আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ আপনাকে স্বাগতম

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ 1
video lecture on aqida
23 Dec 2025
আকীদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে স্যারের লিখিত বই ইসলামী আকীদা, আল-ফিকহুল আকবার ও এ্হইয়াউস সুনান বইগুলো পড়ুন। এই বর্তমানে আকীদা ও এ্হইয়াউস সুনান এর উপর স্যারের ক্লাস চলছে। আপনি আমাদের চ্যানেলে গিয়ে ভিডিওগুলো দেখতে পারেন। https://www.youtube.com/user/SunnahTrust“””””
প্রশ্নঃ 2
মুহতারাম,আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো- মিলাদ ও কিয়াম করা নিয়ে যদি কোন সহীহ দলিল দেন তাহলে খুব ভাল হয়- আমি এ বিষয় নিয়ে খুব প্রব্লেমে আছি।
23 Dec 2025
মীলাদ ও কিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন, আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহইয়াউস সুনান বইয়ের ৫১৬-৫৬২ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 3
Sir, The man who said Allah is everywhere Can I pray (Shala) behind him?
23 Dec 2025
কথাটি ঠিক নয়। তবে যে মুসলিম এ কথা বলেন তাকে সরাসরি কাফির বলা যাবে না। কারণ কুরআনের বিভিন্ন বক্তব্যের এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা। আল্লাহ বলেছেন তিনি বান্দার কাছে এবং সাথে। তিনি বলেছেন তিনি আল্লাহ আসমানে এবং যমীনে। এ সকল আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা থেকে এরূপ কথা এসেছে। আমরা কথাটিকে ভুল ও ইসলাম বিরোধী বলব এবং সঠিক কথা মানুষদের বুঝাব। তবে এরূপ ব্যাখ্যা মুমিনের জন্য একটি ওজর। এরূপ ওজরের কারণে এরূপ ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির বলা যায় না। আর যাকে কাফির বলা যায় না তার পিছনে সালাত পড়া বৈধ। বিশেষত অন্য কোনো ভাল ইমান না পেলে তার পিছনে পড়তে হবে। জামাতে সালাত বাদ দেওয়া যাবে না। বিস্তারিত আল-ফিকহুল আকবার এবং ইসলামী আকীদা বইদুটিতে পড়ুন।
প্রশ্নঃ 4
Sir said Allah is with us. I want to know how Allah with us.
23 Dec 2025
মহান আল্লাহর বিষয়ে কিভাবে প্রশ্নটিই অবান্তর। মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তিনি আমাদের সাথে এবং নিকটে।তিনি সর্বদা আমাদের সবকিছু দেখছেন, শুনছেন এবং আমাদের হেফাযত ও রহমত করছেন। তাঁর বিশেষণগুলো ব্যাখ্যাতীত ভাবে বিশ্বাস করাই ঈমানের দাবি। আল-ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যাটি পাঠ করলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
প্রশ্নঃ 5
আসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন এই পৃথিবীতে কুফরি কালাম এর অস্তিত্ত আছে কি? অনেকে বলে এর প্রয়োগ মানুষের ক্ষতি করার জন্য করা হয়। যেমনঃ কারো আর্থিক ক্ষতি, বা কোন কুমারী মেয়ের যথা সময় বিয়ে না হয়া। এরুপ ক্ষেত্রে অনেকে বলেন যে ওনার উপর জাদু করা হয়েছে বা সেই কুমারীকে কুফরী কালাম দ্বারা বিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। এই কথার কি কোন ভিত্তি আছে? আর যদি থাকে এর লক্ষণ এবং এর থেকে প্রতিকার কি? কি আমল করলে এর থেকে পরিত্রণ পাওয়া যাবে। আমি কোন হুজুর এর উপর ভরসা করতে পারছি না। তাই জাহাঙ্গির হুজুরই আমার শেষ ভরসা। দয়া করে উত্তর টা আমি সরাসরি জাহাঙ্গির হুজুর থেকে আশা করছি
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। কুফরী কালাম বা যাদুর মাধ্যমে মানুষের শারীরিক ও আর্থক করা যায়। কুরআন ও হাদীসে যাদু ব্যবহারকে কুফর বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাদুকর মূলত পূজা ও শিরকের মাধ্যমে জিনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। যেমন ধুপ, সুগন্ধি ইত্যাদি উৎসর্গ করা, কোনো পশু বা পাখি জবাই করা, জিন বা শয়তানের সাহায্য প্রার্থনা করা, তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মন্ত্র পাঠ করা ইত্যাদি। এগুলো সবই শিরক। অনেক সময় মুসলিম যাদুকরকে প্রতারিত করতে শয়তান জিন এরুপ শিরকী মন্ত্রের সাথে কুরআনের আয়াত বা দুয়া সংযুক্ত করে রাখে। কুরআনের আয়াত বা দুয়ার আগে, পরে বা মধ্যে শয়াতনের পছন্দনীয় বা অর্চনামূলক দু-একটা বাক্য রেখে দেয়। এরুপ শিরক ছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের কুফর ও মহাপাপের মাধ্যমে শয়তারকে সন্তুষ্ট করতে হয়। যেমন কুরআনের অবমাননা, কুরআনের আয়াত উল্টে লেখা, নাপাকি দিয়ে লেখা, জঘন্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া, ঘৃন্য নাপাকীর মধ্যে বা নাপাক অবস্থায় থাকা, মানুষ হত্যা ইত্যাদী। এসকল কর্মের মাধ্যমে যাদুকর সামান্য কিছু অস্বাভাবিক ক্ষমতা অর্জন করে। যেমন ভেল্কি দেখানো, সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত কিছু অজানা বা গায়েবী কথা বলা, মনের কথা বলঅ, বান-টোনা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা ইত্যাদী। এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুরআন ও হাদীসে অনেক দোয়া ও যিকির উল্লেখ আছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত গ্রন্থের নতুন সংস্করনের রোগব্যাধি ও ঝাড়ফুঁক অধ্যায়টি।
প্রশ্নঃ 6
Imam abu hanifa ki abiin chilio na tabe -- Ṫabiin chilo?
23 Dec 2025
ইমাম আবু হানীফা রহ. ৮০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। সাহাবীদের কেউ কেউ ১১০ হিজরী সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। কাজেই ইমাম আবু হানীফা রহ. জন্য কোন কোন সাহবীর সাথে সাক্ষাৎ করা বা শিক্ষা গ্রহণ করা খুবই সম্ভব ছিল। বাস্তবে কতজন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। কোন কোন জীবনীকারগণের বর্ণনায় ৭ জন সাহাবীর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। বাস্তবে প্রায় সাকল জীবনীকার, রিজালবিদ ও ঐতিহাসিক একমত যে, সাহাবী আনাস ইবনে মালিক রা.এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল।সুতরাং তিন তাবেয়ী ছিলেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অনূদিত ও ব্যাখ্যাকৃত আল-ফিকহুল আকবার বইটির প্রথম পরিচ্ছেদ।
প্রশ্নঃ 7
Shaykh, Assalamualikum wa rohmatullahi wa baratuhu. amar prosno ta holo- Allahr kace dua korar pore to amader biswas rakhte hobe je amader dua kobul hobei ingsha Allah. amra kontar bepare biswas rakhbo? 1. amra Allahr kace ja cheyeci Allah thik oitai deben ei biswas korbo, or 2. Allah je 3 vabe dua koubl koren sei 3 rokomer 1 rokom vabe dua kobul korben eita biswas korbo? Allah to sokol duai 3 rokomer 1 rokom vabe kobul koren.
23 Dec 2025
আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া কবুল করেন। সেটা সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে, পরেও হতে পারে। কিংবা যা আমরা চাই তার চেয়ে উত্তম কোন কিছু দিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে অনুগ্রহ পূর্বক রাহে বেলায়াত পুস্তকের দুআ অধ্যায়টি, ষষ্ঠ সংস্করণ ১০৫-১৭৩ পৃষ্ঠা পড়ন। এছাড়া আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের স্টুডিওটি কার্যকর হলে আমরা আপনার প্রশ্ন ও এ জাতীয় প্রশ্নগুলোর বিস্তারিত উত্তর ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রচার করব, ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্নঃ 8
Where is Allah and he has any shape.can he come down in the earth.please tell me details with Quran sun ah.
23 Dec 2025
প্রথম প্রশ্নের উত্তর জানতে এ সম্পর্কিত অন্য প্রশ্নের উত্তর দেখুন। দ্বিতীয় প্রশ্নের আকার বলতে যদি দেহ মনে করা হয় তবে আল্লাহ তালার কোন আকার নেই। তবে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার হাত, চেহারা, চোখ ইত্যাদীর কথা উল্লেখ আছে। তবে এগুলোর স্বরুপ আমাদের কাছে অজ্ঞাত। তা শুধু আল্লাহ তায়ালাই জানেন। তাঁর কোন কিছুই সৃষ্ট কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য রাখে না। মহান আল্লাহর অন্য একটি বিশেষণ নুযূল বা অবতরণ। এ অর্থের একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
يَنْزِلُ رَبُّنَا كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ
প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন আমাদের মহিমান্বিত মহা-কল্যাণময় প্রতিপালক নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন। তিনি বলেন: আমাকে ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৮৪; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫২২ (মুসাফিরীন, তারগীব ফিদদুআ... আখিরিল্লাইল)
আহলুস সুন্নাতের ইমামগণ বলেন: এটি মহান আল্লাহর একটি বিশেষণ। আমরা সরল অর্থে বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ অতুলনীয়, তিনি আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন এবং তিনি যখন এবং যেভাবে ইচ্ছা অবতরণ করেন। তাঁর অবতরণ কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির অবতরণের মত নয়। তাঁর অবতরণের স্বরূপ ও প্রকৃতি কি তা আমরা জানি না এবং জানার চেষ্টাও করি না। ইমাম আবূ হানীফা (রা) কে মহান আল্লাহর অবতরণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন:
ينزل بلا كيف
মহান আল্লাহ অবতরণ করেন, কোনোরূপ পদ্ধতি বা স্বরূপ ব্যতিরেকে। বাইহাকী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২/৩৮০; মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ ৬৯।
প্রশ্নঃ 9
আসসালামু আলাইকুম। শায়েখ আমি সালাফি আলেমদের কাছ থেলে জেনেছি আল্লাহ আরশে বিরাজমান আর তাঁর ইলম সর্বত্র বিরাজমান কিন্তু দেওবন্দী আলেমরা বলে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান? এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এই কথাটি সঠিক নয়। তেমনি তিনি আরশে বিরাজমান এভাবে বলাও ঠিক না। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ অর্থ:নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আকাশ সমূহ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আরশে ইসতিওয়া করেছে। সূরা, আশুরা আয়াত,৫৪। আরশের উপর ইসতিওয়া আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষণ। তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন। কুরআনে সাত স্থানে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর ইসতিওয়া করেছেন। আরবীতে কোনো কিছুর উপর ইসতিওয়া অর্থ তার ঊর্ধ্বে অবস্থান (ৎরংব ড়াবৎ, সড়ঁহঃ, ংবঃঃষব)। সালাতের নিষিদ্ধ সময় বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন প্রশ্নকারীকে বলেন: حَتَّى تَسْتَوِىَ الشَّمْسُ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ ، فَإِذَا اسْتَوَتْ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ فَدَعِ الصَّلاَةَ (সালাত বৈধ থাকবে) যতক্ষণ না সূর্য তোমার মাথার উপরে তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে। যখন সূর্য তোমার মাথার উপর তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে তখন সালাত পরিত্যাগ করবে। বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ২/৪৫৫; ইবন মাজাহ, আস-সুনান ১/৩৯৭। হাদীসটি সহীহ। মহান আল্লাহর আরশের ঊর্ধ্বে অবস্থান বা আরশের ঊর্ধ্বে থাকার বিশেষণটি কুরআন ও হাদীস দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত। তবে এর প্রকৃতি ও স্বরূপ অজ্ঞাত। অজ্ঞাতকে অজ্ঞাত রেখে কুরআনের অন্যান্য বক্তব্যের ন্যায় এ বক্তব্যও স্বীকার ও বিশ্বাস করা মুমিনের জন্য জরুরী। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকেই তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ী ইমামগণ এবং পরবর্তী মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ বলেন: মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন। তাঁর এ অধিষ্ঠান বা অবস্থানের স্বরূপ আমরা জানি না এবং জানতে চেষ্টাও করি না। বরং বিশ্বাস করি যে, তাঁর এ অধিষ্ঠান কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির বিশেষণ বা কর্মের মত নয়। তাঁর অতুলনীয়ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান তিনি গ্রহণ করেন। ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাঁর ওসীয়াত গ্রন্থে লিখেছেন: نُقِرُّ بِأَنَّ اللهَ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُوْنَ لَهُ حَاجَةٌ إِلَيْهِ وَاسْتِقْرَارٌ عَلَيْهِ، وَهُوَ الْحَافِظُ لِلْعَرْشِ وَغَيْرِ الْعَرْشِ، فَلَوْ كَانَ مُحْتَاجاً إِلَيْهِ لَمَا قَدِرَ عَلَى إِيْجَادِ الْعَالَمِ وَتَدْبِيْرِهِ كَالْمَخْلُوْقِين، وَلَوْ صَارَ مُحْتَاجاً إِلَى الْجُلُوْسِ وَالْقَرَارِ فَقَبْلَ خَلْقِ الْعَرْشِ أَيْنَ كَانَ اللهُ تَعَالَى؟ فَهُوَ مُنَزَّهٌ عَنْ ذَلِكَ عُلُوًّا كَبِيْراً আমরা স্বীকার ও বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন, আরশের প্রতি তাঁর কোনোরূপ প্রয়োজন ব্যতিরেকে এবং আরশের উপরে স্থিরতা-উপবেশন ব্যতিরেকে। তিনি আরশ ও অন্য সবকিছুর সংরক্ষক। তিনি যদি আরশের মুখাপেক্ষী হতেন তাহলে বিশ্ব সৃষ্টি করতে ও পরিচালনা করতে পারতেন না, বরং তিনি মাখলূকের মত পরমুখাপেক্ষী হতেন। আর যদি তাঁর আরশের উপরে উপবেশন করার প্রয়োজনীয়তা থাকে তবে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? কাজেই আল্লাহ এ সকল বিষয় থেকে পবিত্র ও অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। ইমাম আবূ হানীফা, আল-ওয়াসিয়্যাহ, পৃ. ৭৭। ইমাম আযমের এ বক্তব্য উল্লেখ করে মোল্লা আলী কারী হানাফী বলেন: এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রাহ) খুবই ভাল কথা বলেছেন। তাঁকে আল্লাহর আরশের উপরে ইসিতিওয়া বা অধিষ্ঠান বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: اَلاِسْتِوَاءُ مَعْلُوْمٌ وَالْكَيْفُ مَجْهُوْلٌ وَالسُّؤَالُ عَنْهُ بِدْعَةٌ وَالإِيْمَانُ بِهِ وَاجِبٌ ইসতিওয়া বা অধিষ্ঠান পরিজ্ঞাত, এর পদ্ধতি বা স্বরূপ অজ্ঞাত, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত এবং এ বিষয় বিশ্বাস করা জরুরী। মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ৭০। আল্লাহর সত্তা যেমন সৃষ্টির মত নয়, তেমনি তাঁর বিশেষণাবলিও সৃষ্টির মত নয়। সকল মানবীয় কল্পনার ঊর্ধ্বে তাঁর সত্তা ও বিশেষণ। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক বলেন: الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو من علمه مكان আল্লাহ আসমানে (ঊর্ধ্বে) এবং তাঁর জ্ঞান সকল স্থানে। কোনো স্থানই মহান আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়। আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ, আস-সুন্নাহ ১/১০৭, ১৭৪, ২৮০; আর্জুরী, আশ-শরীয়াহ ২/২২৪-২২৫; ইবন আব্দুল র্বার, আত-তামহীদ ৭/১৩৮। এপ্রসঙ্গে পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মালিকী ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইবন আব্দুল র্বার ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ (৪৬৩ হি) বলেন: علماء الصحابة والتابعين الذين حملت عنهم التآويل في القرآن قالوا في تأويل هذه الآية هو على العرش وعلمه في كل مكان وما خالفهم في ذلك أحد يحتج بقوله সাহাবী-তাবিয়ী আলিমগণ, যাদের থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে, তারা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, তিনি আরশের উপরে এবং তাঁর জ্ঞান সর্বত্র। দলিল হিসেবে গ্রহণ করার মত একজন আলিমও তাঁদের এ মতের বিরোধিতা করেন নি। ইবন আব্দুল র্বার, আত-তামহীদ ৭/১৩৮-১৩৯। ইমামদ্বয়ের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, ইসতিওয়া শব্দটিকে তাঁরা সাধারণ আরবী অর্থেই গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে এ শব্দটির অর্থ অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক, মুতাশাবিহ, রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করেন নি। বরং তাঁরা বলেছেন যে, এ শব্দটির অর্থ জ্ঞাত বিষয়, এর মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা, রূপকতা বা দ্ব্যর্থতা নেই। অর্থাৎ আরবী ভাষায় অন্যন্য সকল ক্ষেত্রে ইসতিওয়া আলা বলতে যা বুঝানো হয় এখানেও সেই অর্থই গ্রহণ করতে হবে, অর্থাৎ ঊর্ধ্বত্ব। এখানে অর্থটি রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করার সুযোগ নেই। তবে ইসতিওয়ার স্বরূপ বা ব্যাখ্যা অজ্ঞাত (মুতাশাবিহ)। এ অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে জ্ঞাত বিষয়কে বিশ্বাস করাই মুমিনের দায়িত্ব। ইসতিওয়া ও অন্যান্য বিশেষণ বিষয়ে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বালের মূলনীতি ও আকীদা ব্যাখ্যা করে আবূ বাকর খাল্লাল আহমদ ইবন মুহাম্মাদ (৩১১ হি) বলেন: وكان يقول إن الله عز وجل مستو على العرش المجيد … وكان يقول في معنى الاستواء هو العلو والارتفاع ولم يزل الله تعالى عاليا رفيعا قبل أن يخلق عرشه فهو فوق كل شيء والعالي على كل شيء وإنما خص الله العرش لمعنى فيه مخالف لسائر الأشياء والعرش أفضل الأشياء وأرفعها فامتدح الله نفسه بأنه على العرش أستوى أي عليه علا ولا يجوز أن يقال أستوى بمماسة ولا بملاقاة تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا والله تعالى لم يلحقه تغير ولا تبدل ولا تلحقه الحدود قبل خلق العرش ولا بعد خلق العرش. وكان ينكر على من يقول إن الله في كل مكان بذاته لأن الأمكنة كلها محدودة وحكي عن عبد الرحمن بن مهدي عن مالك أن الله تعالى مستو على عرشه المجيد كما أخبر وأن علمه في كل مكان ولا يخلوا شيء من علمه وعظم عليه الكلام في هذا واستبشعه ইমাম আহমদ বলতেন, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত। … অধিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ তিনি এর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ আরশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সকল কিছুর উপরে। এখানে আরশকে উল্লেখ করার কারণ আরশের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোনো কিছুর মধ্যে নেই। তা হলো আরশ সবচেয়ে মর্যাদাময় সৃষ্টি এবং সব কিছুর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ নিজের প্রশংসা করে বলেছেন যে, তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত, অর্থাৎ তিনি আরশের ঊর্ধ্বে। আরশের উপরে অধিষ্ঠানের অর্থ আরশ স্পর্শ করে অবস্থান করা নয়। মহান আল্লাহ এরূপ ধারণার অনেক ঊর্ধ্বে। আরশ সৃষ্টির পূর্বে এবং আরশ সৃষ্টির পরে মহান আল্লাহ একই অবস্থায় রয়েছেন; কোনোরূপ পরিবর্তন তাঁকে স্পর্শ করে নি, কোনো গণ্ডি বা সীমা তাঁকে সীমায়িত করতে পারে না। যারা বলেন যে, মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের কথা তিনি অস্বীকার ও প্রতিবাদ করতেন। কারণ সকল স্থানই গণ্ডি বা সীমায় আবদ্ধ। তিনি আব্দুর রাহমান ইবন মাহদী থেকে, তিনি ইমাম মালিক থেকে উদ্ধৃত করতেন: মহান আল্লাহ মহা-পবিত্র আরশের ঊর্ধ্বে সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞান-ইলম সর্বত্র বিদ্যমান। কোনো স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বাইরে নয়। আল্লাহর সর্বত্র বিরাজমান কথাটি ইমাম আহমদ ঘৃণ্য বলে গণ্য করতেন। আহমদ ইবনু হাম্বাল, আল-আকীদাহ, আবূ বাকর খাল্লালের বর্ণনা, পৃষ্ঠা ১০২-১১১। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী বলেন: وهو فوق العرش كما وصف نفسه، لكن لا بمعنى التحيز ولا الجهة، بل لا يعلم كنه هذا التفوق والاستواء إلا هو… তিনি আরশের ঊর্ধ্বে, যেভাবে তিনি নিজের বিষয়ে বলেছেন। এর অর্থ কোনো দিক বা স্থানে সীমাবদ্ধ হওয়া নয়। বরং এ ঊর্ধ্বত্বের এবং অধিষ্ঠানের প্রকৃতি তিনি ছাড়া কেউ জানে না…। শাহ ওয়ালি উল্লাহ, আল-আকীদাতুল হাসানাহ, পৃষ্ঠা ৩। বিস্তারিত জানতে দেখুন, আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ২৫৮।
প্রশ্নঃ 10
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সকল ধর্মানুসারীই দাবি করেন যে, তাঁর ধর্মই সঠিক বা শ্রেষ্ঠ, তাহলে ইসলামের সঠিকত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার উপায় কী?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

আমি আসলেই আপনার প্রশ্নগুলোর কথা ভুলে গিয়েছিলাম। নানাবিধ ব্যস্ততাই কারণ। আপনার মেইল দেখে মনে পড়ল।

প্রথম প্রশ্ন: সকল ধর্মানুসারীই দাবি করেন যে, তাঁর ধর্মই সঠিক বা শ্রেষ্ঠ, তাহলে ইসলামের সঠিকত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার উপায় কী? ধর্ম কী ও কেন এ দুটি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই এ উত্তর নিহিত।

প্রথমত: সকল ধর্মানুসারীর মতেই ধর্ম হলো ঐশ্বরিক (ফরারহব) ব্যবস্থা যা মহান স্রষ্টা ওহীর বা ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে কোনো রাসূল বা ধর্মপ্রবর্তকের মাধ্যমে মানব জাতিকে প্রদান করেছেন। এজন্য যে কোনো ধমের্র ধর্মগ্রন্থ (scripture) রয়েছে। ধমের্র সাথে ধর্মগ্রন্থের তুলনা করলেই কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ তা সহজে বুঝা যায়।

বিশ্বের অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থের সাথে সেই ধমের্র তুলনা করলেই আমরা দেখি যে, ধর্মানুসারীদের ধমের্র সাথে ধর্মগ্রন্থের ধমের্র মিল খুবই কম। বাইবেলের বিধিবিধান ও ধর্মবিশ্বাসের সাথে চাচের্র খৃস্টধমের্র তুলনা করলে এবং বেদ-গীতার সাথে প্রচলিত হিন্দু ধমের্র তুলনা করলেই তা নিশ্চিত জানা যায়। অর্থাৎ প্রচলিত ধর্মগুলোর ধর্মগ্রন্থই প্রমাণ করে যে, তাদের প্রচলিত বা আচরিত ধর্ম বিশ্বাস সঠিক নয়। তারা ধর্মগ্রন্থের অধিকাংশ নির্দেশনা পালন করেন না, বরং বিপরীত চলেন ও ধর্মগ্রন্থ নিষিদ্ধ বিষয়কে ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন। খৃস্টধমের্র ত্রিত্ববাদ, প্রায়শ্চিত্ববাদ, মূলপাপতত্ত্ব, কর্মহীন বিশ্বাসেই মুক্তির তত্ত্ব ইত্যাদি কোনো কিছুই বাইবেলে নেই, বরং বাইবেলে এর বিপরীত বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। প্রচলিত বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়ম নিশ্চিত প্রমাণ করে যে, সাধু পল প্রচারিত ও বর্তমান খৃস্টজগত আচরিত খৃস্টধর্ম নামক ধর্মটি সঠিক নয়। হিন্দু ধর্ম ও অন্যান্য ধমের্র ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রায় একইরূপ।

ইসলাম ধমের্র বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রম। প্রচলিত ইসলাম ধমের্র বিধিবিধান, বিশ্বাস ও আচার আচরণ সবই কুরআন ভিত্তিক ও কুরআন সমর্থিত। মুসলিমগণ ধর্ম কতটুকু পালন করেন সেটি ভিন্ন কথা। তবে কুরআন নির্দেশিত কোনো অধর্মকে তারা ধর্ম হিসেবে বিশ্বাস বা পালন করেন না।

শুধু তাই নয়। বিশ্বের সকল ধর্মগ্রন্থই প্রমাণ করে যে, ইসলামই সঠিক ধর্ম। সকল ধমের্র প্রচলিত বিশ্বাস ও কমের্র মধ্যে এমন অনেক বিষয় বিদ্যমান যা সে ধমের্র ধর্মগ্রন্থ ছাড়াও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ নিন্দনীয় বলে ঘোষণা করেছে। পক্ষান্তরে ইসলামী ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় কমের্র মধ্যে এমন একটি বিষয়ও নেই যা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ নিন্দনীয় বলে ঘোষণা করেছে। সাধারণত ইসলাম বিরোধীগণ জিহাদ ও নারী অধিকারের মত দু-একটি বিষয় উত্থাপন করতে চান যে, এগুলো অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের আলোকে খারাপ বা অন্যায়। তাঁদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন না করার কারণে অথবা সত্য গোপনের জন্য তারা এ কথা বলেন। প্রকৃত সত্য হলো, বাইবেল, বেদ, গীতা, মহাভারত, রামায়ণ ইত্যাদি সকল ধর্মগ্রন্থে বিদ্যমান জিহাদ ও নারী অধিকারের অবস্থা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। ধর্মগ্রন্থগুলোর নির্দেশনায় ইসলামই এ দুটি বিষয়ে সর্বোচ্চ মানবিকতা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রত্যেক ধমের্র সাথে সে ধমের্র ধর্মগ্রন্থের তুলনামূলক অধ্যয়ন এবং সকল ধর্মগ্রন্থের মূল শিক্ষার সাথে প্রচলিত সকল ধমের্র তুলনামূলক অধ্যয়ন প্রমাণ করে যে, ইসলামই একমাত্র সঠিক ধর্ম।

দ্বিতীয়ত: সকল ধর্মানুসারীই বিশ্বাস বা দাবি করেন যে, ধমের্র উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যিকার সৎ মানুষে পরিণত করা। এ দাবি ও বাস্তবতার মধ্যে তুলনা করলেও কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ তা সহজেই জানা যায়। বস্তুত নিয়মিত সুষম খাদ্যগ্রহণ ও স্বাস্থ্যসম্মত নিয়মে না চলে সপ্তাহে, মাসে বা বছরে অল্পবেশি ভিটামিন, মহা-পুষ্টিকর খাদ্য বা ঔষধ গ্রহণ করে প্রকৃত দৈহিক সুস্থতা অর্জন করা যায় না। তেমনি নিয়মিত সুষম বিশ্বাস, ইবাদত ও পাপমুক্ত পবিত্র জীবন যাপন না করে মাঝে মাঝে আনুষ্ঠানিকতা করে প্রকৃত আত্মিক সুস্থতা, পবিত্রতা ও সততা অর্জন করা যায় না।

আর এ দিক থেকে একমাত্র ইসলামই জীবনঘনিষ্ট ধর্ম যা ধার্মিক মানুষকে প্রকৃত সৎ মানুষে পরিণত করে। ইসলাম ধমের্র বিধিবিধান এমন যে, মহান আল্লাহর সাথে সার্বক্ষণিক প্রেমের ও স্মরণের সম্পর্ক তৈরি হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সাপ্তাহিক নামায, রোযা, যাকাত, দৈনন্দিন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইবাদত ইত্যাদি পালনের মাধ্যমে নিয়মিত বাধ্যতামূলক আত্মীক-আধ্যাত্মিক অনুশীলন অব্যাহত থাকে। এজন্য ধর্ম পালনকারী ধার্মিক মুসলিম সমাজের অন্যদের তুলনায় অধিকতর সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত হন। পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনে তিনি অপেক্ষাকৃত অধিক সচেতন হন।

অন্যান্য ধর্মে এরূপ নিয়মিত ইবাদত ও অনুশীলন অনুপস্থিত বা ঐচ্ছিক। ফলে মানুষ মহান আল­াহর সাথে নিয়মিত প্রেমের সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত। হিন্দু ধর্মে বর্ণপ্রথার কারণে সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু মূলত ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন ও ইবাদত পালনের সকল সুযোগ থেকেই বঞ্চিত। হিন্দু ধর্ম মূলত খাওয়া- না খাওয়া, ও কিছু আচার-অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখানে বিশ্বাস, সততা, কর্ম, বিধিবিধান, আধ্যাত্মিকা ইত্যাদি গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

সাধু পলের খৃস্টধমের্র কর্মহীন বিশ্বাস, বিশ্বাসে মুক্তি ও পাপমোচন তত্ত্বের কারণে দুর্নীতি, ব্যভিচার, যৌন নিপীড়ন, মাদকতা ইত্যাদি বিষয় ধার্মিক খৃস্টান ও পোপ-পাদরিদের মধ্যেই ব্যাপক, অধার্মিক খৃস্টানদের তো কথাই নেই। এখানেও ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসই মূল, দুর্নীতি মুক্ত হওয়া, মাদকমুক্ত হওয়া, জুলুম মুক্ত হওয়া ইত্যাদির কোনো মূল্য নেই। সকলের জন্যই মুক্তি নিশ্চিত। দুনিয়ার আইন কোনো রকমে ফাঁকি দিতে পারলেই হলো। ফলে কেউ আল­াহর প্রেম অর্জন বা তাঁর অসন্তুষ্টি বর্জনের আকাঙ্খায় পাপ, জুলুম, ব্যভিচার, অনাচার, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি বর্জন করেন না। কেউ তা করলে একান্তুই আইনের ভয়ে করেন। আর আইনের ভয় প্রকৃত সৎ মানুষ তৈরি করে না, বরং বকধার্মিক ও ঠক তৈরি করে।
প্রশ্নঃ 11
assalamu alaikum kamon acen? hujur amar ekta proshno muslim ra kono kisu amol korte hole quran hadish er dolil lagbe tai amateur proshno chand grohon surjo grohon er bepare amader deshe manusher kisu darona ace oi somoy kono gorboboti mohila naki sute parbe na boste parbe na khete parbe na r o onek kisu agula quran hadish shommoto kina. a bepare islam ki bole. please janaben. khub upokrito hobo zezak allah khayer
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনি যা লিখেছেন, সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ অবস্থায় গভবর্তী মহিলা শুতে বসতে........ পারবে না তা সম্পূর্ণ কুসংস্কার, কুরআন হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই। সূর্যগ্রহনের সময় রাসূল সা. লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতেন এবং নামায আদায় করতে বলেছেন। আবু মাসউদ রা. বলেন, নবী সা. বলেছেন,
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لاَ يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ مِنَ النَّاسِ وَلَكِنَّهُمَا آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَقُومُوا فَصَلُّوا
কারো মৃত্যুর জন্য সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ লাগে না। কিন্তু এই দুটি আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। যখন তোমারা তা দেখবে তখন নামায আদায় করবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৪১। বিস্তারিত জানতে দেখুন: সহীহ বুখারী, কিতাবুল কুসুফ (গ্রহণ লাগা অধ্যায়)। সুতরাং আমাদের উচিৎ এমন হলে নামায আদায় করা আর কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা।
প্রশ্নঃ 12
আস্সালামু আলাইকু ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্ন হল আমি ঘুমের গড়ে অনেক ভাল এবং খারাপ সপ্ন দেখে থাকি এই সপ্ন সম্পকে আমাদের কি বিশ্বাস থাকা উচিৎ?
21 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবীদের স্বপ্ন ওহী হিসাবে গণ্য। অন্যান্য মানুষের স্বপ্নের ব্যাপারে হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। নিচে দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
নবী রাসূলদের স্বপ্ন ওহী। তাঁরা স্বপে যা দেখেন তা সত্য। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, رؤيا الأنبياء وحي অর্থ: নবীদের স্বপ্ন ওহী। আলমুসতাদরিক লিল-হাকীম, হাদীস নং ৩৬১৩। হাকীম রহ. বলেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। কিন্তু তারা বর্ণনা করেনি। ইমাম যাহাবী তালখীস এর মধ্যে বলেছেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী। হযরত আয়েশা রা. বলেন,
أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ فِي النَّوْمِ فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ
যার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে প্রথম ওহী আসা শুরু হয় তা হল সত্য স্বপ্ন। তিনি যা দেখতেন ভোরের আলোর মত তা সত্য হত। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৩। ইমাম বখারী রহ. তার সহীহ গ্রন্থে বলেছেন,
قَالَ عَمْرٌو سَمِعْتُ عُبَيْدَ بْنَ عُمَيْرٍ يَقُولُ : إِنَّ رُؤْيَا الأَنْبِيَاءِ وَحْيٌ ثمَّ قَرَأَ :{إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ}
আমর বলেছেন, আমি উবায়েদ ইবনে উমায়েরকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় নবীদের স্বপ্ন ওহী। এরপর তিনি কুরআনের উপরুক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন। (উবায়েদ ইবনে উমায়ের ইবনে আব্বাসের ছাত্র) । সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৫৯। উপরুক্ত দলীলসমূহ দ্বারা স্পষ্ট যে, নবীদের স্বপ্ন ওহী ও সত্য। উম্মতের সকলে এ ব্যাপারে একমত। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখি। এই সব স্বপ্নের ব্যাপারে আমাদের কি বিশ্বাস রাখতে সে বিষয়ে আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ رُؤْيَا يُحِبُّهَا فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ اللهِ فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ عَلَيْهَا وَلْيُحَدِّثْ بِهَا ، وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا ، وَلاَ يَذْكُرْهَا لأَحَدٍ فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ
তোমাদরে কউে যদি এমন স্বপ্ন দখেে যা সে পছন্দ কর,ে তাহলে জানবে যে তা আল্লাহর পক্ষ থকেে দখোনো হয়ছে। তখন সে যনে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও অন্যদরে কাছে র্বণনা কর। আর যদি স্বপ্ন অপছন্দরে হয়, তাহলে বুঝে নবেে এটা শয়তানরে পক্ষ থকেে হয়ছে। তখন সে শয়তানরে ক্ষতি থকেে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় র্প্রাথনা করবে আর এ স্বপ্নরে কথা কারো কাছে বলবে না। কারণ খারাপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৫
আবু কাতাদাহ রা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنَ اللَّهِ فَإِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يُحِبُّ فَلاَ يُحَدِّثُ بِهَا إِلاَّ مَنْ يُحِبُّ وَإِنْ رَأَى مَا يَكْرَهُ فَلْيَتْفِلْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلاَثًا وَلْيَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشَرِّهَا وَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا أَحَدًا فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ
সত্য স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে । যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে ভালবাসে তাহলে তাহলে তা এমন লোকদের কাছেই শুধু বলবে যে তাকে ভালবাসে। আর যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপছন্দ করে তাহলে বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলে এবং আল্লাহর কাছে শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর এই স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কেননা তা তার কোন ক্ষতিকরতে পারবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬১। হযরত জাবির রা. বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتُ فِى الْمَنَامِ كَأَنَّ رَأْسِى قُطِعَ. قَالَ فَضَحِكَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- وَقَالَ ্র إِذَا لَعِبَ الشَّيْطَانُ بِأَحَدِكُمْ فِى مَنَامِهِ فَلاَ يُحَدِّثْ بِهِ النَّاسَ
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে দখেছে, আমার মাথা কটেে ফলো হয়ছে। এ কথা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হসেে ফলেলনে। আর বললনে : ঘুমরে মধ্যে শয়তান তোমাদরে কারো সাথে যদি দুষ্টুমি কর, তবে তা মানুষরে কাছে বলবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬৮। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
إن الرؤيا تقع على ما تعبر و مثل ذلك رجل رفع رجله فهو ينتظر فهو متى يضعها فإذا رأى أحدكم رؤيا فلا يحدث بها إلا ناصحا أو عالما
অর্থ: স্বপ্ন ব্যখ্যা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়। তাই যখন তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখে সে যেন কল্যানকামী ব্যক্তি ও আলেম ব্যাতিত অন্য কারো নিকট তা বর্ণনা না করে। মুসতাদরিকে হাকেম, হাদীস নং ৮১১৭। হাকেম রহ. বলেছেন হাদীসটর সনদ সহীহ। আল্লামা জাহাবী রহ. তালখীস এর মধ্যে হাদীরটিকে সহীহ বলেছেন। শায়খ আলবানীও বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। (সহীহ ও জয়ীফ জামিউস সগীর, হাদীস নং ২৪৯২)
উপরের হাদীসগুলোতে থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তায়ালার দান। ভাল স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর প্রসংসা করতে হবে এবং প্রিয় মানুষদেরকে বলা যবে । খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। এমন স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলতে হবে এবং শয়তানের অকল্যান থেকে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আর খারাপ স্বপ্ন কারো কাছে বলা যাবে না। তবে মনে রাখতে খারাপ স্বপ্ন দেখলে মানুষের কোন ক্ষতি হয় না বা তা মানুষকে কোন ক্ষতি করতে পারে না। এই অর্থের আরো হাদীস বিভিন্ন সাহাবী থেকে সহীহসূত্রে বর্ণিত আছে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সৎ লোকদের থেকে ভাল স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। (অর্থাৎ সত্য স্পষ্ট)। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৩। কোন হাদীসে ৪৫ ভাগের একভাগ আবার কোন হাদীসে ৭০ ভাগের এক ভাগের কথাও বর্ণিত আছে। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, আল্লামা খাত্তবী রহ. বলেছেন
وانما كانت جزءا من أجزاء النبوة في حق الأنبياء دون غيرهم وكان الأنبياء صلوات الله وسلامه عليهم يوحي اليهم في منامهم كما يوحي اليهم في اليقظة
অর্থ: এটা নবীদের ক্ষেত্রে প্রযোয্য, অন্যান্যদের ক্ষেত্রে নয়। কেননা নবীদের নিকট জাগ্রত অবস্থায় যেমন ওহী আসত তেমনি ঘুমের ভিতরেও আসত। শরহে নববী আলা মুসলিম, হাদীস নং ২২৬৪। এই হাদীসের অবশ্য অন্যান্য ব্যাখ্যাও আছে। অনেকে এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে ওলী, দরবেশ কিংব আল্লাহর প্রিয় মানুষদের স্বপ্নকে দলীল হিসাবে সাব্যস্ত করতে চায়। কিন্তু এটা ঠিক না। নবী-রাসূণগণ বাদে অন্যদের স্বপ্ন দলীল হতে পারে না, সুন্নত হতে পারে না। স্বপ্নের মাধ্যমে কোন ইবাদত সাব্যস্ত হয় না, তদ্রুপ স্বপ্নের মাধ্যমে কোন হাদীসের সত্যতাও যাচাই করা যায় না। স্বপ্ন একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ অনুভুতির ব্যাপার। কাশফ, ইলহামের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোয্য। এই বিষয়ে আরো জানতে পড়ুন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহ্ইয়াইস সুনান বইয়ের ২০৮ থেকে ২১৪ পৃষ্ঠা । আল্লহ তায়ালা আমাদের সঠিক বিষয় বুঝার তাওফীক দিন, আমীন।
প্রশ্নঃ 13
স্যার আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমার প্রশ্ন হলো, মৃত্যুর পর আত্মার উপর না শরীরের শাস্তি হবে?
20 Dec 2025
কবরে আযাব হবে, সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। আত্মার উপর হবে নাকি শরীরে উপর হবে তা স্পষ্ট নয়। তবে মূল আযাব আত্মার উপর হবে আর আত্মার সাথে শরীরের একটি সম্পর্ক থাকেবে বলে আলেমগণ মনে করেন। বিস্তারিত নিম্নে:
অনেকগুলো সহীহ হাদীসে কবরের আযাব হওয়ার কথা উল্লোখ আছে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদীস,
أَنَّ يَهُودِيَّةً دَخَلَتْ عَلَيْهَا فَذَكَرَتْ عَذَابَ الْقَبْرِ فَقَالَتْ لَهَا أَعَاذَكِ اللَّهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَسَأَلَتْ عَائِشَةُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَقَالَ نَعَمْ عَذَابُ الْقَبْرِ قَالَتْ عَائِشَةُ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدُ صَلَّى صَلاَةً إِلاَّ تَعَوَّذَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْر زَادَ غُنْدَرٌ عَذَابُ الْقَبْرِ حَقٌّ
অর্থ: একজন ইহুদী মহিলা তাঁর (আয়েশা রা.) কাছে এসে কবরের আযাবের কথা উল্লেখ করে তাঁকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সা. কে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, হ্যাঁ, কবরের আযাব আছে। আয়েশা রা. বলেন, আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ সা. যখনই নামায পড়তেন তখনই কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাইতেন। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কবরের আযাব সত্য। সহীহ বুখারী,হাদীস নং ১৩৭২। আযাব কিভাবে হবে সে ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলো নিম্নেরূপ:
عَنْ زَاذَانَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرُ وَفِى يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ بِهِ فِى الأَرْضِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ : ্র اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا - زَادَ فِى حَدِيثِ جَرِيرٍ هَا هُنَا - وَقَالَ : وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ خَفْقَ نِعَالِهِمْ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ حِينَ يُقَالُ لَهُ : يَا هَذَا مَنْ رَبُّكَ وَمَا دِينُكَ وَمَنْ نَبِيُّكَ قَالَ هَنَّادٌ قَالَ : وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ : رَبِّىَ اللَّهُ. فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا دِينُكَ فَيَقُولُ : دِينِى الإِسْلاَمُ. فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِى بُعِثَ فِيكُمْ قَالَ فَيَقُولُ : هُوَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-. فَيَقُولاَنِ : وَمَا يُدْرِيكَ فَيَقُولُ : قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ زَادَ فِى حَدِيثِ جَرِيرٍ : فَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ (يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا) الآيَةَ. ثُمَّ اتَّفَقَا قَالَ : فَيُنَادِى مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : أَنْ قَدْ صَدَقَ عَبْدِى فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ قَالَ : فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا قَالَ : وَيُفْتَحُ لَهُ فِيهَا مَدَّ بَصَرِهِ قَالَ : وَإِنَّ الْكَافِرَ فَذَكَرَ مَوْتَهُ قَالَ : وَتُعَادُ رُوحُهُ فِى جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولاَنِ : مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِى. فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا دِينُكَ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِى. فَيَقُولاَنِ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِى بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِى. فَيُنَادِى مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : أَنْ كَذَبَ فَأَفْرِشُوهُ مِنَ النَّارِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ قَالَ : فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا قَالَ : وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلاَعُهُ زَادَ فِى حَدِيثِ جَرِيرٍ قَالَ : ثُمَّ يُقَيَّضُ لَهُ أَعْمَى أَبْكَمُ مَعَهُ مِرْزَبَّةٌ مِنْ حَدِيدٍ لَوْ ضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا قَالَ : فَيَضْرِبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ إِلاَّ الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيرُ تُرَابًا قَالَ ثُمَّ تُعَادُ فِيهِ الرُّوحُ অর্থ: হযরত বারা ইবনে আযেব রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে এক আনসারী ব্যক্তির জানাযার জন্য বের হলাম, আমরা যখন সেখানে পৈাছলাম তখন পর্যন্ত কবর খনন সম্পন্ন হয় নি। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বসলেন, আমরাও তাঁর চার পাশে বসে গেলাম, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি। তাঁর হাতে একটি কাঠি ছিল, যা দ্বারা তিনি মাটিতে দাগ কাটছিলেন। অতঃপর তিনি তার মাথা উঠালেন এবং বললেন তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাও। তিনি দুইবার বা তিনবার তা বললেন। ...অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বললেন, (মৃত ব্যক্তির রুহ) যে ফেরেস্তা তার সাথে চলে তাদের জুতার পায়ের আওয়াজ শুনতে পান। ফেরেস্তারা তাকে বলে তোমার প্রতি পালক কে? তোমার ধর্ম কি? এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে পাঠানো হয়েছিল? আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন,তার কাছে দুইজন ফেরেস্তা এসে বসবেন ও বলবেন, তোমার প্রতিপালক কে? সে বলবে আমার রব আল্লাহ। এরপর ফেরেস্তাদ্বয় জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে আমার দ্বীন ইসলাম। এরপর তারা জিজ্ঞাসা করবেন, এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে পাঠানো হয়েছিল? সে বলবে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ফেরেস্তারা বলবেন, তুমি কিভাবে এগুলো জানলে? সে বলবে আমি আল্লাহর কিতাব দেখেছি, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তাকে সত্য বলে মনে করেছি। এক বর্ণনায় আছে এটাই হল আল্লাহ তায়ালার বাণী আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের পা কে দৃঢ় করবেন... এর অর্থ। তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষনাকারী ঘোষনা করবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে, তোমরা তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছেয়ে দাও, তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক বিছিয়ে দাও। তিনি বলেন, তার কাছে সুঘ্রান আসবে এবং তার দৃষ্টি সীমা বৃদ্ধি পাবে। রাসূলুল্লাহ সা. কাফেরের মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, তার রুহকে তার শরীরের মধ্যে প্রবেশ করানো হবে। এরপর দুজন ফেরেস্তা তার কাছে বসে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমর প্রতিপালক কে? সে বলবে, হায়,হায়, আমি জানি না। এরপর ফেরেস্তারা প্রশ্ন করবে, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে, হায়, হায়, আমি জানি না। তারপর ফেরেস্তারা প্রশ্ন করবে, এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল? সে বলবে, হায়, হায়, আমি জানি না। তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষনাকারী বলবে, সে মিথ্যা বলেছে, তাকে জাহন্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও, তার দিকে জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দাও। তারদিকে আগুন আসতে থাকবে। তার উপর তার কবর এমন ভাবে সংকীর্ণ হয়ে যাবে যে, তার দুই পার্শ্ব একে অপরের ভিতর ঢুকে যাবে। আরেক বর্ণনায় আছে, তার জন্য একজন বোবা অন্ধ ফেরেস্তা নিযুক্ত করা হবে, তার কাছে থাকবে লোহর লাঠি, যখন তা দ্বারা কোন পাহাঢ়কে আঘাত করা হয় তখন পাহাঢ় মাটি হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তা দ্বারা সে তাকে এমন ভাবে আঘাত করবে যে, মানুষ ও জ্বীন ছাড়া পূর্ব-পশ্চিমের সব প্রাণী তা শুনতে পাবে। তিনি বলেন, তারপর আবার তার ভিতরে রুহ প্রবেশ করানো হবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৫৩। হাদীসটি সহীহ। শাইখ আলবানী সহ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا قُبِضَ أَتَتْهُ مَلاَئِكَةُ الرَّحْمَةِ بِحَرِيرَةٍ بَيْضَاءَ ، فَتَقُولُ : اخْرُجِي إِلَى رَوْحِ اللَّهِ ، فَتَخْرُجُ كَأَطْيَبِ رِيحِ مِسْكٍ حَتَّى إِنَّهُمْ لِيُنَاوِلُهُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا يَشُمُّونَهُ ، حَتَّى يَأْتُونَ بِهِ بَابَ السَّمَاءِ ، فَيَقُولُونَ : مَا هَذِهِ الرِّيحُ الطَّيِّبَةُ الَّتِي جَاءَتْ مِنَ الأَرْضِ ؟ وَلاَ يَأْتُونَ سَمَاءً إِلاَّ قَالُوا مِثْلَ ذَلِكَ ، حَتَّى يَأْتُونَ بِهِ أَرْوَاحَ الْمُؤْمِنِينَ فَلَهُمْ أَشَدُّ فَرَحًا بِهِ مِنْ أَهْلِ الْغَائِبِ بِغَائِبِهِمْ ، فَيَقُولُونَ : مَا فَعَلَ فُلاَنٌ ؟ فَيَقُولُونَ : دَعُوهُ حَتَّى يَسْتَرِيحَ ، فَإِنَّهُ كَانَ فِي غَمِّ الدُّنْيَا ، فَيَقُولُ : قَدْ مَاتَ ، أَمَا أَمَاتَكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ : ذُهِبَ بِهِ إِلَى أُمِّهِ الْهَاوِيَةِ ، وَأَمَّا الْكَافِرُ فَيَأْتِيهُ مَلاَئِكَةُ الْعَذَابِ بِمُسْحٍ ، فَيَقُولُونَ : اخْرُجِي إِلَى غَضِبِ اللَّهِ ، فَتَخْرُجُ كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ فَتَذْهَبُ بِهِ إِلَى بَابِ الأَرْضِ.
অর্থ: আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন মূমিন মৃত্যু বরণ করেন তখন রহমতের ফেরেস্তারা সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে তার কাছে আসেন এবং বলেন, আল্লাহ শান্তির দিকে বের হও। তখন সে এমন অবস্থায় বের হয় যেন উত্তম সুগন্ধি। আর ফেরেস্তারা একে অপরে সেই সুগন্ধি গ্রহন করেন। এভাবে তারা তাকে নিয়ে আকাশের দরজার কাছে নিয়ে আসে। (সেখানে দায়িত্ব থাকা ফেরেস্তারা) বলেন, এই উত্তম সুগন্ধি কিসের যা পৃথিবী থেকে এসেছে? তারা যে আকাশের কাছেই যাবে তার দায়িত্ব থাকা ফেরেস্তারা অনুরুপ বলবেন। এভাবে তারা তাকে মূমিনদের রুহুর কাছে নিয়ে আসে, তার তাকে দেখে ফেরেস্তাদের থেকেও বেশী খুশি হয়। তারা জিজ্ঞাসা করবে, অমুকের খবর কি? ফেরেস্তারা বলবে, তাকে ছেড়ে দাও, সে বিশ্রাম নিবে কেননা সে দুনিয়ার কষ্টের মধ্যে ছিল। সে (রুহ) বলবে, সে তো মারা গেছে, তোমাদের কাছে আসে নি? তারা বলবে তাকে হাবিয়া (একটি জাহান্নামের নাম) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পক্ষান্তবে কাফের, তাদের কাছে আযাবের ফেরেস্তারা দুর্গন্ধ কাপড় নিয়ে তার কাছে আসে আর বলে, আল্লাহর ক্রোধের দিকে বের হও। তখন সে এমন অবস্থায় বের হয় যেন তা পঁচা দুর্গন্ধ কাপড়। তারা তাকে নিয়ে পৃথিবীর দরজায় নিয়ে যায়। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৩০১৪। শাইখ আলবানীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখন সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব,হাদীস নং৩৫৫৯ ও সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদীস নং ১৩০৯। উপরুক্ত হাদীসদুটি দ্বারা বুঝা যায়, আযাব রুহ এবং শরীর উভয়টির উপরই হবে। এই সম্পর্কে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّ مَذْهَبَ سَلَفِ الْأُمَّةِ وَأَئِمَّتِهَا أَنَّ الْمَيِّتَ إذَا مَاتَ يَكُونُ فِي نَعِيمٍ أَوْ عَذَابٍ وَأَنَّ ذَلِكَ يَحْصُلُ لِرُوحِهِ وَلِبَدَنِهِ وَأَنَّ الرُّوحَ تَبْقَى بَعْدَ مُفَارَقَةِ الْبَدَنِ مُنَعَّمَةً أَوْ مُعَذَّبَةً وَأَنَّهَا تَتَّصِلُ بِالْبَدَنِ أَحْيَانًا فَيَحْصُلُ لَهُ مَعَهَا النَّعِيمُ وَالْعَذَابُ . ثُمَّ إذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ الْكُبْرَى أُعِيدَتْ الْأَرْوَاحُ إلَى أَجْسَادِهَا وَقَامُوا مِنْ قُبُورِهِمْ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ... وَهَذَا كُلُّهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ عِنْدَ عُلَمَاءِ الْحَدِيثِ وَالسُّنَّةِ
অর্থ: জেনে রাখা দরকার যে, পূর্ববর্তী উম্মাত এর্ব ইমামদের মত হল, মৃত্যুর পরে মানুষ আযাব অথব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে। আর এটা তার রুহ এবং শরীরের সাথে সম্পৃক্ত হবে। রুহ শরীর থেকে বিচ্ছন্ন অবস্থায় আযাব অথবা নিয়ামতের মধ্যে থাকবে। তবে কখনো কখনো শরীরের সাথে যুক্ত হবে আর তখন তার রুহের সাথে শরীরো আযাব বা নিয়ামাতে শরীক হবে। এরপর যখন কিয়ামত হবে তখন রুহগুলোকে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করানো হবে আর তারা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে কবর থেকে উঠবে। সুন্নাহ ও হাদীসের আলেমগণ একথার উপর ঐক্যমত। মাজমাউল ফাতাওয়া,৪/২৮৪। শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন,
الأصل أنه على الروح ، لأن الحكم بعد الموت للروح ، والبدن جثة هامدة ، ولهذا لا يحتاج البدن إلى إمداد لبقائه ، فلا يأكل ولا يشرب ، بل تأكله الهوام ، فالأصل أنه على الروح
অর্থ. মূল কথা হল আযাব রুহের উপরই হবে । কেননা মৃত্যুর পর হুকুম রহের উপর। আর শরীর তখন একটা অষাঢ় দেহ। এই কারণেই তখন তা (শরীর) বাকী থাকার জন্য কোন সাহায্যের মুকাপেক্ষী হয় না, কোন কিছু খায় না, পান করে না। বরং পোকমাকড়ই তাকে খেয়ে ফেলে। সুতরাং মূল হল আযাব রুহুর উপরই হবে। উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, কবরের আযাব হবে এটা সত্য। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আর আযাব মূলত রুহর উপর হবে তবে রুহুর সাথে শরীরের একটা গভীর সংযোগ থাকবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 14
আসসালামু আলাইকু,স্যার আপনার মতামতের জন্য একটি জরুরী বিষয় তুলে ধরলাম দয়া করে কুরআন, হাদিসের আলকে মতামত দিবেন ! যদি কেও বা কারো দর্শন বলে যে, কালিমা তয়াবা লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ এর সাথে মুহাম্মাদুর রাসুল উল আল্লাহ পড়লে শিরক হবে তাহলে কি করনীয়?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এপর্যন্ত কোন ব্যক্তি এবং কারো দর্শন এধরনের কথা বলেনি এবং কালেমায়ে তায়্যিবায় লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ এর সাথে মুহাম্মাদুর রাসুল উল আল্লাহ পড়লে শিরক হবে এধরনের কোন ঈঙ্গিত কোরআন হাদীসে কোথাও নেই। এক্ষেত্রে আপনার উচিৎ হল, উনি যেই রাজনৈতিক দলের ভক্ত সেই দলের কোন আলেমকে বিষয়টি অবহিত করে তাকে বোঝানের চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 15
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতু্ল্লাহ। পূর্ববতী নবীদের উপর ঈমান আনা কী জুরুরী?
20 Dec 2025
ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ । জনাব গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। নিম্নেআপনার উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। যেমনিভাবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর ঈমান আনা জরুরী এবং ঠিক তেমনি পূর্ববর্তি নবীগণের উপরও ঈমান আনা অনুরুপভাবে জরুরী। এবং তা দ্বীনের একটি রুকন। এমনকি তাদের একজনকে অস্বীকার করা প্রত্যেক নবীকে অস্বীকার করার শামিল। কোরআন ও হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় এব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরাআনের আলোকেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا (النساء:136)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ তোমরা ঈমান আনয়ন কর আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূল (সাঃ ) এর প্রতি, ঐ কিতাবের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাঁর রাসূল ( সাঃ) এর উপর এবং ঐ কিতাব সমূহের প্রতি যা তিনি তাঁর পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে আল্লাহকে, তাঁর ফিরিস্তাদেরকে, তাঁর কিতাব সমূহকে, তাঁর রাসূলগণকে আর শেষ দিবসকে তারা অবশ্যই তারা চরমপর্যায়ে বিভ্রান্ত। সূরা, আন-নিসা, আয়াত, ১৩৬। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
অর্থঃ তোমরা বল আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, এবং যা নাযিল হয়েছে আমাদের প্রতি, ইব্রাহীম, ঈসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব, ও তাঁর বংশধরদের নিকট তার প্রতি। এবং যা তাঁদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তার প্রতি। আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করিনা।সূরা বাকারা, আয়াত, ১৩৬। হাদীসের আলোকেঃ
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه ، ومما جاء فيه : ( قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِيمَانِ ؟ قَالَ : أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ ، وَمَلَائِكَتِهِ ، وَكُتُبِهِ ، وَرُسُلِهِ ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ
অর্থঃ (ওমর ইবনে খাত্তার রাঃ থেকে বর্ণীত এবং এটা হযরত জীবরিল আঃ ও নবী সাঃ এর মাঝে কথপোকথন মূলক) তিনি ( জীবরিল আঃ) বললেন : আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। তখন তিনি বললেন :আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন করা । আর ঈমান আনয়ন করা তাকদীরের ভাল মন্দের প্রতি।মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ১০২। উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে আমাদের নবী (সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দেয়ার পাশাপাশি পূর্ববর্তি নবীদের উপরও ঈমান আনার আদেশ করেছেন। এবং হাদীসে জীবরীলের মধ্যে রাসূল (সাঃ) কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার কথা উল্লেখ করেছেন, যা দ্বারা বুঝা যায় আমাদের নবী সাঃ এর উপর ঈমান আনা যেমন জরুরী ঠিক তেমনিভাবে পূর্ববর্তি নবীদের উপরও ঈমান আনা জরুরী। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন । আমীন।
প্রশ্নঃ 16
আস-সালামু আলাইকুম। মুহতারাম, আরশের উপর আল্লাহর সমাসীন হওয়ার বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানতে চাই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। মহান আল্লাহর বিশেষণ বিষয়ে চার ইমামসহ পূর্ববর্তী ইমামগণের মূলণীতি হলো কুরাআন ও হাদীসে মহান আল্লাহর বিষয়ে যা বলা হয়েছে তা সরল অর্থে বিশ্বাস করা, তুলনা ও ব্যাখ্যা বর্জন করা। বিষয়টি বিস্তারিত জানতে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) রচিত আলি-ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা বইটি পড়তে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এখানে মহান আল্লাহর আরশের উপর ইসতিওয়া প্রসঙ্গটি উল্লেখ করছি। কুরআনে সাত স্থানে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর ইসতিওয়া করেছেন।আরবীতে কোনো কিছুর উপর ইসতিওয়া অর্থ তার ঊর্ধ্বে অবস্থান (rise over, mount, settle)। সালাতের নিষিদ্ধ সময় বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন প্রশ্নকারীকে বলেন:
حَتَّى تَسْتَوِىَ الشَّمْسُ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ ، فَإِذَا اسْتَوَتْ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ فَدَعِ الصَّلاَةَ
(সালাত বৈধ থাকবে) যতক্ষণ না সূর্য তোমার মাথার উপরে তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে। যখন সূর্য তোমার মাথার উপর তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে তখন সালাত পরিত্যাগ করবে। আমরা ইসতিওয়া-র অনুবাদে উপরে অবস্থান বা অধিষ্ঠান শব্দ ব্যবহার করব, ইনশা আল্লাহ। জাহমী-মুতাযিলীগণ এ বিশেষণ অস্বীকার করেছেন। তারা দাবি করেন, আরশের উপরে অধিষ্ঠান কোনোভাবেই মহান আল্লাহর বিশেষণ হতে পারে না; কারণ মহান আল্লাহর জন্য এভাবে অবস্থান পরিবর্তন বা কোনো কিছুর উপরে স্থিতি গ্রহণের মত মানবীয় কর্ম অশোভনীয় এবং তাঁর অতুলনীয়ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়া মহান আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি বান্দার সাথে ও নিকটে।কাজেই তিনি আরশের উপর থাকতে পারেন না। বরং তাঁরা দাবি করেন যে, মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান; তাঁকে কোনো স্থান বা দিকে সীমাবদ্ধ করা তাঁর অতুলনীয়ত্বের পরিপন্থী। তারা দাবি করেন, আরশে অধিষ্ঠান গ্রহণের অর্থ আরশের নিয়ন্ত্রণ, দখল বা ক্ষমতা গ্রহণ। সাহাবী, তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ী ইমামগণ মহান আল্লাহর আরশের উপর অধিষ্ঠান বা ইসতিওয়ার বিশেষণটি সরল অর্থে গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকেই তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ী ইমামগণ এবং পরবর্তী মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ জাহমীগণের এ মত কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং একে কুরআন অস্বীকার বলে গণ্য করেছেন। এ বিষয়ে তাঁরা বলেন: মহান আল্লাহর আরশের উপরে অবস্থান বা আরশের ঊর্ধ্বে থাকার বিশেষণটি কুরআন ও হাদীস দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত। তবে এর প্রকৃতি ও স্বরূপ অজ্ঞাত। অজ্ঞাতকে অজ্ঞাত রেখে কুরআনের অন্যান্য বক্তব্যের ন্যায় এ বক্তব্যও স্বীকার ও বিশ্বাস করা মুমিনের জন্য জরুরী। তাঁরা বলেন: মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন। তাঁর এ অধিষ্ঠান বা অবস্থানের স্বরূপ আমরা জানি না এবং জানতে চেষ্টাও করি না। বরং বিশ্বাস করি যে, তাঁর এ অধিষ্ঠান কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির বিশেষণ বা কর্মের মত নয়। তাঁর অতুলনীয়ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান তিনি গ্রহণ করেন। যখন মানুষ কল্পনা করে যে, মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মতই; তিনি একই সাথে আরশের উপরে এবং বান্দার নিকটবর্তী হতে পারেন না- তখনই কুরআনের এ দুটি নির্দেশনার মধ্যে বৈপরীত্য আছে বলে কল্পনা হয়। মূল বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহান আল্লাহ সৃষ্টির মত নন। কাজেই নৈকট্য ও ঊর্ধ্বত্ব উভয়কে সমানভাবে বিশ্বাস করে এর স্বরূপ ও প্রকৃতি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করলে কুরআনের সকল নির্দেশনা বিশ্বাস ও মান্য করা হয়। আর নৈকট্যের অজুহাতে তাঁকে সর্বত্র বিরাজমান বলে দাবি করলে, তিনি কোথায় আছেন তা জানি না বলে দাবি করলে, আরশ কোথায় তা জানি না বলে দাবি করলে বা তাঁর আরশের উপর অধিষ্ঠানের আয়াতগুলো ব্যাখ্যার নামে অস্বীকার করলে কুরআন ও হাদীসের অগণিত বক্তব্য অস্বীকার করা হয়, যা কুফরীর নামান্তর। ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাঁর ওসীয়াত গ্রন্থে লিখেছেন:
نُقِرُّ بِأَنَّ اللهَ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُوْنَ لَهُ حَاجَةٌ إِلَيْهِ وَاسْتِقْرَارٌ عَلَيْهِ، وَهُوَ الْحَافِظُ لِلْعَرْشِ وَغَيْرِ الْعَرْشِ، فَلَوْ كَانَ مُحْتَاجاً إِلَيْهِ لَمَا قَدِرَ عَلَى إِيْجَادِ الْعَالَمِ وَتَدْبِيْرِهِ كَالْمَخْلُوْقِين، وَلَوْ صَارَ مُحْتَاجاً إِلَى الْجُلُوْسِ وَالْقَرَارِ فَقَبْلَ خَلْقِ الْعَرْشِ أَيْنَ كَانَ اللهُ تَعَالَى؟ فَهُوَ مُنَزَّهٌ عَنْ ذَلِكَ عُلُوًّا كَبِيْراً.
আমরা স্বীকার ও বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন, আরশের প্রতি তাঁর কোনোরূপ প্রয়োজন ব্যতিরেকে এবং আরশের উপরে স্থিরতা-উপবেশন ব্যতিরেকে। তিনি আরশ ও অন্য সবকিছুর সংরক্ষক। তিনি যদি আরশের মুখাপেক্ষী হতেন তাহলে বিশ্ব সৃষ্টি করতে ও পরিচালনা করতে পারতেন না, বরং তিনি মাখলূকের মত পরমুখাপেক্ষী হতেন। আর যদি তাঁর আরশের উপরে উপবেশন করার প্রয়োজনীয়তা থাকে তবে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? কাজেই আল্লাহ এ সকল বিষয় থেকে পবিত্র ও অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। ইমাম আযমের এ বক্তব্য উল্লেখ করে মোল্লা আলী কারী হানাফী বলেন: এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রাহ) খুবই ভাল কথা বলেছেন। তাঁকে আল্লাহর আরশের উপরে ইসিতিওয়া বা অধিষ্ঠান বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:
اَلاِسْتِوَاءُ مَعْلُوْمٌ وَالْكَيْفُ مَجْهُوْلٌ وَالسُّؤَالُ عَنْهُ بِدْعَةٌ وَالإِيْمَانُ بِهِ وَاجِبٌ
ইসতিওয়া বা অধিষ্ঠান পরিজ্ঞাত, এর পদ্ধতি বা স্বরূপ অজ্ঞাত, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত এবং এ বিষয় বিশ্বাস করা জরুরী। ইমাম সায়িদ নাইসাপূরী হানাফী বলেন:
حكي عن أبي حنيفة t في رسالته إلى مقاتل بن سليمان جواب كتابه، في فصل منها: وأما قوله تعالى على العرش استوى حقا، فإنّما ننتهي من ذلك إلى ما وصف كتابُ ربنا في قوله تعالى {ثم استوى على العرش}، وتَعْلَمَنَّ أنه كما قال، ولا ندعي في استوائه على العرش علما، ونزعم أنه قد استوى، ولا يشبه استواؤه باستواء الخلق، فهذا قولنا في الاستواء على العرش.
ইমাম আবূ হানীফা থেকে বর্ণিত, তিনি (তাঁর সমসাময়িক দেহে বিশ্বাসী মুফাস্সির) মুকাতিল ইবন সুলাইমান (১৫০ হি)-এর পত্রের উত্তরে লেখা তাঁর পত্রের একটি অনুচ্ছেদে লিখেন: মহান আল্লাহ বলেছেন: তিনি আরশের উপর ইসিতওয়া (অধিষ্ঠান বা অবস্থান) গ্রহণ করেছেন। সত্যই তিনি তা করেছেন। আমাদের রবের কিতাব এ বিষয়ে যা বর্ণনা করেছেন সেখানেই আমরা থেমে যাই। আল্লাহ বলেছেন: অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করলেন। আপনি নিশ্চিত জানুন যে, তিনি যা বলেছেন বিষয়টি তা-ই। আমরা তাঁর অধিষ্ঠান বিষয়ে কোনো জ্ঞানের দাবি করি না। আমরা মনে করি তিনি অধিষ্ঠান গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর অধিষ্ঠান সৃষ্টির অধিষ্ঠানের অনুরূপ বা তুলনীয় নয়। আরশের উপর অধিষ্ঠানের বিষয়ে এটিই আমাদের বক্তব্য। আমরা বলেছি, মহান আল্লাহর আরশের ঊর্ধ্বে থাকা অস্বীকার করার জন্য জাহমী-মুতাযিলীগণ তাঁর নৈকট্য বিষয়ক আয়াতগুলোকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে দাবি করতেন যে, তিনি আত্মার মত বা বাতাসের মত। আত্মা যেমন দেহের সর্বত্র বিদ্যমান এবং বাতাস যেমন পৃথিবীর সর্বত্র বিদ্যমান তেমনি মহান আল্লাহ সৃষ্টি জগতের সর্বত্র বিরাজমান। এভাবে তাঁরা আল্লাহকে অতুলনীয় বলে প্রমাণ করার দাবিতে তাঁকে আত্মা ও বাতাসের সাথে তুলনা করতেন। উপরন্তু তারা তাঁকে সৃষ্টির অংশ বানিয়ে ফেলেন। বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে মহান আল্লাহ তাঁর অনাদি সত্তায় বিদ্যমান ছিলেন। তিনি তাঁর সত্তার বাইরে ও নিম্নে বিশ্বজগত সৃষ্টি করেন। তাঁর সত্তা বিশ্বজগতের সর্বত্র বিরাজমান বলার অর্থ একথা দাবি করা যে, মহান আল্লাহ বিশ্ব জগতকে তাঁর সত্তার অভ্যন্তরে সৃষ্টি করেছেন!! অথবা বিশ্ব জগত সৃষ্টির পরে তিনি এর অভ্যন্তরে সর্বত্র প্রবেশ করেছেন!!! এগুলো সবই মহান আল্লাহর নামে ওহী-বহির্ভুত বানোয়াট অশোভনীয় ধারণা। আল্লাহর সত্তা যেমন সৃষ্টির মত নয়, তেমনি তাঁর বিশেষণাবলিও সৃষ্টির মত নয়। সকল মানবীয় কল্পনার ঊর্ধ্বে তাঁর সত্তা ও বিশেষণ। কাজেই মহান আল্লাহর আরশের উপরে অধিষ্ঠান এবং বান্দার নৈকট্য উভয়ই সত্য এবং মুমিন উভয়ই বিশ্বাস করেন। উভয়ের মধ্যে বৈপরীত্য কল্পনা করা মানবীয় সীমাবদ্ধতার ফসল। তদুপরি জাহমীদের এ বিভ্রান্তি দূর করতে ইমামগণ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক বলেন:
الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو من علمه مكان
আল্লাহ আসমানে (ঊর্ধ্বে) এবং তাঁর জ্ঞান সকল স্থানে। কোনো স্থানই মহান আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়। ইমাম আযম আবূ হানীফা থেকেও অনুরূপ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন ইমাম বাইহাকী।এ প্রসঙ্গে পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মালিকী ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইবন আব্দুল র্বার ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ (৪৬৩ হি) বলেন:
علماء الصحابة والتابعين الذين حملت عنهم التآويل في القرآن قالوا في تأويل هذه الآية هو على العرش وعلمه في كل مكان وما خالفهم في ذلك أحد يحتج بقوله
সাহাবী-তাবিয়ী আলিমগণ, যাদের থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে, তারা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, তিনি আরশের উপরে এবং তাঁর জ্ঞান সর্বত্র। দলিল হিসেবে গ্রহণ করার মত একজন আলিমও তাঁদের এ মতের বিরোধিতা করেন নি। ইমামদ্বয়ের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, ইসতিওয়া শব্দটিকে তাঁরা সাধারণ আরবী অর্থেই গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে এ শব্দটির অর্থ অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক, মুতাশাবিহ, রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করেন নি। বরং তাঁরা বলেছেন যে, এ শব্দটির অর্থ জ্ঞাত বিষয়, এর মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা, রূপকতা বা দ্ব্যর্থতা নেই। অর্থাৎ আরবী ভাষায় অন্যন্য সকল ক্ষেত্রে ইসতিওয়া আলা বলতে যা বুঝানো হয় এখানেও সেই অর্থই গ্রহণ করতে হবে, অর্থাৎ ঊর্ধ্বত্ব। এখানে অর্থটি রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করার সুযোগ নেই। তবে ইসতিওয়ার স্বরূপ বা ব্যাখ্যা অজ্ঞাত (মুতাশাবিহ)। এ অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে জ্ঞাত বিষয়কে বিশ্বাস করাই মুমিনের দায়িত্ব। কুরআন কয়েকটি বিষয় আমাদেরকে জানায়: (১) মহান আল্লাহ অনাদি অনন্ত, কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নন এবং সবই তাঁর মুখাপেক্ষী, (২) মহান আল্লাহ কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন, (৩) মহান আল্লাহ সৃষ্টির এক পর্যায়ে আরশ সৃষ্টি করেন এবং আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন এবং (৪) মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার নিকটবর্তী। সাহাবীগণ বিষয়গুলো সবই সরল অর্থে বিশ্বাস করেছেন এবং এ বিষয়ে কোনো বৈপরীত্য অনুভব করেন নি। কারণ আল্লাহর অমুখাপেক্ষী হওয়া, অতুলনীয় হওয়া, নিকটবর্তী হওয়া এবং আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া কোনোটিই মানবীয় বুদ্ধির সাথে সাংঘর্ষিক নয় বা অসম্ভব নয়। কাজেই ওহীর মাধ্যমে যা আল্লাহ জানিয়েছেন তা নিয়ে বিতর্ক করা বিভ্রান্তি বৈ কিছুই নয়। সমস্যার শুরু হয় যখন মানুষ এগুলোর গভীর স্বরূপ সন্ধানে ব্যস্ত হয়। আল্লাহ যদি অমুক্ষাপেক্ষী হন তাহলে আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠানের দরকার কি? আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠান গ্রহণ না করলে এ কথা বারবার বলার দরকার কী? অধিষ্ঠান অর্থ যদি ক্ষমতা গ্রহণ হয় তবে কাকে হটিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করলেন? শুধু আরশের ক্ষমতা গ্রহণের অর্থ কী? এরূপ জিজ্ঞাসা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এসবের সহজ সমাধান ওহীর সবগুলো বিষয় সরলভাবে বিশ্বাস করা। মহান আল্লাহ বলেছেন তিনি অমুক্ষাপেক্ষী ও অতুলনীয় এবং তিনিই বলেছেন তিনি আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠান করেছেন। এ থেকে আমরা বুঝি যে, কোনোরূপ মুখাপেক্ষিতা বা প্রয়োজন ছাড়াই আল্লাহ তা করেছেন এবং তাঁর এ বিশেষণ কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নয়। তবে কেন করেছেন, কিভাবে করেছেন বা এর স্বরূপ কী তা তিনি আমাদের বলেন নি। এগুলি নিয়ে প্রশ্ন করা বা উত্তরের সন্ধান করা দীনের মধ্যে নব-উদ্ভাবন বা বিদআত। কারণ সাহাবীগণ কখনো এরূপ প্রশ্ন বা উত্তর সন্ধান করেন নি। ইমাম আবূ হানীফা উল্লেখ করেছেন যে, মানবীয় সহজাত প্রকৃতিই মহান আল্লাহর ঊর্ধ্বত্ব প্রমাণ করে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহকে ডাকতে ঊর্ধ্বমুখি হয়। এছাড়া হাদীসে এ ঊর্ধ্বত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন:
مَنْ قَالَ لاَ أَعْرِفُ رَبِّيْ فِيْ السَّمَاءِ أَوْ فِيْ الأَرْضِ فَقَدْ كَفَرَ وَكَذَا مَنْ قَالَ إَنَّهُ عَلَى الْعَرْشِ وَلاَ أَدْرِيْ الْعَرْشَ أَفِيْ السَّمَاءِ أَوْ فِيْ الأَرْضِ لأَنَّ اللهَ يَقُوْلُ: الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى وَاللهُ تَعَالَى يُدْعَى مِنْ أَعْلَى لاَ مِنْ أَسْفَلَ لَيْسَ مِنْ وَصْفِ الرُّبُوْبِيَّةِ وَالأُلُوْهِيَّةِ فِيْ شَيْءٍ وَعَلَيْهِ مَا رُوِىَ فِيْ الْحَدِيْثِ أَنَّ رَجُلاً أَتَى إِلَى النَّبِيِّ r بِأَمَةٍ سَوْدَاءَ فَقَالَ: وَجَبَ عَلَيَّ عِتْقُ رَقَبَةٍ، أَفَتُجْزِئُ هَذِهِ؟ فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ r: أَمُؤْمِنَةٌ أَنْتِ؟ فَقَالَتْ: نَعَمْ. فَقَالَ: أَيْنَ اللهُ فَأَشَارَتْ إِلَى السَّمَاءِ. فَقَالَ: اعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ.
যদি কেউ বলে যে, আমার রব্ব আকাশে না পৃথিবীতে তা আমি জানি না তবে সে কাফির হয়ে যাবে। যদি কেউ বলে যে, তিনি আরশের উপরে, কিন্তু আরশ কোথায়- আসমানে না যমিনে- তা আমি জানি না তবে সেও অনুরূপ। কারণ আল্লাহ বলেছেন: দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে সমাসীন। মহান আল্লাহকে ডাকতে হয় ঊর্ধে, নিম্নে নয়। নিম্নে থাকা রুবূবিয়্যাত বা উলূহিয়্যাতের কোনো বিশেষত্ব নয়। আর এ অর্থেই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট একটি কাফ্রী দাসীকে নিয়ে আগমন করে বলে যে, তাকে একটি দাস মুক্ত করতে হবে। এ দাসীকে মুক্ত করলে কি তার দায়িত্ব পালন হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত দাসীকে বলেন, তুমি কি ঈমানদার? সে বলে: হ্যাঁ। তিনি বলেন: আল্লাহ কোথায়? সে আসমানের দিকে ইশারা করে। তখন তিনি বলেন: একে মুক্ত করে দাও, এ নারী ঈমানদার। আকীদা তাহাবিয়ার ব্যাখ্যায় ইবন আবীল ইজ্জ হানাফী বলেন: শাইখুল ইসলাম আবূ ইসমাঈল আনসারী (৪৮১ হি) তাঁর আল-ফারূক গ্রন্থে আবূ মুতী বালখী পর্যন্ত সনদে উদ্ধৃত করেছেন, আবূ মুতী বলেন, আবূ হানীফাকে (রাহ) প্রশ্ন করলাম: যে ব্যক্তি বলে, আমার রব্ব আসমানে না যমীনে তা আমি জানি না, তার বিষয়ে আপনার মত কি? তিনি বলেন: এ ব্যক্তি কাফির। কারণ আল্লাহ বলেছেন: দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে সমাসীন, আর তাঁর আরশ সপ্ত আসমানের উপরে। আমি (আবু মুতী) বললাম: যদি সে বলে, তিনি আরশের উপরে, কিন্তু সে বলে: আরশ কি আসমানে না যমীনে তা আমি জানি না, তাহলে কি হবে? তিনি (আবূ হানীফা) বলেন: তাহলেও সে কাফির। কারণ সে তাঁর আসমানে বা ঊর্ধে হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে, আর যে ব্যক্তি তাঁর ঊর্ধ্বত্ব অস্বীকার করবে সে কাফির। ...
ইসতিওয়া ও অন্যান্য বিশেষণ বিষয়ে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বালের মূলনীতি ও আকীদা ব্যাখ্যা করে আবূ বাকর খাল্লাল আহমদ ইবন মুহাম্মাদ (৩১১ হি) বলেন:
وكان يقول إن الله عز وجل مستو على العرش المجيد ... وكان يقول في معنى الاستواء هو العلو والارتفاع ولم يزل الله تعالى عاليا رفيعا قبل أن يخلق عرشه فهو فوق كل شيء والعالي على كل شيء وإنما خص الله العرش لمعنى فيه مخالف لسائر الأشياء والعرش أفضل الأشياء وأرفعها فامتدح الله نفسه بأنه على العرش أستوى أي عليه علا ولا يجوز أن يقال أستوى بمماسة ولا بملاقاة تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا والله تعالى لم يلحقه تغير ولا تبدل ولا تلحقه الحدود قبل خلق العرش ولا بعد خلق العرش. وكان ينكر على من يقول إن الله في كل مكان بذاته لأن الأمكنة كلها محدودة وحكي عن عبد الرحمن بن مهدي عن مالك أن الله تعالى مستو على عرشه المجيد كما أخبر وأن علمه في كل مكان ولا يخلوا شيء من علمه وعظم عليه الكلام في هذا واستبشعه.
ইমাম আহমদ বলতেন, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত। ... অধিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ তিনি এর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ আরশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সকল কিছুর উপরে। এখানে আরশকে উল্লেখ করার কারণ আরশের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোনো কিছুর মধ্যে নেই। তা হলো আরশ সবচেয়ে মর্যাদাময় সৃষ্টি এবং সব কিছুর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ নিজের প্রশংসা করে বলেছেন যে, তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত, অর্থাৎ তিনি আরশের ঊর্ধ্বে। আরশের উপরে অধিষ্ঠানের অর্থ আরশ স্পর্শ করে অবস্থান করা নয়। মহান আল্লাহ এরূপ ধারণার অনেক ঊর্ধ্বে। আরশ সৃষ্টির পূর্বে এবং আরশ সৃষ্টির পরে মহান আল্লাহ একই অবস্থায় রয়েছেন; কোনোরূপ পরিবর্তন তাঁকে স্পর্শ করে নি, কোনো গণ্ডি বা সীমা তাঁকে সীমায়িত করতে পারে না। যারা বলেন যে, মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের কথা তিনি অস্বীকার ও প্রতিবাদ করতেন। কারণ সকল স্থানই গণ্ডি বা সীমায় আবদ্ধ। তিনি আব্দুর রাহমান ইবন মাহদী থেকে, তিনি ইমাম মালিক থেকে উদ্ধৃত করতেন: মহান আল্লাহ মহা-পবিত্র আরশের ঊর্ধ্বে সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞান-ইলম সর্বত্র বিদ্যমান। কোনো স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বাইরে নয়। আল্লাহর সর্বত্র বিরাজমান কথাটি ইমাম আহমদ ঘৃণ্য বলে গণ্য করতেন। ইমাম তাহাবী (রাহ) বলেন:
وَتَعَالَى عَنِ الْحُدُودِ وَالْغَايَاتِ، وَالأَرْكَانِ وَالأَعْضَاءِ وَالأَدَوَاتِ، لا تَحْوِيهِ الْجِهَاتُ السِّتُّ كَسَائِرِ الْمُبْتَدَعَاتِ. .... وَالْعَرْشُ وَالْكُرْسِيُّ حَقٌّ، وَهُوَ مُسْتَغْنٍ عَنِ الْعَرْشِ وَمَا دُونَهُ، مُحِيطٌ بِكُلِّ شَيْءٍ وَفَوْقَهُ
আল্লাহ্ তাআলা সীমা-পরিধি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও উপাদান-উপকরণের বহু ঊর্ধ্বে। যাবতীয় উদ্ভাবিত সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় তাঁকে ষষ্ঠ দিক পরিবেষ্টন করতে পারে না। আল্লাহর আরশ ও কুরসী (আসন) সত্য। আরশ ও তার নীচে যা কিছু বিদ্যমান সব কিছু থেকে তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি সকল কিছুকে পরিবেষ্টনকারী এবং সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ তিনি তাঁর সৃষ্ট দিক, স্থান ও সীমার ঊর্ধ্বে। তবে সৃষ্টির সীমা যেখানে শেষ তার ঊর্ধ্বে তাঁর মহান আরশ। আরশ সকল সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে বিদ্যমান। তিনি তারও ঊর্ধ্বে। কাজেই তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সকল কিছুকে পরিবেষ্টনকারী। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী বলেন:
وهو فوق العرش كما وصف نفسه، لكن لا بمعنى التحيز ولا الجهة، بل لا يعلم كنه هذا التفوق والاستواء إلا هو...
তিনি আরশের ঊর্ধ্বে, যেভাবে তিনি নিজের বিষয়ে বলেছেন। এর অর্থ কোনো দিক বা স্থানে সীমাবদ্ধ হওয়া নয়। বরং এ ঊর্ধ্বত্বের এবং অধিষ্ঠানের প্রকৃতি তিনি ছাড়া কেউ জানে না...। বস্তুত চার ইমামসহ সালাফ সালিহীন বা ইসলামের প্রথম চার প্রজন্মের সকল বুজুর্গ একই আকীদা অনুসরণ করতেন। তাঁরা সকলেই কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত বিশেষণগুলোকে সরল অর্থে বিশ্বাস করতে এবং ব্যাখ্যা ও তুলনা বর্জন করতে নির্দেশ দিতেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী প্রথম হিজরী শতকের দুজন প্রসিদ্ধ তাবিয়ীর মত উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন:
قال أبو العالية (استوى إلى السماء) ارتفع.. وقال مجاهد (استوى) علا (على العرش)
(প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুহাদ্দিস ও ফকীহ রুফাই ইবন মিহরান) আবুল আলিয়া (৯০ হি) বলেন: আসমানের প্রতি ইসতিওয়া করেছেন অর্থ: আসমানের উপরে থেকেছেন। (অন্য প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুফাস্সির ও ফকীহ ইমাম) মুজাহিদ (১০৪ হি) বলেন: আরশের উপর ইসতিওয়া করেছেন অর্থ আরশের ঊর্ধ্বে থেকেছেন। ইমাম আবূ হানীফার সমসাময়িক প্রসিদ্ধ তাবি-তাবিয়ী মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ফকীহ ইমাম আওযায়ী আব্দুর রাহমান ইবন আমর (১৫৭ হি) বলেন:
كنا والتابعون متوافرون نقول إن الله على عرشه ونؤمن بما وردت به السنة من صفاته
যে সময়ে তাবিয়ীগণ বহু সংখ্যায় বিদ্যমান ছিলেন সে সময়ে আমরা বলতাম: মহান আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে এবং সুন্নাতে (হাদীসে) মহান আল্লাহর যা কিছু বিশেষণ বর্ণিত হয়েছে তা আমার বিশ্বাস করি। মহান আল্লাহর বিশেষণ ব্যাখ্যায় কিছু বলার অর্থ মহান আল্লাহ সম্পর্কে মানবীয় যুক্তি, বুদ্ধি বা ইজতিহাদ দিয়ে কিছু বলা। আর মহান আল্লাহর বিষয়ে ইজতিহাদ করে কিছু বলা যাবে না। এজন্য ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন:
لا ينبغي لأحد أن ينطق في الله تعالى بشئ من ذاته، ولكن يصفه بما وصف سبحانه به نفسه، ولا يقول فيه برأيه شيئاً تبارك الله تعالى رب العالمين.
মহান আল্লাহর বিষয়ে নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলা কারো জন্য বৈধ নয়; বরং তিনি নিজের জন্য যে বিশেষণ ব্যবহার করেছেন তাঁর বিষয়ে শুধু সে বিশেষণই ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে নিজের মত, যুক্তি বা ইজতিহাদ দিয়ে কিছুই বলা যাবে না। মহাপবিত্র, মহাসম্মানিত-মহাকল্যাণময় আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক। ইমাম শাফিয়ীর ছাত্র আবূ সাওর বলেন, ইমাম শাফিয়ী বলেন:
القول في السُّنّة التي وردت وأنا عليها، ورأيتُ أصحابنا عليها أهل الحديث الذين رأيتُهم وأخذتُ عنهم ـ مثل: سفيان الثّوريّ ومالك وغيرهما ـ : الإقرار بشهادة أن لا إله إلا الله وأنّ محمّدًا رسول الله، وأنّ الله ـ تعالى ـ على عرشه في سمائه، يقرب من خلقه كيف شاء، وأنّ الله تعالى ينزل إلى السّماء الدُّنيا كيف شاء.
সুফিয়ান সাওরী, মালিক ও অন্যান্য যে সকল মুহাদ্দিসকে আমরা দেখেছি এবং তাঁদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, আমাদের সে সব সাথী এবং আমি যে সুন্নাত আকীদার উপর রয়েছি তা হলো এরূপ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই, এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, এবং মহান আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে তাঁর আসমানের ঊর্ধ্বে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে বান্দার নিকটবর্তী হন এবং তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এরূপ বিশ্বাসকে ইমামগণ অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। এ মতকে তারা সর্বেশ্বরবাদ বা সর্বজীবে ঈশ্বর মতবাদ বলে গণ্য করতেন। বাশ্শার ইবন মূসা খাফ্ফাফ বলেন:
جاء بشر بن الوليد الكندي إلى القاضي أبي يوسف فقال له تنهاني عن الكلام وبشر المريسي وعلي الأحول وفلان يتكلمون قال وما يقولون قال يقولون الله في كل مكان فقال أبو يوسف علي بهم فانتهوا إليهم وقد قام بشر فجيء بعلي الأحول وبالآخر شيخ فقال أبو يوسف ونظر إلى الشيخ لو أن فيك موضع أدب لأوجعتك فأمر به إلى الحبس وضرب الأحول وطوف به
বিশর ইবন ওলীদ কিন্দী কাযী আবূ ইউসুফের নিকট আগমন করে বলেন: আপনি তো আমাকে ইলমুল কালাম থেকে নিষেধ করেন, কিন্তু বিশর আল-মারীসী, আলী আল-আহওয়াল এবং অমুক ব্যক্তি কালাম নিয়ে আলোচনা করছে। আবূ ইউসুফ বলেন: তারা কী বলছে? তিনি বলেন: তারা বলছে যে, আল্লাহ সকল স্থানে বিরাজমান। তখন আবূ ইউসুফ বলেন: তাদেরকে ধরে আমার কাছে নিয়ে এস। তখন তারা তাদের নিকট গমন করে। ইত্যবসরে বিশর আল-মারীসী উক্ত স্থান পরিত্যাগ করেছিলেন। এজন্য আলী আহওয়াল এবং অন্য একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে ধরে আনা হয়। আবূ ইউসুফ বৃদ্ধ ব্যক্তিটির দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেন: আপনার দেহে শাস্তি দেওয়ার মত স্থান থাকলে আমি আপনাকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতাম। তিনি উক্ত বৃদ্ধকে কারারুদ্ধ করার নির্দেশ দেন এবং আলী আহওয়ালকে বেত্রাঘাত করা হয় এবং রাস্তায় ঘুরানো হয়। এ বিষয়ে উদ্ধৃতিগুলোর তথ্যসূত্র জানতে ও বিস্তারিত আলোচনা পড়তে আবারো আপপনকে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) রচিত আলি-ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা বইটি পড়তে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 17
কোরআনে আছে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গেলে কাফের হয়ে যায় । তাহলে কি আমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গেলে কাফের হয়ে যাব?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিচে আপনর প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচানা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আাপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। মানব প্রকৃতির একটি বিশেষ দিক আনন্দের সময়ে আল্লাহকে ভুলে থাকা কিন্তু বিপদে পড়লে বেশি বেশি দুআ করা। নিঃসন্দেহে এ আচরণ মহান প্রতিপালকের প্রকৃত দাসত্বের অনুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক। কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ স্বভাবের নিন্দা করা হয়েছে। এক স্থানে আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاءٍ عَرِيضٍ
যখন আমি মানুষকে নিয়ামত প্রদান করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। আর যখন কোনো অমঙ্গল বা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে তখন সে লম্বা চওড়া দুআ করে। মুমিনের উচিত নিয়ামতের মধ্যে থাকলে তার স্থায়িত্ব প্রার্থনা করা ও সকল অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কোনো অসুবিধা থাকলে তার কাছে আশ্রয় ও মুক্তি চাওয়া। আর এরূপ অন্তরের দুআই আল্লাহ কবুল করেন। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالْكَرْبِ فَلْيُكْثِرْ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ
যে ব্যক্তি চায় যে কঠিন বিপদ ও যন্ত্রণা-দুর্দশার সময় আল্লাহ তার প্রার্থনায় সাড়া দিবেন, সে যেন সুখশান্তির ও সচ্ছলতার সময় বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দুআ করে। হাদীসটি সহীহ। আবার যখন দুআ করি তখন তৎক্ষণাৎ ফল আশা করি। বিশেষত বিপদে, সমস্যায় বা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হলে। দুচার দিন দুআ করে ফল না পেলে আমরা হতাশ হয়ে দুআ করা ছেড়ে দি। এ হতাশা ও ব্যস্ততা ক্ষতি ও গোনাহের কারণ। কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। কোরআনে এসেছে : لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيم
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল,অতি দয়ালু। সূরা ঝুমার, আয়াত, ৫৩। অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَيْأَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না । কেবল মাত্র কাফের সম্প্রদায়ই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়। সূরা ইউসুফ,আয়াত-৮৭। আমাদের বুঝতে হবে যে, দুআ করা একটি ইবাদত ও অপরিমেয় সাওয়াবের কাজ। আমি যত দুআ করব ততই লাভবান হব। আমার সাওয়াব বৃদ্ধি পাবে, আল্লাহর সাথে আমার একান্ত রহমতের সম্পর্ক তৈরি হবে। সর্বোপরি আল্লাহ আমার দুআ কবুল করবেনই। তবে তিনিই ভাল জানেন কিভাবে ফল দিলে আমার বেশি লাভ হবে। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
لاَ يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ
বান্দা যতক্ষণ পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কোনো কিছু প্রার্থনা না করে ততক্ষণ তার দুআ কবুল করা হয়, যদি না সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বলা হলো : ইয়া রাসূলাল্লাহ, ব্যস্ততা কিরূপ? তিনি বলেন : প্রার্থনাকারী বলতে থাকে দুআ তো করলাম, দুআ তো করলাম ; মনে হয় আমার দুআ কবুল হলো না। এভাবে সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং তখন দুআ করা ছেড়ে দেয়। আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
لا يَزَالُ الْعَبْدُ بِخَيْرٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ قَالُوا وَكَيْفَ يَسْتَعْجِلُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ رَبِّي فَلَمْ يَسْتَجِبْ لِي
বান্দা যতক্ষণ না ব্যস্ত ও অস্থির হয়ে পড়ে ততক্ষণ সে কল্যাণের মধ্যে থাকে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন: ব্যস্ত হওয়া কিরূপ? তিনি বলেন: সে বলে আমি তো দুআ করলাম কিন্তু দুআ কবুল হলো না। হাদীসটি হাসান। প্রত্যেক মুমিনের উপর দায়িত্ব, আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও ভালবাসার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় রাখা। আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন, তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন এবং তিনি আমাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। এ দৃঢ় প্রত্যয় মুমিনের অন্যতম সম্বল ও মহোত্তম সম্পদ। অন্তরের গভীর থেকে মনের আকুতি ও সমর্পণ মিশিয়ে নিজের সবকিছু আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। সাথে সাথে সুদৃঢ় প্রত্যয় রাখতে হবে, আল্লাহ অবশ্যই আমার প্রার্থনা শুনবেন। ইবনু উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
إِذَا سَأَلْتُمْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَيُّهَا النَّاسُ فَاسْأَلُوهُ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَسْتَجِيبُ لِعَبْدٍ دَعَاهُ عَنْ ظَهْرِ قَلْبٍ غَافِلٍ
হে মানুষেরা, তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবে; কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দুআ করলে আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন না। হাদীসটি হাসান। অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاهٍ
তোমরা আল্লাহর কাছে দুআ করার সময় দৃঢ়ভাবে (একীন) বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ নিশ্চয় কবুল করবেন। আর জেনে রাখ, আল্লাহ কোনো অমনোযোগী বা অন্য বাজে চিন্তায় রত মনের প্রার্থনা কবুল করেন না। ব্যাক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক যে কোন প্রকৃত সম্ভাব্য সমস্যাকে নিয়েই আমাদের চিন্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খারাপ দিকটা নিয়েই আবর্তিত হয়। অথচ সমস্যা থেকে উত্তরণের বাস্তব চেষ্টার পাশাপাশি সকল অবস্থায় ভাল চিন্তা করা এবং আল্লাহর রহমতে সকল বিপদ কেটে যাবেই এরুপ সুদৃঢ় আশা রাখা মুমিনের ঈমানের দাবী এবং সাওয়াবের কাজ। যে বান্দা আল্লাহর রহমতের আশা করতে পারেনা সে তো আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করতে পারল না। হাদীসে এসেছে
حسن الظن ( بالله) من حسن العبادة
অর্থঃ আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করা উত্তম ইবাদত। আবু দাউদ,( কিতাবুল আদব,বাব, হুসনিয যন) ৪/৩০০ হাদীস নং ৪৯৯৩। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত অপর একটি হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন:
أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا دَعَانِي
আমার বান্দা আমার বিষয়ে যেরূপ ধারণা করে আমি সেখানেই থাকি। আমার বান্দা যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার সাথে থাকি। মোটকথা, বান্দার অন্তরে আল্লাহর রহমতের আশা তার ঈমানের পরিমান অনুপাতে থেকে থাকে। অর্থাৎ যার যতটুকু ঈমান আছে সে ততোটুকু আল্লাহর রহমতের আশা করে থাকে। কাফেরদের সামান্য পরিমানও ঈমান নেই তাই তারা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ । অনুরুপভাবে কোন মুসলামন যখন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় তখন তার একাজটি কাফেরদের অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে যায় এবং এটাকে কুফুরী হিসাবে গণ্য করা হয়। অতএব আমাদের উচিত সবসময় সবধরনের হতাশা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। সঠিক বিষয় আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পাঠককে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 18
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ, আপনার কাছে আমার জানার বিষয় হল, রমযান মাসে কেউ মারা গেলে কি তার কোন সওয়াল-জওয়াব হবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে শুকরান । নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে স্বল্পপরিসরে আলোচনা করা হল । আশা করি তাতে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। দুনিয়ার জীবনে যে ব্যাক্তিই গুনাহ বা অপরাধ করবে, কবরে সে ব্যক্তিই শাস্তির যগ্য (আল্লাহর কাছে তাওবা করে মাফ পেয়ে গেলে ভিন্ন কখা)। সে যেদিনেই মৃতবরণ করুক, এক্ষেত্রে দিন-তারিখ বা সময়ের কোন শ্রেষ্ঠত্য নেই। কারন সওয়াব বা ফযীলত বান্দার আমলের ওপর নির্ভর করে। একটি হাদীসে জুমআর দিনে মৃতবরনের ফযীলতের বিষয়ে বলা হলেও তা অত্যন্ত দুর্বল একাধিক সনদ একত্রিত করার পরও হাদীসটির দুর্বলতা দূর হয়নি। -হাদীসের আরবী উচ্চারণ নিম্নরুপ:
القبر ما من مسلم يموت يوم الجمعة أو ليلة الجمعة إلا وقاه الله فتنة
অর্থঃ যে ব্যাক্তিই জুমআর দিনে বা রাতে মৃত বরণ করবে আল্লাহ তাকে কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন। শায়খ আলবানী রহঃ হাদীসটি তার আহকামুল জানাইয গ্রন্থে এনে বলেছেন: সনদের সমষ্টির ভিত্তিতে হাদীসটি সহীহ বা হাসান। খন্ড,১ পৃষ্ঠ,৩৫। কিন্তু তুহফাতুল আহওযী গ্রন্থের লেখক তার কিতাবে হাদীসটিকে ইনকিতা এর ভিত্তিতে দুর্বল বলেছেন। খন্ড,৩ পৃষ্ঠ,১৩৮। আর শায়খ শুয়াইব আরনাউত বলেন: হাদীসটির সনদ দুর্বল্ । আলবানী রহঃআহকামুল জানাইজ গ্রন্থে হাদীসটিকে হাসান বা সহীহ বলার ক্ষেত্রে ভুল করেছেন। মুসনাদে আহমাদ,তাহকীক,শুয়াইব আরনাউত,খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬৯। তবে যদি কেউ রোজায় থাকা অবস্থায় মারা যায় তাহলে তার ব্যাপারে কল্যাণের আশা করা যেতে পারে। একটি হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন:
ومن صام يوما ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة
অর্থঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখল, এ অবস্থাতে তার মৃত্যু ঘটল সে ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি সহীহ লিগয়রিহী এবং সনদের সকল রাবী ছিকাহ, তবে মুনকাতি। মুসনাদে আহমাদ, তাহকীক,শুয়াইব আরনাউত,খন্ড,৫ পৃষ্ঠা ৩৯১। শায়খ আলবানী বলেন: হাদীসের সনদটি সহীহ। আহকামুল জানাইজ, খন্ড,১ পৃষ্ঠা ৪৩। হায়সামী রহঃ বলেন:উসমান ইবনে মুসলিম ছাড়া সনদের সকল রাবী সহীহের রাবী। তবে তিনি ছিকাহ। মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খন্ড, ৭ পৃষ্ঠ,১৪০। উপরের আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায় যে, নিসক রমজানের দিবসে মারা যাওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বা দুর্বল হাদীস বর্ণীত হয়নি। যা আছে তা শুক্রুবার কিংবা রোজা থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে। আল্লা্হ আমাদেরকে উত্তম মৃত্যু দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 19
আসসালামু আলাইকুম. রাসূলুল্লাহ সঃ কিসের তৈরি? কেউ বলেন তিনি নুরের তৈরি; আবার কেউ বলেন তিনি মাটির তৈরি। তিনি মুলত কিসের তৈরি এসম্পর্ক্যে কুরআন ও হাদিসে যে বর্ণনা আছে তা উল্লেখ পূর্বক প্রশ্নের সঠিক উত্তর চাই! ধন্যবাদ।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। নিচে এবিষয়ে সামান্য আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন ইনশাল্লাহ। রাসূল সাঃ সৃষ্টিগতভাবে আমাদের মতই মানুষ ছিলেন নূরের তৈরি ছিলেন না। কুরআন-হাদীসে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সা. অন্যদের মতই মানুষ। এমনকি যুগে যুগে নবী-রাসূলদের দাওআত অস্বীকার করার ক্ষেত্রে অবিশ্বাসীদের প্রধান দাবি ছিল যে নবীগণ তো মানুষ মাত্র এরা আল্লাহর নবী হতে পারেন না। আল্লাহ যদি কাউকে পাঠাতেই চাইতেন তবে ফিরিশতা পাঠিয়ে দিতেন। যেহেতু এরা মানুষ সেহেতু এদের নুবুওয়াতের দাবি মিথ্যা। এদের কথার প্রতিবাদে নবীগণ তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে আমরা তোমাদের মত মানুষ এ কথা ঠিক তবে এর অর্থ এই নয় যে মানুষ হলে আল্লাহর ওহী ও নুবুওয়াতের মর্যাদা লাভ করা যায় না। বরং আল্লাহ মানুষদের মধ্য থেকেই যাকে ইচ্ছা নবী বা রাসূল হিসেবে বেছে নেন
এ বিষয়ে এখানে কয়েকটি আয়াত এবং হাদীস উল্লেখ করা হল। বাশার بَشَرٌ অর্থ মানুষ মানুষগণ বা মানুষজাতি (man, human being, men, mankind(
কুরআন কারীমে প্রায় ৪০ স্থানে বাশারশব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এই একই অর্থে। একবচন ও বহুবচন উভয় অর্থেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সা. বাশার বা মানুষ। এছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি অন্যদের মত মানুষ। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
وَقَالُوا لَنْ نُؤْمِنَ لَكَ حَتَّى تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الأَرْضِ يَنْبُوعًا أَوْ تَكُونَ لَكَ جَنَّةٌ مِنْ نَخِيلٍ وَعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الأَنْهَارَ خِلالَهَا تَفْجِيرًا أَوْ تُسْقِطَ السَّمَاءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا أَوْ تَأْتِيَ بِاللَّهِ وَالْمَلائِكَةِ قَبِيلا أَوْ يَكُونَ لَكَ بَيْتٌ مِنْ زُخْرُفٍ أَوْ تَرْقَى فِي السَّمَاءِ وَلَنْ نُؤْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتَّى تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَقْرَؤُهُ قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنْتُ إِلا بَشَرًا رَسُولا وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَى إِلا أَنْ قَالُوا أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَسُولا
এবং তারা বলে কখনই আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব না যতক্ষণ না আপনি আমাদের জন্য ভূমি হতে একটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত করবেন। অথবা আপনার একটি খেজুরের ও আঙ্গুরের বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে আপনি নদী-নালা প্রবাহিত করে দেবেন। অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন তদনুযায়ী আকাশকে খণ্ড-বিখণ্ড করে আমাদের উপর ফেলবেন অথবা আল্লাহ ও ফিরিশতাগণকে আমাদের সামনে এনে উপস্থিত করবেন। অথবা আপনার একটি অলংকৃত স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে। অথবা আপনি আকাশে আরোহণ করবেন তবে আমরা আপনার আকাশ আরোহণে কখনো বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না আপনি আমাদের (আসমান থেকে) একটি কিতাব অবতীর্ণ করবেন যা আমরা পাঠ করব। বল পবিত্র আমার প্রতিপালক (সুবহানাল্লাহ!)! আমি তো কেবলমাত্র একজন মানুষ একজন রাসূল। আর মানুষের কাছে যখন হেদায়েতের বানী আসে তখন তো তারা শুধু একথা বলে ঈমান আনয়ন করা থেকে বিরত থাকে যে আল্লাহ কি একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন সূরা-আল ইসরা আয়াত ৯০-৯৪। অর্থাৎ কাফিরদের দাবি যে, আল্লাহর রাসূল হওয়ার অর্থ আল্লাহর ক্ষমতার কিছু অংশ লাভ করা। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ জানালেন যে, রাসূল হওয়ার অর্থ আল্লাহর নিদের্শ অনুসারে প্রচারের দায়িত্ব লাভ, ক্ষমতা লাভ নয়; ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلا صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
বল:আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র আমার প্রতি ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদের মা বুদ (উপাস্য) একমাত্র একই মা বুদ। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। সূরা-আল কাহাফ, আয়াত, ১১০। রাসূলুল্লাহ সা. বারবার তাঁর উম্মতকে বিষয়টি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি একদিকে যেমন আল্লাহ তাঁকে যে মর্যাদা দান করেছেন তা তাঁর উম্মতরক জানিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে বারবার তাঁর উম্মতকে শিখিয়েছেন যে, তিনি একজন মানুষ। এক হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সা. সালাতের মধ্যে ভুল করেন। সালামের পরে সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল, সালাতের কি কোনো নতুন বিধান নাযিল হয়েছে? তিনি বলেন: তোমরা এ প্রশ্ন করছ কেন? তারা বলেন: আপনি এমন এমন করেছেন। তখন তিনি সালাত পূর্ণ করেন এবং বলেন:
إِنَّهُ لَوْ حَدَثَ فِي الصَّلاةِ شَيْءٌ لَنَبَّأْتُكُمْ بِهِ وَلَكِنْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ فَإِذَا نَسِيتُ فَذَكِّرُونِي
সালাতের নিয়ম পরিবর্তন করা হলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে জানাতাম। কিন্তু আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ মাত্র। তোমরা যেমন ভুল কর আমিও তেমনি ভুল করি। যদি আমি কখনো ভুল করি তবে তোমরা আমাকে মনে করিয়ে দেবে। বুখারী, আস সাহীহ,কিতাব, বাদউল ওহী, বাব,আত তাওয়াজ্জুহু নাহওয়াল কিবলাতি, হাদীস নং ৪০১। উপরের অর্থে আবূ হুরাইরা, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, আনাস ইবনু মালিক, ও অন্যান্য সাহাবী (রাদিয়াল্লাহুম) থেকে অনেক হাদীস সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও সিহাহ সিত্তার অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। উপরের আয়াত ও হাদীসসমূহে আমরা দেখতে পেলাম যে, আল্লাহ রাসূল সা. কে বিভিন্ন আয়াতে মানুষ বলেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিভিন্ন হাদীসে নিজেকে মানুষ বলেছেন। রাসূল সা. কে মানুষ বলার পাশাপাশি অনেক আয়াতে মহান মর্যাদার দিক লক্ষ্য করে নূর, বা আল্লাহর নূর,বলা হয়েছে এবং মুফাস্সিরগণ সেখানে নূর অর্থ কুরআন, ইসলাম,মুহাম্মাদ (সা.),ইত্যাদি অর্থ গ্রহণ করেছেন । তবে সেসমস্ত স্থানে রাসূল সা. কে হেদায়াতের আলো ও সঠিক পথের নির্দেশক হিসেবে,নূরবলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُـنِيرًا
হে নবী, আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং আলোকোজ্জ্বল (নূর-প্রদানকারী) প্রদীপরূপে। সূরা- আল আহযাব, আয়াত, ৪৫-৪৬। অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
يَاأَهْلَ الْكِـتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُـبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنْ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثـِيـرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنْ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِيـنٌ
হে কিতাবীগণ, আমার রাসূল তোমাদের নিকট এসেছেন, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে তিনি তার অনেক তোমাদের নিকট প্রকাশ করেন এবং অনেক উপেক্ষা করে থাকেন। আল্লাহর নিকট হতে এক নূর ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। সূরা-আল মায়েদা, আয়াত ১৫। এই আয়াতে নূর বা জ্যোতি বলতে কি বুঝানো হয়েছে সে বিষয়ে মুফাস্সিরগণ মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন,এখানে নূর অর্থ কুরআন, কেউ বলেছেন, ইসলাম, কেউ বলেছেন, মুহাম্মাদ (সা.)। যারা এখানে নূরঅর্থ মুহাম্মাদ (সা.) বুঝিয়েছেন, তাঁরা দেখেছেন যে, স্পষ্ট কিতাববলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। কাজেই নূরবলতে মুহাম্মাদ (সা.)- কে বুঝানোই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে ইমাম তাবারী বলেন,
يَعْنِي بِالنُّورِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, الَّذِي أَنَارَ اللَّهُ بِهِ الْحَقَّ, وَأَظْهَرَ بِهِ الإِسْلاَمَ, وَمَحَقَ بِهِ الشِّرْكَ فَهُوَ نُورٌ لِمَنِ اسْتَنَارَ بِهِ يُبَيِّنُ الْحَقَّ, وَمِنْ إِنَارَتِهِ الْحَقَّ تَبْيِينُهُ لِلْيَهُودِ كَثِيرًا مِمَّا كَانُوا يُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ . নূর (আলো) বলতে এখানে মুহাম্মাদ (সা.)-কে বুঝানো হয়েছে, যাঁর দ্বারা আল্লাহ হক্ক বা সত্যকে আলোকিত করেছেন,ইসলামকে বিজয়ী করেছেন এবং র্শিককে মিটিয়ে দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর দ্বারা আলোকিত হতে চায় তার জন্য তিনি আলো। তিনি হক্ক বা সত্য প্রকাশ করেন।তাঁর হক্ককে আলোকিত করার একটি দিক হলো যে, ইহূদীরা আল্লাহর কিতাবের যে সকল বিষয় গোপন করত তার অনেক কিছু তিনি প্রকাশ করেছেন। তাফসীর, তাবারী,৬/১৬১। উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পেলাম যে, কুরআন কারীমে সত্যের দিশারী, হেদায়াতের আলো ও সঠিক পথের নির্দেশক হিসেবে কুরআন কারীমকে নূরবলা হয়েছে। অনুরূপভাবে কোনো কোনো আয়াতে নূর শব্দের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো মুফাস্সির রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বা ইসলামকে বুঝানো হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। কুরআন কারীমের এ সকল বর্ণনা থেকে বুঝা যায় না যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.), কুরআন বা ইসলাম নূরের তৈরী বা নূর থেকে সৃষ্ট। আমরা বুঝতে পারি যে, এখানে কোনো সৃষ্ট, জড় বা মূর্ত নূর বা আলো বুঝানো হয় নি। রাসূলুল্লাহ সা., ইসলাম ও কুরআন কোনো জাগতিক, জড়, ইন্দ্রিয়গাহ্য বা মূর্ত আলো নয়। এ হলো বিমূর্ত, আত্মিক, আদর্শিক ও সত্যের আলোকবর্তিকা, যা মানুষের হৃদয়কে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে বিশ্বাস, সত্য ও সুপথের আলোয় জ্যোতির্ময় করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এব্যাপারে সঠিক আকীদা পোষণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন। এব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য পাঠককে ইসলামী আকীদা ও হাদীসের নামে জালিয়াতি বইটি পড়তে অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 20
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, যে ব্যক্তি আত্যহত্যা করে মৃত্যুবরণ করে তার সাথে আমাদের মুয়ামালা বা আচরণ কেমন হবে দয়া করে কুরআন হাদীসের আলোকে জানাবেন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিম্নে উক্ত বিষয়ে আলোচনা করা হল। আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন ইনশাল্লাহ। আত্যহত্যা করার হুকুমঃ
আত্যহত্যা নিঃসন্দেহে কবীরা গুনাহ এবং মূলত এটি একটি কুফরী গোনাহ যার শাস্তি অনন্তকাল জাহান্নাম। একজন মানুষ আত্যহত্যা করার কারণ কয়েকটি হতে পারে। প্রথমতঃব্যক্তি যখন আত্যহত্যা করে তখন সে সাধারনত আলাহর রহমত হতে নিরাশ হয়েই এই জঘন্য পাপকাজে লিপ্ত হয়। কারণ কোনোরূপ আশা থাকলে কেউ আত্মহত্যা করেন না। যখন কেউ চিন্তা করে যে, আমার জীবনের উন্নতির, কল্যাণের বা ভালর কোনো আশা আর নেই তখনই সে আত্মহত্যা করে। আর এ হলো মহান আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কুফুরী। কোরআনে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَيْأَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না । কেবল মাত্র কাফের সম্প্রদায়ই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়। সূরা ইউসুফ,আয়াত-৮৭। দ্বিতীয়তঃ সে বৈধ মনে করে আত্যহত্যা করবে। এক্ষেত্রেও তার এ কাজ কোরআন হাদীসের দৃষ্টিতে কুফুরী হিসাবে বিবেচিত হবে। কোরআন ও হাদীসে হালালকে হারাম মনে করা এবং হারামকে হালাল বা বৈধ মনে করাকে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে এবং এটাকে কুফুরী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। তৃতীয়তঃ উক্তব্যক্তি নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এই ভয়াবহ অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। উপরের দুটি অবস্থায় আত্মহত্যাকারীর ক্ষমার কোনোই আশা থাকে না। তৃতীয় পর্যায়ের লোকটির ক্ষমার সামান্য একটু সম্ভাবনা থাকে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির বিষয়ে আমরা জানিনা যে, সে কোন অবস্থাতে আত্যহত্যার পথ বেছে নিল। সে যে অবস্থাতে বা যে কারনেই আত্যহত্যা করুক নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং কবীরাহ গুনাহ। রাসূল সা. আত্যহত্যাকারীর ব্যাপারে চিরদিন জাহান্নামে থাকার মত ভয়াবহ শাস্তির কথাও হাদীস শরীফে একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত এক হাদীসে রাসূল সা. বলেন:
مَن تردى من جبل فقتل نفسه فهو في نار جهنم يتردى فيه خالداً مخلداً فيها أبداً ، ومَن تحسَّى سمّاً فقتل نفسه فسمُّه في يده يتحساه في نار جهنم خالداً مخلداً فيها أبداً ، ومَن قتل نفسه بحديدة فحديدته في يده يجأ بها في بطنه في نار جهنم خالداً مخلداً فيها أبداً
অর্থঃ যে ব্যক্তি আত্যহত্যার উদ্দেশ্যে পাহাঢ় থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামের আগুনে চিরোদিন পড়তে থাকবে। আর যে বিষ পান করে আত্যহত্যা করবে বিষ তার হাতে থাকবে এবং জাহান্নামের আগুনে চিরদিন সে তা পান করতে থাকবে। আর যে লোহার টুকরা দিয়ে আত্যহত্যা করবে উক্ত লোহার টুকরা তার হাতে থাকবে এবং জাহান্নামের আগুনে সে চিরদিন তা পেটের ভিতর ঢুকাতে থাকবে। বুখারী,আস সহীহ, বাব, শুরবিস সাম্মি, হাদীস নং ৫৭৭৮। সাবেত ইবনে দহহাক রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে তিনি বলেন:
مَن قتل نفسه بشيء في الدنيا عذب به يوم القيامة অর্থঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন জিনিস দ্বারা আত্যহত্যা করল কিয়ামতের দিন তাকে তা দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। বুখারী, আস সাহীহ, হাদীস নং ৬৬৪৭। মুসলিম, আস সহীহ, হাদীস নং ৩১৬। জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ এর সূত্রে বর্ণীত একটি হাদীসে আছে:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : كان فيمن كان قبلكم رجل به جرح فجزع فأخذ سكيناً فحز بها يده فما رقأ الدم حتى مات . قال الله تعالى : بادرني عبدي بنفسه حرمت عليه الجنة
অর্থঃ তোমাদের পূর্বে একব্যক্তির শরীরে যখম ছিলো সে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ল একটি ছুরি দ্বারা নিজের হাত কেটে ফেলল এবং রক্ত বন্ধ হলনা। অবশেষে লোকটি মারা গেল। আল্লাহ তায়ালা বললেন: আমার বান্দা তাড়াহুড়া করেছে তার জন্য জান্নাত হারাম। বুখারী, আস সহীহ, হাদীস নং ৩৪৬৩। এ সকল হাদীস প্রমাণ করে যে, আত্মহত্যাকারীর জন্য মুক্তির আশা নেই। সে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। রাসূল সা. আত্যহত্যা কারীর জানাযার নামাজে শরীক হতে অস্বীকার করেন। জাবের ইবনে সামুরা রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন:
أُتي النبي صلى الله عليه وسلم برجل قتل نفسه بمَشاقص فلم يصل عليه অর্থঃ তীর দ্বারা আত্যহত্যা করেছে এমন এক ব্যক্তিকে রাসূল সাঃ এর কাছে আনা হল ক্ন্তিু তিনি তার জানাযার নামাজ পড়লেন না। বুখারী আস সহীহ, বাব,তারকুস সালাতি আলা ক্বাতিলি নাফসিহী, হাদীস নং ২৩০৯। তার জানাযার নামাজঃ
ইমাম নববী রহঃ বলেন: উপরোক্ত হাদীসের আলোকে উমার ইবনে আব্দুল আজীজ এবং আওজায়ী রহঃ বলেন আত্যহত্যা কারীর জানাজার নামাজ পড়া যাবে না। পক্ষান্তরে হাসান বসরী, ইমাম নাখয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম শাফী রহঃ সহ অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে আত্যহত্যা কারীর জানাযার নামাজ পড়তে হবে। কেননা রাসূল সা. নিজে এমন ব্যক্তির জানাযার নামাজে শরীক না হলেও সাহাবয়ে কেরামকে এব্যাপারে অনুমতি প্রদান করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম তার জানাযার নামাজ পড়েছেন। যেমন তিনি ইসলামের শুরুর যুগে কেউ ঋনি হয়ে মারা গেলে (ঋন আদায়ে অবহেলা করার ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য) তার জানাযায় শরীক হতেন না এবং সাহাবায়ে কেরামকে তার জানাযায় শরীক হতে আদেশ করতেন। তিনি বলতেন: صَلُّوا عَلَى صَاحِبكُمْ (তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযার নামাজ পড়)। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ২২৮৯। কাজী ইয়াজ বলেন, সকল উলামায়ে কেরামের মত হল, প্রত্যেক মুসলমানের জানাযার নামাজ পড়া হবে। ব্যাক্তি হোক হদের শাস্তি প্রাপ্ত, রজমকৃত, আত্যহত্যাকারী কিংবা অবৈধ সন্তান। (শরহুন নববী আলা মুসলিম, ৩/৪০৫। কিতাব, আলজানাইয, বাব, তারকুস সালাত আলাল কাতিলি নাফসিহি। (শামিলা)
এ হিসাবে উলামায়ে কেরামের মতে সুন্নাত হল, আলেম বা শ্রেষ্ঠব্যাক্তিরা আত্যহত্যাকারীর জানাযায শরীক হবেনা বরং সাধারন মানুষদের মাধ্যমে তার জানাযার নামাজ সম্পূর্ণ করা হবে। চিরোদিন জাহান্নামে থাকাঃ
উপরের হাদীসগুলোতে আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ .... বারবার বলেছেন যে, আত্মহত্যাকারী অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। এর বিপরীতে মূলত কোনো হাদীস নেই। তবে দু-একটি হাীসের প্রাসঙ্গিক নিরর্শনা ও ইসলামের মূলনীতির আলোকে আলিমগণ বলেছেন যে, যে ব্যক্তি তাওহীদের উপর মৃত্যুবরণ করবে সে চিরদিন জাহান্নামে থাকবে না যদিও সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। উপরে উাল্লেখিত হাদীসগুলোতে আত্যহত্যাকারীর চিরদিন জাহান্নামে থাকার যে কথা এসেছে উলামায়ে কেরাম এ হাদীসের ব্যাক্ষায় বলেন, যে ব্যক্তি বৈধমনে করে আত্যহত্যা করবে সে তা বৈধ মনে করার কারণে কাফের হয়ে যাবে। অথবা যদি কেউ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে আত্মহত্যা করে তবে তাকে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকতে হবে। যদি সে এটাকে বৈধ মনে না করে বা আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ মহাপাপ করে ফেলে তবে তার মুক্তির আশা করা যায়। আল্লাহর ইচ্ছায় সে একদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে ইনশাল্লাহ। কারন কোরআনে মহান দয়াময় আল্লাহ একমাত্র শিরক ছাড়া অন্য সকল গুনাহ মাফ করে দেয়ার ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
(অর্থঃ) নিশ্চই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার বিষয়কে ক্ষমা করবেন না। আর তিনি অন্যান্য গুনাহের ব্যাপারে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। সূরা নিসা-১১৬। আর আত্মহত্যা শিরক বা কুফর পর্ায়ে না গেলে আমার আশা করতে দয়াময় আল্লাহ তাকে একদিন মাফ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াঃ
হা তাদের জন্য দোয়া করা যেতে পারে। একটি হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ এমন ব্যাক্তির জন্য দোয়া করেছেন। হযরত তুফাইল ইবরে আমর দাউসি রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে:
: فلما هاجر النبي صلى الله عليه وسلم إلى المدينة هاجر إليه الطفيل بن عمرو وهاجر معه رجل من قومه فاجتووا المدينة فمرض فجزع فأخذ مشاقص له فقطع بها براجمه فشخبت يداه حتى مات، فرآه الطفيل بن عمرو في منامه فرآه وهيئته حسنة، ورآه مغطيا يديه! فقال له: ما صنع بك ربك؟ فقال: غفر لي بهجرتي إلى نبيه صلى الله عليه وسلم. فقال: ما لي أراك مغطيا يديك؟ قال: قيل لي: لن نصلح منك ما أفسدت. فقصها الطفيل على رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اللهم وليديه فاغفر...
অর্থঃ যখন নবী সাঃ মদীনায় হিজরত করলেন তুফাইল ইবরে আমর রাঃ রাসূল সাঃ এর কাছে হিজরত করলেন এবং তার গোত্রের একটি লোক তার সাথে হিজরত করল। যখন তারা মদীনায় পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হল তখন সে কয়েকটি তির নিয়ে তা দ্বারা আঙ্গুলের গিরা কেটে ফেলল এবং দুইহাতা দিয়ে বিরামহীনভাবে রক্ত ঝরতে লাগল এবং অবশেষে সে মৃত্যুবরণ করল। হযরত তুফাইল রাঃ স্বপ্নে তাকে ভাল অবস্থায় দেখতে পেলেন। তবে তার দুই হাত ঢাকা ছিলো। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার প্রতিপালক তোমার সাথে কেমন আচরণ করেছেন। উত্তরে তিনি বললেন রাসূল সাঃ এর কাছে হিজরত করার কারণে আমাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। তখন তুফাইল রাঃ তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল তোমার হাত ঢাকা দেখছি কেন? তিনি বললেন, আমাকে বলা হল, তোমার যে অংশ তুমি নষ্ট করেছে তা আমি ঠিক করে দিবনা। রাসূল সাঃ এর কাছে এঘটনা শোনানের পর রাসূল সাঃ আল্লাহর কাছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে বললেন, হে আল্লাহ তুমি তার দুই হাতকে মাফ করে দাও। মুসলিম, আস সহীহ খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৭৬ হাদীস নং ৩২৬। মোটকথা, আত্যহত্যা অত্যন্ত মারত্নক একটি কবীরাহ গুনাহ। এব্যাপারে রাসূল সা. এর পক্ষথেকে চিরদিন জাহান্নামে থাকার মত কঠোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি কাজটি কুফুরী হিসাবে গণ্য হওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যদি আল্লাহ দয়া করে তাকে অন্য কোন ভাল কাজের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করেন তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। তবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা একেবারেই কম। কিন্তু কেউ যদি একাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে তার জন্য দোয়া করাতে কোন দোষ নেই। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে মাফ করলেও করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম মৃত্যু দান করুন। আমীন।

কপিরাইট স্বত্ব © ২০২৫ আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট - সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত| Design & Developed By Biz IT BD