প্রশ্নঃ 1
আজ থেকে তিন বছর পূর্বে ইসমোতারা রানার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে বসে, কয়েক মাস পর পারিবারিকভাবে ও আনুষ্ঠানিকভাবে আবার ইসমোতারাকে নিয়ে যায়। কিছু দিন পর ইসমোতারার মা ও রানার মায়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর রানার মা ইসমোতারাকে তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়। রানাও কোন খোজ খবর নেয় না। ইসমোতারা নিজের ভরণ পোষন দাবি করে কোর্টে রানার বিরুদ্ধে কেস করে। বর্তমানে কেস চলছে,২ বছরেও কোন রায় হয় নি। এমতাবস্থায় অন্যত্র রিকাত নামের একটি ছেলের সাথে ইসমোতারা বিয়ে বসতে চাচ্ছে। যেহেতু রানার সাথে দীর্ঘ দিন যোগাযোগ নাই, তাই (৪/৫ মাস) Back Date এ রানাকে Divorce দিয়ে (চলতি তারিখে) রিকাতের সাথে বিয়ে রেজিস্ট্রী করে রাখলে (অবশ্য ৪/৫ মাস পরে কবুল পড়ানো হবে) ইসলামী শরীয়াতে বিবাহ হবে কি না?
24 Dec 2025
বিয়ের ক্ষেত্রে ইজাব-কবুল মূল শর্ত। আর তালাকপ্রাপ্তা নারীর ক্ষেত্রে এই ইজাব কবুলটি হতে হবে পূর্বের স্বামী কর্তৃক তালাক দেয়ার তিন মাসিক পর। ব্যাক ডেটে তালাক গ্রহনযোগ্য নয়। রেজিস্ট্রি ইসলামের দৃষ্টিতে জরুরি নয়, তবে নিরাপত্তার জন্য একটি ভাল বিষয়। সুতরাং ইসমোতারার জন্য এখন করণীয় হলো শরীয়ত মোতাবেক তালাক গ্রহন করা এবং তিন মাসিক পর ইজাব কবুলের মাধ্যমে অন্য কারো সাথে বিয়েতে বসা। ব্যাক ডেটে কিছু করাই মিথ্যা। আর ব্যাক ডেটে তালাক বা বিবাহ অবৈধ।
প্রশ্নঃ 2
আসসালামু আলাইকুম আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, যে সকল মেয়েদের সময় মত বিয়ে হচ্ছে না তাদের জন্য সুন্নত সম্মত কি কি ইবাদাত রয়েছে? যা থেকে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে ।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সকল ফরজ নামাযের পর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে, কারণ এই সময় দোয়া কবুল হয় বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। সকাল বিকাল যে সব মাসসনুন দোয়া আছে সেগুলো পাঠ করা যায়। । রাহে বেলায়াত গ্রন্থেও ১৮৮ ও ১৯২ নং দোয়া পড়বেন। সহীহ মাসনুন ওযীফা গ্রন্থে সকাল বিকালের মাসনুন দোয়াগুলো সহজে পাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সকল বিপদাপদ থেকে নিরাপদে রাখুন।
প্রশ্নঃ 3
আস্সালামু আলাইকুম। স্যার, ১। আমাদের সমাজে হিল্লা বিয়ের প্রচলন দেখা যায়,কোরআন ও হাদীসের আলোকে এর কোন বৈধতা আছে কী? ২। জ্বীন সমন্ধে কোরআনে সূরা আছে, আবার এ দেশের অনেক বড় বড় ওলামায়ে কেরাম গণ জ্বীন পালেন,জ্বীনের সাথে কথা বলেন কাউকে আবার জ্বীনে ধরেন- কোরআন হাদীসের আলোকে এটা কতটুকু যুক্তি সম্মত?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ১। না, হিল্লা বিয়ে নামে আমাদের সমাজে যা প্রচলিত আছে তা হারাম। ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ সা. একে কঠিন ভাবে নিষেধ করেছেন। ২। জ্বীন আল্লাহ তায়ালার একটি সৃষ্টজীব। কুরআন হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট। আর তারা বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে মানুষের ক্ষতি করে থাকে এটাও সত্য। বিস্তারিত জানতে দেখুন, রাহে বেলায়াত বইটির ২০১৩ ইং সংস্করনের শেষ অধ্যায়। আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন। হিলা বিবাহ সম্পর্কে শরীয়তের হুকুম কি?“””””
প্রশ্নঃ 4
is it valid if a girl marry without ffathers will if not what should she do. Is it fard toinvolved a islamicorganization. they said it is command of Allah to live jamaa.I want to know what is jamaa means.
23 Dec 2025
পিতার অনুমতি ছাড়া বিবাহ হবে কিনা, এভাবে করলে কি করতে হবে এই বিষয়ে জানার জন্য এই আমাদের দেয়া ৪১ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন। আর জামায়াতের অর্থ হলো, রাসূলুল্লাহ সা. মুক্তিপ্রাপ্ত বা সুপথপ্রাপ্ত দলের পরিচিতি হিসেবে বলেছেন: তারা জামাআত। জামাআত শব্দটি আরবী জাম (الجمع) থেকে গৃহীহ, যার অর্থ একত্রিত করা, জমায়েত করা, ঐক্যবদ্ধ করা (ঞড় মধঃযবৎ, পড়ষষবপঃ, ঁহরঃব, নৎরহম ঃড়মবঃযবৎ, লড়রহ) ইত্যাদি। জামাআত (جماعة) অর্থ জনগণ, জনগোষ্ঠি, বা সমাজ (পড়সসঁহরঃু, ংড়পরবঃু). কুরআন ও হাদীসে জামাআত এবং ইজতিমা-কে ফিরকা ও ইফতিরাক-এর বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছে। ফিরকা অর্থ দল, গ্রপ ইত্যাদি। এ অর্থে আরবীতে হিযব, কাউম, জামইয়্যাহ (حزب، قوم، جمعية) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। আর জামাআত অর্থ দলবিহীন সম্মিলিত জনগোষ্ঠী বা সমাজ। যে কোনো স্থানে অবস্থানরত সকল মানুষকে জামাআত বলা হয়। জামাআতের মধ্য থেকে কিছু মানুষ পৃথক হলে তাকে ফিরকা বা দল বলা হয়। মনে করুন একটি মসজিদের মধ্যে ১০০ জন মুসল্লী বসে আছেন। এরা মসজিদের জামাআত। এদের মধ্যে কম বা বেশি সংখ্যক মুসল্লী যদি পৃথকভাবে একত্রিত হয়ে মসজিদের এক দিকে বসেন তবে তারা একটি ফিরকা, কাওম বা হিযব, অর্থৎ দল, গ্রপ বা সম্প্রদায় বলে গণ্য, কিন্তু তারা জামাআত বলে গণ্য নয়। যেমন, উপর্যুক্ত ১০০ জনের মধ্য থেকে ৫ জন এক কোনে পৃথক হয়ে বসলেন, আর দশ জন অন্য কোণে পৃথক হয়ে বসলেন এবং অন্য কোণে আরো কয়েকজন একত্রিত হলেন। এখন আমরা ইফতিরাক ও জামাআতের রূপ চিন্তা করি। মূলত মসজিদের জামাআত ভেঙ্গে ইফতিরাক এসেছে। তিনটি ফিরকা মূল জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আর বাকি যারা কোনো দল বা ফিরকা গঠন না করে দলবিহীনভাবে রয়ে গিয়েছেন তারা নিজেদেরকে জামাআত বলতে পারেন। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অবস্থা এরূপই। এটি মূলত কোনো দল বা ফিরকা নয়। সাহাবী-তাবিয়ীগণের অনুসরণে যারা মূল ধারার উপর অবস্থান করছেন এবং কোনো দল বা ফিরকা তৈরি করেন নি তারাই আল-জামাআত। বিস্তারিত জানতে দেখুন কুরআন সুন্নাহের আলোকে ইসলামী আকীদা পৃষ্ঠা ৫৭৬-৫৮২।
প্রশ্নঃ 5
আসসালামু আলাইকুম। ভাই, আমার প্রশ্ন ২ টি প্রাথমঃ আমি কি আমার খালত বোনের মেয়ে কে বিয়ে করতে পারবো? দ্বিতীয়ঃ ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের পাশাপাশি সন্তানের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যদি কোন পুরুষ এবং মহিলা সব দিয়েই বিয়ের উপযুক্ত হয়। আর সেই পুরুষ যদি কোন পছন্দের মেয়ের পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর সেটা যদি প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন কি করণীয় যখন বাবা মা মেয়েকে জোরপূর্বক অন্যথায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধ এ বিয়ে দিয়ে দিতে চায়?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ, খালাতো বোনের মেয়েকে বিবাহ করা যাব। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে কিছু করার নেই। বিবাহের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার উচিৎ ছেলে-মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া আর ছেলে-মেয়েদেরকেও মনে রাখতে হবে তারা যেন ছোট-খাটো কারণে পিতা-মাতার অবাধ্য না হন। অনেক সময় বয়স কম হওয়া কিংবা অনভিজ্ঞতা ইত্যদির কারণে ছেলে-মেয়েরা হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যা তার ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। আর পিতা-মাতা সর্বদা সন্তানের কল্যান চান, তাদের অভিজ্ঞতাও বেশী থাকে ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তারা সঠিক ও কল্যানকর সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকেন। তাই পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়াই শ্রেয়।
প্রশ্নঃ 6
আসসালামু আলাইকুম ১-আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়াতাআলা বিয়ের জন্য কোন বয়স নির্ধারন করে দেন নি। কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধান এ ২১ বছর(ছেলে) ও ১৮(মেয়ে) নির্ধারন করেছে। অনুর্ধ ২১ এবং ১৮ যারা তারা যদি বিয়ে করে তবে বাল্যবিবাহ আইনে এটি দন্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য জেল ও খাটতে হয়। এখন কেউ যদি জন্ম নিবন্ধন এ বয়স পরিবর্তন করে এ আইন থেকে মুক্তি পেতে চায় তবে কি সেটা কি তার জন্য বৈধ হবে কিনা?সে কি আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু ওয়া তাআলা এর কাছে প্রতারণা কারী হিসেবে গন্য হবে?দলিলসহ জানাবেন। ২-ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২০ বছর হওয়া প্রয়োজন। কোন ১৭-১৮ বছরের ছেলে যদি জরুরী জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে তার বয়স বাড়িয়ে দিয়ে জন্ম সনদ বানিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে নেয় তবে এক্ষেত্রে হুকুম কি? ৩-অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের বয়স কমিয়ে দেয় যাতে পরবর্তিতে চাকরি পেতে অসুবিধা না হয়। এটা কি বৈধ?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বিবাহের জন্য বয়স কমানো বা চাকুরির জন্য বয়স কমানোই একইরূপ বিষয়। মিথ্যা সর্বদাই নিষিদ্ধ। মিথ্যা মূলত বড় গুনাহের কাজ। আমরা কোনোভাবেই মিথ্যাকে বৈধ বলতে পারি না। বান্দার নিজের ওজর নিজে বুঝবেন। মিথ্যা বলার মত কোনো ওজর তার আছে কিনা তিনি তাঁর মাবুদের সাথে তা বুঝবেন। ইসলামী শরীয়তে ১৮ বছরের পূর্বে বিবাহ করা বৈধ, তবে জরুরী নয়। সাধারণভাবে ১৮ বছর বয়সে বিবাহ করলে সমস্যা হয় না। এজন্য মিথ্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য চেষ্টা করা দরকার। চাকরীর জন্য মূলত যোগ্যতা সৃষ্টি, আল্লাহর কাছে দুআ ও চেষ্টা করাই মূল। সরকারী, বেসরকারী কোনো সম্মানজনক কাজ হলেই হলো। মিথ্যা ভাবে বয়স কমিয়ে মিথ্যার পাপ ছাড়া তেমন লাভ হয় বলে মনে হয় না। প্রথম থেকেই পিতামাতা মিথ্যা দিয়ে সন্তানের জীবন শুরু করলেন। প্রথমেই তারা বিশ্বাস করে নিলেন যে, সত্য বললে আমার সন্তানের ভাত হবে না! ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ রাষ্ট্রের অধিকারের অংশ। এটিকে শরীয়তের পরিভাষায় মাসালিহ মুরসালাহ বলা হয়। দেশের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রয়োজনে শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন নীতিমালা বা বিধিবিধান রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে। এ সকল বিধান মান্য করা মুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় দায়িত্ব। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স পরিবর্তন কয়েকটি অন্যায়ের জন্ম দেয়: মিথ্যা, রাষ্ট্রীয় বিধান অমান্য এবং কম বয়সে গাড়ি চালাতে যেয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি।
প্রশ্নঃ 7
মুহতারাম,আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো- আমার এক ছোট ভাই তার মামাতো বোনকে পালিয়ে বিয়ে করেছে এক বছর হলো কিন্তু এখনো মেয়ের বাবা মেনে নেয়নি কিন্তু হাদিস অনুযায়ী এই বিয়ে বাতিল তাহলে তাদের সামনে এখন কী করণীয়? আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মেয়ের পিতা-মাতার সাথে যোগাযোগ করি কিন্তু তারা মেনে নিবে না- উত্তর জানাবেন স্যার।
23 Dec 2025
আপনার প্রশ্নের জন্য শুকরান ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের বিধান। বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী শরীয়তে এব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল সা. এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহগণের নিকট ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ নেই। তবে ইমাম আবু হানীফা রহ. সহ কতিপয় ফকীহ বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন। প্রখ্যাত মালেকী ফকীহ আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে রুশদ আন্দালুসী র. বলেন, اختلف العلماء هل الولاية شرط من شروط صحة النكاح أم ليست بشرط؟ فذهب مالك إلى أنه لا يكون النكاح إلا بولي وأنها شرط في الصحة في رواية أشهب عنه وبه قال الشافعي وقال أبو حنيفة وزفر والشعبي والزهري: إذا عقدت المرأة نكاحها بغير ولي وكان كفؤا جاز وفرق داود بين البكر والثيب فقال باشتراط الولي في البكر وعدم اشتراطه في الثيب অর্থ: বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী শর্ত কি শর্ত নয় এই বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক র. মত পোষন করেছেন যে, ওলী ছাড়া বিবাহ হবে না। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য (ওলী) শর্ত। এমন মতই পোষন করেছেন ইমাম শাফেয়ী রা.। ইমাম আবু হানীফা, জুফার, শাবী ও জুহরী র. বলেছেন, যদি মহিলা ওলী ছাড়া বিবাহ করবে আর স্বামী যদি তার কুফু (সর্বদিক দিয়ে যোগ্য) হয় তাহলে জায়েজ হবে। বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৮(শামেলা)। এই সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন, আলমাবসুত লিস-সারখসী, ৬/৫৩; আলমাউসায়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৯৪ও ৩১/৩২১; আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা ৪/৪৫। কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেয়ী,৭/১৫৬। যে ইমামগন ওলী ছাড়া বিবাহ বাতিল বলেছেন তাদের দলীল: আবু মুসা আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, অর্থাৎ ওলী ছাড়া বিবাহ নয়। لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৮৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১১০১;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৯৭৬১। হাদীসটি সহীহ। শায়খ আরনাউত এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ অর্থাৎযে মহিলা ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল। তিনি ৩ বার তা বলেছেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১১০২; মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ২৫৩৬৫। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন আর শায়খ শুয়াইব আরনাউত সহীহ বলেছেন। উপরক্ত হাদীস সমূহের ভিত্তিতে ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ র. সহ অধিকাংশ আলেম ওলী ছাড়া বিবাহকে বাতিল বলেছেন। যে সব ইমাম ও ফকীহ ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ বলেছেন তাদের দলীল: তাবেঈদের মধ্যে ইমার জুহরী ও শাবী এরপরে ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ, জুফার সহ কিছু সংখক মুজতাহিদ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ওলী ছাড়া বিবাহ কে জায়েজ বলেছেন। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১.কুফু হতে হবে। ২.মেয়েটি বালেগা, বুঝমান হতে হবে। আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবায়া, ৪/৪৫; আলমাবসুত লিস-সারাখসী,৬/৬১ ও ৫/১৬। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فلا جناح عليكم فيما فعلن في أنفسهن بالمعروف অর্থাৎ মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে সৎ ভাবে যা করবে (বিয়ের ক্ষেত্রে) সে বিষয়ে তোমাদের কোন দোষ নেই। সূরা বাকারাহ-২৩৪ অন্য এক আয়াতে তালাক সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, تنكح زوجا غيره. حتى অথাৎ যতক্ষন না তারা অন্য স্বামীকে বিবাহ না করে। সূরা বাকারাহ-২৩০। অন্য প্রসংগে আল্লাহর বাণী, فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে তাদের স্বামীদের কে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না। সূরা বাকারাহ-২৩২ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, الأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا অর্থাৎ মেয়েরা ওলীদের চেয়ে নিজের ব্যাপারে অধিক হকদার। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৪২১। الأيم অর্থ স্বামীহীন মহিলা, পূর্বে স্বামী থাকুক বা না থাকুক। আলমজামুল ওয়াসীত। বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌদী আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন, المسألة اجتهادية ، واختلف فيها الأئمة ، فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا ، فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা, ইমামগণ এক্ষেত্রে ইখতিলাফ করেছেন। সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে, ওলী ছাড়া বিবাহবে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, পাকিস্থান ইত্যদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্মীকৃতি দেয়া হবে । বাতিল করতে বলা হবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, শরীয়তে বিবাহে মেয়েদের জন্য ওলী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয় এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতমতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং মেয়েদের জন্য আবশ্যক হলো ওলীর অনুমতি নিয়ে বিবাহ করা। আর আমাদের উচিৎ বিবাহের সময় মানুষদের কে ওলীর অনুমতির বিষয়ে উৎসাহিত করা,ওলী ছাড়া বিয়ে করতে নিষেধ করা এবং ওলী থাকার কল্যান বর্ণনা করা। যারা ইতিমধ্যে ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করেছে তাদের বিষয়ে কথা হলো যেহেতু তারা একটি ফিকহী মত গ্রহন করেছেন আর বিষয়টি ইজতিহাদী এবং ইখতিলাফী তাই তাদেরকে নতুন করে বিবাহ করতে হবে না। তবে এই ঘৃনিত কাজের জন্য তাদের লজ্জিত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 8
ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম হারাম। আমি যদি কোন কারনে খুব কষ্টে না পেরে প্রেমের সম্পর্কে থাকি তাহলে কি আমার নামাজ আমার রোজা আমার সবরকম ভাল আমল গুলা আল্লাহতালার কাছে গ্রহণীয় হবে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে। তাওবা করলে আল্লাহ তায়ালা সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। একটা গোনাহর কাজে লিপ্ত হলে অন্য নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে, বিষয়টি এরকম ন। গোনাহর কাজের জন্য গোনাহ হবে আবার সওয়াবের কাজের জন্য সওয়াব হবে। আপনি যে গোনাহর কথা বলেছেন তা খুবই জঘন্য পাপ। এর থেকে বের হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তার একটি পথ এটা হতে পারে যে, উভয় পরিবারের সম্মতিতে আপনারা শুধু বিয়েটা এখন করে নিন। এরপর যে যার অবস্থানে থেকে পড়াশোনা করতে থাকুন। যখন আপনার সচ্ছল হবেন কিংবা সংসার করার মত পরিবেশ হবে তখন সংসার শুরু করবেন। তবে একটা কথা বলে রাখি অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। আর কোন অযুহাতেই এই ধরনের সম্পর্ক ইসলামা সমর্থন করে না। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন। আমীন।
প্রশ্নঃ 9
আসসালামু আলাইকুম, স্যার, আমি আমার আগের প্রশ্নের সাথে কিছু যোগ করতে চাই। আমি যে মেয়েকে বিয়ে করতে চাই তাকে আমার মা গতকাল বলে এসেছে তুমি আমার ছেলের পথ থেকে সরে যাও। তোমাকে আমার ছেলে ছাড়া কেউ পছন্দ করছে না। আমি তার সাথে গত মাসের ২১ তারিখের আগে সর্বশেষ কথা বলেছিলাম। তাতে আমার কাছে তাকে ধার্মিকা ও শরীয়ত সমপরকে অবহিতা মনে হয়েছে। কখনই তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে হয়নি। তাকে যখন দেখি আমার মনে হয়নি তার ভ্রূ প্লাক। তাকে আমার কাছে অনেক সুন্দরী মনে হয়েছে ও লম্বাও আমার কাছাকাছি মনে হয়েছে। অথচ আমার মা আমাকে বলেছে তার ভ্রূ প্লাক করা, খাটো, পাগল, মেকআপ করা বলেছে। আমার জানামতে সে নেকাবসহ বোরখা পরে। আমার সাবেক স্ত্রীর সাথে বিয়ের আগের দিন তার ছবি দেখে বলেছিলাম সে ভ্রু প্লাক করে। কিন্তু তখন এটাকে গুরুত্ব দেয়নি। বলেছিল বিয়ের পর নিষেধ করলে ঠিক হয়ে যাবে। তার মেকআপ ছিল অথচ বিয়ের আগ পর্যন্ত আমার মা ভাবি কেউই বুঝতে পারেনি। আমি আমার মাকে প্রায় দেড়মাস আগে আমার পছন্দের মেয়েটিকে দেখতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আমার মা আমার অনুরোধ রাখেনি। তাদের পছন্দের মেয়েকে আমার উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সাথে সাথে আমার পছন্দের মেয়ের প্রতি আমার দু্রবলতা বেড়েছে। তাকে গতকাল চরমভাবে অপমান করার কারণে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তার স্কুলে গিয়ে তাকে এভাবে অপমান করাটা আমাকে ভীষণভাবে পীড়িত করছে। আমি তাকে মার্চ এর ৪ তারিখে দেখেছিলাম। আমি তার লেখাপড়া, চাকরি প্রভৃতি জানার পর আমার নিজের বরণনা দিয়ে বললাম আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়লেও আমি নিজেকে সাধ্যমত নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি ও আমি ক্লাস ফোর থেকে নামাজ পড়ি। সে বলল মানুষের ঈমানটাই আসল। আমি এটা শুনে খুব খুশি হলাম। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনারস মাষ্টারস করেছি অথচ আমার পিতামাতা আমার মতামতের মূল্য দেয়না। এখন আমি কি করব স্যার? তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছে ঐ মেয়েকে বিয়ে করলে তারা আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। আমি আমার পিতামাতাকে হারাতে চাই না আবার এই কষ্টও সহ্য করতে পারছি না।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার পিতামাতকে লোভী ও ধর্মবিমূখ মনে হচ্ছে। মেয়েটিকে হুমকি দেয়া তার জন্য বড় ধরনের অপরাধ। আপনি সবর করুন। নিচের দু্আগুলো পড়ুন। ইনশাআল্লাহ একটা সমাধান পাবেন। তবে তাদের কথামত ধর্মহীন কোন মেয়েকে অবশ্যই বিয়ে করবেন ন। আপনার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করার অধিকার আপনার আছে। আপনি রাহে বেলায়েত গ্রন্থের ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ১৫৭, ১৮৮, ১৯২ নং দুআগুলো নফল সালাতের সাজদাতে এবং অন্যান্য সময় বেশী বেশী পাঠ করুন। এছাড়া কুরআনের এই দআটিও সালাতে এবং অন্যান্য সময় বারবার পড়বেন, رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ আমরা আপনার জন্য দুআ করি আল্লাহ যেন আপনার সব সংকট দূর করে দেন।
প্রশ্নঃ 10
পিতা মাতার অনুমতি ছাড়া বিয়ের ব্যাপারে দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন। হবে কি হবে না। বিশেষ করে বর্তমানে যে সকল বিয়ে অলি ছাড়া হয়। যদি না হয় তাহলে যারা না জেনে করেছেন তাদের ব্যাপারে রুলিংস কি? ধন্যবাদ।
20 Dec 2025
আপনার প্রশ্নের জন্য শুকরান
ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের বিধান। বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী শরীয়তে এব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল সা. এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহগণের নিকট ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ নেই। তবে ইমাম আবু হানীফা রহ. সহ কতিপয় ফকীহ বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন। প্রখ্যাত মালেকী ফকীহ আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে রুশদ আন্দালুসী র. বলেন,
اختلف العلماء هل الولاية شرط من شروط صحة النكاح أم ليست بشرط؟ فذهب مالك إلى أنه لا يكون النكاح إلا بولي وأنها شرط في الصحة في رواية أشهب عنه وبه قال الشافعي وقال أبو حنيفة وزفر والشعبي والزهري: إذا عقدت المرأة نكاحها بغير ولي وكان كفؤا جاز وفرق داود بين البكر والثيب فقال باشتراط الولي في البكر وعدم اشتراطه في الثيب
অর্থ: বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী শর্ত কি শর্ত নয় এই বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক র. মত পোষন করেছেন যে, ওলী ছাড়া বিবাহ হবে না। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য (ওলী) শর্ত। এমন মতই পোষন করেছেন ইমাম শাফেয়ী রা.। ইমাম আবু হানীফা, জুফার, শাবী ও জুহরী র. বলেছেন, যদি মহিলা ওলী ছাড়া বিবাহ করবে আর স্বামী যদি তার কুফু (সর্বদিক দিয়ে যোগ্য) হয় তাহলে জায়েজ হবে। বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৮(শামেলা)। এই সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন,
আলমাবসুত লিস-সারখসী, ৬/৫৩; আলমাউসায়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৯৪ও ৩১/৩২১; আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা ৪/৪৫। কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেয়ী,৭/১৫৬। যে ইমামগন ওলী ছাড়া বিবাহ বাতিল বলেছেন তাদের দলীল:
আবু মুসা আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন,
অর্থাৎ ওলী ছাড়া বিবাহ নয়। لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ
আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৮৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১১০১;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৯৭৬১। হাদীসটি সহীহ। শায়খ আরনাউত এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ অর্থাৎযে মহিলা ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল। তিনি ৩ বার তা বলেছেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১১০২; মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ২৫৩৬৫। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন আর শায়খ শুয়াইব আরনাউত সহীহ বলেছেন। উপরক্ত হাদীস সমূহের ভিত্তিতে ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ র. সহ অধিকাংশ আলেম ওলী ছাড়া বিবাহকে বাতিল বলেছেন। যে সব ইমাম ও ফকীহ ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ বলেছেন তাদের দলীল:
তাবেঈদের মধ্যে ইমার জুহরী ও শাবী এরপরে ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ, জুফার সহ কিছু সংখক মুজতাহিদ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ওলী ছাড়া বিবাহ কে জায়েজ বলেছেন। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১.কুফু হতে হবে। ২.মেয়েটি বালেগা, বুঝমান হতে হবে। আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবায়া, ৪/৪৫; আলমাবসুত লিস-সারাখসী,৬/৬১ ও ৫/১৬। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فلا جناح عليكم فيما فعلن في أنفسهن بالمعروف অর্থাৎ মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে সৎ ভাবে যা করবে (বিয়ের ক্ষেত্রে) সে বিষয়ে তোমাদের কোন দোষ নেই। সূরা বাকারাহ-২৩৪
অন্য এক আয়াতে তালাক সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
تنكح زوجا غيره. حتى অথাৎ যতক্ষন না তারা অন্য স্বামীকে বিবাহ না করে। সূরা বাকারাহ-২৩০। অন্য প্রসংগে আল্লাহর বাণী, فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে তাদের স্বামীদের কে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না। সূরা বাকারাহ-২৩২
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, الأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا অর্থাৎ মেয়েরা ওলীদের চেয়ে নিজের ব্যাপারে অধিক হকদার। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৪২১। الأيم অর্থ স্বামীহীন মহিলা, পূর্বে স্বামী থাকুক বা না থাকুক। আলমজামুল ওয়াসীত। বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌদী আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন,
المسألة اجتهادية ، واختلف فيها الأئمة ، فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا ، فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها
অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা, ইমামগণ এক্ষেত্রে ইখতিলাফ করেছেন। সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে, ওলী ছাড়া বিবাহবে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, পাকিস্থান ইত্যদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্মীকৃতি দেয়া হবে । বাতিল করতে বলা হবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, শরীয়তে বিবাহে মেয়েদের জন্য ওলী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয় এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতমতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং মেয়েদের জন্য আবশ্যক হলো ওলীর অনুমতি নিয়ে বিবাহ করা। আর আমাদের উচিৎ বিবাহের সময় মানুষদের কে ওলীর অনুমতির বিষয়ে উৎসাহিত করা,ওলী ছাড়া বিয়ে করতে নিষেধ করা এবং ওলী থাকার কল্যান বর্ণনা করা। যারা ইতিমধ্যে ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করেছে তাদের বিষয়ে কথা হলো যেহেতু তারা একটি ফিকহী মত গ্রহন করেছেন আর বিষয়টি ইজতিহাদী এবং ইখতিলাফী তাই তাদেরকে নতুন করে বিবাহ করতে হবে না। তবে এই ঘৃনিত কাজের জন্য তাদের লজ্জিত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভাল জানেন।