ديننا أن نصلي الجمعة والأعياد وسائر الصلوات والجماعات خلف كل بر وفاجر كما روى أن عبد الله بن عمر رضى الله عنهم كان يصلي خلف الحجاج অর্থ: আর আমাদের দীনের অন্যতম দিক যে, আমরা জুমুয়ার সালাত, ঈদগুলো এবং অন্যান্য সকল সালাত এবং জামাআত নেককার ও বদকারের পিছনে আদায় করি। যেমনিভাবে বর্ণিত আছে,আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পিছনে সালাত আদায় করতেন (মুসান্নিফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস নং ১৪১৭৫)। আল-ইবানাহ আন উসূলিদ দিয়ানাহ, ১/২০। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ৩৩৭-৩৭৯ এবং রাহে বেলায়াত পৃষ্ঠা ৫৬৩-৫৬৮
প্রশ্নঃ 6
রফউল ইয়াদাইন এর ব্যাপারে কিছু কথা জানতে চাই।
24 Dec 2025
রফউল ইয়াদাইনের অর্থ হাত উঠানো। বিভিন্ন হাদীসে রফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। কোনো হাদীসে একবার, কোনো হাদীসে তিনবার, কোনো হাদীসে চারবার, পাঁচবার রফউল ইয়াদাইন করার কথা আছে। সবগুলোই সহিহ। যেকোনো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করলেই সুন্নাহ অনুসরণ করা হবে। বিস্তারত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন। রফেউল ইয়াদাইন নিয়ে ঝগড়ার নিরসন ! !
প্রশ্নঃ 7
আসসালামুয়ালিকুম। আমার প্রস্নঃ বাজারে আহ্ লে হাদিসের প্রতি ওপেন চেলেঞ্জ নামে একটি বই পাওয়া যায়। তাতে এক্ টা হাদিসের উদ্রিতি দেয়া আছেঃ জাবের ইবনে সামুরা (রা) থেকে বরনিত, রাসুল (সা) সাহাবা কেরামদের রাফাউল ইয়াদাঈন করতে দেখে বললেন, আমি তোমাদেরকে রাফাউল ইয়াদাঈন করতে দেখছি। মনে হচ্ছে যেন তোমাদের হাত গুলো দুস্ট ঘোড়ার লেজ এর মত। নামাজে শান্ত থাক। (মুসলিম) আমার প্রশ্নঃ এই হাদিস কি রুকু সিজদায় রাফাউল ইয়াদাঈন এর কথা বলা হয়েছে? না কি অন্ন কিছু?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সাহাবী জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে উক্ত হাদীসের কয়েকটি মতন (বর্ণনা ) রয়েছে। নিচে দুটি বর্ণনা দেওয়া হল। এখান থেকে বিষয়টি আমাদের জন্য স্পষ্ট হবে। ১। عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ ্র مَا لِى أَرَاكُمْ رَافِعِى أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ اسْكُنُوا فِى الصَّلاَةِ অর্থ: জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের কাছে আসলেন। এরপর বললেন, কি হলো, আমি তোমাদের দেখছি তোমরা দুষ্ট ঘোড়ার লেজের মত তোমাদের হাতগুলো উঠাচ্ছ, নামাযে শান্ত থাক। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৬। ২। عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَكُنَّا إِذَا سَلَّمْنَا قُلْنَا بِأَيْدِينَا السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ فَنَظَرَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ ্র مَا شَأْنُكُمْ تُشِيرُونَ بِأَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمُسٍ إِذَا سَلَّمَ أَحَدُكُمْ فَلْيَلْتَفِتْ إِلَى صَاحِبِهِ وَلاَ يُومِئْ بِيَدِهِ অর্থ: জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে নামায পড়ছিলাম। যখন আমরা সালাম ফিরালাম তখন আমরা আমাদের হাত দ্বারা ইশারা করে বললাম, আস-সালামু আলাইকুম, আস-সালামু আলাইকুম। তখন রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাদের কি হল! হাত দ্বারা ইশারা করছ, যেন দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। যখন তোমাদের কেউ সালাম ফিরাবে তখন তার পাশের লোকের দিকে তাকাবে, হাত দ্বারা ইশারা করবে না। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ৯৯৯। উপরুক্ত হাদীস দুটি দ্বারা স্পষ্ট যে, নামাযে সালাম ফিরানোর সময় সাহাবীরা হাত উঠাতেন আর রাসূলুল্লাহ সা. তা করতে নিষেধ করেছেন। তবে রুকু সিজদাহতে রাফউল ইয়াদাইন করা না করা উভয় ক্ষেত্রেই সহীহ হাদীস আছে। এই নিয়ে বিতর্ক ত্যাগ করা উচিত।
প্রশ্নঃ 8
আস্সালামু আলাইকুম, কেমন আছেন, একটি ব্লগে দেখলাম একজন চরম ভাবে রাসুলের হাদিসের প্রতি ওনিহা সেই বলছে কোরআনে সালাতের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোন ওক্তে কয় রাকাত পড়তে হবে তা নেই এমন কি সে বলে তোমরা যে হাদিসের কথা বলো তাতেও নেই সুতরাং নিজের ইচ্ছা মাপিক রাকাত পড়া যাবে ওক্ত সমূহে। । এমন চরম অনিহা পুর্ণ কথা মানতে পারছি না তাই অনুগ্রহ করে কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল গুলো দিয়ে উপকৃত করুন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকআত সংখা উল্লেখ আছে। ইসলাম সম্পর্কে চরম অজ্ঞ কিংবা ইসলামের চরম শত্রু, এমন লোকেরাই কেবল এধরনের মন্তব্য করতে পারে। নিচে সংক্ষেপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলো: নিচের উল্লেখিত এই হাদীস দ্বারা আমারা জানতে পারি যে, ফজরের নামায দুই রাকআত, জোহর, আসর, ঈশা চার রাকআত আর মাগরিব তিন রাকআত। হাদীসটি হলো: عَنْ عَائِشَةَ ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قَالَتْ : كَانَ أَوَّلَ مَا افْتُرِضَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلاَةُ : رَكْعَتَانِ رَكْعَتَانِ ، إِلاَّ الْمَغْرِبَ ، فَإِنَّهَا كَانَتْ ثَلاَثًا ، ثُمَّ أَتَمَّ اللَّهُ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْعِشَاءَ الآخِرَةَ أَرْبَعًا فِي الْحَضَرِ ، وَأَقَرَّ الصَّلاَةَ عَلَى فَرْضِهَا الأَوَّلِ فِي السَّفَرِ تعليق شعيب الأرنؤوط : إسناده حسن من أجل ابن إسحاق অর্থ: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর প্রথমে দুই দুই রাকআত করে নামায ফরয হয়েছিল, তবে মাগরিব তিন রাকআত ছিল। এরপর আল্লাহ তায়ালা সাধারণ সময়ে (সফর বাদে) জোহর, আসর ও ঈশা চার রাকআত পূর্ণ করে দেন। আর সফর অবস্থায় পূর্বের বিধান বহাল রাখলেন। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৬৩৮১। শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আরো কিছু হাদীস নিচে উল্লেখ করা হলো যে সব হাদীস থেকে আমরা বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাযের রাকআত সংখা জানতে পারি: عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فِى الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ فِى الْحَضَرِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ وَصَلَّيْتُ مَعَهُ فِى السَّفَرِ الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ وَالْعَصْرَ رَكْعَتَيْنِ وَلَمْ يُصَلِّ بَعْدَهَا شَيْئًا وَالْمَغْرِبَ فِى الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ سَوَاءً ثَلاَثَ رَكَعَاتٍ لاَ تَنْقُصُ فِى الْحَضَرِ وَلاَ فِى السَّفَرِ وَهِىَ وِتْرُ النَّهَارِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ. قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সফরে এবং সাধারণ সময়ে নামায পড়েছি। আমি তার সাথে সাধারণ অবস্থায় যোহর চার রাকআত পড়েছি। এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। আমি তাঁর সাথে সফরে জোহর দুই রাকআত পড়েছি এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। এরপর আর কিছু তিনি কোন নামায পড়েন নি। আর মাগরিব সফর ও সাধারণ উভয় অবস্থায় তিন রাকআত পড়েছি। সফরে এবং সাধারণ অবস্থা কোন সময়ই তা কম করা হয় না আর সেটা হলো দিনের বিতর এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ৫৫৫। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম জোহরের নামায চার রাকআত আর মাগরিবের নামায তিন রাকআত। আর এই নামাযেরগুলোর পরে দু রাকআত করে সুন্নাত আছে। عَنْ قَيْسِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ رَأَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- رَجُلاً يُصَلِّى بَعْدَ صَلاَةِ الصُّبْحِ رَكْعَتَيْنِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- صَلاَةُ الصُّبْحِ رَكْعَتَانِ فَقَالَ الرَّجُلُ إِنِّى لَمْ أَكُنْ صَلَّيْتُ الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا فَصَلَّيْتُهُمَا الآنَ. فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- অর্থ: কাইস ইবনে আমর বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. একজন লোককে দেখলেন, ফজরের নমাযের পর দুই রাকআত নামায পড়ছে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ফজরের নামায তো দুই রাকআত। তখন লোকটি বলল, আমি এর পূর্বের দুই রাকআত পড়িনি তাই এখন তা পড়ছি। তখন রাসূলুল্লাহ সা. চুপ থাকলেন। সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৬৯। হাদীসটি সহীহ। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম ফজরের নামায দুই রাকআত। عَنْ أَنَسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا وَالْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ وَسَمِعْتُهُمْ يَصْرُخُونَ بِهِمَا جَمِيعًا অর্থ: আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (বিদায় হজ্জের সফরের সময়) রাসূল সা. মদিনায় যোহর সালাত চার রাকআত আদায় করেন। (সফর শুরু করে) যুল হুলাইফা পৌঁছানোর পর তথায় আসর সালাত (কসর হিসেবে) দু রাকআত আদায় করেন। আমি শুনলাম সাহাবীগণ হজ্জ ও উমরার জন্য একত্রে (কিরান হজ্জের) তালবিয়া পড়ছেন চিৎকার করে। । সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪৮। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম জোহর নামায চার রাকআত ও আসরের নামায সফর অবস্থায় দুই রাকআত। এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে নামাযের রাকআত সংখা নিয়ে অনেক হাদীস উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য এখানে আমরা পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামায সমূহের রাকআত সংখা নিয়ে আলোচনা করেছি। সুন্নত নামায নিয়ে নয়। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কোন ওয়াক্তে নামায কত রাকআত তা হাদীসে বিষদভাবে বর্ণিত আছে। এছাড়াও এটা রাসূলুল্লাহ সা. থেকে এখন পর্যন্ত উম্মতের কর্মধারা দ্বারা প্রমানিত। সুতরাং কারো কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই।
প্রশ্নঃ 9
আমি খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির শায়েখ এর অনেক বই পড়েছি। আমার প্রশ্ন পুরুষ ও মহিলাদের নামাজে কি কি পার্থক্য আছে? বিশেষ করে রুকু ও সিজদাহ ও বৈঠকের ক্ষেত্রে। দলিল্ভিত্তিক জানতে পারলে উপক্রিত হব। রাহে বেলায়েত বইটিতে খুজেছি কিন্তু পাইনি। সারের নামাজ বিষয়ে কোন বই আছে কি?
23 Dec 2025
পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের বিষয়ে২৮নং প্রশ্নের উত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দয়া করে সেটি দেখুন। শুধু নামায বিষয়ে শায়েখের কোন বই নেই, তবে রাহে বেলায়াত বইয়ে নামায সম্পর্কে একটি আলাদা অধ্যায় আছে। এছাড়া আলফিকহুল আকবারসহ কয়েকটি বইয়ে নামায বিষয়ে বিক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা আছে।
প্রশ্নঃ 10
Now a days some brothers with Sahih Aqida are saying that we are suppose to follow Saudi for starting Ramadan, yaumul arafat fasting and celebration of Eid occassions. In relevance to their logic they are interpreting the hadiths accordingly. It seems OK when they present their arguments. I have read the relevant fiqh of Abd al-Aziz ibn Baz. In counter to their logic what are we suppose to do now?
23 Dec 2025
হাদীস শরীফে চাঁদ দেখে সিয়াম ও ঈদুল ফিতরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, যে কেউ যেখানে ইচ্ছা চাঁদ দেখলেই ঈদ করা যাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তার সাক্ষ্য গৃহীত হলে বা চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলেই শুধু ঈদ করা যাবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সমাজের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঈদ পালন করতে নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: الْفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ النَّاسُ وَالأَضْحَى يَوْمَ يُضَحِّي النَّاسُ যে দিন সকল মানুষ ঈদুল ফিত্র পালন করবে সে দিনই ঈদুল ফিত্র-এর দিন এবং যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করবে সে দিনই ঈদুল আযহার দিন। তিরমিযী, আস-সুনান ৩/১৬৫ (কিতাবুস সাওম, বাবু মা জাআ ফিল ফিতরি ওয়াল আদহা মাতা ইয়াকূনু) তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মাসরূক বলেন, আমি একবার আরাফার দিনে, অর্থাৎ যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখে আয়েশা (রা)-এর নিকট গমন করি। তিনি বলেন, মাসরূককে ছাতু খাওয়াও এবং তাতে মিষ্টি বেশি করে দাও। মাসরূক বলেন, আমি বললাম, আরাফার দিন হিসাবে আজ তো রোযা রাখা দরকার ছিল, তবে আমি একটিমাত্র কারণে রোযা রাখি নি, তা হলো, চাঁদ দেখার বিষয়ে মতভেদ থাকার কারণে আমার ভয় হচ্ছিল যে, আজ হয়ত চাঁদের দশ তারিখ বা কুরবানীর দিন হবে। তখন আয়েশা (রা) বলেন: اَلنَّحْرُ يَوْمَ يَنْحَرُ الإِمَامُ وَالْفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ الإِمَامُ যেদিন রাষ্ট্রপ্রধান কুরবানীর দিন হিসাবে পালন করবেন সে দিনই কুরবানীর দিন। আর যেদিন রাষ্ট্রপ্রধান ঈদুল ফিতর পালন করবে সে দিনই ঈদের দিন। বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৫/১৭৫; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৯০; মুনযিরী, তারগীব ২/৬৮। মুনযিরী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। মুমিনের জন্য নিজ দেশের সরকার ও জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে ঈদ করা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নির্দেশ। অন্য দেশের খবর তো দূরের কথা যদি কেউ নিজে চাঁদ দেখেন কিন্তু রাষ্ট্র তার সাক্ষ্য গ্রহণ না করে তাহলে তিনিও একাকী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিপরীতে ঈদ করতে পারবেন না। সাহাবী-তাবিয়ীগণ বলেছেন যে, এক্ষেত্রে ভুল হলেও ঈদ, হজ্জ, কুরবানী সবই আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ভুলের জন্য মুমিন কখনোই দায়ী হবেন না। ইবনু হাজার, তালখীসুল হাবীর ২/২৫৬। বর্তমানে সারা বিশ্বে একদিনে ঈদ বিষয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। তবে সকল দেশে একদিনে ঈদ পালনের নামে একই দেশে একাধিক দিনে ঈদ পালন নিঃসন্দেহে ইসলামী নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক। বিষয়টি নিয়ে তাত্ত্বিক গবেষণা ও মতবিনিময় অবশ্যই হতে পারে। রাষ্ট্র যদি ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্য কোনো দেশের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণ করে ঘোষণা দেয় তবে জনগণ তা অনুসরণ করবে। তবে আমাদের বুঝতে হবে যে, মহান আল্লাহ ইসলামকে সহজ-পালনীয় করেছেন। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে বিশ্বের কোথাও চাঁদ উঠলে সকল দেশেই তা জানা সম্ভব। কিন্তু অতীতে তা ছিল না। আর দূরবর্তী এলাকার চাঁদের খবর নিতে কেউ চেষ্টা করেন নি। মদীনায় চাঁদ দেখার পরে -ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহায় রাতারাতি বা ৯ দিনের মধ্যে- দ্রুত দূরবর্তী অঞ্চলে সংবাদ প্রদানের চেষ্টা বা সর্বত্র একই দিনে ঈদ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার চেষ্টা রাসূলুল্লাহ সা. বা খুলাফায়ে রাশেদীন করেন নি। সাহাবীগণের যুগ থেকেই একাধিক দিবসে ঈদ হয়েছে। মুসলিম, আস-সহীহ ২/৭৬৫ (কিতাবুস সাওম, বাবু … লিকুল্লি বালাদিন রুইয়াতুহুম)। একাধিক দিনে ঈদ পালন বিষয়ক হাদীসটি উদ্ধৃত করে ইমাম তিরমিযী বলেন: وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنَّ لِكُلِّ أَهْلِ بَلَدٍ رُؤْيَتَهُمْ আলিমগণের সিদ্ধান্ত এ হাদীসের উপরেই: প্রত্যেক দেশের মানুষ তাদের নিজেদের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করবে । তিরমিযী, আস-সুনান ৩/৭৬ (কিতাবুস সাওম, বাবু …লিকুল্লি আহলি বালাদিন রুইয়াতুহুম)। বস্তুত, সাহাবী-তাবিয়ীগণ ও পরবর্তী আলিমগণ বিভিন্ন দেশে একাধিক দিনে ঈদ পালনকে ইসলামী নির্দেশনার বিরোধী বলে গণ্য করেন নি। পক্ষান্তরে একই রাষ্ট্রের মধ্যে বা একই ইমামের (রাষ্ট্রপ্রধানের) অধীনে একাধিক দিনে ঈদ পালনকে সকলেই নিষিদ্ধ, অবৈধ ও ইসলামী নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক বলে গণ্য করেছেন। শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. একই দিনে সারা বিশ্বে ঈদ আদায় করার কথা বলেন নি।
প্রশ্নঃ 11
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, রাফউল ইয়াদাইন ছাড়া নামাজ কি সুন্নাহ নির্দেশিত? এই ব্যাপারে যদি সহিহ হাদীস থাকে তাহলে জানালে খুব উপকৃত হবো।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। রাফয়ে ইয়াদায়ন করার ব্যাপারে হাদীস কয়েক ধরনের। কোন হাদীসে একবার (শুধু নিয়্যত করার সময়) কোন হাদীসে ৩ বার, কোন হাদীসে প্রত্যেক ওঠা-বসার সময় ইত্যাদী। আমার মনে হয়ে আপনি প্রথমটি অর্খাৎ শুধু নিয়ত করার সময় বাদে অন্য সময় রাফয়ে না করলে নামায হবে কিন তা জানতে চেয়েছেন। হ্যাঁ, এমন করলেও নামায সুন্নাহ সম্মত হবে। হাদীসটি দেখুন: – حدثنا هناد حدثنا وكيع عن سفيان عن عاصم بن كليب عن عبد الرحمن بن الأسود عن علقمة قال قال عبد الله [ بن مسعود ] : ألا أصلي بكم صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم ؟ فصلى فلم يرفع يديه إلا في أول مرة অর্থ[: আলকমাহ থেকে বণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর নামায পড়ব না? এরপর তিনি নামায পড়লেন, তিনি শুধু একবারই হাত উঠালেন। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ২৫৭। হাদীসটি বর্ণনা করার পর ইমম তিরমিযী বলেন, حديث ابن مسعود حديث حسن وبه يقول غير واحد من أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم والتابعين ইবনে মাসউদ রা. এর হাদীসটি হাসান। এভাবে আমল করতে বলেছেন, অনেক সাহাবী ও তাবেঈ। قال الشيخ الألباني : صحيح শায়েখ আলবানী রহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ ও যয়ীফ সুনানে তিরমিযী,হাদীস নং ২৫৭। অন্যান্য মুহাদ্দিসগণও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আরো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখুন রফেউল ইয়াদাইন নিয়ে ঝগড়ার নিরসন “””””
প্রশ্নঃ 12
মুনাজাত কি দিয়ে আরম্ভ করা সুন্নাত? দলিল সহ জানাবেন।
23 Dec 2025
এমন কোন সুনির্দিষ্ট দুআ নেই যার মাধ্যমে দুআ বা মুনাজাত আরম্ভ করা সুন্নাত। তবে দুআ করার কিছু আদব আছে। যেমন,দুআর শুরতে ও শেষে দরুদ শরীফ পাঠ করা, দুআর মধ্যে ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম বলা, দুআর সময় ক্বিবলামুখী হওয়া ও দুই হাত বুক পর্যন্ত কিংবা তারো বেশী উঠানো ইত্যাদি। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত রাহে বেলায়াত বইটি।
প্রশ্নঃ 13
Will my salah and other ibadah be accepted by Allah?
23 Dec 2025
You are eating from your income. So, there is no problem. It is your Fardh (obligatory) Duty to serve your parents. So stay with them and serve them. Try your best to make all expenses from your income. Pray to Allah for your parents hedayat. In any case you are not permitted to misbehave with them. See Sura Luqman 15 ayat
প্রশ্নঃ 14
Assalamu alaikum .. Sir I hv some problm on wearing of leather belt in namaz . As it permissible in namaz or not if not thn it makrooh or haram or other subcategory plz help . And also if leather is taken through halal way from animal like Ox ..cow etc. Plz hlp with refence.
23 Dec 2025
Wa Alaikumus Salam Wa Rahmatullah. No problem in wearing leather belt in namaz.
প্রশ্নঃ 15
আস-সালামু আলাইকুম, শায়খ আপনার কাছে অনুরোধ কোন ব্যক্তি যদি নামাজরত আবস্হায় থাকে তবে তার সামনে দিয়ে যাওয়ার বিধান ও হাদিস বর্ননা করবেন কি? খুব উপকৃত হতাম।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া জায়েজ নেই। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيِ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ قَالَ أَبُو النَّضْرِ لاَ أَدْرِي أَقَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ، أَوْ شَهْرًا ، أَوْ سَنَةً নামাযরত ব্যক্তির সামানে দিয়ে যাতায়াতকারী ব্যক্তি যদি জানতো এতে কি পরিমাণ গুনাহ হয় তাহলে সে সামনে দিয়ে যাওয়ার চেয়ে চল্লিশ ( দিন,মাস কিংবা বছর উদ্দেশ্য, বর্ণনা স্পষ্ট নয়) দাঁড়িয়ে থাকাকে উত্তম মনে করত। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১০। মুসনাদে বায-যারে (হাদীস নং ৩৭৮২) আছে চল্লিশ বছর। তবে সামনে কতুটুকু পরিমান জায়গার মধ্যে যেতে পারবে না সে বিষয়ে মতভেদ আছে। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, وَاخْتُلِفَ فِي تَحْدِيدِ ذَلِكَ فَقِيلَ إِذَا مَرَّ بَيْنَهُ وَبَيْنَ مِقْدَارِ سُجُودِهِ ، وَقِيلَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَدْرَ ثَلَاثَةِ أَذْرُعٍ وَقِيلَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَدْرَ رَمْيَةٍ بِحَجَرٍ অর্থ: এর সীমা নিয়ে মতভেদ আছে। কারো মতে, সিজাদা দেয়ার স্থান পর্যন্ত, কেউ কেউ বলেন, তিন হাত, আবার কেউ কেউ বলেন, পাথর নিক্ষেপ করলে যতুটুকু যায় সেই পরিমাণ। ফাতহুল বারী, ১/৫৮৫ (শামেলা)। এজন্য সর্বদা সালাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া পরিহার করবেন। একান্ত বাধ্য হলে অন্তত দু কাতার দূর থেকে যাবেন।
প্রশ্নঃ 16
assalamualaikum,sir, emamer pisone sura fatiha pora ki foroj? othoba konsomay sura fatiha porta hobe? sura fatiha emamer pisona na porlay namaj hobe ki?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তির জন্য সূরা ফাতিহা পডতে হবে। তবে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে কি না এই নিয়ে আলেমদের মাঝে কয়েকটি মত রয়েছে রয়েছে। এক. নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। দুই. ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযে অর্থাৎ যে সব নামাযে স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় সে সব নামাযে সূরা ফাতিহা পড়বে না। অর যে সব নামাযে কুরআন নিঃশব্দে পড়া হয় অর্থাৎ জোহর এবং আসরের নামাযে পড়া মুস্তাহাব। তিন. ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযে অর্থাৎ যে সব নামাযে স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় সে সব নামাযে সূরা ফাতিহা পড়বে না। অর যে সব নামাযে কুরআন নিঃশব্দে পড়া হয় অর্থাৎ জোহর এবং আসরের নামাযে পড়া আবশ্যক। চার. কোন সময়ই ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়বে না। দলীলের আলোকে মনে হয় সরব নামাযে, অর্থাৎ স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় এমন নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না আর নীরব নামাযে, অর্থাৎ নিঃশব্দে কুরআন পড়া হয় এমন নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদিও সূরা পড়বেন। দলিলসহ বিস্তারিত আলোচনা ইনশা আল্লাহ পরবর্তীতে ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রচার করা হবে।
প্রশ্নঃ 17
AMAR JUHORER WAQT A JODI NAMAJE KHUBI AGROHO BERE JAI TO ASORER SALATE THIK TAR BIPORIT R AIM TAHAJJOT SALAT NIYOMITO ADAY KORTE CHAI KINTU KONO VABEI PARCHINA,HE KONO SIJDATE AMAR MONER THEKE ONEK KICHUR CHAOAR ACHE SETA ARBITE HOITO AMI JANINA AMI KIVABE CHABO,JEMON AMAR SONSARE KONO SOMOSSA ETA ARBITE AMAR JANA NEI AMI SAJDAI KIVABABE BOLBO JANALE KHUB UPOKRITO HOBO INSALLAH
23 Dec 2025
আপনি মনকে ভাল কাজের উপর দৃঢ় করুন। আর বেশী বেশী দোয়া করতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি নিয়মিত নামায আদায় করতে পারবেন। তাহাজ্জুদ সহ অন্যান্য নফল আদায় করাও আপনার জন্য তখন সহজ হয়ে যাবে। সিজদায় কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত দোয়া কিংবা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত দোয়ার অর্থের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যে কোন দোয়া পাঠ করা যায়। আরবী ছাড়া অন্য ভাষা তথা মাতৃভাষায় দোয়া করার ব্যাপারে সামান্য মতভেদ আছে।কোন কোন হানাফী ফিকহার কিতাবে মাকরুহ বলা হয়েছে। কেউ কেউ মাকরুহ তানযীহ বলেছেন আবার কেউ কেউ মাকরুহ তাহরীমা বলেছেন। তবে অধিকাংশ আলেম জায়েজ বলেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের উচিৎ হলো কুরআন সুন্নাতে বর্ণিত কোন দোয়া পাঠ করা। আর যদি কুরআন-সুন্নাতে বর্ণিত দোয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন দোয়া সিজদাতে মাতৃভাষায় পাঠ করে তবে আশা করয যায় না-জায়েজ হবে না, জায়েজ হবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 18
বেরেলভী ইমামের পিছনে সালাত
22 Dec 2025
বেরেলভীদের ভিতর কয়েকটি উপদল আছে। তারা সবাই বিদআত ভালবাসেন। অনেকে সুস্পষ্ট শিরকের মধ্যে লিপ্ত। সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কুফর-শিরক পাওয়া গেলে তার পিছনে সালাত আদায় করা যাবে না। কিন্তু সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কুফর-শিরক না পাওয়া পর্যন্ত কোনো অজুহাতে জামাআত বা জুমুআ ত্যাগ করা যাবে না। আপনি যদি অন্য কোন ভাল ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের সুযোগ পান তাহলে ভাল, নইলে এরুপ পাপী ইমামের পিছনেই সালাত আদায় করতে হবে। নেককার ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। প্রসিদ্ধ কালামবিদ ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী র. (৩২৪হি.) বলেন, ومن ديننا أن نصلي الجمعة والأعياد وسائر الصلوات والجماعات خلف كل بر وفاجر كما روى أن عبد الله بن عمر رضى الله عنهم كان يصلي خلف الحجاج
অর্থ: আর আমাদের দীনের অন্যতম দিক যে, আমরা জুমুয়ার সালাত, ঈদগুলো এবং অন্যান্য সকল সালাত এবং জামাআত নেককার ও বদকারের পিছনে আদায় করি। যেমনিভাবে বর্ণিত আছে,আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পিছনে সালাত আদায় করতেন (মুসান্নিফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস নং ১৪১৭৫)। আল-ইবানাহ আন উসূলিদ দিয়ানাহ, ১/২০। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ৩৩৭-৩৭৯ এবং রাহে বেলায়াত পৃষ্ঠা ৫৬৩-৫৬৮।
প্রশ্নঃ 19
At Foroj prayer about dowa before salam
22 Dec 2025
হ্যাঁ, আপনি প্রচলিত দুআ মাসুরা সহ কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত যে কোনো দুআ বা কিংবা কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত দুয়ার অর্থের সাথে মিল রেখে যে কোন দুআ পড়তে পারেন। ছয়টি দুআ মাসুরা সহ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত বইয়ের ৩৮৩-৩৮৯পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 20
hanafi madhab er witr salat er niyom ki correct?
22 Dec 2025
হ্যাঁ, হানাফী মাজাহাবের বিতর সালাতের নিয়ম সঠিক। রাসূলুল্লাহ সা. বিত্র সালাত বিভিন্ন পদ্ধতিতে আদায় করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত। হানাফী মাযহাবে যে পদ্ধতিতে বিতর পড়া হয় সেটি উক্ত সহীহ পদ্ধতিগুলোর একটি। তা হলো দু রাকআতের শেষে বসে আত-তাহিয়্যাতু পাঠ করে উঠে দাড়িয়ে তৃতীয় রাকআত আদায় করা। আল্লামা ইবনে হাযাম জাহেরী রহ. আল মুহল্লা (২/৮২) বলেছেন,
والوتر وتهجد الليل ينقسم على ثلاثة عشر وجها، أيها أفعل أجزأه
বিতর ও রাতের তাহাজ্জুদ ১৩ টি পদ্ধতি রয়েছে। যে কোন এক পদ্ধতিতে পড়লেই যথেষ্ট হবে। এরপর তিনি দলীল সহ ১৩ পদ্ধতিই উল্লেখ করেছেন। ১২ নং পদ্ধতি উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন,
والثاني عشر: أن يصلي ثلاث ركعات، يجلس في الثانية، ثم يقوم دون تسليم و يأتي بالثالثة، ثم يجلس ويتشهد ويسلم، كصلاة المغرب. وهو اختيار أبي حنيفة
১২নং তিন রাকআত নামায পড়বে, দ্বিতীয় রাকআতে বসবে, এরপর সালাম না ফিরিয়ে উঠবে এবং তৃতীয় রাকআত পড়বে। তারপর বসে তাশাহুদু পড়ে সালাম ফিরাবে মাগরিবের নামাযের মত। আর এটা আবু হানীফা পছন্দ করেছেন। এরপর তিনি এই মতের পক্ষে নিচের হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন। عن سعد بن هشام أن عائشة حدثته : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان لا يسلم في ركعتي الوتر
অর্থ: আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা. বিত্রের দুই রাকআতে সালাম ফিরাতেন না। সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৯৮। মুসতাদরক হাকিম, হাদীস নং ১১৩৯। ইমাম জাহবী এবং হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী। অনেক সাহবী রা. থেকে এমন কথা বর্ণিত আছে। ইবনে উমার রা. থেকে এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
صلاة المغرب وتر النهار فأوتروا صلاة الليل
মাগরিব হলো দিনের বিত্র, তোমরা রাতের বিত্র আদায় করো। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৪৮৪৭। শায়খ শুয়াইব আরনাউত বলেছেন, বর্ণনাকারীগণ ছিকাহ। এখানে রাসূলুল্লাহ সা. মাগরিবের নামযকে বিতরের নামাযের সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন,
الْوِتْرُ ثَلاَثٌ رَكَعَاتٍ كَصَلاَةِ الْمَغْرِبِ
বিত্র মাগরিবের মত তিন রাকআত। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৬৮৮৯। বর্ণনাকারীগণ ছিকাহ। অন্য সনদেও হাদীসটি বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযী (২৯৪) লিখিত কিতাব সালাতিল বিতর গ্রন্থে অনেক সাহাবী এবং তাবিয়ী থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, তারা মাগরিবের মত তিন রাকআত বিতর আদায় করতেন। (পৃষ্ঠা ২৯৪)
একটি হাদীসে মাগরিবের মত তিন রাকাআত বিতর পড়তে নিষেধ করা হয়েছে এবং ৫ বা ৭ রাকআত বিতর পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ হাদীসটি দ্বারা অনেকে প্রমাণ করেন যে, দ্বিতীয় রাকআতে বৈঠক করে তিন রাকআত বিতর পড়া সঠিক নয়। হাদীসটি নিম্নরূপ:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تُوتِرُوا بِثَلاَثٍ أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ أَوْ سَبْعٍ ، وَلاَ تُشَبِّهُوا بِصَلاَةِ الْمَغْرِبِ
আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, তিন রাকআত বিতর পড়ো না, পাঁচ বা সাত রাকআত পড়ো। মাগরিবের নামাযের সাথে সাদৃশ্য করো না। সুনানে দারে কুতনী, হাদীস নং ১৬৫০। ইমাম দারে কুতনী বলেছেন, হাদীসটির রাবীগণ ছিকাহ। এখানে লক্ষনীয় যে, মাগরিবের মত বিতর না পড়ার এ হাদীসটিতে এবং এ অর্থের অন্যান্য হাদীসে পদ্ধতিগত পার্থক্যের কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, বরং রাকআতের পার্থক্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুস্পষ্টত বলা হয়েছে, সালাতুল বিত্র মাগরিবের মত তিন রাকআত না পড়ে পাঁচ বা সাত রাকআত পড়। অর্থাৎ তিন রাকআত পড়লেই তা মাগরিবের মত হয়ে গেল, যে পদ্ধতিতেই তা পড়া হোক না কেন। এখন যদি কেউ ধারণা করেন, দ্বিতীয় রাকাতে না বসে তিন রাকআত বিতর পড়ে তিনি এ হাদীসটির উপর আমল করলেন তবে তার এ ধারণাকে সঠিক বলা কষ্টকর। এ হাদীসটির বাহ্যিক নির্দেশনা থেকে আমরা এতটুকুই প্রমাণ করতে পারি যে, তিন রাকআত বিতর পড়া বৈধ নয়, বরং ৫ বা ৭ রাকআত পড়তে হবে। তবে এর বিপরীতে অনেক সহীহ হাদীসে তিন রাকআত বিতর পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তিন রাকআত বিতর পড়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল হাদীসের আলোকে উপরের নিষেধার্থক হাদীসটির অর্থ হলো, শুধু তিন রাকআত বিতর পড়া বৈধ,তবে ৫ বা ৭ রাকতআত পড়া উত্তম। এ অর্থে আয়েশা (রা) বলেন,
لاَ تُوتَرُ بِثَلاَثٍ بُتْرٍ ، صَلِّ قَبْلَهَا رَكْعَتَيْنِ ، أَوْ أَرْبَعًا
তুমি শুধু তিন রাকআত বিতর পড়বে না, তুমি তিন রাকআতের পূর্বে দু রাকআত বা চার রাকআত (কিয়ামুল্লাইল সালাত) পড়বে। মুসান্নফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৬৮৯৮। হাদীসটির সনদ সহীহ বলে প্রতীয়মান। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, হানাফী মাজাহাবের বিত্র নামায সুন্নাহ সম্মত। মুমিনগণের উচিৎ পদ্ধতিবিষয়ক বিতর্কে লিপ্ত না হওয়া। যে পদ্ধতি আপনার নিকট অধিক গ্রহনযোগ্য সে পদ্ধতিতে বিতর আদায় করুন এবং হাদীসে প্রমাণিত অন্যান্য পদ্ধতিকে সম্মান করুন। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন। বিস্তারিত জানতে পড়ুন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত ৪১৩-৪১৭।
প্রশ্নঃ 21
স্যার নামাজের ভিতর কিছু খেয়ে ফেললে নামাজ থাকে না কিন্তু শুনেছি কিন্তু অযুও থাকে না, এটা কি ঠিক স্যার?
20 Dec 2025
নামাযের মধ্যে কিছূ খেলে নামায ভেঙ্গে যায়। তবে অযু ভাঙ্গে না। আপনি যা শুনেছেন তা ঠিক নয়।
প্রশ্নঃ 22
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, স্যার শুধু রুকু পেলেই কি নামাজের সেই রাকাত পাওয়া যাবে? সানা ও সুরা ফাতিহা পড়ার সময় যদি না পাই তবুও কি সেই রাকাত পাবো? তাড়াহুড়ো করে রুকু পেলেই কি সেই রাকাত সালাতের অন্তর্ভুক্ত হবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। হ্যাঁ, শুধু রুকু পেলেই ঐ রাকায়াত পেয়েছে বলে গন্য হবে। চার ইমাম সহ অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহর অভিমত এটাই। তাড়াহুড়ো করে রুকু পেলেও রাকয়াত রাকায়াত পেয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। তবে হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেছেন। বিস্তারিত নিম্নরুপ:
আল্লামা ইবনুল মুনযির (মৃত্যু ৩১৯ হি.) বলেন, وَمِمَّنْ قَالَ إِنَّ مَنْ أَدْرَكَ الْإِمَامَ رَاكِعًا فَقَدْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ، وَمَيْمُونُ بْنُ مِهْرَانَ، وَسُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، وَالْأَوْزَاعِيُّ، وَالشَّافِعِيُّ، وَأَحْمَدُ، وَإِسْحَاقُ، وَأَبُو ثَوْرٍ، وَحُكِيَ ذَلِكَ عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، وَالنُّعْمَانِ وَفِيهِ قَوْلٌ ثَانٍ: قَالَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ قَالَ: مَنْ أَدْرَكَ الْقَوْمَ رُكُوعًا فَلَا يَعْتَدَّ بِالرَّكْعَةِ
অর্থ: যে ব্যক্তি ইমামকে রুকুতে পেল সে রাকায়াত পেল একথা যারা বলেন, তাদের ভিতর রয়েছেন সাইদ ইবনে মুসায়্যাব, মায়মুন ইবনে মিহরন, সুফইয়ান সাউরী, আউযায়ী, শাফেয়ী, আহমাদ, ইসহাক, আবু ছাওর। আর এমনই বর্ণিত আছে মালেক ইবনে আনাস ও নুমান (আবু হানীফা) থেকে। এই বিষয়ে আরেকটি মত হল, যে ব্যক্তি লোকদেরকে রুকুতে পাই সে ঐরুকুকে রাকয়াত হিসাবে গন্য করবে না। এটা বলেছেন আবু হুরায়রা র.। আল-আউসাত ফিস-সুনানি ওয়াল ইজমা ওয়াল ইখতিলাফ: ৪/১৯৬, ২০২৫ নং হাদীসের আলোচনায়। আরো দেখুন, আলফিকহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদিল্লাতহু:২/৩২৫। এই বিষয়ে দলীলসমূহের কিছু নিচে বর্ণণা করা হল:
১.عَنْ أَبِي بَكْرَةَ أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ رَاكِعٌ فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَى الصَّفِّ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا ، وَلاَ تَعُدْ. অর্থ: আবু বাকরতা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূর সা. নামাযে রুকু করছেন এঅবস্থায় তিনি তাঁর কাছে উপনীত হলেন। তখন তিনি কাতারে পৌছার পূর্বেই রুকু করলেন। এরপর বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট বললেন। তখন রাসলুল্লাহ সা. বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ বৃদ্ধি করে দিন, আর এমন করেব না।সহীহ বুখারী: হাদীস নং ৭৮৩। এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, মুসল্লী যদি ইমামকে রুকুতে পায় তাহলে সে রাকায়াত পেয়েছে হিসাবেই ধরা হবে। কারন এই সাহাবী জামায়াতে নামায পড়তে গিয়ে ইমামকে তথা রাসূলুল্লাহ সা. কে রুকুতে পেয়েছেন আর রাসূল সা. তাঁর প্রশংসা করেছেন এবংতাকে পূনরায় নামায পড়তে আদেশ করেননি। ২.عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم
- إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلاَ تَعُدُّوهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاَةَ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন,রাসূল সা. বলেছেন, আমরা সিজদায় থাকাকালীন যখন তোমরা নামাযে আসবে তখন তোমরা সিজাদাহ করবে আর ওটাকে রাকয়াত হিসাবে গণনা করবে না। এবং যে ব্যক্তি রুকু পেল সে নামায তথা রাকয়াত পেল । সুনানে আবু দাউদ: হাদীস নং ৮৯৩, সহীহ ইবনু খুজায়মা: হাদীস নং ১২১। মুসতাদরকে হাকেম: হাদীস নং ৭৮৩। হাদিসটির সনদে কিছুটা দুর্বলতা আছে তবে এই অর্থের অনেকগুলো সহীহ হাদীস থাকায় হাফেজ জাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। হাকেম রহ. বলেছেন, বলেছেন সহীহুল ইসনাদ। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এই হাদীসটি সম্পর্কে বিস্তারিত জন্য দেখুন, সহীহ আবু দাউদ:হাদীস নং ৮৩২। ৩.عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ عَنْ رَجُلٍ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ إِذَا جِئْتُمْ وَالإِمَامُ رَاكِعٌ فَارْكَعُوا ، وَإِنْ سَاجِدًا فَاسْجُدُوا ، وَلاَ تَعْتَدُّوا بِالسُّجُودِ إِذَا لَمْ يَكُنْ مَعَهُ الرُّكُوعُ তাবেঈ আব্দুল আযীয ইবনে রুফা একজন লোক থেকে তিনি রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সা. বলেছেন, ইমাম রুকুতে থাকা অবস্থায় যখন তোমরা আসবে তখন তেমরা রুকু করবে আর সিজদায় থাকা অবস্থায় আসলে সিজদাহ করবে। তবে যখন সিজদার সাথে রুকু থাকবে না তখন তাকে রাকয়াত হিসাবে গন্য করবে না। আসসুনানুল কুবরা: হাদীস নং ২৬৭৯। শায়খ আলবানী রহ. সহীহ আবু দাউদ এর মধ্যে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
قلت: وإسناده صحيح؛ إن كان الرجل الذي لم يسمَّ صحابيّاً، ولعله الراجح؛فإن عبد العزيز بن رفيع تابعي جليل، روى عن جماعة من الصحابة؛ منهم العبادلة:ابن عمر وابن عباس وابن الزبير. وسواءَّ كان هو واحداً من هؤلاء أو رجلاً آخر من الصحابة؛ فالصحابة كلهم عدول
আমি বলব, হাদীসটির সনদ সহীহ; যে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি তিনি যদি সাহাবী হন আর এটাই এখানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কেননা আব্দুল আযীয ইবনে রুফা একজন বড়মাপের তাবেঈ। তিনি অনেক সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। তাদের মধ্যে রয়েছে ইবনে উমার, ইবনে আব্বাস, ইবনে জুবায়ের। বর্ণনাকারী এই সহাবীদের কেউ হোক কিংবা অন্য কোন সাহাবী হোক সমান কথা। কেননা সকল সাহাবী আদেল (ন্যায়পরায়ণ)। সহীহ আবু দাউদ: হাদীস নং৮৩২। এছাড়াও সাহাবীর নাম সহ হাদীসটি উক্ত তাবেয়ী থেকে পাওয়া যায় । শায়খ আলবনী রহ. সিলসিলাতুস সহীহাহ কিতাবে বলেছেন এই হাদীসটি ইসহাক ইবনে মানসরি আলমারওযী মাসাইলে আহমাদ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ:
৪.عبد العزيز بن رفيع عن ابن مغفل المزني قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم إذا وجدتم الإمام ساجدا فاسجدوا أو راكعا فاركعوا أو قائما فقوموا و لا تعدوا بالسجود إذا لم تدركوا الركعة আব্দুল আযীয ইবনে রুফা ইবনে মুগফ্ফাল আলমুযানী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সা. বলেছেন, যখন তোমরা ইমামকে সিজদারত অবস্থায় পাবে তখন তোমরা সিজদাহ করবে, যখন রুকুরত পাবে তখন রুকু করবে আর যখন দাড়ানো অবস্থায় পাবে তখন দাড়াবে। রুকু না পেলে সিজদাকে রাকয়াত হিসাবে গণ্য করবে না। হাদীসটি উল্লেখ করার পর শায়খ আলবনী বলেছেন, এটা সহীহ সনদ, এর বর্ণনাকারী সবাই ছিকাহ,বুখারী মুসলিমের রাবী। বিস্তারিত দেখুন, সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদীস নং ১১৪৪। মারফু হাদীসের পাশাপাশি অনেক সাহবী থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে তারা রুকু পাওয়াকে রাকয়াত পাওয়া হিসাবেই গণ্য করতেন। তার কিছু নিম্নরুপ:
৫.عن مالك عن نافع :أن عبد الله بن عمر بن الخطاب كان يقول إذا فاتتك الركعة فقد فاتتك السجدة
ইমাম মালেক রহ. নাফে থেকে বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলতেন, যখন তোমার থেকে রুকু ছুটে গেল তখন তোমার থেকে সিজদাহ ছুটে গেল। মুয়ত্তা মালেক: হাদীস নং ১৬। ৬.هُبَيْرَة بن يَرِيم عَنْ عَلِيٍّ، وَابْنِ مَسْعُودٍ، قَالا: مَنْ لَمْ يُدْرِكِ الرَّكْعَةَ فَلا يَعْتَدُّ بِالسَّجْدَةِ হুবাইরা ইবনে মারয়াম আলী ও ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেছেন, যে রুকু পাবে না সে সিজদাহকে রাকয়াত হিসাবে গণ্য করবে না। আলমুজামুল কাবীর লিত-তবরনী: হাদীস নং ৯২৪৬ । আল্লামা হ্য়াছামী বলেছেন, বর্ণনাকারীগন ছিকাহ। মাজমাউজ ঝাওইদ: হাদীস নং ২৪০২
একই সনদে বর্ণিত আরেকটি হাদীস, ৭.هُبَيْرَة بن يَرِيم عن بن مسعود قال من فاته الركوع فلا يعتد بالسجود হুবাইরা ইবনে মারয়াম আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যার রুকু ছুটে যাবে সে যেন সিজদাহকে রাকয়াত গন্য না করে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: হাদীস নং ৩৩৭২। ৮.عَنْ أَبِى الأَحْوَصِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ يَعْنِى ابْنَ مَسْعُودٍ قَالَ : مَنْ لَمْ يُدْرِكِ الإِمَامَ رَاكِعًا لَمْ يُدْرِكْ تِلْكَ الرَّكْعَةَ
আবুল আহওয়াস আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিি ন বলেছেন,যে ইমামকে রুকু অবস্থায় পেল না সে ঐরাকয়াত পেল না। আসসুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্কী: হাদীস নং ২৬৮১। শায়খ আলবানী বলেছেন, সনদ সহীহ। ইরওউল গলীল: ৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। ৯.عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ قَالَ : خَرَجْتُ مَعَ عَبْدِ اللَّهِ يَعْنِى ابْنَ مَسْعُودٍ مِنْ دَارِهِ إِلَى الْمَسْجِدِ ، فَلَمَّا تَوَسَّطْنَا الْمَسْجِدَ رَكَعَ الإِمَامُ ، فَكَبَّرَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَكَعَ وَرَكَعْتُ مَعَهُ ، ثُمَّ مَشَيْنَا رَاكِعَيْنِ حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى الصَّفِّ حِينَ رَفَعَ الْقَوْمُ رُءُوسَهُمْ ، فَلَمَّا قَضَى الإِمَامُ الصَّلاَةَ قُمْتُ وَأَنَا أَرَى أَنِّى لَمْ أُدْرِكْ ، فَأَخَذَ عَبْدُ اللَّهِ بِيَدِى وَأَجْلَسَنِى ، ثُمَّ قَالَ : إِنَّكَ قَدْ أَدْرَكْتَ
যায়দ ইবনে ওহাব বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর সাথে তাঁর বাড়ী থেকে মসজিদে গেলাম। আমরা যখন মসজিদের মাঝে তখন ইমাম রুকুতে গেল তখন আব্দুল্লাহ তাকদিয়ে রুকুতে গেলেন, আমিও তাঁর সাথে গেলাম। এরপর আমরা রুকু অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে কাতারে পৌছলাম, এই সময়ের মধ্যে মুসল্লীরা তাদের মাথা উঠালো। যখন ইমাম নামায শেষ করলেন তখন আমি এই ভেবে দাড়ালাম যে আমি ঐরাকয়াত পায়নি। তখন আব্দুল্লাহ আমাকে হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি রাকয়াত পেয়েছ। আসসুনাসনুল কুবরা লিলবায়হাক্কী; হাদীস নং ২৬৯০। শায়খ আলবানী বলেছেন সনদ সহীহ। ইরওউল গলীল:৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। ১০.عَنْ نَافِعٍ ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : إذَا جِئْت وَالإِمَامُ رَاكِعٌ فَوَضَعْتَ يَدَيْك عَلَى رُكْبَتَيْك قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ ، فَقَدْ أَدْرَكْت
নাফে ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন ইমামের রুকু অবস্থায় যখন আসবে তখন যদি ইমামের মাথা তোলার পূর্বেই তুমি তোমার হাত হাঁটুর উপর রাখ তাহলে তুমি রাকয়াত পাবে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: হাদীস নং ২৫৩৪। শায়খ আলবানী বলেছেন,সনদ সহীহ। ইরওউল গলীল:৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। ১১.عَنْ خَارِجَةَ بْنِ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ: أَنَّ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ، كَانَ يَرْكَعُ عَلَى عَتَبَةِ الْمَسْجِدِ وَوَجْهُهُ إِلَى الْقِبْلَةِ, ثُمَّ يَمْشِي مُعْتَرِضًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ يَعْتَدُّ بِهَا إِنْ وَصَلَ إِلَى الصَّفِّ أَوْ لَمْ يَصِلْ খারিজা ইবনে যাইদ ইবনে ছাবিত বর্ণনা করেন যে, যাইদ ইবনে ছাবিত মসজিদের চৌকাঠে রুকু করতেন আর তাঁর চেহারা ক্বিবলামখী থাকত। এরপর হেঁটে হেঁটে সামনে যেতেন। তিনি এটাকে রাকয়াত হিসাবে গণ্য করতেন, কাতরে পৌছান কিংবা না পৌছান। শরহে মায়ানিল আছার: হাদীস নং ২৩২৬। শায়খ আলবানী রহ. বলেছেন, সনদ ভাল। ইরওউল গলীল: ৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। উক্ত মাসয়ালার ক্ষেত্রে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে শায়খ আলবানী রহ. বলেন,
وردت عن جماعة من الصحابة بأسانيد صحيحة أن مدرك الركوع مدرك للركعة، ولم يصح عن أحد منهم خلاف ذلك
একদল সাহাবী থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, যে রুকু পাবে সে রাকয়াত পাবে। একজন সাহাবী থেকেও সহীহ সূত্রে এর বিপরীত বর্ণিত নেই। সহীহ আবু দাউদ: ৮৩২ নং হাদীসের আলোচনায়। তাড়াহুড়ো না করার দলীল:
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إذا أتيتم الصلاة فلا تأتوها وأنتم تسعون وأتوها تمشون وعليكم السكينة فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فاقضوا অর্থ: আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা তাড়াহুড়ো করে নামাযে আসবে না, ধীরস্থীর ভাবে আসবে। ইমামের সাথে যতটুকু পাবে পড়বে আর যা পাবে না পরে পড়বে। সুনানু নাসায়ী: হাদীস নং ৮৬১। শায়খ আলবনী বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। এই হাদীসে পষ্টভাবে তাড়াহুড়ো করে নামাযে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে যেভাবেই হোক রুকু পেলে রাকয়াত রাকায়অত পেয়েছে বলেই গন্য হবে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, হাদীসের আলোকে মুসল্লাীর রুকু পাওয়াকে রাকায়াত পাওয়া হিসাবেই ধরা হবে। আর নামাযে ধীরস্থীর ভাবে আসতে হবে, তাড়াহুড়ো করা যাবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকু আদায় করতে হবে বাদবাকী পরে পড়তে হবে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, পুরো নামায পাওয়া জন্য কোন চেষ্টা থাকবে না, মনে কোন চিন্তা থাকবে না। এই হাদীসে শুধু নামাযের জন্য মাসজিদে আসার সময় শান্ত ভাবে আসতে বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 23
ফরজ নামাজের পর জামাতের সাথে মুনাজাত করা জাবে কী।
20 Dec 2025
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । নিচে এব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি । আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় আলোচ্য: (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা, (২) মুনাজাত করার সময় হাত উঠানো এবং (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিকর ও মুনাজাত করা। (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা। নামায মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাযের শেষে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি ও আবেগ আসে। এই সময়ে তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে যাওয়া মুমিনের উচিত নয়। নামাযের পরে যতক্ষণ সম্ভব নামাযের স্থানে বসে দুআ মুনাজাত ও যিকিরে রত থাকা উচিত। মুমিন যদি কিছু না করে শুধুমাত্র বসে থাকেন তাও তাঁর জন্য কল্যাণকর। নামাযের পরে যতক্ষণ মুসল্লী নামাযের স্থানে বসে থাকবেন ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন:
إَذَا صَلَّى الْمُسْلِمُ ثُمَّ جَلَسَ فِيْ مُصَلاَّهُ لَمْ تَـزَلِ الْمَلاَئِكَةُ تَدْعُو لَهُ اَللَّهُمَّ اغْـفِـرْ لَـهُ اَللَّهُمَّ ارْحَـمْهُ مَا لَـمْ يُـحْدِثْ أَوْ يَـقُمْ
যদি কোনো মুসলিম সালাত আদায় করে, এরপর সে তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকে, তবে ফিরিশতাগণ অনবরত তাঁর জন্য দুআ করতে থাকেন : হে আল্লাহ একে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, একে রহমত করুন। যতক্ষণ না সে ওযু নষ্ট করে বা তাঁর স্থান থেকে উঠে যায় ততক্ষণ। হাদীসের শিক্ষার আলোকে আমারা দেখতে পাই যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরে কিছু সময় বসে যিক্র ও মুনাজাত করা সুন্নাত সম্মত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরের দুআ কবুল হয় বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। হযরত আবু উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো: কোন্ দুআ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়? তিনি উত্তরে বলেন :
جَـوْفُ الليـلِ الآخِـرُ، ودُبـُر الصلواتِ الـمكتـوبات
রাত্রের শেষ অংশ ও ফরয নামাযের শেষে (দুআ বেশি কবুল হয়)। এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে দুআ করা একটি সুন্নাত সম্মত নেক আমল। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত নামাযের শেষে কিছু সময় যিকর ও মুনাজাতে কাটানো। এধরনের আরো কিছু দোয়া নামাযের পর রাসূল সাঃ করতেন। (২)হাত তুলে মুনাজাত করা। দুআ-মুনাজাতের একটি আদব হলো, দুই হাত তুলে দুআ করা। এই অর্থে একটি হাদীসে বলা হয়েছে: নিশ্চয় আল্লাহ লাজুক দয়াবান। যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দুখানা হাত উঠায় (দুআ করতে), তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। অন্য বর্ণনায় সালমান ফারসী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا رَفَـعَ قَـوْمٌ أَكُـفَّـهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُوْنَهُ شَيْئًا إِلاَّ كَـانَ حَـقًّا عَـلَى اللهِ أَنْ يَـضَـعَ فِـيْ أَيْدِيْـهِمْ الَّذِيْ سَأَلُوْا
যখনই কিছু মানুষ আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য তাদের হাতগুলিকে উঠাবে, তখনই আল্লাহর উপর হক্ক (রহমতের দায়িত্ব) হয়ে যাবে যে তারা যা চেয়েছে তা তিনি তাদের হাতে প্রদান করবেন। হাফিয হাইসামী উল্লেখ করেছেন যে, হাদীসটির সনদ সহীহ। অন্য হাদীসে মালিক ইবনু ইয়াসার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
إِذَا سَأَلْتُمْ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا
তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন হাতের পেট দিয়ে চাইবে, হাতের পিঠ দিয়ে চাইবে না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। রাসূলূল্লাহ ((সা.) বিভিন্ন সময়ে হাত উঠিয়ে দুআ করতেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন :
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ r يَرْفَعُ يَدَيْهِ يَدْعُو حَتَّى إِنِّي لأَسْأَمُ لَهُ مِمَّا يَرْفَعُهُمَا يَدْعُو اللَّهُمَّ فَإِنَّمَا أَنَا بَشْرٌ فَلا تُعَذِّبْنِي بِشَتْمِ رَجُلٍ شَتَمْتُهُ أَوْ آذَيْتُهُ
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত দুখানা উঠিয়ে দুআ করতেন, এমনকি আমি তাঁর (দীর্ঘ সময়) হাত উঠিয়ে দুআ করাতে ক্লান্ত ও অস্থির হয়ে পড়তাম; তিনি এভাবে দুআয় বলতেন : হে আল্লাহ, আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি কোনো মানুষকে গালি দিয়ে ফেললে বা কষ্ট দিলে আপনি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিবেন না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অন্যান্য সময়ের ন্যায় নামাযের পরেও মুনাজাতের সময় হাত উঠানো উত্তম। তবে যে ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা ফযীলত বাদ দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে ফযীলত বাদ দেওয়াই সুন্নাত। যেমন, কিবলামুখী হয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। কিন্তু নামাযের পরে ইমামের জন্য এই মুস্তাহাব পরিত্যাগ করাই সুন্নাত। অনেক হাদীস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক সময়, বরং অধিকাংশ সময় দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত উঠাতেন না। বরং শুধু মুখে দুআ-মুনাজাত করতেন। সাহাবীগণ থেকেও আমরা অনুরূপ কর্ম দেখতে পাই। এ সকল ক্ষেত্রে আমরা কী করব? আমরা কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রেও হাত উঠিয়ে দুআ করা উত্তম এবং হাত না উঠানো অনুচিত? তাহলে তো স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্ম অনুচিত পর্যায়ের হয়ে গেল। না কি আমরা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো উত্তম, তবে না উঠালেও দোষ নেই? সেক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাজ অনুত্তম বলে গণ্য হলো। না কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত না উঠানোই উত্তম, তবে হাত উঠানোতে দোষ নেই? অথবা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো জায়েয নয়? তাহলে হাত উঠানোর ফযীলতে বর্ণিত হাদীসের কী হবে?
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যে সকল সময়ে তিনি দুআ-মুনাজাতে হাত উঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত উঠানো সুন্নাত বলে গণ্য হবে। যেমন আরাফার মাঠে, ইসতিসকার দুআয়, যুদ্ধে শুরুতে, বিশেষ আবেগের ক্ষেত্রে, ইত্যাদি। আর যেখানে ও যে সময়ে তিনি হাত উঠাননি বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত না-উঠানো সুন্নাত। অধিকাংশ নিয়মিত মাসনূন দুআ এই প্রকারের। বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে, এ সকল মুনাজাত পালনের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দু হাত তুলে মুনাজাত করেন নি। আমরা দেখছি যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘুরে বসা, ঠোট নাড়া, কথা বলা ইত্যাদি সব কিছুর বর্ণনা দিচ্ছেন, কিন্তু কখনোই বলছেন না যে, তিনি দুই হাত তুলে এই কথাগুলি বলেছিলেন। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরের মুনাজাতের ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ নিয়মিত দুআ- মুনাজাতের ক্ষেত্রেই তিনি হাত উঠাতেন না। উপরের বিষয়গুলি সবই সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। এ সকল তথ্যের বিষয়ে কোনো মতভেদ আছে বলে জানি না। নামাযের পরে সামষ্টিক মুনাজাতের পক্ষের কোনো আলেমও কোথাও উল্লেখ করেন নি বা দাবী করেন নি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীগণ কখনো ফরয সালাতের সালাম ফেরানোর পরে উপস্থিত মুসাল্লীদের নিয়ে সমবেতভাবে দুআ করেছেন বলে কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নামাযের পরে দুআয় একাকী হাত উঠানোর বিষয়ে কিছু কথা বর্ণিত হয়েছে। গত শতাব্দীর কোন কোন আলেম উল্লেখ করেছেন যে, একদিন ফজরের নামাযের পরে ঘুরে বসে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলে দুআ করেছিলেন। তাঁরা বলেন, ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেছেন, ইয়াযিদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) বলেন: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ r الْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ انْحَرَفَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালামের পরে ঘুরে বসলেন এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন। এই হাদীসটি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ও অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। তবে এ সকল গ্রন্থে সংকলিত হাদীসের ভাষা নিুরূপ: আসওয়াদ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালাম ফেরানোর পরে ঘুরে বসলেন। কোন গ্রন্থেই এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন এই অতিরিক্ত কথাটুকু নেই। এজন্য আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান বলেছেন, হাদীসটি নাযীর হুসাইন মুঙ্গীরী এভাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি কোনো গ্রন্থে তা খুঁজে পান নি এবং এর সনদ জানতে পারেন নি। অন্য হাদীসে ফাদল ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
الصَّلاةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا إِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا، (فَهِيَ خِدَاجٌ)
সালাত দুই রাকআত, দুই রাকআত করে, প্রত্যেক দুই রাকআতে তাশাহ্হুদ পাঠ করবে, বিনীত হবে, কাতর হবে, অসহায়ত্ব প্রকাশ করবে, বেশি করে সাহায্যা প্রার্থনা করবে এবং তোমার দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে দুই হাতের পেট তোমার মুখের দিকে করবে এবং বলবে: হে প্রভু, হে প্রভু। যে এরূপ না করলো তার সালাত অসম্পূর্ণ। এই হাদীসে নামাযের পরে হাত তুলে দোওয়া করার কথা বলা হয়েছে। তবে স্পষ্টতই হাদীসটি নফল নামাযের বিষয়ে, যা দুই রাকআত করে পড়তে হয়। সর্বোপরি হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম বুখারী, উকাইলী, যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটির দুর্বলতা উল্লেখ করেছেন। আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) এক ব্যক্তিকে দেখেন যে, সে সালাত শেষ করার পূর্বে তার দুই হাত উত্থিত করে রেখেছে। ঐ ব্যক্তি সালাত শেষ করলে তিনি বলেন:
إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ r لَـمْ يَكُـنْ يَرْفَـعُ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلاَتِهِ.
রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর দুই হাত উঠাতেন না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। সালাত শেষের আগে হাত উঠাতেন না থেকে মনে হয় সালাত শেষের পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলতেন। এখানে ফরয বা নফল সালাতের কথা উল্লেখ করা নেই। তবে যে ব্যক্তিকে ইবনু যুবাইর কথাটি বলেছিলেন সে ব্যক্তি বাহ্যত নফল সালাত আদায় করছিল এবং এজন্যই একাকী সালাতের মধ্যে দুই হাত তুলে দোওয়া করছিল। তার পরেও এই হাদীসের ভিত্তিতে আমরা দাবি করতে পারি যে, তিনি নফল ও ফরয উভয় সালাতের পরেই হাত তুলে দুআ করতেন। তবে অন্যান্য অগণিত সহীহ হাদীস, যেগুলিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফরয সালাতের পরের দুআ, যিকর, বক্তৃতা ও অন্যান্য কর্মের বিবরণ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে সেগুলি থেকে জানা যায় যে, তিনি ৫ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরের দুআ-মুনাজাত করার সময় হাত তুলতেন না। সে সকল হাদীস ও এ হাদীসটির সমন্বয়ে আমরা ধারণা করতে পারি যে, তিনি সম্ভবত মাঝে মাঝে সালাত শেষে দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত তুলতেন বা নফল সালাতে দুআ করলে সালাত শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এ সবই একা একা হাত তুলে দুআ করার বিষয়ে। ফরয নামাযের পরে মুক্তাদীদেরকে নিয়ে সমবেতভাবে হাত তুলে বা হাত না তুলে দুআ তিনি কখনো করেননি। এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিকর ও মুনাজাত করা। নামাযের পরে জামাতবদ্ধ মুনাজাত গত কয়েকশত বৎসর যাবৎ চালু হয়েছে। তাতে কোনো প্রকারের ফযীলত আছে বলে আমি জানতে পারি নি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের যুগে এইরূপ মুনাজাতের প্রচলন ছিল না বিধায় কোনো কোনো আলিম একে বিদআত বলেছেন। আমরা জানি যে, নামাযের পরে মুনাজাত করা ও মুনাজাতে হাত উঠানোর ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একাকী মুনাজাত করলে এই দুইটি ফযীলতই পলিত হয়। সমবেতভাবে মুনাজাত করার কোনো ফযীলত হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি। এক্ষেত্রে আমাদের আশা হলো, একজন মুনাজাত করবেন এবং সমবেত সকলেই আমিন বলবেন, এতে হয়ত আল্লাহ সকলের আবেদনে মুনাজাতটি কবুল করবেন। এ জন্য অবশ্যই ইমামকে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে মুনাজাত করতে হবে। এতে মাসবূক মুসাল্লীদের নামায আদায় বিঘ্নিত হবে। আর ইমাম যদি মনে মনে মুনাজাত করেন তবে তো কিছুই হলো না। ইমাম একাকী মুনাজাত করলেন। মুক্তাদিগণ কিছুই না করে হাত তুললেন ও নামালেন। পক্ষান্তরে একাকী মুনাজাত করলে নিজের মনের আবেগ ও প্রয়োজন অনুসারে মুনাজাত করা যায়। এতে মুনাজাতের ফযীলত ও মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি সাধিত হয়, কিন্তু কারো নামাযের ক্ষতি হয় না। এভাবে আমরা বুঝতে পারছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতই উত্তম। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে উল্টে ফেলেছি। তাছাড়া রাসূল সাঃ পরের যুগগুলিতেও সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের যুগেও কেউ কখনো ফরয নামাযের পরে সমবেতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেননি। তাঁরা সুযোগ পেলে এই সময়ে ব্যক্তিগতভাবে যিক্র ও মুনাজাত করতেন। ) হাদীস থেকে বুঝা যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)যিকর ও মুনাজাত একাকী পালন করতেন। জামাতে উপস্থিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে তা আদায় করতেন না। কখনোই সাহাবীগণ নামাযের পরের মুনাজাতে তাঁর সাথে শরীক হয়েছেন বলে বর্ণিত হয় নি। প্রায় অর্ধ শত সাহাবী থেকে বর্ণিত মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীসগুলির একটি হাদীসেও বর্ণিত হয় নি যে, একদিন একটি বারও তিনি মুক্তাদিগণের সাথে একত্রে মুনাজাত করেছেন। পক্ষান্তরে সাধারণ ফযীলত জ্ঞাপক হাদীসের আলোকে অনেক আলিম একে সমর্থন করেছেন। তাঁরা এই জামাতবদ্ধ মুনাজাত-কে মুস্তাহাব বলেছেন। চার ইমাম ও পূর্ববর্তী সকল ফকীহ বলেছেন যে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ হয়ে যায়। হাদীস শরীফেও বলা হয়েছে যে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু এবং সালামেই সালাত শেষ। এগুলির সাথে সঙ্গতি রক্ষার জন্য তাঁরা বলেছেন যে, এই মুনাজাত নামাযের কোনো অংশ নয়। নামাযের পরে অতিরিক্ত একটি মুস্তাহাব কাজ। নামায সালামের সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়, তবে কেউ যদি এর পরে অন্য কোনো মুস্তাহাব কাজ করে তাহলে দোষ নেই। এখানে মূল হলো মনের আবেগসহ মাসনূন মুনাজাতগুলি পালন করা। নামাযের পরে মুনাজাতের ক্ষেত্রে একাকী মুনাজাতই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রীতি। এছাড়া মনোযোগ আনয়ন ও মাসনূন বাক্য পালনের জন্যও একাকী মুনাজাত উত্তম। জামাতে ইমামের সাথেও মুনাজাত করা যেতে পারে। তবে সদাসর্বদা এইরূপ জামাতবদ্ধ মুনাজাত করা, একে জরুরী মনে করা বা তা পরিত্যাগকারীকে খারাপ মনে করা খুবই অন্যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন । আমীন।
প্রশ্নঃ 24
আপনি এক টিভি প্রশ্ন উত্তরে বলেছেন বুকের উপর হাত রাখার কোন সহি দলিল নাই। স্বালাতে মুবাশশির বইটির লেখক আব্দুল হামীদ ফাইযী তার বইতে লিখছে মহানবী(সঃ)উভায় হাতকে বুকের উপর রাখতেন দলিল হিসাবে বলছেন আবুদাউদ ৭৫৯ নংইবনে খুযাইমাহ ৪৭৯ নংআহমাদ মুসনাদ, আবিশ শায়খ প্রমুখ। বুকের উপরেই হাত বাঁধা সুন্নাহতে প্রমাণিত। সিফাতু স্বালাতিন নাবী(সঃ) আলবানী।
20 Dec 2025
আপনাকে ধন্যবাদ। সহীহ হাদীসে সাহাবী ওয়ায়েল ইবনে হুজর রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর নামাযের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى অর্থাৎ (রাসূলুল্লাহ সা. ) তাঁর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখলেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২৩। সহীহ বুখারীতে এই বিষয়ে বর্ণিত আরেকটি হাদীস হলো,
عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُونَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلاَةِ. قَالَ أَبُو حَازِمٍ لاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ يَنْمِي ذَلِكَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
তাবেঈ আবু হাযিম সাহাবী সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মানুষদের আদেশ দেওয়া হতো সালাতের মধ্যে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখতে। আবু হাযিম বলেন, এই নির্দেশকে তিনি নাবীউল্লাহ সা. এর প্রতি সম্পৃক্ত করেছেন বলেই আমি জানি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং৭৪০। হাত রাখার ব্যাপারে সহীহ সূত্রে অনেক সাহাবী থেকে শুধু এতটুকুই জানা যায় অর্থাৎ বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা। হাত রাখার স্থান নিয়ে বর্ণিত হাদিসগুলো একটিও ইলমী গবেষণার আলোকে সহীহ নয়। ইমাম তিরমিযী রহ. এর বক্তব্য আমাদের এই বিষয়ে একটি সঠিক সমাধান দিতে পারে। অন্য একজন সাহাবী থেকে উপরের অনুরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করে তিনি বলেছেন,
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم والتابعين ومن بعدهم يرون ا يضع الرجل يمينه على شماله في الصلاة ورأى بعضهم أن يضعهما فوق السرة ورأى بعضهم أن يضعهما تحت السرة وكل ذلك واسع عندهم
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবী, তাবেয়ী এবং পরবর্তী আলেমদের নিকট আমল এর উপরই। তারা মনে করেন ব্যক্তি নামাযের মধ্যে তার ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখবে। তাদের কেউ কেউ মনে করেন নাভির উপর রাখবে আবার কেউ কেউ মনে করেন নাভীর নিচে রাখবে। তাদের নিকট উভয় পদ্ধতি গ্রহনের অবকাশ আছে। জামে তিরমিযী,২৫২ নং হাদীসের আলোচনা। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, এই বিষয়ে মাতামাতি না করে আমাদের উচিৎ যে কোন একটি পদ্ধতির উপর আমল করা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত সালাতের মধ্যে হাত বাঁধার বিধান, একটি হাদীসতাত্ত্বিক পর্যালোচনা বইটি।
প্রশ্নঃ 25
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ, আপানার কাছে আমার জানার বিষয় হল, জামাতে সালাত আদায় করার সময় মুক্তাদিরা কখন দাড়িয়ে কাতার সোজা করবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ইকামতের শুরুতেই মুসল্লিরা দাড়িয়ে যাবে এবং কাতার সোজা করবে। সাহাবীদের আমল এমনই ছিল। তাঁরা একামত শুরু হওয়ার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন। আর কাতার সোজা করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ সা. এই ব্যাপারে আদেশ দিয়েছেন। তবে ইমাম সাহেব মসজিদে আসার পূর্বে মুক্তাদীদের নামাযে দাড়াতে রাসূল (স.) নিষেধ করেছেন। এই কারনে অধিকাংশ আলেমের মতে ইমাম সাহেব না থাকা অবস্থায় মুক্তাদীরা ইকামতের সময় নামাযে দাড়াবে না। দলীল নিম্নরূপ:
.১عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ تُقَامُ لِرَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَيَأْخُذُ النَّاسُ مَصَافَّهُمْ قَبْلَ أَنْ يَقُومَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- مَقَامَهُ
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখা গেলে ইকামত শুরু করা হত। আর তিনি তাঁর জায়গায় পৌছানোর পূর্বেই লোকেরা তাদের কাতার গ্রহন করতেন (অর্থাৎ কাতার সোজা করে দাড়িয়ে থাকতেন)। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৬। উল্লেখ্য সহীহ মুসলিমের এই স্থানে এই বিষয়ে আরো কয়েকটি হাদীস বর্ণিত আছে যা উক্ত হাদীসের বক্তব্যকে সমর্থন করে। .২عن بن جريج قال أخبرني بن شهاب أن الناس كانوا ساعة يقول المؤذن الله أكبر الله أكبر يقيم الصلاة يقوم الناس إلى الصلاة فلا يأتي النبي صلى الله عليه و سلم مقامه حتى يعدل الصفوف ইবনে জুরাইজ বলেন, আমাকে ইবনে শিহাব বলেছেন যে, মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলে ইকামত শুরু করা মাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সা. নিজের জায়গায় পৌছাতে পৌছাতে কাতার সোজা হয়ে যেত। মুসান্নফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ১৯৪২। হাদীসটির সনদে সাহাবীর নাম নেই তাই হাদীসটি মাকতু। তবে উপরে বর্ণিত সহীহ হাদীস এই বক্তব্যকে সমর্থন করছে। উপরুক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা আমারা জানতে পারছি যে, স্বাভাবিক অবস্থায় ইকামতের শুরুতেই মুক্তাদীরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে এবং দ্রুত কাতার সোজা করবে। কাতার সোজা করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা. খুবই গুরুত্ব দিতেন। এই বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। নিচে একটি হাদীস উল্লেখ করা হল। النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ يَقُولُ : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ
অর্থ: সাহাবী নুমান বিন বাশীর বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতার সোজা করবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিবেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং৭০৭
তবে ইমাম সাহেব উপস্থিত না থাকলে অধিকাংশ আলেমের নিকট মুক্তাদীরা দাড়াবে না। ইমাম সাহেবকে দেখার পর দাড়াবে। এই বিষয়ে স্পষ্ট হাদীস আছে। عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ
আব্দুল্লাহ ইবনে আবি কাতাদাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (স.) বলেছেন, যখন নামাযের ইকামত দেয়া হবে তখন তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত দাড়াবে না। চুপ করে বসে থাকবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮। উপরের আলোচনা থেকে আমারা বুঝতে পারলাম যে, জামায়াতে সালাত আদায় করার সময় মুক্তাদীরা ইকামতের শুরুতেই দাড়াবে এবং কাতার সোজা করবে তবে ইমাম সাহেব উপস্থিত না থাকলে ইমাম সাহেব আসার পর দাঁড়াবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 26
কষ্ট করে ট্রেনে চড়ে গিয়ে কিশোর শোলাকিয়ায় নামাজ পড়া কি বেশি সওয়াব? বিশ্ব এজতেমার মুনাজাতে শরীক হওয়াতে কি বিশেষ কোন ফযীলত আছে?
20 Dec 2025
বেশি সওয়াবের আশায় ঈদের নামাজ পড়ার জন্য শোলাকিয়ায় যাওয়া একটি অনর্থক কাজ। কেননা সওয়াবের আশা করা যায় যদি সফরটি কোন নেক আমলের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। আর শোলাকিয়া গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া কোন ইবাদত বা নেক আমল নয়। অর্থাৎ অন্যমাঠে ঈদের নামায পড়া আর শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়া সমান বিষয়। সুতরাং শোলাকিয়া ঈদের মাঠে ঈদের নামায পড়ার মধ্যে বেশি সওয়ার আছে মনে করলে বিদআত হয়ে যাবে।তবে যদি এই উদ্দেশ্যে যাওয়া হয়ে থাকে যে, ইমাম সাহেবের বয়ানের মাধ্যমে কিছু এলেম অর্জন হবে বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত করা যাবে তাহলে সওয়াবের আশা করা যায়। কেননা এই নেক আমল বা সওয়াবের কাজ। বিশ্বএজতেমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমনই, অর্থাৎ এজতেমায় ওয়াজ শোনার জন্য, দাওয়াতের কাজে নাম লেখানোর জন্য অথবা বড় কোন আলেম এসেছেন, তার সাথে দেখা করে সালাম দেয়া ইত্যাদি এগুলো সওয়াবের কাজ। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে যাওয়া যে, সেখানে অনেক মানুষ দোয়া করছে ফলে উক্ত দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটা দোষণীয় এবং আপত্তিকর। কারন শেখার জন্য মানুষ লাগে, দোয়ার জন্য মানুষ লাগে না। বান্দা যখন যে অবস্থাতেই আল্লাহর কাছে একাগ্রচিত্তে চান আল্লাহ তার ডাকে সাড়ে দেন। আল্লাহ বলেন: وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
অর্থঃ আমার বান্দা যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দিই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। সূরা- বাকারা, আয়াত- ১৮৬। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 27
Tahiyatul mosjid shuru korasi othoba ak rakat por jodi foroj namajer ekamot hoy,tokhon namaj sarar podhoti ki? salam firate hobe ki?
20 Dec 2025
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়া অবস্থায় ফরজ নামায শুরু হলে করণীয়এবং ফরজ নামাযের সময় নফল শুরু করার বিধান:
হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন,
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلاَّ الْمَكْتُوبَة অর্থ: যখন নামাযের ইকামত দেয়া হয় তখন ফরজ নামায ছাড়া অন্য কোন নামায নেই। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১০। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে আলেমগণ ঐক্যমত পোষন করেছেন যে ফরজ নামাযের ইকামত হলে কোন নফল নামায শুরু করা যাবে না। তবে হানাফী এবং মালেকী মাযহাবের আলেমগন বিশেষ সর্তসাপেক্ষে শুধুমাত্র ফজরের দুই রাকআত সুন্নত নামায পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। শর্তসমূহ নিম্মরুপ:
১. রাকআত পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা থাকা। ২. মসজিদের বাইরে অথবা পিছনের দিকে কাতার থেকে দূরে কোথাও পড়া। ইমাম নববী রহ. উক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন, فِيهَا النَّهْي الصَّرِيح عَنْ اِفْتِتَاح نَافِلَة بَعْد إِقَامَة الصَّلَاة ، سَوَاء كَانَتْ رَاتِبَة كَسُنَّةِ الصُّبْح وَالظُّهْر وَالْعَصْر أَوْ غَيْرهَا ، وَهَذَا مَذْهَب الشَّافِعِيّ وَالْجُمْهُور ، وَقَالَ أَبُو حَنِيفَة وَأَصْحَابه : إِذَا لَمْ يَكُنْ صَلَّى رَكْعَتَيْ سُنَّة الصُّبْح صَلَّاهُمَا بَعْد الْإِقَامَة فِي الْمَسْجِد مَا لَمْ يَخْشَ فَوْت الرَّكْعَة الثَّانِيَة . وَقَالَ الثَّوْرِيّ : مَا لَمْ يَخْشَ فَوْت الرَّكْعَة الْأُولَى . وَقَالَتْ طَائِفَة : يُصَلِّيهِمَا خَارِج الْمَسْجِد وَلَا يُصَلِّيهِمَا بَعْد الْإِقَامَة فِي الْمَسْجِ
এই হাদীসের ভিতর স্পষ্ট ভাবে ইকামতের পরে নফল নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। চাই সেটা সুন্নাতে রাতেব হোক, যেমন, ফজর, যোহর, আসরের সুন্নত হোক বা অন্য সুন্নত হোক (যেমন, তাহিয়্যাতুল মসজিদ)। এটাই ইমাম শাফেয়ী এবং জমহুর উলামায়ে কেরামের অভিমত। আবু হানিফা এবং তার ছাত্ররা বলেছেন, ফজরের সুন্নত না পড়তে পারলে মসজিদের মধ্যে পড়ে নিবে যদি দ্বিতীয় রাকআত ছুটে না যায়। ইমাম ছাওরি বলেছেন, যদি প্রথম রাকআত ছুটে না যায়। একদল আলেম এই অভিমত ব্যক্ত করেছন যে, ইকামতের পর মসজিদের বাইরে পড়বে, ভিতরে পড়বে ন। শরহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম ৩/২৮। তিনি আরো বলেছেন, وقال مالك مثله ان لم يخف فوت الركعة فان خافه صلى مع الامام
এবং মালেক রহ. অনুরুপ মত পোষন করেন, যদি রাকআত ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকে। সুতরাং যদি নামায ছুটে যাওয়ার ভয় করে তাহলে ইমামের সাথে ফরজ নামায পড়বে। আলমাজমু ফি শরহিল মুহাযযাব ৪/২১২
আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
قال الظواهر : من كان يصلي فأقيمت انقطعت صلاته وليس هذا عند أحد ، وأما إذا أقيمت فلا يشرع في صلاة إلا في سنتي الفجر عند الأحناف والموالك ، ومذهب الأحناف أن يأتي بهما بشرط وجدان الركعة وأدائهما خارج المسجد ، وأما الموالك فقال مالك : يأتي بهما خارج المسجد بشرط رجاء وجدان الركعتين
আহলে জাহেরগণ বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি (সুন্নত) নামায পড়ে আর ফরজ নামাযের ইকামত দেয়া হয় তখন সে সুন্নত নামায ছেড়ে দিবে। অন্য কেউ এমন কথা বলেনি। পক্ষান্তরে যখন ইকামত দেয়া হয় তখন সুন্নত নামায শুরু করা যাবে না। তবে হানাফী এবং মালেকীদের নিকটে ফজরের সুন্নত আদায় করবে। হানাফীদের অভিমত হলো রাকআত পাওয়া যাবে এবং মসজিদের বাইরে আদায় করবে এই শর্তে আদায় করা যাবে।আর ইমাম মালেক র. বলেছেন, মসজিদের বাইরে এই শর্তে আদায় করা যাবে যে, দুই রাকআত পাওয়ার আশা থাকবে। আলআরফুশ শাজি লিল কাশ্মীরী ১/৪৭০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.), আবু দারদা (রা.) প্রমুখ সাহাবী এবং কতিপয় তাবেয়ী থেকেও বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামায়াত শুরু হওয়ার পরেও মসজিদের বাইরে, রাস্তায় বা দূরবর্তী কোন কোণে সুন্নাত পড়ে জামাতে শরীক হতেন। শরহে মায়ানিল আছার ১/২৫৪-২৫৬। তবে অনেকগুলো হাদীসে রাসূল সা. ফজরের জামাতয়াত শুরু হলে সুন্নত পড়তে নিষেধ করেছেন। যেমন: মালিক ইবনে বুহাইনা (রা.) থেবে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন,
أُقِيمَتْ صَلاَةُ الصُّبْحِ فَرَأَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- رَجُلاً يُصَلِّى وَالْمُؤَذِّنُ يُقِيمُ فَقَالَ أَتُصَلِّى الصُّبْحَ أَرْبَعًا.
ফজরের ইকামত শুরু হলো।রাসূল (সা.) দেখেন মুয়াজ্জিনের ইকামতের সময় এক ব্যক্তি নামায (সুন্নত নামায) পড়ছে। তখন তিনি বলেন, তুমি কি ফজরের সালাহ চার রাকআত আদায় করবে। মুসলিম, হাদীস নং৭১১। অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন,
أقيمت صلاة الصبح فقام رجل يصلي الركعتين فجذب رسول الله صلى الله عليه و سلم بثوبه فقال أتصلي الصبح أربعا
ফজরের নামাযের ইকামতের পরে এক ব্যক্তি দু রাকআত সুন্নত পড়তে শুরু করে, তখন রাসূল (সা.) তার কাপড় ধরে টান দিয়ে বললেন,তুমি কি ফজর চার রাকআত পড়বে। মুসানাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১৩০। শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে কিছু কিছু আলেম বলেন, সুন্নত বা নফল নামায পড়াকালীন সময়ে যদি ফরজ নামায শুরু হয়ে যায় তাহলে সুন্নত ছেড়ে দিয়ে ফরজে শরীক হতে হবে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে সুন্নাত ছেড়ে দিবে না বরং হালকাভাবে আদায় করবে। নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল:
আল্লামা কাশ্মীরী র. উক্ত হাদীসের আলোচনায় বলেন,
ذهب طائفةٌ من أهل الظواهر إلى ظاهر الحديث، وقالوا: إن أُقِيمَتِ الصلاةُ وهو في خلال الصلاة بَطَلَتِ صلاته، ولم يَذْهَب إليه أحدٌ من الأئمة غيرها. وقال الجمهور: بل يُتِمُّها ولا يقطعها
আহলে জাহেরদের একটি দল হাদীসের বাহ্যিক অর্থ গ্রহন করেন। তারা বলেন, সুন্নত নামায পড়া অবস্থায় ফরজ নামাযের ইকামত দিলে সুন্নত বাতিল হয়ে যায়। তারা ছাড়া ইমামদের কেউ এমন কথা বলেননি। অধিকাংশ আলেম বলেছেন, সুন্নত পূর্ণ করবে, ছেড়ে দিবে না। ফাইজুল বারী ফি শরহি সহীহ বুখারী ২/৪২২। প্রখ্যাত হাম্বলী ফকীহ শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে কুদামাহ আল মুকাদ্দেসী বলেন, وإذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة فإن كان نافلة أتمها إلا أن يخشى فوات الجماعة فيقطعها
যখন ফরজ নামাযের ইকামত দেয়া হয় তখন ফরজ ব্যতিত অন্য কোন নামায নেই। যদি ঐসময় নফল (সুন্নত) নামায পড়তে থাকে তাহলে পূর্ণ করবে। তবে জামায়াত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে ছেড়ে দিবে। ঝা-দুল মুসতাক্বনী ১/৫৩
সউদি আরবের প্রখ্যাত হাম্বলী ফকীহ আল্লামা শানকিতি বলেন,
أن تقام الصلاة وأنت في أثناء الصلاة، فإن غلب على ظنك أنك سوف تتم الصلاة قبل أن يركع الإمام ويمكنك أن تدرك الركعة معه فحينئذ تتم الصلاة على قول جماهير العلماء، خلافاً للظاهرية وأهل الحديث، حيث قالوا: إذا أقيمت الصلاة -حتى ولو غلب على ظنك أنك تدرك الإمام في ركوعه- فإنك تقطع هذه الصلاة، ولو كنت في آخرها؛ لظاهر قوله صلى الله عليه وسلم: ( فلا صلاة إلا المكتوبة ) والصحيح مذهب الجمهور؛ لأن الله يقول -كما في التنزيل- : { وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ } [محمد:৩৩]، فنهانا عن إبطال العمل، والنبي صلى الله عليه وسلم يقول: ( إن خير أعمالكم الصلاة )، فنهانا الله عن إبطال العمل، والصلاة عمل، فلا نبطلها إلا بوجه بين، فإنه إذا غلب على ظنك أنك مدرك للركعة جمعت بين الأمرين، والقاعدة: (الجمع بين النصين أولى من العمل بأحدهما وترك الآخر)
অর্থ: নামাযের ইকামত দেয়া হচ্ছে আর তুমি সুন্নত নামায পড়ছো এই অবস্থায় যদি তোমার ধারণায় প্রবল হয় যে, ইমাম সাহেব রুকু করার পূর্বেই তুমি সুন্নত শেষ করতে পারবে এবং তোমার পক্ষে তার সাথে রাকআত পাওয়া সম্ভব তাহলে জমহুর উলামায়ে কেরামের অভিমত হলো তুমি সুন্নত নামায পূর্ণ করবে। আহলে জাহের এবং আহলে হাদীসগণ এর বিপরীত মত পোষন করেন। তারা বলেন, যখন ইকামত দেয়া হবে তখন তুমি এই নামায ছেড়ে দিবে, যদিও তোমার ধারণায় প্রবল হয় যে, তুমি ইমাম কে রুকুতে পাবে, কিংবা তুমি নামাযের শেষ দিকে থাক। উক্ত হাদীসের জাহেরী অর্থ গ্রহন করে তারা একথা বলেন।সহীহ হলো জমহুরের মাজহাব। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,তোমরা তোমাদের আমলকে নষ্ট করো না। (সূরা মুহাম্মাদ:৩৩)। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল বাতিল করতে নিষেধ করেছেন। আর রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের সবচেয়ে উত্তম আমল হলো নামায। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৭৭)। হাদীসটি সহীহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল বাতিল করতে নিষেধ করেছেন আর নামায হলো আমল সুতরাং সুষ্পষ্ট কারণ ছাড়া আমরা আমল বাতিল করব না। তাই যখন তোমার ধারণায় প্রবল হবে যে, তুমি রাকআত পাবে তখন উভয়টিকে (কুরআন ও হাদীস) একত্রিত করবে। আর কায়দা হলো একটির উপর আমল করে আরেকটি ছেড়ে দেয়া থেকে দুই নসের মাঝে সমন্বয়সাধন করা উত্তম। শারহু ঝাদিল মুসতানকী ৬/৫৮ কুতুবুল ফিক্হ গ্রন্থাকার বলেছেন,
وإن أقيمت الصلاة وهو في صلاة نافلة قد أحرم بها من قبل ; أتمها خفيفة, ولا يقطعها ; إلا أن يخشى فوات الجماعة ; لقول الله تعالى : وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ فإن خشي فوت الجماعة, قطع النافلة ; لأن الفرض أهم আর যদি ব্যক্তি নফল নামায পড়া অবস্থায় ফরজের ইকামত দেয়া হয় যে নফলের তাহরীমা সে আগেই করেছিল তাহলে হালকা ভাবে সে তা পূর্ণ করবে।ছেড়ে দেবে না। তবে যদি জামায়াত ছুটে যাওয়ার আশংকা করে তাহলে ছেড়ে দিবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা তোমাদের আমলকে নষ্ট করো না। তবে যদি সে জামায়ত ছুটে যাওয়ার আশংক করে তাহলে নফল ছেড়ে দিবে। কেননা ফরজ অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কুতুবুল ফিক্হ ৩/৬৫। এই সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন আল ইনসাফ ২/১৫২
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, অধিকাংাশ আলেমের মতে ফরজ নামায শুরু হলেই তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ছেড়ে দেয়া যাবে না। বরং ফরজ ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকলে তা পূর্ণ করবে। তবে যদি ফরজ ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সহীহ মতানুযায়ী ছালামের মাধ্যমে সুন্নত ছেড়ে দিবে। কেননা আলী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন,
مفتاح الصلاة الطهور وتحريمها التكبير وتحليلها التسليم
অর্থ: নামাযের চাবি হলো পবিত্রতা আর তার সূচনা হলো তাকবীর আর শেষ হলো সালাম। আল্লাহ তায়লা সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 28
(সামনের কাতারের কাউকে টেনে নেয়ার পর উক্ত ফাকা জায়গা পূরণ করা) একা নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে যদি সামনের কাতারের কাউকে টেনে নেওয়া হয় তাহলে সামনের কাতারের ফাঁকা জায়গা কিভাবে পূরণ করবো?
20 Dec 2025
এক্ষেত্রে দুই পাশের মুসুল্লিরা চেপে এসে উক্ত ফাঁকা জায়গা পূরণ করবে। হাদীস শরীফে এভাবে সরে এসে ফাঁকা জায়গা পূরণ করাকে অনেক সওয়াবে বিষয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বারা ইবনে আযেব রাঃ থেকে বর্ণীত এক হাদীসে তিনি বলেন:
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول إن الله وملائكته يصلون على الذين يصلون الصفوف الأول وما من خطوة أحب إلى الله من خطوة يمشيها العبد يصل بها صفا
অর্থঃ রাসূল সা.বলতেন: নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দুয়া করেন ঐ ব্যক্তিদের জন্য যারা কাতারগুলোতে মিলেমিলে দাড়ায়। আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হাটা-চলা হল, যা কাতারের সাথে মিলে দাড়ানোর জন্য হয়ে থাকে। সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব,১/১২২, বাব, আত তারগীব ফী ওয়াসলিস সুফুফ ওয়া সাদ্দিল ফারজ। শায়েখ আলবানী হাদীসটি সহী লিগায়রিহী বলেছেন। আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণীত অপর একটি হাদীসে রাসূল সা. বলেন:
إن الله عز و جل وملائكته عليهم السلام يصلون على الذين يصلون الصفوف ومن سد فرجة رفعه الله بها درجة
অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য যারা কাতারের সাথে মিলে দাড়ায়। আর যারা ফাকা জায়গা বন্ধ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। শায়েখ শুয়াইব হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,তাহকীক,শুয়াইব আরনাইত, ৬/৮৯ (২৪৬৩১) বাব, হাদীসু সায়্যিদাতু আয়েশা রাঃ। আবু হুরাইরা রাঃ রাসূল সা. থেকে বর্ণানা করেন, তিনি বলেছেন:
من سد فرجة في صف رفعه الله بها في الجنة درجة، وبنى له في الجنة بيتاً
অর্থঃ যে ব্যক্তি কাতারের ফাকা জায়গা পূরণ করবে আল্লাহ জান্নাতে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মান করবেন। আত-তারগীব ওয়াত তারহীব,৩/৩০ (২০০৯)। নামাযের ভিতর প্রয়োজনে হাটা-চলা করার বৈধতার ব্যাপারে চারমাযহাবের উলামায়ে কেরাম একমত। হানাফী উলামায়ে কেরাম বলেন:যদি ব্যক্তি শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে নামাযের মধ্যে হাটা-চলা করে (কেবলামুখি অবস্থায়) তাহলে তার নামায নষ্ট হবে না। ফাতওয়াযে হিন্দিয়্যাতে এসেছে:
وَلَوْ مَشَى فِي صَلَاتِهِ مِقْدَارَ صَفٍّ وَاحِدٍ لَمْ تَفْسُدْ صَلَاتُهُ وَلَوْ كَانَ مِقْدَارَ صَفَّيْنِ إنْ مَشَى دَفْعَة وَاحِدَةً فَسَدَتْ صَلَاتُهُ وَإِنْ مَشَى إلَى صَفٍّ وَوَقَفَ ثُمَّ إلَى صَفٍّ لَا تَفْسُدُ كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ
অর্থঃযদি ব্যক্তি নামাযে এক কাতার পরিমান হেটে যায় তার নামায নষ্ট হবে না। আর যদি দুই কাতার পরিমান হেটে যায়,সেক্ষেত্রে মাঝের কাতারে না থামলে নামায হবে না। যদি থামে তাহলে নামায হয়ে যাবে ভাঙ্গবে না। ফাতওয়ায়ে কাজী খানে এমনই আছে। ৩/৩১৯, কিতাব, আস সালাম, বাব, ফী মা ইফছিদুহা। ফাতওয়ায়ে শামীতে ইবনে আবেদীন রহঃ বলেন:
مَشَى مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ هَلْ تَفْسُدُ إنْ قَدْرَ صَفٍّ ثُمَّ وَقَفَ قَدْرَ رُكْنٍ ثُمَّ مَشَى وَوَقَفَ كَذَلِكَ وَهَكَذَا لَا تَفْسُدُ ، وَإِنْ كَثُرَ مَا لَمْ يَخْتَلِفْ الْمَكَانُ
অর্থঃব্যক্তি কিবলামুখি হয়ে হাটলো, তার নামায কি নষ্ট হয়ে যাবে, যদি এক কাতার পরিমাণ হেটে এক রুকুন পরিমান থেমে থেকে আবার হাটে এবং এপরিমান থেমে থেকে এভাবে হাটতে থাকে? তার নামায নষ্ট হবে না যদিও হাটার পরিমান বেশী হয়ে থাকে, যদি নামাযের জায়গা ভিন্ন না হয়। (যেমন মসজিদের সীমানার বাইরে চলে যওয়া)। কিতাব, আস সালাত, বাব, মাশইউল মুসুল্লি মুস্তাকবিলাল কিবলাতি।
প্রশ্নঃ 29
সললু কামা রয়াইতুমুনি উসলিল এখানে পুরুষ বা মহিলা আলাদা করা হয়নাই কোন জয়ীফ হাদীস দিয়েও পারথাক্য প্রমানিত নেই তাই দলিল সহ জানতে চাই যে মহিলাদের নামাজে কোন পারথাক্য আছে কি হাদীসে নামবার কিতাবের নাম রাবী সহ জানাবেন
20 Dec 2025
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসে পুরুষ ও মহিলার নামাযের মাঝে পার্থক্য না করা হলেও অন্যান্য অনেক হাদীসে, ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ী গণের কথার আলোকে জানতে পারি যে, কিছু কিছু বিষয়ে পুরুষ এবং মহিলার নাামাযের মাঝে পার্থক্য রয়েছে । নিম্নে কয়েকটি দলীল উল্লেখ করা হল। হাদীসের আলোকেঃ
أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل
অর্থঃ (ইমাম বায়হাকী রহঃ ) আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মাদ এর সুত্রে তাবেয়ী য়াযীদ ইবনে আবী হাবীব এর থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন । তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশে) বললেন, যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে । কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষের মত নয়। (সুনানে কুবরা ২ খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩০১৬। )
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আওনুল বারী (১/৫২০) তে লিখেছেন উল্লেখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসাবে পেশ করার যোগ্য । حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بن عَبْدِ اللَّهِ الْحَضْرَمِيُّ، قَالَ: حَدَّثَتْنِي مَيْمُونَةُ بنتُ حُجْرِ بن عَبْدِ الْجَبَّارِ بن وَائِلِ بن حُجْرٍ، قَالَتْ: سَمِعْتُ عَمَّتِي أُمَّ يَحْيَى بنتَ عَبْدِ الْجَبَّارِ بن وَائِلِ بن حُجْرٍ، عَنْ أَبِيهَا عَبْدِ الْجَبَّارِ، عَنْ عَلْقَمَةَ عَمِّهَا، عَنْ وَائِلِ بن حُجْرٍ، قَالَ: جِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: فساق الحديث . وفيه : يا وائل بن حجر: إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ، وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا.
অর্থঃ হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে হাজির হলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন হে ওয়াইল ইবনে হাজ্র ! যখন তুমি নামাজ শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে । আর মহিলারা হাত উঠাবে বুক বরাবর । (আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী ২২/২৭২, হাদীসটি হাসান। )
সাহাবায়ে কেরামের আছারের আলোকে
عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال : إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذها ببطنها
অর্থঃ হযরত আলী রাঃ বলেন মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে । মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৩/১৩৮ অনুচ্ছেদ মহিলার তাকবীর, কিয়াম, রুকু ও সিজদা । মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ২/৩০৮
তাবেয়ীগণের কথার আলোকেঃ قال هشيم : أخبرنا شيخ لنا قال :قال سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة ؟قال حذو ثديها অর্থঃ হযরত আতা ইবনে আবি রাবাহ এর কাছে জানতে চাওয়া হল নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে? তিনি বললেন বুক বরাবর । মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০। মোটকথা, রাসূল সাঃ এর হাদীস, ছাহাবায়ে কেরামের কথা ও তাবেয়ীগণের ফাতাওয়ার আলোকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, মহিলাদের নামাজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। আর এই ভিন্নতার ভিত্তি হল মহিলাদের সতর ও পর্দার অধিক সংরক্ষণের বিবেচনা ।
প্রশ্নঃ 30
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে মোনাজাত করা যাবে কি না এব্যাপারে কোরআন হাদীসের আলোকে আপনার মতামত জানতে চাই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । নিচে এব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি । আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় আলোচ্য: (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা, (২) মুনাজাত করার সময় হাত উঠানো এবং (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিকর ও মুনাজাত করা। (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা। নামায মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাযের শেষে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি ও আবেগ আসে। এই সময়ে তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে যাওয়া মুমিনের উচিত নয়। নামাযের পরে যতক্ষণ সম্ভব নামাযের স্থানে বসে দুআ মুনাজাত ও যিকিরে রত থাকা উচিত। মুমিন যদি কিছু না করে শুধুমাত্র বসে থাকেন তাও তাঁর জন্য কল্যাণকর। নামাযের পরে যতক্ষণ মুসল্লী নামাযের স্থানে বসে থাকবেন ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন:
إَذَا صَلَّى الْمُسْلِمُ ثُمَّ جَلَسَ فِيْ مُصَلاَّهُ لَمْ تَـزَلِ الْمَلاَئِكَةُ تَدْعُو لَهُ اَللَّهُمَّ اغْـفِـرْ لَـهُ اَللَّهُمَّ ارْحَـمْهُ مَا لَـمْ يُـحْدِثْ أَوْ يَـقُمْ
যদি কোনো মুসলিম সালাত আদায় করে, এরপর সে তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকে, তবে ফিরিশতাগণ অনবরত তাঁর জন্য দুআ করতে থাকেন : হে আল্লাহ একে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, একে রহমত করুন। যতক্ষণ না সে ওযু নষ্ট করে বা তাঁর স্থান থেকে উঠে যায় ততক্ষণ। হাদীসের শিক্ষার আলোকে আমারা দেখতে পাই যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরে কিছু সময় বসে যিক্র ও মুনাজাত করা সুন্নাত সম্মত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরের দুআ কবুল হয় বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। হযরত আবু উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো: কোন্ দুআ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়? তিনি উত্তরে বলেন :
جَـوْفُ الليـلِ الآخِـرُ، ودُبـُر الصلواتِ الـمكتـوبات
রাত্রের শেষ অংশ ও ফরয নামাযের শেষে (দুআ বেশি কবুল হয়)। এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে দুআ করা একটি সুন্নাত সম্মত নেক আমল। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত নামাযের শেষে কিছু সময় যিকর ও মুনাজাতে কাটানো। এধরনের আরো কিছু দোয়া নামাযের পর রাসূল সাঃ করতেন। (২) হাত তুলে মুনাজাত করা। দুআ-মুনাজাতের একটি আদব হলো, দুই হাত তুলে দুআ করা। এই অর্থে একটি হাদীসে বলা হয়েছে: নিশ্চয় আল্লাহ লাজুক দয়াবান। যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দুখানা হাত উঠায় (দুআ করতে), তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। অন্য বর্ণনায় সালমান ফারসী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا رَفَـعَ قَـوْمٌ أَكُـفَّـهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُوْنَهُ شَيْئًا إِلاَّ كَـانَ حَـقًّا عَـلَى اللهِ أَنْ يَـضَـعَ فِـيْ أَيْدِيْـهِمْ الَّذِيْ سَأَلُوْا
যখনই কিছু মানুষ আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য তাদের হাতগুলিকে উঠাবে, তখনই আল্লাহর উপর হক্ক (রহমতের দায়িত্ব) হয়ে যাবে যে তারা যা চেয়েছে তা তিনি তাদের হাতে প্রদান করবেন। হাফিয হাইসামী উল্লেখ করেছেন যে, হাদীসটির সনদ সহীহ। অন্য হাদীসে মালিক ইবনু ইয়াসার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
إِذَا سَأَلْتُمْ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا
তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন হাতের পেট দিয়ে চাইবে, হাতের পিঠ দিয়ে চাইবে না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। রাসূলূল্লাহ ((সা.) বিভিন্ন সময়ে হাত উঠিয়ে দুআ করতেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন :
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ r يَرْفَعُ يَدَيْهِ يَدْعُو حَتَّى إِنِّي لأَسْأَمُ لَهُ مِمَّا يَرْفَعُهُمَا يَدْعُو اللَّهُمَّ فَإِنَّمَا أَنَا بَشْرٌ فَلا تُعَذِّبْنِي بِشَتْمِ رَجُلٍ شَتَمْتُهُ أَوْ آذَيْتُهُ
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত দুখানা উঠিয়ে দুআ করতেন, এমনকি আমি তাঁর (দীর্ঘ সময়) হাত উঠিয়ে দুআ করাতে ক্লান্ত ও অস্থির হয়ে পড়তাম; তিনি এভাবে দুআয় বলতেন : হে আল্লাহ, আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি কোনো মানুষকে গালি দিয়ে ফেললে বা কষ্ট দিলে আপনি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিবেন না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অন্যান্য সময়ের ন্যায় নামাযের পরেও মুনাজাতের সময় হাত উঠানো উত্তম। তবে যে ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা ফযীলত বাদ দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে ফযীলত বাদ দেওয়াই সুন্নাত। যেমন, কিবলামুখী হয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। কিন্তু নামাযের পরে ইমামের জন্য এই মুস্তাহাব পরিত্যাগ করাই সুন্নাত। অনেক হাদীস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক সময়, বরং অধিকাংশ সময় দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত উঠাতেন না। বরং শুধু মুখে দুআ-মুনাজাত করতেন। সাহাবীগণ থেকেও আমরা অনুরূপ কর্ম দেখতে পাই। এ সকল ক্ষেত্রে আমরা কী করব? আমরা কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রেও হাত উঠিয়ে দুআ করা উত্তম এবং হাত না উঠানো অনুচিত? তাহলে তো স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্ম অনুচিত পর্যায়ের হয়ে গেল। না কি আমরা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো উত্তম, তবে না উঠালেও দোষ নেই? সেক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাজ অনুত্তম বলে গণ্য হলো। না কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত না উঠানোই উত্তম, তবে হাত উঠানোতে দোষ নেই? অথবা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো জায়েয নয়? তাহলে হাত উঠানোর ফযীলতে বর্ণিত হাদীসের কী হবে?
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যে সকল সময়ে তিনি দুআ-মুনাজাতে হাত উঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত উঠানো সুন্নাত বলে গণ্য হবে। যেমন আরাফার মাঠে, ইসতিসকার দুআয়, যুদ্ধে শুরুতে, বিশেষ আবেগের ক্ষেত্রে, ইত্যাদি। আর যেখানে ও যে সময়ে তিনি হাত উঠাননি বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত না-উঠানো সুন্নাত। অধিকাংশ নিয়মিত মাসনূন দুআ এই প্রকারের। বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে, এ সকল মুনাজাত পালনের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দু হাত তুলে মুনাজাত করেন নি। আমরা দেখছি যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘুরে বসা, ঠোট নাড়া, কথা বলা ইত্যাদি সব কিছুর বর্ণনা দিচ্ছেন, কিন্তু কখনোই বলছেন না যে, তিনি দুই হাত তুলে এই কথাগুলি বলেছিলেন। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরের মুনাজাতের ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ নিয়মিত দুআ- মুনাজাতের ক্ষেত্রেই তিনি হাত উঠাতেন না। উপরের বিষয়গুলি সবই সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। এ সকল তথ্যের বিষয়ে কোনো মতভেদ আছে বলে জানি না। নামাযের পরে সামষ্টিক মুনাজাতের পক্ষের কোনো আলেমও কোথাও উল্লেখ করেন নি বা দাবী করেন নি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীগণ কখনো ফরয সালাতের সালাম ফেরানোর পরে উপস্থিত মুসাল্লীদের নিয়ে সমবেতভাবে দুআ করেছেন বলে কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নামাযের পরে দুআয় একাকী হাত উঠানোর বিষয়ে কিছু কথা বর্ণিত হয়েছে। গত শতাব্দীর কোন কোন আলেম উল্লেখ করেছেন যে, একদিন ফজরের নামাযের পরে ঘুরে বসে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলে দুআ করেছিলেন। তাঁরা বলেন, ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেছেন, ইয়াযিদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) বলেন: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ r الْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ انْحَرَفَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালামের পরে ঘুরে বসলেন এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন। এই হাদীসটি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ও অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। তবে এ সকল গ্রন্থে সংকলিত হাদীসের ভাষা নিুরূপ: আসওয়াদ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালাম ফেরানোর পরে ঘুরে বসলেন। কোন গ্রন্থেই এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন এই অতিরিক্ত কথাটুকু নেই। এজন্য আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান বলেছেন, হাদীসটি নাযীর হুসাইন মুঙ্গীরী এভাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি কোনো গ্রন্থে তা খুঁজে পান নি এবং এর সনদ জানতে পারেন নি। অন্য হাদীসে ফাদল ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
الصَّلاةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا إِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا، (فَهِيَ خِدَاجٌ)
সালাত দুই রাকআত, দুই রাকআত করে, প্রত্যেক দুই রাকআতে তাশাহ্হুদ পাঠ করবে, বিনীত হবে, কাতর হবে, অসহায়ত্ব প্রকাশ করবে, বেশি করে সাহায্যা প্রার্থনা করবে এবং তোমার দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে দুই হাতের পেট তোমার মুখের দিকে করবে এবং বলবে: হে প্রভু, হে প্রভু। যে এরূপ না করলো তার সালাত অসম্পূর্ণ। এই হাদীসে নামাযের পরে হাত তুলে দোওয়া করার কথা বলা হয়েছে। তবে স্পষ্টতই হাদীসটি নফল নামাযের বিষয়ে, যা দুই রাকআত করে পড়তে হয়। সর্বোপরি হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম বুখারী, উকাইলী, যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটির দুর্বলতা উল্লেখ করেছেন। আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) এক ব্যক্তিকে দেখেন যে, সে সালাত শেষ করার পূর্বে তার দুই হাত উত্থিত করে রেখেছে। ঐ ব্যক্তি সালাত শেষ করলে তিনি বলেন:
إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ r لَـمْ يَكُـنْ يَرْفَـعُ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلاَتِهِ.
রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর দুই হাত উঠাতেন না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। সালাত শেষের আগে হাত উঠাতেন না থেকে মনে হয় সালাত শেষের পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলতেন। এখানে ফরয বা নফল সালাতের কথা উল্লেখ করা নেই। তবে যে ব্যক্তিকে ইবনু যুবাইর কথাটি বলেছিলেন সে ব্যক্তি বাহ্যত নফল সালাত আদায় করছিল এবং এজন্যই একাকী সালাতের মধ্যে দুই হাত তুলে দোওয়া করছিল। তার পরেও এই হাদীসের ভিত্তিতে আমরা দাবি করতে পারি যে, তিনি নফল ও ফরয উভয় সালাতের পরেই হাত তুলে দুআ করতেন। তবে অন্যান্য অগণিত সহীহ হাদীস, যেগুলিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফরয সালাতের পরের দুআ, যিক্র, বক্তৃতা ও অন্যান্য কর্মের বিবরণ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে সেগুলি থেকে জানা যায় যে, তিনি ৫ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরের দুআ-মুনাজাত করার সময় হাত তুলতেন না। সে সকল হাদীস ও এ হাদীসটির সমন্বয়ে আমরা ধারণা করতে পারি যে, তিনি সম্ভবত মাঝে মাঝে সালাত শেষে দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত তুলতেন বা নফল সালাতে দুআ করলে সালাত শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এ সবই একা একা হাত তুলে দুআ করার বিষয়ে। ফরয নামাযের পরে মুক্তাদীদেরকে নিয়ে সমবেতভাবে হাত তুলে বা হাত না তুলে দুআ তিনি কখনো করেননি। এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিক্র ও মুনাজাত করা। নামাযের পরে জামাতবদ্ধ মুনাজাত গত কয়েকশত বৎসর যাবৎ চালু হয়েছে। তাতে কোনো প্রকারের ফযীলত আছে বলে আমি জানতে পারি নি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের যুগে এইরূপ মুনাজাতের প্রচলন ছিল না বিধায় কোনো কোনো আলিম একে বিদআত বলেছেন। আমরা জানি যে, নামাযের পরে মুনাজাত করা ও মুনাজাতে হাত উঠানোর ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একাকী মুনাজাত করলে এই দুইটি ফযীলতই পলিত হয়। সমবেতভাবে মুনাজাত করার কোনো ফযীলত হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি। এক্ষেত্রে আমাদের আশা হলো, একজন মুনাজাত করবেন এবং সমবেত সকলেই আমিন বলবেন, এতে হয়ত আল্লাহ সকলের আবেদনে মুনাজাতটি কবুল করবেন। এ জন্য অবশ্যই ইমামকে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে মুনাজাত করতে হবে। এতে মাসবূক মুসাল্লীদের নামায আদায় বিঘিত হবে। আর ইমাম যদি মনে মনে মুনাজাত করেন তবে তো কিছুই হলো না। ইমাম একাকী মুনাজাত করলেন। মুক্তাদিগণ কিছুই না করে হাত তুললেন ও নামালেন। পক্ষান্তরে একাকী মুনাজাত করলে নিজের মনের আবেগ ও প্রয়োজন অনুসারে মুনাজাত করা যায়। এতে মুনাজাতের ফযীলত ও মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি সাধিত হয়, কিন্তু কারো নামাযের ক্ষতি হয় না। এভাবে আমরা বুঝতে পারছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতই উত্তম। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে উল্টে ফেলেছি। তাছাড়া রাসূল সাঃ পরের যুগগুলিতেও সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের যুগেও কেউ কখনো ফরয নামাযের পরে সমবেতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেননি। তাঁরা সুযোগ পেলে এই সময়ে ব্যক্তিগতভাবে যিক্র ও মুনাজাত করতেন। ) হাদীস থেকে বুঝা যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যিকর ও মুনাজাত একাকী পালন করতেন। জামাতে উপস্থিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে তা আদায় করতেন না। কখনোই সাহাবীগণ নামাযের পরের মুনাজাতে তাঁর সাথে শরীক হয়েছেন বলে বর্ণিত হয় নি। প্রায় অর্ধ শত সাহাবী থেকে বর্ণিত মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীসগুলির একটি হাদীসেও বর্ণিত হয় নি যে, একদিন একটি বারও তিনি মুক্তাদিগণের সাথে একত্রে মুনাজাত করেছেন। পক্ষান্তরে সাধারণ ফযীলত জ্ঞাপক হাদীসের আলোকে অনেক আলিম একে সমর্থন করেছেন। তাঁরা এই জামাতবদ্ধ মুনাজাত-কে মুস্তাহাব বলেছেন। চার ইমাম ও পূর্ববর্তী সকল ফকীহ বলেছেন যে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ হয়ে যায়। হাদীস শরীফেও বলা হয়েছে যে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু এবং সালামেই সালাত শেষ। এগুলির সাথে সঙ্গতি রক্ষার জন্য তাঁরা বলেছেন যে, এই মুনাজাত নামাযের কোনো অংশ নয়। নামাযের পরে অতিরিক্ত একটি মুস্তাহাব কাজ। নামায সালামের সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়, তবে কেউ যদি এর পরে অন্য কোনো মুস্তাহাব কাজ করে তাহলে দোষ নেই। এখানে মূল হলো মনের আবেগসহ মাসনূন মুনাজাতগুলি পালন করা। নামাযের পরে মুনাজাতের ক্ষেত্রে একাকী মুনাজাতই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রীতি। এছাড়া মনোযোগ আনয়ন ও মাসনূন বাক্য পালনের জন্যও একাকী মুনাজাত উত্তম। জামাতে ইমামের সাথেও মুনাজাত করা যেতে পারে। তবে সদাসর্বদা এইরূপ জামাতবদ্ধ মুনাজাত করা, একে জরুরী মনে করা বা তা পরিত্যাগকারীকে খারাপ মনে করা খুবই অন্যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন । আমীন। এব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত মুনাজাত ও নামাজ বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 31
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, রুকু এবং সেজদায় সর্বাধিক কতবার তাসবীহ পাঠ করা যায়? জোড় বিজোড়ের ব্যাপারে কোরআন হাদীস কি বলে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। রুকু এবং সেজদায় কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করা সুন্নাত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণীত আছে যে, রাসূল সাঃ বলেন:
: إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيمِ وَذَلِكَ أَدْنَاهُ وَإِذَا سَجَدَ فَلْيَقُلْ سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلَى ثَلاَثًا وَذَلِكَ أَدْنَاهُ
অর্থঃ যখন তোমাদের কেউ রুকু করবে তখন সে যেন তিনবার সুবহানা রাব্বীয়াল আযীম বলে। আর এটা হল সর্বনিম্ম পরিমান। আর যখন সেজদা করে তখন সে যেন তিনবার বলে সুবহানা রাব্বীয়াল আলা। আর এটা হল সর্বনিম্ম পরিমান। সুনানে আবু দাউদ, কিতাব,আস-সালাত, বাব, মা ইয়াকুলু ফিররুকুঈ ওয়াস সুজুদী। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে একবার পড়লেও যথেষ্ঠ হবে। এক্ষেত্রে ফরয হল রুকু এবং সেজদায় এক তাসবীহ পরিমান সময় কাটানো। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত এক হাদীসে এসেছে
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّي كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِي فَقَالَ إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا وَافْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا.
অর্থঃ রাসূল সাঃ মসজিদে প্রবেশ করার পর এক ব্যাক্তি প্রবেশ করে রাসূল সাঃ কে সালাম দিলেন এবং রাসূল সাঃ সালামের জবাব দিয়ে বলেন:ফিরে গিয়ে নামাজ পড় কেননা তুমি নামাজ পড়নি। লোকটি ফিরে গিয়ে পূর্বের ন্যায় আবার নামাজ আদায় করলেন এবং ফিরে এসে রাসূল সাঃ কে সালাম প্রদান করলেন। রাসূল সাঃ আবার লোকটিকে বললেন: তুমি ফিরে গিয়ে নামাজ পড়। কেননা তুমি নামাজ পড়নি। এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর লোকটি বললেন: ঐ সত্বার কসম, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর করে নামাজ আদায় করতে পারিনা। সুতরাং আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন রাসূল সাঃ বললেন: যখন তুমি নামাজে দাড়াবে তখন তাকবির দিবে। এরপর কোরআনের যে অংশ তোমার কাছে সহজ সে অংশ থেকে পড়বে। অতঃপর রুকু করবে শান্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত, তারপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাড়াবে। এরপর সেজদা করবে শান্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে শান্ত হয়ে বসবে। আর পুরা নামাজ এভাবে আদায় করবে।বুখারী,আস-সহীহ, হাদীস নং ৭৫৭। তবে সর্বাধিক কতবার পড়া যায় এব্যাপারে হাদীসে সীমাবদ্ধ করা হয়নি । যে যেই পরিমান পড়বে সে সেই পরিমান সাওয়াবের অধিকারী হবে। ইনশাল্লাহ। তাছাড়া রাসূলে কারীম সাঃ রুকু এবং সেজদায় অধিক সময় ব্যায় করতেন বলে বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়। এ অধিক সময়ে তিনি কতবার তাসবীহ পাঠ করেছে তা গননা করাও একটি দুঃসাধ্য ব্যাপার। অনুরুপভাবে জোড়-বিজোড়ের ব্যাপারেও কোরআন ও নির্ভরযগ্য কোন হাদীসে কিছু বলা হয়নি। একটি হাদীসে এসেছে رُوِيَ أَنَّهُ عليه السلام كَانَ يَخْتِمُ بِالْوِتْرِ يَعْنِي فِي تَسْبِيحَاتِ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ،
অর্থঃ বর্ণীত আছে যে, রাসূল সাঃ বিজোড়ের মাধ্যমে শেষ করতেন।অর্থাৎ রুকু ও সেজদার তাসবীহ এর ক্ষেত্রে। হাদীসটি মারগিনানী রহঃ তার হেদায়া গ্রন্থে আল আওকাত তুকরাহু ফিহাস সালাত পরিচ্ছেদে এনেছেন। আল্লামা ঝাইলায়ী রহঃ হাদীসটির ব্যাপারে বলেন: গরীব জিদ্দান। নাসবুর রাইয়াহ, বাবু সিফাতিস সালাহ। আর ইবনে হাজার আস ক্বালানী রহঃ বলেন: লাম আজিদহু (হাদীসটি আমি পাইনি)। আদ দিরায়াহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৭, হাদীস নং ১৭৬। হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন:
ما رأيت أحدا أشبه صلاة بصلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم من هذا الفتى يعني عمر بن عبد العزيز فحزرنا في ركوعه عشر تسبيحات وفي سجوده عشر تسبيحات
অর্থঃ আমি রাসূল সাঃ এর নামাজের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামাজ এই যুবক ছাড়া (অর্থৎ ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহঃ) কাউকে পড়তে দেখিনি। আমি তার রুকুতে দশ তাসবীহ গণনা করলাম এবং সেজদায় দশ তাসবীহ গণনা করলাম। নাসায়ী, আস-সুনান, তাহকীক, আলবানী রহঃ, হাদীস নং ১১৩৫। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবক্ষেত্রে তাাঁর রাসূল সাঃ এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন । আর সঠিক বিষয় একমাত্র তিনিই ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 32
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হচ্ছে নামায এ আমরা সেজদাই যে দুয়া গুলো পরি, আমি কি সে দুয়া গুলর পাশাপাশি নিজের মত করে বাংলাতে দুয়া করতে পারব। দয়া করে উত্তর দিবেন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন আমিন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ভাই আপনি এই ভিডিওটা দেখুন আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে আশা করি। সিজদায় বাংলা দুআ করা যাবে কি?

কপিরাইট স্বত্ব © ২০২৫ আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট - সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত| Design & Developed By Biz IT BD