প্রশ্নঃ 1
বাংলাদেশে আমরা আরাফার দিনের সিয়াম কত তারিখে রাখব? সাউদিতে যেদিন হাজী সাহেব্ রা আরাফাতে অবস্থান করেন সেই দিন না বাংলাদেসের ৯ জিলহাজ্জ। কেননা চাদের হিসাবে সৌদি তে যেদিন আরাফা সেদিন বাংলাদেশ এ ৮ তারিখ হয় (সাধারনত)। আবার বাংলাদেশে ৯ জিলহাজ্জ তারিখে তো হাজী সাহেব্ রা আরাফাতে থাকেন না। এমাতবস্থায় আমরা বাংলাদেসের হিসাবে না সাউদির হিসাবে সিয়াম রাখব?
23 Dec 2025
অধিকাংশ আলেমের নিকট স্থানীয় তারিখ অনুযায়ী ৯ জিলহজ্জ রোজা রাখবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, হাজীরা যেদিন আরাফায় থাকবে সেদিন রোজা রাখবে।
প্রশ্নঃ 2
আস-সালামু আলাইকুম, স্যার হস্তমৈথুন করার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়, এই রোজার জন্য কাজা বা এর অন্যান্য বিধান কি?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
প্রথমত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত কুরআন অধ্যয়ন করেন নি। কুরআনে হুরের বিষয়টির সাথে যৌনতা, দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদির সামান্যতম আবেশ নেই। বারংবার বলা হয়েছে যে, তাদেরকে জোড়া বানিয়ে দেওয়া হবে হুরের সাথে। আরবী ও অন্যান্য লিঙ্গ সচেতন ভাষায় সাধারণ বিধিবিধানে পুংলিঙ্গ ব্যবহার করেই বিধিবিধান প্রদান করা হয়। এরপরও হুর শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর মানবীয় প্রকৃতির সাথে একটি সুসমঞ্জস। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আত্মা ও মনের শান্তির জন্য জোড়া চায়। জান্নাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে জোড়া প্রদান করবেন; যেন তারা মানবীয় প্রকৃতির প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির পূর্ণতা লাভ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থও অধ্যয়ন করেন নি। বাইবেল, বেদ, রামায়ন, মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি পর্নোগ্রাফিকেও হার মানায়। পিতা-কন্যার ব্যভিচার, ভাই-বোনের ভ্যবিচার, শ্বশুর-পুত্রবধুর ব্যভিচার, পিতার স্ত্রীদের প্রকাশ্যে ধর্ষণ, উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি, মাতলামি ইত্যাদির বর্ণনায় পবিত্র বাইবেল পরিপূর্ণ। সাধারণ বিষয়ের বর্ণনাতেও অশ্লীল উপমা ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআনে স্বাভাবিক যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বর্ণনাও সকল অশ্লীতার ছোয়া থেকে মুক্ত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ইহূদী, খৃস্টান, হিন্দু বা অন্য ধর্মের কোনো কোনো অনুসারী নিজেদের ধর্মগ্রন্থের অপবিত্রতম পর্নোগ্রাফীর চেয়েও অশ্লীল গল্পগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভির্যের সাথে সাংঘর্ষিক মনে না করলেও কুরআনের মধ্যে বিদ্যমান অশ্লীলতা বা দৈহিকতার সামান্যতম ছোয়ামুক্ত হুর বিষয়ক বক্তব্যগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভীর্যের সাথে অসামাঞ্জস্য বলে দাবি করেন।
প্রশ্নঃ 3
আস-সালামু আলাইকুম, স্যার হস্তমৈথুন করার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়, এই রোজার জন্য কাজা বা এর অন্যান্য বিধান কি?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহতমাতুল্লাহ। প্রথমত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত কুরআন অধ্যয়ন করেন নি। কুরআনে হুরের বিষয়টির সাথে যৌনতা, দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদির সামান্যতম আবেশ নেই। বারংবার বলা হয়েছে যে, তাদেরকে জোড়া বানিয়ে দেওয়া হবে হুরের সাথে। আরবী ও অন্যান্য লিঙ্গ সচেতন ভাষায় সাধারণ বিধিবিধানে পুংলিঙ্গ ব্যবহার করেই বিধিবিধান প্রদান করা হয়। এরপরও হুর শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর মানবীয় প্রকৃতির সাথে একটি সুসমঞ্জস। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আত্মা ও মনের শান্তির জন্য জোড়া চায়। জান্নাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে জোড়া প্রদান করবেন; যেন তারা মানবীয় প্রকৃতির প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির পূর্ণতা লাভ করতে পারে। দ্বিতীয়ত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থও অধ্যয়ন করেন নি। বাইবেল, বেদ, রামায়ন, মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি পর্নোগ্রাফিকেও হার মানায়। পিতা-কন্যার ব্যভিচার, ভাই-বোনের ভ্যবিচার, শ্বশুর-পুত্রবধুর ব্যভিচার, পিতার স্ত্রীদের প্রকাশ্যে ধর্ষণ, উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি, মাতলামি ইত্যাদির বর্ণনায় পবিত্র বাইবেল পরিপূর্ণ। সাধারণ বিষয়ের বর্ণনাতেও অশ্লীল উপমা ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআনে স্বাভাবিক যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বর্ণনাও সকল অশ্লীতার ছোয়া থেকে মুক্ত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ইহূদী, খৃস্টান, হিন্দু বা অন্য ধর্মের কোনো কোনো অনুসারী নিজেদের ধর্মগ্রন্থের অপবিত্রতম পর্নোগ্রাফীর চেয়েও অশ্লীল গল্পগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভির্যের সাথে সাংঘর্ষিক মনে না করলেও কুরআনের মধ্যে বিদ্যমান অশ্লীলতা বা দৈহিকতার সামান্যতম ছোয়ামুক্ত হুর বিষয়ক বক্তব্যগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভীর্যের সাথে অসামাঞ্জস্য বলে দাবি করেন।
প্রশ্নঃ 4
শাওয়াল মাসের রোজা তিনটি রাখলে হবে না ছয়টি রাখতে হবে জানালে ভালো হয়
22 Dec 2025
আবূ আইয়্যুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
যে রামাদান মাসের রোজা রাখে এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে তাহলে এটা তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার মত। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৫। হাদীসে বর্ণিত উক্ত ফজিলতের জন্য আপনাকে ছয়টি রোজাই রাখতে হবে। তিনটি রাখলে চলবে না। তবে তিনটি রাখলে সাধারণ নফল রোজার সওয়াব হবে।
প্রশ্নঃ 5
একজন মানুষ বিদেশে কায়িক প্ররিশ্রম করে । তাই সে দেশে একজন রোজাদারের সেহরী ও ইফতার দিয়ে মনে করছে তার রোজার হক হয়ে যাচ্ছে । এটা কি তার রোজার কাফফারা?
20 Dec 2025
প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। না, এর দ্বারা তার রোজার কাফফারা হচ্ছে না। এটা তার ভুল ও বিপজ্জনক চিন্তা। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ অর্থ: রামাদান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে......তোমাদের মধ্যে যে রামাদান মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫। সুতরাং প্রত্যেক সুস্থ মুসলিমের উপর রামাদানের রোজা রাখা ফরজ । অসুস্থতার জন্য রোজা রাখতে না পারলে সুস্থ হওয়ার পর তা আদায় করতে হবে। আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেই কেবল ফিদিয়া দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, ফিদিয়া সেহরী ইফতার দিয়ে নয় বরং একজন মিসকিনকে দুবেলা খাবার বা খাবারের টাকা দিয়ে আদায় করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে তাহলে তার জন্য অন্য দিনগুলো, (অর্থাৎ সে পরে সুস্থ হলে কিংবা সফর থেকে ফিরে আসলে যে রোজাগুলো রাখতে পারে নাই সেগুলো রাখবে)। আর যারা রোজা রাখতে গিয়ে কষ্টের শিকার হবে তাদের উপর আবশ্যক হল ফিদিয়া একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো। সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৪। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, কষ্টের শিকার ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রচন্ড বৃদ্ধ মানুষ ( যারা রোজা রাখতে পারে না)। তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৪। আধুনিক ফিকহী কিতাব আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু এর লেখক ড. ওহুবাহ আয যুহায়লি বলেন, وتجب الفدية أيضاً بالاتفاق على المريض الذي لا يرجى برؤه، لعدم وجوب الصوم عليه،
অর্থ: সর্বাক্যমতে ফিদিয়া ওয়াজিব হবে এমন অসুস্থ ব্যক্তির উপর যার সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে আশা করা যায় না। কেননা তার উপর তখন রোজা ওয়াজিব থাকে না। আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু, ২/৬০৫। আরো দেখুন: আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবা ১/৪৪৫। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, প্রশ্নেল্লোখিত ব্যক্তির জন্য এভাবে রোজা না রেখে কাউকে সেহরী ইফতার করানো শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নেই। সুস্থ ব্যক্তিকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। সুস্থ হওয়ার আশা নেই এমন অসুস্থ ব্যক্তিই কেবল ফিদিয়া দিতে পারবে তথা তার উপর ফিদিয়া দেয়া ওয়াজিব। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 6
কীভাবে রোজার নিয়ত করবো
20 Dec 2025
প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। নিয়্যাত হলো হৃদয়ের সংকল্প। ইবনে হাজার রহ. ফতাহুল বারীতে বলেছেন, নিয়্যাতের জায়গা হল অন্তর। অন্যান্য আলেমদের বক্তব্যসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন ফাতহুল বারী, হাদীস নং ১। যে দিন রোজা রাখবেন তার আগের রাত্রে মনে মনে সংকল্প করবেন যে, আমি আজ রোজা রাখব। হাদীস শরীফে আছে, উম্মুল মূমিনীন হাফসা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,
قال من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له
অর্থ: যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রোজার নিয়্যাত না করবে তার রোজা হবে না। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৭৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৭০০। হাদীসটি সহীহ। আলবানী রহ. সহীহ বলেছেন। তবে ফকীহদের কেউ কেউ বলেছেন, সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্বে নিয়্যাত করলেও জায়েজ হবে। অবশ্য নফল রোজার নিয়্যাত সর্বাক্যমতে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত করা যায়। দেখুন জামে তিরমিযী ৭৩০ নং হাদীসের আলোচনা।
প্রশ্নঃ 7
ফেতরার বন্টন ঈদের সালাতের আগে না পরে?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে নিচে সামান্য আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন, উলামায়ে কেরামের নিকট মুস্তাহাব হল, ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়ে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বপর্যন্ত সময়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে। কেননা রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে তা আদায় করতেন। পাশাপাশি দরিদ্রশ্রেণীর মানুষেরা মানুষের দ্বারে দ্বারে বেড়ানো থেকে মুক্ত হয়ে নামাজে শরীক হতে পারে। ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِإِخْرَاجِ زَكَاةِ الْفِطْرِ أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ.
(অর্থঃ)রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম, আস-সহীহ, কিতাব,আয-যাকাত, বাব, আল আমর বিইখরাজি যাকাতিল ফিতর ক্ববলাস সালাত, হাদীস নং ২৩৩৬। তবে যদি কেউ এক-দুইদিন পূর্বে তা দিয়ে দেয় তা যায়েয আছে এবং তার ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। আল-মুগনি, বাব, সাদাকাতুল ফিতর,মাসআলাতু তাকদীমুল ফিতর ক্ববলাল ঈদ বিইয়াওমাইনি খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৯৪। বুখারীতে এসেছে
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : فَرَضَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صَدَقَةَ الْفِطْرِ .....وَكَانُوا يُعْطُونَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ ، أَوْ يَوْمَيْنِ.
(অর্থঃ) ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ সাদাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন। ...আর সাহাবায়ে কেরাম ফিতরের পূর্বে(রমজানের রোজা একটি বা দুইটা বাকী থাকতে) তা আদায় করতেন। বুখারী, হাদীস নং ১৫১১। সহীহ ইবনে হিব্বানে এসেছে:
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر بإخراج زكاة الفطر أن تؤدى قبل خروج الناس، وأن عبد الله كان يؤديها قبل ذلك بيوم أو يومين
(অর্থঃ) রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আর আব্দুল্লাহ (ইবনে উমার) রাঃ ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা আদায় করতেন। সহীহ ইবনে হিব্বান, তাহকীক, শুয়াইব আরনাউত, খন্ড-৮,পৃষ্ঠা-৯৩। শায়েখ শুয়াইব আরনাউত বলেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, সহীহ মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী। আর নামাজের পরে দেয়ার বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মতামত দেখলে বুঝা যায় যে, তাদের মতে এবিষয়টি মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। ইবনে হাযাম রহঃ হারাম বলেছেন। ফাতহুল ক্বাদীরের লেখক আল্লামা ইবনে হুমাম রহঃ বলেন: যদি ঈদুল ফিতরের দিন ফিতরা কেউ না তাহলে তা তাদের থেকে রহিত হবে না, বরং পরবর্তিতে তা আদায় করা আবশ্যক। ফাতহুল ক্বাদীর খন্ড ৪ পৃষ্ঠা ২৬২। (শামিলা)। তাছাড়া পরবর্তিতে আদায় করলে ঈদের নামাজের পূর্বে দেয়ার যে ফযিলত ছিল তা পাওয়া যাবে না বরং তা সাধারন সদকা হিসাবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে:
مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِىَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِىَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ.
(অর্থঃ) নামাজের পূর্বে যেটা আদায় করা হল সেটা মাকবুল যাকাত আর যেটা নামাজের পরে আদায় করা হল দান। সুনানে আবু দাউদ,বাব, যাকাতুল ফিতর, খন্ড ২,পৃষ্ঠা ২৫,তাহকীক, শায়েখ আলবানী। উক্ত হাদীসের ব্যাক্ষায় ড. ঝুহাইলী বলেন: সাদকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল অন্যান্য সময়ের ন্যায় সাধারন দান। আল ফিকহুল ইসলামীয়্যু ওয়া আদিল্লাতুহু,খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬২, মাকতাবাতু থানবী, দেওবন্দ। ফাতহুল ক্বাদীরের লেখক আল্লামা ইবনে হুমাম রহঃ বলেন: যদি ঈদুল ফিতরের দিন ফিতরা কেউ না তাহলে তা তাদের থেকে রহিত হবে না, বরং পরবর্তিতে তা আদায় করা আবশ্যক। ফাতহুল ক্বাদীর খন্ড ৪পৃষ্ঠা ২৬২। (শামিলা)। মোটকথা, ঈদের দিন ফযরের পর থেকে ঈদের নামাজের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। তবে যদি কেউ এক-দুইদিন আগে তা দিয়ে দেয় তবে তা আদায় হয়ে যাবে। ঈদের নামাজের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা সকল ইমামদের মতে মাকরুহ। তবে তা যততাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দিতে হবে এবং সেটা সাধারন দান হিসাবে গণ্য হবে। অতএব আমাদের উচিৎ ঈদের নামাজের পর্বেই তা আদায় করার মাধ্যমে রাসূল সা. এর সুন্নাতের অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় রাসূল সা. এর সুন্নাতের এত্তেবা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 8
আসসালামু আলাইকুম, আমার বাবা গত বছর (২০১৪ ইং) রমজানের রোজার ৩/৪ টি রাখার পর অসুস্থ হয়ে পরে। যার কারণে আর রোযা রাখা সম্ভব হয়নি। এখনো পুরাপুরি সুস্থ হয়নি। তবে আল্লাহ চাহেতো এবার রমযানের রোযা রাখার নিয়াত করেছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো এ অবস্থায় পূর্বের রোযার হুকুম কি হবে? তিনি পূর্বের রোযা রাখার ব্যাপারে অনেকটা (অসুস্থতার কারনে) অপারগতা প্রকাশ করছেন। পূর্বের রোযা কি ফিদিয়া কিংবা মিসকিনকে খাওয়ানোর দ্বারা আদায় হবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। অসুস্থতার জন্য রোজা রাখতে না পারলে সুস্থ হওয়ার পর তা আদায় করতে হবে। আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে ফিদিয়া দিতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে তাহলে তার জন্য অন্য দিনগুলো, (অর্থাৎ সে পরে সুস্থ হলে কিংবা সফর থেকে ফিরে আসলে যে রোজাগুলো রাখতে পারেনি সেগুলো রাখবে)। আর যারা রোজা রাখতে গিয়ে কষ্টের শিকার হবে তাদের উপর আবশ্যক হল ফিদিয়া একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো। সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৪। এই আয়াতের ভিত্তিতে আলেগণের সর্বাক্যমতে যদি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার জন্য ফিদিয়া দেয়া যাবে না। আর যদি সুস্থ হওয়ার আশা না থাকে তাহলে ফিদিয়া দিতে হবে। আধুনিক ফিকহী কিতাব আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু এর লেখক ড. ওহুবাহ আঝ-ঝুহায়লি বলেন, وتجب الفدية أيضاً بالاتفاق على المريض الذي لا يرجى برؤه، لعدم وجوب الصوم عليه، অর্থ: সর্বাক্যমতে ফিদিয়া ওয়াজিব হবে এমন অসুস্থ ব্যক্তির উপর যার সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে আশা করা যায় না। কেননা তার উপর তখন রোজা ওয়াজিব থাকে না। আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু, ২/৬০৫। আরো দেখুন: আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবা, ১/৪৪৫। উপরুক্ত দলীল সমূহে ভিত্তিতে যা বোঝা যায় তা হল, আপনার পিতা যেহেতু আগামী রমযানে রোযা রাখার ইচ্ছা করছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে তিনি এমন অসুস্থ নন যে, তার সুস্থ হওয়া অসম্ভব, তাই আপনার পিতাকে অপেক্ষা করতে হবে। যদি তিনি সুস্থ হয়ে যান তাহলে রোজা কাযা করবেন আর যদি পরবর্তিতে এমন হয় যে তার সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে কোন আশা করা যাচ্ছে না তখন ফিদিয়া দিতে হবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 9
নাকের পানি টানলে যদি তা গলা দিয়ে চলে যায় তাহলে রোজা ভাঙ্গবে কি না?
20 Dec 2025
হা, রোজা অবস্থায় যদি নাকের পানি টানা হয় এবং তা গলা দিয়ে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
প্রশ্নঃ 10
সাহরী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কেউ যদি অপবিত্র হয়ে যায় তাহলে তার রোযা হবে কি না।
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। আশা করি তাতে আপনি আপনার উত্তর পাবেন। ইনশাল্লাহ।
রোজা সহীহ হওয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। সুতরাং কেউ যদি স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে বা স্বপ্নদোষের মাধ্যমে জুনুবী বা বড় ধরনের অপবিত্র হয়ে যায় এবং এ অবস্থাতে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায় (যেমন কেউ ফজরের পূর্বে বা রাতে স্ত্রী সহবাস করে ঘুমিয়ে গেল এবং ফজরের আযানের পর ঘুম থেকে জাগ্রত হল বা সাহরী খেয়ে ঘুমিয়ে গেল এবং স্বপ্নদোষ হল। এরপর সে ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠল) তাহলে তার রোজার কোন ক্ষতি হবে না। এ মর্মে আয়েশা রাঃ এবং উম্মে সালামা রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে তারা বলেন:
كَانَ يُدْرِكُهُ الْفَجْرُ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ أَهْلِهِ ثُمَّ يَغْتَسِلُ وَيَصُوم
(অর্থ) রাসূল সা. স্ত্রী সহবাসের কারনে জুনুবী, এঅবস্থাতে ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যেত। এরপর তিনি গোছল করতেন এবং রোজা রাখতেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৯২৬। ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন: অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের আমল এ হাদীস অনুযায়ী ছিলো। তিরমিযী, আস সুনান,কিতাব, আস সাওম,বাব, আল জুনুবু ইদরিকুহুল ফাজরু। তবে এ অবস্থায় থেকে ফজরের নামাজ কাজা করা বা জামাত তরক করা একেবারেই অনুচিত । বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোছল সেরে পবিত্র হয়ে জামাতে শরীক হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।