আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ আপনাকে স্বাগতম

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ 1
আস-সালামু আলাইকুম। মহিলারা কি বাবা মা বা সজন্ দের কবর জিয়ারাত করতে পারবে? নাবি (স) এর কবর জিয়ারাত করতে পারবে?
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। অধিকাংশ আলেম ও ফকীহর মত হলো, মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করার অনুমতি নেই। তবে অনেক আলেম বলেছেন, দুয়েক বার করা জায়েজ আছে। দেখুন, আল-ফিকহিয়্যাতুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদিল্লাতুহু, ২/৬৮০; আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ; ২৪/৪৪; হাশিয়াতু রদ্দিল মুখতার, ২/৬২৬। যারা বলেন অনুমতি নেই তাদের দলীল নিম্নের হাদীস: حدثنا قتيبة حدثنا أبو عوانة عن عمر بن أبي سلمة عن أبيه عن أبي هريرة : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم لعن زوارات القبور অথ: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কবর জিয়ারতকারী মহিলাদের লানত করেছেন। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ১০৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৪৩৩। । হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন, শায়খ শুয়াইব আর নাউত এবং শায়খ আলাবনী হাসান বলেছেন। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে অধিকাংশ আলেম ও ফকীহ বলেন, মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়েজ নেই। তবে কোন কোন ফকীহ বৈধতা দিয়েছেন। তাদের দলীল হলো: হযরত আশো রা. এর ঘরে একবার রাসূলুল্লাহ সা. রাত্রে ছিলেন। মধ্যরাতে হঠাৎ তিনি দেখলেন রাসূলুল্লাহ সা. ঘরে নেই, তিনি তাকে কবর স্থানে পেলেন। সেখানে এক পর্যায়ে হযরত আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সা. কে বললেন, كَيْفَ أَقُولُ لَهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ্র قُولِى السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ অর্থ: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তাদের (কবরবাসীদের) কি বলব? তখন তিনি বললেন,বল! মূমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পরবর্তী এবং পূববর্তীদেও উপর আল্লাহ দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে যুক্ত হব। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩০১। প্রথমে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করার পর এই বিষয়ে ইমাম তিরমিযী বলেন, وقد رأى بعض أهل العلم أن هذا كان قبل أن يرخص النبي صلى الله عليه و سلم في زيارة القبور فلما رخص دخل في رخصته الرجال والنساء وقال بعضهم إنما كرهت زيارة القبور للنساء لقلة صبرهن وكثرة جزعهن অর্থ: একদল আলেম মনে করেন যে, এটা ছিল নবীয়্যূল্লাহ সা. কর্তৃক মানুষেরকে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেয়ার পূর্বে। যখন তিনি অনুমতি দিয়েছেন তখন পুরুষ মহিলা উভয়েই এই হুকুমের অন্তুভূক্ত হবে। আরেকদল আলেম বলেন, মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা মাকরুহ হবে, কেননা তাদের ধৈর্য্য কম এবং অস্থিরতা বেশী। সুনানু তিরমিযী, ১০৫৬ নং হাদীসের আলোচনা। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ সা. এর কবর জিয়ারত করা সবার মতে জায়েজ আছে। শেষ কথা: মহিলাদের মন নরম, তাদের ধৈর্য্য কম. তারা অল্পতেই কান্নকাটি শুরু করে দেয় সুতরাং তাদের কবর জিয়ারত না করতে যাওয়াটা নিঃসন্দেহ উত্তম। মালেকী মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলিম আল্লামা ইবনে আব্দুল বার বলেন, ولا خلاف في إباحة زيارة القبور للرجال وكراهيتها للنساء অর্থ: পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত বৈধ হওয়ার এবং মহিলাদের জন্য মাকরুহ হওয়ার ব্যপারে কোন মতবিরোধ নেই। দেখুন: আল-ইসতিযকার, ১/১৮৪।
প্রশ্নঃ 2
আস সালামু আলাইকুম। কবর জিয়ারতের সময় কুরাআন তিলাওয়াত করা জায়েজ কিনা? আমরা বাবা মার কবর জিয়ারতে গিয়ে কি পরব? সুন্নার আলোকে জানতে চাই। আল্লাহ আপনাকে উত্তম যাযা দান করুন। আমিন
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কবর জিয়ারত সময় সালাম দিতে হবে। তবে সাহাবীরা কিংবা রাসূলুল্লাহ সা. কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তেলাওয়াত করেছেন বলে কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। কবর জিয়ারতের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি জানতে আমাদের দেয়া ৭৭ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন। কবর জিয়ারতের পাঁচটি দোয়া সহ বিস্তারিত জানতে দেখুন: রাহে বেলায়াত গ্রন্থের ৬০৬-৬১২ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 3
আসসালামু আলাইকুম, শাওয়াল মাসের সাওম কি আমি ঈদের পরের দিন থেকে রাখতে পারব? নাকি ঈদের ৩ দিন পর? যেহেতু আমি ঈদের তৃতীয় দিন থেকে শাওম শুরু করেছি। কুরান হাদিসের আলোকে জানতে চাই।
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করা জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। হ্যাঁ। শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা ঈদের পরের দিন থেকেই রাখতে পারবেন। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ছাড়া যে কোন দিনে এই ছয়টি রোজা রাখা যাবে। ধারবাহিকভাবেও রাখা যায় আবার বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা যায়। আবূ আইয়্যুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ যে রামাদান মাসের রোজা রাখে এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে তাহলে এটা তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার মত। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৫।
প্রশ্নঃ 4
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। জনাব আমার প্রশ্ন হলো মানুষ মারা/ইন্তেকাল করলে কবরে রাখার সময় উত্তরদিকে মাথা দিয়ে কিবলার দিকে মুখ করে রাখা হয় কিন্তু পশু জবেহ করার সময় দক্ষিণ দিকে মাথা রাখা হয় কেন?
21 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নেল্লিখিত বিষয় দুটি রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এভাবেই হয়ে আসছে। বিষয়দুটিতে সব ইমাম ও ফকীহদের ঐক্যমত আছে যে, এগুলো এভাবেই সুন্নত। নিচে বিষয়দুটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। মানুষ মারা গেলে কবরে রাখার ইসলামী পদ্ধতি হলো, মৃতের শরীরকে তার ডান পাশ্বের উপর শোয়াতে হবে। চেহারা থাকবে ক্বিবলমুখী। তার মাথা ও পা থাকবে ক্বিবলার ডানে এবং বামে। অর্থাৎ ক্বিবলার দিকে আড়াআড়ি ভাবে ক্বিবলামুখী করে ডান পার্শ্বের উপর শোয়াতে হবে। রাসূরুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত এমন ভাবেই আমল হয়ে আসছে। নিম্নের হাদীসটি দেখুন:
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ حَدَّثَهُ - وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ - أَنَّ رَجُلاً سَأَلَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْكَبَائِرُ فَقَالَ ্র هُنَّ تِسْعٌ গ্ধ. فَذَكَرَ مَعْنَاهُ زَادَ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ الْمُسْلِمَيْنِ وَاسْتِحْلاَلُ الْبَيْتِ الْحَرَامِ قِبْلَتِكُمْ أَحْيَاءً وَأَمْوَاتًا উবাইদ ইবনে ইমাইয় তার পিতা (একজন সাহাবী) থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন লোক রাসূল সা. কে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বললেন তা নয়টি। এরপর তিনি সেগুলো উল্লেখ করলেন। তিনি আরো বৃদ্ধি করলেন, পিতা মাতার অবাদ্ধ হওয়া এবং বায়তুল হারাম কে হালাল মনে করা যেটা মৃত ও জীবিত অবস্থায় তোমাদের ক্বিবলা। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং২৮৭৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এই হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির ক্বিবলামুখী করে রাখা সুন্নত এটা বুঝে আসে। আরো একটি হাদীস দেখুন:
আবু কাতাদাহ রা. বলেন,
أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- حِينَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ سَأَلَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ مَعْرُورٍ فَقَالُوا : تُوُفِّى وَأَوْصَى بِثُلُثِهِ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَأَوْصَى أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْقِبْلَةِ لَمَّا احْتُضِرَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :্র أَصَابَ الْفِطْرَةَ وَقَدْ رَدَدْتُ ثُلُثَهُ عَلَى وَلَدِهِ গ্ধ. ثُمَّ ذَهَبَ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَقَالَ :্র اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَأَدْخِلْهُ جَنَّتَكَ وَقَدْ فَعَلْتَ নবী সা. মদীনায় এসে বারা ইবনে মারুফের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল, তিনি মারা গেছেন। আর তিনি অসিয়ত করে গেছেন যে, আপনাকে তাঁর সম্পদের অর্ধেক দিয়ে দিবে এবং কবরে ক্বিবলার দিকে রাখাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সে খুবই ভাল কাজ করেছে আর আমি তার সন্তানকে তার একতৃতীয়াংশ (যা তিনি রাসূল সা. কে দিয়েছিলেন) ফিরিয়ে দিলাম। এরপর তিনি গেলেন এবং তার কবরের উপর নামায পড়লেন । এরপর দোয়া করলেন, হে আল্লাহ তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর দয়া কর, তাকে জান্নাত দাও। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৬৮৪৩। আবু হাফস উমার ইবনে আলী আশ-শাফেয়ী (৮০৪ হি.) রহ.হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আলবাদরুল মুনীর ফি তাখরীজিরল আহাদীস ওয়াল আছার, ৭/২৫১। এই হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে কবরে ক্বিবলার দিকে রাখার অসিয়তকে রাসূল সা. উত্তম কাজ হিসেবে প্রসংসা করেছেন। আল্লামা ইবনে হাজম জাহেরী রহ. (মৃত্যু ৪৫৬ হি.) বলেন,
مَسْأَلَةٌ: وَيُجْعَلُ الْمَيِّتُ فِي قَبْرِهِ عَلَى جَنْبِهِ الْيَمِينِ,
وَوَجْهُهُ قُبَالَةَ الْقِبْلَةِ, وَرَأْسُهُ وَرِجْلاَهُ إلَى يَمِينِ الْقِبْلَةِ, وَيَسَارِهَا, عَلَى هَذَا جَرَى عَمَلُ أَهْلِ الإِسْلاَمِ مِنْ عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إلَى يَوْمِنَا هَذَا, وَهَكَذَا كُلُّ مَقْبَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ
অর্থ: মাসয়ালা: মৃত ব্যাক্তিবে কবরের ভিতর তার ডান পার্শ্বের উপর রাখতে হবে, তার চেহারা থাকবে ক্বিবলার দিকে এবং মাথা আর পা থাকবে ডান ও বাম দিকে। এভাবেই রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত মুসলমানদের আমল অব্যাহত রযেছে। আর মাটির উপর প্রতিটি কবর এমনই। আলমুহাল্লা লি ইবনে হাজম: ৫/১৭৩ (মাসয়ালা-৬১৫)। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. আহকামুল জানায়েজ কিতাবে উক্ত মত পোষন করেছেন। এবং তিনি ইবনে হাজম রহ. এর এই বক্তব্য সেখানে নিয়ে এসেছেন। আহকামুল জানায়েজ: ১০৩নং হাদীসের আলোচনায়। আর আমাদের দেশে এভাবে মৃত ব্যক্তিকে শোয়লে মাথা উত্তর দিকেই যায়। অবশ্য ক্বিবলা থেকে যেসব এলাকা পূর্বদিকে নেই সেখানে এভাবে শোয়ালে মৃতের মাথা উত্তর দিকে থাকবে না। পশু জবেহ করার ক্ষেত্রে ইসলামী পদ্ধতি হলো, পশুকে ক্বিবলামুখী করে শোয়াতে হবে। রাসূুল্লাহ সা. জবাইয়ের সময় শোয়াতেন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। ক্বিবলমুখী করার ব্যাপারে সাহাবীদের কর্ম সহীহ সূত্রে পাওয়া যায়। এরপর ডান হাত দ্বারা ছুরি ধরে আর বাম হাত দ্বারা পশুর মাথা ধরে জবেহ করতে হবে। সকল আলেম ও ফকীহ এই ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছেন। দলীল: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে,
أن رسول الله صلى الله عليه و سلم أمر بكبش وأخذ الكبش فأضجعه ثم ذبحه
রাসূলুল্লাহ সা. একটি দুম্বা নিয়ে আসার জন্য আদেশ করলেন। দুম্বা নিয়ে আসা হলো। তিনি পশুটিকে শোয়ালেন তারপর জবেহ করলেন। সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১৯৬৭। ইবনে উমার থেকে সহীহ সনদে জবেহ করার সময় পশু ক্বিবলামুখী করার কথা উল্লেখ আছে। নিচে তাঁর থেকে বর্ণিত মাওকুফ হাদীসগগুলো উল্লেখ করা হলো:
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَنَّهُ كَانَ يَسْتَحِبُّ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ إِذَا ذَبَحَ
অর্থ: নাফে ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি পশু জবেহ করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়াকে ভালবাসতেন। আসসুনানুল কুবরা : হাদীস নং১৯৬৪৭
عن نافع أن بن عمر كان يكره أن يأكل ذبيحة ذبحه لغير القبلة
অর্থ: নাফে বর্ণনা করেন যে, যে পশুকে ক্বিবলামুখী করে জবেহ করা হয়নি ইবনে উমার তার গোশত খাওয়াকে অপছন্দ করতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: হাদীস নং ৮৫৮৫। শায়খ আলবানী বলেছেন,সনদ সহীহ। মানাসিকুল হাজ্ব ওয়াল উমরাহ:১/৩৪
একটি মারফু হাদীসেও ক্বিবলমুখী করার কথা উল্লেখ আছে, তবে হাদীসটি সহীহ নয়। হাদীসটি নিম্নরুপ:
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন,
ذَبَحَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَبْشَيْنِ يَوْمَ الْعِيدِ فَلَمَّا وَجَّهَهُمَا قَالَ فَذَكَرَ الدُّعَاءَ ثُمَّ قَالَ :্র اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ গ্ধ. وَسَمَّى وَذَبَحَ. وَفي رواية أخري وَجَّهَهُمَا إِلَى الْقِبْلَةِ حِينَ ذَبَحَ
রাসূলুল্লাহ সা. একবার ঈদের দিন দুইটি দুম্বা জবেহ করলেন। যখন পশুদুটিকে অভিমুখী করলেন অন্য বর্ণনায় ক্বিবলমুখী করলেন তখন উক্ত দুয়া পড়লেন এবং বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করলেন। আসসুনানুল কুবরা লিল-বায়হাক্কী: হাদীস নং ১৯৬৫৭। হাদীসটি সহীহ নয়। সহীহ মুসলিমের উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,
وَاتَّفَقَ الْعُلَمَاء وَعَمَل الْمُسْلِمِينَ عَلَى أَنَّ إِضْجَاعهَا يَكُون عَلَى جَانِبهَا الْأَيْسَر ؛ لِأَنَّهُ أَسْهَل عَلَى الذَّابِح فِي أَخْذ السِّكِّين بِالْيَمِينِ ، وَإِمْسَاك رَأْسهَا بِالْيَسَارِ
আলেমগন ঐক্যমত পোষণ করেছেন এবং মুসলমানদের আমল এর উপরে যে, পশুকে জবেহ করার সময় তার বাম পাশ্বের উপর শোয়াতে হবে কেননা ডানহাত দ্বারা ছুরি ধরে আর বাম হাত দ্বারা মাথা ধরে জবেহ করার জন্য এটা সবচেয়ে সহজ পদদ্ধতি। শরহে নববী আলা মুসলিম :৬/৪৬০। কাজী ইয়াজ রহ. বলেন,
سُنة فى صفة الذبح ، من إضجاعه برفق ، ولا تذبح قائمة ولا باركة ، ومضى العمل باضجاعها على الشق الاْيسر ؛ لأنه أهنأ لمناولة ذبحها باليمين وإمساك رأسها باليسار অর্থ: জবেহ করার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, কোমল ভাবে শোয়াতে হবে। দাঁড় করিয়ে কিংবা বসিয়ে জবেহ করা যাবে না। আমল অব্যাহত আছে এভাবে যে, পশুকে বাম পার্শ্বের উপর শোয়াতে হবে, কেননা ডান হাত দ্বারা ছুরি ধরা এবং বাম হাত দ্বারা মাথা ধরে জবেহ করার জন্য এটাই সবচেয়ে উপযোগী সহজ পদ্ধতি। শরহে সহীহ মুসলিম লিল কাজী ইয়াজ: ৬/২১০। এই বিষয়ে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, وأحب في الذبيحة أن توجه إلى القبلة অর্থ: ক্বিবলামুখী করে জবেহ করা আমার নিকট অধিক প্রিয়। মারিফাতুস সুনান লিল- বায়হাক্কী:১৪/৪৫। আর আমাদের দেশে ক্বিবলমুখী করে বাম পাশ্বের উপর শোয়ালে মাথা দক্ষিন দিকে আর পা উত্তর দিকে থাকে। আর যেসব এলাকা ক্বিবলা থেকে পূবর্ দিকে নয় তাদের ক্ষেত্রে মাথা দক্ষিনে থাকবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, হাদীস ও উম্মতের কর্মধারা প্রমাণ করে যে, এই দুটি বিষয় এভাবেই সুন্নাত। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুষ দান করুন।
প্রশ্নঃ 5
কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে কি?
20 Dec 2025
কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তেলাওয়াতের বিষয়টি সুন্নাহ সম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ সা. কবর জিয়ারতের সময় কুরআন শরীফের কোন সূরাহ পড়েছেন এমন জানা যায় না। কবর জিয়ারত কিভাবে করতে হয় তা আমরা আবু বুরদাতা রা. থেকে বর্ণিত এই হাদীস থেকে জানতে পারি । তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى الْمَقَابِرِ ، كَانَ قَائِلُهُمْ يَقُولُ : السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
রাসূলুল্লাহ সা. মানুষদেরকে শিক্ষা দিতেন, যখন তারা কবরের কাছে যাবে তখন বলবে, হে মূমিন, মুসলিম ঘরবাসী তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৫৪৭। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সুতরাং কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তেলাওয়াতের প্রয়োজন নেই।
প্রশ্নঃ 6
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম আপনার কাছে কয়েকটি বিষয় জানতে চাই। অনুগ্রহ করে কোরআন হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব। ১)দাফনের সময় কোন মাসনূন দোয়া আছে কি না?২)দাফনের পর সুন্নাত সম্মত কাজগুলো কি কি?৩)দাফনের পর মাটির ঢিলা কবরের ভিতর রাখা সুন্নাত কি না?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণগুলো করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যাবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। আশাকরি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। ১) জ্বী হা, দাফনের সময় মাসনূন দোয়া আছে। যিনি কবরে মৃত ব্যাক্তিকে কবরে নামাবেন তিনি নামানোর সময় নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবেন। হাদীসেএসেছে রাসূল সাঃ যখন কোন ব্যাক্তিকে কবরে রাখতেন তখন তিনি এই দোয়াটি পাঠ করতেন। عن نافع عن ابن عمر : أن النبي صلى الله عليه و سلم كان إذا أدخل الميت القبر قال مرة بسم الله وبالله وعلى ملة رسول الله وقال مرة بسم الله وبالله وعلى سنة رسول الله صلى الله عليه و سلم
তিরমিযী রহঃ এই সনদে হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন এবং শায়েখ আলবানী রহঃ সহীহ বলেছেন। সুনানে তিরমিযী, ৩/৩৬৪,তাহকীক, আহমাদ শাকের এবং আলবানী। ২) দাফনের পর সুন্নাত হল, কিছুক্ষণ অবস্থান করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। এব্যাপারে হাদীসে এসেছে
عن عثمان بن عفان قال : كان النبي صلى الله عليه و سلم إذا فرغ من دفن الميت وقف عليه فقال استغفروا لأخيكم وسلوا له بالتثبيت فإنه الآن يسأل অথ....হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃ থেকে বণীত তিনি বলেন: নবী সাঃ যখন দাফনের কাজ শেষ করতেন তখন সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন: তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও । এবং তার জন্য দৃঢ়তা কামনা কর, কারন তাবে এখন জিজ্ঞাসা করা হবে। হাদীসটিকে শায়খ আরবানী সহীহ বলেছেন। সুনানে আবু দাউদ,২/২৩৪ (৩২২১)। হাকেম রহঃ সনদের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন। মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৭০ (১৩৭২)। ৩) দাফনের সময় মাটির ঢিলা নয়, বরং তিনবার স্বাভাবিকমাটি কবরে দেয়া মুস্তাহাব। এব্যাপারে একটি হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه : أَنَّ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلى عَلى جِنَازَةٍ، ثُمَّ أَتَى قَبْرَ المَيِّتِ فَحَثَى عَليهِ مِنْ قِبَل رَأْسِهِ ثَلاثاً
হযরত আবু হরায়রা রাঃ রাসূল সাঃ থেকে বননা করেন যে, তিনি একবার জানাজার নামাজ আদায় করে মৃত ব্যক্তির কবরের কাছে আসলেন এবং তার মাথার দিক থেকে তিন বার মাটি দিলেন। ইবনে মাজা ১/৪৯৯। ইবনুল কাত্তান হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন বায়ানুল ওহমী ওয়াল ইহাম,৫/২৭ নং পৃষ্ঠাতে। এবং হাদীসের সনদকে হাফেজ ইবনে হাজার সহীহ বলেছেন,তালখীসুল হাবীর ২/১৩৯ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 7
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গায়েবানা জানাযার বিধান সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে জাযা দান করুন। নিচে এ বিষয়ে সামান্য আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। বিষয়ে জানাযা শরীয়ত অনুমোদন করে কি না এব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযাহাবের উলামায়ে কেরামের মতে তা বৈধ। এব্যাপারে হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه: أن النبي صلى الله عليه وسلم نعى النجاشي في اليوم الذي مات فيه، وخرج بهم إلى المصلى فصف بهم وكبر عليه أربعاً.
অর্থঃ আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত, নবী সা.নাজ্জশীর মৃত্যুর দিন তার মৃত্যুর সংবাদ সাহাবীদেরকে জানালেন এবং তাদেরকে নিয়ে ঈদগাহে বের হলেন এবং তাদেরকে নিয়ে কাতার সোজা করে তার জানাযার নামাজ আদায় করলেন। বুখারী,আস সহীহ, বাব,আর রজুলু ইয়ানআ ইলা আহলিল মায়্যিত, হাদীস নং ১২৪৫। অপরদিকে হানাফী এবং মালেকী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মতে সাধারনভাবে গায়েবানা জানাযা বৈধ নয়। রাসূল সা.বাদশা নাজাশীর গায়েবানা জানাযা করার ঘটনাটি একান্তই রাসূল সা. এর সাথে বিশেষায়িত। কেননা রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় তাঁর অগণিত সাহাবী, আত্নীয়স্বজন ও আপনজন মৃত্যু বরণ করেছেন। অনেকেই তাঁর থেকে দূরে জিহাদের ময়দানে, বন্দি অবস্থায় বা দূরের কোন শহরে বা গ্রামে অবস্থান কালে ইন্তেকাল করেছেন। কেউ তাঁর কাছে থেকে ইন্তেকাল করলে তিনি সাধারনত তাঁর জানাযা পড়তেন। তিনি কখোন কারো মৃতদেহের অনুপস্থিতিতে তার জানাযা পড়াননি। শুধুমাত্র একটি ব্যতিক্রম ছিল আবিসিনিয়ার শাসক নাজাশীর ইন্তেকাল । সাহাবীগণ আবিসিনিয়ায় হিজরত করলে তাঁদের সংস্পর্শে এসে তিনি ইসলাম গ্রহন করেন । তাঁর দেশে আর কেউ ইসলাম গ্রহন করেনি। যেদিন নাজাশী ইন্তেকাল করেন। সেই দিনই রাসূলুল্লাহ সাঃ তাঁর ছাহাবীগণকে তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ প্রদান করেন এবং গায়েবানা জানাযার নামাজ আদায় করেন। তবে মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের মতে ব্যক্তি যদি এমন দেশে মৃত্যু বরণ করে যেখানে তার জানাযার নামাজ পড়ার মত কেউ নেই সেক্ষেত্রে তার জানাযার নামাজ পড়া যাবে, অন্যথায় নয়। এ মত গ্রহন করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ ও তাঁর ছাত্র ইবনে কায়্যিম রহঃ। ইবনে কায়্যিম রহঃ তাঁর যাদুল মাআদ নামক প্রসিদ্ধ কিতাবে বলেন
وقال شيخ الإسلام ابن تيمية: الصواب أن الغائب إن مات ببلدٍ لم يصلَّ عليه فيه، صلي عليه صلاة الغائب، كما صلى النبي صلى الله عليه وسلم على النجاشي لأنه مات بين الكفار ولم يُصلَّ عليه، وإن صلي عليه حيث مات لم يصلَّ عليه صلاة الغائب، لأن الفرض قد سقط بصلاة المسلمين عليه.
অর্থঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেছেন: সঠিক কথা হল, অনুপস্থিত ব্যক্তি যদি এমন দেশে মারা যায় যেখানে তার জানাযার নামাজ পড়ার মত কেউ নেই তাহলে তার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া হবে। যেমন রাসূল সা. নাজাশীর জন্য পড়েছিলেন। কেননা তিনি কাফেরদের মাঝে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং তার জানাযার নামাজ পড়া হয়েছিলো না। আর যদি ব্যক্তি যেখানে মৃত্যুবরণ করে সেখানে তার জানাযার নামাজ পড়া হয় তাহলে তার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া হবে না। কেননা অন্যান্য মুসলমানরা তার জানাযার নামাজ পড়ার কারণে অন্যদের উপর থেকে ফরযিয়্যাত রহিত হয়ে গেছে। বাব, আস সালাত আলাল জানাইয, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৫০০ (শামিলা)
আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 8
আস- সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, কবর, মাজার, রওজা এবং জিয়ারত এগুলো কি আরবী শব্দ? তাহলে এগুলোর সহজ-সরল বাংলা অর্থগুলো কী হবে এবং এগুলোর সংজ্ঞাগুলো কী হবে দয়া করে জানাবেন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত শব্দগুলো আরবী। নিচে শব্দগুলোর অর্থ দেয়া হল। জিয়ারত = পরিদর্শন করা, সাক্ষাত করা । মাজার = পরিদর্শনস্থল। যে সমস্ত ওলী আওলিয়াদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মানুষ সেখানে গমন করে থাকে মাজার বলতে আমরা সে সমস্ত কবর স্থানকে বুঝে থাকি।কবর = যেখানে মৃতব্যক্তিকে দাফন করা হয়। রওজা = বাগান, কবর।

কপিরাইট স্বত্ব © ২০২৫ আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট - সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত| Design & Developed By Biz IT BD