প্রশ্নঃ 1
আসসালামু আলায়কুম। দাড়ি না রাখলে তার দিকে রসুলুল্লাহ সঃ ঘৃনাভরে তাকাতেন না, এমন কোন দলিল আছে কি? থাকলে দয়া করে ইনবক্সে জানাবেন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ, এই বিষয়টি একটি হাদীস থেকে বুঝা যায। নিচে এই বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
রাসূলুল্লাহ সা. নিজে দাড়ি রেখেছেন। দাড়ি রাখতে আদেশ করেছেন। দাড়ি কাটতে নিষেধ করেছেন। এবং দাড়িবিহীন মানুষকে তিনি অপছন্দ করতেন। এই বিষয়ে দুটি হাদীস নিচে দেয়া হল:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى অর্থ: ইবনে উমার রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেণ, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করো, গোঁফ কাটো আর দাড়ি ছেড়ে দাও। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬২৫; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯৩। ইমাম তাবারী তার সনদে উদ্ধৃত করেছেন যে, পারস্যের সম্রাট রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট দুজন দূত প্রেরণ করেন:
دخلا على رسول اللهصلى الله عليه وسلم وقد حلقا لحاهما وأعفيا شواربهما فكره النظر إليهما ثم أقبل عليهما فقال من أمركما بهذا قالا أمرنا بهذا ربنا يعنيان كسرى فقال رسول الله لكن ربي قد أمرني بإعفاء لحيتي وقص شاربي
উক্ত দূতদ্বয়ের দাড়ি মুণ্ডিত ছিল ও গোঁফ বড় ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট প্রবেশ করলে তিনি তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে অপছন্দ করেন। এরপর তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমাদেরকে এরূপ করতে কে নির্দেশ দিয়েছে? তারা বলে, আমাদের প্রভু অর্থাৎ সম্রাট। তিনি বলেন, কিন্তু আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমার দাড়ি বড় করতে এবং গোঁফ কাটতে
তারীখুল উমামি ওয়াল মুলূক, ২/১৩৩। এই হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি রাসূল (সা.) দাড়ি কাটাকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন।
প্রশ্নঃ 2
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হচ্ছে মুসাফাহ দুই হাতে করতে হয় না এক হাতে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বিভিন্ন হাদীস থেকে মুসাফাহা বা হাত মেলানোর আদব ও সুন্নাত জানা যায়। যেমন, মুসাফাহার সময় আল্লাহর প্রশংসা করা, ইসতিগফার করা, দুআ করা ইত্যাদী। মুসাফাহা অবশ্যই ডান হাতে হতে হবে। ওযর ব অক্ষমতা ছাড়া বাম হাত মেলানো ইসলামী আদবের ঘোর পরিপন্থি। একে অপরের শুধু ডান হাত ধরবেন, না অপরের ডান হাতকে নিজের দুহাতের মধ্যে রাখবেন তা নিয়ে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, এক হাতে বা দুহাতে যে কোন ভাবে ডান হাত মেলালেই মুসাফাহা হবে। হাদীস শরীফে বারংবার হাত মেলানোর কথা এবং ডান হাত মেলানোর কথা বলা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, শুধু ডান হাত মেলালেই হবে। তবে ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেন যে, প্রসিদ্ধ দুজন তাবি-তাবিয়ী হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (মৃত্যু ১৭৯হি.) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (১৮১হি.) দু হাতে মুসাফাহ করেছেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত খুতবাতুল ইসলাম বইটির ৪২৬ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 3
আল্লাহ খুশি হলে তিনটি জিনিস প্রেরণ করেন বূষ্টি,মেহমান, ও কন্যসন্তান দেন। ---- সত্যতা কত টুকু?
22 Dec 2025
এটা কোন হাদীস নয়। তবে বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত। কুরআনে অনেক জায়গায় বৃষ্টিকে আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন বলা হয়েছে। কন্যা সন্তানের পিতা জান্নাতে যাবেন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। মেহমানদেরকে ইসলামে সম্মান দিতে বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ 4
বিড়ালের উচ্ছিষ্ট কি পাক? যদি কোন তরকারির ডিস থেকে বিড়াল ১ টুকরো মাছ উঠিয়ে খায় তবে কি ডিসের সব তরকারি নষ্ট হবে?
20 Dec 2025
হা বিড়ালের উচ্ছিষ্ঠ পাক,বিড়াল কোনকছিুতে মুখ দিলে বা খেলে তা নাপাক হয়ে যায় না বরং পাক থাকে। এব্যাপারে একটি হাদীসে এসেছে, আবু কাতাদাহ রাঃ বলেন: রাসূল সা. বলেছেন:
إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّمَا هِىَ مِنَ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ أَوِ الطَّوَّافَاتِ
র্অথঃ নিশ্চয় বিড়াল অপবিত্র নয়, সে তোমাদের নিকট বশেী বশেী বিচরনণকারী প্রাণীদের অন্তর্ভুক্ত। শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলছেন এবং তিরমিযী রহঃ হাসান সহী বলছেনে। তিরমিযী, আস সুনান, তাহকীক, আহমাদ শাকরে ও আলবানী-১/১৫৩ ;হাদীস নং-৯২,
ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন: অধকিাংশ সাহাবী, তাবেয়ী এবং শাফী রহঃ ও আহমাদ রহঃ সহ পরবর্তি উলামায়ে কেরাম এই মত পোষণ করছেনে। প্রগুক্ত। একবার দাউদ ইবনে সালেহ এর আম্মাকে দিয়ে তার মনিব হারিসা সহ (গোশত ও গম একত্রে মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত খাদ্য বিশেষ) আয়েশা (রা.) এর নিকট পাঠালেন। তিনি বলেন: আমি তাকে নামাযরত পেলাম। তিনি আমাকে তা রেখে দেওয়ার জন্য ইশারা করলেন। এরপর বিড়াল এসে তার থেকে খেলো । নামাজ শেষে আয়েশা (রা.) বিড়ালের মুখ দেয়া স্থান থেকে খেলেন এবং বললেন,, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় বিড়াল অপবিত্র নয়, সে তোমাদের নিকট বিচরনণকারী প্রাণীদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমি রাসুল (সা.) কে বিড়ালের ঝুটা মিশ্রিত পানি দ্বারা অযু করতে দেখেছি। আবু দাউদ-১/২৯; হাদীস নং-৭৬। আল্লামাহ ইবনে আব্দুল বার, শাইখ আলবানী সহ অন্যান্য আলেমগন হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আল্লামাহ ইবনে আব্দুল বার বলেন: ইরাক ও হিযাযের প্রায় সব তাবেঈ উক্ত মত ব্যক্ত করেছেন। পরবর্তি জমহুর উলামায়ে কেরাম ও ইমামগণ বিড়ালের ঝুটাকে পবিত্র বলেছেন। যেমন মালেক রহঃ, লাইছ রহঃ, আওযায়ী রহঃ, সুফিয়ান সাওরী রহঃ, শাফেয়ী রহঃ, আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহঃ ইত্যাদি। আলইসতিযকার-১/১৬৪। আবু হুরাইরা রাঃ অপর এক হাদীসে রাসূল সাঃ থেকে বর্ননা করেন, রাসূল সাঃ বলেন:
يُغْسَلُ الإِنَاءُ إِذَا وَلَغَ فِيهِ الْكَلْبُ سَبْعَ مَرَّاتٍ أُولاَهُنَّ أَوْ أُخْرَاهُنَّ بِالتُّرَابِ وَإِذَا وَلَغَتْ فِيهِ الْهِرَّةُ غُسِلَ مَرَّةً
অর্থঃ কুকুরে মুখ দিয়েছে এমন পাত্র সাতবার ধৌত করতে হবে,প্রথমবার বা (বর্ননাকারীর সন্দেহ) শেষবার মাটি দিয়ে। আর যেপাত্রে বিড়াল মুখ দিবে তা একবার ধৌত করতে হবে। ইমাম তিরমিযী রহঃ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন এবং শায়েখ আলবানী রহঃ সহীহ বলেছেন। তিরমিযী,আস-সুনান,তাহকীক,শায়েখ আলবানী রহঃ, ১/১৫১, হাদীস নং৯১। এহাদীসের আলোকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ বিড়ালের ঝুটাকে মাকরুহ বলেছেন। তবে অজু করলে তা যথেষ্ঠ হবে বলেও মত দিয়েছেন। ইবনে আব্দুল বার রহঃ বলেন:আবু হানীফা রহঃ এর বিপরীতে তার ছাত্ররা বিড়ালের ঝুটাকে পবিত্র বলেছেন। আল-ইসতিজকার,১/১৬৫, কিতাব,আত-তাহারাত, বাব,আত-তুহুর লিলউযুই।
প্রশ্নঃ 5
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত । এটা সহী কি না জানতে চাই?
20 Dec 2025
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য মুবারকবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোকপাত করা হল। الجنة تحت أقدام الأمهات মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত এখানে মায়ের মর্যাদা বুঝানো হয়েছে। তবে হাদীসটি উলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে এই শব্দে জাল বা বানোয়াট । রাসূল সাঃ থেকে সহীভাবে হাদীটি প্রমাণীত নয়। কারন এই হাদীসের সনদে মূসা ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আতা রয়েছে যিনি মিথ্যাবাদী এবং অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তি । তবে ভাবমর্ম সহী। পিতামাতার সাথে সদাচারন করার ব্যাপারে কোরআন এবং হাদীসে অসংখ্য জায়গায় স্পষ্টভাবে বারবার নির্দেশ এসেছে। যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম হাদীসটিকে জাল বলেছেন তাঁরা হলেন, হাফেজ ইবনে আদী রহঃ, ইমাম উকায়লী রহঃ, ইমাম আবু যুরআহ রহঃ, ইমাম দারেকুতনী রহঃ, ইবনে হিব্বান রহঃ, ইমাম যাহাবী রহঃ, ইবনে হাজার রহঃ, এবং আলবানী রহঃ হাদীসটি সিলসিলায়ে যয়ীফাহ এর ভিতর উল্লেখ করে হাদীসটিকে জাল বলেছেন। পিতামাতার সাথে সদাচারন করার ব্যাপারে কোরআনের বাণীঃ
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا
অর্থঃ আর তোমার প্রতিপালক ফয়সালা করেছেন যে, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতামাতার সাথে ভালব্যাবহার করবে। তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়েই বার্ধ্যকে পৌছে যায় তাহলে তাদের সামনে উফ শব্দটুকুও করবে না এবং তাদেরকে ধুমুক দিবে না । তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলবে। সূরা আল-ইসরা, আয়াত,২৩। এব্যাপারে হাদীসের বাণীঃ
حديث معاوية بن جاهمة أنه جاء النبي صلى الله عليه وسلم قال : يا رسول الله أردتُ أن أغزو ، وقد جئت أستشيرك فقال : هل لك أم ؟ قال : نعم ، قال : فالزمها ؛ فإن الجنة تحت رجليها .
অর্থঃ মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা রাঃ নামের এক ছাহাবী রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাঃ আমি যুদ্ধ করতে চাই। আর আমি আপনার কাছে পরামর্শ চাইতে এসেছি। তখন রাসূল সাঃ বললেন: তোমার মা কি বেঁচে আছেন। তখন ছাহাবীটি বললেন হা আছেন। তখন রাসূলে আকরাম সাঃ বললেন: তুমি তার কাছেই থেকে যাও। কেননা জান্নাত তো তাঁর পায়ের নিচে।নাসায়ী, তাবারানী, হাদীসের সনদ হাসান । তবে হাকিম রহঃ এবং যাহাবী রহঃ সহীহ বলেছেন আর মুনযিরী রহঃ স্বীকৃতি দিয়েছেন। অতএব কোরআন এবং হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী সবসময় পিতামাতার সাথে ভালব্যাবহার করা এবং তারা কষ্ট পায় এমন কথা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 6
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সকল মানুষ পরস্পর ভাই ভাইএই হাদিসটি সুনানে আবু দাউদ,আদাব অধ্যায়ে বা অন্য কোন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে আছে কিনা? একজন ডঃ স্যার একটি আর্টিকেল এ হাদিসটি এনেছেন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিচে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়া হল । জ্বী হ্যা ভাই, এমর্মে একটি হাদীস আছে যার আরবী উচ্চারণ হল - الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ । আর অর্থ হল মুসলমান মুসলমানের ভাই। হাদীসটি সকল নির্ভরযগ্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে। নিম্নে কিছু গ্রন্থের তালিকা দেয়া হল। ১) বুখারী, আস- সহীহ, হাদিস নং, ২৪৪২, অধ্যায়, কিতাবু বাদ্ইল ওহী, পরিচ্ছেদ, লা ইয়াযলিমুল মুসলিমু...
২) মুসলিম, আস-সহীহ, হাদিস নং, ৬৭০৬, অধ্যায়, আল বির ওসসিলাহ, পরিচ্ছেদ, তাহরীমু জুলমিল মুসলিম। ৩) আবু দাউদ, আস-সুনান, কিতাবুল আদাব, বাবুল মুওয়াখাত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৭০। (ভারতীয় সংস্করন)
৪) সুনানে তিরমিযী, তাহকীক, শাকের ও আলবানী। কিতাব - তাফসীরুল কোরআন,বাব-সুরা তাওবা। হাদীস নং ৩০৮৭।