আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ আপনাকে স্বাগতম

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ 1
১. বিতির এর সালাতে আমারা ৩য় রাকাতে কিরাত এর পর তাকবির বলে রাফা ইয়াদাইন করে হাত বেধে কুনুত পরি এর সহিহ দলিল আছে কিনা? থাকলে জানতে চাই। ২. হাজিদের ঈদ এর সালাত পরা লাগে না কেন?
23 Dec 2025
১। বিতর সালাত বিষয়ে দেয়া আমাদের উত্তরগুলো দেখুন। ২। হাজীগণ হজ্বের বিভিন্ন কাজে লিপ্ত থাকেন এবং মুসাফিরের হুকুমে থাকেন তাই শরীয়ত তাদের জন্য ঈদের নামাজ ওয়াজিব করে নি।
প্রশ্নঃ 2
মুহতারাম। আস-সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হল ১. বিতির এর সালাতের শেষ রাকাতে কুনুত এর আগে তাকবির সহ যে রাফাউল ইয়াদাইন করে হাত বেধে কুনুত পরার যে নিয়ম চালু আছে, তার দলিল সম্পরকে। আমি জানতে চাই কুনুত এর আগে তাকবির বলা এবং রাফাউল ইয়াদাইন করে হাত বাধার কোন সহিহ দলিল আছে কিনা। ২. বিতির এর সালাতের দিতীয় রাকাতে বইঠক এর কোন সহিহ দলিল আছে কিনা।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার প্রথম প্রশ্নের মধ্যে তিনিটি বিষয় রয়েছে। ১। বিতর নামাযে তাকবীর দিয়ে কুনুত। ২। কুনুতের সময় হাত উঠানো। ৩। কুনুতের পূর্বে নতুন করে হাত বাঁধা। নিচে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। বিতর নামাযে তাকবীর দিয়ে কুুনুত: তাকবীর দিয়ে কুনুত পড়ার বিষয়ে একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, كَانَ عَبْدُ اللهِ لَا يَقْنُتُ إِلَّا فِي الْوِتْرِ، وَكَانَ يَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ، يُكَبِّرُ إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَتِهِ حِينَ يَقْنُتُ অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতরের সালাতেই কুনুত পড়তেন। আর তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন। যখন কুরআন পড়া শেষ করতেন তখন তাকবীর দিয়ে কুনুত পড়তেন। শরহে মুশকিলিল আছার, হাদীস নং ৪৫০৪, ১১/৩৭৪। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাতে (হাদীস নং ৭০২১)ভিন্ন সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। উভয় হাদীসের সনদে দূর্বলতা আছে। তবে দ্বিতীয় হাদীসটি প্রথম হাদীসের বক্তব্যকে সমর্থন করায় শায়খ শুয়াইব আর নাউত প্রথম হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। দেখুন: শরহে মুশকিলিল আছার, ১১/৩৭৪। এই হাদীসে আমরা দেখছি সাহবী ইবনে মাসউদ কুনুত পড়ার পূর্বে তাকবীর দিতেন। কুনুতের সময় হাত উঠানো: ফজরের নামাযের কুনুতের সময় উমার রা. হাত উঠাতেন বলে বর্ণিত আছে। হাদীসটি হলো, عَنْ أَبِى عُثْمَانَ قَالَ : صَلَّيْتُ خَلْفَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَرَأَ ثَمَانِينَ آيَةً مِنَ الْبَقَرَةِ ، وَقَنَتَ بَعْدَ الرُّكُوعِ ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ ، وَرَفَعَ صَوْتَهُ بِالدُّعَاءِ حَتَّى سَمِعَ مَنْ وَرَاءَ الْحَائِطِ অর্থ: আবী উসমান রহ. বলেন, আমি উমার রা. এর পিছনে নামায আদায় করলাম তিনি সূরা বাকারাহ থেকে আশিটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। তিনি রুকুর পরে কুনুত পড়লেন এবং তার দুহাত উত্তোলন করলেন এমন কি আমি তার বগলের সাদা অংশ দেখে ফেললাম। তিনি এতো উচ্চস্বরে দোয়া করলেন যে, দেয়ালের পিছনে যারা আছে তারাও শুনতে পেলো। আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৩২৭৪। একই হাদীস আরো দুটি সনদে তিনি উল্লেখ করেছেন। দেখুন ৩২৭৩ এবং ৩২৭৫ নং হাদীস। ৩২৭৫ নং হাদীসের পরে ইমাম বায়হাক্কী রহ. বলেছেন, وَهَذَا عَنْ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ صَحِيحٌ এটা উমার রা. থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত। উপরের হাদীসটি আরো বর্ণিত আছে মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বাতে। হাদীস নং ৭১১৪ এবং ৭১১৫। এই হাদীসটির সমস্ত বর্ণনাগুলো একত্র করলে দেখা যায় এটা ফজরের নামাযের ঘটনা। আর বিভিন্ন সনদে হাদীসটি বর্ণিত হওয়ায় হাদীসটি সহীহ কিংবা হাসান পর্যায়ের হবে। এই হাদীস থেকে বুঝা যায় দুআ কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো যায়। তবে হাত উঠিয়ে তিনি আমাদের দেশের মোনাজাত করার মত করতেন না কান পর্যন্ত উঠাতেন তা স্পষ্ট নয়। কোন কোন সাহবী থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা মোনাজাতের মত করে হাত তুলতেন। কুনুতের পূর্বে নতুন করে হাত বাঁধা: এই মর্মে কোন হাদীস বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে এই ভাবে বিতর পড়াকে আলেমগণ সুন্নাহ সম্মত বলেছেন। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য এসম্পর্কে আমাদের দেয়া অন্য প্রশ্নর উত্তর দেখুন।
প্রশ্নঃ 3
সালাতুল জানাযায় তাকবীর গুলোর সময় হাত উঠাতে হবে কি না? দলীল সহ জানালে উপকৃত হব।
20 Dec 2025
গুরুত্বপূর্ণ এই পশ্নটি করার জন্য আপনারক শুকরান। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। উলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত যে, জানাযার নামাজে প্রথম তাকবীরে হাত উঠানো সুন্নাত। কিন্তু পরবর্তি তাকবীর গুলোরতে হাত উঠাতে হবে কিনা এব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে কিছুটা মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাযহাব
শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাযহাবের উলামায়ে কেরাম সহ ইবনুল মুনযিরী রহঃ, শায়েখ ইবনে বায রহঃ, ইবনে উসায়মীন রহঃ এর মতে পরবর্তি তাকবীর গুলোতেতে হাত উঠানো সুন্নাত। দলীলঃ : رأيتُ رسول الله - صلَّى الله عليه وسلَّم - يرفع يدَيْه مع التكبير عن وائل بن حُجْر قال
رواه أحمد (4/ 316) ونحوه الطيالسي (1021) والدَّارِمي (1/ 285).
অর্থঃ ওয়ায়েল ইবনে হজর রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন: রাসূল সাঃ কে তাকবীরের সাথে হাত উঠাতে দেখেছি। মুসনাদে আহামদ, ৪/৩১৬,তয়ালিসী, (১০২১), দারেমী, ১/ ২৮৫। শায়েখ আলবানী রহঃ হাদীসের সনদটিকে হাসান বলেছেন। উক্ত হাদীসটি ব্যাপক অর্থে এসেছে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট করে কোন নামাজের কথা উল্লেখ করা হয়নি । ফলে জানাযার নামাযকেও শামিল করবে বলে এমতের উলামায়ে কেরাম মত প্রকাশ করেছেন। حديث عمر:
أنَّه كان يَرفع يديه مع كلِّ تكبيرة في الجنازة وفي العيد، رواه البيهقيُّ (3/ 293) والأثرم، وفيه ابن لهيعة، وابن لهيعة ضعيفُ الحفظ، ولذلك فهو يعتبر به في الشَّواهد والمُتابَعات، ولا يكون حجَّة إذا تفرَّد، إلا إن روى عنه العبادلةُ كما عُرِف في محلِّه
ইবনে উমর রাঃ জানাজার নামাযে এবং ঈদের নামাযের প্রত্যেক তাকবীরে হাত উুঠাতেন । বায়হাকী, ৩/২৯৩,
হানাফী এবং মালেকী মাযহাব
জাহেরুর রেওয়াত অনূযায়ী হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরাম এবং মালেকী মাযাহাবের উলামায়ে কেরাম এবং সুফিয়ান ছাওরী রহঃ ও ইবনে আবি লাইলা রাহঃ এর মতে জানাযার অন্যান্য তাকবীর গুলোতে হাত উঠাতে হবে না। এমতের উলামায়ে কেরাম বলেন শরীয়তের কোন বিষয় সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দলীল প্রয়োজন। আর এব্যাপারে কোন দলীল পাওযা যায় না । ইবনে হাযাম রহঃ বলেন: প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য তাকবীর গুলোতে হাত উঠানোর বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে প্রমানীত নেই । তিনি বলেন: রাসূল সাঃ মাথা নিচু করার সময় এবং মাথা উঠানোর সময় হাত উঠাতেন। আর এই বিষয়টি জানাযায় নেই । তাই অন্যান্য তাকবীরের সময় হাত উঠাতে হবে না। আল্লাম শাওকনী রহঃ বলেন: এব্যাপারে প্রমাণযগ্য কোন কিছু রাসূল সাঃ খেকে প্রমাণীত নেই । এবং ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের বক্তব্যতেও এব্যাপারে কোন দলীল নেই। সুতরাং উচিৎ হল হাত উঠানোর বিষয়টি প্রথম তাকবীরের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা। নাইলুল আওতার ৫/ ৫৫ । শায়েখ আলবানী রহঃ বলেন: এটা (জানাযার প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য তাকবীরগুলোতে হাত উঠানো) সুন্নাত নয়। কারন রাসূল সাঃ এর থেকে প্রমানীত নয়। আর ইবনে ওমর এর বিষয়টি এটাকে সু্ন্নাত বানাতে পারেনা । তামামুল মিন্নাহ, ১/৩৪৮।
প্রশ্নঃ 4
(তাহিয়্যাতুল মাসজিদ) মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ার প্রয়োজনীয় সময় না পাওয়া যায় তাহলে মুসুল্লি জামাতের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকবে নাকি বসে থাকবে। বসে থাকা নাকি মাকরুহ। আবার কেউ কেই বলেন, ইমাম সাহেব দাড়ানোর আগে দাড়িয়ে থাকা আদবের খেলাফ। উত্তম পন্থা কোনটি । হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
20 Dec 2025
মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূল সাঃ বলেন: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ অর্থঃ তোমাদের কেউ যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন দুই রাকাত নামাজ পড়া বসে না পড়ে । বুখারী, আস সহীহ, কিতাব, আস সালাত, বাব,ইজা দাখালাল মাসজিদা। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম নববী রহঃ বলেন:
أجمع العلماء على استحباب تحية المسجد ، ويكره أن يجلس من غير تحية بلا عذر؛ لحديث أبي قتادة المصرح بالنهي
অর্থঃ এব্যাপারে উলামায়ে কেরাম একমত যে, তাহিয়্যাতুল মসজিদ (মসজিদে ঢুকে দুই রাকাত নামাজ পড়া) মুস্তাহাব এবং কোন কারন ছাড়া নামাজ না পড়ে বসে পড়া মাকরুহ। মাজমু খন্ড ৩, র্পষ্ঠা ৫৫৪। অতএব এ নামাজের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। শুধু নামাজের আগে নয় বরং যখনই আমরা মসজিদে প্রবেশ করব তখনই দুই নামাজ পড়ে বসব । সময় যদি কম থাকে ফরয,ওয়াজীব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ঠিক রেখে নামাজ শেষ করব। প্রথম রাকাতে থাকা অবস্থায় ইক্বামত শুরু হয়ে গেলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবো। সর্বঅবস্থায় হাদীসের অনুস্বরণ করার চেষ্টা করব। তবে যদি একান্তই নামায পড়ার সুযোগ না থাকে তাহলে বসার তুলনায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম। কারন না বসে দাড়িয়ে অপেক্ষা করাটা হাদীসের সাথে বেশি সামঞ্জস্য। এক্ষেত্রে হাদীসের ব্যাক্ষা না করে ফুক্বাহায়ে কেরামের কথার ব্যাক্ষা করে বলব, দাড়িয়ে অনর্থক হাটা চলা করা বা কোন কারন ছাড়া এদিকে সেদিকে তাকিয়ে থাকাকে তাঁরা মাকরুহ বা আদবের খেলাফ বলেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝে শুনে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

কপিরাইট স্বত্ব © ২০২৫ আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট - সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত| Design & Developed By Biz IT BD