আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট এ আপনাকে স্বাগতম

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ 1
আসসালামু আলাইকুম আমি একটি কোম্পানীতে চাকুরি করি। আমাদের কোম্পানীর মালিক প্রতিবছর রোজার ঈদের পূর্বে যাকাতের টাকা প্রদান করে (যারা নিতে ইচ্ছুক তাদের লিষ্ট জমা দিয়ে)। আমার প্রশ্ন হলোঃ আমার যাকাত নেয়ার মতো অবস্থা নেই। আল্লাহর রহমতে আমি যথেষ্ট পেয়েছি। আমি যদি যাকাতের টাকাটা গ্রহণ করে আমার এলাকার কোন গরীব লোককে প্রদান করি তাহলে কোন গুনাহ বা সওয়াব হবে কি?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। না, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে আপনার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহন করা জায়েজ হবে না। কারণ যাকাত প্রদানের সময় যাকাত গ্রহীতাকে সম্পদের মালিক বানাতে হয় আর আপনি নিলে সেটা হচ্ছে না। তবে যদি মালিক আপনাকে উকিল (মাধ্যম) বানিয়ে আপনার কাছে আপনার এলাকার গরীবদের জন্য যাকাতের টাকা প্রেরন করে তাহলে জায়েজ হবে। অথবা আপনি যদি বলেন, আমি এই টাকা নেব না, গ্রামে গরীব মানুষদেরকে দেব আর মালিক দেন তাহলে জায়েজ হবে।
প্রশ্নঃ 2
সাধারনত বাংলাদেশের জমীতে পুরা সময়ই পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয় । আমার জানার বিষয় হল, এই সমস্ত জমীতে ওশর না যাকাত আদায় করতে হবে? যদি ওশর আদায় করতে হয় তাহলে কোন পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে? কোন জমীতে ওশর এবং কোন জমীতে যাকাত আদায় করতে হয় জানালে উপকৃত হব।
21 Dec 2025
প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে যে, যাকাত ও উশর কোনো ভিন্ন বিষয় নয়। ফসলের যাকাতের নামই উশর। উৎপাদিত ফসলের যাকাতের নাম হল উশর। পার্থক্য হলো সাধারণত টাকা-পয়সা বা সোনারূপার যাকাত আড়াই পার্সেন্ট হারে আদায় করতে হয় আর ফসলের যাকাতের ক্ষেত্রে পানি দিয়ে ফলালে ৫% আর বৃষ্টির পানি দিয়ে ফলালে ১০% হারে আদায় করতে হয়। সুতরাং বাংলাদেশের যে সমস্ত জমিতে পুরো সময়ই পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয় সেখানে ফসলের ৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন, ১০০ মন ধান হলে ৫ মন ধান অথবা ৫ মন ধানের মূল্য যাকাত বা উশর দিতে হবে। যখন ফসল হবে তখনই ফসলের যাকাত দিতে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে ইবনে উমার রা. বলেন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, فِيمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ ، أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ বৃষ্টির পানি, প্রবাহিত ঝর্ণার পানি বা মাটির স্বাভাবিক আদ্রতা থেকে (কোন সেচ ব্যবস্থা ছাড়া ) যে ফসল উৎপাদিত হয়, সে ফল ও ফসলের এক দশমাংস (১০%) যাকাত আদায় করতে হবে। আর সেচের মাধ্যমে যে ফল ফসল উৎপন্ন করা হয় তা থেকে এক দশমাংসের অর্ধেক (২০ ভাগের একভাগ বা ৫%) যাকাত প্রদান করতে হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৮৩। উশর বা ফসলের যাকাতের নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি মত রয়েছে: ১। হানাফী মতানুসারে উশরের কোন নিসাব নেই। অল্প বা বেশী সকল পরিমাণ ফলমুল, শাকসবজী ও ফসলের জাকাত আদায় করতে হবে। ২। অন্য তিন ইমাম: মালিক, শাফেয়ী, আহমাদ ও হানাফী মাজহাবের ইমাম আবূ ইউসুফ ও অন্যান্য অনেক ফকীহের রা. মতে ভূমির উৎপাদন ৬৫৩ কিলোগ্রাম (প্রায় ১৭ মন) বা তার বেশী হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। এর কম হলে যাকাত ফরজ হবে না। ৩। হানাফী মাজহাবের অন্য ইমাম, ইমাম মুহাম্মাদের র. এর মতে ভূমির উৎপাদন কমপক্ষে ৯৯০ কিলোগ্রাম (প্রায় ২৫ মন) হলে তাতে যাকাত ফরজ হবে। বিভিন্ন দলীল প্রমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় মতটিই শক্তিশালী মনে হয়, তবে যেহেতু আমাদের দেশের সংখাগরিষ্ঠ মুসলিম হানাফী মত অনুস্বরণ করেন, সেহেতু আমরা প্রথম মতকেই উশরের ক্ষেত্রে মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষে। এই মতটি সাবধানতা মূলক এবং দরিদ্রদের জন্য উপকারী। মহান আল্লাহই ভাল জানেন। দলীল সহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত বাংলাদেশে ফসল বা উসরের যাকাত গুরুত্ব ও প্রয়োগ বইটি।
প্রশ্নঃ 3
আস-সালামু আলাইকুম। আমি একজন চাকুরিজিবি। আলহামদুলিল্লাহ, প্রতি বছর যাকাত প্রদান করি। আমার প্রশ্ন হল আমার স্ত্রির যে গহনা আছে (সারে ৭ ভরির কম, আনুমানিক ৫ ভরি) তার যাকাত আমাকে বা তাকে দিতে হবে কিনা? উল্লেখ যে, আমার স্ত্রির নিজের কোন আয় নেই, এবং তার নামে বেঙ্ক এ কোন টাকাও নেই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। না, আপনার স্ত্রীর উপর যাকাত ফরজ নয়। কারণ শুধু স্বর্ণ থাকলে সাড়ে ৭ ভরির কমে যাকাত ফরজ হয় না। আর সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ থাকলে সেগুলো ব্যবহৃত গহনা হলেও যাকাত দিতে হবে। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. গহনার যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে গহনার যাকাত দিতে হবে কি না এই বিষয়ে আলেমদের মাঝে কিছুটা মতভেদ আছে আর সহীহ সুন্নাহর আলোকে গহনার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার মতটিই শক্তিশালী । নিচে গহনার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার দলীল উল্লেখ করা হলো: .১عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَمَعَهَا ابْنَةٌ لَهَا وَفِى يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَهَا ্র أَتُعْطِينَ زَكَاةَ هَذَا গ্ধ. قَالَتْ لاَ. قَالَ ্র أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللَّهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ গ্ধ. قَالَ فَخَلَعَتْهُمَا فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- وَقَالَتْ هُمَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ. অর্থ: আমর ইবনে শুয়াইব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট আসলেন, তার সাথে তার মেয়ে ছিল আর মেয়েটির হাতে ছিল স্বর্ণের দুটি মোটা চুরি। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে বললেন, তুমি কি এর জাকাত দাও? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাকে কি এটা আনন্দ দিবে যে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে (এর কারণে) আগুনের চুরি পরিয়ে দিবে। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, তখন সে ঐচুরি দুটি নবী সা. এর কাছে দিল এবং বলল, এদুটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৫। সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২৪৭৯। হাদীসটিকে কোন কোন মুহাদ্দিস হাসান বলেছেন আবার কোন কোন মুহাদ্দিস সহীহ বলেছেন। শাইখ আলবানী রহ . ও শাইখ শুয়াইব আরনাউত হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৬: সুনানে আবু দাউদ, তালীক শুয়াইব আর নাউত, হাদীস নং ১৫৬৩। মুহাম্মাদ ইবনে কাত্তান (৬২৮হি.) বলেছেন, সনদ সহীহ। বায়ানুল ওহমী ওয়াল ইহাম, ৫/৩৬৬ । আল্লামা ইবনে হাজার রহ. বলেছেন, সনদ শক্তিশালী। বুলুগুল মারম,১/২৫৫। .২عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَدَّادِ بْنِ الْهَادِ أَنَّهُ قَالَ دَخَلْنَا عَلَى عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَتْ دَخَلَ عَلَىَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَرَأَى فِى يَدِى فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ ্র مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ গ্ধ. فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ ্র أَتُؤَدِّينَ زَكَاتَهُنَّ গ্ধ. قُلْتُ لاَ أَوْ مَا شَاءَ اللَّهُ. قَالَ ্র هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ গ্ধ. অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ ইবনে হাদী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা আয়েশা রা. এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমার কাছে আসলেন। তখন তিনি আমার হাতে রুপার একটি আংটি দেখে বললেন, এটা কি? আয়েশা! আমি বললাম, আমি এটা বনিয়েছি আপনার সামনে সজ্জিত হওয়ার জন্য। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি তার যাকাত দাও? আমি বললাম না। তখন তিনি বললেন, তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৭। হাদীসটি সহীহ। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি ও শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, উমদাতুল কারী,১৩/৪৫৬; সহীহ আবু দাউদ,হাদীস নং ১৩৯৮। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী ও হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী। দেখুন,আত-তালখিসুল হাবীর, ২/৩৯০; আলমুসতাদরক লিল হাকিম, হাদীস নং ১৪৩৭। উপরের হাদীস দুটি থেকে স্পষ্ট যে, গহনার যাকাত দেয়া ওয়াজিব। সুতরাং আলেমদের মাঝে মতভেদ থাকলেও আমাদের জন্য উচিৎ ও অধিকতর নিরাপদ হলো অলংকারের যাকাত আদায় করা। নতুবা এটা আমাদের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং আপনার স্ত্রীর জন্য আবশ্যক হল তার অলংকারের যাকাত দেয়া। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 4
পণ্যের যাকাত দিতে গেলে কি মূলধন হিসাব করব নাকি ঐসময় দোকানে যত টাকার পণ্য আছে তার হিসাব করব?
20 Dec 2025
পণ্যের যাকাত আদায় করতে হবে মূলধন সহ। শুধু দোকানের পণ্যের যাকাত দিলেই যথেষ্ট হবে না বরং যাকাত আদায়যোগ্য সমস্ত সম্পদের যাকাত দিতে হবে।

কপিরাইট স্বত্ব © ২০২৫ আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট - সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত| Design & Developed By Biz IT BD