প্রশ্নঃ 1
আস্সালামু আলাইকুম মুহতারাম । মহান আল্লাহর নিকট আপনার জন্য আমার মনের অন্তস্থল থেকে আপনার জন্য দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন আপনাকে নেক হায়াত দান করেন। আপনি যেন এই উম্মাতে মোহাম্মিদির পরকালিন মুক্তির জন্য আরো বেশি করে মেহনত করতে পারেন। অতপর…আমার কাছে আপনার রচিত প্রায় 18 টি কিতাব সহ অসংখ্য ভিডিও বক্তব্য সংগ্রহে রয়েছে যা থেকে আমি নিয়মিত অধ্যয়ন এবং শ্রবন করি। ফলশ্রুতিতে মহান আ্ল্লাহর অশেষ রহমতে তার একজন নেক বান্দা হওয়ার পথটা এখন আমার কাছে খুব পরিস্কার হয়েছে এবং হচ্ছে। তো তার ই ধারাবহিকতায়…. মোহতারামের নিকট আমার প্রশ্ন প্রসাব/পায়খানা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য আমরা পানি ও টিস্যু ব্যবহার করি। আমি অনেক বক্তার বক্তব্য থেকে জানতে পেরেছি যে একই সাথে পানি ও টিস্যু ব্যবহার করাটা সুন্নাত সম্মত নয়। আর দ্বিতীয়তঃ পানি থাকলে টিস্যু ব্যবহার না করাই উত্তম। তাদের অনেক কেই আপনি চেনেন। আর আমাকে বর্তমানে যে বিষয়টা খুব পেরেশানীতে রেখেছে সেটা হল প্রসাব করার পর আমরা টিস্যু নিয়ে যে হাটাহাটি করি এটাও নাকি সুন্নাত সম্মত নয়। তাহলে ব্যাক্তিগত ভা্বে আমার কাছে মনে হয় যে আমি যদি টিস্যু নিয়ে প্রসাবের পর হাটাহাটি করিও তারপর ও মনে হয় যেন কিছু নাপাকি আমার কাপড়ে লেগে যাচ্ছে। তো জনাব মেহেরবানি করে যদি আমাকে এই প্রসাব পায়খানা থেকে পবিত্র হওয়ার বিষেয়ে একটা সুন্নাত সম্মত দিকনির্দেশনা অবশ্যই বিস্তারিত দিতেন তাহলে এই অধম চির কৃতঞ্জ হতাম।
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। পানি ও টিস্যু উভয়টি একসাথে ব্যবহার করাই উত্তম। তবে যে কোন একটি দ্বারাই পবিত্রতা অর্জিত হবে। দলীলসহ জানতে আমাদের দেয়া ০০76 নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন। টিস্যু ধরে হাটাহাটি করার কোন দলীল পাওয়া যায় না। তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে হাটাহাটি করার দরকার নেই। আর আপনি যেটা লিখেছেন ব্যাক্তগিত ভ্বাে আমার কাছে মনে হয় যে আমি যদি টস্যিু নয়িে প্রসাবরে পর হাটাহাটি করওি তারপর ও মনে হয় যনে কছিু নাপাকি আমার কাপড়ে লেগে যাচ্ছে এটা শয়তানের ধোকা। আপনি টিস্যু এবং পানি উভয়টি ব্যবহার করুন। হাটাহাটি পরিহার করুন। ইনশাআল্লাহ আপনার পবিত্রতা যথায়থ ভাবে অর্যিত হবে।
প্রশ্নঃ 2
মুহতারাম আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন : অযু করার সময় কুলি করা এবং নাকে পানি নেওয়া কি একই কি সাথে করতে হবে নাকি আগে কুলি করে পরে নাকে পানি নিতে হবে এবং ঘাড় মাসেহ করা কি সুন্নাত, যদি সুন্নাত না হয় তাহলে যদি কেউ করে তা কি বিদাত হবে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কুলি আর নাকে পানি এক সাথেও করা যায় আবার আালাদা আলাদাও করা যায়, দুই ধরনের হাদীসই আছে। আপনার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে করবেন। আর ঘাড় মাসেহ করার ব্যাপারে কয়েকটি দূর্বল হাদীস বর্ণিত আছে। তার একটি হলো, قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من توضأ ومسح عنقه لم غل بالأغلال يوم القيامة অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ওযু করবে এবং ঘাড় মাসেহ করবে কিয়ামতের দিন তাকে শিকল পরানো হবে না। তারীখ আসবাহান, ১/২৪২। এই বিষয়ে বিভিন্ন হাদীসের বিশ্লেষন শেষে মোল্লা আলী কারী হানাফী রাহ. বলেন, قال أئمتنا إن مسح الرقبة مستحب أو سنة অর্থ: আমাদের ইমামগণ বলেছেন, ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত। আল-আসরারুল মারফুয়াহ, পৃষ্ঠা- ৩১৫। কোন কোন আলেম বিদআত বলেছেন। তবে দলিলের আলোকে বিদআত নয় বলেই মনে হয়।
প্রশ্নঃ 3
খাবারের পর প্লেটে যদি কিছু খাবার থেকে যায়, খাবারে অরুচির কারণে যদিও জানি খাবর সম্পূর্ন শেষ করার কথা ইসলামে বলা আছে। আর প্লেটের সেই অবশিষ্ট খাবার যদি কোনো পশু/পাখিকে খাওয়ানো হয়,এই ক্ষেেএ ইসলাম কি বলে?
23 Dec 2025
না, এক্ষেত্রে কোন পশু-পাখিকে খাওয়ালে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ 4
ওযু করার সঠিক নিয়ম ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করলে উপকৃত হবো।
23 Dec 2025
ওযু করার নিয়ম ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো: প্রথমে নিয়ত করবে এরপর তিনবার করে কুলি করবে এবং নাকে পানি দিবে। এরপর মুখ তিনবার ধুবে। এরপর হাত তিনবার কুনুহ সহ ধুবে। অতঃপর পুরা মাথা একবার মাসেহ করবে। এরপর টাকনু সহ দুপা তিনবার ধুবে। হাত ও পা ধোয়ার ক্ষেত্রে আগে ডান তারপর বাম।
প্রশ্নঃ 5
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। টাকনুর নিচে কাপর পড়ে সালাত আদায় করলে অজু নস্ট হবে কি না?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম।না, টখনুর নিচে কাপড় পরে সালাত আদায় করলে ওযু নষ্ট হয় না। তবে টাখনুর নিচে কাপড় পরা সর্বাবস্থায় মারাত্নক গোনাহের কাজ । আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ. অর্খাৎ টাখনুর নিচের যে অংশে পায়জামা (পরিধানের পোশাক) থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। সহীহ বুখারী,হাদীস নং ৫৭৮৭। পায়জামা বলতে এখানে লুঙ্গি, প্যান্ট এবং অন্যান্য সকল পোশাক উদ্দেশ্য। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 6
QUESTION ABOUT PERFUME
23 Dec 2025
এলকোহল একটি কেমিক্যাল টার্ম, এ দ্বারা সর্বদা মদ বুঝানো হয় না। পারফিউমে ব্যবহৃত এলকোহল সাধারণত মাদক হয় না, অনেক সময় বিষাক্ত হয়, যা পান করলে মাতাল না হলেও মৃত্যু হতে পারে। এ ধরনের এলকোহল মিশ্রিত পারফিউম ব্যবহার বা এলকোহল মিশ্রিত পানি দিয়ে জীবানুমুক্ত হওয়া ইত্যাদি বৈধ। এতে দেহ বা পোশাক নাপাক হবে না।
প্রশ্নঃ 7
mansur hallaj somporke apnader motamot janaben and Ibn Taymiyyah sufi der bepare and tar ek fatwa te fanafilla bepare ze akida poshon poshon koreche ta ki correct? answer gulo bistarito bhabe janaben.
23 Dec 2025
মানসূর হাল্লাজ সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর সবই অপ্রয়োজনীয় কাজ। কবরে বা হাশরে এ বিষয়ে কোনো মুসলিমকে প্রশ্ন করা হবে না। কোটি কোটি মুসলিমের মধ্যে তিনি একজন। তার কর্ম ও মতামত খুবই আপত্তিকর ছিল। তার লেখা বইগুলোও আপত্তিকর বিষয়ে ভরা। সাধারণ ভাবে তার যুগের আলিমগণ তাকে বিভ্রান্ত বলেছেন। কেউ কেউ তাকে ভাল মনে করেন এবং তার খারাপ কথাগুলোর জন্য ওজর বলেন। মানুষের দৃষ্টিতে মানুষের বিচার হবে বাহ্যিক কর্মের ভিত্তিতে। এ বিচারে তিনি বিভ্রান্তিকর মত ও কর্মের অনুসারী ছিলেন। মহান আল্লাহই ভাল জানেন। ইবন তাইমিয়া নিজেও একজন সুফী ছিলেন। তার গ্রন্থাবলির মধ্যে তাসাউফ বিষয়ে অনেক রচনা রয়েছে। অনেক সুফির তিনি প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি সুফিদের বিভ্রান্তির প্রতিবাদ করেছেন।
প্রশ্নঃ 8
Ekjon non Muslim ki wudu or gushal er dara pobitro hote parbe?
23 Dec 2025
যে সব শরয়ী হুকুম পালনের জন্য ওযু করতে হয় অমুসলিমেদের উপর সেই সব হুকুম প্রযোজ্য নয়। যেমন, নামায রোজা। সুতরাং তাদের পবিত্র হওয়ার কোন অর্থ নেই।
প্রশ্নঃ 9
Amra jani je salat er jonno wudu kora fard. kintu quran sporsho korbar jonno wudu kora nicher konti hote pare. 1. fard 2. wajib 3. sunnat 4. mustahab
23 Dec 2025
ফরজ। বিস্তারিত জানার জন্য এই বিষয়ে প্রদত্ত অন্য প্রশ্নের উত্তর দেখুন।
প্রশ্নঃ 10
TOUCHING QURAN
23 Dec 2025
বিভিন্ন সহীহ হাদীসের আলোকে উম্মাতের প্রায় সকল ইমাম ও ফকীহ একমত যে, ওযু বা গোসল বিহীন অবস্থায় কুরআন কারীম সরাসরি স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে বর্তমানে কতিপয় ফকীহ ওয বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। সংক্ষেপে বিষয়টি আলোচনা করছি। নাপাক অবস্থায় ও ওযু বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করার নিষেধাজ্ঞায় সহীহ হাদীস বর্ণিত । ইবন উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
لا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। হাদীসটি সহীহ। হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১/৬১৬; আলবানী, সহীহুল জামি ২/১২৮৪, নং ৭৭৮০। অন্য হাদীসে তাবিয়ী আব্দুল্লাহ ইবন আবূ বাকর ইবন মুহাম্মাদ ইবন আমর ইবন হাযম আনসারী (৬৫-১৩৫ হি) বলেন, আমার দাদা সাহাবী আমর ইবন হাযমকে (রা) রাসূলুল্লাহ সা. যে পত্র লিখেছিলেন, তাতে তিনি লিখেছিলেন:
أَنْ لا يَمَسَّ اَلْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। এ হাদীসটি অনেককগুলো সনদে বর্ণিত। প্রত্যেক সনদেই কিছু দুর্বলতা বিদ্যমান। তবে সবগুলি সনদের ভিত্তিতে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বাল, ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়াইহি, ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী, শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী ও অন্যান্য প্রাচীন ও সমকালীন মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলে নিশ্চিত করেছেন। মালিক, আল-মুআত্তা ১/১৯৯; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ১/১৫৮-১৬১, নং ১২২। উপরের হাদীসগুলোর ভিত্তিতে অপবিত্র - অর্থাৎ গোসল ফরয থাকা অবস্থায় অথবা অযু-বিহীন- অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণ-সহ মুসলিম উম্মাহর প্রায় সকল ফকীহ এ বিষয়ে একমত। আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুওয়াইতিয়্যা ১৬/২৪০; ২৩/২১৬; ৩৫/৩৩৩; ৩৮/৬। প্রসিদ্ধ হাম্বালী ফকীহ ইবন কুদামা (৬২০ হি) বলেন:
وَلا يَمَسُّ الْمُصْحَفَ إلَّا طَاهِرٌ يَعْنِي طَاهِرًا مِنْ الْحَدَثَيْنِ جَمِيعًا، ... وَهُوَ قَوْلُ مَالِكٍ وَالشَّافِعِيِّ وَأَصْحَابِ الرَّأْيِ ، وَلَا نَعْلَمُ مُخَالِفًا لَهُمْ إلَّا دَاوُد فَإِنَّهُ أَبَاحَ مَسَّهُ
উভয় প্রকারের নাপাকি থেকে পবিত্র না হয়ে কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। ... আর এটি অন্য তিন ইমাম- মালিক, শাফিয়ী ও হানাফীগণেরও মত। একমাত্র (তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ফকীহ) দাঊদ যাহিরী (২০১-২৭০ হি) ছাড়া আর কেউ এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। একমাত্র তিনিই অপবিত্র (ওযূ বা গোসল ছাড়া) কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। ইবন কুদামা, আল-মুগনী ১/২৫৬। সাহাবীগণের মধ্যে আলী, ইবন মাসঊদ, সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস, সায়ীদ ইবন যাইদ, সালমান ফারিসী, আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা.) ও অন্যান্য ফকীহ সাহাবী ওযূ বা গোসল বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ করেছেন। কুরতুবী, তাফসীর (জামিউ আহকামিল কুরআন) ১/২২৫-২২৭। ইবন তাইমিয়া (রাহ) বলেন, এদের বিপরীতে কোনো সাহাবী ওযূ বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ বলেছেন বলে জানা যায় না। ইবন তাইমিয়া, মাজমূউল ফাতাওয়া ২১/২৬৬। উল্লেখ যে, ফকীহগণ শিশু-কিশোর ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ওযূ ছাড়া কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। কারণ শিক্ষার জন্য বারবার কুরআন স্পর্শ করা তাদের জন্য প্রয়োজন এবং তারা নাবালেগ হওয়ার কারণে তাদের জন্য শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য নয়। এছাড়া কুরআনের তাফসীর, হাদীসগ্রন্থ, ও কুরআন সম্বলিত অন্যান্য সকল গ্রন্থ ওযূ ও গোসলবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা বৈধ বলে তাঁরা একমত। ড. ওয়াহবাহ যুহাইলী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/৩৯৫; আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুআইতিয়্যাহ ১৬/৫৩।
প্রশ্নঃ 11
স্যার আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্ন হল: পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি ব্যবহারের পূর্বে ডিলা-কুলুপ ব্যবহারের বিধান কি? আমরা অনেকেই মনে করি পানি ব্যবহারের পূর্বে ডিলা-কূলুপ ব্যবহার না করলে তার পবিত্রতা অর্জন হয় না। এছাড়া বলা হয় ডিলা-কূলুপ না নিলে তার হাতের খাবার খাওযা যাবে না?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। পবিত্রতা অর্জনের জন্য শুধু ঢিলা কিংবা শুধু পানি কিংবা উভয়টি ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধু পানি ব্যবহার করা শুধু ঢিলা ব্যবহার করা থেকে উত্তম। হাদীসে এমনটিই পাওয়া যায়। ঢিলা ও পানি উভয়টি একসাথে ব্যবহার করা ব্যাপারে হাদীসে তেমন পাওয়া যায় না। তবে উভয়টি এক সাথে ব্যবহার করাকে আলেমগণ সবচেয়ে উত্তম বলেছেন। আর ঢিলা ব্যবহার না করলে তার হাতের খাবার খাওয়া যাবে না এ কখা ঠিক না। নিচে দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
শুধু ঢিলা ব্যবহারের দলীল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ اتَّبَعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَخَرَجَ لِحَاجَتِهِ فَكَانَ لاَ يَلْتَفِتُ فَدَنَوْتُ مِنْهُ فَقَالَ ابْغِنِي أَحْجَارًا أَسْتَنْفِضْ بِهَا ، أَوْ نَحْوَهُ ، وَلاَ تَأْتِنِي بِعَظْمٍ ، وَلاَ رَوْثٍ فَأَتَيْتُهُ بِأَحْجَارٍ بِطَرَفِ ثِيَابِي فَوَضَعْتُهَا إِلَى جَنْبِهِ وَأَعْرَضْتُ عَنْهُ فَلَمَّا قَضَى أَتْبَعَهُ بِهِنَّ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী সা. সাথে ছিলাম আর তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন। তখন তিনি এদিক ওদিক তাকালেন না। আমি তার নিকটবর্তী হলাম। তিনি বললেন, কিছু পাথর কিংবা এ জাতীয় কোন বস্তু নিয়ে আস, তা দ্বারা আমি ইস্তেনজা করব। হাড় কিংব গোবর নিয়ে আসবে না। আমি আমার কাপড়ের আঁচলে কিছু পাথর নিয়ে আসলাম এবং তার পাশে রাখলাম। এরপর সেখান থেকে চলে আসলাম। তিনি যখন তার প্রয়োজন পূর্ণ করলেন সেগুলো ব্যবহার করলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৫
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ قِيلَ لَهُ قَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ -صلى الله عليه وسلم- كُلَّ شَىْءٍ حَتَّى الْخِرَاءَةَ. قَالَ فَقَالَ أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِالْيَمِينِ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ
হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তাকে বলা হল, তোমাদের নবী তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দেয় এমনকি পেশাব পায়খানার বিষয়েও? তিনি বলেন, তখন তিনি বললেন, হ্যা, তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব পায়খানা করতে, ডান হাত দ্বারা ইস্তেনজা করতে, তিনটার কমে পাথর ব্যবহার করতে এবং হাড় ও গোবর দ্বারা ইস্তেনজা করতে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২
শুধু পানি ব্যবহারের দলীল:
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي مَيْمُونَةَ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَزَةً يَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ
আতা ইবনে আবী মায়মুনাহ থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস ইবনে মালিক রা. কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সা.পায়খানায় যেতেন আর আমি এবং একজন বালক পানির পাত্র ও লাঠী বহন করতাম। তিন তা দ্বারা ইস্তেনজা করতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫২। عن أبي هريرة : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال نزلت هذه الآية في أهل قباء { فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المطهرين } قال كانوا يستنجون بالماء فنزلت هذه الآية فيهم
হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এই আয়াত সেখানে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে আর আল্লাহও তাদের ভালবাসেন কুবা বাসীদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন তারা পানি দ্বারা ইস্তেনজা করত তাই তাদের ক্ষেত্রে এই আয়াত তাদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩১০০। হাদীসটি সহীহ। উভয়টি একসাথে ব্যবহারের দলীল:
عن ابن عباس قال: لما نزلت هذه الآية في أهل قباء {فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المتطهرين} فسألهم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا: إنا نتبع الحجارة الماء
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন কুবা বাসীদের ক্ষেত্রে এই আয়াত নাযিল হল সেখানে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে আর আল্লাহও তাদের ভালবাসেন তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তারা বলল,আমার ঢিলার পরে পানি ব্যবহার করি
মুসানাদে বাযযার। হাদীসটি মুহাদ্দিসদের সর্বাক্যমতে দূর্বল। আল্লামা নুরুদ্দীন হাইছামী বলেন, رواه البزار وفيه محمد بن عبد العزيز بن عمر الزهري ضعفه البخاري والنسائي وغيرهما
হাদীসটি বাযযার বর্ণনা করেন, সনদে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে উমার আযযুহরী নামে একজন বর্ণনাকারী আছে যাকে ইমাম বুখারী ও নাসায়ী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ দূর্বল বলেছেন। মাজমাউজ ঝাও-ইদ, হাদীস নং১০৫৩। এছাড়াও এই সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে শাবীব নামে একজন রাবী আছেন যাকে মুহাদ্দিসগণ অত্যন্ত দূর্বল বলেছে। লিসানুল মিযান, নং ৪২৭৩। তার পূর্ণ নাম আব্দুল্লাহ ইবনে শাবীব আর রবঈ আবু সাইদ আল মাদানী আলইখবারী। তবে তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক আবূ যাইদ আমর ইবন শুব্বা বাসরী (২৬২ হি) সম্পূর্ণ পৃথক সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হাদীসটির ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমর ইবন শুব্বাহ, তারীখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা (বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬ খৃ) ১/৩৩: শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ দুওয়াইশ, তাম্বীহুল কারী আলা তাকবিয়াতি মা যাআফাহুল আলবানী (শামিলা), পৃষ্ঠা ৬২। হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন,
فَأَتْبِعُوا الْحِجَارَةَ الْمَاءَ
অর্থ: তোমার পাথরের সাথে পানি ব্যবহার কর। আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্কী, হাদীস নং ৫২৯। আল্লামা জাইলায়ী রহ. বলেছেন, এটা একটি ভাল আছার। নাসবুর র-ইয়হা, ১/২১৯। আর সনদে বিচ্ছন্নতার কারণে শাইখ আলবানী বলেছেন, ভাল নয়। সিলসিলাতুন দ-ইফাহ, হাদীস নং ১০৩১। আলেমগণ দুটাকে একা সাথে ব্যবহার করাকে উত্তম বলেছেন, ফিকহের কিতাবগুলোতে তা উল্লেখ আছে। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহি. (১২৫২হি.)বলেন,
اعْلَمْ أَنَّ الْجَمْعَ بَيْنَ الْمَاءِ وَالْحَجَرِ أَفْضَلُ ، وَيَلِيهِ فِي الْفَضْلِ الِاقْتِصَارُ عَلَى الْمَاءِ ، وَيَلِيهِ الِاقْتِصَارُ عَلَى الْحَجَرِ وَتَحْصُلُ السُّنَّةُ بِالْكُلِّ
অর্থ: জানা আবশ্যক যে, পাথর ও পানি একসাথে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম। উত্তমের দিক দিয়ে তার নিকটবর্তী হল শুধু পানি আর তার নিকটবর্তী হল শুধু ঢিলা। তবে প্রত্যেক পদ্ধতির মাধ্যমেই সুন্নাত আদায় হবে। রদ্দুল মুহতার, ৩/৪১। আরো দেখুন, আলওয়াসিত লিল ইমাম গাযালী (৫০৫ হি.), ১/৩১০; আল ফিকহ ফি আহমাদ ইবনে হাম্বাল লি ইবনে কুদামা আলমাকদিসী, ১/৯৫; হিলয়াতুল উলামা, ১/৭১; আল ফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা,১/৮২। উপরের আলোচনা থেকে আমরা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ঢিলা ও পানি একসাথে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম এরপর শুধু পানি এরপর শুধু ঢিলা। সুতরাং ঢিলা ব্যবহার না করলে তার হাতের খাবার খাওয়া যায় না এ কথা সম্পূর্ণ বাতিল। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 12
আস- সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ,আপনার কাছে আমার জানার বিষয় হল, আমরা যে কাপড়ের মোজা পরি তার মাসাহ করা বৈধ হবে কি? দলীল সহ জানালে উপকৃত হব।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে উত্তর খুজে পাবেন ইনশা আল্লাহ। মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের (চামড়ার মোজার উপর) মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীত।ফাতহুল বারী (খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫)। এব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবরে শুবা রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন:
وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ وَمَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ
অর্থঃ আর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং(২০৪)। মুসলিম, আস - সহীহ, হাদীস নং (৬৪৯)। বুখারী এবং মুসলিম
দ্বিতীয় প্রাকারের মোজা তথা জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর রাসূল সা. মাসাহ করেছেন কিনা তা সহীসূত্রে পাওয়া যায় না। ফলে এবিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহনযোগ্য মত হল, যদি মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই । (ইবনে কুদামা, আল মুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৬। )
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয। ইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেন। যেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন: وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ رَجَعَ إلَى قَوْلِهِمَا فِي آخِرِ عُمُرِهِ
তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই । আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ। বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেন।বাদাইউস সানাইয়ী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০। আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
سمعت صالح بن محمد الترمذي قال سمعت أبا مقاتل السمرقندي يقول دخلت على أبي حنيفة في مرضه الذي مات فيه فدعا بماء فتوضأ وعليه جوربان فمسح عليهما ثم قال فعلت اليوم شيئا لم أكن أفعله مسحت على الجوربين وهما غير منعلين .
অর্থঃ (ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:) আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলাম। তিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন । আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন। এরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনি। আমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম । তিরমিযী, আস-সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯, তাহকীক, আহমাদ শাকের। (প্রকাশক, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন)। মোটকথাঃ জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। সুতরাং আমাদের মুজা যদি মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে তার উপর মাসেহ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 13
Is it strongly prohibited to touch the Holy Quran without wudu (ablution)? Would you please cite reference from Hadis? We want to memorize from Quran while we are travelling. It is quite tough to have wudu all time in that state. What will be your suggestion?
20 Dec 2025
মূল্যবান একটি প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর সহজে বোধগম্য হওয়ার জন্য আমরা প্রথমে অপবিত্রতাকে দুইভাগে ভাগ করে নিতে পারি । একঃ হদসে আসগার বা ছোট পবিত্রতা যে ক্ষেত্রে ওজু করলেই পবিত্রতা হাসিল হয়ে যায়, গোছলের প্রয়োজন হয় না। দুইঃ হদসে আকবার বা বড় ধরনের অপবিত্রতা যে ক্ষেত্রে ব্যক্তির উপর গোছল আবশ্যক হয়। চার মাযহাব,শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, হদসে আসগার অথবা হদসে আকবার কোন অবস্থাতেই ব্যক্তি কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না। দলীলঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ
(لا يمسه إلا المطهرون (الواقعة
অর্থঃ তা (কোরআন) কেবলমাত্র পবিত্র ব্যক্তিরাই স্পর্শ করতে পারবে। (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৯)। আর কোরআন স্পর্শ করা ছাড়া প্রথম প্রকারের অপবিত্র ব্যক্তি মুখে মুখে তেলাওয়াত করতে পারবে। কিন্তু দিত্বীয় প্রকারের অপবিত্র ব্যক্তির জন্য এটাও বৈধ নয়। দলীলঃ عن علي رضي الله عنه : أن النبي صلى الله عليه وسلم خرج من الغائط وقرأ شيئا من القرآن وقال :هذا لمن ليس بجنب أما الجنب فلا ولا آية
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন যে,নবী সাঃ ইস্তেঞ্জাখানা (বাথরুম) থেকে বের হয়ে কোরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন:এটা (অপবিত্র অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করার বিধান) ঐ ব্যক্তির জন্য যে জুনুবি (২ য় প্রকারের অপবিত্র ব্যক্তি) নয়। পক্ষান্তরে জুনুবী ব্যক্তির জন্য একটি আয়াতও বৈধ নয়।মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল, হাদীস নং ৮৭২,তাহকীক শুয়াইব আরনাউত,হাদীসের সনদটি হাসান।
প্রশ্নঃ 14
kaporar mojar upor mas a kora jaby ki na. aktu janaly upokrito hobo.
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে উত্তর খুজে পাবেন ইনশা আল্লাহ। মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের (চামড়ার মোজার উপর) মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীত।ফাতহুল বারী (খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫)। এব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবরে শুবা রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন: وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ وَمَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ
অর্থঃ আর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং(২০৪)। মুসলিম, আস - সহীহ, হাদীস নং (৬৪৯)। বুখারী এবং মুসলিম দ্বিতীয় প্রাকারের মোজা তথা জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর রাসূল সা. মাসাহ করেছেন কিনা তা সহীসূত্রে পাওয়া যায় না। ফলে এবিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহনযোগ্য মত হল, যদি মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই । (ইবনে কুদামা, আল মুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৬। )
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয। ইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেন। যেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন: وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ رَجَعَ إلَى قَوْلِهِمَا فِي آخِرِ عُمُرِهِ তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই । আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ। বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেন।বাদাইউস সানাইয়ী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০। আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
سمعت صالح بن محمد الترمذي قال سمعت أبا مقاتل السمرقندي يقول دخلت على أبي حنيفة في مرضه الذي مات فيه فدعا بماء فتوضأ وعليه جوربان فمسح عليهما ثم قال فعلت اليوم شيئا لم أكن أفعله مسحت على الجوربين وهما غير منعلين .
অর্থঃ (ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:) আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলাম। তিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন । আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন। এরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনি। আমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম । তিরমিযী, আস-সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯, তাহকীক, আহমাদ শাকের । (প্রকাশক, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন)। মোটকথাঃ জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 15
AMRA JY KAPORAR MUGA PORI TAR UPOR MAS KORA JABY KI NA. DOLIL SOHO ANS DILY UPKRITO HOBO.
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে উত্তর খুজে পাবেন ইনশা আল্লাহ। মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের (চামড়ার মোজার উপর) মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীত।ফাতহুল বারী (খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫)। এব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবরে শুবা রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন: وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ وَمَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ
অর্থঃ আর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং(২০৪)। মুসলিম, আস - সহীহ, হাদীস নং (৬৪৯)। বুখারী এবং মুসলিম
দ্বিতীয় প্রাকারের মোজা তথা জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর রাসূল সা. মাসাহ করেছেন কিনা তা সহীসূত্রে পাওয়া যায় না। ফলে এবিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহনযোগ্য মত হল, যদি মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই । (ইবনে কুদামা, আল মুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৬। )
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয। ইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেন। যেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন: وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ رَجَعَ إلَى قَوْلِهِمَا فِي آخِرِ عُمُرِهِ
তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই । আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ। বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেন।বাদাইউস সানাইয়ী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০। আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
سمعت صالح بن محمد الترمذي قال سمعت أبا مقاتل السمرقندي يقول دخلت على أبي حنيفة في مرضه الذي مات فيه فدعا بماء فتوضأ وعليه جوربان فمسح عليهما ثم قال فعلت اليوم شيئا لم أكن أفعله مسحت على الجوربين وهما غير منعلين .
অর্থঃ (ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:) আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলাম। তিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন । আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন। এরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনি। আমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম । তিরমিযী, আস-সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯,তাহকীক, আহমাদ শাকের। (প্রকাশক, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন)। মোটকথাঃ জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 16
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ, কোন একটি ভোজসভার কিছু লোক খাবারের পর একটি ড্রামে হাত ধুলে উক্ত ড্রামের পানি দ্বারা অজু করা যাবে কিনা?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা হল। আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন । ইনশাল্লাহ। যদি এক দুইজন ব্যাক্তি হাত ধোয় তাহলে পানির রং, ঘ্রাণ, স্বাদ পরিবর্তন না হওয়ার কারনে তা দ্বারা অজু করা বৈধ হবে । কিন্তু যদি এমন হয় যে, হাত ধোয়ার কারনে পানির রং, ঘ্রাণ, স্বাদ পরিবর্তন হয়েগেছে তাহলে উক্ত পানি দ্বার পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ হবে না।