আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ আপনাকে স্বাগতম

সাম্প্রতিক আপডেট

০৮/০৯/২০২৫, ০৬:৫৪:১০ এএম বাংলা

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন বনাম আল্লাহর মহাব্বত ও আখিরাতমুখিতা

News Image

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন বনাম আল্লাহর মহাব্বত ও আখিরাতমুখিতা

আসলে জীবন যে বুঝেছে, তার কাছে এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা তো জীবন বুঝিনি। অন্ধের মতো দৌড়ে বেড়াচ্ছি।

এই জীবনে যত আনন্দ আছে, প্রতিটি আনন্দই ভেজাল। এখানে টাকার আনন্দ বড় আনন্দ। কিন্তু টাকা অর্জনে যেমন ভেজাল, কষ্ট-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা। টাকার আনন্দের অনুভ‚তি যদি দশ মিনিট হয়, টেনশনের অনুভ‚তি সারাদিন হয়। এরপরে টাকা সংরক্ষণের টেনশন। যে কোনো সম্পদের ক্ষেত্রেই একই কথা।

সন্তানের আনন্দ সবচেয়ে বড় আনন্দ। কিন্তু সন্তানের জন্য আনন্দ যদি হয় এক ঘণ্টা। তবে সন্তানের অসুখ-বিসুখ, পড়ালেখা ঠিকমতো করে না, পাশ করে না ফেল করে- এই টেনশন হয় তেইশ ঘণ্টা।

স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক জীবন সবচেয়ে আনন্দের, কিন্তু এই আনন্দ যদি হয় একঘণ্টা; দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, ব্যথা, যন্ত্রনা, ঝগড়া-ঝাটি হয় তেইশ ঘণ্টা।

খাওয়া সবচেয়ে বড় আনন্দের। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। আমাদের প্রজন্মেও হাঁটাচলা ছিল। এখন আর হাঁটাচলা, দৌড়ঝাঁপ, ফুটবল-ক্রিকেট খেলা, কিচ্ছু নেই। এখন বসে বসে খাও আর দেখো। খাটনি হল কিছুটা গালের, কিছুটা পাকস্থলির, আর বাকিটা ব্রেনের। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যেঙ্গ রিলাক্সে আছে। তো এখন সবচেয়ে প্রিয় কাজ হল খাওয়া, ফাস্টফুড, সেকেন্ড ফুড। আর্লি ফুড, ¯স্লো ফুড, কত কত রকমের ফুড!

খাওয়ার চেয়ে মজা নেই আর কিছুতে। সেই খাওয়ার আনন্দ কতটুকু! যতটুকু সময় খাচ্ছি। তার ভেতরেও অনেক সময় ঝাল লেগে যায়, হেঁচকি উঠে যায়, পিপাসা লাগে। কিন্তু খাওয়ার আগে টাকা কামাই করতে, বাজার করতে, রান্না করতে অনেক কষ্ট। আবার খাওয়ার পরে পেটের গোলমাল হতে পারে, বাথরুমে অবশ্যই যেতে হবে, অনেক কষ্ট।

এই দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি আনন্দ, প্রতিটি পাওয়া ভেজাল।

দুনিয়াতে শুধু একটা জিনিস ভেজালমুক্ত আছে, ভাইয়েরা, যেটা আমরাও পারি না, সেটা হল আল্লাহর মহাব্বত। আল্লাহর মহাব্বত এমন একটা আনন্দ, যারা পেয়েছে তাদের জন্য, নির্ভেজাল আনন্দ। এখানে কোনো ঝামেলা নেই, মারামারি হয় না, কোনো আফসোস লাগে না। এ এমন একটা নেশা, যে নেশায় শুধু মজাই আছে, ক্লান্তি নেই। এ এমন একটা প্রেম, এ প্রেমে শুধু আনন্দই আছে, কোনো ঝগড়া নেই। এই জিনিসটা ছাড়া- আল্লাহর যিকির, আল্লাহর মহব্বতের বাইরে দুনিয়াতে যত আনন্দ আছে সবই কিন্তু ভেজাল।

এজন্য জীবনকে যারা বুঝেছে, বিশেষ করে আখিরাতের চেতনা যার ভেতরে পরিপূর্ণ, সে কখনোই নিজের দায়িত্বের পরে আল্লাহর কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলে ঝঞ্ঝাটের দুনিয়ায় থাকতে চায় না।

এর পরে কী হল? রাসূলুল্লাহ সা. তাদেরকে কী শেখালেন? দুনিয়ায় বেঁচে থাকাটা কোনো বড় পাওয়া নয়। দুনিয়ায় দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করা, আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে আল্লাহর কাছে যেতে পারা- এগুলো বড় সফলতা।

আর রাসূলুল্লাহ সা. আজীবন এভাবেই চলেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. শুয়ে আছেন মসজিদের পাশেই একটা ঘরে। এখানে শুয়ে আছেন কেন? স্ত্রীদের সাথে একটু মনমালিন্য হয়েছিল। আমাদের বউয়েরা যদি আমাদের সাথে ঝগড়া করে, রাগ করে, আমরা তার চেয়েও বেশি আকারে রাগ করি, অথবা গালও দিই, অথবা মারধরও হতে পারে, এগুলো সবই কিন্তু নাজায়েয।

আমরা রাসূলুল্লাহ সা. সুন্নাত পালনের দাবিদার, আমরা সুন্নি। আমরা সুন্নাত চাই টুপি-পাগড়ির সুন্নাত। কিন্তু পারিবারিক সুন্নাত কিন্তু আমরা চাই না। কারণ পারিবারিক সুন্নাত স্বামীদের বিপক্ষে বেশি যায়, বউদের একটু পক্ষে যায়। পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সা. স্বামীদেরকে যেভাবে টাইট দিয়েছেন, স্ত্রীদের এত টাইট দেননি। তাদের কিছু দায়িত্ব আছে। কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণ, রাগ নিয়ন্ত্রণ, ঝগড়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব, যেটা সবচেয়ে কঠিন কাজ, এটা রাসূলুল্লাহ সা. স্বামীদেরকে বলেছেন।

যাই হোক, স্ত্রীরা কিছু খারাপ আচরণ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সা. প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু কষ্টের মাথায় কিছুই বলেননি। তিনি নীরবে মসজিদে গেছেন। আমি আর ঘরে যাব না। চার মাস মসজিদে ছিলেন।

তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন, সাধারণ চাটাইয়ের মতো বিছানা। সাহাবিরা আসছেন। উমর রা. এসেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. উঠে বসেছেন। খালি গায়ে শুয়ে ছিলেন। চাটাইয়ের ওই দাগগুলো তাঁর সুন্দর ফর্সা পিঠে লাল দাগ লেগে গিয়েছিল। উমর রা. কাঁদতে শুরু করেছে। “ইয়া রাসূলাল্লাহ, দুনিয়ায় জালেম, কাফের, ফাসেক বাদশাহরা কত আয়েশ করে, আপনিও তো বাদশাহ। আপনি রাষ্ট্রের প্রধান। আপনার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে টাকা দিতে হবে না, আপনার ব্যক্তিগত কোনো টাকা লাগবে না, আমরা কিছু টাকা দিয়ে আপনার জন্য একটা গদি বানিয়ে দিব।”

রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, না,। দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্কটা কী?

مَا لِيْ وَلِلدُّنْيَا مَا أَنَا فِي الدُّنْيَا إِلاَّ كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا.

একজন পথিক উটের পিঠে চড়ে মরুভ‚মি দিয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে ছায়ায় একটু বিশ্রামের জন্য একটা গাছের নিচে বসেছে। সে জানে, এই গাছ আমাকে ছেড়ে যেতে হবে। কাজেই এই ছায়ায় বিশ্রামের জন্য গাছের নিচে বসে সে ঘর বানায় না, ঝাড়– দেয় না, সেখানে সে ইট দিয়ে কোনো কিছু বানাতে যায় না। তাঁবুও খোলে না। তার যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু বিশ্রাম নিয়ে আবার চলে যায়। আমার সাথে দুনিয়ার সম্পর্ক এতটুকু।[সুনানে তিরমিযি, হাদীস ২৩৭৭। ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]

বই: মেম্বারের আহ্বান-২

লেখক: প্রফেসর ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ.


কপিরাইট স্বত্ব © ২০২৫ আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট - সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত| Design & Developed By Biz IT BD