প্রশ্নঃ 1
আসসালামু আলাইকুম। শায়খ! কেমন আছেন?শায়খ এক ভাই আমাকে প্রশ্ন করলেন,উনি সৌদিতে থাকে। ওখানে নাকি ছোট-বড় অনেক মহিলা বাসায় স্বামীর সামনে বা মাহরামদের সামনে প্যান্ট-শার্ট ও গেঞ্জি ইত্যাদি পড়ে। আবার বাজারেও নাকি বিক্রী করে। আমি জানতাম এগুলো হারাম,কারণ পুরুষের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উনি বলার পরে,আমি সৌদিতে থাকা প্রবাসী কিছু শায়খকে প্রশ্ন করার পরে উনারা এটাকে জায়িয ফতোয়া দিলেন?এখন শায়খ আপনার মত কী? যদি জায়িয হয়,তাহলে এটা কি পুরুষের সাথে সাদৃশ্য নয়?
25 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সাদৃশ্য নির্ভর করে ব্যবহারের উপরে। পাকিস্তানের নারী-পুরুষ সকলেই সেলোয়ার-কামীস পরেন। পার্থক্য ডিজাইন ও কালারে। ইউরোপের নারী-পুরুষ সকলেই প্যান্ট-শার্ট জাতীয় পোশাক পরেন। পার্থক্য ডিজানইন ও কাপড়ে। সৌদি আরবের মানুষেরাও আমাদের দেশের মতই মানুষ। ভাল মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।সৌদি আরবের আলিমগণও পুরুষালি পোশাক হারাম বলেন। তবে অনেকেই তা মানে না
প্রশ্নঃ 2
Is Interest of General Provident Fund halal?
25 Dec 2025
প্রভিডেন্ট ফান্ডের ইন্টারেস্ট অধিকাংশ আলেমের মতে সুদ নয়, হালাল। তবে কোন কোন আলেম হারাম বলেছেন। তবে হারাম নয় বলেই মনে হয়।
প্রশ্নঃ 3
if my hindu classmade says subhabijaya happy dewali etc than what can I do? if I am saying same to you though it is not from heart only for friendship, is it jayej?
25 Dec 2025
না, এর উত্তর কোন অযুহাতেই এভাবে দেয়া যাবে না। আপনি কিছুই বলবেন না অথবা বলবেন আপনি ভাল থাকুন এজাতীয় শব্দ।
প্রশ্নঃ 4
আস্সালামু আলাইকুম মুহতারাম । মহান আল্লাহর নিকট আপনার জন্য আমার মনের অন্তস্থল থেকে আপনার জন্য দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন আপনাকে নেক হায়াত দান করেন। আপনি যেন এই উম্মাতে মোহাম্মিদির পরকালিন মুক্তির জন্য আরো বেশি করে মেহনত করতে পারেন। অতপর…আমার কাছে আপনার রচিত প্রায় 18 টি কিতাব সহ অসংখ্য ভিডিও বক্তব্য সংগ্রহে রয়েছে যা থেকে আমি নিয়মিত অধ্যয়ন এবং শ্রবন করি। ফলশ্রুতিতে মহান আ্ল্লাহর অশেষ রহমতে তার একজন নেক বান্দা হওয়ার পথটা এখন আমার কাছে খুব পরিস্কার হয়েছে এবং হচ্ছে। তো তার ই ধারাবহিকতায়…. মোহতারামের নিকট আমার প্রশ্ন প্রসাব/পায়খানা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য আমরা পানি ও টিস্যু ব্যবহার করি। আমি অনেক বক্তার বক্তব্য থেকে জানতে পেরেছি যে একই সাথে পানি ও টিস্যু ব্যবহার করাটা সুন্নাত সম্মত নয়। আর দ্বিতীয়তঃ পানি থাকলে টিস্যু ব্যবহার না করাই উত্তম। তাদের অনেক কেই আপনি চেনেন। আর আমাকে বর্তমানে যে বিষয়টা খুব পেরেশানীতে রেখেছে সেটা হল প্রসাব করার পর আমরা টিস্যু নিয়ে যে হাটাহাটি করি এটাও নাকি সুন্নাত সম্মত নয়। তাহলে ব্যাক্তিগত ভা্বে আমার কাছে মনে হয় যে আমি যদি টিস্যু নিয়ে প্রসাবের পর হাটাহাটি করিও তারপর ও মনে হয় যেন কিছু নাপাকি আমার কাপড়ে লেগে যাচ্ছে। তো জনাব মেহেরবানি করে যদি আমাকে এই প্রসাব পায়খানা থেকে পবিত্র হওয়ার বিষেয়ে একটা সুন্নাত সম্মত দিকনির্দেশনা অবশ্যই বিস্তারিত দিতেন তাহলে এই অধম চির কৃতঞ্জ হতাম।
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। পানি ও টিস্যু উভয়টি একসাথে ব্যবহার করাই উত্তম। তবে যে কোন একটি দ্বারাই পবিত্রতা অর্জিত হবে। দলীলসহ জানতে আমাদের দেয়া ০০76 নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন। টিস্যু ধরে হাটাহাটি করার কোন দলীল পাওয়া যায় না। তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে হাটাহাটি করার দরকার নেই। আর আপনি যেটা লিখেছেন ব্যাক্তগিত ভ্বাে আমার কাছে মনে হয় যে আমি যদি টস্যিু নয়িে প্রসাবরে পর হাটাহাটি করওি তারপর ও মনে হয় যনে কছিু নাপাকি আমার কাপড়ে লেগে যাচ্ছে এটা শয়তানের ধোকা। আপনি টিস্যু এবং পানি উভয়টি ব্যবহার করুন। হাটাহাটি পরিহার করুন। ইনশাআল্লাহ আপনার পবিত্রতা যথায়থ ভাবে অর্যিত হবে।
প্রশ্নঃ 5
মুহতারাম, আস-সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: নামাজ শিক্ষার জন্য আমার একটি ভাল বই দরকার।
24 Dec 2025
আস-সুন্নাহ পালিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে, মা-শা-আল্লাহ। সংগ্রহ করুন।
প্রশ্নঃ 6
আসসালামু আলাইকুম! আমার প্রশ্নটা হলো আমি (ছেলে) তাকবিরে তাহরিমাতে হাত কতদূর উঠাবো? আপনি কোনটার পরামর্শ দেন? আর আপনি personally কতটুক পর্যন্ত হাত উঠান? জানালে উপকৃত হতাম! জাযাকাল্লাহ খাইর!!!
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তাকবীরে তাহরীমাতে হাত কাঁধ কিংবা কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। যে কোন একটি পদ্ধতিতে আমল করলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। নিচের হাদীসদুটি দেখুন: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِىُّ وَسَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِى شَيْبَةَ وَعَمْرٌو النَّاقِدُ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ وَابْنُ نُمَيْرٍ كُلُّهُمْ عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عُيَيْنَةَ – وَاللَّفْظُ لِيَحْيَى قَالَ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ – عَنِ الزُّهْرِىِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ مَنْكِبَيْهِ وَقَبْلَ أَنْ يَرْكَعَ وَإِذَا رَفَعَ مِنَ الرُّكُوعِ وَلاَ يَرْفَعُهُمَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ. অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখেছি, যখন তিনি সালাত শুরু করতেন তখন দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন…। সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৮৮৭। حَدَّثَنِى أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِىُّ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ نَصْرِ بْنِ عَاصِمٍ عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِىَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ فَقَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ. অর্থ: মালিক ইবনে হুয়াইরিস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. যখন তাকবীর দিতেন তখন দুই হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন…। সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৮৯১। উপরের হাদীসদ্বয় দ্বারা স্পষ্ট যে, যে কোন পদ্ধতিতে হাত উঠালেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। তবে কান পর্যন্ত উঠালে উভয় হাদীসের উপরই আমল হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ 7
কোন বক্তব্ব রাখার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাহ না আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিত? সুন্নার আলকে জানালে খুশি হব।
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। রাসূলুল্লাহ সা. হামাদ দ্বারা বক্তব্য শুরু করতেন মর্মে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত আছে। তাই হামদ দ্বারা বক্তব্য শুরু করা উচিত। নিচের হাদীসটি দেখুন: عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ ، فَيَخْطُبُ ، فَيَحْمَدُ اللَّهَ ، وَيُثْنِي عَلَيْهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ، وَيَقُولُ : مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِيَ لَهُ ، إِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ ، وَخَيْرَ الْ هَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ ، وَشَرَّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا ، وَكُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ ، وَكَانَ إِذَا ذَكَرَ السَّاعَةَ احْمَرَّتْ وَجْنَتَاهُ ، وَعَلاَ صَوْتُهُ ، وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ ، صَبَّحَكُمْ مَسَّاكُمْ . مَنْ تَرَكَ مَالاً فَلِلْوَرَثَةِ ، وَمَنْ تَرَكَ ضَيَاعًا أَوْ دَيْنًا فَعَلَيَّ وَإِلَيَّ ، وَأَنَا وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ. অর্থ: জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর হামদ ও ছানা করলেন…। মুসনাদু আহমাদ হাদীস নং ১৫০২৬। শায়খ শুয়াইব আর-নাউত বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। এই হাদীসে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাসূলুল্লাহ সা. হামাদ দ্বারা বক্তব্য শুরু করেছেন। আরো অনেকগুলো সহীহ হাদীসে এমনটি বর্ণিত আছে। দেখুন, সুনানু নাসায়ী, হাদীস নং ৩২৭৮; সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২০৪৫।
প্রশ্নঃ 8
সালাত বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন বইগুলো (বাংলা) দেখতি পারি? এ বিষয়ে আপনার বই কবে বাজারে আসবে?
24 Dec 2025
নিরপেক্ষ ভাবে লেখা বাংলা নামাযের বই চোখে পড়ে না। এই বিষয়ে আস-সুন্নাহ পালিকেশন্স থেকে একটি বই শীঘ্রই বাজারে আসবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ 9
আচ্ছালামু আলায়কুম । আমি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের জন্য হিসনুল মুসলিম, ডঃ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর রাহে বেলায়েত এবং ইসলাম হাউজ ডট কম থেকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) শিখানো মাসনূন দোয়া সমূহ প্রতিদিন সকল ফরজ নামাজের পর এবং সকাল সন্ধ্যায় করি । আমার সকল সমস্যায় হাজত নামাজ এবং ইস্তেখারা নামাজের মাধ্যমে এবং মাঝে মাঝে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পরে দোয়ার মাধ্যমে এবং সিয়ামরত অবস্থায় দোয়া করে দুনিয়ার সমস্যা গুলির সহজ সমাধানের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি দুনিয়ার সমস্যার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে যে দোয়াগুলি করছি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার বিপরীতটি ঘটছে । ডঃ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর নিকট আমার প্রশ্ন হচ্ছে এ অবস্হায় আমার কি করা উচিত? আর এ রকম সমস্যা গুলি কারো সাথে শেয়ার করলে গুনাহ হবে কিনা?
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সমস্যা কারো সাথে শেয়ার করলে গুনাহ হবে না। আর হতাশ না হয়ে দুআ করতে হবে। দুআ কবুলের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা দূর করতে হবে। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। পাশাপাশি জাগতিক পথে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্নঃ 10
আসসালামু আলায়কুম । শাইখ আসরের সলাত কখন পড়া উত্তম? আমার কাছে একটা সলাতের চিরস্হায়ী সময়সূচি আছে, সেখানে আসরের সলাত আমাদের দেশের আযানের প্রায় একঘণ্টা পূর্বে হয় এবং আমি একটা হাদিস পড়েছি, সেখানে ফজরের ও আসরের সলাত দ্রুত আদায় করতে বলা হয়েছে । এক্ষেত্রে আসরের সলাত কখন পড়ব?
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আসরের সালাত মসজিদে জামাআতের সাথে আদায় করবেন ।উল্লেখিত দুটি সময়ের যে কোন সময় আসরের সালাদ আদায় করা যায়। তবে সর্বাবস্থায় জামাআতের সাথে আদায় করা জরুরী।
প্রশ্নঃ 11
মুহতারাম, আস-সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: এলাকার মসজিদের ঈমাম যদি সবসময় হাতেগুনা কয়েকটা সূরা (৫-৬ টা) দিয়েই ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরান, ফরজ নামাজের পরে হাত তুলে মুনাজাত করান, আখেরি ওয়াক্তে নামাজ পরান এবং নামাজে দ্রুত রুকু ও সিজদা দেন তবে কি এই অজুহাতে জামাত ত্যাগ করা যাবে? বিশেষ করে সেই ব্যাক্তি তার বিপরিতে ইনফিরাদী নামাজ পরলে অধিক সুন্নতের কাছাকাছি হতে পারে।
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। না, এই অজুহাতে জামাআত ত্যাগ করা জায়েজ হবে না। ইমাম পাপী হলেও তার পিছনে নামায পড়তে হবে। জামাআতে নামায পড়া আবশ্যক।
যদি কোন মসজিদের নিয়মিত নিযুক্ত ইমাম পাপী হন তবে তার নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ পাপী হবেন। সাধারণ মুসল্লি যদি অন্য কোন ভাল ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের সুযোগ পান তাহলে ভাল, নইলে এরুপ পাপী ইমামের পিছনেই সালাত আদায় করতে হবে। নেককার ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কুফর-শিরক না পাওয়া পর্যন্ত কোনো অজুহাতে জামাআত বা জুমুআ ত্যাগ করা যাবে না। ঐক্য বজায় রেখে উত্তম ইমামের জন্য চেষ্টা করতে হবে। আর আপনি যে শিরকের কথা উল্লেখ করেছেন সম্ভবত তা এমন নয় যে, তার পিছনে সালাতই আদায় করা যাবে না। কারণ শিরকের অনেক পর্যায় আছে। সব শিরকই এই পর্যায়ের নয় যে, শিরক কারীর পিছনে সালাত আদায় করা যাবে না। প্রসিদ্ধ কালামবিদ ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী র. (৩২৪হি.) বলেন, ومن ديننا أن نصلي الجمعة والأعياد وسائر الصلوات والجماعات خلف كل بر وفاجر كما روى أن عبد الله بن عمر رضى الله عنهم كان يصلي خلف الحجاج অর্থ: আর আমাদের দীনের অন্যতম দিক যে, আমরা জুমুয়ার সালাত, ঈদগুলো এবং অন্যান্য সকল সালাত এবং জামাআত নেককার ও বদকারের পিছনে আদায় করি। যেমনিভাবে বর্ণিত আছে,আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পিছনে সালাত আদায় করতেন (মুসান্নিফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস নং ১৪১৭৫)। আল-ইবানাহ আন উসূলিদ দিয়ানাহ, ১/২০। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ৩৩৭-৩৭৯ এবং রাহে বেলায়াত পৃষ্ঠা ৫৬৩-৫৬৮
প্রশ্নঃ 12
মুহতারাম, আস-সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন:
১. কুরান তিলাওয়াত এর ক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত কারী আল আফাসী এর সূর (মাকামাত) ও ঊচ্ছারন (তাজবিদ) এর হুবুহু অনুকরন করা জাবে কিনা?
২. অন্যান্য মুসলিম দেশের কারিদের দেখি তেলাওয়াত এর সময় অর্থের দিকে খেয়াল করে আয়াত কে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পরেন যা আমাদের দেশের হাফিজ বা ক্বারীগণ করেন না… এক্ষেত্রে করণীয় কি?
৩. কুরান তেলাওয়াত এর নিয়ম, বিভিন্ন ইমামদের মতামত এবং মাকামাত-তাজবিদ এর উদ্ভাবন বিষয়ে কি কোন বাংলা বই আছে?
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সহীহ ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করে এমন যে কোন ক্বারীকে তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে অনুকরণ করেত কোন সমস্যা নেই। অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করা নিঃসন্দেহে উত্তম। তাজবীদের বিভিন্ন বই বাজারে পাওয়া যায় তবে শুধু বই দ্বারাই সহীহ তেলাওয়াত শেখা সম্ভব নয়, বিশুদ্ধ তেলাওয়াত একজন ভাল ক্বারী সাহেবের কাছ থেকে শিখতে হবে।
প্রশ্নঃ 13
১। আমার সালাম দেয়ার অভ্যাস আছে, এখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি এমন সময় একজন মানুষ আসতেছে আর অন্যপাশ দিয়ে আমার এক সমবয়সী যাচ্ছে। আমি লোকটাকে সালাম দিলাম। পরে আমার মনে উদয় হইলো ওই পোলা টা এখন কত ভাল কইবো আমারে,পরক্ষনেই আবার মাথায় আসলো হায় হায় এইটা আমি কি ভাবলাম। ২। আমি যখন নামাজ পড়ি একটু আস্তে ধিরেই পড়ি, যখন মনে হয় যে মসজিদে কেউ আমার নামাজ দেখে তখন আমার মনে হয় যে আরেকটু সুন্দর করি, সাথে সাথেই আবার মনে মনে বলি এইটা আমি কি ভাবলাম। তখন নামাজ একটু দ্রুত পড়ার চেষ্টা করি যেন লোক দেখানো টা প্রাধান্য না পায় অথবা স্বাভাবিক ভাবেই পড়তে থাকি। আবার পাশে কোন ছোট ভাইকে নিয়ে নামাজ পড়লে ভাবি আমার নামাজ তা একটু সুন্দর করি তাইলে ও আমার টা দেইখা শিখবে। সাথে সাথেই ভাবি এইটা মনে হয় ঠিক হবেনা। ৩। বাসায় কোরান পড়ার সময় যদি কেউ বাসায় আসে তখন ভাবি যে আরেকটু সুন্দর করে পড়ি পরে ভাবি না তাইলেত লোক দেখানো হয়ে যাবে। ৪। ওযু করার সময় তো রাসুলুল্লাহ (স) হাত পা মুখ কচলাইয়া ধুইতো তাই আমিও চেষ্টা করি কচলানোর। কিন্তু আমার পাশে কেউ থাকলে মনে হয় যে একটু বেশিক্ষণ কচলাই। পরে ভাবি ধুর এইসব চিন্তা আসে কেন খালি। এইরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে।
24 Dec 2025
এগুলো শয়তানের কুমন্ত্রনা। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। সব আমলই আপনি সুন্দর করে করার চেষ্টা করুন।আপনাকে আল্লাহ তায়ালা সঠিক পথে অবিচল রাখুন। মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করা বা সুন্দর করা যেমন অবৈধ, রিয়া হয়ে যাবে ভয়ে কোনো আমল বাদ দেওয়াও অবৈধ। বিশেষত যে কাজ প্রকাশ্যে করাই সুন্নাত সে কাজ প্রকাশ্যেই করবেন। যেমন সালাম প্রদান। রিয়ার ভয় শয়তানের ওয়াস ওয়াসা।
প্রশ্নঃ 14
আজ থেকে তিন বছর পূর্বে ইসমোতারা রানার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে বসে, কয়েক মাস পর পারিবারিকভাবে ও আনুষ্ঠানিকভাবে আবার ইসমোতারাকে নিয়ে যায়। কিছু দিন পর ইসমোতারার মা ও রানার মায়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর রানার মা ইসমোতারাকে তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়। রানাও কোন খোজ খবর নেয় না। ইসমোতারা নিজের ভরণ পোষন দাবি করে কোর্টে রানার বিরুদ্ধে কেস করে। বর্তমানে কেস চলছে,২ বছরেও কোন রায় হয় নি। এমতাবস্থায় অন্যত্র রিকাত নামের একটি ছেলের সাথে ইসমোতারা বিয়ে বসতে চাচ্ছে। যেহেতু রানার সাথে দীর্ঘ দিন যোগাযোগ নাই, তাই (৪/৫ মাস) Back Date এ রানাকে Divorce দিয়ে (চলতি তারিখে) রিকাতের সাথে বিয়ে রেজিস্ট্রী করে রাখলে (অবশ্য ৪/৫ মাস পরে কবুল পড়ানো হবে) ইসলামী শরীয়াতে বিবাহ হবে কি না?
24 Dec 2025
বিয়ের ক্ষেত্রে ইজাব-কবুল মূল শর্ত। আর তালাকপ্রাপ্তা নারীর ক্ষেত্রে এই ইজাব কবুলটি হতে হবে পূর্বের স্বামী কর্তৃক তালাক দেয়ার তিন মাসিক পর। ব্যাক ডেটে তালাক গ্রহনযোগ্য নয়। রেজিস্ট্রি ইসলামের দৃষ্টিতে জরুরি নয়, তবে নিরাপত্তার জন্য একটি ভাল বিষয়। সুতরাং ইসমোতারার জন্য এখন করণীয় হলো শরীয়ত মোতাবেক তালাক গ্রহন করা এবং তিন মাসিক পর ইজাব কবুলের মাধ্যমে অন্য কারো সাথে বিয়েতে বসা। ব্যাক ডেটে কিছু করাই মিথ্যা। আর ব্যাক ডেটে তালাক বা বিবাহ অবৈধ।
প্রশ্নঃ 15
স্যার, যদি ঈদের নামাজে ইমাম ২য় রাকাতে ঈদের নামাজের তাকবির না দিয়েই রুকু তে চলে যায়, এবং মুক্তাদিরা লোকমা দেওয়ার পরে তাকবির দেয়,তোহলে সে ক্ষেত্রে নামাজের কোন ক্ষতি হবে কিনা? আর ঈদের নামাজে সাহু সিজদা দেওয়া যাবে কিনা? জানতে চাই।
24 Dec 2025
বিষয়টি বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন: ঈদের সালাতে ভুল হলে কি সাহু সিজদাহ দিতে হবে?
প্রশ্নঃ 16
আসসালামু আলাইকুম। স্যার কেমন আছেন? আপনার সাইটের youtube channel এ দ্বীন প্রতিষ্টা এর ৪ পর্বের আলোচনা আছে। যা ইসলামিক টিভি তে টেলিকাস্ট হয়েছিল। অই প্রোগ্রামের চতুর্থ পর্বে ভিডিওতে ৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড পরে বলেছিলেন মক্কার অধিকাংশ মানুষ ইসলামে আসার পর রাস্ট্র প্রতিষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আর রাহিকুল মাখতুম এ আছে মক্কা রাষ্ট্র প্রতিষ্টার সময় অধিকাংশ মানুষ কাফের ছিল। এই ব্যাপার একটু ক্লিয়ার করবেন কী? আমি চিটাগং এ থাকি। আপনার সরাসরি যোগাযোগ করতে পারলে আরও ভাল হত। জাযাকাল্লাহ খায়ের। আসসালামু আলাইকুম
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। বিষয়টি জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন: মক্কার অধিকাংশ মানুষ ইসলাম আসার পর ইসলাম গ্রহণ করেছিল নাকি ইসলামী রাষ্ট প্রতিষ্ঠার পরও কাফিরদের
প্রশ্নঃ 17
রফউল ইয়াদাইন এর ব্যাপারে কিছু কথা জানতে চাই।
24 Dec 2025
রফউল ইয়াদাইনের অর্থ হাত উঠানো। বিভিন্ন হাদীসে রফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। কোনো হাদীসে একবার, কোনো হাদীসে তিনবার, কোনো হাদীসে চারবার, পাঁচবার রফউল ইয়াদাইন করার কথা আছে। সবগুলোই সহিহ। যেকোনো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করলেই সুন্নাহ অনুসরণ করা হবে। বিস্তারত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন। রফেউল ইয়াদাইন নিয়ে ঝগড়ার নিরসন ! !
প্রশ্নঃ 18
মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো, আমাদের একটি হাফেজি মাদরাসা আছে, এখানকার বেশির ভাগ ছাত্রই এতিম। এটি বিভিন্ন কালেকশন, সাদাতাহ, মাদরাসার দোকান ও আমাদের অর্থ নৈতিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং থাকার কারনে সাদাকার টাকা সহ অন্যান্য জিনিস জমা হয়। এক্ষেত্রে সাদাকার অর্থ মাদরাসা ও এতিমদের জন্য কোন কোন খাতে ব্যয় করা যাবে? বিস্তারিত জানাবেন।
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। যাকাত, ফিৎরা, কুরবানীর চামড়া, মান্নতের টাকা অর্থাৎ যে গুলো গরীবদের হক সেগুলো তাদের জন্যই ব্যায় করতে হবে। যেমন তাদের খাবার, পোশাক, বইপত্র ক্রয় ইত্যাদি। এই টাকা দিয়ে মাদ্রাসার উন্নয়নমূলক কোন কাজ করা যাবে না। দোকানভাড়ার টাকা এবং অন্যান্য সাধারণ দানের টাকা দিয়ে মাদ্রাসার উন্নয়নমূলক কাজ (যেমন, ঘর-বাড়ি তৈরী) ও শিক্ষকদের বেতন দেয়া যাবে।
প্রশ্নঃ 19
মুহতারাম, আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: ইসলাম সম্পর্কে জানা এবং হিদায়েত এর পথে চলার ক্ষেত্রে জাহাঙ্গির স্যার এর ভুমিকা আমার জীবনে ব্যাপক। স্যার এর সবগুল বই আমার সংগ্রহে আছে এবং আমি তা নিয়মিত অধ্যায়ণ করি। অতপর আমার জানার বিষয় হল:
১. ঈসলামের ইতিহাস সম্পর্কিত সবচেয়ে সহিহ বই কোনটি কোনটি?ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ঈসলামের ঈতিহাস মাওলানা আকবার শাহ খান নাজিদাবাদি বইটি কি পরা যাবে?
২. আমি PRIVATE JOB করি, বাছর দুই-তিনেক আগে নিয়ত করি যে জীবনের শেষদিন পুর্যন্ত কুরান হিফজ করতে থাকব….সেমতে চেষ্টা করে প্রাই ৬০ টি সুরা মুখস্ত করেছি (আলহামদুলিল্লাহ). কিন্তু যেহেতু আমি তহাজ্জুদ আদায় করকে পারি না এবং হিফজ করতে যথেষ্ঠ সময় লাগে, তাই এখন হিফজ মনে রাখা কঠি হয়ে গেছে। ফলে আমাকে নতুন হিফজ করার চেয়ে পুরাতনগুলো রিভাইজ করতে বেশি সময় দিতে হয়…এই অবস্থায় আমার করণীয় কি?
(আমার বয়স ৩২, আমি বিবাহিত এবং আমার ১টি ছেলে আছে যর বয়স ৭ বছর বাক্তিগত জীবনে দ্বীন-ইসলামপালনের ক্ষেত্রে পরামর্শ দিবেন
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ১। হ্যাঁ, উক্ত বইটি পাঠ করা যেতে পারে। ২। আপনি কুরআন যতটুকু মুখস্ত করেছেন তা ভালভাবে মুখস্ত রাখুন। আর বাকিটুকু আপনার সামর্থনাযুয়ী হিফজ করার চেষ্টা করুন। এরপরও যদি কোন অংশ ভুলে যান তাহলে আশা করা যাই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন।
প্রশ্নঃ 20
আমাদের সমাজে যেসব এনজিও বা বীমা কোমপানীগুলো ছড়িয়ে রয়েছে তাদের কাছ থেকে টাকা ঊঠানো বা সনঞচয়ী হিসাবে টাকা জমা রাখা এবং তাদের নীতি অনুসারে যেকোন আরথিক লেনদেন কি ইসলামি শরিয়ত কি অনুমোদন দেয়? জানালে খুবই উপকার হয়।
24 Dec 2025
সুদ ভিত্তিক কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন হারাম। সুতরাং সুদ ভিত্তিক কোন এনজিও বা বীমা কোম্পানীর সাথে আপনি উক্ত আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না।
প্রশ্নঃ 21
আমাদের সমাজে যেসব এনজিও বা বীমা কোমপানীগুলো ছড়িয়ে রয়েছে তাদের কাছ থেকে টাকা ঊঠানো বা সনঞচয়ী হিসাবে টাকা জমা রাখা এবং তাদের নীতি অনুসারে যেকোন আরথিক লেনদেন কি ইসলামি শরিয়ত কি অনুমোদন দেয়? জানালে খুবই উপকার হয়।
24 Dec 2025
সুদ ভিত্তিক কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন হারাম। সুতরাং সুদ ভিত্তিক কোন এনজিও বা বীমা কোম্পানীর সাথে আপনি উক্ত আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না।
প্রশ্নঃ 22
আস-সালামু আলাইকুম। মহিলারা কি বাবা মা বা সজন্ দের কবর জিয়ারাত করতে পারবে? নাবি (স) এর কবর জিয়ারাত করতে পারবে?
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। অধিকাংশ আলেম ও ফকীহর মত হলো, মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করার অনুমতি নেই। তবে অনেক আলেম বলেছেন, দুয়েক বার করা জায়েজ আছে। দেখুন, আল-ফিকহিয়্যাতুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদিল্লাতুহু, ২/৬৮০; আলমাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ; ২৪/৪৪; হাশিয়াতু রদ্দিল মুখতার, ২/৬২৬। যারা বলেন অনুমতি নেই তাদের দলীল নিম্নের হাদীস: حدثنا قتيبة حدثنا أبو عوانة عن عمر بن أبي سلمة عن أبيه عن أبي هريرة : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم لعن زوارات القبور অথ: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কবর জিয়ারতকারী মহিলাদের লানত করেছেন। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ১০৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৪৩৩। । হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন, শায়খ শুয়াইব আর নাউত এবং শায়খ আলাবনী হাসান বলেছেন। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে অধিকাংশ আলেম ও ফকীহ বলেন, মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়েজ নেই। তবে কোন কোন ফকীহ বৈধতা দিয়েছেন। তাদের দলীল হলো: হযরত আশো রা. এর ঘরে একবার রাসূলুল্লাহ সা. রাত্রে ছিলেন। মধ্যরাতে হঠাৎ তিনি দেখলেন রাসূলুল্লাহ সা. ঘরে নেই, তিনি তাকে কবর স্থানে পেলেন। সেখানে এক পর্যায়ে হযরত আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সা. কে বললেন, كَيْفَ أَقُولُ لَهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ্র قُولِى السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ অর্থ: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তাদের (কবরবাসীদের) কি বলব? তখন তিনি বললেন,বল! মূমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পরবর্তী এবং পূববর্তীদেও উপর আল্লাহ দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে যুক্ত হব। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩০১। প্রথমে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করার পর এই বিষয়ে ইমাম তিরমিযী বলেন, وقد رأى بعض أهل العلم أن هذا كان قبل أن يرخص النبي صلى الله عليه و سلم في زيارة القبور فلما رخص دخل في رخصته الرجال والنساء وقال بعضهم إنما كرهت زيارة القبور للنساء لقلة صبرهن وكثرة جزعهن অর্থ: একদল আলেম মনে করেন যে, এটা ছিল নবীয়্যূল্লাহ সা. কর্তৃক মানুষেরকে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেয়ার পূর্বে। যখন তিনি অনুমতি দিয়েছেন তখন পুরুষ মহিলা উভয়েই এই হুকুমের অন্তুভূক্ত হবে। আরেকদল আলেম বলেন, মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা মাকরুহ হবে, কেননা তাদের ধৈর্য্য কম এবং অস্থিরতা বেশী। সুনানু তিরমিযী, ১০৫৬ নং হাদীসের আলোচনা। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ সা. এর কবর জিয়ারত করা সবার মতে জায়েজ আছে। শেষ কথা: মহিলাদের মন নরম, তাদের ধৈর্য্য কম. তারা অল্পতেই কান্নকাটি শুরু করে দেয় সুতরাং তাদের কবর জিয়ারত না করতে যাওয়াটা নিঃসন্দেহ উত্তম। মালেকী মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলিম আল্লামা ইবনে আব্দুল বার বলেন, ولا خلاف في إباحة زيارة القبور للرجال وكراهيتها للنساء অর্থ: পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত বৈধ হওয়ার এবং মহিলাদের জন্য মাকরুহ হওয়ার ব্যপারে কোন মতবিরোধ নেই। দেখুন: আল-ইসতিযকার, ১/১৮৪।
প্রশ্নঃ 23
আসসালামু আলাইকুম! ঊস্তাদ! আমি আপনার নিয়মিত শ্রোতা এবং আপনার বইগুলির একজন পাঠক। আমি আপনার খুতবা সম্পর্কিত বইটি পড়ছিলম। মাশাল্লাহ এখানে আপনি গভির পর্জালচোনা করেছেন। আমার প্রশ্ন হল মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়ার অভিমতটি বাংলাদেশ এর অনেক আলেম সহজ ভাবে মেনে নিতে চাবেন না। যেমন আমি http://ahlehaqmedia.com/ আহ্লেহাক্মেদিয়া। চম এ খুতবা বিশৈয়ক পস্ত গুল দেখছিলাম। ষেখানে আলেম গন এর কতর বিরধিতা করেছেন। এবং তাদের সপক্কে অনেক জুক্তি দেখিয়েছেন। ঊস্তাধ! এখন আমার প্রস্ন হচ্ছে জে ঐক্ক রক্ষার খেত্রে কি এই বিসৈ নিয়া আমি তাদের সাথে আলছনা আরিয়ে জেতে পার্ব? জাযাকাল্লাহ খাইর!
24 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ঐক্য রক্ষার খাতিরে আলোচনা করতে গিয়ে আপনি ঐক্য রক্ষা করতে পারবেন বলে মনে হয় না। সুতরাং এই সব থেকে আপনার বিরত থাকায় উচিৎ।
প্রশ্নঃ 24
আসসালামু আলাইকুম আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, যে সকল মেয়েদের সময় মত বিয়ে হচ্ছে না তাদের জন্য সুন্নত সম্মত কি কি ইবাদাত রয়েছে? যা থেকে তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে ।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সকল ফরজ নামাযের পর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে, কারণ এই সময় দোয়া কবুল হয় বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। সকাল বিকাল যে সব মাসসনুন দোয়া আছে সেগুলো পাঠ করা যায়। । রাহে বেলায়াত গ্রন্থেও ১৮৮ ও ১৯২ নং দোয়া পড়বেন। সহীহ মাসনুন ওযীফা গ্রন্থে সকাল বিকালের মাসনুন দোয়াগুলো সহজে পাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সকল বিপদাপদ থেকে নিরাপদে রাখুন।
প্রশ্নঃ 25
আস-সালামূ আলাইকুম, মাননীয় মহতারামের কাছে আমি একটি সমস্যার সমাধানের জন্য পরামর্শ চাছিছ,আমার সমস্যাটা হচেছ আমি আগে ঠিক মত নামাজ রোজা এবং ইসলামী নিয়ম নীতি ঠিক মত মানতাম না,এখন আল্লাহতালার রহমতে নামাজ রোজা এবং ইসলামী সকল নিয়মনীতি মেনেচলার চেষ্টা করতেছি,এখন আমার ইসএী এইসব পছনদ না আমার মুখে দাড়ি তার পছনদ না, এখন সে আমার কাছে তালাক পয্নতো চায়,আমার দুইটি ছেলে মেয়ে আছে,আর আমি থাকি সোদিতে। কি করিবো আমার মাথায় কোন কাজ করিতেছে না,আমাকে কোরআন এবং হাদীছ এর আলোকে একটা পরামশ্ দিলে খুব উপকৃত হবো। জেজাকআললাহ খায়ের।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। দাঁড়ি কাটা হারাম। কোন অবস্থাতেই দাঁড়ি কাটা জায়েজ নয়। আপনি আপনার স্ত্রীকে ইসলামের হুকুম আহকাম বুঝাতে থাকুন। প্রয়োজনে এমনও বলতে পারেন যে, দাঁড়ি কাটতে পারি তবে আমি অন্য মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখব। মোটকথা, আপনি কৌশলে বুঝাতে থাকুন। কোন অবস্থাতেই স্ত্রীর কথা শুনে দাঁড়ি কাটা উচিৎ হবে না।
প্রশ্নঃ 26
মুহতারাম, আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: শিশুরা অসুস্থ হলে কী দুআ পড়তে হয়?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য বিভিন্ন দোয়া হাদীস শরীফে আছে। বিস্তারিত জানতে রাহে বেলায়াত নতুন সংস্করনের ২২৮ নং যিকির থেকে২৩৯ নং যিকির পর্যন্ত দেখুন। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুন।
প্রশ্নঃ 27
আস সালামু আলাইকুম। কবর জিয়ারতের সময় কুরাআন তিলাওয়াত করা জায়েজ কিনা? আমরা বাবা মার কবর জিয়ারতে গিয়ে কি পরব? সুন্নার আলোকে জানতে চাই। আল্লাহ আপনাকে উত্তম যাযা দান করুন। আমিন
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কবর জিয়ারত সময় সালাম দিতে হবে। তবে সাহাবীরা কিংবা রাসূলুল্লাহ সা. কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তেলাওয়াত করেছেন বলে কোন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। কবর জিয়ারতের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি জানতে আমাদের দেয়া ৭৭ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন। কবর জিয়ারতের পাঁচটি দোয়া সহ বিস্তারিত জানতে দেখুন: রাহে বেলায়াত গ্রন্থের ৬০৬-৬১২ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 28
এখনকার ফুরফুরা শরীফ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
23 Dec 2025
ফুরফুরার প্রথম ও মূল পীর আবু বকর সিদ্দিকী রহি. মারা গেছেন ১৯৩৯ ইং সনে। এরপর তার সন্তানগণ বহু পথ ও মতে বিভক্ত হয়েছেন। তাঁর বড় ছেলে ছিলেন আব্দুল হাই সিদ্দিকী। তিনি ১৯৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বড় ছেলে ছিলেন আব্দুল কাহহার সিদ্দীকী। তিনি ২০০৬ সালে মৃত্যু বরণ করেন। আব্দুল কাহ্হার সিদ্দীকী শিরক-বিদআতের কঠোর বিরোধী ছিলেন। তার দরবার ও ভক্তদের মধ্য থেকে দিন শিরক বিদআত উৎখাতের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেন। তাঁর ছেলে আব্দুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী পিতার স্থলে কাজ করছেন। তিনিও শিরক বিদআত থেকে মুক্ত থাকতে সদা-সচেষ্ট। তবে এর পাশাপাশি বর্তমানের ফুরফুরার মূল পীর আবু বকর সিদ্দিকীর বংশধরদের মধ্যে অনেকেই বিদআতের পক্ষে সোচ্চার। বিস্তারিত জানতে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখিত ফুরফুরার পীর আবু জাফর সিদ্দিকী রচিত আল মাউযুআত বইটি পড়ন।
প্রশ্নঃ 29
আসসালামুয়ালিকুম। আমার প্রস্নঃ বাজারে আহ্ লে হাদিসের প্রতি ওপেন চেলেঞ্জ নামে একটি বই পাওয়া যায়। তাতে এক্ টা হাদিসের উদ্রিতি দেয়া আছেঃ জাবের ইবনে সামুরা (রা) থেকে বরনিত, রাসুল (সা) সাহাবা কেরামদের রাফাউল ইয়াদাঈন করতে দেখে বললেন, আমি তোমাদেরকে রাফাউল ইয়াদাঈন করতে দেখছি। মনে হচ্ছে যেন তোমাদের হাত গুলো দুস্ট ঘোড়ার লেজ এর মত। নামাজে শান্ত থাক। (মুসলিম) আমার প্রশ্নঃ এই হাদিস কি রুকু সিজদায় রাফাউল ইয়াদাঈন এর কথা বলা হয়েছে? না কি অন্ন কিছু?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সাহাবী জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে উক্ত হাদীসের কয়েকটি মতন (বর্ণনা ) রয়েছে। নিচে দুটি বর্ণনা দেওয়া হল। এখান থেকে বিষয়টি আমাদের জন্য স্পষ্ট হবে। ১। عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ ্র مَا لِى أَرَاكُمْ رَافِعِى أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ اسْكُنُوا فِى الصَّلاَةِ অর্থ: জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের কাছে আসলেন। এরপর বললেন, কি হলো, আমি তোমাদের দেখছি তোমরা দুষ্ট ঘোড়ার লেজের মত তোমাদের হাতগুলো উঠাচ্ছ, নামাযে শান্ত থাক। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৬। ২। عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَكُنَّا إِذَا سَلَّمْنَا قُلْنَا بِأَيْدِينَا السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ فَنَظَرَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ ্র مَا شَأْنُكُمْ تُشِيرُونَ بِأَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمُسٍ إِذَا سَلَّمَ أَحَدُكُمْ فَلْيَلْتَفِتْ إِلَى صَاحِبِهِ وَلاَ يُومِئْ بِيَدِهِ অর্থ: জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে নামায পড়ছিলাম। যখন আমরা সালাম ফিরালাম তখন আমরা আমাদের হাত দ্বারা ইশারা করে বললাম, আস-সালামু আলাইকুম, আস-সালামু আলাইকুম। তখন রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাদের কি হল! হাত দ্বারা ইশারা করছ, যেন দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। যখন তোমাদের কেউ সালাম ফিরাবে তখন তার পাশের লোকের দিকে তাকাবে, হাত দ্বারা ইশারা করবে না। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ৯৯৯। উপরুক্ত হাদীস দুটি দ্বারা স্পষ্ট যে, নামাযে সালাম ফিরানোর সময় সাহাবীরা হাত উঠাতেন আর রাসূলুল্লাহ সা. তা করতে নিষেধ করেছেন। তবে রুকু সিজদাহতে রাফউল ইয়াদাইন করা না করা উভয় ক্ষেত্রেই সহীহ হাদীস আছে। এই নিয়ে বিতর্ক ত্যাগ করা উচিত।
প্রশ্নঃ 30
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হল কারো কিছু হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে, কে চুরি করেছে সেটা জানার জন্ন বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্রের আশ্রয় নেয়া হয়, স্মভবত এগুলোতে জিনদের ব্যবহার করা হয়। এটা কি শরীয়ত সম্মত এবং এই তন্ত্র-মন্ত্রে কি বিশ্বাস করা যাবে? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। বিচারের ক্ষেত্রে এই সব তন্ত্র-মন্ত্রের ফয়সালার কোন স্থান নেই। আর এভাবে চোর ধরা তথা গায়েবের খবর জানার চেষ্টা করা সে যেভাবেই হোক, কুরআনের আয়াত দ্বারা হোক কিংবা অন্য কোন মন্ত্র দ্বারা হোক সম্পূর্ণ হারাম ও কুফুরী কাজ। এছাড়াও অনেক সময় এটা মানুষের মাঝে ঝগড়া-ফাসাদের কারণ হয়, তাই এই এই কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকা আমাদের জন্য অপরিহার্য।
প্রশ্নঃ 31
মুহতারাম আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: নজর থেকে বাচার জন্য কোন জিনিসের মাধ্যমে শিশূদের ঝাড়-র্ফুক করা, যেমন—শুকনা মরিচ, কপালে কাল টিপ দেয়া — এ ব্যাপারে ইসলামে কোন বাধা আছে কি? থাকলে হাদিস এর রেফারেঞ্চ সহ জান্তে চাই।
23 Dec 2025
বদ-নযর থেকে শিশুকে বাঁচানোর জন্য সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ে ঝাড়ফুঁক করতে পারেন। এছাড়াও আরো কিছু দোয়া হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন রাহে বেলায়াত (মার্চ-২০১৩ইং সংস্করন), শেষ অধ্যায়। কপালে টিপ পরার মাধ্যমে শিশুর কোনই উপকার হয় না। এটা একটি কুসংস্কার। এটা পরিহার করতে হবে।
প্রশ্নঃ 32
আস্সালামু আলাইকুম, কেমন আছেন, একটি ব্লগে দেখলাম একজন চরম ভাবে রাসুলের হাদিসের প্রতি ওনিহা সেই বলছে কোরআনে সালাতের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোন ওক্তে কয় রাকাত পড়তে হবে তা নেই এমন কি সে বলে তোমরা যে হাদিসের কথা বলো তাতেও নেই সুতরাং নিজের ইচ্ছা মাপিক রাকাত পড়া যাবে ওক্ত সমূহে। । এমন চরম অনিহা পুর্ণ কথা মানতে পারছি না তাই অনুগ্রহ করে কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল গুলো দিয়ে উপকৃত করুন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকআত সংখা উল্লেখ আছে। ইসলাম সম্পর্কে চরম অজ্ঞ কিংবা ইসলামের চরম শত্রু, এমন লোকেরাই কেবল এধরনের মন্তব্য করতে পারে। নিচে সংক্ষেপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলো: নিচের উল্লেখিত এই হাদীস দ্বারা আমারা জানতে পারি যে, ফজরের নামায দুই রাকআত, জোহর, আসর, ঈশা চার রাকআত আর মাগরিব তিন রাকআত। হাদীসটি হলো: عَنْ عَائِشَةَ ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قَالَتْ : كَانَ أَوَّلَ مَا افْتُرِضَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلاَةُ : رَكْعَتَانِ رَكْعَتَانِ ، إِلاَّ الْمَغْرِبَ ، فَإِنَّهَا كَانَتْ ثَلاَثًا ، ثُمَّ أَتَمَّ اللَّهُ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْعِشَاءَ الآخِرَةَ أَرْبَعًا فِي الْحَضَرِ ، وَأَقَرَّ الصَّلاَةَ عَلَى فَرْضِهَا الأَوَّلِ فِي السَّفَرِ تعليق شعيب الأرنؤوط : إسناده حسن من أجل ابن إسحاق অর্থ: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর প্রথমে দুই দুই রাকআত করে নামায ফরয হয়েছিল, তবে মাগরিব তিন রাকআত ছিল। এরপর আল্লাহ তায়ালা সাধারণ সময়ে (সফর বাদে) জোহর, আসর ও ঈশা চার রাকআত পূর্ণ করে দেন। আর সফর অবস্থায় পূর্বের বিধান বহাল রাখলেন। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৬৩৮১। শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আরো কিছু হাদীস নিচে উল্লেখ করা হলো যে সব হাদীস থেকে আমরা বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাযের রাকআত সংখা জানতে পারি: عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فِى الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ فِى الْحَضَرِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ وَصَلَّيْتُ مَعَهُ فِى السَّفَرِ الظُّهْرَ رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ وَالْعَصْرَ رَكْعَتَيْنِ وَلَمْ يُصَلِّ بَعْدَهَا شَيْئًا وَالْمَغْرِبَ فِى الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ سَوَاءً ثَلاَثَ رَكَعَاتٍ لاَ تَنْقُصُ فِى الْحَضَرِ وَلاَ فِى السَّفَرِ وَهِىَ وِتْرُ النَّهَارِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ. قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সফরে এবং সাধারণ সময়ে নামায পড়েছি। আমি তার সাথে সাধারণ অবস্থায় যোহর চার রাকআত পড়েছি। এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। আমি তাঁর সাথে সফরে জোহর দুই রাকআত পড়েছি এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। এরপর আর কিছু তিনি কোন নামায পড়েন নি। আর মাগরিব সফর ও সাধারণ উভয় অবস্থায় তিন রাকআত পড়েছি। সফরে এবং সাধারণ অবস্থা কোন সময়ই তা কম করা হয় না আর সেটা হলো দিনের বিতর এবং তারপর দুই রাকআত পড়েছি। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ৫৫৫। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম জোহরের নামায চার রাকআত আর মাগরিবের নামায তিন রাকআত। আর এই নামাযেরগুলোর পরে দু রাকআত করে সুন্নাত আছে। عَنْ قَيْسِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ رَأَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- رَجُلاً يُصَلِّى بَعْدَ صَلاَةِ الصُّبْحِ رَكْعَتَيْنِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- صَلاَةُ الصُّبْحِ رَكْعَتَانِ فَقَالَ الرَّجُلُ إِنِّى لَمْ أَكُنْ صَلَّيْتُ الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ قَبْلَهُمَا فَصَلَّيْتُهُمَا الآنَ. فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- অর্থ: কাইস ইবনে আমর বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. একজন লোককে দেখলেন, ফজরের নমাযের পর দুই রাকআত নামায পড়ছে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ফজরের নামায তো দুই রাকআত। তখন লোকটি বলল, আমি এর পূর্বের দুই রাকআত পড়িনি তাই এখন তা পড়ছি। তখন রাসূলুল্লাহ সা. চুপ থাকলেন। সুনানু আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৬৯। হাদীসটি সহীহ। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম ফজরের নামায দুই রাকআত। عَنْ أَنَسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا وَالْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ وَسَمِعْتُهُمْ يَصْرُخُونَ بِهِمَا جَمِيعًا অর্থ: আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (বিদায় হজ্জের সফরের সময়) রাসূল সা. মদিনায় যোহর সালাত চার রাকআত আদায় করেন। (সফর শুরু করে) যুল হুলাইফা পৌঁছানোর পর তথায় আসর সালাত (কসর হিসেবে) দু রাকআত আদায় করেন। আমি শুনলাম সাহাবীগণ হজ্জ ও উমরার জন্য একত্রে (কিরান হজ্জের) তালবিয়া পড়ছেন চিৎকার করে। । সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪৮। উক্ত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম জোহর নামায চার রাকআত ও আসরের নামায সফর অবস্থায় দুই রাকআত। এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে নামাযের রাকআত সংখা নিয়ে অনেক হাদীস উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য এখানে আমরা পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামায সমূহের রাকআত সংখা নিয়ে আলোচনা করেছি। সুন্নত নামায নিয়ে নয়। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কোন ওয়াক্তে নামায কত রাকআত তা হাদীসে বিষদভাবে বর্ণিত আছে। এছাড়াও এটা রাসূলুল্লাহ সা. থেকে এখন পর্যন্ত উম্মতের কর্মধারা দ্বারা প্রমানিত। সুতরাং কারো কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই।
প্রশ্নঃ 33
ইসলামী নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি কি? হযরত উমর (রা), হযরত ওসমান(রা), হযরত আলী (রা) কোন পদ্ধতিতে খলিফা নির্বাচিত হয়ে ছিল? দুটি প্রশ্নের উত্তর কামনা করছি।
23 Dec 2025
রাসূলুল্লাহ সা.-এর আগমনের সময় সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ছিল মূলত বংশতান্ত্রিক। রাষ্ট্রের মালিক রাজা। তার অন্যান্য সম্পদের মতই রাষ্ট্রের মালিকানাও লাভ করবে তার বংশধরেরা। রাজ্যের সকল সম্পদ-এর মত জনগণও রাজার মালিকানাধীন। রাজা নির্বাচন বা রাজ্যপরিচালনা বিষয়ে তাদের কোনো মতামত প্রকাশের সুযোগ বা অধিকার নেই। রাসূলুল্লাহ সা. সর্বপ্রথম একটি আধুনিক জনগণতান্ত্রিক পরামর্শ-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এ ব্যবস্থার দুটি বিশেষ দিক ছিল: (১) রাজা ও প্রজার সম্পর্ক মালিক ও অধীনস্থের নয়, বরং মালিক ও ম্যানেজারের। তবে মালিক রাজা নন। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। রাজা তাদের খলীফা বা প্রতিনিধি বা ম্যানেজার হিসেবে তা পরিচালনা করবেন। জনগণই তাকে মনোনিত করবেন এবং জনগণ তাকে সংশোধন বা অপসারন করবেন। (২) রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ করা একটি জাগতিক কর্ম এবং তা জনগণের কর্ম। জনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে তা সম্পন্ন হবে। পরামর্শের ধরন নির্ধারিত নয়। যুগ, দেশ ও জাতির অবস্থা অনুসারে তা পরিবর্তিত হতে পারে। ইসলামী ব্যবস্থায় পূর্ববর্তী শাসক কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে বিষয়টি জনগণের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিতে পারেন। অথবা জনগণের পরামর্শ ও স্বীকৃতির ভিত্তিতে যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দিতে পারেন। সবচেয়ে বেশি যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয় নি; কারণ সবচেয়ে যোগ্য নির্ণয়ে সমাজে অকারণ সংঘাত তৈরি করে। ইসলামে জনগণের পরামর্শ ও স্বীকৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ ও স্বীকৃতি থাকলে নিজ পুত্র বা বংশের কাউকে পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দিতে কোনোভাবে নিষেধ করা হয় নি। মূলত বিষয়টি দেশ, কাল ও সমাজের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এ ব্যবস্থার আওতায় রাসূলুল্লাহ সা. কাউকে মনোনিত না করে উম্মাতকে সরাসরি নির্বাচনের মুখোমুখি রেখে যান। আবূ বকর (রা) নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শক্রমে উমারকে (রা) পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে যান। উমার (রা) ৬ জনের একটি কমিটিকে মনোনয়ন দেন, যারা জনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে তাঁদের মধ্য থেকে উসমানকে (রা) মনোনয়ন দেন। উসমান (রা)-এর শাহাদতের পরে মদীনার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ পরামর্শের মাধ্যমে আলী (রা)-কে শাসক মনোনিত করেন। আলী (রা) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর পুত্র হাসান (রা)-কে পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দেন।
প্রশ্নঃ 34
video lecture on aqida
23 Dec 2025
আকীদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে স্যারের লিখিত বই ইসলামী আকীদা, আল-ফিকহুল আকবার ও এ্হইয়াউস সুনান বইগুলো পড়ুন। এই বর্তমানে আকীদা ও এ্হইয়াউস সুনান এর উপর স্যারের ক্লাস চলছে। আপনি আমাদের চ্যানেলে গিয়ে ভিডিওগুলো দেখতে পারেন। https://www.youtube.com/user/SunnahTrust“””””
প্রশ্নঃ 35
আসসালামু আলায়কুম। দাড়ি না রাখলে তার দিকে রসুলুল্লাহ সঃ ঘৃনাভরে তাকাতেন না, এমন কোন দলিল আছে কি? থাকলে দয়া করে ইনবক্সে জানাবেন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ, এই বিষয়টি একটি হাদীস থেকে বুঝা যায। নিচে এই বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
রাসূলুল্লাহ সা. নিজে দাড়ি রেখেছেন। দাড়ি রাখতে আদেশ করেছেন। দাড়ি কাটতে নিষেধ করেছেন। এবং দাড়িবিহীন মানুষকে তিনি অপছন্দ করতেন। এই বিষয়ে দুটি হাদীস নিচে দেয়া হল:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى অর্থ: ইবনে উমার রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেণ, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করো, গোঁফ কাটো আর দাড়ি ছেড়ে দাও। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬২৫; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯৩। ইমাম তাবারী তার সনদে উদ্ধৃত করেছেন যে, পারস্যের সম্রাট রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট দুজন দূত প্রেরণ করেন:
دخلا على رسول اللهصلى الله عليه وسلم وقد حلقا لحاهما وأعفيا شواربهما فكره النظر إليهما ثم أقبل عليهما فقال من أمركما بهذا قالا أمرنا بهذا ربنا يعنيان كسرى فقال رسول الله لكن ربي قد أمرني بإعفاء لحيتي وقص شاربي
উক্ত দূতদ্বয়ের দাড়ি মুণ্ডিত ছিল ও গোঁফ বড় ছিল। তারা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট প্রবেশ করলে তিনি তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে অপছন্দ করেন। এরপর তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমাদেরকে এরূপ করতে কে নির্দেশ দিয়েছে? তারা বলে, আমাদের প্রভু অর্থাৎ সম্রাট। তিনি বলেন, কিন্তু আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমার দাড়ি বড় করতে এবং গোঁফ কাটতে
তারীখুল উমামি ওয়াল মুলূক, ২/১৩৩। এই হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি রাসূল (সা.) দাড়ি কাটাকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন।
প্রশ্নঃ 36
আস্সালামু আলাইকুম। স্যার, ১। আমাদের সমাজে হিল্লা বিয়ের প্রচলন দেখা যায়,কোরআন ও হাদীসের আলোকে এর কোন বৈধতা আছে কী? ২। জ্বীন সমন্ধে কোরআনে সূরা আছে, আবার এ দেশের অনেক বড় বড় ওলামায়ে কেরাম গণ জ্বীন পালেন,জ্বীনের সাথে কথা বলেন কাউকে আবার জ্বীনে ধরেন- কোরআন হাদীসের আলোকে এটা কতটুকু যুক্তি সম্মত?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ১। না, হিল্লা বিয়ে নামে আমাদের সমাজে যা প্রচলিত আছে তা হারাম। ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ সা. একে কঠিন ভাবে নিষেধ করেছেন। ২। জ্বীন আল্লাহ তায়ালার একটি সৃষ্টজীব। কুরআন হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট। আর তারা বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে মানুষের ক্ষতি করে থাকে এটাও সত্য। বিস্তারিত জানতে দেখুন, রাহে বেলায়াত বইটির ২০১৩ ইং সংস্করনের শেষ অধ্যায়। আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন। হিলা বিবাহ সম্পর্কে শরীয়তের হুকুম কি?“””””
প্রশ্নঃ 37
আমি খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির শায়েখ এর অনেক বই পড়েছি। আমার প্রশ্ন পুরুষ ও মহিলাদের নামাজে কি কি পার্থক্য আছে? বিশেষ করে রুকু ও সিজদাহ ও বৈঠকের ক্ষেত্রে। দলিল্ভিত্তিক জানতে পারলে উপক্রিত হব। রাহে বেলায়েত বইটিতে খুজেছি কিন্তু পাইনি। সারের নামাজ বিষয়ে কোন বই আছে কি?
23 Dec 2025
পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের বিষয়ে২৮নং প্রশ্নের উত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দয়া করে সেটি দেখুন। শুধু নামায বিষয়ে শায়েখের কোন বই নেই, তবে রাহে বেলায়াত বইয়ে নামায সম্পর্কে একটি আলাদা অধ্যায় আছে। এছাড়া আলফিকহুল আকবারসহ কয়েকটি বইয়ে নামায বিষয়ে বিক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা আছে।
প্রশ্নঃ 38
is it valid if a girl marry without ffathers will if not what should she do. Is it fard toinvolved a islamicorganization. they said it is command of Allah to live jamaa.I want to know what is jamaa means.
23 Dec 2025
পিতার অনুমতি ছাড়া বিবাহ হবে কিনা, এভাবে করলে কি করতে হবে এই বিষয়ে জানার জন্য এই আমাদের দেয়া ৪১ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন। আর জামায়াতের অর্থ হলো, রাসূলুল্লাহ সা. মুক্তিপ্রাপ্ত বা সুপথপ্রাপ্ত দলের পরিচিতি হিসেবে বলেছেন: তারা জামাআত। জামাআত শব্দটি আরবী জাম (الجمع) থেকে গৃহীহ, যার অর্থ একত্রিত করা, জমায়েত করা, ঐক্যবদ্ধ করা (ঞড় মধঃযবৎ, পড়ষষবপঃ, ঁহরঃব, নৎরহম ঃড়মবঃযবৎ, লড়রহ) ইত্যাদি। জামাআত (جماعة) অর্থ জনগণ, জনগোষ্ঠি, বা সমাজ (পড়সসঁহরঃু, ংড়পরবঃু). কুরআন ও হাদীসে জামাআত এবং ইজতিমা-কে ফিরকা ও ইফতিরাক-এর বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছে। ফিরকা অর্থ দল, গ্রপ ইত্যাদি। এ অর্থে আরবীতে হিযব, কাউম, জামইয়্যাহ (حزب، قوم، جمعية) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। আর জামাআত অর্থ দলবিহীন সম্মিলিত জনগোষ্ঠী বা সমাজ। যে কোনো স্থানে অবস্থানরত সকল মানুষকে জামাআত বলা হয়। জামাআতের মধ্য থেকে কিছু মানুষ পৃথক হলে তাকে ফিরকা বা দল বলা হয়। মনে করুন একটি মসজিদের মধ্যে ১০০ জন মুসল্লী বসে আছেন। এরা মসজিদের জামাআত। এদের মধ্যে কম বা বেশি সংখ্যক মুসল্লী যদি পৃথকভাবে একত্রিত হয়ে মসজিদের এক দিকে বসেন তবে তারা একটি ফিরকা, কাওম বা হিযব, অর্থৎ দল, গ্রপ বা সম্প্রদায় বলে গণ্য, কিন্তু তারা জামাআত বলে গণ্য নয়। যেমন, উপর্যুক্ত ১০০ জনের মধ্য থেকে ৫ জন এক কোনে পৃথক হয়ে বসলেন, আর দশ জন অন্য কোণে পৃথক হয়ে বসলেন এবং অন্য কোণে আরো কয়েকজন একত্রিত হলেন। এখন আমরা ইফতিরাক ও জামাআতের রূপ চিন্তা করি। মূলত মসজিদের জামাআত ভেঙ্গে ইফতিরাক এসেছে। তিনটি ফিরকা মূল জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আর বাকি যারা কোনো দল বা ফিরকা গঠন না করে দলবিহীনভাবে রয়ে গিয়েছেন তারা নিজেদেরকে জামাআত বলতে পারেন। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অবস্থা এরূপই। এটি মূলত কোনো দল বা ফিরকা নয়। সাহাবী-তাবিয়ীগণের অনুসরণে যারা মূল ধারার উপর অবস্থান করছেন এবং কোনো দল বা ফিরকা তৈরি করেন নি তারাই আল-জামাআত। বিস্তারিত জানতে দেখুন কুরআন সুন্নাহের আলোকে ইসলামী আকীদা পৃষ্ঠা ৫৭৬-৫৮২।
প্রশ্নঃ 39
মুহতারাম আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন : অযু করার সময় কুলি করা এবং নাকে পানি নেওয়া কি একই কি সাথে করতে হবে নাকি আগে কুলি করে পরে নাকে পানি নিতে হবে এবং ঘাড় মাসেহ করা কি সুন্নাত, যদি সুন্নাত না হয় তাহলে যদি কেউ করে তা কি বিদাত হবে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কুলি আর নাকে পানি এক সাথেও করা যায় আবার আালাদা আলাদাও করা যায়, দুই ধরনের হাদীসই আছে। আপনার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে করবেন। আর ঘাড় মাসেহ করার ব্যাপারে কয়েকটি দূর্বল হাদীস বর্ণিত আছে। তার একটি হলো, قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من توضأ ومسح عنقه لم غل بالأغلال يوم القيامة অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ওযু করবে এবং ঘাড় মাসেহ করবে কিয়ামতের দিন তাকে শিকল পরানো হবে না। তারীখ আসবাহান, ১/২৪২। এই বিষয়ে বিভিন্ন হাদীসের বিশ্লেষন শেষে মোল্লা আলী কারী হানাফী রাহ. বলেন, قال أئمتنا إن مسح الرقبة مستحب أو سنة অর্থ: আমাদের ইমামগণ বলেছেন, ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত। আল-আসরারুল মারফুয়াহ, পৃষ্ঠা- ৩১৫। কোন কোন আলেম বিদআত বলেছেন। তবে দলিলের আলোকে বিদআত নয় বলেই মনে হয়।
প্রশ্নঃ 40
Assalamualikum, অমার কিছু প্রশ্ন ১. সফরে থাকা অবস্থায় কি অবশ্যই সালাত কসর করতে হবে?২. প্রসাব-পায়খানার পরে কি ঢিলা ও কুলুপ দুইটিই ব্যবহার করতে হবে না কি যে কোন একটি?৩. পুরুষ ও মহিলার নামাযে কি ভীন্নতা আছে (হাত বাধা, রুকু, সিজদা ইত্যাদি) | স্যারের fb id থাকলে লিংটা জানাবেন
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ, সফরে থাকা অবস্থায় জামায়াতে ইমামের পিছনে নামায না পড়লে কসর করা আবশ্যক। হযরত আয়েশা রা. বলেন, فُرِضَتِ الصَّلاَةُ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ هَاجَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَفُرِضَتْ أَرْبَعًا وَتُرِكَتْ صَلاَةُ السَّفَرِ عَلَى الأُولَى অর্থ: সালাত দুরাকআত ফরজ করা হয়েছিল। এরপর নবীয়্যুল্লাহ সা. হিজরত করেন। তখন চার রাকআত ফরজ করা হয়। আর সফরের সালাতকে পূর্বের অবস্থায় রাখা হয়। সহীহ বুখারী হাদীস নং.৩৯৩৫। হযরত আয়েশা রা. অন্য হাদীসে বলেন, فُرِضَتِ الصَّلاَةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِى الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ فَأُقِرَّتْ صَلاَةُ السَّفَرِ وَزِيدَ فِى صَلاَةِ الْحَضَرِ অর্থ: সফর এবং হাদর ( সাধারণ) উভয় অবস্থাতেই সালাত দুই রাকাত করে ফরজ করা হয়েছিল। এরপর সফরের সালাত ঠিক রাখা হয় আর হাদরের (মুকিম তথা সাধারনণঅবস্থার ) সালাতে বৃদ্ধি করা হয়। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৬০২। তবে জামায়াতে ইমামের পিছনে নামায পড়লে পুরো নামায পড়তে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, قَالَ إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَلاَ تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ অর্থ: ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাকে অনুস্বরণের জন্য সুতরাং তোমরা তার বিপরীত করবে না। …………. (হাদীসটি অনেক লম্বা। )সহীহ বুখারী, হাদীস নং৭২২। ঢিলা কুলুপের বিষয়ে ৭৬নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের বিষয়ে ২৮ নং প্রশ্নের উত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দয়া করে সেগুলো দেখুন। ফেসবুক আইডিটি নিচে দেয়া হল। www.facebook.com/Dr.KhandakerAbdullahJahangir
প্রশ্নঃ 41
মুহতারাম আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: একটা গরু দিয়ে কয়জন এর আকিকা দেওয়া যাবে? আলহামদুলিল্লাহ গত সপ্তাহে আমার একটা কন্যা সন্তান হয়েছে। আমার ভাই এর দুইটা সন্তান (এক ছেলে, এক মেয়ে) আছে। কিন্তু উনি তাদের আকিকা দেন নাই। একটা গরু দিয়ে কি এই তিন জনের আকিকা দেওয়া যবে? আমার দাদি আমার আকিকা দিয়েছিল আমার ফুফুর বিয়ের সময়। এটা কি সহিহ হবে, যদি না হয় তবে আমাকে কি আবার আমার আকিকা দিতে হবে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আকীকার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো ছাগল, ভেড়া বা এজাতীয় পশু জবেহ করা। ছেলের জন্য দুটি আর মেয়ের জন্য একটি। তবে ছেলের জন্যও একটা দেয়া যায়, এটা হাদীসে আছে। সকল ক্ষেত্রে আমাদের সুন্নাতের অনুস্বরণ করা উচিৎ। গরু দিয়ে আকীকা রাসূলুল্লাহ সা. কিংবা সাহাবীগণ করেননি। তবে আলেমগণ গরু দিয়ে আকীকা করাকে জায়েজ বলেছেন।আবার এক পশুতে একাধিক আকীকাও সাহবীগণ দেননি। তবে আলেমগণ কুরবানীর উপর কিয়াস করে বলেন, বড় পশুতে একাদিক কুরবানী দেয়া জায়েজ। সে হিসেবে প্রশ্নেল্লিখেত তিন জনের জন্য একটি গরু যথেষ্ট হবে।
প্রশ্নঃ 42
খাবারের পর প্লেটে যদি কিছু খাবার থেকে যায়, খাবারে অরুচির কারণে যদিও জানি খাবর সম্পূর্ন শেষ করার কথা ইসলামে বলা আছে। আর প্লেটের সেই অবশিষ্ট খাবার যদি কোনো পশু/পাখিকে খাওয়ানো হয়,এই ক্ষেেএ ইসলাম কি বলে?
23 Dec 2025
না, এক্ষেত্রে কোন পশু-পাখিকে খাওয়ালে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ 43
আসসালামু আলাইকুম, আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, ক্রিকেট বা ফুটবল খেলায় ম্যাচ প্রতি টাকা নেওয়া কি ইসলাম সম্মত? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। খেলা যদি জায়েজ হয় তাহলে খেলার জন্য পারশ্রমিক নেয়া জায়েজ। আর জায়েজ না হলে পারিশ্রমিক নেয়াও না জায়েজ। ক্রিকেটে ম্যাচ প্রতি টাকা নেওয়া কি জায়েয?“””””
প্রশ্নঃ 44
আসসালামু আলাইকুম। ভাই, আমার প্রশ্ন ২ টি প্রাথমঃ আমি কি আমার খালত বোনের মেয়ে কে বিয়ে করতে পারবো? দ্বিতীয়ঃ ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের পাশাপাশি সন্তানের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যদি কোন পুরুষ এবং মহিলা সব দিয়েই বিয়ের উপযুক্ত হয়। আর সেই পুরুষ যদি কোন পছন্দের মেয়ের পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর সেটা যদি প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন কি করণীয় যখন বাবা মা মেয়েকে জোরপূর্বক অন্যথায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধ এ বিয়ে দিয়ে দিতে চায়?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ, খালাতো বোনের মেয়েকে বিবাহ করা যাব। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে কিছু করার নেই। বিবাহের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার উচিৎ ছেলে-মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া আর ছেলে-মেয়েদেরকেও মনে রাখতে হবে তারা যেন ছোট-খাটো কারণে পিতা-মাতার অবাধ্য না হন। অনেক সময় বয়স কম হওয়া কিংবা অনভিজ্ঞতা ইত্যদির কারণে ছেলে-মেয়েরা হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যা তার ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। আর পিতা-মাতা সর্বদা সন্তানের কল্যান চান, তাদের অভিজ্ঞতাও বেশী থাকে ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তারা সঠিক ও কল্যানকর সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকেন। তাই পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়াই শ্রেয়।
প্রশ্নঃ 45
আসসালামু আলাইকুম, স্যার। আমি সিফাত, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড ঢাকা, তে ৪র্থ বর্ষে পড়ছি। একটা ব্যাপারে আপনার সাহায্য দরকার। আবু জেহেল বদরের যুদ্ধের আগে কাবার গিলাফ ধরে যে দুয়া করেছিল, এই হাদীসটা বুখারী, আস-সাহীহ এর কোন কিতাব, ও কোন বাব এ আছে আমাকে একটু জানাবেন কি? আমার কাছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও তাওহীদ পাবলিকেশন উভয় সংস্করণই আছে, আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াসসালাম।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আবু জেহেল বদর যুদ্ধও পূর্বে নিজেদের বিজয় চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। তবে কাবার গিলাফ ধরার কথা পাওয়া যায় না। নিচের হাদীসটি লক্ষ করুন। عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ ثَعْلَبَةَ بْنِ صُعَيْرٍ الْعُذْرِيِّ ؛ أَنَّ أَبَا جَهْلٍ قَالَ يَوْمَ بَدْرٍ : اللَّهُمَّ أَقْطَعُنَا لِلرَّحِمِ ، وَآتَانَا بِمَا لاَ يُعْرَفُ ، فَأَحِنْهُ الْغَدَاةَ ، قَالَ : فَكَانَ ذَلِكَ اسْتِفْتَاحًا مِنْهُ ، فَنَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ : {إِنْ تَسْتَفْتِحُوا فَقَدْ جَاءَكُمَ الْفَتْحُ ، وَإِنْ تَنْتَهُوا فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ} الآيَةَ অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে সালাবাহ বলেন, আবু জেহেল বদরের দিন বলল, হে আল্লাহ! (মুহাম্মাদ) আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আত্মীয়তা ছিন্নকারী, সে এমন কিছু নিয়ে এসেছে যে বিষয়ে আমাদের জানাশোনা নেই। সুতরাং আগামীকাল তাকে ধ্বংস করুন। তিনি বলেন, সেটাই ছিল তার থেকে বিজয় চাওয়া। আর এসম্পর্কেই অবতীর্ণ হয় এই আয়াত যদি তোমরা বিজয় চাও অবশ্যই তা তোমাদের কাছে আসবে আর যতি তোমরা বিরত থাক তাহলে সেটা হবে তোমাদের জন্য কল্যানকর। ………… (সূরা আনফাল ১৯-) । মুসান্নিফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৭৪২৯। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৩৭১০। শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে বাগাবী সহ অনেক তাফসীরগ্রন্থে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, আবু জেহেলের দোয়ার পরিপেক্ষিতে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। বিস্তারিত জানতে সেগুলো দেখতে পারেন। তবে কুতুবে সিত্তাতে এ বিষয়ে কোন হাদীস পাওয়া যায় না।
প্রশ্নঃ 46
আমরা অনেকেই কোরবানির পশুর ভুঁড়ির কোনও ভাগ কিন্তু মাংস ভাগের নিয়ম অনুযায়ী করি না । । এইটা কতটা সঠিক।
23 Dec 2025
প্রশ্নটি স্পষ্ট নয়। যদি এক পশুতে কয়েকজন ভাগে কুরবানী দেন তাহলে ভুঁড়িও সমান ভাগ করতে হবে। আর যদি গরীবদের জন্য দেয় ভাগ উদ্দেশ্যে হয় যতটা সম্ভব কুরবানীর গোশত-ভূড়ি গরীবদেরকে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শরীয়ত আমাদেরকে কোন পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে আমারা যেভাবে বন্টন করি তা ভাল। সুতরাং ভুড়ির ভাগ মাংসের ভাগের মত না করলেও কোন সমস্যা নেই। এতে কুরবানীর কোন সমস্যা হবে না।কুরবানী দ্বারা আমাদের উদ্দ্যেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করা। প্রশ্নটি স্পষ্ট নয়। যদি এক পশুতে কয়েকজন ভাগে কুরবানী দেন তাহলে ভুঁড়িও সমান ভাগ করতে হবে। আর যদি গরীবদের জন্য দেয় ভাগ উদ্দেশ্যে হয় যতটা সম্ভব কুরবানীর গোশত-ভূড়ি গরীবদেরকে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শরীয়ত আমাদেরকে কোন পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে আমারা যেভাবে বন্টন করি তা ভাল। সুতরাং ভুড়ির ভাগ মাংসের ভাগের মত না করলেও কোন সমস্যা নেই। এতে কুরবানীর কোন সমস্যা হবে না।কুরবানী দ্বারা আমাদের উদ্দ্যেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করা।
প্রশ্নঃ 47
আসসালামু আলাইকুম, বর্তমানে হাফেজা,আলেমা ও দীনদার মুসলিম বোনরা ফেসবুকের মাধ্যমে দীন প্রচার করছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ফেসবুকে দীন প্রচারের জন্য ইসলামের কোন মূলনীতি গুলো মেনে চলতে হবে
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আলাদা কোন মূলনীতি অনুস্বরণ করতে হবে না। বরং সাধারণ যে মূলনীতি আছে সেগুলো মেনে চললেই হবে। কারো অহেতুক সমালোচনা না করে ইসলামের সহীহ বিষয়টি মানুষকে জানাতে হবে। কথা যেন যুক্তি ভিত্তিক ও দলীল ভিত্তিক হয় সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্নঃ 48
মুহতারাম,আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো, আমার দাদার জমির খাজনা বাকী হওয়ায় তা খাস হওয়ার আশংকা দেখা দেয় যার ফলে আমার দাদা আমার বাবাকে বলে তুই এই জমির খাজনা দিয়ে জমি তোর নামে করে নে। তখন আমার বাবা এই জমির জন্য বেশ কিছু টাকা খরচ করে এবং জমি তার নামে করে নেয় তখন আমার বাবা আমার দাদার সংসারের বড় ছেলে ছিল এবং নিজের টাকা সংসারে খরচ করতো। এখন আমার চাচাগণ ঐ জমি সকলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার দাবী করছে। এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আপনার আব্বার যে টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকা কিংবা সেই টাকার পরিমাণ সম্পদ তিনি ওয়ারিসদের থেকে নিয়ে নিবেন। আর জমি সকল ওয়ারিসদের মাঝে ইসলামি আইন অনুযায়ী বন্টিত হবে।
প্রশ্নঃ 49
আসসালামু আলাইকুম ১-আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়াতাআলা বিয়ের জন্য কোন বয়স নির্ধারন করে দেন নি। কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধান এ ২১ বছর(ছেলে) ও ১৮(মেয়ে) নির্ধারন করেছে। অনুর্ধ ২১ এবং ১৮ যারা তারা যদি বিয়ে করে তবে বাল্যবিবাহ আইনে এটি দন্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য জেল ও খাটতে হয়। এখন কেউ যদি জন্ম নিবন্ধন এ বয়স পরিবর্তন করে এ আইন থেকে মুক্তি পেতে চায় তবে কি সেটা কি তার জন্য বৈধ হবে কিনা?সে কি আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু ওয়া তাআলা এর কাছে প্রতারণা কারী হিসেবে গন্য হবে?দলিলসহ জানাবেন। ২-ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২০ বছর হওয়া প্রয়োজন। কোন ১৭-১৮ বছরের ছেলে যদি জরুরী জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে তার বয়স বাড়িয়ে দিয়ে জন্ম সনদ বানিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে নেয় তবে এক্ষেত্রে হুকুম কি? ৩-অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের বয়স কমিয়ে দেয় যাতে পরবর্তিতে চাকরি পেতে অসুবিধা না হয়। এটা কি বৈধ?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বিবাহের জন্য বয়স কমানো বা চাকুরির জন্য বয়স কমানোই একইরূপ বিষয়। মিথ্যা সর্বদাই নিষিদ্ধ। মিথ্যা মূলত বড় গুনাহের কাজ। আমরা কোনোভাবেই মিথ্যাকে বৈধ বলতে পারি না। বান্দার নিজের ওজর নিজে বুঝবেন। মিথ্যা বলার মত কোনো ওজর তার আছে কিনা তিনি তাঁর মাবুদের সাথে তা বুঝবেন। ইসলামী শরীয়তে ১৮ বছরের পূর্বে বিবাহ করা বৈধ, তবে জরুরী নয়। সাধারণভাবে ১৮ বছর বয়সে বিবাহ করলে সমস্যা হয় না। এজন্য মিথ্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য চেষ্টা করা দরকার। চাকরীর জন্য মূলত যোগ্যতা সৃষ্টি, আল্লাহর কাছে দুআ ও চেষ্টা করাই মূল। সরকারী, বেসরকারী কোনো সম্মানজনক কাজ হলেই হলো। মিথ্যা ভাবে বয়স কমিয়ে মিথ্যার পাপ ছাড়া তেমন লাভ হয় বলে মনে হয় না। প্রথম থেকেই পিতামাতা মিথ্যা দিয়ে সন্তানের জীবন শুরু করলেন। প্রথমেই তারা বিশ্বাস করে নিলেন যে, সত্য বললে আমার সন্তানের ভাত হবে না! ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ রাষ্ট্রের অধিকারের অংশ। এটিকে শরীয়তের পরিভাষায় মাসালিহ মুরসালাহ বলা হয়। দেশের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রয়োজনে শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন নীতিমালা বা বিধিবিধান রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে। এ সকল বিধান মান্য করা মুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় দায়িত্ব। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স পরিবর্তন কয়েকটি অন্যায়ের জন্ম দেয়: মিথ্যা, রাষ্ট্রীয় বিধান অমান্য এবং কম বয়সে গাড়ি চালাতে যেয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি।
প্রশ্নঃ 50
১. কোরবানী কি সচ্চল পরিবারের প্রধানের উপর ওয়াজিব নাকি যার কাছে নিছাব পরিমান সম্পদ আছে (জিলহজ্বের ১০-১১-১২ তারিখ পর্যন্ত) তার উপর। নিছাবের কথাটি কি হাদিস থেকে এসেছে নাকি ওলামাদের ফাতোয়া? পরিবারের সজ্ঞা কি? ২. সামর্থ্য তাকলে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সকলের কি কোরবানী করতে হয়? ৩. স্বামী স্ত্রী দুইজনের কাছে আলাদাভাবে নিছাব পরিমান সম্পদ আছে কিন্তু তাদের পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা ৫ জন। এই ৫ জনের ন্যুন্যতম কোরবানীর হকুম ক? ৪. ১টি উট বা গরু দিয়ে ৭ জনের কোরবানী বলতে কি ৭ জন নিছবের মালিক, সামর্থ্যবান পরিবারের প্রধানকে বুঝায়? নাকি প্রত্যেক নিছাবের মালিকের/সামর্থ্যবানের পরিবারের সদস্যও উন্তর্ভুক্ত? ৬. মহিষ দিয়ে কোরবানী করার হাদিস কি? ৭. মা বাবা জিবীত, বাবার সম্পদ আছে কিন্তু মার নাই; সন্তানের উপর এর হকুম কি? ৮. রাসুলের এবং মৃত ব্যক্তির কোরবানী করার হকুম কি? ৯. কোরবানীতে আঁকিকা দেয়া কেন বৈধ হবে বা হবে না? কয়টি কোরবানী এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সমান হবে? সহী হাদিসের আলোকে উত্তর দিলে উপকৃত হব। ভিডিও ক্লিপ বা লিঙ্ক এখন অনেকের মত আমার কাছে ও বিরক্তিকর। text এ হলে তা সংগ্রহে রাখা ও শেয়ার করা সহজ হয়। কেউ আন্দজিক, অসুবিধা নাই কিংবা ফাতোয়া জাতীয় উত্তর না দিলেই খুশি হব।
23 Dec 2025
জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে উত্তম আমল হলো কোরবানী করা। কোরবানীর বিভিন্ন বিষয়ে আলেম ও ইমামগণের মাঝে মতভেদ আছে। এখানে আমরা কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিষয়গুলো আলোচনা করছি। ১। কুরআনুল কারীমের সূরা কাওসারে আল্লাহ তায়ালা কুরবানীর আদেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, (আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত) من كان له مال فلم يضح فلا يقربن مصلانا و قال مرة : من وجد سعة فلم يذبح فلا يقربن مصلانا অর্থ: যার সাধ্য ছিল কুরবানী দেওয়ার, কিন্তু দিল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়। মুসতাদরক হাকীম, হাদীস নং ৭৫৬৫; সহীহুত তারগীব লিল আলবানী, ১/২৬৪। হাকীম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আলবানী হাসান বলেছেন। উপরুক্ত আয়াত ও হাদীসের ভিত্তিতে মনে হয় যে, কুরবানী করা ওয়াজিব। যদিও অনেক ইমাম ও আলেম কুরবানীকে সুন্নাত বলেছেন। ২। কুরবানী সবার উপর ওয়াজিব নয়। বরং যার সামর্থ আছে তার উপর ওয়াজিব। উপরের হাদীস থেকে আমারা তা বুঝতে পারি। এই সামর্থ্য শব্দটিকেই নিসাব শব্দে বলা হয়। সামর্থ কখন হবে কিংবা নিসাব পরিমাণ সম্পদ কতটুকু এই ব্যাপারে হাদীসে স্পষ্ট কিছু নেই। এই কারণেই আলেমগনের মধ্যে এব্যাপারে মতভেদ হয়েছে। এই বিষয়ে আলেমগণের মতামত জানতে দেখুন, আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদিল্লাতুহু, ৩/৬০১। ৩। উপরের হাদীস থেকে আমরা জানলাম যে, সামর্থ্য আছে এমন প্রত্যেকের উপর কোরবানী ওয়াজিব। আর সামর্থ্য বলতেই নিসাব বুঝানো হয়। এ থেকে জানা যায় যে, স¦ামী এবং স্ত্রীর উভয়ের সামর্থ্য থাকলে উভয়ের উপরই কোরবানী ওয়াজিব। কারো কুরবানী অন্যের জন্য যথেষ্ট হবে না। নিচের হাদীস দুটি লক্ষ্য করুন: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ هِشَامٍ ، وَكَانَ قَدْ أَدْرَكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَذَهَبَتْ بِهِ أُمُّهُ زَيْنَبُ ابْنَةُ حُمَيْدٍ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ بَايِعْهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم هُوَ صَغِيرٌ فَمَسَحَ رَأْسَهُ وَدَعَا لَهُ ، وَكَانَ يُضَحِّي بِالشَّاةِ الْوَاحِدَةِ عَنْ جَمِيعِ أَهْلِهِ. অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণিত (তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে পেয়েছিলেন), তারা আম্মা যায়নাব বিনতে হুমাইদ তাকে রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ওকে বায়াত করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সে তো ছোট। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। আর তিনি তার পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দ্বারা কুরবানী করেছিলেন। সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭২১০। أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ ، اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيمَيْنِ ، سَمِينَيْنِ ، أَقْرَنَيْنِ ، أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوءَيْنِ ، فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ ، لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ ، بِالتَّوْحِيدِ ، وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ ، وَذَبَحَ الآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ ، وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ. অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. যখন কুরবানী দেয়ার ইচ্ছা করতেন তখন দুটি বিশাল বড় সাইযের সুন্দর দেখতে খাসী করা কাটান দেওয়া পুরুষ মেষ বা ভেড়া ক্রয় করতেন। তাঁর উম্মতের যারা তাওহীদ ও তাঁর রিসালাতের সাক্ষ দিয়েছেত তাদের পক্ষ থেকে একটি কুরবানী করতেন এবং অন্যটি মুহাম্মাদ সা. এবং মুহামাদ সা. এর পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন। ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩১২২; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৫৮২৫। হাদীসটি হাসান। এই হাদীস দুটির ভিত্তিতে ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ প্রমুখ ফকীহ বলেন একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি কুরবানী যথেষ্ট হবে। দেখুন, সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ১৫৮৭; তুহফাতুল আহওযী, ১৪২৫ নং হাদীসের আলোচনা; মুয়াত্তা মালিক,হাদীস নং ১০৩৩। পরিবার বলতে স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তানদের বুঝায়। আর সাধারনত একটি পরিবারে পরিবার প্রধানের উপরই কুরবানী ওয়াজিব হয়। সুতরাং এই হাদীস দুটি দ্বারা স্পষ্ট ভবে প্রমাণিত হয় না যে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সামর্থ থাকলেও একটি কুরবানীই সকলের জন্য যথেষ্ট হবে। পক্ষান্তরে প্রথম হাদীসে আমরা দেখেছি যার সামর্থ্য আছে সেই কুরবানী দিবে। এজন্য ইমাম আবূ হানীফা, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক প্রমুখ ফকীহ একই পরিবারেও একাধিক ব্যক্তির সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেকের জন্য কুরবানী দেওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন। মহান আল্লাহই ভাল জানেন। শেষ কথা: মানুষের জীবনের সমস্যা ব্যাপক। কুরআন হাদীস সীমিত । তাই অনেক কিছুই সরাসরি কুরআন বা হাদীস থেকে পাওয়া যায় না। আর আমরা আপনার প্রশ্নের যে উত্তর দিলাম এটাই ফতোয়া। সুতরাং সবকিছু সহীহ হাদীস দ্বারা দিতে হবে, ফতোয়া দেয়া যাবে না এমন কথা না বলাই শ্রেয়। যেসব ব্যাপারে হাদীস পাওয়া যায় না সেসব বিষয়ে মুজতাহিদ আলেমগণের কথায় আমাদের মানতে হবে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। তিনিই সব বিষয়ে ভাল জানেন। এক সাথে এত প্রশ্ন করবেন না। বাকী প্রশ্নগুলো পরবর্তীর্তে আবার করবেন।
প্রশ্নঃ 51
মুহতারাম,আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো,আমি শুনেছি যে, শুক্রবার অর্থাৎ জুমার দিন ঈদ হলে এবং ঈদের নামাজ জামাতে আদায় করলে ঐ দিন জুমার নামাজ আদায় না করলেও চলে। একথাটি পবিত্র কুর-আন ও হাদিসের আলোকে কতখানি সত্য
23 Dec 2025
এ বিষয়ে একটি হাদীসের অর্থ নির্ণয়ে মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ : اجْتَمَعَ عِيدَانِ فِي يَوْمِكُمْ هَذَا ، فَمَنْ شَاءَ أَجْزَأَهُ مِنَ الْجُمُعَةِ ، وَإِنَّا مُجَمِّعُونَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সা. বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আজ তোমাদের দুইটা ঈদ একত্র হয়েছে। যে চায় তার জন্য (ঈদের নমাায) জুমুআ হিসাবে যথেষ্ট। তবে আমরা উভয় নামাযই আদায় করব। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩১১। হাদীসটি সহীহ। অন্য একজন সাহাবী থেকেও সহীহ সনদে এমনটি বর্ণিত আছে। এ হাদীসের ভিত্তিতে কোনো কোনো মুহাদ্দিস ও ফকীহ বলেছেন যে, জুমুআর দিনে ঈদ হলে জুমুআর সালাত ঐচ্ছিক হয়ে যায়। তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফকীহ এ মতটির বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেন, মরুবাসী বেদুঈনদের জন্য জুমুআর সালাত ফরয নয়। এরূপ অনেক মরুবাসী বেদুঈন ঈদের দিনে ঈদ পালনের জন্য মদীনায় আগমন করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) মূলত তাদের জন্য এ কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ তোমরা মরুবাসীরা যারা চাও তারা চলে যেতে পার। তবে আমরা- মদীনাবাসীগণ জুমুআর সালাত আদায় করব। তোমরা ইচ্ছা করলে সে পর্যন্ত থাকতেও পার। নিম্নের বর্ণনাটি এ ব্যাখ্যা প্রমাণ করে: الشَّافِعِىُّ أَخْبَرَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِى عُبَيْدٍ مَوْلَى ابْنِ أَزْهَرَ قَالَ : شَهِدْتُ الْعِيدَ مَعَ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فَجَاءَ فَصَلَّى ثُمَّ انْصَرَفَ فَخَطَبَ فَقَالَ : إِنَّهُ قَدِ اجْتَمَعَ لَكُمْ فِى يَوْمِكُمْ هَذَا عِيدَانِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ أَنْ يَنْتَظِرَ الْجُمُعَةَ فَلْيَنْتَظِرْهَا ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَرْجِعَ فَلْيَرْجِعْ فَقَدْ أَذِنْتُ لَهُ অর্থ: ইমাম শাফেয়ী রহ.,ইমাম মালেক রহ. থেকে তিনি ইবনে শিহাব যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু উবাইদ বলেন, আমি ঈদের দিন উসমান রা. এর সাথে ছিলাম। তিনি আসলেন, নামায পড়ালেন অতঃপর খুৎবা দিতে গিয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আজ দুটি ঈদ একত্র হয়েছে। গ্রাম থেকে যারা এসেছে তারা যদি চাই জুমুআর নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে পারে আর যদি চাই ফিরে যেতে পারে। আমি তাদের অনুমতি দিলাম। আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্কী, হাদীস নং ৬৫১৬। ইমাম বাইহাক্কী রহ, বলেন, সনদ সহীহ। উক্ত হাদীসে আমরা দেখছি যে, উসমান রা. শুধু মরুবাসী বেদুঈনদের মানুষদের অনুমতি দিয়েছেন, শহরবাসীকে নয়। এর বিষয়টি এমন যে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বিষয়টি না জানলে তার পক্ষে ইবাদতের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। অন্য একটি হাদীসে আছে, عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ قَالَ : اجْتَمَعَ عِيدَانِ عَلَى عَهْدِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :্র مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجْلِسَ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ فَلْيَجْلِسْ فِى غَيْرِ حَرَجٍ অর্থ: উমার ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর সময় দুটি ঈদ একত্র হলো (ঈদ ও জুমুআ)। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সা.) বললেন, গ্রামের লোকদের মধ্যে যে বসতে চাই তার বসতে কোন সমস্যা নেই। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৬৫১৫। হাদীসটি মুরসাল। আরো একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে হাদীসটিকে ইমাম বায়হাক্কী যয়ীফ বলেছেন। দেখুন, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৬৫১৪। উপরুক্ত দলীল সমূহের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, শহরবাসীর জন্য ঈদ ও জুমুআ উভয় নামাযই আদায় করতে হবে। আর মরুবাসী বেদুঈন লোকেরা চাইল শহরে এসে জুমুআ আদায় করতে পারে, না করলেও সমস্যা নেই। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক সহ অধিকাংশ আলিম ও ফকীহের অভিমত এটাই। শরহে আবু দাউদ লিল আইনি, ৪/৩৯৭; আল-ইসতিযকার,২/৩০৭; সুবুলস সালাম, ২/৫২; কিতাবুল উম্ম. ২/২৩৯। শেষ কথা: উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে,অধিকাংশ আলেমের নিকট যাদের উপর জুমুআর ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের দিনেও জুমুআ পড়তে হবে। আর যদি ধরেও নেই যে, ইচ্ছাধিকার সবার জন্য তবুও জুমুআর নামায আদায় করা সুন্নাত ও উত্তম। কেননা হাদীসে আমার দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমরা জুমুআ আদায় করব। আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 52
আমাদের দেশের প্রচলিত ফাতোয়া হল কুরবানীর সাথে এক ভাগা দিয়ে আকিকা দেয়া জায়েজ। আমার প্রশ্নঃ এই ফাতোয়ার ভিত্তি কুরাআন ও হাদিসে আছে কি না? থাকলে জানাবেন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইমকুমুস সালাম। কুরবাণী ও আক্বীকা একই পশু দ্বারা দেয়া জায়েজ আছে কিনা তা নিয়ে মতভেদ আছে। একদল আলেম বলেন,জায়েজ আছে অন্য অরেক দল বলেন জায়েজ নেই। যারা বলেন জায়েজ আছে তাদের বক্তব্যের মূল ভিত্তি হলো, কুরআনের একটি আয়াত। তা হলো, قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ অর্থ: আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার নুসুক আমার জীবন, আমার মরন সবই বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহরা জন্য। সূরা আন-য়াম, আয়তা ১৬২। উক্ত আয়াতে নুসুক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আভিধানিক অর্থে নুসুক বলা হয় এমন পশুকে যা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য জবেহ করা হয়। দেখুন, আল-মুজামুল ওয়াসীত, পৃষ্ঠা ৯৫৭। আর কুরবানী ও আক্বীকা উভয়টি দ্বারাই যেহেতু আল্লাহ তায়ালা নৈকট্য লাভ উদ্দেশ্য তাই একই পশুতে কুরবানী ও আক্বীকা করা জায়েজ হবে। উল্লেখ হানাফী ও শাফেয়ী মাজহাবের আলেমগন এটাকে জায়েজ বলেছেন। তবে সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে আকীকা জন্মের সপ্তম দিনে ছাগল বা এ জাতীয় ছোট পশু দিয়ে দেয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সা. কিংবা সাহাবীগণ গরু বা উট দিয়ে কখনো আকীকা দেন নি। আমাদের উচিৎ সুন্নাতের অনুসরন করা।
প্রশ্নঃ 53
যারা আরবী জানেনা, মোটামুটি ইন্টার কিংবা অনার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে তাদের জন্য কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজতর কোন তাফসীর গ্রন্থের নাম জানালে খুবই উপকৃত হব।
23 Dec 2025
আপনি কুরআন বুঝার জন্য মুফতী শফী রহ. লিখিত মাওলানা মহিউদ্দিন খান অনূদিত মারেফুল কুরআন, মাওলানা ত্বকী উসমানী লিখিত তাওযীহুল কুরআন এবং সৈয়্যদ কুতুব শহীদ রচিত তাফসীর ফি যিলালিল কুরআন পড়তে পারেন। এই তাফসীরগুলো আমাদের দেশের লাইব্রেরীর সমূহে যাবে।
প্রশ্নঃ 54
আমার নিকট আত্মিয় যেমন ফুফু, খালা, মামা ইত্যাদি এদের উপার্জন হালাল না হলে তাদের বাড়ি যাওয়া এবং খাওয়া যাবে কি? না খেলে আবার সম্পর্ক ভাল থেকে না। এখন কোনটা করা উচিত?
23 Dec 2025
তাদের বাড়ি যাওয়া যাবে তবে খাবার হালাল না হলে খাওয়া জায়েজ হবে না। আপনাকে কৌশলে এড়িয়ে যেতে হবে। একান্ত যদি খেতেই হয় তাহলে খাবার পরিমান টাকা-পয়সা দান করার কথা কোন কোন আলেম বলে থাকেন। তাদের বাড়ি যাওয়া যাবে তবে খাবার হালাল না হলে খাওয়া জায়েজ হবে না। আপনাকে কৌশলে এড়িয়ে যেতে হবে। একান্ত যদি খেতেই হয় তাহলে খাবার পরিমান টাকা-পয়সা দান করার কথা কোন কোন আলেম বলে থাকেন।
প্রশ্নঃ 55
আমার প্রশ্নঃ ১। সাহাবাদের নামের শেষে আমরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে দুয়া করি। এবং আগের নবিদের ক্ষেত্রে আমরা আলাইহিস সালাম বলে দুয়া করি। কিন্তু আগের নবিদের স্ত্রি বা মাতা (আসিয়া/ হাযেরা/সারাহ) ক্ষেত্রে দুয়ার জন্য কি ব্যবহার করব? রাদিয়াল্লাহু আনহু না আলাইহিস সালাম? আল্লাহ আপনাকে উত্তম বদলা দান কারুন। আমিন।
23 Dec 2025
এক্ষেত্রে ইসলাম কোন কিছু নির্দিষ্ট করে দেয়নি। আপনার কাছে যে দোয়াটি ভাল লাগে আপনি সে দোয়াটি পড়তে পারেন। তবে সাধারণত আলাইহাস সালাম পড়া হয়।
প্রশ্নঃ 56
মুহতারাম,আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো- মিলাদ ও কিয়াম করা নিয়ে যদি কোন সহীহ দলিল দেন তাহলে খুব ভাল হয়- আমি এ বিষয় নিয়ে খুব প্রব্লেমে আছি।
23 Dec 2025
মীলাদ ও কিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন, আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহইয়াউস সুনান বইয়ের ৫১৬-৫৬২ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 57
মুহতারাম,আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলো- আমার এক ছোট ভাই তার মামাতো বোনকে পালিয়ে বিয়ে করেছে এক বছর হলো কিন্তু এখনো মেয়ের বাবা মেনে নেয়নি কিন্তু হাদিস অনুযায়ী এই বিয়ে বাতিল তাহলে তাদের সামনে এখন কী করণীয়? আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মেয়ের পিতা-মাতার সাথে যোগাযোগ করি কিন্তু তারা মেনে নিবে না- উত্তর জানাবেন স্যার।
23 Dec 2025
আপনার প্রশ্নের জন্য শুকরান ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের বিধান। বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী শরীয়তে এব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল সা. এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহগণের নিকট ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ নেই। তবে ইমাম আবু হানীফা রহ. সহ কতিপয় ফকীহ বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন। প্রখ্যাত মালেকী ফকীহ আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে রুশদ আন্দালুসী র. বলেন, اختلف العلماء هل الولاية شرط من شروط صحة النكاح أم ليست بشرط؟ فذهب مالك إلى أنه لا يكون النكاح إلا بولي وأنها شرط في الصحة في رواية أشهب عنه وبه قال الشافعي وقال أبو حنيفة وزفر والشعبي والزهري: إذا عقدت المرأة نكاحها بغير ولي وكان كفؤا جاز وفرق داود بين البكر والثيب فقال باشتراط الولي في البكر وعدم اشتراطه في الثيب অর্থ: বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী শর্ত কি শর্ত নয় এই বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক র. মত পোষন করেছেন যে, ওলী ছাড়া বিবাহ হবে না। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য (ওলী) শর্ত। এমন মতই পোষন করেছেন ইমাম শাফেয়ী রা.। ইমাম আবু হানীফা, জুফার, শাবী ও জুহরী র. বলেছেন, যদি মহিলা ওলী ছাড়া বিবাহ করবে আর স্বামী যদি তার কুফু (সর্বদিক দিয়ে যোগ্য) হয় তাহলে জায়েজ হবে। বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৮(শামেলা)। এই সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন, আলমাবসুত লিস-সারখসী, ৬/৫৩; আলমাউসায়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৯৪ও ৩১/৩২১; আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা ৪/৪৫। কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেয়ী,৭/১৫৬। যে ইমামগন ওলী ছাড়া বিবাহ বাতিল বলেছেন তাদের দলীল: আবু মুসা আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, অর্থাৎ ওলী ছাড়া বিবাহ নয়। لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৮৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১১০১;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৯৭৬১। হাদীসটি সহীহ। শায়খ আরনাউত এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ অর্থাৎযে মহিলা ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল। তিনি ৩ বার তা বলেছেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১১০২; মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ২৫৩৬৫। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন আর শায়খ শুয়াইব আরনাউত সহীহ বলেছেন। উপরক্ত হাদীস সমূহের ভিত্তিতে ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ র. সহ অধিকাংশ আলেম ওলী ছাড়া বিবাহকে বাতিল বলেছেন। যে সব ইমাম ও ফকীহ ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ বলেছেন তাদের দলীল: তাবেঈদের মধ্যে ইমার জুহরী ও শাবী এরপরে ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ, জুফার সহ কিছু সংখক মুজতাহিদ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ওলী ছাড়া বিবাহ কে জায়েজ বলেছেন। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১.কুফু হতে হবে। ২.মেয়েটি বালেগা, বুঝমান হতে হবে। আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবায়া, ৪/৪৫; আলমাবসুত লিস-সারাখসী,৬/৬১ ও ৫/১৬। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فلا جناح عليكم فيما فعلن في أنفسهن بالمعروف অর্থাৎ মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে সৎ ভাবে যা করবে (বিয়ের ক্ষেত্রে) সে বিষয়ে তোমাদের কোন দোষ নেই। সূরা বাকারাহ-২৩৪ অন্য এক আয়াতে তালাক সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, تنكح زوجا غيره. حتى অথাৎ যতক্ষন না তারা অন্য স্বামীকে বিবাহ না করে। সূরা বাকারাহ-২৩০। অন্য প্রসংগে আল্লাহর বাণী, فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে তাদের স্বামীদের কে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না। সূরা বাকারাহ-২৩২ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, الأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا অর্থাৎ মেয়েরা ওলীদের চেয়ে নিজের ব্যাপারে অধিক হকদার। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৪২১। الأيم অর্থ স্বামীহীন মহিলা, পূর্বে স্বামী থাকুক বা না থাকুক। আলমজামুল ওয়াসীত। বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌদী আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন, المسألة اجتهادية ، واختلف فيها الأئمة ، فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا ، فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা, ইমামগণ এক্ষেত্রে ইখতিলাফ করেছেন। সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে, ওলী ছাড়া বিবাহবে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, পাকিস্থান ইত্যদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্মীকৃতি দেয়া হবে । বাতিল করতে বলা হবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, শরীয়তে বিবাহে মেয়েদের জন্য ওলী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয় এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতমতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং মেয়েদের জন্য আবশ্যক হলো ওলীর অনুমতি নিয়ে বিবাহ করা। আর আমাদের উচিৎ বিবাহের সময় মানুষদের কে ওলীর অনুমতির বিষয়ে উৎসাহিত করা,ওলী ছাড়া বিয়ে করতে নিষেধ করা এবং ওলী থাকার কল্যান বর্ণনা করা। যারা ইতিমধ্যে ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করেছে তাদের বিষয়ে কথা হলো যেহেতু তারা একটি ফিকহী মত গ্রহন করেছেন আর বিষয়টি ইজতিহাদী এবং ইখতিলাফী তাই তাদেরকে নতুন করে বিবাহ করতে হবে না। তবে এই ঘৃনিত কাজের জন্য তাদের লজ্জিত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 58
দারিয়ে প্রসাব কি জায়েয আছে? ১টা হাদিস নাকি আছে যে নবী এমন করেছিলেন? আর কেও বলতেছে যে তিরমিযি তে নাকি হাদিস আছে যেখানে নিষেধ করছেন,এখন সহি আসলে কি একটু জানাবেন নবী নাকি যখন করছিলেন সেটা নাকি উনার কমর ব্যাথা ছিল দেখে করছিলেন? এই বিষয় এর হাদিস গুলা একটু জানাবেন
23 Dec 2025
বিভিন্ন হাদীসের আলোকে স্পষ্ট যে, রাসূল সা. এর সাধারণ অভ্যাস ছিল বসে প্রস্রাব করা। একটি ঘটনা পাওয়া যায় যে, তিনি দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন। সুতরাং সুন্নাত এবং স্বাভাবিক নিয়ম হলো, বসে প্রসাব করা । তবে দাঁড়িয়ে প্রসাব করা না জায়েজ নয়।
প্রশ্নঃ 59
জুমাআর দিনে ঈদ হলে কেও যদি ঈদ এর সালাত জামাতে পরে তবে তার জন্য কি জুমার সালাতে আসা জারুরি? নাকি সে জোহরের সালাত আদায় করবে? হাদিসের দলিল সহ জানালে খুশি হব। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বদলা দান করুন।
23 Dec 2025
এ বিষয়ে একটি হাদীসের অর্থ নির্ণয়ে মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ : اجْتَمَعَ عِيدَانِ فِي يَوْمِكُمْ هَذَا ، فَمَنْ شَاءَ أَجْزَأَهُ مِنَ الْجُمُعَةِ ، وَإِنَّا مُجَمِّعُونَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সা. বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আজ তোমাদের দুইটা ঈদ একত্র হয়েছে। যে চায় তার জন্য (ঈদের নমাায) জুমুআ হিসাবে যথেষ্ট। তবে আমরা উভয় নামাযই আদায় করব। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩১১। হাদীসটি সহীহ। অন্য একজন সাহাবী থেকেও সহীহ সনদে এমনটি বর্ণিত আছে। এ হাদীসের ভিত্তিতে কোনো কোনো মুহাদ্দিস ও ফকীহ বলেছেন যে, জুমুআর দিনে ঈদ হলে জুমুআর সালাত ঐচ্ছিক হয়ে যায়। তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফকীহ এ মতটির বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেন, মরুবাসী বেদুঈনদের জন্য জুমুআর সালাত ফরয নয়। এরূপ অনেক মরুবাসী বেদুঈন ঈদের দিনে ঈদ পালনের জন্য মদীনায় আগমন করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) মূলত তাদের জন্য এ কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ তোমরা মরুবাসীরা যারা চাও তারা চলে যেতে পার। তবে আমরা- মদীনাবাসীগণ জুমুআর সালাত আদায় করব। তোমরা ইচ্ছা করলে সে পর্যন্ত থাকতেও পার। নিম্নের বর্ণনাটি এ ব্যাখ্যা প্রমাণ করে: الشَّافِعِىُّ أَخْبَرَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِى عُبَيْدٍ مَوْلَى ابْنِ أَزْهَرَ قَالَ : شَهِدْتُ الْعِيدَ مَعَ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فَجَاءَ فَصَلَّى ثُمَّ انْصَرَفَ فَخَطَبَ فَقَالَ : إِنَّهُ قَدِ اجْتَمَعَ لَكُمْ فِى يَوْمِكُمْ هَذَا عِيدَانِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ أَنْ يَنْتَظِرَ الْجُمُعَةَ فَلْيَنْتَظِرْهَا ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَرْجِعَ فَلْيَرْجِعْ فَقَدْ أَذِنْتُ لَهُ অর্থ: ইমাম শাফেয়ী রহ.,ইমাম মালেক রহ. থেকে তিনি ইবনে শিহাব যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু উবাইদ বলেন, আমি ঈদের দিন উসমান রা. এর সাথে ছিলাম। তিনি আসলেন, নামায পড়ালেন অতঃপর খুৎবা দিতে গিয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আজ দুটি ঈদ একত্র হয়েছে। গ্রাম থেকে যারা এসেছে তারা যদি চাই জুমুআর নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে পারে আর যদি চাই ফিরে যেতে পারে। আমি তাদের অনুমতি দিলাম। আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্কী, হাদীস নং ৬৫১৬। ইমাম বাইহাক্কী রহ, বলেন, সনদ সহীহ। উক্ত হাদীসে আমরা দেখছি যে, উসমান রা. শুধু মরুবাসী বেদুঈনদের মানুষদের অনুমতি দিয়েছেন, শহরবাসীকে নয়। এর বিষয়টি এমন যে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বিষয়টি না জানলে তার পক্ষে ইবাদতের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। অন্য একটি হাদীসে আছে, عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ قَالَ : اجْتَمَعَ عِيدَانِ عَلَى عَهْدِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :্র مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجْلِسَ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ فَلْيَجْلِسْ فِى غَيْرِ حَرَجٍ অর্থ: উমার ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর সময় দুটি ঈদ একত্র হলো (ঈদ ও জুমুআ)। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সা.) বললেন, গ্রামের লোকদের মধ্যে যে বসতে চাই তার বসতে কোন সমস্যা নেই। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৬৫১৫। হাদীসটি মুরসাল। আরো একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. থেকে এমন বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে হাদীসটিকে ইমাম বায়হাক্কী যয়ীফ বলেছেন। দেখুন, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীস নং ৬৫১৪। উপরুক্ত দলীল সমূহের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, শহরবাসীর জন্য ঈদ ও জুমুআ উভয় নামাযই আদায় করতে হবে। আর মরুবাসী বেদুঈন লোকেরা চাইল শহরে এসে জুমুআ আদায় করতে পারে, না করলেও সমস্যা নেই। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক সহ অধিকাংশ আলিম ও ফকীহের অভিমত এটাই। শরহে আবু দাউদ লিল আইনি, ৪/৩৯৭; আল-ইসতিযকার,২/৩০৭; সুবুলস সালাম, ২/৫২; কিতাবুল উম্ম. ২/২৩৯। শেষ কথা: উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে,অধিকাংশ আলেমের নিকট যাদের উপর জুমুআর ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের দিনেও জুমুআ পড়তে হবে। আর যদি ধরেও নেই যে, ইচ্ছাধিকার সবার জন্য তবুও জুমুআর নামায আদায় করা সুন্নাত ও উত্তম। কেননা হাদীসে আমার দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমরা জুমুআ আদায় করব। আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 60
মুহতারাম আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন: জুম্মার ফরজ নামাজের পুর্বকালে তাহিয়াতুল মসজিদ ছাড়া কাবলাল জুম্মা সুন্নাত নামাজ পড়তে হবে কি? জুম্মার ফরজ নামাজের পরে কত রাকাত সুন্নাত পড়তে হবে? বিস্তারিত জানাবেন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সা. দুরাকআত সালাত আদায় করতে বলেছেন। জুমুআর দিনেও এই দুরাকআত সালাত আদায় করতে হবে। তবে এই সালাত আদায় না করে জুমুআর সুন্নাত আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। আর যদি মসজিদের মধ্যে না বসেই কেউ জুমআর সুন্নাত আদায় করে তাহলেও তার তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় হয়ে যাবে বলে আলেমগণ বলেছেন।
প্রশ্নঃ 61
মুহতারাম। আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্নঃ আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনি অবগত। এই অবস্থায় কোন মহিলা কি মুখ ও হাতের কবজি পর্যন্ত খোলা রেখে পুরুষের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী করতে পারবে? এতে করে কি পর্দা রক্ষা হবে? এভাবে চাকুরী করা কি জায়েজ হবে? বিস্তারিত জানালে খুশী হবো।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। একান্ত বাধ্য না হলে পুরুষদের মধ্যে কোনো অবস্থাতেই চাকরী করা ঠিক নয়। পোশাকের পর্দা ছাড়াও পর্দার একটি বড় দিক নারী পুরুষের একত্রে অবস্থান বর্জন করা। একান্ত বাধ্য হলেই শুধু নিজের পোশাকের পরিপূর্ণ পর্দাসহ চাকরী করবেন এবং সাথে সাথে পুরুষ সহকর্মীদের সাথে বা পাশে বসা ও তাদের সাথে খোশগল্প সম্পূর্ণ বর্জন করবেন। এরূপ গল্পগুজব ক্রমান্বয়ে অন্তর থেকে তাকওয়া দূর করে দেয়, এমনকি পারিবারিক জীবনও ভাল লাগে না; বরং কর্মস্থলে এসে গল্প করতেই অধিক ভাল লাগে। এগুলো মুমিন-মুমিনার জন্য অত্যন্ত কঠিন অবক্ষয়।
প্রশ্নঃ 62
একজন বড় ভাই তার ছোট ভাইকে সর্ব্বোচ্চ কোন স্তর পর্যন্ত শাসন করতে পারবে
23 Dec 2025
এটা মূলত পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে । পিতা যদি জীবিত থাকে তখন শাসন মূলত তার দায়িত্ব। পিতা যদি না থাকে আর বড় ভাই ছোট ভাইয়ের অভিভাবক হয় তাহলে শাসনের দায়িত্ব বড় ভাইয়ের উপর। মোটকথা কাগজে কলমে এটা লেখা সম্ভব নয়। অবস্থায় বলে দিবে বড় ভাই ছোট ভাইকে কতটুকু শাসন করতে পারবে।
প্রশ্নঃ 63
মুহতারাম। আস সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্নঃ ঘোড়ার মাংস, চিংড়ি, কাকড়া, কচ্ছপ খাওয়া জায়েজ কিনা?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। চিংড়ি খাওয়া জায়েজ, কোন সমস্যা নেই। তবে অন্যগুলোর ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ আছে। এগুলো না খাওয়ায় উত্তম।
প্রশ্নঃ 64
বেহেশতিজেওর বই সমনধে ঝানতে চাই। এই বই এর 3 অংশে যে শব কাহীনি আছে এবং তাবিঝ আছে তাকি ভাল।
23 Dec 2025
বেহেশতি জেওর একটি প্রাথমিক ফিকহি কিতাব। সাধারণ মানুষদের জন্য এটা সংকলন করা হয়েছে।তাবিজের বিষয়ে জানতে দেখুন, রাহে বেলায়াত বইটির শেষ অধ্যায়।
প্রশ্নঃ 65
ওযু করার সঠিক নিয়ম ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করলে উপকৃত হবো।
23 Dec 2025
ওযু করার নিয়ম ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো: প্রথমে নিয়ত করবে এরপর তিনবার করে কুলি করবে এবং নাকে পানি দিবে। এরপর মুখ তিনবার ধুবে। এরপর হাত তিনবার কুনুহ সহ ধুবে। অতঃপর পুরা মাথা একবার মাসেহ করবে। এরপর টাকনু সহ দুপা তিনবার ধুবে। হাত ও পা ধোয়ার ক্ষেত্রে আগে ডান তারপর বাম।
প্রশ্নঃ 66
বাংলাদেশে আমরা আরাফার দিনের সিয়াম কত তারিখে রাখব? সাউদিতে যেদিন হাজী সাহেব্ রা আরাফাতে অবস্থান করেন সেই দিন না বাংলাদেসের ৯ জিলহাজ্জ। কেননা চাদের হিসাবে সৌদি তে যেদিন আরাফা সেদিন বাংলাদেশ এ ৮ তারিখ হয় (সাধারনত)। আবার বাংলাদেশে ৯ জিলহাজ্জ তারিখে তো হাজী সাহেব্ রা আরাফাতে থাকেন না। এমাতবস্থায় আমরা বাংলাদেসের হিসাবে না সাউদির হিসাবে সিয়াম রাখব?
23 Dec 2025
অধিকাংশ আলেমের নিকট স্থানীয় তারিখ অনুযায়ী ৯ জিলহজ্জ রোজা রাখবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, হাজীরা যেদিন আরাফায় থাকবে সেদিন রোজা রাখবে।
প্রশ্নঃ 67
Now a days some brothers with Sahih Aqida are saying that we are suppose to follow Saudi for starting Ramadan, yaumul arafat fasting and celebration of Eid occassions. In relevance to their logic they are interpreting the hadiths accordingly. It seems OK when they present their arguments. I have read the relevant fiqh of Abd al-Aziz ibn Baz. In counter to their logic what are we suppose to do now?
23 Dec 2025
হাদীস শরীফে চাঁদ দেখে সিয়াম ও ঈদুল ফিতরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, যে কেউ যেখানে ইচ্ছা চাঁদ দেখলেই ঈদ করা যাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তার সাক্ষ্য গৃহীত হলে বা চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলেই শুধু ঈদ করা যাবে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সমাজের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঈদ পালন করতে নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: الْفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ النَّاسُ وَالأَضْحَى يَوْمَ يُضَحِّي النَّاسُ যে দিন সকল মানুষ ঈদুল ফিত্র পালন করবে সে দিনই ঈদুল ফিত্র-এর দিন এবং যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করবে সে দিনই ঈদুল আযহার দিন। তিরমিযী, আস-সুনান ৩/১৬৫ (কিতাবুস সাওম, বাবু মা জাআ ফিল ফিতরি ওয়াল আদহা মাতা ইয়াকূনু) তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মাসরূক বলেন, আমি একবার আরাফার দিনে, অর্থাৎ যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখে আয়েশা (রা)-এর নিকট গমন করি। তিনি বলেন, মাসরূককে ছাতু খাওয়াও এবং তাতে মিষ্টি বেশি করে দাও। মাসরূক বলেন, আমি বললাম, আরাফার দিন হিসাবে আজ তো রোযা রাখা দরকার ছিল, তবে আমি একটিমাত্র কারণে রোযা রাখি নি, তা হলো, চাঁদ দেখার বিষয়ে মতভেদ থাকার কারণে আমার ভয় হচ্ছিল যে, আজ হয়ত চাঁদের দশ তারিখ বা কুরবানীর দিন হবে। তখন আয়েশা (রা) বলেন: اَلنَّحْرُ يَوْمَ يَنْحَرُ الإِمَامُ وَالْفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ الإِمَامُ যেদিন রাষ্ট্রপ্রধান কুরবানীর দিন হিসাবে পালন করবেন সে দিনই কুরবানীর দিন। আর যেদিন রাষ্ট্রপ্রধান ঈদুল ফিতর পালন করবে সে দিনই ঈদের দিন। বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৫/১৭৫; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৯০; মুনযিরী, তারগীব ২/৬৮। মুনযিরী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। মুমিনের জন্য নিজ দেশের সরকার ও জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে ঈদ করা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নির্দেশ। অন্য দেশের খবর তো দূরের কথা যদি কেউ নিজে চাঁদ দেখেন কিন্তু রাষ্ট্র তার সাক্ষ্য গ্রহণ না করে তাহলে তিনিও একাকী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিপরীতে ঈদ করতে পারবেন না। সাহাবী-তাবিয়ীগণ বলেছেন যে, এক্ষেত্রে ভুল হলেও ঈদ, হজ্জ, কুরবানী সবই আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ভুলের জন্য মুমিন কখনোই দায়ী হবেন না। ইবনু হাজার, তালখীসুল হাবীর ২/২৫৬। বর্তমানে সারা বিশ্বে একদিনে ঈদ বিষয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। তবে সকল দেশে একদিনে ঈদ পালনের নামে একই দেশে একাধিক দিনে ঈদ পালন নিঃসন্দেহে ইসলামী নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক। বিষয়টি নিয়ে তাত্ত্বিক গবেষণা ও মতবিনিময় অবশ্যই হতে পারে। রাষ্ট্র যদি ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্য কোনো দেশের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণ করে ঘোষণা দেয় তবে জনগণ তা অনুসরণ করবে। তবে আমাদের বুঝতে হবে যে, মহান আল্লাহ ইসলামকে সহজ-পালনীয় করেছেন। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে বিশ্বের কোথাও চাঁদ উঠলে সকল দেশেই তা জানা সম্ভব। কিন্তু অতীতে তা ছিল না। আর দূরবর্তী এলাকার চাঁদের খবর নিতে কেউ চেষ্টা করেন নি। মদীনায় চাঁদ দেখার পরে -ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহায় রাতারাতি বা ৯ দিনের মধ্যে- দ্রুত দূরবর্তী অঞ্চলে সংবাদ প্রদানের চেষ্টা বা সর্বত্র একই দিনে ঈদ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার চেষ্টা রাসূলুল্লাহ সা. বা খুলাফায়ে রাশেদীন করেন নি। সাহাবীগণের যুগ থেকেই একাধিক দিবসে ঈদ হয়েছে। মুসলিম, আস-সহীহ ২/৭৬৫ (কিতাবুস সাওম, বাবু … লিকুল্লি বালাদিন রুইয়াতুহুম)। একাধিক দিনে ঈদ পালন বিষয়ক হাদীসটি উদ্ধৃত করে ইমাম তিরমিযী বলেন: وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنَّ لِكُلِّ أَهْلِ بَلَدٍ رُؤْيَتَهُمْ আলিমগণের সিদ্ধান্ত এ হাদীসের উপরেই: প্রত্যেক দেশের মানুষ তাদের নিজেদের চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করবে । তিরমিযী, আস-সুনান ৩/৭৬ (কিতাবুস সাওম, বাবু …লিকুল্লি আহলি বালাদিন রুইয়াতুহুম)। বস্তুত, সাহাবী-তাবিয়ীগণ ও পরবর্তী আলিমগণ বিভিন্ন দেশে একাধিক দিনে ঈদ পালনকে ইসলামী নির্দেশনার বিরোধী বলে গণ্য করেন নি। পক্ষান্তরে একই রাষ্ট্রের মধ্যে বা একই ইমামের (রাষ্ট্রপ্রধানের) অধীনে একাধিক দিনে ঈদ পালনকে সকলেই নিষিদ্ধ, অবৈধ ও ইসলামী নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক বলে গণ্য করেছেন। শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. একই দিনে সারা বিশ্বে ঈদ আদায় করার কথা বলেন নি।
প্রশ্নঃ 68
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, রাফউল ইয়াদাইন ছাড়া নামাজ কি সুন্নাহ নির্দেশিত? এই ব্যাপারে যদি সহিহ হাদীস থাকে তাহলে জানালে খুব উপকৃত হবো।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। রাফয়ে ইয়াদায়ন করার ব্যাপারে হাদীস কয়েক ধরনের। কোন হাদীসে একবার (শুধু নিয়্যত করার সময়) কোন হাদীসে ৩ বার, কোন হাদীসে প্রত্যেক ওঠা-বসার সময় ইত্যাদী। আমার মনে হয়ে আপনি প্রথমটি অর্খাৎ শুধু নিয়ত করার সময় বাদে অন্য সময় রাফয়ে না করলে নামায হবে কিন তা জানতে চেয়েছেন। হ্যাঁ, এমন করলেও নামায সুন্নাহ সম্মত হবে। হাদীসটি দেখুন: – حدثنا هناد حدثنا وكيع عن سفيان عن عاصم بن كليب عن عبد الرحمن بن الأسود عن علقمة قال قال عبد الله [ بن مسعود ] : ألا أصلي بكم صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم ؟ فصلى فلم يرفع يديه إلا في أول مرة অর্থ[: আলকমাহ থেকে বণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর নামায পড়ব না? এরপর তিনি নামায পড়লেন, তিনি শুধু একবারই হাত উঠালেন। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ২৫৭। হাদীসটি বর্ণনা করার পর ইমম তিরমিযী বলেন, حديث ابن مسعود حديث حسن وبه يقول غير واحد من أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم والتابعين ইবনে মাসউদ রা. এর হাদীসটি হাসান। এভাবে আমল করতে বলেছেন, অনেক সাহাবী ও তাবেঈ। قال الشيخ الألباني : صحيح শায়েখ আলবানী রহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ ও যয়ীফ সুনানে তিরমিযী,হাদীস নং ২৫৭। অন্যান্য মুহাদ্দিসগণও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আরো বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখুন রফেউল ইয়াদাইন নিয়ে ঝগড়ার নিরসন “””””
প্রশ্নঃ 69
ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম হারাম। আমি যদি কোন কারনে খুব কষ্টে না পেরে প্রেমের সম্পর্কে থাকি তাহলে কি আমার নামাজ আমার রোজা আমার সবরকম ভাল আমল গুলা আল্লাহতালার কাছে গ্রহণীয় হবে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে। তাওবা করলে আল্লাহ তায়ালা সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। একটা গোনাহর কাজে লিপ্ত হলে অন্য নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে, বিষয়টি এরকম ন। গোনাহর কাজের জন্য গোনাহ হবে আবার সওয়াবের কাজের জন্য সওয়াব হবে। আপনি যে গোনাহর কথা বলেছেন তা খুবই জঘন্য পাপ। এর থেকে বের হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তার একটি পথ এটা হতে পারে যে, উভয় পরিবারের সম্মতিতে আপনারা শুধু বিয়েটা এখন করে নিন। এরপর যে যার অবস্থানে থেকে পড়াশোনা করতে থাকুন। যখন আপনার সচ্ছল হবেন কিংবা সংসার করার মত পরিবেশ হবে তখন সংসার শুরু করবেন। তবে একটা কথা বলে রাখি অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। আর কোন অযুহাতেই এই ধরনের সম্পর্ক ইসলামা সমর্থন করে না। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন। আমীন।
প্রশ্নঃ 70
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। টাকনুর নিচে কাপর পড়ে সালাত আদায় করলে অজু নস্ট হবে কি না?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম।না, টখনুর নিচে কাপড় পরে সালাত আদায় করলে ওযু নষ্ট হয় না। তবে টাখনুর নিচে কাপড় পরা সর্বাবস্থায় মারাত্নক গোনাহের কাজ । আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ. অর্খাৎ টাখনুর নিচের যে অংশে পায়জামা (পরিধানের পোশাক) থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। সহীহ বুখারী,হাদীস নং ৫৭৮৭। পায়জামা বলতে এখানে লুঙ্গি, প্যান্ট এবং অন্যান্য সকল পোশাক উদ্দেশ্য। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 71
বাসর রাতের শরীয়তসম্মত আমল কি কি?
23 Dec 2025
বাসর রাতই দম্পতির জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দঘন রাত। মানবীয় প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রেররণায় নবদম্পতি পরস্পরকে আপন করে নেবে। তবে শুরুতেই দুআ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাদীস শরীফে। বর তার নববধূর মাথার সম্মুখভাবে হাত রেখে আল্লাহর নাম নেবে এবং আল্লাহর কাছে নববধুর কল্যান কামনা করে এবং সকল অকল্যান থেকে আশ্রয় চেয়ে দুআ করবে। এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এবং অন্যান্য সাহাবী পরামর্শ দিয়েছেন যে, স্বামী নববধুকে পিছনে নিয়ে একত্রে দু রাকআত সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে সম্প্রীতি, বরকত ও কল্যানের জন্য দোয়া করবে। বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. রচিত আদাবুয যিফাফ বইটি।
প্রশ্নঃ 72
Assalamualaikum, sir,I want to know about la majhabi. If i do not follow only one imam its call la majhab in our socity. but I try to my best what i known about hadith to follow. I am not a student of madrasa do not read in islamic study. I accept some alem who are in sohi akdia (that i mind) as example Abdullah jahangir, motiur rahman madani, mufti kazi ibrahim, abdur razzak bin yousuf, sohidullah khan madani. kamal uddin jafari also some other alem. If it is Enough for me to pray for allah? Or i am needed to follow any imam from our 4 imam. Hope you will understand my Quistion.
23 Dec 2025
Wa Alaikumus Salam Wa Rahmatullah. What you do is the same that the followers of Madhabs do. They also accept some scholars and follow them. The main duty of a Muslim is to follow the Quran and Sunnah. But the most of the muslims can not study them. So the depend of mazhabs or scholars. You should try your best to study the Quran and sunnah yourself. If not possible, you should follow one Alim and make your decision depending on Sunnah, not on your personal trend or choice.
প্রশ্নঃ 73
১. বিতির এর সালাতে আমারা ৩য় রাকাতে কিরাত এর পর তাকবির বলে রাফা ইয়াদাইন করে হাত বেধে কুনুত পরি এর সহিহ দলিল আছে কিনা? থাকলে জানতে চাই। ২. হাজিদের ঈদ এর সালাত পরা লাগে না কেন?
23 Dec 2025
১। বিতর সালাত বিষয়ে দেয়া আমাদের উত্তরগুলো দেখুন। ২। হাজীগণ হজ্বের বিভিন্ন কাজে লিপ্ত থাকেন এবং মুসাফিরের হুকুমে থাকেন তাই শরীয়ত তাদের জন্য ঈদের নামাজ ওয়াজিব করে নি।
প্রশ্নঃ 74
মুহতারাম। আস-সালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হল ১. বিতির এর সালাতের শেষ রাকাতে কুনুত এর আগে তাকবির সহ যে রাফাউল ইয়াদাইন করে হাত বেধে কুনুত পরার যে নিয়ম চালু আছে, তার দলিল সম্পরকে। আমি জানতে চাই কুনুত এর আগে তাকবির বলা এবং রাফাউল ইয়াদাইন করে হাত বাধার কোন সহিহ দলিল আছে কিনা। ২. বিতির এর সালাতের দিতীয় রাকাতে বইঠক এর কোন সহিহ দলিল আছে কিনা।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার প্রথম প্রশ্নের মধ্যে তিনিটি বিষয় রয়েছে। ১। বিতর নামাযে তাকবীর দিয়ে কুনুত। ২। কুনুতের সময় হাত উঠানো। ৩। কুনুতের পূর্বে নতুন করে হাত বাঁধা। নিচে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। বিতর নামাযে তাকবীর দিয়ে কুুনুত: তাকবীর দিয়ে কুনুত পড়ার বিষয়ে একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, كَانَ عَبْدُ اللهِ لَا يَقْنُتُ إِلَّا فِي الْوِتْرِ، وَكَانَ يَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ، يُكَبِّرُ إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَتِهِ حِينَ يَقْنُتُ অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতরের সালাতেই কুনুত পড়তেন। আর তিনি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়তেন। যখন কুরআন পড়া শেষ করতেন তখন তাকবীর দিয়ে কুনুত পড়তেন। শরহে মুশকিলিল আছার, হাদীস নং ৪৫০৪, ১১/৩৭৪। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাতে (হাদীস নং ৭০২১)ভিন্ন সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। উভয় হাদীসের সনদে দূর্বলতা আছে। তবে দ্বিতীয় হাদীসটি প্রথম হাদীসের বক্তব্যকে সমর্থন করায় শায়খ শুয়াইব আর নাউত প্রথম হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। দেখুন: শরহে মুশকিলিল আছার, ১১/৩৭৪। এই হাদীসে আমরা দেখছি সাহবী ইবনে মাসউদ কুনুত পড়ার পূর্বে তাকবীর দিতেন। কুনুতের সময় হাত উঠানো: ফজরের নামাযের কুনুতের সময় উমার রা. হাত উঠাতেন বলে বর্ণিত আছে। হাদীসটি হলো, عَنْ أَبِى عُثْمَانَ قَالَ : صَلَّيْتُ خَلْفَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَرَأَ ثَمَانِينَ آيَةً مِنَ الْبَقَرَةِ ، وَقَنَتَ بَعْدَ الرُّكُوعِ ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ ، وَرَفَعَ صَوْتَهُ بِالدُّعَاءِ حَتَّى سَمِعَ مَنْ وَرَاءَ الْحَائِطِ অর্থ: আবী উসমান রহ. বলেন, আমি উমার রা. এর পিছনে নামায আদায় করলাম তিনি সূরা বাকারাহ থেকে আশিটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। তিনি রুকুর পরে কুনুত পড়লেন এবং তার দুহাত উত্তোলন করলেন এমন কি আমি তার বগলের সাদা অংশ দেখে ফেললাম। তিনি এতো উচ্চস্বরে দোয়া করলেন যে, দেয়ালের পিছনে যারা আছে তারাও শুনতে পেলো। আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৩২৭৪। একই হাদীস আরো দুটি সনদে তিনি উল্লেখ করেছেন। দেখুন ৩২৭৩ এবং ৩২৭৫ নং হাদীস। ৩২৭৫ নং হাদীসের পরে ইমাম বায়হাক্কী রহ. বলেছেন, وَهَذَا عَنْ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ صَحِيحٌ এটা উমার রা. থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত। উপরের হাদীসটি আরো বর্ণিত আছে মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বাতে। হাদীস নং ৭১১৪ এবং ৭১১৫। এই হাদীসটির সমস্ত বর্ণনাগুলো একত্র করলে দেখা যায় এটা ফজরের নামাযের ঘটনা। আর বিভিন্ন সনদে হাদীসটি বর্ণিত হওয়ায় হাদীসটি সহীহ কিংবা হাসান পর্যায়ের হবে। এই হাদীস থেকে বুঝা যায় দুআ কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো যায়। তবে হাত উঠিয়ে তিনি আমাদের দেশের মোনাজাত করার মত করতেন না কান পর্যন্ত উঠাতেন তা স্পষ্ট নয়। কোন কোন সাহবী থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা মোনাজাতের মত করে হাত তুলতেন। কুনুতের পূর্বে নতুন করে হাত বাঁধা: এই মর্মে কোন হাদীস বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে এই ভাবে বিতর পড়াকে আলেমগণ সুন্নাহ সম্মত বলেছেন। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য এসম্পর্কে আমাদের দেয়া অন্য প্রশ্নর উত্তর দেখুন।
প্রশ্নঃ 75
May the peace of allah be upon on you,.i am from west bengle, mursidabad.. Amar prasna -about taqdir ami jantam je (1) allah manus create korechen .2)manur ke free will dewa ache and 3) according to this the exam would be happend ..,. But in your book i have gotten 1) allahor will and knowladge a sob hoi (islami aqida-pg-344,346) 1) allah knows all.2) alahor capture a sob. These are in my knowldge but sir i dont understand that sob allaho ichchai hoi..wassalam
23 Dec 2025
আল্লাহর বিশেষণের বিষয়ে বৈপরীত্য কল্পনার একটি দিক তাকদীর। কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা আল্লাহর অনাদি-অনন্ত, সর্বব্যাপী জ্ঞানের কথা, তাঁর ক্ষমতা ও ইচ্ছার কথা জানতে পারি এবং পাশাপাশি আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায়বিচার ও করুণার কথা জানতে পারি। অনেকে এ দু বিশেষণের মধ্যে বৈপরীত্য কল্পনা করেছেন। প্রথম বিশেষণের মাধ্যমে আমরা জানি যে, মহান আল্লাহর অনাদিকাল থেকে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কে, কখন, কিভাবে কি কর্ম করবে তা সবই জানেন। আমরা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে জানি যে, মহান আল্লাহ তাঁর এ জ্ঞান লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। আমরা আরো জানি যে, মহান আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের ন্যূনতম দাবি যে, তাঁর জ্ঞানের অগোচরে ও ইচ্ছার বাইরে পৃথিবীতে কিছুই ঘটতে পারবে না। এ থেকে কেউ কেউ দাবি করেছেন যে, তাহলে মানুষ যা কিছু করে তা আল্লাহর নির্দেশেই করে, কাজেই মানুষের কর্মের জন্য তাকে অপরাধী বলে গণ্য করা যায় না। এরা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা, আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা ও কর্মফল বিষয়ক আয়াত ও হাদীসগুলো বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে বাতিল করেন। অপরদিকে কেউ কেউ মনে করেন যে, আল্লাহর জ্ঞান, লিখন ও ইচ্ছার এ সকল বিষয় তাঁর ন্যায়পরায়ণতার বিশেষণের সাথে সাংঘর্ষিক। কাজেই ন্যায়পরায়ণতার বিশেষণ গ্রহণ করে অন্যান্য বিশেষণ ব্যাখ্যা করে বাতিল করতে হবে। আসলে এ সবই আল্লাহর বিশেষণকে মানুষের বিশেষণের সাথে তুলনা করার ফল। আল্লাহর ক্ষেত্রে তাঁর সর্বব্যাপী জ্ঞান, লিখনি ও ইচ্ছার সাথে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা, ও ন্যায়বিচারের কোনোরূপ বৈপরীত্য নেই। মুমিন সরল ও সহজ অর্থে উভয় প্রকারের বিশেষণ বিশ্বাস করবেন। সমন্বয়ের জন্য এ বিষয়ক মূলনীতি অনুসরণ করবেন। কোনোভাবেই একটি প্রমাণ করার জন্য অন্যটি ব্যাখ্যা করে বাতিল করবেন না। তাকদীরে বিশ্বাস অর্থ আল্লাহর জ্ঞান ও আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা উভয় বিশেষণে সমানভাবে বিশ্বাস করা। আল্লাহর নির্ধারণে অবিশ্বাস করলে আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতায় অবিশ্বাস করা হয়। আর মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায় অবিশ্বাস করলে আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা ও করুণায় অবিশ্বাস করা হয়। এ অবিশ্বাসের শুরু মহান আল্লাহর বিশেষণ ও কর্মকে মানুষের বিশেষণ বা কর্মের মত বলে বিশ্বাস করা থেকে। আল্লাহর সকল বিশেষণ সমানভাবে প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করলে এ বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা থাকে না। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। মনে করুন, আল্লাহর নির্ধারণ যে, বিষ মৃত্যু আনে। মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন যে, বিষ মৃত্যু আনে। এরপরও কেউ বিষ পান করলে সে মৃত্যু বরণ করবে। তবে তা আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞান অনুসারে ঘটবে। আল্লাহ তাঁর অনন্ত জ্ঞানে জানেন যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে স্বেচ্ছায়, বাধ্য হয়ে, জেনে বা না-জেনে বিষ পান করবে। তিনি তাঁর এ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে ঐ ব্যক্তির ইচ্ছা শক্তি হরণ করে তাকে বিষপান থেকে বিরত রাখতে পারেন বা বিষের ক্রিয়া নষ্ট করে বিষপানকারীকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারেন। আল্লাহর জ্ঞান, লিখনি বা তাকদীর অনুসারে বিষপানকারীর মৃত্যু আসবে অথবা আসবে না। বিষপানকারী বিষপানে তার ইচ্ছা, অনিচ্ছা ও কর্ম অনুসারে পাপ বা পুণ্য লাভ করবে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন, আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ১৭৮-১৮৩।
প্রশ্নঃ 76
মুনাজাত কি দিয়ে আরম্ভ করা সুন্নাত? দলিল সহ জানাবেন।
23 Dec 2025
এমন কোন সুনির্দিষ্ট দুআ নেই যার মাধ্যমে দুআ বা মুনাজাত আরম্ভ করা সুন্নাত। তবে দুআ করার কিছু আদব আছে। যেমন,দুআর শুরতে ও শেষে দরুদ শরীফ পাঠ করা, দুআর মধ্যে ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম বলা, দুআর সময় ক্বিবলামুখী হওয়া ও দুই হাত বুক পর্যন্ত কিংবা তারো বেশী উঠানো ইত্যাদি। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত রাহে বেলায়াত বইটি।
প্রশ্নঃ 77
আসসালামু আলাইকুম, স্যার, আমি আমার আগের প্রশ্নের সাথে কিছু যোগ করতে চাই। আমি যে মেয়েকে বিয়ে করতে চাই তাকে আমার মা গতকাল বলে এসেছে তুমি আমার ছেলের পথ থেকে সরে যাও। তোমাকে আমার ছেলে ছাড়া কেউ পছন্দ করছে না। আমি তার সাথে গত মাসের ২১ তারিখের আগে সর্বশেষ কথা বলেছিলাম। তাতে আমার কাছে তাকে ধার্মিকা ও শরীয়ত সমপরকে অবহিতা মনে হয়েছে। কখনই তাকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে হয়নি। তাকে যখন দেখি আমার মনে হয়নি তার ভ্রূ প্লাক। তাকে আমার কাছে অনেক সুন্দরী মনে হয়েছে ও লম্বাও আমার কাছাকাছি মনে হয়েছে। অথচ আমার মা আমাকে বলেছে তার ভ্রূ প্লাক করা, খাটো, পাগল, মেকআপ করা বলেছে। আমার জানামতে সে নেকাবসহ বোরখা পরে। আমার সাবেক স্ত্রীর সাথে বিয়ের আগের দিন তার ছবি দেখে বলেছিলাম সে ভ্রু প্লাক করে। কিন্তু তখন এটাকে গুরুত্ব দেয়নি। বলেছিল বিয়ের পর নিষেধ করলে ঠিক হয়ে যাবে। তার মেকআপ ছিল অথচ বিয়ের আগ পর্যন্ত আমার মা ভাবি কেউই বুঝতে পারেনি। আমি আমার মাকে প্রায় দেড়মাস আগে আমার পছন্দের মেয়েটিকে দেখতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আমার মা আমার অনুরোধ রাখেনি। তাদের পছন্দের মেয়েকে আমার উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সাথে সাথে আমার পছন্দের মেয়ের প্রতি আমার দু্রবলতা বেড়েছে। তাকে গতকাল চরমভাবে অপমান করার কারণে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তার স্কুলে গিয়ে তাকে এভাবে অপমান করাটা আমাকে ভীষণভাবে পীড়িত করছে। আমি তাকে মার্চ এর ৪ তারিখে দেখেছিলাম। আমি তার লেখাপড়া, চাকরি প্রভৃতি জানার পর আমার নিজের বরণনা দিয়ে বললাম আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়লেও আমি নিজেকে সাধ্যমত নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি ও আমি ক্লাস ফোর থেকে নামাজ পড়ি। সে বলল মানুষের ঈমানটাই আসল। আমি এটা শুনে খুব খুশি হলাম। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনারস মাষ্টারস করেছি অথচ আমার পিতামাতা আমার মতামতের মূল্য দেয়না। এখন আমি কি করব স্যার? তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছে ঐ মেয়েকে বিয়ে করলে তারা আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। আমি আমার পিতামাতাকে হারাতে চাই না আবার এই কষ্টও সহ্য করতে পারছি না।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার পিতামাতকে লোভী ও ধর্মবিমূখ মনে হচ্ছে। মেয়েটিকে হুমকি দেয়া তার জন্য বড় ধরনের অপরাধ। আপনি সবর করুন। নিচের দু্আগুলো পড়ুন। ইনশাআল্লাহ একটা সমাধান পাবেন। তবে তাদের কথামত ধর্মহীন কোন মেয়েকে অবশ্যই বিয়ে করবেন ন। আপনার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করার অধিকার আপনার আছে। আপনি রাহে বেলায়েত গ্রন্থের ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ১৫৭, ১৮৮, ১৯২ নং দুআগুলো নফল সালাতের সাজদাতে এবং অন্যান্য সময় বেশী বেশী পাঠ করুন। এছাড়া কুরআনের এই দআটিও সালাতে এবং অন্যান্য সময় বারবার পড়বেন, رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ আমরা আপনার জন্য দুআ করি আল্লাহ যেন আপনার সব সংকট দূর করে দেন।
প্রশ্নঃ 78
fazaeel ee amal grontho gulo somporke apnader motamot ki?
23 Dec 2025
ফাযায়েলে আমল জাতীয় গ্রন্থ, তারগীব তারহীব ইত্যাদি গ্রন্থে সহীহ, যয়ীফ ও জাল হাদীস বিদ্যমান। এরূপ অনেক গ্রন্থেই বিদ্যমান। পাঠকদের উচিত হাদীস যাচায় বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মতের উপর নির্ভর করা এবং যাচাই ছাড়া কোনো হাদীস গ্রহণ না করা
প্রশ্নঃ 79
বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা এবং সাধারণ শিক্ষা পাঠক্রম: ইতিহাস এবং তুলনা artical banglata chai
23 Dec 2025
আমরা এখানে মাসআলা মাসায়েল বিষয়ে আলচনা করি। আর্টিকেল নয়। এই বিষয়ে একটি আরবী আর্টিকেল আছে পড়ে নিতে পারেন।
প্রশ্নঃ 80
পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার বিধান
23 Dec 2025
বিস্তারিত জানতে এহইয়াউস সুনান (৩৮৬পৃষ্ঠা থেকে ৩৮৮পৃষ্ঠা) পড়ুন। এক কথায় এরূপ করা সুন্নাত নয় ও ইসলামী আদব নয়।
প্রশ্নঃ 81
প্রিয় স্যার, আচ্ছালামু আলাইকুম, আমাদের দেশে প্রায় সকল মসজিদের মেহরাবে এক পার্শ্বে আল্লাহ অপর পার্শ্বে মুহাম্মদ (ﷺ) লেখা থাকে। এই লেখাটা ঠিক কি না? এছাড়া উক্ত নামের নীচেই কাবা এর ছবি এবং রওজা মুবারকের গম্বুজ ও থাকে। এটা কি শরীয়ত সম্মত কি না। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে অনুরুপ কিছু লেখা/ছবি আছে কি? মোঃ জাহিদুল আলম
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এরূপ লেখা ঠিক নয়। (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) ও (মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) দুটি বাক্য লেখা যেতে পারে, তবে সালাতে দাঁড়ালে মুসল্লীর নজরে পড়ার স্থানের উপরে লেখা উচিত। কেবলার দিকে এরূপ ছবি রাখাও ঠিক নয়। মসজিদে ননবীতে মাথার উপরে পিলার ও ঝাড়বাতিতে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) লেখা আছে এবং আরো অনেক আয়াত ও হাদীস লেখা আছে।
প্রশ্নঃ 82
Will my salah and other ibadah be accepted by Allah?
23 Dec 2025
You are eating from your income. So, there is no problem. It is your Fardh (obligatory) Duty to serve your parents. So stay with them and serve them. Try your best to make all expenses from your income. Pray to Allah for your parents hedayat. In any case you are not permitted to misbehave with them. See Sura Luqman 15 ayat
প্রশ্নঃ 83
Assalamu alaikum .. Sir I hv some problm on wearing of leather belt in namaz . As it permissible in namaz or not if not thn it makrooh or haram or other subcategory plz help . And also if leather is taken through halal way from animal like Ox ..cow etc. Plz hlp with refence.
23 Dec 2025
Wa Alaikumus Salam Wa Rahmatullah. No problem in wearing leather belt in namaz.
প্রশ্নঃ 84
to know about one hadeet regarding prophet (pbuh) is made of nur.
23 Dec 2025
It is a false and baseless hadith. in furfura shareef website which is conducted by hooghly furfuras,there have mentioned one point regarding aqidah that the soul of our nabi(s.a) is present where discuss about the religion of islam. is it correct or not please specify valuable information about this. Ans: It is not correct. They should proof their theory by explicit text from Quran or Hadith.
প্রশ্নঃ 85
Sir, The man who said Allah is everywhere Can I pray (Shala) behind him?
23 Dec 2025
কথাটি ঠিক নয়। তবে যে মুসলিম এ কথা বলেন তাকে সরাসরি কাফির বলা যাবে না। কারণ কুরআনের বিভিন্ন বক্তব্যের এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা। আল্লাহ বলেছেন তিনি বান্দার কাছে এবং সাথে। তিনি বলেছেন তিনি আল্লাহ আসমানে এবং যমীনে। এ সকল আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা থেকে এরূপ কথা এসেছে। আমরা কথাটিকে ভুল ও ইসলাম বিরোধী বলব এবং সঠিক কথা মানুষদের বুঝাব। তবে এরূপ ব্যাখ্যা মুমিনের জন্য একটি ওজর। এরূপ ওজরের কারণে এরূপ ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির বলা যায় না। আর যাকে কাফির বলা যায় না তার পিছনে সালাত পড়া বৈধ। বিশেষত অন্য কোনো ভাল ইমান না পেলে তার পিছনে পড়তে হবে। জামাতে সালাত বাদ দেওয়া যাবে না। বিস্তারিত আল-ফিকহুল আকবার এবং ইসলামী আকীদা বইদুটিতে পড়ুন।
প্রশ্নঃ 86
আস-সালামু আলাইকুম, শায়খ আপনার কাছে অনুরোধ কোন ব্যক্তি যদি নামাজরত আবস্হায় থাকে তবে তার সামনে দিয়ে যাওয়ার বিধান ও হাদিস বর্ননা করবেন কি? খুব উপকৃত হতাম।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া জায়েজ নেই। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيِ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ قَالَ أَبُو النَّضْرِ لاَ أَدْرِي أَقَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ، أَوْ شَهْرًا ، أَوْ سَنَةً নামাযরত ব্যক্তির সামানে দিয়ে যাতায়াতকারী ব্যক্তি যদি জানতো এতে কি পরিমাণ গুনাহ হয় তাহলে সে সামনে দিয়ে যাওয়ার চেয়ে চল্লিশ ( দিন,মাস কিংবা বছর উদ্দেশ্য, বর্ণনা স্পষ্ট নয়) দাঁড়িয়ে থাকাকে উত্তম মনে করত। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১০। মুসনাদে বায-যারে (হাদীস নং ৩৭৮২) আছে চল্লিশ বছর। তবে সামনে কতুটুকু পরিমান জায়গার মধ্যে যেতে পারবে না সে বিষয়ে মতভেদ আছে। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, وَاخْتُلِفَ فِي تَحْدِيدِ ذَلِكَ فَقِيلَ إِذَا مَرَّ بَيْنَهُ وَبَيْنَ مِقْدَارِ سُجُودِهِ ، وَقِيلَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَدْرَ ثَلَاثَةِ أَذْرُعٍ وَقِيلَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَدْرَ رَمْيَةٍ بِحَجَرٍ অর্থ: এর সীমা নিয়ে মতভেদ আছে। কারো মতে, সিজাদা দেয়ার স্থান পর্যন্ত, কেউ কেউ বলেন, তিন হাত, আবার কেউ কেউ বলেন, পাথর নিক্ষেপ করলে যতুটুকু যায় সেই পরিমাণ। ফাতহুল বারী, ১/৫৮৫ (শামেলা)। এজন্য সর্বদা সালাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া পরিহার করবেন। একান্ত বাধ্য হলে অন্তত দু কাতার দূর থেকে যাবেন।
প্রশ্নঃ 87
assalamualaikum,sir, emamer pisone sura fatiha pora ki foroj? othoba konsomay sura fatiha porta hobe? sura fatiha emamer pisona na porlay namaj hobe ki?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তির জন্য সূরা ফাতিহা পডতে হবে। তবে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে কি না এই নিয়ে আলেমদের মাঝে কয়েকটি মত রয়েছে রয়েছে। এক. নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। দুই. ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযে অর্থাৎ যে সব নামাযে স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় সে সব নামাযে সূরা ফাতিহা পড়বে না। অর যে সব নামাযে কুরআন নিঃশব্দে পড়া হয় অর্থাৎ জোহর এবং আসরের নামাযে পড়া মুস্তাহাব। তিন. ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযে অর্থাৎ যে সব নামাযে স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় সে সব নামাযে সূরা ফাতিহা পড়বে না। অর যে সব নামাযে কুরআন নিঃশব্দে পড়া হয় অর্থাৎ জোহর এবং আসরের নামাযে পড়া আবশ্যক। চার. কোন সময়ই ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়বে না। দলীলের আলোকে মনে হয় সরব নামাযে, অর্থাৎ স্বশব্দে কুরআন পড়া হয় এমন নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না আর নীরব নামাযে, অর্থাৎ নিঃশব্দে কুরআন পড়া হয় এমন নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদিও সূরা পড়বেন। দলিলসহ বিস্তারিত আলোচনা ইনশা আল্লাহ পরবর্তীতে ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রচার করা হবে।
প্রশ্নঃ 88
বর্তমানে বাজারে যে সকল perfume পাওয়া যায় সেগুলোর ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি?আমি JOVAN- black musk নামক একটি perfume gift পেয়েছি। এটি ব্যবহার করতে ইতস্তত বোধ হচ্ছে। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার এ ব্যাপারে তাঁর মতামত ব্যাক্ত করলে কৃতজ্ঞ হব। perfume টার ingredients গুলো attachment এ দিয়ে দিলাম। ওয়াসসালামু আলাইকুম।
23 Dec 2025
এলকোহল একটি কেমিক্যাল টার্ম, এ দ্বারা সর্বদা মদ বুঝানো হয় না। পারফিউমে ব্যবহৃত এলকোহল সাধারণত মাদক হয় না, অনেক সময় বিষাক্ত হয়, যা পান করলে মাতাল না হলেও মৃত্যু হতে পারে। এ ধরনের এলকোহল মিশ্রিত পারফিউম ব্যবহার বা এলকোহল মিশ্রিত পানি দিয়ে জীবানুমুক্ত হওয়া ইত্যাদি বৈধ। এতে দেহ বা পোশাক নাপাক হবে না।
প্রশ্নঃ 89
আস-সালামু আলাইকুম। বিদ আত মুক্ত আমল করব কিভাবে? এক এক জন এক এক ভাবে ব্যাখ্যা করে । কোণটা সঠিক বোজার উপায় কি?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনি একজন গবেষক আলেমের পরামর্শ নিয়ে চলুন। যে আলিমকে ইলম ও আমলে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় তার পরামর্শ গ্রহণ করুন। পাশাপাশি নিজে অধ্যয়ন করতে থাকুন।
প্রশ্নঃ 90
Hujur amar meyer boyos 8 mash. Ami ki eid er por meyer name akika korte parbo? R apni India asle janaben. Amar mobile no. 9339021234. Apnar kach theke ami anek kichu sikhchi.
23 Dec 2025
জন্মের ৭ দিনে আকীকা করা সুন্নাত। তখন না করে থাকলে যে কোন সময় করতে পারবেন সমস্যা নেই।
প্রশ্নঃ 91
Sir said Allah is with us. I want to know how Allah with us.
23 Dec 2025
মহান আল্লাহর বিষয়ে কিভাবে প্রশ্নটিই অবান্তর। মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তিনি আমাদের সাথে এবং নিকটে।তিনি সর্বদা আমাদের সবকিছু দেখছেন, শুনছেন এবং আমাদের হেফাযত ও রহমত করছেন। তাঁর বিশেষণগুলো ব্যাখ্যাতীত ভাবে বিশ্বাস করাই ঈমানের দাবি। আল-ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যাটি পাঠ করলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
প্রশ্নঃ 92
আক্বীকা আদায় না করে ঐ ব্যক্তি কোরবানি আদায় করতে পারবে কি? আমার আক্বীকা আদায় করেনি আমার বাবা মা আমি আক্বীকা আদায় না করে কোরবানি আদায় করতে পারবো কি?
23 Dec 2025
আকীকা করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব আর কোরবানী করা ওয়াজিব। কোরবানীর সাথে আকীকার কোন সম্পর্ক নেই। আকীকা করা না হলেও কোরবানী যার উপর ওয়াজিব তাকে অবশ্যই কোরবানী করতে হবে।
প্রশ্নঃ 93
QUESTION ABOUT PERFUME
23 Dec 2025
এলকোহল একটি কেমিক্যাল টার্ম, এ দ্বারা সর্বদা মদ বুঝানো হয় না। পারফিউমে ব্যবহৃত এলকোহল সাধারণত মাদক হয় না, অনেক সময় বিষাক্ত হয়, যা পান করলে মাতাল না হলেও মৃত্যু হতে পারে। এ ধরনের এলকোহল মিশ্রিত পারফিউম ব্যবহার বা এলকোহল মিশ্রিত পানি দিয়ে জীবানুমুক্ত হওয়া ইত্যাদি বৈধ। এতে দেহ বা পোশাক নাপাক হবে না।
প্রশ্নঃ 94
mansur hallaj somporke apnader motamot janaben and Ibn Taymiyyah sufi der bepare and tar ek fatwa te fanafilla bepare ze akida poshon poshon koreche ta ki correct? answer gulo bistarito bhabe janaben.
23 Dec 2025
মানসূর হাল্লাজ সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর সবই অপ্রয়োজনীয় কাজ। কবরে বা হাশরে এ বিষয়ে কোনো মুসলিমকে প্রশ্ন করা হবে না। কোটি কোটি মুসলিমের মধ্যে তিনি একজন। তার কর্ম ও মতামত খুবই আপত্তিকর ছিল। তার লেখা বইগুলোও আপত্তিকর বিষয়ে ভরা। সাধারণ ভাবে তার যুগের আলিমগণ তাকে বিভ্রান্ত বলেছেন। কেউ কেউ তাকে ভাল মনে করেন এবং তার খারাপ কথাগুলোর জন্য ওজর বলেন। মানুষের দৃষ্টিতে মানুষের বিচার হবে বাহ্যিক কর্মের ভিত্তিতে। এ বিচারে তিনি বিভ্রান্তিকর মত ও কর্মের অনুসারী ছিলেন। মহান আল্লাহই ভাল জানেন। ইবন তাইমিয়া নিজেও একজন সুফী ছিলেন। তার গ্রন্থাবলির মধ্যে তাসাউফ বিষয়ে অনেক রচনা রয়েছে। অনেক সুফির তিনি প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি সুফিদের বিভ্রান্তির প্রতিবাদ করেছেন।
প্রশ্নঃ 95
Ekjon non Muslim ki wudu or gushal er dara pobitro hote parbe?
23 Dec 2025
যে সব শরয়ী হুকুম পালনের জন্য ওযু করতে হয় অমুসলিমেদের উপর সেই সব হুকুম প্রযোজ্য নয়। যেমন, নামায রোজা। সুতরাং তাদের পবিত্র হওয়ার কোন অর্থ নেই।
প্রশ্নঃ 96
Amra jani je salat er jonno wudu kora fard. kintu quran sporsho korbar jonno wudu kora nicher konti hote pare. 1. fard 2. wajib 3. sunnat 4. mustahab
23 Dec 2025
ফরজ। বিস্তারিত জানার জন্য এই বিষয়ে প্রদত্ত অন্য প্রশ্নের উত্তর দেখুন।
প্রশ্নঃ 97
আসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন এই পৃথিবীতে কুফরি কালাম এর অস্তিত্ত আছে কি? অনেকে বলে এর প্রয়োগ মানুষের ক্ষতি করার জন্য করা হয়। যেমনঃ কারো আর্থিক ক্ষতি, বা কোন কুমারী মেয়ের যথা সময় বিয়ে না হয়া। এরুপ ক্ষেত্রে অনেকে বলেন যে ওনার উপর জাদু করা হয়েছে বা সেই কুমারীকে কুফরী কালাম দ্বারা বিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। এই কথার কি কোন ভিত্তি আছে? আর যদি থাকে এর লক্ষণ এবং এর থেকে প্রতিকার কি? কি আমল করলে এর থেকে পরিত্রণ পাওয়া যাবে। আমি কোন হুজুর এর উপর ভরসা করতে পারছি না। তাই জাহাঙ্গির হুজুরই আমার শেষ ভরসা। দয়া করে উত্তর টা আমি সরাসরি জাহাঙ্গির হুজুর থেকে আশা করছি
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। কুফরী কালাম বা যাদুর মাধ্যমে মানুষের শারীরিক ও আর্থক করা যায়। কুরআন ও হাদীসে যাদু ব্যবহারকে কুফর বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাদুকর মূলত পূজা ও শিরকের মাধ্যমে জিনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। যেমন ধুপ, সুগন্ধি ইত্যাদি উৎসর্গ করা, কোনো পশু বা পাখি জবাই করা, জিন বা শয়তানের সাহায্য প্রার্থনা করা, তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মন্ত্র পাঠ করা ইত্যাদি। এগুলো সবই শিরক। অনেক সময় মুসলিম যাদুকরকে প্রতারিত করতে শয়তান জিন এরুপ শিরকী মন্ত্রের সাথে কুরআনের আয়াত বা দুয়া সংযুক্ত করে রাখে। কুরআনের আয়াত বা দুয়ার আগে, পরে বা মধ্যে শয়াতনের পছন্দনীয় বা অর্চনামূলক দু-একটা বাক্য রেখে দেয়। এরুপ শিরক ছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের কুফর ও মহাপাপের মাধ্যমে শয়তারকে সন্তুষ্ট করতে হয়। যেমন কুরআনের অবমাননা, কুরআনের আয়াত উল্টে লেখা, নাপাকি দিয়ে লেখা, জঘন্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া, ঘৃন্য নাপাকীর মধ্যে বা নাপাক অবস্থায় থাকা, মানুষ হত্যা ইত্যাদী। এসকল কর্মের মাধ্যমে যাদুকর সামান্য কিছু অস্বাভাবিক ক্ষমতা অর্জন করে। যেমন ভেল্কি দেখানো, সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত কিছু অজানা বা গায়েবী কথা বলা, মনের কথা বলঅ, বান-টোনা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা ইত্যাদী। এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুরআন ও হাদীসে অনেক দোয়া ও যিকির উল্লেখ আছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত গ্রন্থের নতুন সংস্করনের রোগব্যাধি ও ঝাড়ফুঁক অধ্যায়টি।
প্রশ্নঃ 98
amar question ta holo: আমি এবং আমার স্ত্রী, আমার শ্বশুর এর বাসায় খাওয়া দাওয়া করি। আমার শ্বশুর এর উপার্জিত অর্থের উপর কিছুটা সন্দেহ আছে আমার হালাল হারাম এর বিষয়এ। তার বাসার এই খাদ্য খাওয়ার ফলে আমদের (আমি এবং আমার স্ত্রী) কি কোন ক্ষতি হচ্ছে? উপার্জিত অর্থের দারা খাদ্য হালাল-হারাম হয়ে যাওয়া এই বিষয়ে বিস্তারিত বললে ভাল হতো।
23 Dec 2025
সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, دع ما يريبك إلى ما لا يريبك
অর্থ: যা তোমাদের সন্দেহে ফেলে দেয় তা পরিহার করে যা সন্দেহে ফেলে না তা গ্রহন কর। সুতরাং সন্দেহ হলে আপনার জন্য এখানে খাবার খাবেন না খাওয়াই উত্তম। আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের স্টুডিও এর কার্যক্রম শুরু হলে উপার্জিত অর্থের দ্বারা খাদ্য হালাল-হারাম হয়ে যাওয়া বিষয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লহ।
প্রশ্নঃ 99
TOUCHING QURAN
23 Dec 2025
বিভিন্ন সহীহ হাদীসের আলোকে উম্মাতের প্রায় সকল ইমাম ও ফকীহ একমত যে, ওযু বা গোসল বিহীন অবস্থায় কুরআন কারীম সরাসরি স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে বর্তমানে কতিপয় ফকীহ ওয বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। সংক্ষেপে বিষয়টি আলোচনা করছি। নাপাক অবস্থায় ও ওযু বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করার নিষেধাজ্ঞায় সহীহ হাদীস বর্ণিত । ইবন উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
لا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। হাদীসটি সহীহ। হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১/৬১৬; আলবানী, সহীহুল জামি ২/১২৮৪, নং ৭৭৮০। অন্য হাদীসে তাবিয়ী আব্দুল্লাহ ইবন আবূ বাকর ইবন মুহাম্মাদ ইবন আমর ইবন হাযম আনসারী (৬৫-১৩৫ হি) বলেন, আমার দাদা সাহাবী আমর ইবন হাযমকে (রা) রাসূলুল্লাহ সা. যে পত্র লিখেছিলেন, তাতে তিনি লিখেছিলেন:
أَنْ لا يَمَسَّ اَلْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। এ হাদীসটি অনেককগুলো সনদে বর্ণিত। প্রত্যেক সনদেই কিছু দুর্বলতা বিদ্যমান। তবে সবগুলি সনদের ভিত্তিতে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বাল, ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়াইহি, ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী, শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী ও অন্যান্য প্রাচীন ও সমকালীন মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলে নিশ্চিত করেছেন। মালিক, আল-মুআত্তা ১/১৯৯; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ১/১৫৮-১৬১, নং ১২২। উপরের হাদীসগুলোর ভিত্তিতে অপবিত্র - অর্থাৎ গোসল ফরয থাকা অবস্থায় অথবা অযু-বিহীন- অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণ-সহ মুসলিম উম্মাহর প্রায় সকল ফকীহ এ বিষয়ে একমত। আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুওয়াইতিয়্যা ১৬/২৪০; ২৩/২১৬; ৩৫/৩৩৩; ৩৮/৬। প্রসিদ্ধ হাম্বালী ফকীহ ইবন কুদামা (৬২০ হি) বলেন:
وَلا يَمَسُّ الْمُصْحَفَ إلَّا طَاهِرٌ يَعْنِي طَاهِرًا مِنْ الْحَدَثَيْنِ جَمِيعًا، ... وَهُوَ قَوْلُ مَالِكٍ وَالشَّافِعِيِّ وَأَصْحَابِ الرَّأْيِ ، وَلَا نَعْلَمُ مُخَالِفًا لَهُمْ إلَّا دَاوُد فَإِنَّهُ أَبَاحَ مَسَّهُ
উভয় প্রকারের নাপাকি থেকে পবিত্র না হয়ে কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। ... আর এটি অন্য তিন ইমাম- মালিক, শাফিয়ী ও হানাফীগণেরও মত। একমাত্র (তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ফকীহ) দাঊদ যাহিরী (২০১-২৭০ হি) ছাড়া আর কেউ এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। একমাত্র তিনিই অপবিত্র (ওযূ বা গোসল ছাড়া) কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। ইবন কুদামা, আল-মুগনী ১/২৫৬। সাহাবীগণের মধ্যে আলী, ইবন মাসঊদ, সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস, সায়ীদ ইবন যাইদ, সালমান ফারিসী, আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা.) ও অন্যান্য ফকীহ সাহাবী ওযূ বা গোসল বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ করেছেন। কুরতুবী, তাফসীর (জামিউ আহকামিল কুরআন) ১/২২৫-২২৭। ইবন তাইমিয়া (রাহ) বলেন, এদের বিপরীতে কোনো সাহাবী ওযূ বিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ বলেছেন বলে জানা যায় না। ইবন তাইমিয়া, মাজমূউল ফাতাওয়া ২১/২৬৬। উল্লেখ যে, ফকীহগণ শিশু-কিশোর ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ওযূ ছাড়া কুরআন স্পর্শ বৈধ বলেছেন। কারণ শিক্ষার জন্য বারবার কুরআন স্পর্শ করা তাদের জন্য প্রয়োজন এবং তারা নাবালেগ হওয়ার কারণে তাদের জন্য শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য নয়। এছাড়া কুরআনের তাফসীর, হাদীসগ্রন্থ, ও কুরআন সম্বলিত অন্যান্য সকল গ্রন্থ ওযূ ও গোসলবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা বৈধ বলে তাঁরা একমত। ড. ওয়াহবাহ যুহাইলী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/৩৯৫; আল-মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুআইতিয়্যাহ ১৬/৫৩।
প্রশ্নঃ 100
মায়ের দিকে নেক নজরে তাকালে কবুল হজ্বের সয়াব পাওয়া যাই, কথাটা ঠিক।
23 Dec 2025
এই মর্মে একটি হাদীস শুয়াবুল ইমান গ্রন্থে উল্লেখ আছে। তবে হাদীসটি যয়ীফ অথবা জাল। হাদীসটি হলো,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَتَبَ اللهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُورَةً ، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ ؟ قَالَ: نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন কোন সৎ সন্তান রহমতের দৃষ্টিতে তার পিতা-মাতার দিকে তাকায় তখন আল্লাহ তায়ালা তার জন্য একটি কবুল হজ্বের সওয়াব লিখেন। সাহাবীরা বললেন, যদি প্রতিদিন একশ বার তাকায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহু আকবার। শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং৭৪৭২। হাদীসটির হুকুম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, সিলসিলাতুয যয়ীফাহ, হাদীস নং৬২৭৩। সম্ভবত প্রশ্নেক্ত কথাটি এই হাদীস থেকেই এসেছে। তবে হাদীসটি যেহেতু সহীহ বা হাসান পর্যায়ের নয় তাই দলীল হিসাবে বিবেচিত হবে না। আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 101
about firka
23 Dec 2025
দেওবন্দি ফিরকা বলে কোন ফিরকা নেই। পাক-ভারত উপমহাদেশে কওমী মাদরাসা হিসেবে পরিচিত মাদারাসাগুলো ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার আদর্শে পরিচালিত হয়। তাদের মধ্যে ভাল ও মন্দ থাকতে পারে। তবে সাধারণভাবে ভারতীয় উপমহাদের ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতের তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্নঃ 102
আসসালামু আলাইকুম। শায়েখ আমার প্রশ্ন হল নিজের পিতাকে ছাড়া অন্য কাউকে পিতা ডাকা নিষেধ হলে । আপন শ্বশুর কে বাবা অথবা আব্বু বলা যাবে কি? আমার বাবা আমাদের দুই ভাই বোন কে রেথে মারা যায়। তার পর আমার দাদা আমার মাকে আমার ছোট চাচা সঙ্গে বিয়ে দেন। এখন তার সংসারেই আছি। তাকে আমরা বাবা ডাকতে পারবো কি না? একটু ব্যাখা করে বলবেন।
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শ্বশুর সম্মানসূচক আব্বা বলা যাবে আর চাচাকেও আব্বা বলা যাবে বলা যাবে, কারণ সূরা বাকারার ১৩৩ নং আয়তে চাচাকে ও দাদাকে পিতা হিসাবে বলা হয়েছে। আমরা আশা করছি আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট স্টুডিও কার্যকর করতে পারলে আমরা আপনার প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রচার করর, ইনশা আল্লাহ। আপনারা দুআ করুন।
প্রশ্নঃ 103
assalamu-alaikum.amer prosno holo subahanALLAH, Alhamdulillah, La-illaha illah, ALLAHuakhbar. ai jikir somuher fozilot ki? ai jikir gulo neomito korle ALLAH amader dunia o akhirate ki ki neamot dan korben? jummahr din er kichu amol somondhe bolben ki? ki amol korle gunha thake maff paowa jabe?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। প্রশ্নে বর্ণিত আমলটি সকালে, সন্ধায়, দিনের বেলা, নামাযের পরে বিভিন্ন সময় করা যায়। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত সহীহ মাসনুন ওযীফা এবং রাহে বেলায়াত বই দুটি। উক্ত আমলের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত একটি হাদীস নিম্নরূপ:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ جَاءَ الْفُقَرَاءُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ مِنَ الأَمْوَالِ بِالدَّرَجَاتِ الْعُلاَ وَالنَّعِيمِ الْمُقِيمِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَلَهُمْ فَضْلٌ مِنْ أَمْوَالٍ يَحُجُّونَ بِهَا وَيَعْتَمِرُونَ وَيُجَاهِدُونَ وَيَتَصَدَّقُونَ قَالَ أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ بِأَمْرٍ إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ أَدْرَكْتُمْ مَنْ سَبَقَكُمْ وَلَمْ يُدْرِكْكُمْ أَحَدٌ بَعْدَكُمْ وَكُنْتُمْ خَيْرَ مَنْ أَنْتُمْ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِ إِلاَّ مَنْ عَمِلَ مِثْلَهُ تُسَبِّحُونَ وَتَحْمَدُونَ وَتُكَبِّرُونَ خَلْفَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ فَاخْتَلَفْنَا بَيْنَنَا فَقَالَ بَعْضُنَا نُسَبِّحُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ وَنَحْمَدُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ وَنُكَبِّرُ أَرْبَعًا وَثَلاَثِينَ فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ تَقُولُ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ حَتَّى يَكُونَ مِنْهُنَّ كُلِّهِنَّ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ
অর্থ: আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কিছু দরিদ্র লোক নবী সা. এর কাছে এসে বললেন, ধনীরা তাদের সম্পদ দান করে আমাদের চেয়ে মর্যাদার দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা আমাদের মত সালাত আদায় করে, রোজা রাখে। কিন্তু তারা দান-সদাকা করে, জিাহাদ করে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের বিষয়ে অবহিত করব না যা করলে তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমান হয়ে যাবে আর কেউ তোমাদের পরে তোমাদের মত মর্যাদা পাবে না আর তোমরা হবে সময়ের সবচেয়ে উত্তম মানুষ তবে যারা অনুরুপ আমল করবে তারা এমন মর্যাদা পাবে? তোমরা প্রত্যেক সালাতের পরে তেত্রিশ বার করে তাসবীহ পড়বে, হামদ পেশ করবে এবং আল্লাহর বড়ত্ব পেশ করবে। এরপর এরপর আমরা মতভেদে লিপ্ত হলাম। কেউ বলল, তাসবীহ ও হামদ তেত্রিশ বার আর তাকবীর চৌত্রিশ বার । এরপর আবার আমরা তাঁর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ, আল্লাহু আকবার প্রত্যেকটিই তেত্রিশবার। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৩। অন্য সহীহ হাদীসে আল্লাহু আকবার চৌত্রিশ বারের কথাও বলা হয়েছে। জুমুয়ার দিনের ফজিলত ও আমল নিয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। সহীহ হাদীসে এই দিনে রাসূলুল্লাহ সা. বেশী বেশী করে দরুদ পাঠ করার কথা বলেছেন। সূরা কাহফ পাঠ করার কথাও সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। এছাড়া জুমুয়ার সালাতে যাওয়ার জন্য অনেক আদব শিক্ষা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সা.। এগুলির মধ্যে রয়েছে জুুমুয়ার দিনে গোসল করা, সুগন্ধি মাখা এবং সবচেয়ে ভাল পোশাক পরিধান করা, হেঁটে যাওয়া, সকাল সকাল মসজিদে উপস্থিত হওয়া, মসজিদে প্রবেশ করে কিছু সুন্নাত-নফল সালাত আদায়া করা, মসজিদের মধ্যে আগেই উপস্থিত কোন মুসল্লিকে কষ্ট না দেওয়া, কারো ঘাঁড়ের উপর দিয়ে না যাওয়া, দুই জনের মাঝে ঠেলে বসে না পড়া, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসা, নীরবে মনোযোগের সাথে ইমামের বক্তৃতা শ্রবণ করা ইত্যাদী। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত, খুতবাতুল আহকাম পৃষ্ঠ ১৬৭।
প্রশ্নঃ 104
Imam abu hanifa ki abiin chilio na tabe -- Ṫabiin chilo?
23 Dec 2025
ইমাম আবু হানীফা রহ. ৮০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। সাহাবীদের কেউ কেউ ১১০ হিজরী সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। কাজেই ইমাম আবু হানীফা রহ. জন্য কোন কোন সাহবীর সাথে সাক্ষাৎ করা বা শিক্ষা গ্রহণ করা খুবই সম্ভব ছিল। বাস্তবে কতজন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। কোন কোন জীবনীকারগণের বর্ণনায় ৭ জন সাহাবীর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। বাস্তবে প্রায় সাকল জীবনীকার, রিজালবিদ ও ঐতিহাসিক একমত যে, সাহাবী আনাস ইবনে মালিক রা.এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল।সুতরাং তিন তাবেয়ী ছিলেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অনূদিত ও ব্যাখ্যাকৃত আল-ফিকহুল আকবার বইটির প্রথম পরিচ্ছেদ।
প্রশ্নঃ 105
১. কুরবানি ও আকিকা একই পশু দিয়ে হবে কিনা? ২. কুরবানির দিন এটি আদায় করা য়াবে কিনা? ৩.একটি পশু এর আনেক গুলো ভাগ থাকে,(হতে পারে ৩,৫,৭,টি) ৪. কুরবানির আংশিদারের ক্ষেত্রে কিভাবে এটি নির্বাচন করা যাবে?
23 Dec 2025
একই পশু দ্বারা কুরবানী ও আক্বীকা এবং কুরবানীর দিনে আক্বীকা রাসূলুল্লাহ সা. কিংবা সাহাবীদের থেকে পাওয়া যায় না।আক্বীকা সন্তান জন্ম হওয়ার আনন্দ আর কুরবানী ভিন্ন আনন্দ, দুটিকে এক করে ফেলা উচিৎ নয়। আমাদের উচিৎ সুন্নাত অনুযায়ী আলাদা দিনে আলাদা পশু দ্বারা আক্বীকা করা । তবে ফকিহগণ বলেছেন যদি কেউ কুরবানীর দিনে আক্বীকা দেয় কিংবা একই পশু দ্বারা কুরবানী ও আক্বীকা দেয় তাহলে জায়েয হবে। প্রশ্নের বাকী অংশ স্পপষ্ট নয়। নতুন করে স্পষ্ট করে প্রশ্ন করুন।
প্রশ্নঃ 106
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হচ্ছে মুসাফাহ দুই হাতে করতে হয় না এক হাতে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বিভিন্ন হাদীস থেকে মুসাফাহা বা হাত মেলানোর আদব ও সুন্নাত জানা যায়। যেমন, মুসাফাহার সময় আল্লাহর প্রশংসা করা, ইসতিগফার করা, দুআ করা ইত্যাদী। মুসাফাহা অবশ্যই ডান হাতে হতে হবে। ওযর ব অক্ষমতা ছাড়া বাম হাত মেলানো ইসলামী আদবের ঘোর পরিপন্থি। একে অপরের শুধু ডান হাত ধরবেন, না অপরের ডান হাতকে নিজের দুহাতের মধ্যে রাখবেন তা নিয়ে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, এক হাতে বা দুহাতে যে কোন ভাবে ডান হাত মেলালেই মুসাফাহা হবে। হাদীস শরীফে বারংবার হাত মেলানোর কথা এবং ডান হাত মেলানোর কথা বলা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, শুধু ডান হাত মেলালেই হবে। তবে ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেন যে, প্রসিদ্ধ দুজন তাবি-তাবিয়ী হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (মৃত্যু ১৭৯হি.) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (১৮১হি.) দু হাতে মুসাফাহ করেছেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত খুতবাতুল ইসলাম বইটির ৪২৬ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 107
আমার সব গুলো প্রশ্নর দিলে খুশি হব সে বলে যদি চাকুরি হয় তাহলে অনেক যোগ্য মানুষকে চাকুরি দেয়ার চেষ্টা করবে ইনশাআল্লাহ বিনা ঘুষ নিয়ে এখানে শরীয়া কি বলে
23 Dec 2025
আপনার প্রশ্ন স্পষ্ট নয়। তবে মনে হচ্ছে আপনি আপনার নেক নিয়্যাতের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এটা আপনার ভাল নিয়্যাত যে, আপনি চাকরী পেলে অন্যদেরকে বিনা ঘুষে চাকরী দেবেন।
প্রশ্নঃ 108
Shaykh, Assalamualikum wa rohmatullahi wa baratuhu. amar prosno ta holo- Allahr kace dua korar pore to amader biswas rakhte hobe je amader dua kobul hobei ingsha Allah. amra kontar bepare biswas rakhbo? 1. amra Allahr kace ja cheyeci Allah thik oitai deben ei biswas korbo, or 2. Allah je 3 vabe dua koubl koren sei 3 rokomer 1 rokom vabe dua kobul korben eita biswas korbo? Allah to sokol duai 3 rokomer 1 rokom vabe kobul koren.
23 Dec 2025
আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া কবুল করেন। সেটা সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে, পরেও হতে পারে। কিংবা যা আমরা চাই তার চেয়ে উত্তম কোন কিছু দিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে অনুগ্রহ পূর্বক রাহে বেলায়াত পুস্তকের দুআ অধ্যায়টি, ষষ্ঠ সংস্করণ ১০৫-১৭৩ পৃষ্ঠা পড়ন। এছাড়া আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের স্টুডিওটি কার্যকর হলে আমরা আপনার প্রশ্ন ও এ জাতীয় প্রশ্নগুলোর বিস্তারিত উত্তর ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রচার করব, ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্নঃ 109
আসসালামু আলাইকুম। আমার দীঘ দিন ধরে চাকুরি খুজতে কিন্তু পাচ্ছে না। আর এ কারনে সে বিয়েও করছে না তাকে বাসা থেকে অনেকবার বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে কিন্তু সে বিয়ে করে না বলে আগে চাকুরি পেয়ে নি তারপর বিয়ে কিন্তু তার কিছু মেয়ে বন্ধু আছে তাকে যিনার কথা বললে বলে বিয়ের সময় সব বন্ধ করে দিবে এখন আমার প্রশ্ন হল আমার ভাইকে চকুরির ব্যপারে কাউকে ঘুষ দিয়া কি ঠিক হবে কেননা সে তো যিনা ছাড়ছে না আর তার এই চকুরির ব্যাপারে কোনো রকম সাহায্য করা কি ঠিক হবে আর যদি সে ওই ঘুষের টাকা টা চাকুরির পর বিনা সওয়াবের আশায় দান করে দেয় তাহলে কি হবে?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। যিনার কাছে যেতেও কুরআনে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং কোন ভাবেই যিনা বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া যাবে না। ঘুষ নিয়ে চাকরীর বিষয়ে আমাদের দেয়া অন্য প্রশ্নের উত্তর দেখুন। অবৈধ টাকা সওয়াবের আশা না করে গরীবদেরকে দিয়ে দিতে হবে।
প্রশ্নঃ 110
AMAR JUHORER WAQT A JODI NAMAJE KHUBI AGROHO BERE JAI TO ASORER SALATE THIK TAR BIPORIT R AIM TAHAJJOT SALAT NIYOMITO ADAY KORTE CHAI KINTU KONO VABEI PARCHINA,HE KONO SIJDATE AMAR MONER THEKE ONEK KICHUR CHAOAR ACHE SETA ARBITE HOITO AMI JANINA AMI KIVABE CHABO,JEMON AMAR SONSARE KONO SOMOSSA ETA ARBITE AMAR JANA NEI AMI SAJDAI KIVABABE BOLBO JANALE KHUB UPOKRITO HOBO INSALLAH
23 Dec 2025
আপনি মনকে ভাল কাজের উপর দৃঢ় করুন। আর বেশী বেশী দোয়া করতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি নিয়মিত নামায আদায় করতে পারবেন। তাহাজ্জুদ সহ অন্যান্য নফল আদায় করাও আপনার জন্য তখন সহজ হয়ে যাবে। সিজদায় কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত দোয়া কিংবা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত দোয়ার অর্থের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যে কোন দোয়া পাঠ করা যায়। আরবী ছাড়া অন্য ভাষা তথা মাতৃভাষায় দোয়া করার ব্যাপারে সামান্য মতভেদ আছে।কোন কোন হানাফী ফিকহার কিতাবে মাকরুহ বলা হয়েছে। কেউ কেউ মাকরুহ তানযীহ বলেছেন আবার কেউ কেউ মাকরুহ তাহরীমা বলেছেন। তবে অধিকাংশ আলেম জায়েজ বলেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের উচিৎ হলো কুরআন সুন্নাতে বর্ণিত কোন দোয়া পাঠ করা। আর যদি কুরআন-সুন্নাতে বর্ণিত দোয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন দোয়া সিজদাতে মাতৃভাষায় পাঠ করে তবে আশা করয যায় না-জায়েজ হবে না, জায়েজ হবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 111
Sir, sinha name ta kmn? Ar ortho janta chai. Amr boner jna ai name rakha ki jukti songoto hba?
23 Dec 2025
আরবীতে সিনহা শব্দটি সানাহ শব্দমূল থেকে এসেছে। যার অর্থ পচা, বাসী নষ্ট ইত্যাদী। সুতরাং এই নাম রাখা যক্তি সংগত হবে না।
প্রশ্নঃ 112
stock business, election, jakat
23 Dec 2025
১। স্টক বিজনেস মূলত হারাম নয়। তবে যদি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো উদ্দেশ্য হয় তাহেল হারাম হবে। ২। ভোট পদ্ধতি হারাম এটা বলা উচিৎ নয়। কোনো কিছুকে হারাম বলতে সুস্পষ্ট দলিল প্রয়োজন। ভোট দেওয়াই হারাম এটি বলা সঠিক নয়। ভোট অর্থ মতামত প্রকাশ বা সমর্থন। ইসলাম শূরা বা পরামর্শ ভিত্তিক ব্যবস্থার নির্দেশনা দেয়। এজন্য ইসলামে মতপ্রকাশ, পরামর্শ বা সমর্থনের হাজারো নমুনা রয়েছে। শাসক নির্বাচনেও তারা জনগনের মতামত গ্রহণ করেছেন। উমার (রা) ওফাতের পূর্বে আশারায়ে মুবাশ্শারার ৬ জন সাহাবীকে কমিটি করে দেন। তাদের মধ্য থেকে আব্দুর রাহমান ইবন আওফ (রা) বলেন, আমি শাসক হব না। আপনারা চাইলে আমাকে দায়িত্ব দেন, আমি জনগণের সাথে পরামর্শ করে আপনাদের মধ্য থেকে কাউকে খলিফা ঘোষণা করব। তিন দিন যাবৎ জনগণের সাথে পরামর্শের পরে তিনি উসমান (রা)- কে খলিফা ঘোষণা করেন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল আহকাম, বাব কাইফা উবাইউন নাসুল ইমাম)। ব্যক্তিগতভাবে মত বা সমর্থন প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক সময় অসুবিধা থাকে। এজন্য পরবর্তী সময়ে গোপন ব্যালটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজেই গোপন ব্যালটে বা প্রকাশ্যে শাসক বা প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট প্রদানকে সরাসরি হারাম বলা সঠিক নয়। ভোট ব্যবস্থার শরীআহ বিরোর্ধী বিষয়গুলোকে নির্ধারিত দলিলের মাধ্যমে হারাম বলা যেতে পারে। এমনকি কোনো বৈধ ব্যবস্থাকে শুধু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকগুলোর অজুহাতে সুস্পষ্ট দলিল ছাড়া হারাম বলা সঠিক নয়। ৩। আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, গ্রহীতা যাকাত গ্রহণের মত অসচ্ছল তবে তাকে যাকাত দেওয়ার সময় জানানো জরুরী নয় যে এটা যাকাতের সম্পদ বা টাকা। যাকাত দেয়ার সময় নিয়্যাত করবেন যে আমি এটা যাকাত হিসাবে দিচ্ছি।
প্রশ্নঃ 113
Where is Allah and he has any shape.can he come down in the earth.please tell me details with Quran sun ah.
23 Dec 2025
প্রথম প্রশ্নের উত্তর জানতে এ সম্পর্কিত অন্য প্রশ্নের উত্তর দেখুন। দ্বিতীয় প্রশ্নের আকার বলতে যদি দেহ মনে করা হয় তবে আল্লাহ তালার কোন আকার নেই। তবে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার হাত, চেহারা, চোখ ইত্যাদীর কথা উল্লেখ আছে। তবে এগুলোর স্বরুপ আমাদের কাছে অজ্ঞাত। তা শুধু আল্লাহ তায়ালাই জানেন। তাঁর কোন কিছুই সৃষ্ট কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য রাখে না। মহান আল্লাহর অন্য একটি বিশেষণ নুযূল বা অবতরণ। এ অর্থের একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
يَنْزِلُ رَبُّنَا كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ
প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন আমাদের মহিমান্বিত মহা-কল্যাণময় প্রতিপালক নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন। তিনি বলেন: আমাকে ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৮৪; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫২২ (মুসাফিরীন, তারগীব ফিদদুআ... আখিরিল্লাইল)
আহলুস সুন্নাতের ইমামগণ বলেন: এটি মহান আল্লাহর একটি বিশেষণ। আমরা সরল অর্থে বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ অতুলনীয়, তিনি আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন এবং তিনি যখন এবং যেভাবে ইচ্ছা অবতরণ করেন। তাঁর অবতরণ কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির অবতরণের মত নয়। তাঁর অবতরণের স্বরূপ ও প্রকৃতি কি তা আমরা জানি না এবং জানার চেষ্টাও করি না। ইমাম আবূ হানীফা (রা) কে মহান আল্লাহর অবতরণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন:
ينزل بلا كيف
মহান আল্লাহ অবতরণ করেন, কোনোরূপ পদ্ধতি বা স্বরূপ ব্যতিরেকে। বাইহাকী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২/৩৮০; মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ ৬৯।
প্রশ্নঃ 114
আস-সালামু আলাইকুম, স্যার হস্তমৈথুন করার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়, এই রোজার জন্য কাজা বা এর অন্যান্য বিধান কি?
23 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
প্রথমত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত কুরআন অধ্যয়ন করেন নি। কুরআনে হুরের বিষয়টির সাথে যৌনতা, দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদির সামান্যতম আবেশ নেই। বারংবার বলা হয়েছে যে, তাদেরকে জোড়া বানিয়ে দেওয়া হবে হুরের সাথে। আরবী ও অন্যান্য লিঙ্গ সচেতন ভাষায় সাধারণ বিধিবিধানে পুংলিঙ্গ ব্যবহার করেই বিধিবিধান প্রদান করা হয়। এরপরও হুর শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর মানবীয় প্রকৃতির সাথে একটি সুসমঞ্জস। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আত্মা ও মনের শান্তির জন্য জোড়া চায়। জান্নাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে জোড়া প্রদান করবেন; যেন তারা মানবীয় প্রকৃতির প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির পূর্ণতা লাভ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থও অধ্যয়ন করেন নি। বাইবেল, বেদ, রামায়ন, মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি পর্নোগ্রাফিকেও হার মানায়। পিতা-কন্যার ব্যভিচার, ভাই-বোনের ভ্যবিচার, শ্বশুর-পুত্রবধুর ব্যভিচার, পিতার স্ত্রীদের প্রকাশ্যে ধর্ষণ, উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি, মাতলামি ইত্যাদির বর্ণনায় পবিত্র বাইবেল পরিপূর্ণ। সাধারণ বিষয়ের বর্ণনাতেও অশ্লীল উপমা ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআনে স্বাভাবিক যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বর্ণনাও সকল অশ্লীতার ছোয়া থেকে মুক্ত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ইহূদী, খৃস্টান, হিন্দু বা অন্য ধর্মের কোনো কোনো অনুসারী নিজেদের ধর্মগ্রন্থের অপবিত্রতম পর্নোগ্রাফীর চেয়েও অশ্লীল গল্পগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভির্যের সাথে সাংঘর্ষিক মনে না করলেও কুরআনের মধ্যে বিদ্যমান অশ্লীলতা বা দৈহিকতার সামান্যতম ছোয়ামুক্ত হুর বিষয়ক বক্তব্যগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভীর্যের সাথে অসামাঞ্জস্য বলে দাবি করেন।
প্রশ্নঃ 115
আস্ সালামুআলাইকুম। আমরা কারো মৃত্যুতে শুনি এটাই তার হায়াত ছিল অর্থাৎ আল্লাহর ফয়সালা।
কিন্তু যারা আত্মহত্যা করেন তাদেরকে কেন জাহান্নামে নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। তাহলে কি তাদের মৃত্যু আল্লাহর ফয়সালা নয়? ফয়সালা হলে কেনই বা তাকে শাস্তি দেওয়া হবে?
22 Dec 2025
অযুতে ঘাড় মাসেহ করার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। তবে কয়েকটি যয়ীফ হাদীসে এ বিষয়টি পাওয়া যায়। তাই এই বিষয়টিকে কোন কোন আলেম মুস্তাহাব বলেছেন, আবার কোন কোন আলেম বিদআত বলেছেন।
কুলি আর নাকে পানি এক সাথেও করা যায় আবার আালাদা আলাদাও করা যায়, দুই ধরনের হাদীসই আছে। আপনার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে করবেন। আর ঘাড় মাসেহ করার ব্যাপারে কয়েকটি দূর্বল হাদীস বর্ণিত আছে। তার একটি হলো, قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من توضأ ومسح عنقه لم غل بالأغلال يوم القيامة অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ওযু করবে এবং ঘাড় মাসেহ করবে কিয়ামতের দিন তাকে শিকল পরানো হবে না। তারীখ আসবাহান, ১/২৪২। এই বিষয়ে বিভিন্ন হাদীসের বিশ্লেষন শেষে মোল্লা আলী কারী হানাফী রাহ. বলেন, قال أئمتنا إن مسح الرقبة مستحب أو سنة অর্থ: আমাদের ইমামগণ বলেছেন, ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত। আল-আসরারুল মারফুয়াহ, পৃষ্ঠা- ৩১৫। কোন কোন আলেম বিদআত বলেছেন। তবে দলিলের আলোকে বিদআত নয় বলেই মনে হয়।
প্রশ্নঃ 116
আসসালামু আলাইকুম। শায়েখ আমি সালাফি আলেমদের কাছ থেলে জেনেছি আল্লাহ আরশে বিরাজমান আর তাঁর ইলম সর্বত্র বিরাজমান কিন্তু দেওবন্দী আলেমরা বলে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান? এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এই কথাটি সঠিক নয়। তেমনি তিনি আরশে বিরাজমান এভাবে বলাও ঠিক না। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ অর্থ:নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আকাশ সমূহ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আরশে ইসতিওয়া করেছে। সূরা, আশুরা আয়াত,৫৪। আরশের উপর ইসতিওয়া আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষণ। তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন। কুরআনে সাত স্থানে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর ইসতিওয়া করেছেন। আরবীতে কোনো কিছুর উপর ইসতিওয়া অর্থ তার ঊর্ধ্বে অবস্থান (ৎরংব ড়াবৎ, সড়ঁহঃ, ংবঃঃষব)। সালাতের নিষিদ্ধ সময় বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন প্রশ্নকারীকে বলেন: حَتَّى تَسْتَوِىَ الشَّمْسُ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ ، فَإِذَا اسْتَوَتْ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ فَدَعِ الصَّلاَةَ (সালাত বৈধ থাকবে) যতক্ষণ না সূর্য তোমার মাথার উপরে তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে। যখন সূর্য তোমার মাথার উপর তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে তখন সালাত পরিত্যাগ করবে। বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ২/৪৫৫; ইবন মাজাহ, আস-সুনান ১/৩৯৭। হাদীসটি সহীহ। মহান আল্লাহর আরশের ঊর্ধ্বে অবস্থান বা আরশের ঊর্ধ্বে থাকার বিশেষণটি কুরআন ও হাদীস দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত। তবে এর প্রকৃতি ও স্বরূপ অজ্ঞাত। অজ্ঞাতকে অজ্ঞাত রেখে কুরআনের অন্যান্য বক্তব্যের ন্যায় এ বক্তব্যও স্বীকার ও বিশ্বাস করা মুমিনের জন্য জরুরী। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকেই তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ী ইমামগণ এবং পরবর্তী মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ বলেন: মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন। তাঁর এ অধিষ্ঠান বা অবস্থানের স্বরূপ আমরা জানি না এবং জানতে চেষ্টাও করি না। বরং বিশ্বাস করি যে, তাঁর এ অধিষ্ঠান কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির বিশেষণ বা কর্মের মত নয়। তাঁর অতুলনীয়ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান তিনি গ্রহণ করেন। ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাঁর ওসীয়াত গ্রন্থে লিখেছেন: نُقِرُّ بِأَنَّ اللهَ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُوْنَ لَهُ حَاجَةٌ إِلَيْهِ وَاسْتِقْرَارٌ عَلَيْهِ، وَهُوَ الْحَافِظُ لِلْعَرْشِ وَغَيْرِ الْعَرْشِ، فَلَوْ كَانَ مُحْتَاجاً إِلَيْهِ لَمَا قَدِرَ عَلَى إِيْجَادِ الْعَالَمِ وَتَدْبِيْرِهِ كَالْمَخْلُوْقِين، وَلَوْ صَارَ مُحْتَاجاً إِلَى الْجُلُوْسِ وَالْقَرَارِ فَقَبْلَ خَلْقِ الْعَرْشِ أَيْنَ كَانَ اللهُ تَعَالَى؟ فَهُوَ مُنَزَّهٌ عَنْ ذَلِكَ عُلُوًّا كَبِيْراً আমরা স্বীকার ও বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন, আরশের প্রতি তাঁর কোনোরূপ প্রয়োজন ব্যতিরেকে এবং আরশের উপরে স্থিরতা-উপবেশন ব্যতিরেকে। তিনি আরশ ও অন্য সবকিছুর সংরক্ষক। তিনি যদি আরশের মুখাপেক্ষী হতেন তাহলে বিশ্ব সৃষ্টি করতে ও পরিচালনা করতে পারতেন না, বরং তিনি মাখলূকের মত পরমুখাপেক্ষী হতেন। আর যদি তাঁর আরশের উপরে উপবেশন করার প্রয়োজনীয়তা থাকে তবে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? কাজেই আল্লাহ এ সকল বিষয় থেকে পবিত্র ও অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। ইমাম আবূ হানীফা, আল-ওয়াসিয়্যাহ, পৃ. ৭৭। ইমাম আযমের এ বক্তব্য উল্লেখ করে মোল্লা আলী কারী হানাফী বলেন: এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রাহ) খুবই ভাল কথা বলেছেন। তাঁকে আল্লাহর আরশের উপরে ইসিতিওয়া বা অধিষ্ঠান বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: اَلاِسْتِوَاءُ مَعْلُوْمٌ وَالْكَيْفُ مَجْهُوْلٌ وَالسُّؤَالُ عَنْهُ بِدْعَةٌ وَالإِيْمَانُ بِهِ وَاجِبٌ ইসতিওয়া বা অধিষ্ঠান পরিজ্ঞাত, এর পদ্ধতি বা স্বরূপ অজ্ঞাত, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত এবং এ বিষয় বিশ্বাস করা জরুরী। মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ৭০। আল্লাহর সত্তা যেমন সৃষ্টির মত নয়, তেমনি তাঁর বিশেষণাবলিও সৃষ্টির মত নয়। সকল মানবীয় কল্পনার ঊর্ধ্বে তাঁর সত্তা ও বিশেষণ। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক বলেন: الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو من علمه مكان আল্লাহ আসমানে (ঊর্ধ্বে) এবং তাঁর জ্ঞান সকল স্থানে। কোনো স্থানই মহান আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়। আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ, আস-সুন্নাহ ১/১০৭, ১৭৪, ২৮০; আর্জুরী, আশ-শরীয়াহ ২/২২৪-২২৫; ইবন আব্দুল র্বার, আত-তামহীদ ৭/১৩৮। এপ্রসঙ্গে পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মালিকী ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইবন আব্দুল র্বার ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ (৪৬৩ হি) বলেন: علماء الصحابة والتابعين الذين حملت عنهم التآويل في القرآن قالوا في تأويل هذه الآية هو على العرش وعلمه في كل مكان وما خالفهم في ذلك أحد يحتج بقوله সাহাবী-তাবিয়ী আলিমগণ, যাদের থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে, তারা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, তিনি আরশের উপরে এবং তাঁর জ্ঞান সর্বত্র। দলিল হিসেবে গ্রহণ করার মত একজন আলিমও তাঁদের এ মতের বিরোধিতা করেন নি। ইবন আব্দুল র্বার, আত-তামহীদ ৭/১৩৮-১৩৯। ইমামদ্বয়ের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, ইসতিওয়া শব্দটিকে তাঁরা সাধারণ আরবী অর্থেই গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে এ শব্দটির অর্থ অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক, মুতাশাবিহ, রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করেন নি। বরং তাঁরা বলেছেন যে, এ শব্দটির অর্থ জ্ঞাত বিষয়, এর মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা, রূপকতা বা দ্ব্যর্থতা নেই। অর্থাৎ আরবী ভাষায় অন্যন্য সকল ক্ষেত্রে ইসতিওয়া আলা বলতে যা বুঝানো হয় এখানেও সেই অর্থই গ্রহণ করতে হবে, অর্থাৎ ঊর্ধ্বত্ব। এখানে অর্থটি রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করার সুযোগ নেই। তবে ইসতিওয়ার স্বরূপ বা ব্যাখ্যা অজ্ঞাত (মুতাশাবিহ)। এ অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে জ্ঞাত বিষয়কে বিশ্বাস করাই মুমিনের দায়িত্ব। ইসতিওয়া ও অন্যান্য বিশেষণ বিষয়ে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বালের মূলনীতি ও আকীদা ব্যাখ্যা করে আবূ বাকর খাল্লাল আহমদ ইবন মুহাম্মাদ (৩১১ হি) বলেন: وكان يقول إن الله عز وجل مستو على العرش المجيد … وكان يقول في معنى الاستواء هو العلو والارتفاع ولم يزل الله تعالى عاليا رفيعا قبل أن يخلق عرشه فهو فوق كل شيء والعالي على كل شيء وإنما خص الله العرش لمعنى فيه مخالف لسائر الأشياء والعرش أفضل الأشياء وأرفعها فامتدح الله نفسه بأنه على العرش أستوى أي عليه علا ولا يجوز أن يقال أستوى بمماسة ولا بملاقاة تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا والله تعالى لم يلحقه تغير ولا تبدل ولا تلحقه الحدود قبل خلق العرش ولا بعد خلق العرش. وكان ينكر على من يقول إن الله في كل مكان بذاته لأن الأمكنة كلها محدودة وحكي عن عبد الرحمن بن مهدي عن مالك أن الله تعالى مستو على عرشه المجيد كما أخبر وأن علمه في كل مكان ولا يخلوا شيء من علمه وعظم عليه الكلام في هذا واستبشعه ইমাম আহমদ বলতেন, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত। … অধিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ তিনি এর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ আরশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সকল কিছুর উপরে। এখানে আরশকে উল্লেখ করার কারণ আরশের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোনো কিছুর মধ্যে নেই। তা হলো আরশ সবচেয়ে মর্যাদাময় সৃষ্টি এবং সব কিছুর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ নিজের প্রশংসা করে বলেছেন যে, তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত, অর্থাৎ তিনি আরশের ঊর্ধ্বে। আরশের উপরে অধিষ্ঠানের অর্থ আরশ স্পর্শ করে অবস্থান করা নয়। মহান আল্লাহ এরূপ ধারণার অনেক ঊর্ধ্বে। আরশ সৃষ্টির পূর্বে এবং আরশ সৃষ্টির পরে মহান আল্লাহ একই অবস্থায় রয়েছেন; কোনোরূপ পরিবর্তন তাঁকে স্পর্শ করে নি, কোনো গণ্ডি বা সীমা তাঁকে সীমায়িত করতে পারে না। যারা বলেন যে, মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের কথা তিনি অস্বীকার ও প্রতিবাদ করতেন। কারণ সকল স্থানই গণ্ডি বা সীমায় আবদ্ধ। তিনি আব্দুর রাহমান ইবন মাহদী থেকে, তিনি ইমাম মালিক থেকে উদ্ধৃত করতেন: মহান আল্লাহ মহা-পবিত্র আরশের ঊর্ধ্বে সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞান-ইলম সর্বত্র বিদ্যমান। কোনো স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বাইরে নয়। আল্লাহর সর্বত্র বিরাজমান কথাটি ইমাম আহমদ ঘৃণ্য বলে গণ্য করতেন। আহমদ ইবনু হাম্বাল, আল-আকীদাহ, আবূ বাকর খাল্লালের বর্ণনা, পৃষ্ঠা ১০২-১১১। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী বলেন: وهو فوق العرش كما وصف نفسه، لكن لا بمعنى التحيز ولا الجهة، بل لا يعلم كنه هذا التفوق والاستواء إلا هو… তিনি আরশের ঊর্ধ্বে, যেভাবে তিনি নিজের বিষয়ে বলেছেন। এর অর্থ কোনো দিক বা স্থানে সীমাবদ্ধ হওয়া নয়। বরং এ ঊর্ধ্বত্বের এবং অধিষ্ঠানের প্রকৃতি তিনি ছাড়া কেউ জানে না…। শাহ ওয়ালি উল্লাহ, আল-আকীদাতুল হাসানাহ, পৃষ্ঠা ৩। বিস্তারিত জানতে দেখুন, আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ২৫৮।
প্রশ্নঃ 117
আস-সালামু আলাইকুম, স্যার হস্তমৈথুন করার ফলে রোজা ভঙ্গ হয়, এই রোজার জন্য কাজা বা এর অন্যান্য বিধান কি?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহতমাতুল্লাহ। প্রথমত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত কুরআন অধ্যয়ন করেন নি। কুরআনে হুরের বিষয়টির সাথে যৌনতা, দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদির সামান্যতম আবেশ নেই। বারংবার বলা হয়েছে যে, তাদেরকে জোড়া বানিয়ে দেওয়া হবে হুরের সাথে। আরবী ও অন্যান্য লিঙ্গ সচেতন ভাষায় সাধারণ বিধিবিধানে পুংলিঙ্গ ব্যবহার করেই বিধিবিধান প্রদান করা হয়। এরপরও হুর শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর মানবীয় প্রকৃতির সাথে একটি সুসমঞ্জস। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আত্মা ও মনের শান্তির জন্য জোড়া চায়। জান্নাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে জোড়া প্রদান করবেন; যেন তারা মানবীয় প্রকৃতির প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির পূর্ণতা লাভ করতে পারে। দ্বিতীয়ত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থও অধ্যয়ন করেন নি। বাইবেল, বেদ, রামায়ন, মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি পর্নোগ্রাফিকেও হার মানায়। পিতা-কন্যার ব্যভিচার, ভাই-বোনের ভ্যবিচার, শ্বশুর-পুত্রবধুর ব্যভিচার, পিতার স্ত্রীদের প্রকাশ্যে ধর্ষণ, উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি, মাতলামি ইত্যাদির বর্ণনায় পবিত্র বাইবেল পরিপূর্ণ। সাধারণ বিষয়ের বর্ণনাতেও অশ্লীল উপমা ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআনে স্বাভাবিক যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বর্ণনাও সকল অশ্লীতার ছোয়া থেকে মুক্ত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ইহূদী, খৃস্টান, হিন্দু বা অন্য ধর্মের কোনো কোনো অনুসারী নিজেদের ধর্মগ্রন্থের অপবিত্রতম পর্নোগ্রাফীর চেয়েও অশ্লীল গল্পগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভির্যের সাথে সাংঘর্ষিক মনে না করলেও কুরআনের মধ্যে বিদ্যমান অশ্লীলতা বা দৈহিকতার সামান্যতম ছোয়ামুক্ত হুর বিষয়ক বক্তব্যগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভীর্যের সাথে অসামাঞ্জস্য বলে দাবি করেন।
প্রশ্নঃ 118
বেরেলভী ইমামের পিছনে সালাত
22 Dec 2025
বেরেলভীদের ভিতর কয়েকটি উপদল আছে। তারা সবাই বিদআত ভালবাসেন। অনেকে সুস্পষ্ট শিরকের মধ্যে লিপ্ত। সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কুফর-শিরক পাওয়া গেলে তার পিছনে সালাত আদায় করা যাবে না। কিন্তু সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কুফর-শিরক না পাওয়া পর্যন্ত কোনো অজুহাতে জামাআত বা জুমুআ ত্যাগ করা যাবে না। আপনি যদি অন্য কোন ভাল ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের সুযোগ পান তাহলে ভাল, নইলে এরুপ পাপী ইমামের পিছনেই সালাত আদায় করতে হবে। নেককার ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। প্রসিদ্ধ কালামবিদ ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী র. (৩২৪হি.) বলেন, ومن ديننا أن نصلي الجمعة والأعياد وسائر الصلوات والجماعات خلف كل بر وفاجر كما روى أن عبد الله بن عمر رضى الله عنهم كان يصلي خلف الحجاج
অর্থ: আর আমাদের দীনের অন্যতম দিক যে, আমরা জুমুয়ার সালাত, ঈদগুলো এবং অন্যান্য সকল সালাত এবং জামাআত নেককার ও বদকারের পিছনে আদায় করি। যেমনিভাবে বর্ণিত আছে,আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পিছনে সালাত আদায় করতেন (মুসান্নিফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস নং ১৪১৭৫)। আল-ইবানাহ আন উসূলিদ দিয়ানাহ, ১/২০। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ৩৩৭-৩৭৯ এবং রাহে বেলায়াত পৃষ্ঠা ৫৬৩-৫৬৮।
প্রশ্নঃ 119
ইস্তেগফারের নিয়ম
22 Dec 2025
আমাদের অনেকই এই أستغفر الله رب من كل ذنب, وأتوب إليه দিয়ে ইস্তেগফার করি । কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এক আলেম সাহেব বলেন, এই ইস্তেগফার কোন হাদিসের কিতাবে নেই, এবং কেউ দেখাতে পারবেও না । জানার বিষয় হল তার কথা সঠিক কি না? জানিয়ে বাদিত করবেন। আমাদরে অনইে এই أستغفر الله رب من كل ذنب, وأتوب إليه দিয়ে ইস্তগেফার করি । কন্তিু কছিুদনি র্পূবে এক আলমে সাহবে বলনে, এই ইস্তগেফার কোন হাদসিরে কতিাবে নইে, এবং কউে দখোতে পারবওে না । জানার বষিয় হল তার কথা সঠকি কি না? জানযি়ে বাদতি করবনে। ইস্তিগফারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় মুমিন-মনের উপলব্ধি। মানব মনের একটি অতি আকর্ষণীয় কাজ অন্যের অন্যায়গুলো বড় করে দেখা ও নিজের অন্যায়কে ছোট ও যুক্তিসঙ্গত বলে মনকে প্রবোধ দেওয়া। আমরা একাকী বা একত্রে যখনই চিন্তাভাবনা বা গল্প করি, তখনই সাধারণত অন্যের অন্যায়গুলো আলোচনা করি। মুমিনের আত্মিক জীবন ধ্বংসে এটি অন্যতম কারণ। মুমিনকে সদা সর্বদা নিজের পাপের কথা চিন্তা করতে হবে। এমনকি আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের বিপরীতে তাঁর ইবাদতের দুর্বলতাকেও পাপ হিসাবে গণ্য করে সকাতরে সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সকল প্রকার পাপকে কঠিন, ভয়াবহ ও নিজের জীবনের জন্য ধ্বংসাত্মক বলে দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে বারবার ক্ষমা চাইতে হবে। এ পাপবোধ নিজেকে সংকুচিত করার জন্য নয়। এ পাপবোধ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ভারমুক্ত, পবিত্র, উদ্ভাসিত ও আল্লাহর নৈকট্যের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ বলেছেন :
إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ فِي أَصْلِ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابِ وَقَعَ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ لَهُ هكَذَا فَطَارَ
মুমিন ব্যক্তি তাঁর পাপকে খুব বড় করে দেখেন, যেন তিনি পাহাড়ের নিচে বসে আছেন, ভয় পাচ্ছেন, যে কোনো সময় পাহাড়টি ভেঙ্গে তাঁর উপর পড়ে যাবে। আরা পাপী মানুষ তার পাপকে খুবই হালকাভাবে দেখেন, যেন একটি উড়ন্ত মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, হাত নাড়ালেই উড়ে যাবে। বুখারী (৮৩-কিতাবুদ দাআওয়াত, ৪-বাবুত তাওবাহ) ৫/২৩২৪ (ভারতীয় : ২/৯৩৩); তিরমিযী (৩৮-কিতাব সিফাতিল কিয়ামাহ, ১৫-বাব..সিফাত আওয়ানিল হাওয) ৪/৫৬৮ (ভা ২/৭৬)। হুহহু এই বাক্যে ইসতিগফার হাদীসে পাওয়া যায় না। তবে এই বাক্য দ্বারাও ইসতিগফার করা যাবে, কেননা মুমিন যে কোনো ভাষায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। ভাষা বা বাক্যের চেয়ে মনের অনুশোচনা ও আবেগ বেশি প্রয়োজনীয়। তবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর শেখানো বাক্য ব্যবহার করা উত্তম। সাধারণভাবে বিভিন্ন হাদীসে ইসতিগফারের জন্য আসতাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি ) এবং কখনো এর সাথে ওয়া আতূবু ইলাইহি (এবং আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি) বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে কয়েকটি মাসনূন বাক্য উল্লেখ করছি:
১। أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হ। অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ৩০০। হাদীসটি সহীহ। ২। أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি। অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৬। ৩। رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ (الغَفُوْرُ)
উচ্চারণ : রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় রাহীম-এর বদলে: গাফূর। অর্থ: হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী। সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদীস নং৩৮১৪; সুনানু তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৩৪। হাদীসটি সহীহ। ৩। (৩ বার)
أَسْتَغْفِرُ اللهَ (الْعَظِيْمَ) الَّذِيْ لاَ إلهَ إِلاَّ هُوَ الحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লা-হাল্ (আযীমাল্) লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুআল হাইউল কাইঊমু ওয়া আতূবু ইলাইহি। অর্থ: আমি মহান আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সর্ব সংরক্ষক, এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫১৭। হাদীসটি সহীহ। ৪। (সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার)
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আনতা রাব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাক্বতানী, ওয়াআনা আবদুকা, ওয়াআনা আলা- আহদিকা ওয়াওয়াঅ্দিকা মাস তাতাঅ্তু। আঊযু বিকা মিন শাররি মা- স্বানাতু, আবূউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা, ওয়াআবূউ লাকা বিযামবি। ফাগ্ফিরলী, ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আপনার কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার ও প্রতিজ্ঞার উপরে রয়েছি যতটুকু পেরেছি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যে কর্ম করেছি তার অকল্যাণ থেকে। আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আপনি আমাকে যত নিয়ামত দান করেছেন তা-সহ এবং আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আমার পাপ-সহ। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩০৬। কুরআন কারীমে মুমিনগণকে বারবার তাওবা ও ইসতিগফার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাওবা ও ইসতিগফারের জন্য ক্ষমা, পুরস্কার ও মর্যাদা ছাড়াও জাগতিক উন্নতি ও বরকতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন হাদীসে ইসতিগফারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসতিগফার আল্লাহর অন্যতম যিক্র। যিক্রের সাধারণ ফযীলত ইস্তিগফারকারী লাভ করবেন। এ ছাড়াও ইস্তিগফারের অতিরিক্ত মর্যাদা ও সাওয়াব রয়েছে। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
وَاللهِ إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً
আল্লাহর কসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। বুখারী (৮৩-কিতাবুদ দাআওয়াত, ৩-বাব ইসতিগফারিন নাবিয়্যি) ৫/২৩২৪
প্রশ্নঃ 120
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ব্যবসায় মহিলা ক্রেতা
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। যেহেতু দোকানের সামনে খোলা থাকে, লোকজন যাওয়া-আসা করে এবং অনেক সময় দোকানে কর্মচারী থাকে তাই এটা নির্জন অবস্থার মধ্যে পড়বে না। আপনি তাদের দিকে তাকােেবন না, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথাও তাদের সাথে বলবেন না।
প্রশ্নঃ 121
আল্লাহ খুশি হলে তিনটি জিনিস প্রেরণ করেন বূষ্টি,মেহমান, ও কন্যসন্তান দেন। ---- সত্যতা কত টুকু?
22 Dec 2025
এটা কোন হাদীস নয়। তবে বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত। কুরআনে অনেক জায়গায় বৃষ্টিকে আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন বলা হয়েছে। কন্যা সন্তানের পিতা জান্নাতে যাবেন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। মেহমানদেরকে ইসলামে সম্মান দিতে বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ 122
At Foroj prayer about dowa before salam
22 Dec 2025
হ্যাঁ, আপনি প্রচলিত দুআ মাসুরা সহ কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত যে কোনো দুআ বা কিংবা কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত দুয়ার অর্থের সাথে মিল রেখে যে কোন দুআ পড়তে পারেন। ছয়টি দুআ মাসুরা সহ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত বইয়ের ৩৮৩-৩৮৯পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 123
Sir, I request for you. Please answer the question. Furfura pir said that, Fufura established free from Shirk Bidyat. Now, dear sir,I want to know about Furfura established free from Shirk Bidyat. Please give evidence for Quran Sunnah. Thanks
22 Dec 2025
ফুরফুরার প্রথম ও মূল পীর আবু বকর সিদ্দিকী রহি. মারা গেছেন ১৯৩৯ ইং সনে। এরপর তার সন্তানগণ বহু পথ ও মতে বিভক্ত হয়েছেন। তাঁর বড় ছেলে ছিলেন আব্দুল হাই সিদ্দিকী। তিনি ১৯৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বড় ছেলে ছিলেন আব্দুল কাহহার সিদ্দীকী। তিনি ২০০৬ সালে মৃত্যু বরণ করেন। আব্দুল কাহ্হার সিদ্দীকী শিরক-বিদআতের কঠোর বিরোধী ছিলেন। তার দরবার ও ভক্তদের মধ্য থেকে দিন শিরক বিদআত উৎখাতের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেন। তাঁর ছেলে আব্দুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী পিতার স্থলে কাজ করছেন। তিনিও শিরক বিদআত থেকে মুক্ত থাকতে সদা-সচেষ্ট। তবে এর পাশাপাশি বর্তমানের ফুরফুরার মূল পীর আবু বকর সিদ্দিকীর বংশধরদের মধ্যে অনেকেই বিদআতের পক্ষে সোচ্চার। বিস্তারিত জানতে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখিত ফুরফুরার পীর আবু জাফর সিদ্দিকী রচিত আল মাউযুআত বইটি পড়ন।
প্রশ্নঃ 124
hanafi madhab er witr salat er niyom ki correct?
22 Dec 2025
হ্যাঁ, হানাফী মাজাহাবের বিতর সালাতের নিয়ম সঠিক। রাসূলুল্লাহ সা. বিত্র সালাত বিভিন্ন পদ্ধতিতে আদায় করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত। হানাফী মাযহাবে যে পদ্ধতিতে বিতর পড়া হয় সেটি উক্ত সহীহ পদ্ধতিগুলোর একটি। তা হলো দু রাকআতের শেষে বসে আত-তাহিয়্যাতু পাঠ করে উঠে দাড়িয়ে তৃতীয় রাকআত আদায় করা। আল্লামা ইবনে হাযাম জাহেরী রহ. আল মুহল্লা (২/৮২) বলেছেন,
والوتر وتهجد الليل ينقسم على ثلاثة عشر وجها، أيها أفعل أجزأه
বিতর ও রাতের তাহাজ্জুদ ১৩ টি পদ্ধতি রয়েছে। যে কোন এক পদ্ধতিতে পড়লেই যথেষ্ট হবে। এরপর তিনি দলীল সহ ১৩ পদ্ধতিই উল্লেখ করেছেন। ১২ নং পদ্ধতি উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন,
والثاني عشر: أن يصلي ثلاث ركعات، يجلس في الثانية، ثم يقوم دون تسليم و يأتي بالثالثة، ثم يجلس ويتشهد ويسلم، كصلاة المغرب. وهو اختيار أبي حنيفة
১২নং তিন রাকআত নামায পড়বে, দ্বিতীয় রাকআতে বসবে, এরপর সালাম না ফিরিয়ে উঠবে এবং তৃতীয় রাকআত পড়বে। তারপর বসে তাশাহুদু পড়ে সালাম ফিরাবে মাগরিবের নামাযের মত। আর এটা আবু হানীফা পছন্দ করেছেন। এরপর তিনি এই মতের পক্ষে নিচের হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন। عن سعد بن هشام أن عائشة حدثته : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان لا يسلم في ركعتي الوتر
অর্থ: আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা. বিত্রের দুই রাকআতে সালাম ফিরাতেন না। সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৯৮। মুসতাদরক হাকিম, হাদীস নং ১১৩৯। ইমাম জাহবী এবং হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী। অনেক সাহবী রা. থেকে এমন কথা বর্ণিত আছে। ইবনে উমার রা. থেকে এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
صلاة المغرب وتر النهار فأوتروا صلاة الليل
মাগরিব হলো দিনের বিত্র, তোমরা রাতের বিত্র আদায় করো। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৪৮৪৭। শায়খ শুয়াইব আরনাউত বলেছেন, বর্ণনাকারীগণ ছিকাহ। এখানে রাসূলুল্লাহ সা. মাগরিবের নামযকে বিতরের নামাযের সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন,
الْوِتْرُ ثَلاَثٌ رَكَعَاتٍ كَصَلاَةِ الْمَغْرِبِ
বিত্র মাগরিবের মত তিন রাকআত। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৬৮৮৯। বর্ণনাকারীগণ ছিকাহ। অন্য সনদেও হাদীসটি বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল-মারওয়াযী (২৯৪) লিখিত কিতাব সালাতিল বিতর গ্রন্থে অনেক সাহাবী এবং তাবিয়ী থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, তারা মাগরিবের মত তিন রাকআত বিতর আদায় করতেন। (পৃষ্ঠা ২৯৪)
একটি হাদীসে মাগরিবের মত তিন রাকাআত বিতর পড়তে নিষেধ করা হয়েছে এবং ৫ বা ৭ রাকআত বিতর পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ হাদীসটি দ্বারা অনেকে প্রমাণ করেন যে, দ্বিতীয় রাকআতে বৈঠক করে তিন রাকআত বিতর পড়া সঠিক নয়। হাদীসটি নিম্নরূপ:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تُوتِرُوا بِثَلاَثٍ أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ أَوْ سَبْعٍ ، وَلاَ تُشَبِّهُوا بِصَلاَةِ الْمَغْرِبِ
আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, তিন রাকআত বিতর পড়ো না, পাঁচ বা সাত রাকআত পড়ো। মাগরিবের নামাযের সাথে সাদৃশ্য করো না। সুনানে দারে কুতনী, হাদীস নং ১৬৫০। ইমাম দারে কুতনী বলেছেন, হাদীসটির রাবীগণ ছিকাহ। এখানে লক্ষনীয় যে, মাগরিবের মত বিতর না পড়ার এ হাদীসটিতে এবং এ অর্থের অন্যান্য হাদীসে পদ্ধতিগত পার্থক্যের কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, বরং রাকআতের পার্থক্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুস্পষ্টত বলা হয়েছে, সালাতুল বিত্র মাগরিবের মত তিন রাকআত না পড়ে পাঁচ বা সাত রাকআত পড়। অর্থাৎ তিন রাকআত পড়লেই তা মাগরিবের মত হয়ে গেল, যে পদ্ধতিতেই তা পড়া হোক না কেন। এখন যদি কেউ ধারণা করেন, দ্বিতীয় রাকাতে না বসে তিন রাকআত বিতর পড়ে তিনি এ হাদীসটির উপর আমল করলেন তবে তার এ ধারণাকে সঠিক বলা কষ্টকর। এ হাদীসটির বাহ্যিক নির্দেশনা থেকে আমরা এতটুকুই প্রমাণ করতে পারি যে, তিন রাকআত বিতর পড়া বৈধ নয়, বরং ৫ বা ৭ রাকআত পড়তে হবে। তবে এর বিপরীতে অনেক সহীহ হাদীসে তিন রাকআত বিতর পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তিন রাকআত বিতর পড়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল হাদীসের আলোকে উপরের নিষেধার্থক হাদীসটির অর্থ হলো, শুধু তিন রাকআত বিতর পড়া বৈধ,তবে ৫ বা ৭ রাকতআত পড়া উত্তম। এ অর্থে আয়েশা (রা) বলেন,
لاَ تُوتَرُ بِثَلاَثٍ بُتْرٍ ، صَلِّ قَبْلَهَا رَكْعَتَيْنِ ، أَوْ أَرْبَعًا
তুমি শুধু তিন রাকআত বিতর পড়বে না, তুমি তিন রাকআতের পূর্বে দু রাকআত বা চার রাকআত (কিয়ামুল্লাইল সালাত) পড়বে। মুসান্নফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৬৮৯৮। হাদীসটির সনদ সহীহ বলে প্রতীয়মান। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, হানাফী মাজাহাবের বিত্র নামায সুন্নাহ সম্মত। মুমিনগণের উচিৎ পদ্ধতিবিষয়ক বিতর্কে লিপ্ত না হওয়া। যে পদ্ধতি আপনার নিকট অধিক গ্রহনযোগ্য সে পদ্ধতিতে বিতর আদায় করুন এবং হাদীসে প্রমাণিত অন্যান্য পদ্ধতিকে সম্মান করুন। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন। বিস্তারিত জানতে পড়ুন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত ৪১৩-৪১৭।
প্রশ্নঃ 125
কুরআনে হূরের বিষয়টি কি কুরআনের ভাবগাম্ভিয্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়?
22 Dec 2025
প্রথমত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত কুরআন অধ্যয়ন করেন নি। কুরআনে হুরের বিষয়টির সাথে যৌনতা, দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদির সামান্যতম আবেশ নেই। বারংবার বলা হয়েছে যে, তাদেরকে জোড়া বানিয়ে দেওয়া হবে হুরের সাথে। আরবী ও অন্যান্য লিঙ্গ সচেতন ভাষায় সাধারণ বিধিবিধানে পুংলিঙ্গ ব্যবহার করেই বিধিবিধান প্রদান করা হয়। এরপরও হুর শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর মানবীয় প্রকৃতির সাথে একটি সুসমঞ্জস। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আত্মা ও মনের শান্তির জন্য জোড়া চায়। জান্নাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে জোড়া প্রদান করবেন; যেন তারা মানবীয় প্রকৃতির প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির পূর্ণতা লাভ করতে পারে। দ্বিতীয়ত: এ বিষয়টি যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থও অধ্যয়ন করেন নি। বাইবেল, বেদ, রামায়ন, মহাভারত ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি পর্নোগ্রাফিকেও হার মানায়। পিতা-কন্যার ব্যভিচার, ভাই-বোনের ভ্যবিচার, শ্বশুর-পুত্রবধুর ব্যভিচার, পিতার স্ত্রীদের প্রকাশ্যে ধর্ষণ, উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি, মাতলামি ইত্যাদির বর্ণনায় পবিত্র বাইবেল পরিপূর্ণ। সাধারণ বিষয়ের বর্ণনাতেও অশ্লীল উপমা ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআনে স্বাভাবিক যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বর্ণনাও সকল অশ্লীতার ছোয়া থেকে মুক্ত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ইহূদী, খৃস্টান, হিন্দু বা অন্য ধর্মের কোনো কোনো অনুসারী নিজেদের ধর্মগ্রন্থের অপবিত্রতম পর্নোগ্রাফীর চেয়েও অশ্লীল গল্পগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভির্যের সাথে সাংঘর্ষিক মনে না করলেও কুরআনের মধ্যে বিদ্যমান অশ্লীলতা বা দৈহিকতার সামান্যতম ছোয়ামুক্ত হুর বিষয়ক বক্তব্যগুলোকে ধর্মগ্রন্থের ভাবগাম্ভীর্যের সাথে অসামাঞ্জস্য বলে দাবি করেন।
প্রশ্নঃ 126
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সকল ধর্মানুসারীই দাবি করেন যে, তাঁর ধর্মই সঠিক বা শ্রেষ্ঠ, তাহলে ইসলামের সঠিকত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার উপায় কী?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
আমি আসলেই আপনার প্রশ্নগুলোর কথা ভুলে গিয়েছিলাম। নানাবিধ ব্যস্ততাই কারণ। আপনার মেইল দেখে মনে পড়ল।
প্রথম প্রশ্ন: সকল ধর্মানুসারীই দাবি করেন যে, তাঁর ধর্মই সঠিক বা শ্রেষ্ঠ, তাহলে ইসলামের সঠিকত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার উপায় কী? ধর্ম কী ও কেন এ দুটি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই এ উত্তর নিহিত।
প্রথমত: সকল ধর্মানুসারীর মতেই ধর্ম হলো ঐশ্বরিক (ফরারহব) ব্যবস্থা যা মহান স্রষ্টা ওহীর বা ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে কোনো রাসূল বা ধর্মপ্রবর্তকের মাধ্যমে মানব জাতিকে প্রদান করেছেন। এজন্য যে কোনো ধমের্র ধর্মগ্রন্থ (scripture) রয়েছে। ধমের্র সাথে ধর্মগ্রন্থের তুলনা করলেই কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ তা সহজে বুঝা যায়।
বিশ্বের অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থের সাথে সেই ধমের্র তুলনা করলেই আমরা দেখি যে, ধর্মানুসারীদের ধমের্র সাথে ধর্মগ্রন্থের ধমের্র মিল খুবই কম। বাইবেলের বিধিবিধান ও ধর্মবিশ্বাসের সাথে চাচের্র খৃস্টধমের্র তুলনা করলে এবং বেদ-গীতার সাথে প্রচলিত হিন্দু ধমের্র তুলনা করলেই তা নিশ্চিত জানা যায়। অর্থাৎ প্রচলিত ধর্মগুলোর ধর্মগ্রন্থই প্রমাণ করে যে, তাদের প্রচলিত বা আচরিত ধর্ম বিশ্বাস সঠিক নয়। তারা ধর্মগ্রন্থের অধিকাংশ নির্দেশনা পালন করেন না, বরং বিপরীত চলেন ও ধর্মগ্রন্থ নিষিদ্ধ বিষয়কে ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন। খৃস্টধমের্র ত্রিত্ববাদ, প্রায়শ্চিত্ববাদ, মূলপাপতত্ত্ব, কর্মহীন বিশ্বাসেই মুক্তির তত্ত্ব ইত্যাদি কোনো কিছুই বাইবেলে নেই, বরং বাইবেলে এর বিপরীত বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। প্রচলিত বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়ম নিশ্চিত প্রমাণ করে যে, সাধু পল প্রচারিত ও বর্তমান খৃস্টজগত আচরিত খৃস্টধর্ম নামক ধর্মটি সঠিক নয়। হিন্দু ধর্ম ও অন্যান্য ধমের্র ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রায় একইরূপ।
ইসলাম ধমের্র বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রম। প্রচলিত ইসলাম ধমের্র বিধিবিধান, বিশ্বাস ও আচার আচরণ সবই কুরআন ভিত্তিক ও কুরআন সমর্থিত। মুসলিমগণ ধর্ম কতটুকু পালন করেন সেটি ভিন্ন কথা। তবে কুরআন নির্দেশিত কোনো অধর্মকে তারা ধর্ম হিসেবে বিশ্বাস বা পালন করেন না।
শুধু তাই নয়। বিশ্বের সকল ধর্মগ্রন্থই প্রমাণ করে যে, ইসলামই সঠিক ধর্ম। সকল ধমের্র প্রচলিত বিশ্বাস ও কমের্র মধ্যে এমন অনেক বিষয় বিদ্যমান যা সে ধমের্র ধর্মগ্রন্থ ছাড়াও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ নিন্দনীয় বলে ঘোষণা করেছে। পক্ষান্তরে ইসলামী ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় কমের্র মধ্যে এমন একটি বিষয়ও নেই যা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ নিন্দনীয় বলে ঘোষণা করেছে। সাধারণত ইসলাম বিরোধীগণ জিহাদ ও নারী অধিকারের মত দু-একটি বিষয় উত্থাপন করতে চান যে, এগুলো অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের আলোকে খারাপ বা অন্যায়। তাঁদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন না করার কারণে অথবা সত্য গোপনের জন্য তারা এ কথা বলেন। প্রকৃত সত্য হলো, বাইবেল, বেদ, গীতা, মহাভারত, রামায়ণ ইত্যাদি সকল ধর্মগ্রন্থে বিদ্যমান জিহাদ ও নারী অধিকারের অবস্থা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। ধর্মগ্রন্থগুলোর নির্দেশনায় ইসলামই এ দুটি বিষয়ে সর্বোচ্চ মানবিকতা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রত্যেক ধমের্র সাথে সে ধমের্র ধর্মগ্রন্থের তুলনামূলক অধ্যয়ন এবং সকল ধর্মগ্রন্থের মূল শিক্ষার সাথে প্রচলিত সকল ধমের্র তুলনামূলক অধ্যয়ন প্রমাণ করে যে, ইসলামই একমাত্র সঠিক ধর্ম।
দ্বিতীয়ত: সকল ধর্মানুসারীই বিশ্বাস বা দাবি করেন যে, ধমের্র উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যিকার সৎ মানুষে পরিণত করা। এ দাবি ও বাস্তবতার মধ্যে তুলনা করলেও কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ তা সহজেই জানা যায়। বস্তুত নিয়মিত সুষম খাদ্যগ্রহণ ও স্বাস্থ্যসম্মত নিয়মে না চলে সপ্তাহে, মাসে বা বছরে অল্পবেশি ভিটামিন, মহা-পুষ্টিকর খাদ্য বা ঔষধ গ্রহণ করে প্রকৃত দৈহিক সুস্থতা অর্জন করা যায় না। তেমনি নিয়মিত সুষম বিশ্বাস, ইবাদত ও পাপমুক্ত পবিত্র জীবন যাপন না করে মাঝে মাঝে আনুষ্ঠানিকতা করে প্রকৃত আত্মিক সুস্থতা, পবিত্রতা ও সততা অর্জন করা যায় না।
আর এ দিক থেকে একমাত্র ইসলামই জীবনঘনিষ্ট ধর্ম যা ধার্মিক মানুষকে প্রকৃত সৎ মানুষে পরিণত করে। ইসলাম ধমের্র বিধিবিধান এমন যে, মহান আল্লাহর সাথে সার্বক্ষণিক প্রেমের ও স্মরণের সম্পর্ক তৈরি হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সাপ্তাহিক নামায, রোযা, যাকাত, দৈনন্দিন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইবাদত ইত্যাদি পালনের মাধ্যমে নিয়মিত বাধ্যতামূলক আত্মীক-আধ্যাত্মিক অনুশীলন অব্যাহত থাকে। এজন্য ধর্ম পালনকারী ধার্মিক মুসলিম সমাজের অন্যদের তুলনায় অধিকতর সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত হন। পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনে তিনি অপেক্ষাকৃত অধিক সচেতন হন।
অন্যান্য ধর্মে এরূপ নিয়মিত ইবাদত ও অনুশীলন অনুপস্থিত বা ঐচ্ছিক। ফলে মানুষ মহান আলাহর সাথে নিয়মিত প্রেমের সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত। হিন্দু ধর্মে বর্ণপ্রথার কারণে সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু মূলত ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন ও ইবাদত পালনের সকল সুযোগ থেকেই বঞ্চিত। হিন্দু ধর্ম মূলত খাওয়া- না খাওয়া, ও কিছু আচার-অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখানে বিশ্বাস, সততা, কর্ম, বিধিবিধান, আধ্যাত্মিকা ইত্যাদি গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সাধু পলের খৃস্টধমের্র কর্মহীন বিশ্বাস, বিশ্বাসে মুক্তি ও পাপমোচন তত্ত্বের কারণে দুর্নীতি, ব্যভিচার, যৌন নিপীড়ন, মাদকতা ইত্যাদি বিষয় ধার্মিক খৃস্টান ও পোপ-পাদরিদের মধ্যেই ব্যাপক, অধার্মিক খৃস্টানদের তো কথাই নেই। এখানেও ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসই মূল, দুর্নীতি মুক্ত হওয়া, মাদকমুক্ত হওয়া, জুলুম মুক্ত হওয়া ইত্যাদির কোনো মূল্য নেই। সকলের জন্যই মুক্তি নিশ্চিত। দুনিয়ার আইন কোনো রকমে ফাঁকি দিতে পারলেই হলো। ফলে কেউ আলাহর প্রেম অর্জন বা তাঁর অসন্তুষ্টি বর্জনের আকাঙ্খায় পাপ, জুলুম, ব্যভিচার, অনাচার, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি বর্জন করেন না। কেউ তা করলে একান্তুই আইনের ভয়ে করেন। আর আইনের ভয় প্রকৃত সৎ মানুষ তৈরি করে না, বরং বকধার্মিক ও ঠক তৈরি করে।
প্রশ্নঃ 127
Assalamu alaikum, Sir Q: Mobile parts and tv remot ar dokane business and job kora hala hobe ki?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এক্ষেত্রে মূলনীতি হলো যে জিনিসের ব্যবহার হারাম ও হালাল উভয় কাজে সমান ভাবে কিংবা হালাল কাজে বেশী হয় সেই জিনিসের ব্যবসা এবং সেই জিনিসের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী জায়েজ। মোবাইলের ব্যবহার যেহেতু হালাল কাজে বেশী হয় তাই মোবাইলের ব্যবসা এবং মোবাইলের দোকানে চাকুরী জায়েজ। আর টেলিভিশনের ব্যহার যেহেতু খারাপ কাজেই বেশী হয় তাই টেলিভিশনের ব্যবসা বা এর দোকানে চাকুরী করা জায়েজ নয়। এর থেকে বিরত থাকা জরুরী। উল্লেখ্য যে, কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই।
প্রশ্নঃ 128
শায়েখ আসসালামু আলাইকুম । আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি থেকে ডাক্তারদের বিভিন্ন জিনিস উপহার দেওয়া হয় । কোন ডাক্তার সেই জিনিসগুলো গ্রহণ করলে সেটা কী ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। হ্যাঁ, এটা ঘুষ হিসাবেই গণ্য। কারণ এটা কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই চিকিৎসক পেয়ে থাকে এবং এই কারণে চিকিৎসক রোগীর জন্য সর্বোচ্চ উপকারী ও সহজ ঔষধ লেখার চেয়ে নিজের জন্য বা কোম্পানির জন্য অধিক উপকারী ঔষধ লিখতে প্ররোচিত হন। এ ধরণের সুবিধাগুলো সবই অনৈতিক ও হারাম
প্রশ্নঃ 129
আসসালামু আলাইকুম। সার আমার বয়স ২৩ বছর। আমার বিয়ে হয়নি। আমার সমস্যা ছেলেদের মতো দাড়ি, গোঁফ উঠতে শুরু করেছে। আর কোন সমস্যা নেই। এ নিয়ে আমি সব সময় মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত থাকি। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। পড়া শোনা তে ও মন বসাতে পারছি না। সব সময় টেনশন কাজ করে। কিছুই ভালো লাগে না। এখন আমি কি করব জানালে উপকৃত হব ইনসাআল্লহ।
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বিপর্যস্ত হওয়ার কোন কারণ নেই। মোটেও টেনশন করবেন না। বর্তমানে চিকিৎসায় এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আপনি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পড়াশোনা ও অন্যান্য প্রয়োজনীও কাজে মন দিন। আমরা দুআ করি আল্লাহ আপনাকে দ্রুত সুস্থ করে দিন।
প্রশ্নঃ 130
Assalamualykum, ami khas porda korar try korci n din mene cholar try korci, ami job korte chayna kintu amar baba amak job sara bia dibenna, n amar proti osontusto thakben, now baba k khusi kore bia korar jonno amar ki job kora uchit naki amar doa o sobor kora uchit, may der job ar sorto gulo ki? Bangladesh Islami Bank a ki job kora jaej hobe akjon mohilar? Apner gyan dia amar upokar korun.plz
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনার পিতার সন্তুষ্টির জন্য আপনার চাকুরী করতে কোন বাধা নেই। মেয়েরা প্রয়োজনে চাকুরী করতে পারেন। আপনি পর্দার সাথে যাওয়া আসা করবেন। যেখানে শুধু মহিলারা কাজ করে এমন জায়গায় কাজ করবেন। শরয়ী পর্দা যেন কোন ভাবেই লংঘিত না হয় সেদিকে খেয়াল করবেন। মহিলাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকে চাকুরী করা জায়েজ।
প্রশ্নঃ 131
আমাদের এলাকায় চরমোনাই পীরের অনেক অনুসারী। এবিদআতী অনুসারীরা ইদানিং মহিলাদের দিয়ে দল গঠন করে বাড়ী বাড়ী যেয়ে চরমোনাই পীরের লেখা বই দিয়ে অসচেতন-অর্ধ শিক্ষিত মহিলাদের ধর্ম পালনের জন্য তালিম দিচ্ছে। এঘটনা বর্ননা দিয়েছেন আমার মা। আমার মাসহ আরো কিছু আলিম-ফাজিল পাশ মেয়েদের নিয়ে দাওয়াতী কর্যক্রম চালাতে চায়। এ তালিমী বা দাওয়াতী কর্যক্রম চালাতে তারা কোন কিতাব-এর অনুসরন করবে? আমাকে কোরআন ও সহি হাদিসের আলোকে এমন একটি #কিতাব#-এর নাম জানান, যে #কিতাব# থেকে তারা অতি সহজে মা-বোনদের বুঝাতে পারে।
22 Dec 2025
কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সহীহ দাওয়াত দেয়ার জন্য অন্য কোন দল বা মতের সমালোচনা মূলত কোনো ভাল ফল দেয় না। এতে এসকল দলের কেউ পরিবর্তনও হয় না। আমাদের দায়িত্ব হলো আমাদের সাধ্যমত সহীহ দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আপনি কুরআন কারীম ও সহীহ সুন্নাহ নির্ভর দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। এজন্য সংক্ষিপ্ত ভাল কোনো তাফসীরের গ্রন্থ গ্রহণ করবেন। যেমন তাফসীর তাওযীহুল কুরআন। সহীহ হাদীসগ্রন্থগুলোর মধ্যে রিয়াদুস সালিহীন গ্রন্থটি সংক্ষেপ ও উপকারী। এরপর আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট প্রকাশিত ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখিত রাহে বেলায়াত ও এহইয়াউস সুনান গ্রন্থ দুটি রাখতে পারেন। এছাড়া উপকারী সহীহ পুস্তক অনুসন্ধান করতে থাকুন।
প্রশ্নঃ 132
assalamualaikum warahmatullah ..., ami mosjide gele amake chilla zawar jonno bole ..unara bole tar kothar cheye kar kotha uttom hote pare ze manushke allaher dike ahoban kore... erpor bole 4-5 diner jonno amader shathe diner mehnote chole ashen ... abbu ammuke bole ashen ... ekhon ami jodi oderke bujhai dolil dei ora to shunbe na ... ami bolsilam ze ami online tablig kori ierf.com e... ekhon ami kivabe jukti diye uttor dibo? oderke bujhaite parbo na ...onek jon okhane pore amar piche lagbe ....kete ashte hobe
22 Dec 2025
আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি নিঃসন্দেহ ভাল কাজ করছেন। তারা যা করছে তাও ভাল কাজ। আপনার যদি সময় সুযোগ হয় তাহলে তাদের সাথে দাওয়াতি কাজে অংশ নিবেন। যেতে না পারলে তাদেরকে বুঝিয়ে বলবেন।
প্রশ্নঃ 133
assalamu alaikum kamon acen? hujur amar ekta proshno muslim ra kono kisu amol korte hole quran hadish er dolil lagbe tai amateur proshno chand grohon surjo grohon er bepare amader deshe manusher kisu darona ace oi somoy kono gorboboti mohila naki sute parbe na boste parbe na khete parbe na r o onek kisu agula quran hadish shommoto kina. a bepare islam ki bole. please janaben. khub upokrito hobo zezak allah khayer
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনি যা লিখেছেন, সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ অবস্থায় গভবর্তী মহিলা শুতে বসতে........ পারবে না তা সম্পূর্ণ কুসংস্কার, কুরআন হাদীসে এর কোন ভিত্তি নেই। সূর্যগ্রহনের সময় রাসূল সা. লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতেন এবং নামায আদায় করতে বলেছেন। আবু মাসউদ রা. বলেন, নবী সা. বলেছেন,
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لاَ يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ مِنَ النَّاسِ وَلَكِنَّهُمَا آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُمَا فَقُومُوا فَصَلُّوا
কারো মৃত্যুর জন্য সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ লাগে না। কিন্তু এই দুটি আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। যখন তোমারা তা দেখবে তখন নামায আদায় করবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৪১। বিস্তারিত জানতে দেখুন: সহীহ বুখারী, কিতাবুল কুসুফ (গ্রহণ লাগা অধ্যায়)। সুতরাং আমাদের উচিৎ এমন হলে নামায আদায় করা আর কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা।
প্রশ্নঃ 134
বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকুরী করা যাবে কিনা? এবং আর আয় হালাল কিনা?
22 Dec 2025
না। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সুদভিত্তিক কোন ব্যাংকে এই পদে চাকুরী করা কারো জন্য জায়েয হবে না এবং এখান থেকে উপার্জিত অর্থ কারো জন্য হালাল নয়। হররত জাবের রা. বলনে,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
র্অথ: রাসূলুল্লাহ সা. সুদ গ্রহীতা, দাতা, লখেক, সাক্ষীদ্বয় প্রত্যকেরে উপর লানাত (অভিশাপ) দিয়েছেন এবং বলেছেন (পাপরে দিক থেকে) সবাই সমান। সহীহ মুসলমি, হাদীস নং৪১১৭। আর প্রশ্নোক্ত কাজটি সুদ লেখার অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং আমাদরে জন্য আবশ্যক এমন চাকুরী থকেে বিরত থাকা।
প্রশ্নঃ 135
Salam, before sleeping, Is it sunnah to keep the head in the north direction?
22 Dec 2025
না, উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমানো সুন্নাত নয়। তবে ডান কাঁধে ঘুমানো সুন্নাত। হযরত বারা ইবনে আযিব রা. বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ نَامَ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় আসতেন তখন ডান কাঁধের উপর ঘুমাতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩১৫
প্রশ্নঃ 136
is the money earned by working in bank halal? can one stay in a banker relatives house when his parents are going abroad for a month? he has other relatives, but there are nonmahram (female cousins). only in the house of banker there is non-mahram. where should he stay? In the bankers home or other relatives home where non-mahram is present?
22 Dec 2025
সুদভিত্তিক ব্যাংকে কাজ করে উপার্জিত অর্থ হালাল নয়। তবে শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত ব্যাংকে কাজ করে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে না। কেননা হররত জাবরে রা. বলনে,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
র্অথ: রাসূলুল্লাহ সা. সুদ গ্রহীতা, দাতা, লখেক, সাক্ষীদ্বয় প্রত্যকেরে উপর লানাত (অভশিাপ) দয়িছেনে এবং বলছেনে (পাপরে দকি থকে) সবাই সমান। সহীহ মুসলমি, হাদীস নং৪১১৭। আর আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো আপনার জন্য উচিৎ হবে মাহরাম ব্যাংকার আত্মীয়ের বাসায় টাকা দিয়ে খাওয়া দাওয়া করা।
প্রশ্নঃ 137
আমার প্রশ্ন হলো: নওমুসলিম এর ঘরে দাওয়াত খাওয়ার বিধান কি? বিশেষ করে বিয়ের দাওয়াত।
22 Dec 2025
নওমুসলিম আর মুসলিমের একই। নওমুসলিম আর মুসলিমের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং নওমুসলিমের ঘরে বিয়ের দাওয়াত খাওয়া খাওয়া যাবে এবং মুসলিমদের সাথে যেমন আচরণ করতে হয়ে তাদের সাথেও সেই আচরণ করতে হবে।
প্রশ্নঃ 138
শাওয়াল মাসের রোজা তিনটি রাখলে হবে না ছয়টি রাখতে হবে জানালে ভালো হয়
22 Dec 2025
আবূ আইয়্যুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
যে রামাদান মাসের রোজা রাখে এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে তাহলে এটা তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার মত। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৫। হাদীসে বর্ণিত উক্ত ফজিলতের জন্য আপনাকে ছয়টি রোজাই রাখতে হবে। তিনটি রাখলে চলবে না। তবে তিনটি রাখলে সাধারণ নফল রোজার সওয়াব হবে।
প্রশ্নঃ 139
আসসালামু আলাইকুম স্যার। আমি জামাতে সালাত আদায়ের চেষ্টা করি। আমি কিছুদিন আগে জানলাম আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেব তাবিজ দেন যাহা সহীহ হাদিস মতে শিরক। আমি একজন আলেমের থেকে শুনেছি যে, যে ব্যাক্তি শিরক করে তিনার পিছনে নামাজ হবে না। এছাড়া তিনি আরো অনেক কবিরা গুনাহে লিপ্ত, আমার জামায়েত সালাত আদায় করা ওয়াজিব। এমতাবস্থায়, আমার কি করণিয়?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। যদি কোন মসজিদের নিয়মিত নিযুক্ত ইমাম পাপী হন তবে তার নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ পাপী হবেন। সাধারণ মুসল্লি যদি অন্য কোন ভাল ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের সুযোগ পান তাহলে ভাল, নইলে এরুপ পাপী ইমামের পিছনেই সালাত আদায় করতে হবে। নেককার ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কুফর-শিরক না পাওয়া পর্যন্ত কোনো অজুহাতে জামাআত বা জুমুআ ত্যাগ করা যাবে না। ঐক্য বজায় রেখে উত্তম ইমামের জন্য চেষ্টা করতে হবে। আর আপনি যে শিরকের কথা উল্লেখ করেছেন সম্ভবত তা এমন নয় যে, তার পিছনে সালাতই আদায় করা যাবে না। কারণ শিরকের অনেক পর্যায় আছে। সব শিরকই এই পর্যায়ের নয় যে, শিরক কারীর পিছনে সালাত আদায় করা যাবে না। প্রসিদ্ধ কালামবিদ ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী র. (৩২৪হি.) বলেন, ومن ديننا أن نصلي الجمعة والأعياد وسائر الصلوات والجماعات خلف كل بر وفاجر كما روى أن عبد الله بن عمر رضى الله عنهم كان يصلي خلف الحجاج
অর্থ: আর আমাদের দীনের অন্যতম দিক যে, আমরা জুমুয়ার সালাত, ঈদগুলো এবং অন্যান্য সকল সালাত এবং জামাআত নেককার ও বদকারের পিছনে আদায় করি। যেমনিভাবে বর্ণিত আছে,আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পিছনে সালাত আদায় করতেন (মুসান্নিফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস নং ১৪১৭৫)। আল-ইবানাহ আন উসূলিদ দিয়ানাহ, ১/২০। দলীলসহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত আল-ফিকহুল আকবার পৃষ্ঠা ৩৩৭-৩৭৯ এবং রাহে বেলায়াত পৃষ্ঠা ৫৬৩-৫৬৮
প্রশ্নঃ 140
আসসালামু আলাইকুম আমি একটি কোম্পানীতে চাকুরি করি। আমাদের কোম্পানীর মালিক প্রতিবছর রোজার ঈদের পূর্বে যাকাতের টাকা প্রদান করে (যারা নিতে ইচ্ছুক তাদের লিষ্ট জমা দিয়ে)। আমার প্রশ্ন হলোঃ আমার যাকাত নেয়ার মতো অবস্থা নেই। আল্লাহর রহমতে আমি যথেষ্ট পেয়েছি। আমি যদি যাকাতের টাকাটা গ্রহণ করে আমার এলাকার কোন গরীব লোককে প্রদান করি তাহলে কোন গুনাহ বা সওয়াব হবে কি?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। না, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে আপনার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহন করা জায়েজ হবে না। কারণ যাকাত প্রদানের সময় যাকাত গ্রহীতাকে সম্পদের মালিক বানাতে হয় আর আপনি নিলে সেটা হচ্ছে না। তবে যদি মালিক আপনাকে উকিল (মাধ্যম) বানিয়ে আপনার কাছে আপনার এলাকার গরীবদের জন্য যাকাতের টাকা প্রেরন করে তাহলে জায়েজ হবে। অথবা আপনি যদি বলেন, আমি এই টাকা নেব না, গ্রামে গরীব মানুষদেরকে দেব আর মালিক দেন তাহলে জায়েজ হবে।
প্রশ্নঃ 141
আসসালামু লাইকুম? স্যার আমার একটা উওর দিবেন পিলিজ? আমার এক ভাই তার! প্যমেলিতে পায় তার মা আর তার স্তীর জগরা হয়! এখন কি তি তার স্তীর কে অন্য কোনো খানে রাখলে কি তার মায়ের সাথে কি বেভিচার করা হবে কি মা বাবা এবং স্তীর তাদের হক কি বাবে পালন করবো পিলিজ বলবেন? সরিয়তের আলোকে জানতে চাই? আমি আপনার একটা ছাএ?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সন্তানের উপর ফরজ মা-বাবার খেদমত করা। পুত্রবধূর জন্য আবশ্যক নয়। তবে মহিলাদের জন্য উচিৎ হলো স্বামীর পিতা-মাতার ভাল-মন্দের প্রতি লক্ষ রাখা। মা আর স্ত্রীর মাঝে যদি ঝগড়া বা মনোমালিন্য হয় তাহলে উচিৎ হলো স্ত্রীর জন্য অন্য কোন বাড়ির ব্যবস্থা করা। এতে কোন অন্যায় হবে না। তবে সর্বদা মায়ের খেদমতের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। মা, বাব ও স্ত্রীর প্রয়োজনয়ীও সকল চাহিদা পূরণ করলেই তাদের হক আদায় করা হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ 142
স্যার আমি একটা নিয়োগের ৩টা পরীক্ষার মধ্যে ২টি পরীক্ষায় আল্লাহর রহমতে পাস করেছি। শুধু ভাইভা পরীক্ষা বাকী। এখন গত কয়েক বার নিয়োগে রিপোর্ট যোগাযোগ ছাড়া চাকরী হয়না। যোগাযোগ করে চাকরী হলে যে টাকা আয় হয় তা হালাল হবে কী? এই ভাবে চাকরী হলে তা জান্নাতে যেতে প্রতিবন্ধক হবে কী?
22 Dec 2025
ঘুষ সর্বাবস্থায় হারাম। আপনি যদি কোন কারনে বাধ্য হন তাহলে এর জন্য আল্লাহ কাছে তওবা করবেন। যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও যোগাযোগ ছাড়া চাকরী যদি না হয় তাহলে যোগাযোগের (ঘুষের) মাধ্যমে চাকরী নিলে আশা করা যায় বেতনের টাকা হারাম হবে না তবে ঘুষের গোনাহর জন্য আপনাকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে, মাফ চাইতে হবে।
প্রশ্নঃ 143
Assalamualaikum, Questions given here are my mothers 1. Im a diabetic patient, however sometimes when I walk in the road my body get touched with other people of the road and takes place not from my own will. Is there will be any gunah for it. 2. Can I go to any market wearing borkhah? If I go so will there be any gunah. 3. If anyone dies and arrange Ziafot and gives meat to eat will there be any gunah to eat that meat?
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সলাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ( ১) না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি এমন কখনো হয়ে যায় তাহলে গুনাহ হবে না। (২) হ্যাঁ। আপনি বোরকা পরে প্রয়োজনীয় যে কোন জায়াগায় যেতে পারবেন। (৩) মৃত ব্যক্তির সওয়াবের উদ্দেশ্যে খানা-পিনার আয়োজন করা বিদআত। সুতরাং এমন খানা-পিনা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। তবে খেয়ে ফেললে আশা করা যায় গুনাহ হবে না।
প্রশ্নঃ 144
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ জনাব আমি এক সেট বাংলায় অনুবাদিত বুখারী কিনতে চাই কোন প্রকাশনীর কিনলে ভাল হয় জানালে উপকৃত হবাে।
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আপনাকে ধন্যবাদ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বুখারী শরীফের বাংলা অনুবাদ ক্রয় করুন।
প্রশ্নঃ 145
কেউ যদি ঈদ-উল ফিতর পালনের জন্য গ্রামের বাড়ীতে যায় সে কী কসর সালাত আদায় করবে?
22 Dec 2025
যদি তার গ্রামে বাড়ী-ঘর থাকে, পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন থাকে তবে সে সালাত কসর করবে না, পুরো নামায আদায় করবে।আর যদি সেখানে তার বাড়ী-ঘর না থাকে এবং তিনি অন্য কোথায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন তাহলে সে গ্রামের বাড়িতে এসে পনের দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর সালাত আদায় করবে।
প্রশ্নঃ 146
আসসালামু আলাইকুম, শাওয়াল মাসের সাওম কি আমি ঈদের পরের দিন থেকে রাখতে পারব? নাকি ঈদের ৩ দিন পর? যেহেতু আমি ঈদের তৃতীয় দিন থেকে শাওম শুরু করেছি। কুরান হাদিসের আলোকে জানতে চাই।
22 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করা জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। হ্যাঁ। শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা ঈদের পরের দিন থেকেই রাখতে পারবেন। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ছাড়া যে কোন দিনে এই ছয়টি রোজা রাখা যাবে। ধারবাহিকভাবেও রাখা যায় আবার বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা যায়। আবূ আইয়্যুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ যে রামাদান মাসের রোজা রাখে এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে তাহলে এটা তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার মত। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২৫।
প্রশ্নঃ 147
সাধারনত বাংলাদেশের জমীতে পুরা সময়ই পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয় । আমার জানার বিষয় হল, এই সমস্ত জমীতে ওশর না যাকাত আদায় করতে হবে? যদি ওশর আদায় করতে হয় তাহলে কোন পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে? কোন জমীতে ওশর এবং কোন জমীতে যাকাত আদায় করতে হয় জানালে উপকৃত হব।
21 Dec 2025
প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে যে, যাকাত ও উশর কোনো ভিন্ন বিষয় নয়। ফসলের যাকাতের নামই উশর। উৎপাদিত ফসলের যাকাতের নাম হল উশর। পার্থক্য হলো সাধারণত টাকা-পয়সা বা সোনারূপার যাকাত আড়াই পার্সেন্ট হারে আদায় করতে হয় আর ফসলের যাকাতের ক্ষেত্রে পানি দিয়ে ফলালে ৫% আর বৃষ্টির পানি দিয়ে ফলালে ১০% হারে আদায় করতে হয়। সুতরাং বাংলাদেশের যে সমস্ত জমিতে পুরো সময়ই পানি দিয়ে ফসল ফলাতে হয় সেখানে ফসলের ৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন, ১০০ মন ধান হলে ৫ মন ধান অথবা ৫ মন ধানের মূল্য যাকাত বা উশর দিতে হবে। যখন ফসল হবে তখনই ফসলের যাকাত দিতে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে ইবনে উমার রা. বলেন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, فِيمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ ، أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ বৃষ্টির পানি, প্রবাহিত ঝর্ণার পানি বা মাটির স্বাভাবিক আদ্রতা থেকে (কোন সেচ ব্যবস্থা ছাড়া ) যে ফসল উৎপাদিত হয়, সে ফল ও ফসলের এক দশমাংস (১০%) যাকাত আদায় করতে হবে। আর সেচের মাধ্যমে যে ফল ফসল উৎপন্ন করা হয় তা থেকে এক দশমাংসের অর্ধেক (২০ ভাগের একভাগ বা ৫%) যাকাত প্রদান করতে হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৮৩। উশর বা ফসলের যাকাতের নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি মত রয়েছে: ১। হানাফী মতানুসারে উশরের কোন নিসাব নেই। অল্প বা বেশী সকল পরিমাণ ফলমুল, শাকসবজী ও ফসলের জাকাত আদায় করতে হবে। ২। অন্য তিন ইমাম: মালিক, শাফেয়ী, আহমাদ ও হানাফী মাজহাবের ইমাম আবূ ইউসুফ ও অন্যান্য অনেক ফকীহের রা. মতে ভূমির উৎপাদন ৬৫৩ কিলোগ্রাম (প্রায় ১৭ মন) বা তার বেশী হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। এর কম হলে যাকাত ফরজ হবে না। ৩। হানাফী মাজহাবের অন্য ইমাম, ইমাম মুহাম্মাদের র. এর মতে ভূমির উৎপাদন কমপক্ষে ৯৯০ কিলোগ্রাম (প্রায় ২৫ মন) হলে তাতে যাকাত ফরজ হবে। বিভিন্ন দলীল প্রমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় মতটিই শক্তিশালী মনে হয়, তবে যেহেতু আমাদের দেশের সংখাগরিষ্ঠ মুসলিম হানাফী মত অনুস্বরণ করেন, সেহেতু আমরা প্রথম মতকেই উশরের ক্ষেত্রে মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষে। এই মতটি সাবধানতা মূলক এবং দরিদ্রদের জন্য উপকারী। মহান আল্লাহই ভাল জানেন। দলীল সহ বিস্তারিত জানতে পড়ন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার রচিত বাংলাদেশে ফসল বা উসরের যাকাত গুরুত্ব ও প্রয়োগ বইটি।
প্রশ্নঃ 148
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। জনাব আমার প্রশ্ন হলো মানুষ মারা/ইন্তেকাল করলে কবরে রাখার সময় উত্তরদিকে মাথা দিয়ে কিবলার দিকে মুখ করে রাখা হয় কিন্তু পশু জবেহ করার সময় দক্ষিণ দিকে মাথা রাখা হয় কেন?
21 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নেল্লিখিত বিষয় দুটি রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এভাবেই হয়ে আসছে। বিষয়দুটিতে সব ইমাম ও ফকীহদের ঐক্যমত আছে যে, এগুলো এভাবেই সুন্নত। নিচে বিষয়দুটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। মানুষ মারা গেলে কবরে রাখার ইসলামী পদ্ধতি হলো, মৃতের শরীরকে তার ডান পাশ্বের উপর শোয়াতে হবে। চেহারা থাকবে ক্বিবলমুখী। তার মাথা ও পা থাকবে ক্বিবলার ডানে এবং বামে। অর্থাৎ ক্বিবলার দিকে আড়াআড়ি ভাবে ক্বিবলামুখী করে ডান পার্শ্বের উপর শোয়াতে হবে। রাসূরুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত এমন ভাবেই আমল হয়ে আসছে। নিম্নের হাদীসটি দেখুন:
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ حَدَّثَهُ - وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ - أَنَّ رَجُلاً سَأَلَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْكَبَائِرُ فَقَالَ ্র هُنَّ تِسْعٌ গ্ধ. فَذَكَرَ مَعْنَاهُ زَادَ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ الْمُسْلِمَيْنِ وَاسْتِحْلاَلُ الْبَيْتِ الْحَرَامِ قِبْلَتِكُمْ أَحْيَاءً وَأَمْوَاتًا উবাইদ ইবনে ইমাইয় তার পিতা (একজন সাহাবী) থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন লোক রাসূল সা. কে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বললেন তা নয়টি। এরপর তিনি সেগুলো উল্লেখ করলেন। তিনি আরো বৃদ্ধি করলেন, পিতা মাতার অবাদ্ধ হওয়া এবং বায়তুল হারাম কে হালাল মনে করা যেটা মৃত ও জীবিত অবস্থায় তোমাদের ক্বিবলা। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং২৮৭৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এই হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির ক্বিবলামুখী করে রাখা সুন্নত এটা বুঝে আসে। আরো একটি হাদীস দেখুন:
আবু কাতাদাহ রা. বলেন,
أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- حِينَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ سَأَلَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ مَعْرُورٍ فَقَالُوا : تُوُفِّى وَأَوْصَى بِثُلُثِهِ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَأَوْصَى أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْقِبْلَةِ لَمَّا احْتُضِرَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :্র أَصَابَ الْفِطْرَةَ وَقَدْ رَدَدْتُ ثُلُثَهُ عَلَى وَلَدِهِ গ্ধ. ثُمَّ ذَهَبَ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَقَالَ :্র اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَأَدْخِلْهُ جَنَّتَكَ وَقَدْ فَعَلْتَ নবী সা. মদীনায় এসে বারা ইবনে মারুফের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল, তিনি মারা গেছেন। আর তিনি অসিয়ত করে গেছেন যে, আপনাকে তাঁর সম্পদের অর্ধেক দিয়ে দিবে এবং কবরে ক্বিবলার দিকে রাখাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সে খুবই ভাল কাজ করেছে আর আমি তার সন্তানকে তার একতৃতীয়াংশ (যা তিনি রাসূল সা. কে দিয়েছিলেন) ফিরিয়ে দিলাম। এরপর তিনি গেলেন এবং তার কবরের উপর নামায পড়লেন । এরপর দোয়া করলেন, হে আল্লাহ তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর দয়া কর, তাকে জান্নাত দাও। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৬৮৪৩। আবু হাফস উমার ইবনে আলী আশ-শাফেয়ী (৮০৪ হি.) রহ.হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আলবাদরুল মুনীর ফি তাখরীজিরল আহাদীস ওয়াল আছার, ৭/২৫১। এই হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে কবরে ক্বিবলার দিকে রাখার অসিয়তকে রাসূল সা. উত্তম কাজ হিসেবে প্রসংসা করেছেন। আল্লামা ইবনে হাজম জাহেরী রহ. (মৃত্যু ৪৫৬ হি.) বলেন,
مَسْأَلَةٌ: وَيُجْعَلُ الْمَيِّتُ فِي قَبْرِهِ عَلَى جَنْبِهِ الْيَمِينِ,
وَوَجْهُهُ قُبَالَةَ الْقِبْلَةِ, وَرَأْسُهُ وَرِجْلاَهُ إلَى يَمِينِ الْقِبْلَةِ, وَيَسَارِهَا, عَلَى هَذَا جَرَى عَمَلُ أَهْلِ الإِسْلاَمِ مِنْ عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إلَى يَوْمِنَا هَذَا, وَهَكَذَا كُلُّ مَقْبَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ
অর্থ: মাসয়ালা: মৃত ব্যাক্তিবে কবরের ভিতর তার ডান পার্শ্বের উপর রাখতে হবে, তার চেহারা থাকবে ক্বিবলার দিকে এবং মাথা আর পা থাকবে ডান ও বাম দিকে। এভাবেই রাসূলুল্লাহ সা. এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত মুসলমানদের আমল অব্যাহত রযেছে। আর মাটির উপর প্রতিটি কবর এমনই। আলমুহাল্লা লি ইবনে হাজম: ৫/১৭৩ (মাসয়ালা-৬১৫)। শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. আহকামুল জানায়েজ কিতাবে উক্ত মত পোষন করেছেন। এবং তিনি ইবনে হাজম রহ. এর এই বক্তব্য সেখানে নিয়ে এসেছেন। আহকামুল জানায়েজ: ১০৩নং হাদীসের আলোচনায়। আর আমাদের দেশে এভাবে মৃত ব্যক্তিকে শোয়লে মাথা উত্তর দিকেই যায়। অবশ্য ক্বিবলা থেকে যেসব এলাকা পূর্বদিকে নেই সেখানে এভাবে শোয়ালে মৃতের মাথা উত্তর দিকে থাকবে না। পশু জবেহ করার ক্ষেত্রে ইসলামী পদ্ধতি হলো, পশুকে ক্বিবলামুখী করে শোয়াতে হবে। রাসূুল্লাহ সা. জবাইয়ের সময় শোয়াতেন বলে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে। ক্বিবলমুখী করার ব্যাপারে সাহাবীদের কর্ম সহীহ সূত্রে পাওয়া যায়। এরপর ডান হাত দ্বারা ছুরি ধরে আর বাম হাত দ্বারা পশুর মাথা ধরে জবেহ করতে হবে। সকল আলেম ও ফকীহ এই ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছেন। দলীল: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে,
أن رسول الله صلى الله عليه و سلم أمر بكبش وأخذ الكبش فأضجعه ثم ذبحه
রাসূলুল্লাহ সা. একটি দুম্বা নিয়ে আসার জন্য আদেশ করলেন। দুম্বা নিয়ে আসা হলো। তিনি পশুটিকে শোয়ালেন তারপর জবেহ করলেন। সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১৯৬৭। ইবনে উমার থেকে সহীহ সনদে জবেহ করার সময় পশু ক্বিবলামুখী করার কথা উল্লেখ আছে। নিচে তাঁর থেকে বর্ণিত মাওকুফ হাদীসগগুলো উল্লেখ করা হলো:
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمَا : أَنَّهُ كَانَ يَسْتَحِبُّ أَنْ يَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ إِذَا ذَبَحَ
অর্থ: নাফে ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি পশু জবেহ করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়াকে ভালবাসতেন। আসসুনানুল কুবরা : হাদীস নং১৯৬৪৭
عن نافع أن بن عمر كان يكره أن يأكل ذبيحة ذبحه لغير القبلة
অর্থ: নাফে বর্ণনা করেন যে, যে পশুকে ক্বিবলামুখী করে জবেহ করা হয়নি ইবনে উমার তার গোশত খাওয়াকে অপছন্দ করতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: হাদীস নং ৮৫৮৫। শায়খ আলবানী বলেছেন,সনদ সহীহ। মানাসিকুল হাজ্ব ওয়াল উমরাহ:১/৩৪
একটি মারফু হাদীসেও ক্বিবলমুখী করার কথা উল্লেখ আছে, তবে হাদীসটি সহীহ নয়। হাদীসটি নিম্নরুপ:
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন,
ذَبَحَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَبْشَيْنِ يَوْمَ الْعِيدِ فَلَمَّا وَجَّهَهُمَا قَالَ فَذَكَرَ الدُّعَاءَ ثُمَّ قَالَ :্র اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ গ্ধ. وَسَمَّى وَذَبَحَ. وَفي رواية أخري وَجَّهَهُمَا إِلَى الْقِبْلَةِ حِينَ ذَبَحَ
রাসূলুল্লাহ সা. একবার ঈদের দিন দুইটি দুম্বা জবেহ করলেন। যখন পশুদুটিকে অভিমুখী করলেন অন্য বর্ণনায় ক্বিবলমুখী করলেন তখন উক্ত দুয়া পড়লেন এবং বিসমিল্লাহ বলে জবেহ করলেন। আসসুনানুল কুবরা লিল-বায়হাক্কী: হাদীস নং ১৯৬৫৭। হাদীসটি সহীহ নয়। সহীহ মুসলিমের উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,
وَاتَّفَقَ الْعُلَمَاء وَعَمَل الْمُسْلِمِينَ عَلَى أَنَّ إِضْجَاعهَا يَكُون عَلَى جَانِبهَا الْأَيْسَر ؛ لِأَنَّهُ أَسْهَل عَلَى الذَّابِح فِي أَخْذ السِّكِّين بِالْيَمِينِ ، وَإِمْسَاك رَأْسهَا بِالْيَسَارِ
আলেমগন ঐক্যমত পোষণ করেছেন এবং মুসলমানদের আমল এর উপরে যে, পশুকে জবেহ করার সময় তার বাম পাশ্বের উপর শোয়াতে হবে কেননা ডানহাত দ্বারা ছুরি ধরে আর বাম হাত দ্বারা মাথা ধরে জবেহ করার জন্য এটা সবচেয়ে সহজ পদদ্ধতি। শরহে নববী আলা মুসলিম :৬/৪৬০। কাজী ইয়াজ রহ. বলেন,
سُنة فى صفة الذبح ، من إضجاعه برفق ، ولا تذبح قائمة ولا باركة ، ومضى العمل باضجاعها على الشق الاْيسر ؛ لأنه أهنأ لمناولة ذبحها باليمين وإمساك رأسها باليسار অর্থ: জবেহ করার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, কোমল ভাবে শোয়াতে হবে। দাঁড় করিয়ে কিংবা বসিয়ে জবেহ করা যাবে না। আমল অব্যাহত আছে এভাবে যে, পশুকে বাম পার্শ্বের উপর শোয়াতে হবে, কেননা ডান হাত দ্বারা ছুরি ধরা এবং বাম হাত দ্বারা মাথা ধরে জবেহ করার জন্য এটাই সবচেয়ে উপযোগী সহজ পদ্ধতি। শরহে সহীহ মুসলিম লিল কাজী ইয়াজ: ৬/২১০। এই বিষয়ে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, وأحب في الذبيحة أن توجه إلى القبلة অর্থ: ক্বিবলামুখী করে জবেহ করা আমার নিকট অধিক প্রিয়। মারিফাতুস সুনান লিল- বায়হাক্কী:১৪/৪৫। আর আমাদের দেশে ক্বিবলমুখী করে বাম পাশ্বের উপর শোয়ালে মাথা দক্ষিন দিকে আর পা উত্তর দিকে থাকে। আর যেসব এলাকা ক্বিবলা থেকে পূবর্ দিকে নয় তাদের ক্ষেত্রে মাথা দক্ষিনে থাকবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, হাদীস ও উম্মতের কর্মধারা প্রমাণ করে যে, এই দুটি বিষয় এভাবেই সুন্নাত। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুষ দান করুন।
প্রশ্নঃ 149
ami dr.abdullah jahangir sir er aih-ea-us sunan, rahe balayet, monajat o namaj boi porasi and bar bar portesi . amer mone namajer modhe dua monajat bisoea kiso prosno jagase kindly sir amake answer diben khob bipode asi, ai dua / monajat korte gea bid-at na hoea jai?
1. eaka or jamat e foroj namaj sese dua masura porer por onno kono dua pora jabe ki? or allah r kase banglai kono kiso chaoa jabe ki?
2.eaka foroj namaj porar por haat tule monajat kora jabe ki?
3.tahajoot namaj e dua masura porer por salam firanor agae allahr kase banglai kiso chaoa jabe ki? naki salam firanor por haat tule masnoon dua pore banglai allahor kase kiso chaite hobe?
21 Dec 2025
দুআ মাসূরা অর্থ কুরআন কিংবা হাদীস শরীফে বর্ণিত দুআ। সুতরাং ফরজ সালাতের শেষ বৈঠকে আপনি এক বা একাধিক দুআ মাসূরা পড়তে পারেন। তবে দুআ মাসূরা ব্যতিত অন্য কোন দুআ কিংবা বাংলায় দুআ করা যাবে না। আর ফরজ নামায শেষে আপনি হাত তুলে দুআ করতে পারবেন, কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্নঃ 150
আস-সালামু আলাইকুম হুজুর তছবি গুনা সুন্নত কিনা এ সম্পর্কে সহি ও জইফ কোন হাদীস আছে কিনা?
21 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সালাতুত তাসবীহ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যিকেরের মূল চারটি বাক্য: তাসবীহ সুবহানাল্লাহ তাহমীদ আল-হামদু লিল্লাহ তাহলীল লা- ইলাহা ইল্লল্লাহ এবং তাকবীর আল্লাহু আকবার । সালাতুত তাসবীহ -এর মধ্যে সালাতরত অবস্থায় এ যিক্রগুলো পাঠ করা হয়। চার রাকআত সালাতে প্রতি রাকআতে ৭৫ বার করে চার রাকআতে মোট ৩০০ বার উক্ত যিক্রগুলো আদায় করা হয়। عَنْ أَبِى رَافِعٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لِلْعَبَّاسِ يَا عَمِّ أَلاَ أَصِلُكَ أَلاَ أَحْبُوكَ أَلاَ أَنْفَعُكَ قَالَ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ يَا عَمِّ صَلِّ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ تَقْرَأُ فِى كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ فَإِذَا انْقَضَتِ الْقِرَاءَةُ فَقُلِ اللَّهُ أَكْبَرُ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً قَبْلَ أَنْ تَرْكَعَ ثُمَّ ارْكَعْ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ اسْجُدْ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ اسْجُدِ الثَّانِيَةَ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا قَبْلَ أَنْ تَقُومَ فَتِلْكَ خَمْسٌ وَسَبْعُونَ فِى كُلِّ رَكْعَةٍ وَهِىَ ثَلاَثُمِائَةٍ فِى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ فَلَوْ كَانَتْ ذُنُوبُكَ مِثْلَ رَمْلِ عَالِجٍ لَغَفَرَهَا اللَّهُ لَكَ . قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُولَهَا فِى كُلِّ يَوْمٍ قَالَ فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ أَنْ تَقُولَهَا فِى كُلِّ يَوْمٍ فَقُلْهَا فِى جُمُعَةٍ فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ أَنْ تَقُولَهَا فِى جُمُعَةٍ فَقُلْهَا فِى شَهْرٍ . فَلَمْ يَزَلْ يَقُولُ لَهُ حَتَّى قَالَ فَقُلْهَا فِى سنة.
অর্থ: আব রাফে (আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস) রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর চাচা আব্বাস (রা)-কে বলেন: চাচাজি, আমি আপনাকে একটি বিশেষ উপহার ও বিশেষ অনুদান প্রদান করব, যা পালন করলে আল্লাহ আপনার ছোট, বড়, ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, প্রকাশ্য, গোপন সকল গোনাহ ক্ষমা করবেন। তা এই যে, আপনি চার রাকআত সালাত আদায় করবেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন। প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো সূরা পাঠের পর দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَر
উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লাহ, ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়ালা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লা-হু আকবার । এরপর রুকুতে গিয়ে রুকু অবস্থায় উপরের যিক্রগুলো ১০ বার, রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় ১০ বার, সাজদা রত অবস্থায় ১০ বার, প্রথম সাজদা থেকে উঠে বসা অবস্থায় ১০ বার, দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠে (বসা অবস্থায়) ১০ বার। এ মোট এক রাকআতে ৭৫ বার (চার রাকআতে মোট ৩০০ বার)। সম্ভব হলে আপনি প্রতিদিন একবার, না হলে প্রতি সপ্তাহে একবার, না হলে প্রতি মাসে একবার, না হলে প্রতি বছর একবার, না হলে সারা জীবনে একবার এ সালাত আপনি আদায় করবেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৮২। সালাতুত তাসবীহ সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদীসই অত্যন্ত যয়ীফ সনদে বর্ণিত। একমাত্র এ হাদীসটিকে অনেক মুহাদ্দিস সহীহ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যদিও অনেক মুহাদ্দিস হাদীসটির ভাব ও ভাষা বিষয়েও আপত্তি করেছেন। ইমাম তিরমিযী প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (১৮১ হি) থেকে সালাতুত তাসবীহ-এর আরেকটি নিয়ম উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে এ অতিরিক্ত যিক্র আদায়ের নিয়ম: নামায শুরু করে শুরুর দুআ বা সানা পাঠের পরে ১৫ বার, সূরা ফাতিহা ও অন্য কোনো সূরা শেষ করার পরে ১০ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে ১০ বার, প্রথম সাজদায় ১০ বার, দুই সাজাদার মাঝে ১০ বার ও দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার মোট ৭৫ বার প্রতি রাকআতে। অর্থাৎ, এ নিয়মে কিরাআতের পূর্বে ও পরে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৫ বার তাসবীহ পাঠ করা হয় আর দ্বিতীয় সাজদার পরে বসা অবস্থায় কোনো তাসবীহ পড়া হয় না। পূর্বের হাদীসে বর্ণিত নিয়মে কিরাআতের পূর্বে কোনো তাসবীহ নেই। দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু কিরাআতের পরে ১৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাকআতে দ্বিতীয় সাজদার পরে বসে ১০ বার তাসবীহ পড়তে হবে। ইবনুল মুবারক বলেন, যদি এ সালাত রাত্রে আদায় করে তবে দু রাকআত করে তা আদায় করবে। অর্থাৎ, দু রাকআত শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার দু রাকআত আদায় করবে। আর দিনের বেলায় ইচ্ছা করলে একত্রে চার রাকআত অথবা ইচ্ছা করলে দু রাকআত করেও আদায় করতে পারে। সালাতুত তাসবীহ-এ রুকু ও সাজদায় প্রথমে রুকু ও সাজদার তাসবীহ সুবহানার রাব্বিয়্যাল আযীম ও সুবহানা রাব্বিয়্যাল আলা নূন্যতম তিন বার করে পাঠ করার পরে অতিরিক্ত তাসবীহগুলো পাঠ করতে হবে। তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, সালাতুত তাসবীহ) ২/৩৪৭-৩৫০ (ভারতীয় ১/১০৯); আবূ দাউদ ২/২৯, নং ১২৯৭, (ভারতীয় ১/১৮৩); সুনানু ইবনি মাজাহ ১/৪৪২, নং ১৩৮৬, ১৩৮৭, (ভারতীয় ১/৯৯); মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৬৩-৪৬৪, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২৩-২৪, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮১-২৮৩, আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৩৫৩-৩৫৫।
প্রশ্নঃ 151
আস্সালামু আলাইকু ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্ন হল আমি ঘুমের গড়ে অনেক ভাল এবং খারাপ সপ্ন দেখে থাকি এই সপ্ন সম্পকে আমাদের কি বিশ্বাস থাকা উচিৎ?
21 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবীদের স্বপ্ন ওহী হিসাবে গণ্য। অন্যান্য মানুষের স্বপ্নের ব্যাপারে হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। নিচে দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
নবী রাসূলদের স্বপ্ন ওহী। তাঁরা স্বপে যা দেখেন তা সত্য। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, رؤيا الأنبياء وحي অর্থ: নবীদের স্বপ্ন ওহী। আলমুসতাদরিক লিল-হাকীম, হাদীস নং ৩৬১৩। হাকীম রহ. বলেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। কিন্তু তারা বর্ণনা করেনি। ইমাম যাহাবী তালখীস এর মধ্যে বলেছেন, হাদীসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী। হযরত আয়েশা রা. বলেন,
أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ فِي النَّوْمِ فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ
যার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে প্রথম ওহী আসা শুরু হয় তা হল সত্য স্বপ্ন। তিনি যা দেখতেন ভোরের আলোর মত তা সত্য হত। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৩। ইমাম বখারী রহ. তার সহীহ গ্রন্থে বলেছেন,
قَالَ عَمْرٌو سَمِعْتُ عُبَيْدَ بْنَ عُمَيْرٍ يَقُولُ : إِنَّ رُؤْيَا الأَنْبِيَاءِ وَحْيٌ ثمَّ قَرَأَ :{إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ}
আমর বলেছেন, আমি উবায়েদ ইবনে উমায়েরকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় নবীদের স্বপ্ন ওহী। এরপর তিনি কুরআনের উপরুক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন। (উবায়েদ ইবনে উমায়ের ইবনে আব্বাসের ছাত্র) । সহীহ বুখারী হাদীস নং ৮৫৯। উপরুক্ত দলীলসমূহ দ্বারা স্পষ্ট যে, নবীদের স্বপ্ন ওহী ও সত্য। উম্মতের সকলে এ ব্যাপারে একমত। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখি। এই সব স্বপ্নের ব্যাপারে আমাদের কি বিশ্বাস রাখতে সে বিষয়ে আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ رُؤْيَا يُحِبُّهَا فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ اللهِ فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ عَلَيْهَا وَلْيُحَدِّثْ بِهَا ، وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا ، وَلاَ يَذْكُرْهَا لأَحَدٍ فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ
তোমাদরে কউে যদি এমন স্বপ্ন দখেে যা সে পছন্দ কর,ে তাহলে জানবে যে তা আল্লাহর পক্ষ থকেে দখোনো হয়ছে। তখন সে যনে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও অন্যদরে কাছে র্বণনা কর। আর যদি স্বপ্ন অপছন্দরে হয়, তাহলে বুঝে নবেে এটা শয়তানরে পক্ষ থকেে হয়ছে। তখন সে শয়তানরে ক্ষতি থকেে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় র্প্রাথনা করবে আর এ স্বপ্নরে কথা কারো কাছে বলবে না। কারণ খারাপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৫
আবু কাতাদাহ রা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنَ اللَّهِ فَإِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يُحِبُّ فَلاَ يُحَدِّثُ بِهَا إِلاَّ مَنْ يُحِبُّ وَإِنْ رَأَى مَا يَكْرَهُ فَلْيَتْفِلْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلاَثًا وَلْيَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشَرِّهَا وَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا أَحَدًا فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ
সত্য স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে । যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে ভালবাসে তাহলে তাহলে তা এমন লোকদের কাছেই শুধু বলবে যে তাকে ভালবাসে। আর যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপছন্দ করে তাহলে বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলে এবং আল্লাহর কাছে শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর এই স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কেননা তা তার কোন ক্ষতিকরতে পারবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬১। হযরত জাবির রা. বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتُ فِى الْمَنَامِ كَأَنَّ رَأْسِى قُطِعَ. قَالَ فَضَحِكَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- وَقَالَ ্র إِذَا لَعِبَ الشَّيْطَانُ بِأَحَدِكُمْ فِى مَنَامِهِ فَلاَ يُحَدِّثْ بِهِ النَّاسَ
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে দখেছে, আমার মাথা কটেে ফলো হয়ছে। এ কথা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হসেে ফলেলনে। আর বললনে : ঘুমরে মধ্যে শয়তান তোমাদরে কারো সাথে যদি দুষ্টুমি কর, তবে তা মানুষরে কাছে বলবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬৮। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
إن الرؤيا تقع على ما تعبر و مثل ذلك رجل رفع رجله فهو ينتظر فهو متى يضعها فإذا رأى أحدكم رؤيا فلا يحدث بها إلا ناصحا أو عالما
অর্থ: স্বপ্ন ব্যখ্যা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়। তাই যখন তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখে সে যেন কল্যানকামী ব্যক্তি ও আলেম ব্যাতিত অন্য কারো নিকট তা বর্ণনা না করে। মুসতাদরিকে হাকেম, হাদীস নং ৮১১৭। হাকেম রহ. বলেছেন হাদীসটর সনদ সহীহ। আল্লামা জাহাবী রহ. তালখীস এর মধ্যে হাদীরটিকে সহীহ বলেছেন। শায়খ আলবানীও বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। (সহীহ ও জয়ীফ জামিউস সগীর, হাদীস নং ২৪৯২)
উপরের হাদীসগুলোতে থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ভাল স্বপ্ন আল্লাহ তায়ালার দান। ভাল স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর প্রসংসা করতে হবে এবং প্রিয় মানুষদেরকে বলা যবে । খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। এমন স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিন বার থুথু ফেলতে হবে এবং শয়তানের অকল্যান থেকে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আর খারাপ স্বপ্ন কারো কাছে বলা যাবে না। তবে মনে রাখতে খারাপ স্বপ্ন দেখলে মানুষের কোন ক্ষতি হয় না বা তা মানুষকে কোন ক্ষতি করতে পারে না। এই অর্থের আরো হাদীস বিভিন্ন সাহাবী থেকে সহীহসূত্রে বর্ণিত আছে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সৎ লোকদের থেকে ভাল স্বপ্ন নবুওয়াতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। (অর্থাৎ সত্য স্পষ্ট)। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৮৩। কোন হাদীসে ৪৫ ভাগের একভাগ আবার কোন হাদীসে ৭০ ভাগের এক ভাগের কথাও বর্ণিত আছে। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, আল্লামা খাত্তবী রহ. বলেছেন
وانما كانت جزءا من أجزاء النبوة في حق الأنبياء دون غيرهم وكان الأنبياء صلوات الله وسلامه عليهم يوحي اليهم في منامهم كما يوحي اليهم في اليقظة
অর্থ: এটা নবীদের ক্ষেত্রে প্রযোয্য, অন্যান্যদের ক্ষেত্রে নয়। কেননা নবীদের নিকট জাগ্রত অবস্থায় যেমন ওহী আসত তেমনি ঘুমের ভিতরেও আসত। শরহে নববী আলা মুসলিম, হাদীস নং ২২৬৪। এই হাদীসের অবশ্য অন্যান্য ব্যাখ্যাও আছে। অনেকে এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে ওলী, দরবেশ কিংব আল্লাহর প্রিয় মানুষদের স্বপ্নকে দলীল হিসাবে সাব্যস্ত করতে চায়। কিন্তু এটা ঠিক না। নবী-রাসূণগণ বাদে অন্যদের স্বপ্ন দলীল হতে পারে না, সুন্নত হতে পারে না। স্বপ্নের মাধ্যমে কোন ইবাদত সাব্যস্ত হয় না, তদ্রুপ স্বপ্নের মাধ্যমে কোন হাদীসের সত্যতাও যাচাই করা যায় না। স্বপ্ন একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ অনুভুতির ব্যাপার। কাশফ, ইলহামের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোয্য। এই বিষয়ে আরো জানতে পড়ুন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহ্ইয়াইস সুনান বইয়ের ২০৮ থেকে ২১৪ পৃষ্ঠা । আল্লহ তায়ালা আমাদের সঠিক বিষয় বুঝার তাওফীক দিন, আমীন।
প্রশ্নঃ 152
কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে কি?
20 Dec 2025
কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তেলাওয়াতের বিষয়টি সুন্নাহ সম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ সা. কবর জিয়ারতের সময় কুরআন শরীফের কোন সূরাহ পড়েছেন এমন জানা যায় না। কবর জিয়ারত কিভাবে করতে হয় তা আমরা আবু বুরদাতা রা. থেকে বর্ণিত এই হাদীস থেকে জানতে পারি । তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى الْمَقَابِرِ ، كَانَ قَائِلُهُمْ يَقُولُ : السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
রাসূলুল্লাহ সা. মানুষদেরকে শিক্ষা দিতেন, যখন তারা কবরের কাছে যাবে তখন বলবে, হে মূমিন, মুসলিম ঘরবাসী তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৫৪৭। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সুতরাং কবর জিয়ারতের সময় কুরআন তেলাওয়াতের প্রয়োজন নেই।
প্রশ্নঃ 153
স্যার আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্ন হল: পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি ব্যবহারের পূর্বে ডিলা-কুলুপ ব্যবহারের বিধান কি? আমরা অনেকেই মনে করি পানি ব্যবহারের পূর্বে ডিলা-কূলুপ ব্যবহার না করলে তার পবিত্রতা অর্জন হয় না। এছাড়া বলা হয় ডিলা-কূলুপ না নিলে তার হাতের খাবার খাওযা যাবে না?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। পবিত্রতা অর্জনের জন্য শুধু ঢিলা কিংবা শুধু পানি কিংবা উভয়টি ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধু পানি ব্যবহার করা শুধু ঢিলা ব্যবহার করা থেকে উত্তম। হাদীসে এমনটিই পাওয়া যায়। ঢিলা ও পানি উভয়টি একসাথে ব্যবহার করা ব্যাপারে হাদীসে তেমন পাওয়া যায় না। তবে উভয়টি এক সাথে ব্যবহার করাকে আলেমগণ সবচেয়ে উত্তম বলেছেন। আর ঢিলা ব্যবহার না করলে তার হাতের খাবার খাওয়া যাবে না এ কখা ঠিক না। নিচে দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
শুধু ঢিলা ব্যবহারের দলীল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ اتَّبَعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَخَرَجَ لِحَاجَتِهِ فَكَانَ لاَ يَلْتَفِتُ فَدَنَوْتُ مِنْهُ فَقَالَ ابْغِنِي أَحْجَارًا أَسْتَنْفِضْ بِهَا ، أَوْ نَحْوَهُ ، وَلاَ تَأْتِنِي بِعَظْمٍ ، وَلاَ رَوْثٍ فَأَتَيْتُهُ بِأَحْجَارٍ بِطَرَفِ ثِيَابِي فَوَضَعْتُهَا إِلَى جَنْبِهِ وَأَعْرَضْتُ عَنْهُ فَلَمَّا قَضَى أَتْبَعَهُ بِهِنَّ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী সা. সাথে ছিলাম আর তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন। তখন তিনি এদিক ওদিক তাকালেন না। আমি তার নিকটবর্তী হলাম। তিনি বললেন, কিছু পাথর কিংবা এ জাতীয় কোন বস্তু নিয়ে আস, তা দ্বারা আমি ইস্তেনজা করব। হাড় কিংব গোবর নিয়ে আসবে না। আমি আমার কাপড়ের আঁচলে কিছু পাথর নিয়ে আসলাম এবং তার পাশে রাখলাম। এরপর সেখান থেকে চলে আসলাম। তিনি যখন তার প্রয়োজন পূর্ণ করলেন সেগুলো ব্যবহার করলেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৫
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ قِيلَ لَهُ قَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ -صلى الله عليه وسلم- كُلَّ شَىْءٍ حَتَّى الْخِرَاءَةَ. قَالَ فَقَالَ أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِالْيَمِينِ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِىَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ
হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তাকে বলা হল, তোমাদের নবী তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দেয় এমনকি পেশাব পায়খানার বিষয়েও? তিনি বলেন, তখন তিনি বললেন, হ্যা, তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন কিবলার দিকে মুখ করে পেশাব পায়খানা করতে, ডান হাত দ্বারা ইস্তেনজা করতে, তিনটার কমে পাথর ব্যবহার করতে এবং হাড় ও গোবর দ্বারা ইস্তেনজা করতে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২
শুধু পানি ব্যবহারের দলীল:
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي مَيْمُونَةَ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَزَةً يَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ
আতা ইবনে আবী মায়মুনাহ থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস ইবনে মালিক রা. কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সা.পায়খানায় যেতেন আর আমি এবং একজন বালক পানির পাত্র ও লাঠী বহন করতাম। তিন তা দ্বারা ইস্তেনজা করতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫২। عن أبي هريرة : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال نزلت هذه الآية في أهل قباء { فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المطهرين } قال كانوا يستنجون بالماء فنزلت هذه الآية فيهم
হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এই আয়াত সেখানে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে আর আল্লাহও তাদের ভালবাসেন কুবা বাসীদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন তারা পানি দ্বারা ইস্তেনজা করত তাই তাদের ক্ষেত্রে এই আয়াত তাদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩১০০। হাদীসটি সহীহ। উভয়টি একসাথে ব্যবহারের দলীল:
عن ابن عباس قال: لما نزلت هذه الآية في أهل قباء {فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المتطهرين} فسألهم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا: إنا نتبع الحجارة الماء
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন কুবা বাসীদের ক্ষেত্রে এই আয়াত নাযিল হল সেখানে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে আর আল্লাহও তাদের ভালবাসেন তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তারা বলল,আমার ঢিলার পরে পানি ব্যবহার করি
মুসানাদে বাযযার। হাদীসটি মুহাদ্দিসদের সর্বাক্যমতে দূর্বল। আল্লামা নুরুদ্দীন হাইছামী বলেন, رواه البزار وفيه محمد بن عبد العزيز بن عمر الزهري ضعفه البخاري والنسائي وغيرهما
হাদীসটি বাযযার বর্ণনা করেন, সনদে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে উমার আযযুহরী নামে একজন বর্ণনাকারী আছে যাকে ইমাম বুখারী ও নাসায়ী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ দূর্বল বলেছেন। মাজমাউজ ঝাও-ইদ, হাদীস নং১০৫৩। এছাড়াও এই সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে শাবীব নামে একজন রাবী আছেন যাকে মুহাদ্দিসগণ অত্যন্ত দূর্বল বলেছে। লিসানুল মিযান, নং ৪২৭৩। তার পূর্ণ নাম আব্দুল্লাহ ইবনে শাবীব আর রবঈ আবু সাইদ আল মাদানী আলইখবারী। তবে তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক আবূ যাইদ আমর ইবন শুব্বা বাসরী (২৬২ হি) সম্পূর্ণ পৃথক সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হাদীসটির ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমর ইবন শুব্বাহ, তারীখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা (বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬ খৃ) ১/৩৩: শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ দুওয়াইশ, তাম্বীহুল কারী আলা তাকবিয়াতি মা যাআফাহুল আলবানী (শামিলা), পৃষ্ঠা ৬২। হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন,
فَأَتْبِعُوا الْحِجَارَةَ الْمَاءَ
অর্থ: তোমার পাথরের সাথে পানি ব্যবহার কর। আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্কী, হাদীস নং ৫২৯। আল্লামা জাইলায়ী রহ. বলেছেন, এটা একটি ভাল আছার। নাসবুর র-ইয়হা, ১/২১৯। আর সনদে বিচ্ছন্নতার কারণে শাইখ আলবানী বলেছেন, ভাল নয়। সিলসিলাতুন দ-ইফাহ, হাদীস নং ১০৩১। আলেমগণ দুটাকে একা সাথে ব্যবহার করাকে উত্তম বলেছেন, ফিকহের কিতাবগুলোতে তা উল্লেখ আছে। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহি. (১২৫২হি.)বলেন,
اعْلَمْ أَنَّ الْجَمْعَ بَيْنَ الْمَاءِ وَالْحَجَرِ أَفْضَلُ ، وَيَلِيهِ فِي الْفَضْلِ الِاقْتِصَارُ عَلَى الْمَاءِ ، وَيَلِيهِ الِاقْتِصَارُ عَلَى الْحَجَرِ وَتَحْصُلُ السُّنَّةُ بِالْكُلِّ
অর্থ: জানা আবশ্যক যে, পাথর ও পানি একসাথে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম। উত্তমের দিক দিয়ে তার নিকটবর্তী হল শুধু পানি আর তার নিকটবর্তী হল শুধু ঢিলা। তবে প্রত্যেক পদ্ধতির মাধ্যমেই সুন্নাত আদায় হবে। রদ্দুল মুহতার, ৩/৪১। আরো দেখুন, আলওয়াসিত লিল ইমাম গাযালী (৫০৫ হি.), ১/৩১০; আল ফিকহ ফি আহমাদ ইবনে হাম্বাল লি ইবনে কুদামা আলমাকদিসী, ১/৯৫; হিলয়াতুল উলামা, ১/৭১; আল ফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা,১/৮২। উপরের আলোচনা থেকে আমরা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ঢিলা ও পানি একসাথে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম এরপর শুধু পানি এরপর শুধু ঢিলা। সুতরাং ঢিলা ব্যবহার না করলে তার হাতের খাবার খাওয়া যায় না এ কথা সম্পূর্ণ বাতিল। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 154
মানুষ মারা গেলে মেজবান হয়। এই মেজবানের খাবার খাওয়া জায়েয কি না?
20 Dec 2025
ভাই আপনি এই ভিডিও ক্লিপটি দেখতে পারেন। মৃত্যু উপলক্ষে খাওয়া দাওয়া ও মিষ্টি বিতরণের বিধান !"""""
প্রশ্নঃ 155
Aussalamu alykum, I want to know that is the Salatul Tasbi performed Shahi or not..
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সালাতুত তাসবীহ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যিকেরের মূল চারটি বাক্য: তাসবীহ সুবহানাল্লাহ তাহমীদ আল-হামদু লিল্লাহ তাহলীল লা- ইলাহা ইল্লল্লাহ এবং তাকবীর আল্লাহু আকবার । সালাতুত তাসবীহ -এর মধ্যে সালাতরত অবস্থায় এ যিক্রগুলো পাঠ করা হয়। চার রাকআত সালাতে প্রতি রাকআতে ৭৫ বার করে চার রাকআতে মোট ৩০০ বার উক্ত যিক্রগুলো আদায় করা হয়। عَنْ أَبِى رَافِعٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لِلْعَبَّاسِ يَا عَمِّ أَلاَ أَصِلُكَ أَلاَ أَحْبُوكَ أَلاَ أَنْفَعُكَ قَالَ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ يَا عَمِّ صَلِّ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ تَقْرَأُ فِى كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ فَإِذَا انْقَضَتِ الْقِرَاءَةُ فَقُلِ اللَّهُ أَكْبَرُ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً قَبْلَ أَنْ تَرْكَعَ ثُمَّ ارْكَعْ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ اسْجُدْ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ اسْجُدِ الثَّانِيَةَ فَقُلْهَا عَشْرًا ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا قَبْلَ أَنْ تَقُومَ فَتِلْكَ خَمْسٌ وَسَبْعُونَ فِى كُلِّ رَكْعَةٍ وَهِىَ ثَلاَثُمِائَةٍ فِى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ فَلَوْ كَانَتْ ذُنُوبُكَ مِثْلَ رَمْلِ عَالِجٍ لَغَفَرَهَا اللَّهُ لَكَ . قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُولَهَا فِى كُلِّ يَوْمٍ قَالَ فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ أَنْ تَقُولَهَا فِى كُلِّ يَوْمٍ فَقُلْهَا فِى جُمُعَةٍ فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ أَنْ تَقُولَهَا فِى جُمُعَةٍ فَقُلْهَا فِى شَهْرٍ . فَلَمْ يَزَلْ يَقُولُ لَهُ حَتَّى قَالَ فَقُلْهَا فِى سنة.
অর্থ: আব রাফে (আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস) রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর চাচা আব্বাস (রা)-কে বলেন: চাচাজি, আমি আপনাকে একটি বিশেষ উপহার ও বিশেষ অনুদান প্রদান করব, যা পালন করলে আল্লাহ আপনার ছোট, বড়, ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, প্রকাশ্য, গোপন সকল গোনাহ ক্ষমা করবেন। তা এই যে, আপনি চার রাকআত সালাত আদায় করবেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন। প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো সূরা পাঠের পর দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَر
উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লাহ, ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়ালা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লা-হু আকবার । এরপর রুকুতে গিয়ে রুকু অবস্থায় উপরের যিক্রগুলো ১০ বার, রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় ১০ বার, সাজদা রত অবস্থায় ১০ বার, প্রথম সাজদা থেকে উঠে বসা অবস্থায় ১০ বার, দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠে (বসা অবস্থায়) ১০ বার। এ মোট এক রাকআতে ৭৫ বার (চার রাকআতে মোট ৩০০ বার)। সম্ভব হলে আপনি প্রতিদিন একবার, না হলে প্রতি সপ্তাহে একবার, না হলে প্রতি মাসে একবার, না হলে প্রতি বছর একবার, না হলে সারা জীবনে একবার এ সালাত আপনি আদায় করবেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৮২। সালাতুত তাসবীহ সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদীসই অত্যন্ত যয়ীফ সনদে বর্ণিত। একমাত্র এ হাদীসটিকে অনেক মুহাদ্দিস সহীহ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যদিও অনেক মুহাদ্দিস হাদীসটির ভাব ও ভাষা বিষয়েও আপত্তি করেছেন। ইমাম তিরমিযী প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (১৮১ হি) থেকে সালাতুত তাসবীহ-এর আরেকটি নিয়ম উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে এ অতিরিক্ত যিক্র আদায়ের নিয়ম: নামায শুরু করে শুরুর দুআ বা সানা পাঠের পরে ১৫ বার, সূরা ফাতিহা ও অন্য কোনো সূরা শেষ করার পরে ১০ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে ১০ বার, প্রথম সাজদায় ১০ বার, দুই সাজাদার মাঝে ১০ বার ও দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার মোট ৭৫ বার প্রতি রাকআতে। অর্থাৎ, এ নিয়মে কিরাআতের পূর্বে ও পরে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৫ বার তাসবীহ পাঠ করা হয় আর দ্বিতীয় সাজদার পরে বসা অবস্থায় কোনো তাসবীহ পড়া হয় না। পূর্বের হাদীসে বর্ণিত নিয়মে কিরাআতের পূর্বে কোনো তাসবীহ নেই। দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু কিরাআতের পরে ১৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাকআতে দ্বিতীয় সাজদার পরে বসে ১০ বার তাসবীহ পড়তে হবে। ইবনুল মুবারক বলেন, যদি এ সালাত রাত্রে আদায় করে তবে দু রাকআত করে তা আদায় করবে। অর্থাৎ, দু রাকআত শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার দু রাকআত আদায় করবে। আর দিনের বেলায় ইচ্ছা করলে একত্রে চার রাকআত অথবা ইচ্ছা করলে দু রাকআত করেও আদায় করতে পারে। সালাতুত তাসবীহ-এ রুকু ও সাজদায় প্রথমে রুকু ও সাজদার তাসবীহ সুবহানার রাব্বিয়্যাল আযীম ও সুবহানা রাব্বিয়্যাল আলা নূন্যতম তিন বার করে পাঠ করার পরে অতিরিক্ত তাসবীহগুলো পাঠ করতে হবে। তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, সালাতুত তাসবীহ) ২/৩৪৭-৩৫০ (ভারতীয় ১/১০৯); আবূ দাউদ ২/২৯, নং ১২৯৭, (ভারতীয় ১/১৮৩); সুনানু ইবনি মাজাহ ১/৪৪২, নং ১৩৮৬, ১৩৮৭, (ভারতীয় ১/৯৯); মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৬৩-৪৬৪, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২৩-২৪, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮১-২৮৩, আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৩৫৩-৩৫৫।
প্রশ্নঃ 156
স্যার নামাজের ভিতর কিছু খেয়ে ফেললে নামাজ থাকে না কিন্তু শুনেছি কিন্তু অযুও থাকে না, এটা কি ঠিক স্যার?
20 Dec 2025
নামাযের মধ্যে কিছূ খেলে নামায ভেঙ্গে যায়। তবে অযু ভাঙ্গে না। আপনি যা শুনেছেন তা ঠিক নয়।
প্রশ্নঃ 157
স্যার, বাংলাদেশ ব্যাংক এ Computer Operator (IT Division) পোষ্টে চাকুরী করা জায়েজ হবে কি না?
20 Dec 2025
আপনাকে ধন্যবাদ । সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে এই পদে চাকুরী করা জায়েয নয়। হররত জাবের রা. বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. সুদ গ্রহীতা, দাতা, লেখক, সাক্ষীদ্বয় প্রত্যেকের উপর লানাত (অভিশাপ) দিয়েছেন এবং বলেছেন (পাপের দিক থেকে) সবাই সমান। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং৪১১৭। সুতরাং আমাদের জন্য আবশ্যক এমন চাকুরী থেকে বিরত থাকা।
প্রশ্নঃ 158
আমাদের বাসায় এক মহিলা এসে আমার নানার কাছে ফাতিহার কথা বলে কিছু পানি আর ভাত তরকারি এনে দিল আর ফাতিহা শেষ হওয়ার পর ভাত গুলো রেখে পানি গুলো নিয়ে উনি ছলে গেলেন। এখন এই ভাত গুলো খাওয়া জায়েয কি না?
20 Dec 2025
এটা এক ধরনের মূর্খতাপূর্ণ সুন্নাহ বিরোধী বিদআত কাজ। ফাতিহা নামে কোন অনুষ্ঠান বা আমলের অস্তিত্ব শরীয়তে নেই। সুতরাং এমন অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আপনার প্রশ্নে বর্নিত ভাতও না খাওয়া উচিৎ। বিস্তারিত জানতে পড়ুন, প্রফেসার ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহইয়াউস সুনান বইটি।
প্রশ্নঃ 159
আমি যদি কোন মৃত ব্যাক্তির পক্ষ হতে তার কাজা নামাজ আদায় করি তা কি বিদআত হবে?
20 Dec 2025
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সমাজে কোথাও কোথাও এই আমলটি দেখা যায়। তবে এটা সুন্নাহ সম্মত নয়। হাদীস শরীফে কোথাও মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাজা নামায আদায় করার কথা বলা হয়নি। তবে হজ্জ করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং অনর্থক এই কাজ থেকে বিরত থাকা আমাদের সকলের কর্তব্য।
প্রশ্নঃ 160
বাংলাদেশে প্রচলিত ফাতিহা, ওরশ, (সবে মেরাজ, সবে কদর) এর নামে তকবিরের মাধ্যমে খানা খাওয়া কি জায়েয?
20 Dec 2025
আপনাকে ধন্যবাদ। প্রচলিত ফাতিহা, ওরশ, সবে মেরাজ, সবে কদরের নামে খাওয়া দাওয়া সবই জঘন্য বানোয়াট ও খেলাফে সুন্নাত কাজ। সাহবী, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ও পূর্ববর্তী মুসলিমগণ কখনো মৃত্যু দিবস কিংবা জন্মদিবসে কোন অনুষ্ঠান আয়োজ করেননি, খাবার বিতরণ করেননি। এমন অনুষ্ঠানের খাবার গ্রহণ করার অর্থই হলো এই সুন্নাত বিরোধী কাজকে সহায়তা করা সুতরাং এমন খানা খাওয়া আমাদের বর্জন করতে হবে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন, প্রফেসার ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত এহইয়াউস সুনান বইটি।
প্রশ্নঃ 161
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, স্যার শুধু রুকু পেলেই কি নামাজের সেই রাকাত পাওয়া যাবে? সানা ও সুরা ফাতিহা পড়ার সময় যদি না পাই তবুও কি সেই রাকাত পাবো? তাড়াহুড়ো করে রুকু পেলেই কি সেই রাকাত সালাতের অন্তর্ভুক্ত হবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। হ্যাঁ, শুধু রুকু পেলেই ঐ রাকায়াত পেয়েছে বলে গন্য হবে। চার ইমাম সহ অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহর অভিমত এটাই। তাড়াহুড়ো করে রুকু পেলেও রাকয়াত রাকায়াত পেয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। তবে হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেছেন। বিস্তারিত নিম্নরুপ:
আল্লামা ইবনুল মুনযির (মৃত্যু ৩১৯ হি.) বলেন, وَمِمَّنْ قَالَ إِنَّ مَنْ أَدْرَكَ الْإِمَامَ رَاكِعًا فَقَدْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ، وَمَيْمُونُ بْنُ مِهْرَانَ، وَسُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، وَالْأَوْزَاعِيُّ، وَالشَّافِعِيُّ، وَأَحْمَدُ، وَإِسْحَاقُ، وَأَبُو ثَوْرٍ، وَحُكِيَ ذَلِكَ عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، وَالنُّعْمَانِ وَفِيهِ قَوْلٌ ثَانٍ: قَالَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ قَالَ: مَنْ أَدْرَكَ الْقَوْمَ رُكُوعًا فَلَا يَعْتَدَّ بِالرَّكْعَةِ
অর্থ: যে ব্যক্তি ইমামকে রুকুতে পেল সে রাকায়াত পেল একথা যারা বলেন, তাদের ভিতর রয়েছেন সাইদ ইবনে মুসায়্যাব, মায়মুন ইবনে মিহরন, সুফইয়ান সাউরী, আউযায়ী, শাফেয়ী, আহমাদ, ইসহাক, আবু ছাওর। আর এমনই বর্ণিত আছে মালেক ইবনে আনাস ও নুমান (আবু হানীফা) থেকে। এই বিষয়ে আরেকটি মত হল, যে ব্যক্তি লোকদেরকে রুকুতে পাই সে ঐরুকুকে রাকয়াত হিসাবে গন্য করবে না। এটা বলেছেন আবু হুরায়রা র.। আল-আউসাত ফিস-সুনানি ওয়াল ইজমা ওয়াল ইখতিলাফ: ৪/১৯৬, ২০২৫ নং হাদীসের আলোচনায়। আরো দেখুন, আলফিকহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদিল্লাতহু:২/৩২৫। এই বিষয়ে দলীলসমূহের কিছু নিচে বর্ণণা করা হল:
১.عَنْ أَبِي بَكْرَةَ أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ رَاكِعٌ فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَى الصَّفِّ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا ، وَلاَ تَعُدْ. অর্থ: আবু বাকরতা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূর সা. নামাযে রুকু করছেন এঅবস্থায় তিনি তাঁর কাছে উপনীত হলেন। তখন তিনি কাতারে পৌছার পূর্বেই রুকু করলেন। এরপর বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট বললেন। তখন রাসলুল্লাহ সা. বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ বৃদ্ধি করে দিন, আর এমন করেব না।সহীহ বুখারী: হাদীস নং ৭৮৩। এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, মুসল্লী যদি ইমামকে রুকুতে পায় তাহলে সে রাকায়াত পেয়েছে হিসাবেই ধরা হবে। কারন এই সাহাবী জামায়াতে নামায পড়তে গিয়ে ইমামকে তথা রাসূলুল্লাহ সা. কে রুকুতে পেয়েছেন আর রাসূল সা. তাঁর প্রশংসা করেছেন এবংতাকে পূনরায় নামায পড়তে আদেশ করেননি। ২.عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم
- إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلاَ تَعُدُّوهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاَةَ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন,রাসূল সা. বলেছেন, আমরা সিজদায় থাকাকালীন যখন তোমরা নামাযে আসবে তখন তোমরা সিজাদাহ করবে আর ওটাকে রাকয়াত হিসাবে গণনা করবে না। এবং যে ব্যক্তি রুকু পেল সে নামায তথা রাকয়াত পেল । সুনানে আবু দাউদ: হাদীস নং ৮৯৩, সহীহ ইবনু খুজায়মা: হাদীস নং ১২১। মুসতাদরকে হাকেম: হাদীস নং ৭৮৩। হাদিসটির সনদে কিছুটা দুর্বলতা আছে তবে এই অর্থের অনেকগুলো সহীহ হাদীস থাকায় হাফেজ জাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। হাকেম রহ. বলেছেন, বলেছেন সহীহুল ইসনাদ। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এই হাদীসটি সম্পর্কে বিস্তারিত জন্য দেখুন, সহীহ আবু দাউদ:হাদীস নং ৮৩২। ৩.عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ عَنْ رَجُلٍ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ إِذَا جِئْتُمْ وَالإِمَامُ رَاكِعٌ فَارْكَعُوا ، وَإِنْ سَاجِدًا فَاسْجُدُوا ، وَلاَ تَعْتَدُّوا بِالسُّجُودِ إِذَا لَمْ يَكُنْ مَعَهُ الرُّكُوعُ তাবেঈ আব্দুল আযীয ইবনে রুফা একজন লোক থেকে তিনি রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সা. বলেছেন, ইমাম রুকুতে থাকা অবস্থায় যখন তোমরা আসবে তখন তেমরা রুকু করবে আর সিজদায় থাকা অবস্থায় আসলে সিজদাহ করবে। তবে যখন সিজদার সাথে রুকু থাকবে না তখন তাকে রাকয়াত হিসাবে গন্য করবে না। আসসুনানুল কুবরা: হাদীস নং ২৬৭৯। শায়খ আলবানী রহ. সহীহ আবু দাউদ এর মধ্যে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,
قلت: وإسناده صحيح؛ إن كان الرجل الذي لم يسمَّ صحابيّاً، ولعله الراجح؛فإن عبد العزيز بن رفيع تابعي جليل، روى عن جماعة من الصحابة؛ منهم العبادلة:ابن عمر وابن عباس وابن الزبير. وسواءَّ كان هو واحداً من هؤلاء أو رجلاً آخر من الصحابة؛ فالصحابة كلهم عدول
আমি বলব, হাদীসটির সনদ সহীহ; যে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি তিনি যদি সাহাবী হন আর এটাই এখানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কেননা আব্দুল আযীয ইবনে রুফা একজন বড়মাপের তাবেঈ। তিনি অনেক সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। তাদের মধ্যে রয়েছে ইবনে উমার, ইবনে আব্বাস, ইবনে জুবায়ের। বর্ণনাকারী এই সহাবীদের কেউ হোক কিংবা অন্য কোন সাহাবী হোক সমান কথা। কেননা সকল সাহাবী আদেল (ন্যায়পরায়ণ)। সহীহ আবু দাউদ: হাদীস নং৮৩২। এছাড়াও সাহাবীর নাম সহ হাদীসটি উক্ত তাবেয়ী থেকে পাওয়া যায় । শায়খ আলবনী রহ. সিলসিলাতুস সহীহাহ কিতাবে বলেছেন এই হাদীসটি ইসহাক ইবনে মানসরি আলমারওযী মাসাইলে আহমাদ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ:
৪.عبد العزيز بن رفيع عن ابن مغفل المزني قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم إذا وجدتم الإمام ساجدا فاسجدوا أو راكعا فاركعوا أو قائما فقوموا و لا تعدوا بالسجود إذا لم تدركوا الركعة আব্দুল আযীয ইবনে রুফা ইবনে মুগফ্ফাল আলমুযানী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সা. বলেছেন, যখন তোমরা ইমামকে সিজদারত অবস্থায় পাবে তখন তোমরা সিজদাহ করবে, যখন রুকুরত পাবে তখন রুকু করবে আর যখন দাড়ানো অবস্থায় পাবে তখন দাড়াবে। রুকু না পেলে সিজদাকে রাকয়াত হিসাবে গণ্য করবে না। হাদীসটি উল্লেখ করার পর শায়খ আলবনী বলেছেন, এটা সহীহ সনদ, এর বর্ণনাকারী সবাই ছিকাহ,বুখারী মুসলিমের রাবী। বিস্তারিত দেখুন, সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদীস নং ১১৪৪। মারফু হাদীসের পাশাপাশি অনেক সাহবী থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে তারা রুকু পাওয়াকে রাকয়াত পাওয়া হিসাবেই গণ্য করতেন। তার কিছু নিম্নরুপ:
৫.عن مالك عن نافع :أن عبد الله بن عمر بن الخطاب كان يقول إذا فاتتك الركعة فقد فاتتك السجدة
ইমাম মালেক রহ. নাফে থেকে বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলতেন, যখন তোমার থেকে রুকু ছুটে গেল তখন তোমার থেকে সিজদাহ ছুটে গেল। মুয়ত্তা মালেক: হাদীস নং ১৬। ৬.هُبَيْرَة بن يَرِيم عَنْ عَلِيٍّ، وَابْنِ مَسْعُودٍ، قَالا: مَنْ لَمْ يُدْرِكِ الرَّكْعَةَ فَلا يَعْتَدُّ بِالسَّجْدَةِ হুবাইরা ইবনে মারয়াম আলী ও ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেছেন, যে রুকু পাবে না সে সিজদাহকে রাকয়াত হিসাবে গণ্য করবে না। আলমুজামুল কাবীর লিত-তবরনী: হাদীস নং ৯২৪৬ । আল্লামা হ্য়াছামী বলেছেন, বর্ণনাকারীগন ছিকাহ। মাজমাউজ ঝাওইদ: হাদীস নং ২৪০২
একই সনদে বর্ণিত আরেকটি হাদীস, ৭.هُبَيْرَة بن يَرِيم عن بن مسعود قال من فاته الركوع فلا يعتد بالسجود হুবাইরা ইবনে মারয়াম আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যার রুকু ছুটে যাবে সে যেন সিজদাহকে রাকয়াত গন্য না করে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: হাদীস নং ৩৩৭২। ৮.عَنْ أَبِى الأَحْوَصِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ يَعْنِى ابْنَ مَسْعُودٍ قَالَ : مَنْ لَمْ يُدْرِكِ الإِمَامَ رَاكِعًا لَمْ يُدْرِكْ تِلْكَ الرَّكْعَةَ
আবুল আহওয়াস আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিি ন বলেছেন,যে ইমামকে রুকু অবস্থায় পেল না সে ঐরাকয়াত পেল না। আসসুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্কী: হাদীস নং ২৬৮১। শায়খ আলবানী বলেছেন, সনদ সহীহ। ইরওউল গলীল: ৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। ৯.عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ قَالَ : خَرَجْتُ مَعَ عَبْدِ اللَّهِ يَعْنِى ابْنَ مَسْعُودٍ مِنْ دَارِهِ إِلَى الْمَسْجِدِ ، فَلَمَّا تَوَسَّطْنَا الْمَسْجِدَ رَكَعَ الإِمَامُ ، فَكَبَّرَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَكَعَ وَرَكَعْتُ مَعَهُ ، ثُمَّ مَشَيْنَا رَاكِعَيْنِ حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى الصَّفِّ حِينَ رَفَعَ الْقَوْمُ رُءُوسَهُمْ ، فَلَمَّا قَضَى الإِمَامُ الصَّلاَةَ قُمْتُ وَأَنَا أَرَى أَنِّى لَمْ أُدْرِكْ ، فَأَخَذَ عَبْدُ اللَّهِ بِيَدِى وَأَجْلَسَنِى ، ثُمَّ قَالَ : إِنَّكَ قَدْ أَدْرَكْتَ
যায়দ ইবনে ওহাব বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর সাথে তাঁর বাড়ী থেকে মসজিদে গেলাম। আমরা যখন মসজিদের মাঝে তখন ইমাম রুকুতে গেল তখন আব্দুল্লাহ তাকদিয়ে রুকুতে গেলেন, আমিও তাঁর সাথে গেলাম। এরপর আমরা রুকু অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে কাতারে পৌছলাম, এই সময়ের মধ্যে মুসল্লীরা তাদের মাথা উঠালো। যখন ইমাম নামায শেষ করলেন তখন আমি এই ভেবে দাড়ালাম যে আমি ঐরাকয়াত পায়নি। তখন আব্দুল্লাহ আমাকে হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি রাকয়াত পেয়েছ। আসসুনাসনুল কুবরা লিলবায়হাক্কী; হাদীস নং ২৬৯০। শায়খ আলবানী বলেছেন সনদ সহীহ। ইরওউল গলীল:৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। ১০.عَنْ نَافِعٍ ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : إذَا جِئْت وَالإِمَامُ رَاكِعٌ فَوَضَعْتَ يَدَيْك عَلَى رُكْبَتَيْك قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ ، فَقَدْ أَدْرَكْت
নাফে ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন ইমামের রুকু অবস্থায় যখন আসবে তখন যদি ইমামের মাথা তোলার পূর্বেই তুমি তোমার হাত হাঁটুর উপর রাখ তাহলে তুমি রাকয়াত পাবে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: হাদীস নং ২৫৩৪। শায়খ আলবানী বলেছেন,সনদ সহীহ। ইরওউল গলীল:৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। ১১.عَنْ خَارِجَةَ بْنِ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ: أَنَّ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ، كَانَ يَرْكَعُ عَلَى عَتَبَةِ الْمَسْجِدِ وَوَجْهُهُ إِلَى الْقِبْلَةِ, ثُمَّ يَمْشِي مُعْتَرِضًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ يَعْتَدُّ بِهَا إِنْ وَصَلَ إِلَى الصَّفِّ أَوْ لَمْ يَصِلْ খারিজা ইবনে যাইদ ইবনে ছাবিত বর্ণনা করেন যে, যাইদ ইবনে ছাবিত মসজিদের চৌকাঠে রুকু করতেন আর তাঁর চেহারা ক্বিবলামখী থাকত। এরপর হেঁটে হেঁটে সামনে যেতেন। তিনি এটাকে রাকয়াত হিসাবে গণ্য করতেন, কাতরে পৌছান কিংবা না পৌছান। শরহে মায়ানিল আছার: হাদীস নং ২৩২৬। শায়খ আলবানী রহ. বলেছেন, সনদ ভাল। ইরওউল গলীল: ৪৯৬ নং হাদীসের আলোচনায়। উক্ত মাসয়ালার ক্ষেত্রে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে শায়খ আলবানী রহ. বলেন,
وردت عن جماعة من الصحابة بأسانيد صحيحة أن مدرك الركوع مدرك للركعة، ولم يصح عن أحد منهم خلاف ذلك
একদল সাহাবী থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, যে রুকু পাবে সে রাকয়াত পাবে। একজন সাহাবী থেকেও সহীহ সূত্রে এর বিপরীত বর্ণিত নেই। সহীহ আবু দাউদ: ৮৩২ নং হাদীসের আলোচনায়। তাড়াহুড়ো না করার দলীল:
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : إذا أتيتم الصلاة فلا تأتوها وأنتم تسعون وأتوها تمشون وعليكم السكينة فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فاقضوا অর্থ: আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা তাড়াহুড়ো করে নামাযে আসবে না, ধীরস্থীর ভাবে আসবে। ইমামের সাথে যতটুকু পাবে পড়বে আর যা পাবে না পরে পড়বে। সুনানু নাসায়ী: হাদীস নং ৮৬১। শায়খ আলবনী বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। এই হাদীসে পষ্টভাবে তাড়াহুড়ো করে নামাযে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে যেভাবেই হোক রুকু পেলে রাকয়াত রাকায়অত পেয়েছে বলেই গন্য হবে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, হাদীসের আলোকে মুসল্লাীর রুকু পাওয়াকে রাকায়াত পাওয়া হিসাবেই ধরা হবে। আর নামাযে ধীরস্থীর ভাবে আসতে হবে, তাড়াহুড়ো করা যাবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকু আদায় করতে হবে বাদবাকী পরে পড়তে হবে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, পুরো নামায পাওয়া জন্য কোন চেষ্টা থাকবে না, মনে কোন চিন্তা থাকবে না। এই হাদীসে শুধু নামাযের জন্য মাসজিদে আসার সময় শান্ত ভাবে আসতে বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 162
স্যার সালাম নিবেন,আশাকরি ভাল আছেন। আমার একটা প্রশ্ন জন্মদিন পালন নিয়ে ইসলামের আসল সমাধান টা কি? আমি বিব্রতবধ করি জখন সকালে উঠে দেখি আমার মোবাইলে শুভ জন্মদিন বলে একাধিক মে-সেজ / -ফেসবুক খুলে দেখি ১২৯টারও বেশি । আমি কি করব বুঝতে পারছিনা? তাদের এই শুভকামনার জবাবই বা কি দিবো?বৈধ উপায়ে পালনের সুযোগ আছে কি-না? যেমন অনেকে বই উপহার দেয়, আবার অনেকে দোয়া করে ইত্যাদি জানালে খুশি হব। ।
20 Dec 2025
জন্মদিন পালন করা ইসলামে জায়েজ নেই। কোন সাহাবী, তাবেঈ কিংবা তাবে তাবেঈ কারো জন্মদিন পালন করেননি । সুতরাং কাউকে কিছু হাদিয়া দিয়ে কিংব অন্য কোন উপায়ে জন্মদিন পালন করা যাবে না।
প্রশ্নঃ 163
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম,কোন ছাহাবী বা তাবেয়ী কখন অনারব ভাষায় জুমআর দ্বিতীয় খুতবা দিয়েছেন কিনা দলীলের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। কোন সাহাবী বা তাবেঈ জুমুয়ার কোন খুৎবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দিয়েছেন বলে জানা যায় না। তবে তাঁরা আরবী ভাষায় ব্যবহার হয় এমন দুচারটা অন্য ভাষার শব্দ খুৎবার মধ্যে ব্যবহার করতেন। এছাড়াও আঞ্চলিক আরবী ভাষায় সাহাবী তাবেয়ীগন খুৎবাহ দিতেন বলে জানা যায়। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন খুতবাতুল ইসলাম বইটির ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১৩-২৮।
প্রশ্নঃ 164
স্যার আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমার প্রশ্ন হলো, মৃত্যুর পর আত্মার উপর না শরীরের শাস্তি হবে?
20 Dec 2025
কবরে আযাব হবে, সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। আত্মার উপর হবে নাকি শরীরে উপর হবে তা স্পষ্ট নয়। তবে মূল আযাব আত্মার উপর হবে আর আত্মার সাথে শরীরের একটি সম্পর্ক থাকেবে বলে আলেমগণ মনে করেন। বিস্তারিত নিম্নে:
অনেকগুলো সহীহ হাদীসে কবরের আযাব হওয়ার কথা উল্লোখ আছে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদীস,
أَنَّ يَهُودِيَّةً دَخَلَتْ عَلَيْهَا فَذَكَرَتْ عَذَابَ الْقَبْرِ فَقَالَتْ لَهَا أَعَاذَكِ اللَّهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَسَأَلَتْ عَائِشَةُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَقَالَ نَعَمْ عَذَابُ الْقَبْرِ قَالَتْ عَائِشَةُ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدُ صَلَّى صَلاَةً إِلاَّ تَعَوَّذَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْر زَادَ غُنْدَرٌ عَذَابُ الْقَبْرِ حَقٌّ
অর্থ: একজন ইহুদী মহিলা তাঁর (আয়েশা রা.) কাছে এসে কবরের আযাবের কথা উল্লেখ করে তাঁকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সা. কে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, হ্যাঁ, কবরের আযাব আছে। আয়েশা রা. বলেন, আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ সা. যখনই নামায পড়তেন তখনই কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাইতেন। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কবরের আযাব সত্য। সহীহ বুখারী,হাদীস নং ১৩৭২। আযাব কিভাবে হবে সে ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলো নিম্নেরূপ:
عَنْ زَاذَانَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى جَنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرُ وَفِى يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ بِهِ فِى الأَرْضِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ : ্র اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا - زَادَ فِى حَدِيثِ جَرِيرٍ هَا هُنَا - وَقَالَ : وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ خَفْقَ نِعَالِهِمْ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ حِينَ يُقَالُ لَهُ : يَا هَذَا مَنْ رَبُّكَ وَمَا دِينُكَ وَمَنْ نَبِيُّكَ قَالَ هَنَّادٌ قَالَ : وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ : رَبِّىَ اللَّهُ. فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا دِينُكَ فَيَقُولُ : دِينِى الإِسْلاَمُ. فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِى بُعِثَ فِيكُمْ قَالَ فَيَقُولُ : هُوَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-. فَيَقُولاَنِ : وَمَا يُدْرِيكَ فَيَقُولُ : قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ زَادَ فِى حَدِيثِ جَرِيرٍ : فَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ (يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا) الآيَةَ. ثُمَّ اتَّفَقَا قَالَ : فَيُنَادِى مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : أَنْ قَدْ صَدَقَ عَبْدِى فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ قَالَ : فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا قَالَ : وَيُفْتَحُ لَهُ فِيهَا مَدَّ بَصَرِهِ قَالَ : وَإِنَّ الْكَافِرَ فَذَكَرَ مَوْتَهُ قَالَ : وَتُعَادُ رُوحُهُ فِى جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولاَنِ : مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِى. فَيَقُولاَنِ لَهُ : مَا دِينُكَ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِى. فَيَقُولاَنِ : مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِى بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُولُ : هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِى. فَيُنَادِى مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : أَنْ كَذَبَ فَأَفْرِشُوهُ مِنَ النَّارِ وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ قَالَ : فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا قَالَ : وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلاَعُهُ زَادَ فِى حَدِيثِ جَرِيرٍ قَالَ : ثُمَّ يُقَيَّضُ لَهُ أَعْمَى أَبْكَمُ مَعَهُ مِرْزَبَّةٌ مِنْ حَدِيدٍ لَوْ ضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا قَالَ : فَيَضْرِبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ إِلاَّ الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيرُ تُرَابًا قَالَ ثُمَّ تُعَادُ فِيهِ الرُّوحُ অর্থ: হযরত বারা ইবনে আযেব রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে এক আনসারী ব্যক্তির জানাযার জন্য বের হলাম, আমরা যখন সেখানে পৈাছলাম তখন পর্যন্ত কবর খনন সম্পন্ন হয় নি। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বসলেন, আমরাও তাঁর চার পাশে বসে গেলাম, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি। তাঁর হাতে একটি কাঠি ছিল, যা দ্বারা তিনি মাটিতে দাগ কাটছিলেন। অতঃপর তিনি তার মাথা উঠালেন এবং বললেন তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাও। তিনি দুইবার বা তিনবার তা বললেন। ...অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বললেন, (মৃত ব্যক্তির রুহ) যে ফেরেস্তা তার সাথে চলে তাদের জুতার পায়ের আওয়াজ শুনতে পান। ফেরেস্তারা তাকে বলে তোমার প্রতি পালক কে? তোমার ধর্ম কি? এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে পাঠানো হয়েছিল? আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন,তার কাছে দুইজন ফেরেস্তা এসে বসবেন ও বলবেন, তোমার প্রতিপালক কে? সে বলবে আমার রব আল্লাহ। এরপর ফেরেস্তাদ্বয় জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে আমার দ্বীন ইসলাম। এরপর তারা জিজ্ঞাসা করবেন, এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে পাঠানো হয়েছিল? সে বলবে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ফেরেস্তারা বলবেন, তুমি কিভাবে এগুলো জানলে? সে বলবে আমি আল্লাহর কিতাব দেখেছি, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তাকে সত্য বলে মনে করেছি। এক বর্ণনায় আছে এটাই হল আল্লাহ তায়ালার বাণী আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের পা কে দৃঢ় করবেন... এর অর্থ। তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষনাকারী ঘোষনা করবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে, তোমরা তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছেয়ে দাও, তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক বিছিয়ে দাও। তিনি বলেন, তার কাছে সুঘ্রান আসবে এবং তার দৃষ্টি সীমা বৃদ্ধি পাবে। রাসূলুল্লাহ সা. কাফেরের মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, তার রুহকে তার শরীরের মধ্যে প্রবেশ করানো হবে। এরপর দুজন ফেরেস্তা তার কাছে বসে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমর প্রতিপালক কে? সে বলবে, হায়,হায়, আমি জানি না। এরপর ফেরেস্তারা প্রশ্ন করবে, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে, হায়, হায়, আমি জানি না। তারপর ফেরেস্তারা প্রশ্ন করবে, এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল? সে বলবে, হায়, হায়, আমি জানি না। তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষনাকারী বলবে, সে মিথ্যা বলেছে, তাকে জাহন্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও, তার দিকে জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দাও। তারদিকে আগুন আসতে থাকবে। তার উপর তার কবর এমন ভাবে সংকীর্ণ হয়ে যাবে যে, তার দুই পার্শ্ব একে অপরের ভিতর ঢুকে যাবে। আরেক বর্ণনায় আছে, তার জন্য একজন বোবা অন্ধ ফেরেস্তা নিযুক্ত করা হবে, তার কাছে থাকবে লোহর লাঠি, যখন তা দ্বারা কোন পাহাঢ়কে আঘাত করা হয় তখন পাহাঢ় মাটি হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তা দ্বারা সে তাকে এমন ভাবে আঘাত করবে যে, মানুষ ও জ্বীন ছাড়া পূর্ব-পশ্চিমের সব প্রাণী তা শুনতে পাবে। তিনি বলেন, তারপর আবার তার ভিতরে রুহ প্রবেশ করানো হবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৫৩। হাদীসটি সহীহ। শাইখ আলবানী সহ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا قُبِضَ أَتَتْهُ مَلاَئِكَةُ الرَّحْمَةِ بِحَرِيرَةٍ بَيْضَاءَ ، فَتَقُولُ : اخْرُجِي إِلَى رَوْحِ اللَّهِ ، فَتَخْرُجُ كَأَطْيَبِ رِيحِ مِسْكٍ حَتَّى إِنَّهُمْ لِيُنَاوِلُهُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا يَشُمُّونَهُ ، حَتَّى يَأْتُونَ بِهِ بَابَ السَّمَاءِ ، فَيَقُولُونَ : مَا هَذِهِ الرِّيحُ الطَّيِّبَةُ الَّتِي جَاءَتْ مِنَ الأَرْضِ ؟ وَلاَ يَأْتُونَ سَمَاءً إِلاَّ قَالُوا مِثْلَ ذَلِكَ ، حَتَّى يَأْتُونَ بِهِ أَرْوَاحَ الْمُؤْمِنِينَ فَلَهُمْ أَشَدُّ فَرَحًا بِهِ مِنْ أَهْلِ الْغَائِبِ بِغَائِبِهِمْ ، فَيَقُولُونَ : مَا فَعَلَ فُلاَنٌ ؟ فَيَقُولُونَ : دَعُوهُ حَتَّى يَسْتَرِيحَ ، فَإِنَّهُ كَانَ فِي غَمِّ الدُّنْيَا ، فَيَقُولُ : قَدْ مَاتَ ، أَمَا أَمَاتَكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ : ذُهِبَ بِهِ إِلَى أُمِّهِ الْهَاوِيَةِ ، وَأَمَّا الْكَافِرُ فَيَأْتِيهُ مَلاَئِكَةُ الْعَذَابِ بِمُسْحٍ ، فَيَقُولُونَ : اخْرُجِي إِلَى غَضِبِ اللَّهِ ، فَتَخْرُجُ كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ فَتَذْهَبُ بِهِ إِلَى بَابِ الأَرْضِ.
অর্থ: আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন মূমিন মৃত্যু বরণ করেন তখন রহমতের ফেরেস্তারা সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে তার কাছে আসেন এবং বলেন, আল্লাহ শান্তির দিকে বের হও। তখন সে এমন অবস্থায় বের হয় যেন উত্তম সুগন্ধি। আর ফেরেস্তারা একে অপরে সেই সুগন্ধি গ্রহন করেন। এভাবে তারা তাকে নিয়ে আকাশের দরজার কাছে নিয়ে আসে। (সেখানে দায়িত্ব থাকা ফেরেস্তারা) বলেন, এই উত্তম সুগন্ধি কিসের যা পৃথিবী থেকে এসেছে? তারা যে আকাশের কাছেই যাবে তার দায়িত্ব থাকা ফেরেস্তারা অনুরুপ বলবেন। এভাবে তারা তাকে মূমিনদের রুহুর কাছে নিয়ে আসে, তার তাকে দেখে ফেরেস্তাদের থেকেও বেশী খুশি হয়। তারা জিজ্ঞাসা করবে, অমুকের খবর কি? ফেরেস্তারা বলবে, তাকে ছেড়ে দাও, সে বিশ্রাম নিবে কেননা সে দুনিয়ার কষ্টের মধ্যে ছিল। সে (রুহ) বলবে, সে তো মারা গেছে, তোমাদের কাছে আসে নি? তারা বলবে তাকে হাবিয়া (একটি জাহান্নামের নাম) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পক্ষান্তবে কাফের, তাদের কাছে আযাবের ফেরেস্তারা দুর্গন্ধ কাপড় নিয়ে তার কাছে আসে আর বলে, আল্লাহর ক্রোধের দিকে বের হও। তখন সে এমন অবস্থায় বের হয় যেন তা পঁচা দুর্গন্ধ কাপড়। তারা তাকে নিয়ে পৃথিবীর দরজায় নিয়ে যায়। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৩০১৪। শাইখ আলবানীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখন সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব,হাদীস নং৩৫৫৯ ও সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদীস নং ১৩০৯। উপরুক্ত হাদীসদুটি দ্বারা বুঝা যায়, আযাব রুহ এবং শরীর উভয়টির উপরই হবে। এই সম্পর্কে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّ مَذْهَبَ سَلَفِ الْأُمَّةِ وَأَئِمَّتِهَا أَنَّ الْمَيِّتَ إذَا مَاتَ يَكُونُ فِي نَعِيمٍ أَوْ عَذَابٍ وَأَنَّ ذَلِكَ يَحْصُلُ لِرُوحِهِ وَلِبَدَنِهِ وَأَنَّ الرُّوحَ تَبْقَى بَعْدَ مُفَارَقَةِ الْبَدَنِ مُنَعَّمَةً أَوْ مُعَذَّبَةً وَأَنَّهَا تَتَّصِلُ بِالْبَدَنِ أَحْيَانًا فَيَحْصُلُ لَهُ مَعَهَا النَّعِيمُ وَالْعَذَابُ . ثُمَّ إذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ الْكُبْرَى أُعِيدَتْ الْأَرْوَاحُ إلَى أَجْسَادِهَا وَقَامُوا مِنْ قُبُورِهِمْ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ... وَهَذَا كُلُّهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ عِنْدَ عُلَمَاءِ الْحَدِيثِ وَالسُّنَّةِ
অর্থ: জেনে রাখা দরকার যে, পূর্ববর্তী উম্মাত এর্ব ইমামদের মত হল, মৃত্যুর পরে মানুষ আযাব অথব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে। আর এটা তার রুহ এবং শরীরের সাথে সম্পৃক্ত হবে। রুহ শরীর থেকে বিচ্ছন্ন অবস্থায় আযাব অথবা নিয়ামতের মধ্যে থাকবে। তবে কখনো কখনো শরীরের সাথে যুক্ত হবে আর তখন তার রুহের সাথে শরীরো আযাব বা নিয়ামাতে শরীক হবে। এরপর যখন কিয়ামত হবে তখন রুহগুলোকে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করানো হবে আর তারা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে কবর থেকে উঠবে। সুন্নাহ ও হাদীসের আলেমগণ একথার উপর ঐক্যমত। মাজমাউল ফাতাওয়া,৪/২৮৪। শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন,
الأصل أنه على الروح ، لأن الحكم بعد الموت للروح ، والبدن جثة هامدة ، ولهذا لا يحتاج البدن إلى إمداد لبقائه ، فلا يأكل ولا يشرب ، بل تأكله الهوام ، فالأصل أنه على الروح
অর্থ. মূল কথা হল আযাব রুহের উপরই হবে । কেননা মৃত্যুর পর হুকুম রহের উপর। আর শরীর তখন একটা অষাঢ় দেহ। এই কারণেই তখন তা (শরীর) বাকী থাকার জন্য কোন সাহায্যের মুকাপেক্ষী হয় না, কোন কিছু খায় না, পান করে না। বরং পোকমাকড়ই তাকে খেয়ে ফেলে। সুতরাং মূল হল আযাব রুহুর উপরই হবে। উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, কবরের আযাব হবে এটা সত্য। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আর আযাব মূলত রুহর উপর হবে তবে রুহুর সাথে শরীরের একটা গভীর সংযোগ থাকবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 165
ফরজ নামাজের পর জামাতের সাথে মুনাজাত করা জাবে কী।
20 Dec 2025
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । নিচে এব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি । আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় আলোচ্য: (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা, (২) মুনাজাত করার সময় হাত উঠানো এবং (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিকর ও মুনাজাত করা। (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা। নামায মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাযের শেষে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি ও আবেগ আসে। এই সময়ে তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে যাওয়া মুমিনের উচিত নয়। নামাযের পরে যতক্ষণ সম্ভব নামাযের স্থানে বসে দুআ মুনাজাত ও যিকিরে রত থাকা উচিত। মুমিন যদি কিছু না করে শুধুমাত্র বসে থাকেন তাও তাঁর জন্য কল্যাণকর। নামাযের পরে যতক্ষণ মুসল্লী নামাযের স্থানে বসে থাকবেন ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন:
إَذَا صَلَّى الْمُسْلِمُ ثُمَّ جَلَسَ فِيْ مُصَلاَّهُ لَمْ تَـزَلِ الْمَلاَئِكَةُ تَدْعُو لَهُ اَللَّهُمَّ اغْـفِـرْ لَـهُ اَللَّهُمَّ ارْحَـمْهُ مَا لَـمْ يُـحْدِثْ أَوْ يَـقُمْ
যদি কোনো মুসলিম সালাত আদায় করে, এরপর সে তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকে, তবে ফিরিশতাগণ অনবরত তাঁর জন্য দুআ করতে থাকেন : হে আল্লাহ একে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, একে রহমত করুন। যতক্ষণ না সে ওযু নষ্ট করে বা তাঁর স্থান থেকে উঠে যায় ততক্ষণ। হাদীসের শিক্ষার আলোকে আমারা দেখতে পাই যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরে কিছু সময় বসে যিক্র ও মুনাজাত করা সুন্নাত সম্মত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরের দুআ কবুল হয় বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। হযরত আবু উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো: কোন্ দুআ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়? তিনি উত্তরে বলেন :
جَـوْفُ الليـلِ الآخِـرُ، ودُبـُر الصلواتِ الـمكتـوبات
রাত্রের শেষ অংশ ও ফরয নামাযের শেষে (দুআ বেশি কবুল হয়)। এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে দুআ করা একটি সুন্নাত সম্মত নেক আমল। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত নামাযের শেষে কিছু সময় যিকর ও মুনাজাতে কাটানো। এধরনের আরো কিছু দোয়া নামাযের পর রাসূল সাঃ করতেন। (২)হাত তুলে মুনাজাত করা। দুআ-মুনাজাতের একটি আদব হলো, দুই হাত তুলে দুআ করা। এই অর্থে একটি হাদীসে বলা হয়েছে: নিশ্চয় আল্লাহ লাজুক দয়াবান। যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দুখানা হাত উঠায় (দুআ করতে), তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। অন্য বর্ণনায় সালমান ফারসী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا رَفَـعَ قَـوْمٌ أَكُـفَّـهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُوْنَهُ شَيْئًا إِلاَّ كَـانَ حَـقًّا عَـلَى اللهِ أَنْ يَـضَـعَ فِـيْ أَيْدِيْـهِمْ الَّذِيْ سَأَلُوْا
যখনই কিছু মানুষ আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য তাদের হাতগুলিকে উঠাবে, তখনই আল্লাহর উপর হক্ক (রহমতের দায়িত্ব) হয়ে যাবে যে তারা যা চেয়েছে তা তিনি তাদের হাতে প্রদান করবেন। হাফিয হাইসামী উল্লেখ করেছেন যে, হাদীসটির সনদ সহীহ। অন্য হাদীসে মালিক ইবনু ইয়াসার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
إِذَا سَأَلْتُمْ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا
তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন হাতের পেট দিয়ে চাইবে, হাতের পিঠ দিয়ে চাইবে না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। রাসূলূল্লাহ ((সা.) বিভিন্ন সময়ে হাত উঠিয়ে দুআ করতেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন :
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ r يَرْفَعُ يَدَيْهِ يَدْعُو حَتَّى إِنِّي لأَسْأَمُ لَهُ مِمَّا يَرْفَعُهُمَا يَدْعُو اللَّهُمَّ فَإِنَّمَا أَنَا بَشْرٌ فَلا تُعَذِّبْنِي بِشَتْمِ رَجُلٍ شَتَمْتُهُ أَوْ آذَيْتُهُ
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত দুখানা উঠিয়ে দুআ করতেন, এমনকি আমি তাঁর (দীর্ঘ সময়) হাত উঠিয়ে দুআ করাতে ক্লান্ত ও অস্থির হয়ে পড়তাম; তিনি এভাবে দুআয় বলতেন : হে আল্লাহ, আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি কোনো মানুষকে গালি দিয়ে ফেললে বা কষ্ট দিলে আপনি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিবেন না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অন্যান্য সময়ের ন্যায় নামাযের পরেও মুনাজাতের সময় হাত উঠানো উত্তম। তবে যে ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা ফযীলত বাদ দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে ফযীলত বাদ দেওয়াই সুন্নাত। যেমন, কিবলামুখী হয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। কিন্তু নামাযের পরে ইমামের জন্য এই মুস্তাহাব পরিত্যাগ করাই সুন্নাত। অনেক হাদীস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক সময়, বরং অধিকাংশ সময় দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত উঠাতেন না। বরং শুধু মুখে দুআ-মুনাজাত করতেন। সাহাবীগণ থেকেও আমরা অনুরূপ কর্ম দেখতে পাই। এ সকল ক্ষেত্রে আমরা কী করব? আমরা কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রেও হাত উঠিয়ে দুআ করা উত্তম এবং হাত না উঠানো অনুচিত? তাহলে তো স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্ম অনুচিত পর্যায়ের হয়ে গেল। না কি আমরা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো উত্তম, তবে না উঠালেও দোষ নেই? সেক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাজ অনুত্তম বলে গণ্য হলো। না কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত না উঠানোই উত্তম, তবে হাত উঠানোতে দোষ নেই? অথবা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো জায়েয নয়? তাহলে হাত উঠানোর ফযীলতে বর্ণিত হাদীসের কী হবে?
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যে সকল সময়ে তিনি দুআ-মুনাজাতে হাত উঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত উঠানো সুন্নাত বলে গণ্য হবে। যেমন আরাফার মাঠে, ইসতিসকার দুআয়, যুদ্ধে শুরুতে, বিশেষ আবেগের ক্ষেত্রে, ইত্যাদি। আর যেখানে ও যে সময়ে তিনি হাত উঠাননি বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত না-উঠানো সুন্নাত। অধিকাংশ নিয়মিত মাসনূন দুআ এই প্রকারের। বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে, এ সকল মুনাজাত পালনের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দু হাত তুলে মুনাজাত করেন নি। আমরা দেখছি যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘুরে বসা, ঠোট নাড়া, কথা বলা ইত্যাদি সব কিছুর বর্ণনা দিচ্ছেন, কিন্তু কখনোই বলছেন না যে, তিনি দুই হাত তুলে এই কথাগুলি বলেছিলেন। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরের মুনাজাতের ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ নিয়মিত দুআ- মুনাজাতের ক্ষেত্রেই তিনি হাত উঠাতেন না। উপরের বিষয়গুলি সবই সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। এ সকল তথ্যের বিষয়ে কোনো মতভেদ আছে বলে জানি না। নামাযের পরে সামষ্টিক মুনাজাতের পক্ষের কোনো আলেমও কোথাও উল্লেখ করেন নি বা দাবী করেন নি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীগণ কখনো ফরয সালাতের সালাম ফেরানোর পরে উপস্থিত মুসাল্লীদের নিয়ে সমবেতভাবে দুআ করেছেন বলে কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নামাযের পরে দুআয় একাকী হাত উঠানোর বিষয়ে কিছু কথা বর্ণিত হয়েছে। গত শতাব্দীর কোন কোন আলেম উল্লেখ করেছেন যে, একদিন ফজরের নামাযের পরে ঘুরে বসে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলে দুআ করেছিলেন। তাঁরা বলেন, ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেছেন, ইয়াযিদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) বলেন: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ r الْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ انْحَرَفَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালামের পরে ঘুরে বসলেন এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন। এই হাদীসটি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ও অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। তবে এ সকল গ্রন্থে সংকলিত হাদীসের ভাষা নিুরূপ: আসওয়াদ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালাম ফেরানোর পরে ঘুরে বসলেন। কোন গ্রন্থেই এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন এই অতিরিক্ত কথাটুকু নেই। এজন্য আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান বলেছেন, হাদীসটি নাযীর হুসাইন মুঙ্গীরী এভাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি কোনো গ্রন্থে তা খুঁজে পান নি এবং এর সনদ জানতে পারেন নি। অন্য হাদীসে ফাদল ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
الصَّلاةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا إِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا، (فَهِيَ خِدَاجٌ)
সালাত দুই রাকআত, দুই রাকআত করে, প্রত্যেক দুই রাকআতে তাশাহ্হুদ পাঠ করবে, বিনীত হবে, কাতর হবে, অসহায়ত্ব প্রকাশ করবে, বেশি করে সাহায্যা প্রার্থনা করবে এবং তোমার দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে দুই হাতের পেট তোমার মুখের দিকে করবে এবং বলবে: হে প্রভু, হে প্রভু। যে এরূপ না করলো তার সালাত অসম্পূর্ণ। এই হাদীসে নামাযের পরে হাত তুলে দোওয়া করার কথা বলা হয়েছে। তবে স্পষ্টতই হাদীসটি নফল নামাযের বিষয়ে, যা দুই রাকআত করে পড়তে হয়। সর্বোপরি হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম বুখারী, উকাইলী, যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটির দুর্বলতা উল্লেখ করেছেন। আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) এক ব্যক্তিকে দেখেন যে, সে সালাত শেষ করার পূর্বে তার দুই হাত উত্থিত করে রেখেছে। ঐ ব্যক্তি সালাত শেষ করলে তিনি বলেন:
إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ r لَـمْ يَكُـنْ يَرْفَـعُ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلاَتِهِ.
রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর দুই হাত উঠাতেন না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। সালাত শেষের আগে হাত উঠাতেন না থেকে মনে হয় সালাত শেষের পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলতেন। এখানে ফরয বা নফল সালাতের কথা উল্লেখ করা নেই। তবে যে ব্যক্তিকে ইবনু যুবাইর কথাটি বলেছিলেন সে ব্যক্তি বাহ্যত নফল সালাত আদায় করছিল এবং এজন্যই একাকী সালাতের মধ্যে দুই হাত তুলে দোওয়া করছিল। তার পরেও এই হাদীসের ভিত্তিতে আমরা দাবি করতে পারি যে, তিনি নফল ও ফরয উভয় সালাতের পরেই হাত তুলে দুআ করতেন। তবে অন্যান্য অগণিত সহীহ হাদীস, যেগুলিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফরয সালাতের পরের দুআ, যিকর, বক্তৃতা ও অন্যান্য কর্মের বিবরণ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে সেগুলি থেকে জানা যায় যে, তিনি ৫ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরের দুআ-মুনাজাত করার সময় হাত তুলতেন না। সে সকল হাদীস ও এ হাদীসটির সমন্বয়ে আমরা ধারণা করতে পারি যে, তিনি সম্ভবত মাঝে মাঝে সালাত শেষে দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত তুলতেন বা নফল সালাতে দুআ করলে সালাত শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এ সবই একা একা হাত তুলে দুআ করার বিষয়ে। ফরয নামাযের পরে মুক্তাদীদেরকে নিয়ে সমবেতভাবে হাত তুলে বা হাত না তুলে দুআ তিনি কখনো করেননি। এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিকর ও মুনাজাত করা। নামাযের পরে জামাতবদ্ধ মুনাজাত গত কয়েকশত বৎসর যাবৎ চালু হয়েছে। তাতে কোনো প্রকারের ফযীলত আছে বলে আমি জানতে পারি নি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের যুগে এইরূপ মুনাজাতের প্রচলন ছিল না বিধায় কোনো কোনো আলিম একে বিদআত বলেছেন। আমরা জানি যে, নামাযের পরে মুনাজাত করা ও মুনাজাতে হাত উঠানোর ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একাকী মুনাজাত করলে এই দুইটি ফযীলতই পলিত হয়। সমবেতভাবে মুনাজাত করার কোনো ফযীলত হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি। এক্ষেত্রে আমাদের আশা হলো, একজন মুনাজাত করবেন এবং সমবেত সকলেই আমিন বলবেন, এতে হয়ত আল্লাহ সকলের আবেদনে মুনাজাতটি কবুল করবেন। এ জন্য অবশ্যই ইমামকে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে মুনাজাত করতে হবে। এতে মাসবূক মুসাল্লীদের নামায আদায় বিঘ্নিত হবে। আর ইমাম যদি মনে মনে মুনাজাত করেন তবে তো কিছুই হলো না। ইমাম একাকী মুনাজাত করলেন। মুক্তাদিগণ কিছুই না করে হাত তুললেন ও নামালেন। পক্ষান্তরে একাকী মুনাজাত করলে নিজের মনের আবেগ ও প্রয়োজন অনুসারে মুনাজাত করা যায়। এতে মুনাজাতের ফযীলত ও মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি সাধিত হয়, কিন্তু কারো নামাযের ক্ষতি হয় না। এভাবে আমরা বুঝতে পারছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতই উত্তম। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে উল্টে ফেলেছি। তাছাড়া রাসূল সাঃ পরের যুগগুলিতেও সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের যুগেও কেউ কখনো ফরয নামাযের পরে সমবেতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেননি। তাঁরা সুযোগ পেলে এই সময়ে ব্যক্তিগতভাবে যিক্র ও মুনাজাত করতেন। ) হাদীস থেকে বুঝা যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)যিকর ও মুনাজাত একাকী পালন করতেন। জামাতে উপস্থিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে তা আদায় করতেন না। কখনোই সাহাবীগণ নামাযের পরের মুনাজাতে তাঁর সাথে শরীক হয়েছেন বলে বর্ণিত হয় নি। প্রায় অর্ধ শত সাহাবী থেকে বর্ণিত মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীসগুলির একটি হাদীসেও বর্ণিত হয় নি যে, একদিন একটি বারও তিনি মুক্তাদিগণের সাথে একত্রে মুনাজাত করেছেন। পক্ষান্তরে সাধারণ ফযীলত জ্ঞাপক হাদীসের আলোকে অনেক আলিম একে সমর্থন করেছেন। তাঁরা এই জামাতবদ্ধ মুনাজাত-কে মুস্তাহাব বলেছেন। চার ইমাম ও পূর্ববর্তী সকল ফকীহ বলেছেন যে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ হয়ে যায়। হাদীস শরীফেও বলা হয়েছে যে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু এবং সালামেই সালাত শেষ। এগুলির সাথে সঙ্গতি রক্ষার জন্য তাঁরা বলেছেন যে, এই মুনাজাত নামাযের কোনো অংশ নয়। নামাযের পরে অতিরিক্ত একটি মুস্তাহাব কাজ। নামায সালামের সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়, তবে কেউ যদি এর পরে অন্য কোনো মুস্তাহাব কাজ করে তাহলে দোষ নেই। এখানে মূল হলো মনের আবেগসহ মাসনূন মুনাজাতগুলি পালন করা। নামাযের পরে মুনাজাতের ক্ষেত্রে একাকী মুনাজাতই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রীতি। এছাড়া মনোযোগ আনয়ন ও মাসনূন বাক্য পালনের জন্যও একাকী মুনাজাত উত্তম। জামাতে ইমামের সাথেও মুনাজাত করা যেতে পারে। তবে সদাসর্বদা এইরূপ জামাতবদ্ধ মুনাজাত করা, একে জরুরী মনে করা বা তা পরিত্যাগকারীকে খারাপ মনে করা খুবই অন্যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন । আমীন।
প্রশ্নঃ 166
আস-সালামু আলাইকুম। আমি একজন চাকুরিজিবি। আলহামদুলিল্লাহ, প্রতি বছর যাকাত প্রদান করি। আমার প্রশ্ন হল আমার স্ত্রির যে গহনা আছে (সারে ৭ ভরির কম, আনুমানিক ৫ ভরি) তার যাকাত আমাকে বা তাকে দিতে হবে কিনা? উল্লেখ যে, আমার স্ত্রির নিজের কোন আয় নেই, এবং তার নামে বেঙ্ক এ কোন টাকাও নেই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। না, আপনার স্ত্রীর উপর যাকাত ফরজ নয়। কারণ শুধু স্বর্ণ থাকলে সাড়ে ৭ ভরির কমে যাকাত ফরজ হয় না। আর সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ থাকলে সেগুলো ব্যবহৃত গহনা হলেও যাকাত দিতে হবে। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. গহনার যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে গহনার যাকাত দিতে হবে কি না এই বিষয়ে আলেমদের মাঝে কিছুটা মতভেদ আছে আর সহীহ সুন্নাহর আলোকে গহনার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার মতটিই শক্তিশালী । নিচে গহনার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার দলীল উল্লেখ করা হলো: .১عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَمَعَهَا ابْنَةٌ لَهَا وَفِى يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَهَا ্র أَتُعْطِينَ زَكَاةَ هَذَا গ্ধ. قَالَتْ لاَ. قَالَ ্র أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللَّهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ গ্ধ. قَالَ فَخَلَعَتْهُمَا فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- وَقَالَتْ هُمَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ. অর্থ: আমর ইবনে শুয়াইব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট আসলেন, তার সাথে তার মেয়ে ছিল আর মেয়েটির হাতে ছিল স্বর্ণের দুটি মোটা চুরি। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে বললেন, তুমি কি এর জাকাত দাও? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাকে কি এটা আনন্দ দিবে যে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে (এর কারণে) আগুনের চুরি পরিয়ে দিবে। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, তখন সে ঐচুরি দুটি নবী সা. এর কাছে দিল এবং বলল, এদুটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৫। সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২৪৭৯। হাদীসটিকে কোন কোন মুহাদ্দিস হাসান বলেছেন আবার কোন কোন মুহাদ্দিস সহীহ বলেছেন। শাইখ আলবানী রহ . ও শাইখ শুয়াইব আরনাউত হাসান বলেছেন। দেখুন: সহীহ আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৬: সুনানে আবু দাউদ, তালীক শুয়াইব আর নাউত, হাদীস নং ১৫৬৩। মুহাম্মাদ ইবনে কাত্তান (৬২৮হি.) বলেছেন, সনদ সহীহ। বায়ানুল ওহমী ওয়াল ইহাম, ৫/৩৬৬ । আল্লামা ইবনে হাজার রহ. বলেছেন, সনদ শক্তিশালী। বুলুগুল মারম,১/২৫৫। .২عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَدَّادِ بْنِ الْهَادِ أَنَّهُ قَالَ دَخَلْنَا عَلَى عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَتْ دَخَلَ عَلَىَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَرَأَى فِى يَدِى فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ ্র مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ গ্ধ. فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ ্র أَتُؤَدِّينَ زَكَاتَهُنَّ গ্ধ. قُلْتُ لاَ أَوْ مَا شَاءَ اللَّهُ. قَالَ ্র هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ গ্ধ. অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ ইবনে হাদী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা আয়েশা রা. এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমার কাছে আসলেন। তখন তিনি আমার হাতে রুপার একটি আংটি দেখে বললেন, এটা কি? আয়েশা! আমি বললাম, আমি এটা বনিয়েছি আপনার সামনে সজ্জিত হওয়ার জন্য। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি তার যাকাত দাও? আমি বললাম না। তখন তিনি বললেন, তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৭। হাদীসটি সহীহ। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি ও শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, উমদাতুল কারী,১৩/৪৫৬; সহীহ আবু দাউদ,হাদীস নং ১৩৯৮। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী ও হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসটির সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী। দেখুন,আত-তালখিসুল হাবীর, ২/৩৯০; আলমুসতাদরক লিল হাকিম, হাদীস নং ১৪৩৭। উপরের হাদীস দুটি থেকে স্পষ্ট যে, গহনার যাকাত দেয়া ওয়াজিব। সুতরাং আলেমদের মাঝে মতভেদ থাকলেও আমাদের জন্য উচিৎ ও অধিকতর নিরাপদ হলো অলংকারের যাকাত আদায় করা। নতুবা এটা আমাদের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং আপনার স্ত্রীর জন্য আবশ্যক হল তার অলংকারের যাকাত দেয়া। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 167
আমার মায়ের বয়স ৬৩ বছর। তিনি একটি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ২/৩ মাসের মধ্যে তাঁর অপারেশন দরকার। যদিও তিনি এই মুহূর্তে মোটামুটি স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু অপারেশন না করালে ডাক্তারগণ আশংকা করছেন ২/৩ বছরের মধ্যে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় উনি চাচ্ছেন অপারেশনের আগে এমন কিছু ভালো কাজ করে যেতে যেন যদি অপারেশনে উনি না বাঁচেন তাহলে যেন আল্লাহর কাছে ভালো কিছু নিয়ে যেতে পারেন। আমরা বলেছি ভালো করে তাওবা-ইস্তিগফার করতে। প্রশ্ন ১- দয়া করে এমন কিছু কাজ বলুন যেন উনি মৃত্যুর আগে সেগুলো করে যেতে পারেন। আমাদের দেখামতে, উনি উনার জীবনে আল্লাহর বিধানমতো চলতে চেষ্টা করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ্। স্পেসিফিক্যালি, উনার একটি ফ্ল্যাট আছে, উনি ভাবছেন এমন একটি নিয়্যত করবেন কিনা যে যদি অপারেশনে ভালো হয়ে যান, তাহলে সেটি বিক্রি করে আরেকবার হাজ্জ্ব করতে যাবেন (উনি একবার হাজ্জ্ব করেছেন)। উল্লেখ্য, আমার বাবা আল্লাহর রহমতে আর্থিকভাবে সচ্ছল, সুতরাং উনি ফ্ল্যাট বিক্রি করলে আমাদের (সন্তানদের) সমস্যা হবেনা ইনশাআল্লাহ। প্রশ্ন ২- উনার এই চিন্তাটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন? এর চেয়ে ভালো কোন অপশন বলতে পারেন কি (যদি থাকে) যেটা উনি ফ্ল্যাট বিক্রি করা টাকা দিয়ে করতে পারেন? জাযাকাল্লাহু খাইরান কাসিরাহ।
20 Dec 2025
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার আম্মা যে কাজ করার ইচ্ছা করছেন তাকে আরবীতে নযর বলে আর বাংলায় বলে মান্নত। বিপদে আপদে নযর বা মানত না করে দান করাই উত্তম। মানত হলো শর্ত সাপেক্ষ দান: এটি হলে আমি এটি করব। আর দান বা সাদাকা হলো নিঃশর্ত দান। মানত না করে দান করাই উত্তম। মান্নত করতে রাসূল সা. নিষেধ করেছেন। ইবনে উমার রা. বলেন,
: نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ، عَنِ النَّذْرِ قَالَ إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ
অর্থ: নবী সা. মান্নত করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, মান্নত কোন কিছু কে বাধা দিতে পারে না। এদ্বারা শুধুমাত্র কৃপনের থেকে কিছু সম্পদ বের করা হয়। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬০৮। এমন অর্থের আরো হাদীস অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে। সুতরাং আপনার আম্মার উচিৎ মান্নত করা থেকে বিরত থাকা। তবে তিনি অপারেশনের পূর্বে ঐ ফ্লাটটি বা অন্য কোন সম্পদ দান করতে পারেন। সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে, সদকা অর্থাৎ নফল দান বিপদ আপদ থেকে মুক্ত রাখে। এবিষয়ে একটি হাদীস উল্লেখ করা হলো,
حُذَيْفَةَ قَالَ : كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ عُمَرَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، فَقَالَ أَيُّكُمْ يَحْفَظُ قَوْلَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْفِتْنَةِ قُلْتُ أَنَا كَمَا قَالَهُ قَالَ إِنَّكَ عَلَيْهِ ، أَوْ عَلَيْهَا - لَجَرِيءٌ قُلْتُ فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصَّوْمُ وَالصَّدَقَةُ وَالأَمْرُ وَالنَّهْيُ
অর্থ: সাহাবী হুযায়ফা রা. বলেন, আমরা উমার রা. এর কাছে বসেছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের কে ফিৎনার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস মুখস্ত রেখেছ? আমি বললাম, আমি, তিনি (রাসূলুল্লাহ সা.) যেভাবে বলেছেন ( সেভাবে মুখস্ত রেখেছি)। উমার রা. বললেন, তুমি তো খুব সাহসী মানুষ। আমি বললাম, (রাসূল সা. বলেছেন,) পরিবার, ধন সম্পদ, সন্তান সন্ততি এবং প্রতিবেশীদের নিয়ে মানুষ যে ফিতনা বা বিপদ আপদে পড়ে নামায, রোজা, দান সদকা, সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ তা দূর করে দেয়। সহীহ বুখারী, হাদীস নং হাদীস নং ৫২৫। এই বিষয়ে সহীহ ও যয়ীফ সনদে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীস থেকে স্পষ্ট যে, দান সদকা সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে মুক্ত রাখে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে মান্নত কাম্য নয় বরং দান সদকা করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। সর্বাবস্থায় মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। কুরআনের অনেক আয়াত ও বহু হাদীসে দান করার জন্য ব্যাপক উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 168
আস- সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ,আপনার কাছে আমার জানার বিষয় হল, আমরা যে কাপড়ের মোজা পরি তার মাসাহ করা বৈধ হবে কি? দলীল সহ জানালে উপকৃত হব।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে উত্তর খুজে পাবেন ইনশা আল্লাহ। মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের (চামড়ার মোজার উপর) মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীত।ফাতহুল বারী (খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫)। এব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবরে শুবা রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন:
وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ وَمَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ
অর্থঃ আর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং(২০৪)। মুসলিম, আস - সহীহ, হাদীস নং (৬৪৯)। বুখারী এবং মুসলিম
দ্বিতীয় প্রাকারের মোজা তথা জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর রাসূল সা. মাসাহ করেছেন কিনা তা সহীসূত্রে পাওয়া যায় না। ফলে এবিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহনযোগ্য মত হল, যদি মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই । (ইবনে কুদামা, আল মুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৬। )
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয। ইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেন। যেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন: وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ رَجَعَ إلَى قَوْلِهِمَا فِي آخِرِ عُمُرِهِ
তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই । আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ। বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেন।বাদাইউস সানাইয়ী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০। আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
سمعت صالح بن محمد الترمذي قال سمعت أبا مقاتل السمرقندي يقول دخلت على أبي حنيفة في مرضه الذي مات فيه فدعا بماء فتوضأ وعليه جوربان فمسح عليهما ثم قال فعلت اليوم شيئا لم أكن أفعله مسحت على الجوربين وهما غير منعلين .
অর্থঃ (ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:) আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলাম। তিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন । আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন। এরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনি। আমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম । তিরমিযী, আস-সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯, তাহকীক, আহমাদ শাকের। (প্রকাশক, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন)। মোটকথাঃ জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। সুতরাং আমাদের মুজা যদি মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে তার উপর মাসেহ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 169
আপনি এক টিভি প্রশ্ন উত্তরে বলেছেন বুকের উপর হাত রাখার কোন সহি দলিল নাই। স্বালাতে মুবাশশির বইটির লেখক আব্দুল হামীদ ফাইযী তার বইতে লিখছে মহানবী(সঃ)উভায় হাতকে বুকের উপর রাখতেন দলিল হিসাবে বলছেন আবুদাউদ ৭৫৯ নংইবনে খুযাইমাহ ৪৭৯ নংআহমাদ মুসনাদ, আবিশ শায়খ প্রমুখ। বুকের উপরেই হাত বাঁধা সুন্নাহতে প্রমাণিত। সিফাতু স্বালাতিন নাবী(সঃ) আলবানী।
20 Dec 2025
আপনাকে ধন্যবাদ। সহীহ হাদীসে সাহাবী ওয়ায়েল ইবনে হুজর রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর নামাযের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى অর্থাৎ (রাসূলুল্লাহ সা. ) তাঁর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখলেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২৩। সহীহ বুখারীতে এই বিষয়ে বর্ণিত আরেকটি হাদীস হলো,
عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُونَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلاَةِ. قَالَ أَبُو حَازِمٍ لاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ يَنْمِي ذَلِكَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
তাবেঈ আবু হাযিম সাহাবী সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মানুষদের আদেশ দেওয়া হতো সালাতের মধ্যে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখতে। আবু হাযিম বলেন, এই নির্দেশকে তিনি নাবীউল্লাহ সা. এর প্রতি সম্পৃক্ত করেছেন বলেই আমি জানি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং৭৪০। হাত রাখার ব্যাপারে সহীহ সূত্রে অনেক সাহাবী থেকে শুধু এতটুকুই জানা যায় অর্থাৎ বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা। হাত রাখার স্থান নিয়ে বর্ণিত হাদিসগুলো একটিও ইলমী গবেষণার আলোকে সহীহ নয়। ইমাম তিরমিযী রহ. এর বক্তব্য আমাদের এই বিষয়ে একটি সঠিক সমাধান দিতে পারে। অন্য একজন সাহাবী থেকে উপরের অনুরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করে তিনি বলেছেন,
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم والتابعين ومن بعدهم يرون ا يضع الرجل يمينه على شماله في الصلاة ورأى بعضهم أن يضعهما فوق السرة ورأى بعضهم أن يضعهما تحت السرة وكل ذلك واسع عندهم
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবী, তাবেয়ী এবং পরবর্তী আলেমদের নিকট আমল এর উপরই। তারা মনে করেন ব্যক্তি নামাযের মধ্যে তার ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখবে। তাদের কেউ কেউ মনে করেন নাভির উপর রাখবে আবার কেউ কেউ মনে করেন নাভীর নিচে রাখবে। তাদের নিকট উভয় পদ্ধতি গ্রহনের অবকাশ আছে। জামে তিরমিযী,২৫২ নং হাদীসের আলোচনা। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, এই বিষয়ে মাতামাতি না করে আমাদের উচিৎ যে কোন একটি পদ্ধতির উপর আমল করা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত সালাতের মধ্যে হাত বাঁধার বিধান, একটি হাদীসতাত্ত্বিক পর্যালোচনা বইটি।
প্রশ্নঃ 170
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, তারাবীহ সালাতের রাকাত নিয়ে প্রায়ই তর্ক বিতর্ক হচ্ছে কেউ বলছে আট রাকাত কেউ বলছে বিশ রাকাত আসলে কত রাকাত দলিলের বিশ্লেষণ সহ উত্তর দিলে আমরা উপকৃত হব।
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে শুকরান। তারাবীহ বা রামাদানের কিয়ামুল লাইল:
রামাদানে কিয়ামুল্লাইল আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য সময়ের থেকে অধিক তাকিদ প্রদান করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه অর্থ: যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে নামায পড়বে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৯
এজন্য রামাদানের কিয়ামুল্লাইলকে উম্মাতের আলিমগণ অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সুন্নাত মুআক্কাদা বলে গণ্য করেছেন। সাহাবীগণ রামাদানে তাঁর পিছনে জামাআতে কিয়ামুল্লাইল পালন করতে অতীব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি একাকী তা আদায় করতেন এবং সাহাবীদেরকে এভাবে আদায় করতে পরামর্শ দেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬১। পাশাপাশি তিনি জামাআতে রামাদানের কিয়াম আদায়ের ফযীলতে বলেন:
مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ
যে ব্যক্তি ইমামের কিয়ামুল্লাইল শেষ করা পর্যন্ত ইমামের সাথে কিয়ামুল্লাইল আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত কিয়াম পালনের সাওয়াব লেখা হবে। জামে তিরমিযী হাদীস নং ৮০৬। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেনে। সাহাবীগণ ও পরবর্তী প্রজন্মের মুসলিমগণ রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায়ের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। যেহেতু শেষ রাতে উঠে তা আদায় করা অনেকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, এজন্য অনেকেই সালাতুল ইশার পরেই মসজিদে বা বাড়িতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করে ঘুমাতেন। যারা কুরআনের ভাল কারী বা হাফিয ছিলেন না তারা অনেক সময় কোনো ভাল কারী বা হাফিযের পিছনে মসজিদে বা বাড়িতে ছোট জামাত করে তা আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে ও তাঁর ওফাতের পরে প্রায় কয়েক বৎসর এভাবেই চলে। খলীফা উমার (রা) লক্ষ্য করেন যে, এভাবে মদীনার মসজিদে নববীতে ছোট ছোট জামাতে বা পৃথকভাবে একাকী অনেকেই সালাতুল ইশার পরে কিয়ামুল্লাইল আদায় করছেন। তখন তিনি সাহাবী উবাই ইবন কাবকে বলেন, মানুষেরা দিবসে সিয়াম পালন করেন, কিন্তু অনেকেই ভাল হাফিয বা কারী নন; কাজেই আপনি তাদেরকে নিয়ে জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করেন। পাশাপাশি তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা) নামক অন্য সাহাবীকে মহিলাদের নিয়ে মসজিদের শেষ প্রান্তে পৃথক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করার নির্দেশ দেন। মহিলাদের জামাতের ইমামতি তামীম দারী (রা) নামক অন্য সাহাবীও করতেন। খলীফা উসমান ইবন আফ্ফনের (রা) সময়ে তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা)-এর ইমামতিতে পুরুষ ও মহিলাদের এক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায়ের ব্যবস্থা করেন। মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মুআত্তা (আব্দুল হাই লাখনবী, আত-তালীক আল-মুমাজ্জাদ-সহ) পৃ ১/৩৫৫; ইবনু আবী শাইবা; আল-মুসান্নাফ ২/২২২। অধিকাংশ মানুষ জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে থাকেন। তবে অনেক সাহাবী, তাবিয়ী ও যারা ভাল হাফিয ও আবিদ ছিলেন তারা সালাতুল ইশার পরে অথবা মধ্য রাতে ও শেষ রাতে একাকী রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন। সহীহ হাদীসে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. স্বয়ং সাহাবীদের কে নিয়ে কয়েক দিন রমজানের এই বিশেষ নামায তথা তারাবীহ নামায পড়েছেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১২। রাসূল সা. থেকে সহীহ সনদে ঐরাতগুলোর তারাবীহর রাকআত সংখা নিয়ে কোন হাদীস বর্ণিত নেই। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে ইবনে আব্বাস থেকে রাসূল সা. ২০ রাকআত পড়েছেন মর্মে যে হাদীসটি বর্ণিত আছে তা সর্বাক্যমতে দূর্বলু। কারন ঐ হাদিসের সনদে আবু শায়বা ইবরাহীম ইবনে উসমান নামে একজন রাবী আছেন যাকে ইমাম আহমাদ, বুখারী, আবু দাউদ সহ সকল মুহাদ্দিস দূর্বল কিংব মাতরুক (পরিত্যক্ত) বলেছেন। দেখুন, তাহযীবুত তাহযীব, ১/১২৫, তরজামা ২৫৭। সহীহ হাদীস প্রমাণিত যে, রাতের নামাযে রাসূলুল্লাহ সা. এর রাকআত সংখা বিভিন্ন রকম ছিল। নিচে সংক্ষেপে বর্নণা করা হল:
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلاَ فِي غَيْرِهَا عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ ، وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي
অর্থ: আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান হযরত আয়েশা রা.কে জিজ্ঞাসা করেন, রমাদান মাসে রাসূলুল্লাহ সা.এর নামায কেমন ছিল? তিনি বললেন, তিনি রামাদান এবং অন্য সময়ে ১১রাকআতের বেশী বাড়াতেন না। তিনি প্রথমে ৪ রাকআত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতায় বিস্মিত হবে। এরপর আবার ৪ রাকআত পড়তেন। তুমি তার সোন্দর্য ও দীর্ঘতায় বিস্মিত হবে। এরপর ৩ রাকআত পড়তেন। ...........
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৩। হযরত আয়েশা রা. থেকে অন্য বর্নণায় আছে:
عن عائشة قالت : كان النبي صلى الله عليه و سلم يصلي من الليل تسع ركعات
[ قال ] وفي الباب عن أبي هريرة وزيد بنخالد والفضل بن عباس
অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. রাত্রে ৯ রাকআত পড়তেন । জামে তিরমিযী, হাদীস নং৪৪৩। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাসান সহীহ আর শাইখ আলবানী বলেছেন, সহীহ। আয়েশা রা. থেকে আরেক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. কোন কারণে রাতের বেলায় নামায না পড়তে পারলে দিনের বেলায় ১২ রাকআত পড়তেন। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৫। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী ও শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। عن ابن عباس قال : كان النبي صلى الله عليه و سلم يصلي من الليل ثلاث عشر [ ركعة
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা, রাতে ১৩ রাকআত নামায পড়তেন। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪২। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী ও শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। বর্ণনা বিভিন্ন প্রকার হওয়ার কারণে ইমাম তিরমিযী বলেছেন,
وأكثر ما روي عن النبي صلى الله عليه و سلم في صلاة الليل ثلاث عشرة ركعة مع الوتر وأقل ما وصف من صلاته بالليل تسع ركعات
রাতের নামাযের ব্যাপারে নবী সা. থেকে যা বর্ণনা করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী হল বিতরসহ ১৩ রাকআত আর সবচেয়ে কম হল ৯ রাকআত। উপরের আলোচনা থেকে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে, রাতের নামায, রামাদান মাসে হোক কিংব অন্য সময় হোক রাসূলুল্লাহ সা. রাকআত সংখা নির্দিষ্ট করেননি। সাহবীদের থেকেও তারাবীর রাকআত সংখা নিয়ে বর্ণনা গুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
হযরত উমর রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তার সময়ে লোকেরা মসজিদে জামায়াতের সাথে বিশ রাকআত নামায আদায় করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ:
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ : كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فِى شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً - قَالَ - وَكَانُوا يَقْرَءُونَ بِالْمِئِينِ ، وَكَانُوا يَتَوَكَّئُونَ عَلَى عُصِيِّهِمْ فِى عَهْدِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ شِدَّةِ الْقِيَامِ
অর্থ: সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, লোকেরা উমার রা. আমলে রমজান মাসে বিশ রাকআত নামায পড়ত। তিনি বলেন, তারা একশ আয়াত পড়ত। দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হত তাই তারা উসমান রা. এর যুগে লাঠিতে ভর দিত। আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৪৮০১। হাদীসটি সহীহ। ইমাম নববী, বদরুদ্দীন আইনি, আল্লামা যাইলায়ী, ইবনে হুমাম সব প্রমূখ মুহাদ্দীস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, আল-মাজমু আলা শারহিল মুহাজ্জাব ৪/৩২; উমদাতুল কারী ৪/৪৮৫; তাবয়ি-নুল হাকাউক শারহে কানযুদ দাক-য়ীক ২/৩৪৯। তবে শায়খ আলবানী ও আব্দুর রহমান মুবারকপুরী এই দুই আহলে হাদীস আলেম বলেছেন হাদীসটি সহীহ নয়। তাদের কথা ইলমের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য নয়। এই হাদীসটির বক্তব্যকে সমর্থন করে অনেক গুলো দূর্বল ও সনদ বিচ্ছিনন হাদীস (যে হাদীসের সনদ থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়ে যায় তাকে সনদ বিচ্ছিন্ন বা মুনকাতি হাদীস বলে)। তার কিছু নিচে দেয় হল:
১। উক্ত সাহবী (সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে) দূর্বল সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كنا نقوم في زمان عمر بن الخطاب بعشرين ركعة والوتر
অর্থ: আমরা উমার রা. যুগে বিশ রাকআত নামাযপড়তাম ও বিতর পড়তাম। মারিফাতুস সুনান লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং১৩৬৫। ২। ইয়জিদ ইবনে রুমান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً
অর্থ: মানুষেরা উমার ইবনে খাত্তারব রা. এর সময় তেইশ রাকআত (বেতার সহ) নামায পড়ত। মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৩০৩। ইয়াজিদ ইবনে রুমান উমার রা. কে পাননি তাই হাদীসটির সনদ মুনকাতি। (উমদাতুল কারী ৪/৪৮৫)। ৩। আব্দুর রহমান আস সুলামী হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে,
دَعَا الْقُرَّاءَ فِى رَمَضَانَ ، فَأَمَرَ مِنْهُمْ رَجُلاً يُصَلِّى بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً. قَالَ : وَكَانَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ يُوتِرُ بِهِمْ
অর্থ: তিনি (আলী রা.) যারা কোরআন পড়তে পারে তাদেরকে ডাকলেন। তারপর তাদের একজনকে লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকআত নামায পড়াতে আদেশ দিলেন। আব্দুর রহমান আসসুলামী বলেন, আলী রাযি. তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়লেন। আসসুনানুল কুরবা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৪৮০৪। এই হাদীসটির সহীহ বা যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে কোন বায়হাক্কী রহ. কোন মন্তব্য করেন নি। এই কিতাবের ৪৮০৫ নং হাদীসে পৃথক সনদে আলী রা. থেকে বিশ রাকআত তারাবীহ পড়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে তিনি দূর্বল বলেছেন। এছাড়াও আরো অনেকগুলো সনদ দূর্বল হাদীস বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে। এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, হযরত উমার রা. এর যুগ থেকে বিশ রাকআত তারাবীহ সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত এবং অনেকগুলো দূর্বল হাদীস একে সমর্থন করছে, সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, বিশ রাকআত তারাবীহ সুন্নাহ সম্মত। সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে যে, উমার রা. উবাই ইবনে কাব এবং তামীম দারেমীকে আট রাকআত তারাবীহ পড়ানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন। যার আরবী জানেন তাদের জন্য হাদীসটির মূল পাঠ নিম্নরূপ:
عَنْ مَالِكٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ ، أَنَّهُ قَالَ : أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً قَالَ : وَقَدْ كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ ، حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ ، وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلاَّ فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ
মুয়ত্তা মালেক, হাদীস নং ৩০২। হাদীসটির সনদ সহীহ। সহীহ সনদে সাহাবী সাইব ইবরে ইয়াযীদ থেকে আরো একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদীসটি নিম্নরূপ :
عبد الرزاق عن داود بن قيس وغيره عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد أن عمر جمع الناس في رمضان على أبي بن كعب وعلى تميم الداري على إحدى وعشرين ركعة يقرؤون بالمئين وينصرفون عند فروع الفجر
অর্থ: উমার রা. মানুষদেরকে একত্র করে উবাই ইবনে কাব এবং তামীম দারেমীকে ২১ রাকআত পড়ানোর জন্য ইমাম বানিয়ে দিলেন। তারা শত শত আয়াত পাঠ করতেন এবং ফজরের সময় ফিরে আসতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৭৭৩০। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, সাহাবীগণও মনে করতেন না যে, তারবীহর নামায নির্দিষ্ট । তবে অধিকাংশ আলেম তারাবীহ নামায ২০ রাকআত আদায় করারা পক্ষে মত দিয়েছেন। নিচে চার মাজাহাব ও অনুসৃত আলেমগণের মতামত সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল:
১। ইমাম বায়হাক্কী রহ বলেছেন, দুই বর্ণনার (আট ও বিশ) মাঝে এভাবে সমন্বয় কারা যায় যে, প্রথমে তারা আট রাকআত পড়ত পরে বিশ রাকআত পড়ত। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৪৮০২। রাকআত সংখা নিয়ে চার মাযহাব ও অন্যান্য ইমামগণের বক্তব্য:
২। হানাফী মাজহাব:
يُسْتَحَبُّ أَنْ يَجْتَمِعَ النَّاسُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بَعْدَ الْعِشَاءِ فَيُصَلِّيَ بِهِمْ إمَامُهُمْ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ ، كُلُّ تَرْوِيحَةٍ بِتَسْلِيمَتَيْنِ ، وَيَجْلِسَ بَيْنَ كُلِّ تَرْوِيحَتَيْنِ مِقْدَارَ تَرْوِيحَةٍ ، ثُمَّ يُوتِرَ بِهِمْ
অর্থ: মুস্তাহাব হলো লোকেরা রমজান মাসে ইশার পরে একত্রিত হবে এং ইমাম তাদেরকে নিয়ে পাঁচটি বিরতি দিয়ে নামায পড়বেন আর প্রত্যেকটি বিরতি হবে দুই সালাম বিশিষ্ট (অর্থাৎ বিশ রাকআত)। প্রত্যেক দুই বিরতির মাঝে সমপরিমান সময় বসে থাকবেন । এরপর তিনি তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়বেন। হেদায়া ১/৭০। বিস্তারিত জানতে দেখুন: ফাতহুল কদীর ২/৪৪৬। ৩। মালেকী মাজহাব:
মালেকী মাজহাবের প্রবীণ আলেম আল্লামা বাজী রহ. তার রচিত মুয়ত্তার ব্যাখ্যা গ্রন্থে (১/২০৮) তারবীহ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
وروى نافع مولى ابن عمر : أنه أدرك الناس يصلون بتسع وثلاثين ركعة. يوترون بثلاث. وهو الذى اختاره مالك
অর্থ: মাওলা ইবনে উমার নাফে রহ. বর্ণনা করেন যে, তিনি মানুষদেরকে ৩৯ রাকআত নামায পড়তে দেখেছেন। তারা তিন রাকআত বিতর পড়ত । আর ইমাম মালেক রহ. এটাই পছন্দ করেছেন। দেখুন: আত-তারাবীহ, লেখক: আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালিম, পৃষ্ঠা ১৫৯-১৬০। ৪। শাফেয়ী মাজহাব:
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন,
فَأَمَّا قِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصَلاَةُ الْمُنْفَرِدِ أَحَبُّ إلى منه وَرَأَيْتهمْ بِالْمَدِينَةِ يَقُومُونَ بِتِسْعٍ وَثَلاَثِينَ وَأَحَبُّ إلى عِشْرُونَ لأَنَّهُ روى عن عُمَرَ وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكَّةَ وَيُوتِرُونَ بِثَلاَثٍ
অর্থ: রমজানের নামায একাকী পড়াই আমার নিকট উত্তম। আমি মদীনাবাসীদেরকে দেখেছি তারা ৩৯ রাকআত পড়ে । তবে বিশ রাকআত আমার নিকট অধিক প্রিয়। কেননা উমার রাযি. থেকে তা প্রামানিত। আর এমনই (২০ রাকআত) পড়ে মক্কাবাসীগন। আর তারা তিন রাকআত বিতর পড়ে। কিতাবুল উম্ম লিশ শাফেয়ী ১/১৪২। ৫। হাম্বলী মাজহাব:
প্রখ্যত হাম্বলী আলোম ইবনে কুদামা আল মুকাদ্দেসী (৬২০হি.) বলেন,
قَالَ ( وَقِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ عِشْرُونَ رَكْعَةً يَعْنِي صَلَاةَ التَّرَاوِيحِ وَهِيَ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ অর্থ: রমজানের মাসের নাময অর্থাৎ তারবীহ বিশ রাকআত। এবং তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল মুগনী ফি ফিকহী ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল ৩/৩৮৭। ৬। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার রহ. বলেন,
فَإِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنَّ أبي بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُومُ بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ وَيُوتِرُ بِثَلَاثِ . فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ
الْعُلَمَاءِ أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ
অর্থ: এটা সাব্যস্ত যে, উবাই ইবন কাব রাযি. মানুদেরকে নিয়ে রমজানে বিশ রাকআত তারাবী ও তিন রাকআত বিতর পড়িয়েছিলেন। অধিকাংশ আলেম এটাকেই সুন্নত মনে করেন। কেননা তিনি তার করেছিলেন মুহাজির ও আনসারদের উপস্থিতিতে আর তার কোন রকম আপত্তি করেন নি। মাজমউল ফাতাওয়া ২৩/ ১১২। উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, তারাবীহ নামায রাসূলুল্লাহ সা. থেকে সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। যারা বেশী কোরআন পড়তে পারেন তারা বাড়িতে একা একা উক্ত নামায পড়বে। আর তারাবীহর রাকআত সংখা বিশ হযরত উমার রা. থেকে সহীহ সনদে সাব্যস্ত। আর অধিকাংশ আলেমও বিশ রাকআতকে সুন্নাত মনে করেন। তবে শাইখ আলবানী সহ কোন কোন আলেম আট রাকআতের মত গ্রহন করেছেন। সুতরাং আমাদের মত সাধারণ মানুষদের কর্তব্য হল অধিকাংশ আলোম যে বিষয়টিকে সুন্নাত বলেছেন সেটা মেনে নেয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। তবে কেউ যদি এর কম বা বেশী পড়তে চান তাতে কোন অসুবিধা নেই। এমনটিই বলেছেন বিশেষজ্ঞ আলেমগণ। কেননা এটা সুন্নত নামায, রাকআত সংখা উদ্দেশ্য নয়। বিস্তারিত জানতে ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত আল-ফিকহুল আকবার দেখুন।
প্রশ্নঃ 171
ফিতরা কয় শ্রেণীর মানুষের মাঝে বন্টন করতে হবে?
20 Dec 2025
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। যাকাত যাদেরকে দেয়া যায় ফিতরাও তাদেরকে দেয়া যায়। আর কুরআনে তাদের পরিচিতি দেয়া হয়েছে এই আয়াতে: إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ অর্থ: সাদকা (যাকাত ) পাওয়ার অধিকারী হলো, দরিদ্র, মিসকিন, সরকারের পক্ষ থেকে যাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত লোক, অমুসলিমদেরকে ইসলামের দিকে আকষর্নের জন্য ( এটা সরকারের পক্ষ থেকে হতে হবে), গোলাম আযাদের জন্য, ঋনগ্রস্থ ব্যক্তির ঋন পরিষোধের জন্য, মুজাহিদ, মুসাফির। সূরা তাওবা, আয়াত ৬০। এই আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি যে, যাকাত উল্লেখিত আট শ্রেনীর মানুষকে দেয়া যায়। তেমনিভাবে সদকাতুল ফিতরও এই আট শ্রেণীর মানুষকে দেয়া যায়।বিস্তারিত জানতে দেখুন, আলফিক্হ আলা মাজাহিবিল আরবা ১/৪৮৪-৪৮৬।
প্রশ্নঃ 172
পণ্যের যাকাত দিতে গেলে কি মূলধন হিসাব করব নাকি ঐসময় দোকানে যত টাকার পণ্য আছে তার হিসাব করব?
20 Dec 2025
পণ্যের যাকাত আদায় করতে হবে মূলধন সহ। শুধু দোকানের পণ্যের যাকাত দিলেই যথেষ্ট হবে না বরং যাকাত আদায়যোগ্য সমস্ত সম্পদের যাকাত দিতে হবে।
প্রশ্নঃ 173
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ, আপানার কাছে আমার জানার বিষয় হল, জামাতে সালাত আদায় করার সময় মুক্তাদিরা কখন দাড়িয়ে কাতার সোজা করবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ইকামতের শুরুতেই মুসল্লিরা দাড়িয়ে যাবে এবং কাতার সোজা করবে। সাহাবীদের আমল এমনই ছিল। তাঁরা একামত শুরু হওয়ার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন। আর কাতার সোজা করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূলুল্লাহ সা. এই ব্যাপারে আদেশ দিয়েছেন। তবে ইমাম সাহেব মসজিদে আসার পূর্বে মুক্তাদীদের নামাযে দাড়াতে রাসূল (স.) নিষেধ করেছেন। এই কারনে অধিকাংশ আলেমের মতে ইমাম সাহেব না থাকা অবস্থায় মুক্তাদীরা ইকামতের সময় নামাযে দাড়াবে না। দলীল নিম্নরূপ:
.১عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ تُقَامُ لِرَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَيَأْخُذُ النَّاسُ مَصَافَّهُمْ قَبْلَ أَنْ يَقُومَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- مَقَامَهُ
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা. কে দেখা গেলে ইকামত শুরু করা হত। আর তিনি তাঁর জায়গায় পৌছানোর পূর্বেই লোকেরা তাদের কাতার গ্রহন করতেন (অর্থাৎ কাতার সোজা করে দাড়িয়ে থাকতেন)। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৬। উল্লেখ্য সহীহ মুসলিমের এই স্থানে এই বিষয়ে আরো কয়েকটি হাদীস বর্ণিত আছে যা উক্ত হাদীসের বক্তব্যকে সমর্থন করে। .২عن بن جريج قال أخبرني بن شهاب أن الناس كانوا ساعة يقول المؤذن الله أكبر الله أكبر يقيم الصلاة يقوم الناس إلى الصلاة فلا يأتي النبي صلى الله عليه و سلم مقامه حتى يعدل الصفوف ইবনে জুরাইজ বলেন, আমাকে ইবনে শিহাব বলেছেন যে, মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলে ইকামত শুরু করা মাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সা. নিজের জায়গায় পৌছাতে পৌছাতে কাতার সোজা হয়ে যেত। মুসান্নফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ১৯৪২। হাদীসটির সনদে সাহাবীর নাম নেই তাই হাদীসটি মাকতু। তবে উপরে বর্ণিত সহীহ হাদীস এই বক্তব্যকে সমর্থন করছে। উপরুক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা আমারা জানতে পারছি যে, স্বাভাবিক অবস্থায় ইকামতের শুরুতেই মুক্তাদীরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে এবং দ্রুত কাতার সোজা করবে। কাতার সোজা করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা. খুবই গুরুত্ব দিতেন। এই বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। নিচে একটি হাদীস উল্লেখ করা হল। النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ يَقُولُ : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ
অর্থ: সাহাবী নুমান বিন বাশীর বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতার সোজা করবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিবেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং৭০৭
তবে ইমাম সাহেব উপস্থিত না থাকলে অধিকাংশ আলেমের নিকট মুক্তাদীরা দাড়াবে না। ইমাম সাহেবকে দেখার পর দাড়াবে। এই বিষয়ে স্পষ্ট হাদীস আছে। عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ
আব্দুল্লাহ ইবনে আবি কাতাদাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (স.) বলেছেন, যখন নামাযের ইকামত দেয়া হবে তখন তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত দাড়াবে না। চুপ করে বসে থাকবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮। উপরের আলোচনা থেকে আমারা বুঝতে পারলাম যে, জামায়াতে সালাত আদায় করার সময় মুক্তাদীরা ইকামতের শুরুতেই দাড়াবে এবং কাতার সোজা করবে তবে ইমাম সাহেব উপস্থিত না থাকলে ইমাম সাহেব আসার পর দাঁড়াবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 174
একজন মানুষ বিদেশে কায়িক প্ররিশ্রম করে । তাই সে দেশে একজন রোজাদারের সেহরী ও ইফতার দিয়ে মনে করছে তার রোজার হক হয়ে যাচ্ছে । এটা কি তার রোজার কাফফারা?
20 Dec 2025
প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। না, এর দ্বারা তার রোজার কাফফারা হচ্ছে না। এটা তার ভুল ও বিপজ্জনক চিন্তা। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ অর্থ: রামাদান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে......তোমাদের মধ্যে যে রামাদান মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫। সুতরাং প্রত্যেক সুস্থ মুসলিমের উপর রামাদানের রোজা রাখা ফরজ । অসুস্থতার জন্য রোজা রাখতে না পারলে সুস্থ হওয়ার পর তা আদায় করতে হবে। আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেই কেবল ফিদিয়া দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, ফিদিয়া সেহরী ইফতার দিয়ে নয় বরং একজন মিসকিনকে দুবেলা খাবার বা খাবারের টাকা দিয়ে আদায় করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে তাহলে তার জন্য অন্য দিনগুলো, (অর্থাৎ সে পরে সুস্থ হলে কিংবা সফর থেকে ফিরে আসলে যে রোজাগুলো রাখতে পারে নাই সেগুলো রাখবে)। আর যারা রোজা রাখতে গিয়ে কষ্টের শিকার হবে তাদের উপর আবশ্যক হল ফিদিয়া একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো। সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৪। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, কষ্টের শিকার ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রচন্ড বৃদ্ধ মানুষ ( যারা রোজা রাখতে পারে না)। তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৪। আধুনিক ফিকহী কিতাব আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু এর লেখক ড. ওহুবাহ আয যুহায়লি বলেন, وتجب الفدية أيضاً بالاتفاق على المريض الذي لا يرجى برؤه، لعدم وجوب الصوم عليه،
অর্থ: সর্বাক্যমতে ফিদিয়া ওয়াজিব হবে এমন অসুস্থ ব্যক্তির উপর যার সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে আশা করা যায় না। কেননা তার উপর তখন রোজা ওয়াজিব থাকে না। আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু, ২/৬০৫। আরো দেখুন: আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবা ১/৪৪৫। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, প্রশ্নেল্লোখিত ব্যক্তির জন্য এভাবে রোজা না রেখে কাউকে সেহরী ইফতার করানো শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নেই। সুস্থ ব্যক্তিকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। সুস্থ হওয়ার আশা নেই এমন অসুস্থ ব্যক্তিই কেবল ফিদিয়া দিতে পারবে তথা তার উপর ফিদিয়া দেয়া ওয়াজিব। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 175
কীভাবে রোজার নিয়ত করবো
20 Dec 2025
প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। নিয়্যাত হলো হৃদয়ের সংকল্প। ইবনে হাজার রহ. ফতাহুল বারীতে বলেছেন, নিয়্যাতের জায়গা হল অন্তর। অন্যান্য আলেমদের বক্তব্যসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন ফাতহুল বারী, হাদীস নং ১। যে দিন রোজা রাখবেন তার আগের রাত্রে মনে মনে সংকল্প করবেন যে, আমি আজ রোজা রাখব। হাদীস শরীফে আছে, উম্মুল মূমিনীন হাফসা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,
قال من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له
অর্থ: যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রোজার নিয়্যাত না করবে তার রোজা হবে না। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৭৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৭০০। হাদীসটি সহীহ। আলবানী রহ. সহীহ বলেছেন। তবে ফকীহদের কেউ কেউ বলেছেন, সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্বে নিয়্যাত করলেও জায়েজ হবে। অবশ্য নফল রোজার নিয়্যাত সর্বাক্যমতে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত করা যায়। দেখুন জামে তিরমিযী ৭৩০ নং হাদীসের আলোচনা।
প্রশ্নঃ 176
তারাবীহ সালাতের রাকাত সংখ্যা কত?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে শুকরান। তারাবীহ বা রামাদানের কিয়ামুল লাইল:
রামাদানে কিয়ামুল্লাইল আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য সময়ের থেকে অধিক তাকিদ প্রদান করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه অর্থ: যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে নামায পড়বে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০০৯
এজন্য রামাদানের কিয়ামুল্লাইলকে উম্মাতের আলিমগণ অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সুন্নাত মুআক্কাদা বলে গণ্য করেছেন। সাহাবীগণ রামাদানে তাঁর পিছনে জামাআতে কিয়ামুল্লাইল পালন করতে অতীব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি একাকী তা আদায় করতেন এবং সাহাবীদেরকে এভাবে আদায় করতে পরামর্শ দেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬১। পাশাপাশি তিনি জামাআতে রামাদানের কিয়াম আদায়ের ফযীলতে বলেন:
مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ
যে ব্যক্তি ইমামের কিয়ামুল্লাইল শেষ করা পর্যন্ত ইমামের সাথে কিয়ামুল্লাইল আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত কিয়াম পালনের সাওয়াব লেখা হবে। জামে তিরমিযী হাদীস নং ৮০৬। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেনে। সাহাবীগণ ও পরবর্তী প্রজন্মের মুসলিমগণ রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায়ের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। যেহেতু শেষ রাতে উঠে তা আদায় করা অনেকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, এজন্য অনেকেই সালাতুল ইশার পরেই মসজিদে বা বাড়িতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করে ঘুমাতেন। যারা কুরআনের ভাল কারী বা হাফিয ছিলেন না তারা অনেক সময় কোনো ভাল কারী বা হাফিযের পিছনে মসজিদে বা বাড়িতে ছোট জামাত করে তা আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে ও তাঁর ওফাতের পরে প্রায় কয়েক বৎসর এভাবেই চলে। খলীফা উমার (রা) লক্ষ্য করেন যে, এভাবে মদীনার মসজিদে নববীতে ছোট ছোট জামাতে বা পৃথকভাবে একাকী অনেকেই সালাতুল ইশার পরে কিয়ামুল্লাইল আদায় করছেন। তখন তিনি সাহাবী উবাই ইবন কাবকে বলেন, মানুষেরা দিবসে সিয়াম পালন করেন, কিন্তু অনেকেই ভাল হাফিয বা কারী নন; কাজেই আপনি তাদেরকে নিয়ে জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করেন। পাশাপাশি তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা) নামক অন্য সাহাবীকে মহিলাদের নিয়ে মসজিদের শেষ প্রান্তে পৃথক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করার নির্দেশ দেন। মহিলাদের জামাতের ইমামতি তামীম দারী (রা) নামক অন্য সাহাবীও করতেন। খলীফা উসমান ইবন আফ্ফনের (রা) সময়ে তিনি সুলাইমান ইবন আবী হাসমাহ (রা)-এর ইমামতিতে পুরুষ ও মহিলাদের এক জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায়ের ব্যবস্থা করেন। মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মুআত্তা (আব্দুল হাই লাখনবী, আত-তালীক আল-মুমাজ্জাদ-সহ) পৃ ১/৩৫৫; ইবনু আবী শাইবা; আল-মুসান্নাফ ২/২২২। অধিকাংশ মানুষ জামাতে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে থাকেন। তবে অনেক সাহাবী, তাবিয়ী ও যারা ভাল হাফিয ও আবিদ ছিলেন তারা সালাতুল ইশার পরে অথবা মধ্য রাতে ও শেষ রাতে একাকী রামাদানের কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন। সহীহ হাদীসে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. স্বয়ং সাহাবীদের কে নিয়ে কয়েক দিন রমজানের এই বিশেষ নামায তথা তারাবীহ নামায পড়েছেন। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১২। রাসূল সা. থেকে সহীহ সনদে ঐরাতগুলোর তারাবীহর রাকআত সংখা নিয়ে কোন হাদীস বর্ণিত নেই। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে ইবনে আব্বাস থেকে রাসূল সা. ২০ রাকআত পড়েছেন মর্মে যে হাদীসটি বর্ণিত আছে তা সর্বাক্যমতে দূর্বলু। কারন ঐ হাদিসের সনদে আবু শায়বা ইবরাহীম ইবনে উসমান নামে একজন রাবী আছেন যাকে ইমাম আহমাদ, বুখারী, আবু দাউদ সহ সকল মুহাদ্দিস দূর্বল কিংব মাতরুক (পরিত্যক্ত) বলেছেন। দেখুন, তাহযীবুত তাহযীব, ১/১২৫, তরজামা ২৫৭। সহীহ হাদীস প্রমাণিত যে, রাতের নামাযে রাসূলুল্লাহ সা. এর রাকআত সংখা বিভিন্ন রকম ছিল। নিচে সংক্ষেপে বর্নণা করা হল:
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلاَ فِي غَيْرِهَا عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ ، وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي
অর্থ: আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান হযরত আয়েশা রা.কে জিজ্ঞাসা করেন, রমাদান মাসে রাসূলুল্লাহ সা.এর নামায কেমন ছিল? তিনি বললেন, তিনি রামাদান এবং অন্য সময়ে ১১রাকআতের বেশী বাড়াতেন না। তিনি প্রথমে ৪ রাকআত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতায় বিস্মিত হবে। এরপর আবার ৪ রাকআত পড়তেন। তুমি তার সোন্দর্য ও দীর্ঘতায় বিস্মিত হবে। এরপর ৩ রাকআত পড়তেন। ...........
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৩। হযরত আয়েশা রা. থেকে অন্য বর্নণায় আছে:
عن عائشة قالت : كان النبي صلى الله عليه و سلم يصلي من الليل تسع ركعات
[ قال ] وفي الباب عن أبي هريرة وزيد بنخالد والفضل بن عباس
অর্থ: হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. রাত্রে ৯ রাকআত পড়তেন । জামে তিরমিযী, হাদীস নং৪৪৩। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাসান সহীহ আর শাইখ আলবানী বলেছেন, সহীহ। আয়েশা রা. থেকে আরেক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. কোন কারণে রাতের বেলায় নামায না পড়তে পারলে দিনের বেলায় ১২ রাকআত পড়তেন। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪৫। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী ও শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। عن ابن عباس قال : كان النبي صلى الله عليه و سلم يصلي من الليل ثلاث عشر [ ركعة
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা, রাতে ১৩ রাকআত নামায পড়তেন। জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৪২। হাদীসটি সহীহ। ইমাম তিরমিযী ও শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। বর্ণনা বিভিন্ন প্রকার হওয়ার কারণে ইমাম তিরমিযী বলেছেন,
وأكثر ما روي عن النبي صلى الله عليه و سلم في صلاة الليل ثلاث عشرة ركعة مع الوتر وأقل ما وصف من صلاته بالليل تسع ركعات
রাতের নামাযের ব্যাপারে নবী সা. থেকে যা বর্ণনা করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী হল বিতরসহ ১৩ রাকআত আর সবচেয়ে কম হল ৯ রাকআত। উপরের আলোচনা থেকে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে, রাতের নামায, রামাদান মাসে হোক কিংব অন্য সময় হোক রাসূলুল্লাহ সা. রাকআত সংখা নির্দিষ্ট করেননি। সাহবীদের থেকেও তারাবীর রাকআত সংখা নিয়ে বর্ণনা গুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
হযরত উমর রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তার সময়ে লোকেরা মসজিদে জামায়াতের সাথে বিশ রাকআত নামায আদায় করেছেন। হাদীসটি নিম্নরুপ:
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ : كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فِى شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً - قَالَ - وَكَانُوا يَقْرَءُونَ بِالْمِئِينِ ، وَكَانُوا يَتَوَكَّئُونَ عَلَى عُصِيِّهِمْ فِى عَهْدِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ شِدَّةِ الْقِيَامِ
অর্থ: সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, লোকেরা উমার রা. আমলে রমজান মাসে বিশ রাকআত নামায পড়ত। তিনি বলেন, তারা একশ আয়াত পড়ত। দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হত তাই তারা উসমান রা. এর যুগে লাঠিতে ভর দিত। আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৪৮০১। হাদীসটি সহীহ। ইমাম নববী, বদরুদ্দীন আইনি, আল্লামা যাইলায়ী, ইবনে হুমাম সব প্রমূখ মুহাদ্দীস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, আল-মাজমু আলা শারহিল মুহাজ্জাব ৪/৩২; উমদাতুল কারী ৪/৪৮৫; তাবয়ি-নুল হাকাউক শারহে কানযুদ দাক-য়ীক ২/৩৪৯। তবে শায়খ আলবানী ও আব্দুর রহমান মুবারকপুরী এই দুই আহলে হাদীস আলেম বলেছেন হাদীসটি সহীহ নয়। তাদের কথা ইলমের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য নয়। এই হাদীসটির বক্তব্যকে সমর্থন করে অনেক গুলো দূর্বল ও সনদ বিচ্ছিনন হাদীস (যে হাদীসের সনদ থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়ে যায় তাকে সনদ বিচ্ছিন্ন বা মুনকাতি হাদীস বলে)। তার কিছু নিচে দেয় হল:
১। উক্ত সাহবী (সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে) দূর্বল সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كنا نقوم في زمان عمر بن الخطاب بعشرين ركعة والوتر
অর্থ: আমরা উমার রা. যুগে বিশ রাকআত নামাযপড়তাম ও বিতর পড়তাম। মারিফাতুস সুনান লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং১৩৬৫। ২। ইয়জিদ ইবনে রুমান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً
অর্থ: মানুষেরা উমার ইবনে খাত্তারব রা. এর সময় তেইশ রাকআত (বেতার সহ) নামায পড়ত। মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৩০৩। ইয়াজিদ ইবনে রুমান উমার রা. কে পাননি তাই হাদীসটির সনদ মুনকাতি। (উমদাতুল কারী ৪/৪৮৫)। ৩। আব্দুর রহমান আস সুলামী হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে,
دَعَا الْقُرَّاءَ فِى رَمَضَانَ ، فَأَمَرَ مِنْهُمْ رَجُلاً يُصَلِّى بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً. قَالَ : وَكَانَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ يُوتِرُ بِهِمْ
অর্থ: তিনি (আলী রা.) যারা কোরআন পড়তে পারে তাদেরকে ডাকলেন। তারপর তাদের একজনকে লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকআত নামায পড়াতে আদেশ দিলেন। আব্দুর রহমান আসসুলামী বলেন, আলী রাযি. তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়লেন। আসসুনানুল কুরবা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৪৮০৪। এই হাদীসটির সহীহ বা যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে কোন বায়হাক্কী রহ. কোন মন্তব্য করেন নি। এই কিতাবের ৪৮০৫ নং হাদীসে পৃথক সনদে আলী রা. থেকে বিশ রাকআত তারাবীহ পড়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে তিনি দূর্বল বলেছেন। এছাড়াও আরো অনেকগুলো সনদ দূর্বল হাদীস বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে। এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, হযরত উমার রা. এর যুগ থেকে বিশ রাকআত তারাবীহ সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত এবং অনেকগুলো দূর্বল হাদীস একে সমর্থন করছে, সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, বিশ রাকআত তারাবীহ সুন্নাহ সম্মত। সাইব ইবনে ইয়াযীদ থেকে অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে যে, উমার রা. উবাই ইবনে কাব এবং তামীম দারেমীকে আট রাকআত তারাবীহ পড়ানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন। যার আরবী জানেন তাদের জন্য হাদীসটির মূল পাঠ নিম্নরূপ:
عَنْ مَالِكٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ ، أَنَّهُ قَالَ : أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً قَالَ : وَقَدْ كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ ، حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ ، وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلاَّ فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ
মুয়ত্তা মালেক, হাদীস নং ৩০২। হাদীসটির সনদ সহীহ। সহীহ সনদে সাহাবী সাইব ইবরে ইয়াযীদ থেকে আরো একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদীসটি নিম্নরূপ :
عبد الرزاق عن داود بن قيس وغيره عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد أن عمر جمع الناس في رمضان على أبي بن كعب وعلى تميم الداري على إحدى وعشرين ركعة يقرؤون بالمئين وينصرفون عند فروع الفجر
অর্থ: উমার রা. মানুষদেরকে একত্র করে উবাই ইবনে কাব এবং তামীম দারেমীকে ২১ রাকআত পড়ানোর জন্য ইমাম বানিয়ে দিলেন। তারা শত শত আয়াত পাঠ করতেন এবং ফজরের সময় ফিরে আসতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৭৭৩০। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, সাহাবীগণও মনে করতেন না যে, তারবীহর নামায নির্দিষ্ট । তবে অধিকাংশ আলেম তারাবীহ নামায ২০ রাকআত আদায় করারা পক্ষে মত দিয়েছেন। নিচে চার মাজাহাব ও অনুসৃত আলেমগণের মতামত সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল:
১। ইমাম বায়হাক্কী রহ বলেছেন, দুই বর্ণনার (আট ও বিশ) মাঝে এভাবে সমন্বয় কারা যায় যে, প্রথমে তারা আট রাকআত পড়ত পরে বিশ রাকআত পড়ত। আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্কী, হাদীস নং ৪৮০২। রাকআত সংখা নিয়ে চার মাযহাব ও অন্যান্য ইমামগণের বক্তব্য:
২। হানাফী মাজহাব:
يُسْتَحَبُّ أَنْ يَجْتَمِعَ النَّاسُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بَعْدَ الْعِشَاءِ فَيُصَلِّيَ بِهِمْ إمَامُهُمْ خَمْسَ تَرْوِيحَاتٍ ، كُلُّ تَرْوِيحَةٍ بِتَسْلِيمَتَيْنِ ، وَيَجْلِسَ بَيْنَ كُلِّ تَرْوِيحَتَيْنِ مِقْدَارَ تَرْوِيحَةٍ ، ثُمَّ يُوتِرَ بِهِمْ
অর্থ: মুস্তাহাব হলো লোকেরা রমজান মাসে ইশার পরে একত্রিত হবে এং ইমাম তাদেরকে নিয়ে পাঁচটি বিরতি দিয়ে নামায পড়বেন আর প্রত্যেকটি বিরতি হবে দুই সালাম বিশিষ্ট (অর্থাৎ বিশ রাকআত)। প্রত্যেক দুই বিরতির মাঝে সমপরিমান সময় বসে থাকবেন । এরপর তিনি তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়বেন। হেদায়া ১/৭০। বিস্তারিত জানতে দেখুন: ফাতহুল কদীর ২/৪৪৬। ৩। মালেকী মাজহাব:
মালেকী মাজহাবের প্রবীণ আলেম আল্লামা বাজী রহ. তার রচিত মুয়ত্তার ব্যাখ্যা গ্রন্থে (১/২০৮) তারবীহ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
وروى نافع مولى ابن عمر : أنه أدرك الناس يصلون بتسع وثلاثين ركعة. يوترون بثلاث. وهو الذى اختاره مالك
অর্থ: মাওলা ইবনে উমার নাফে রহ. বর্ণনা করেন যে, তিনি মানুষদেরকে ৩৯ রাকআত নামায পড়তে দেখেছেন। তারা তিন রাকআত বিতর পড়ত । আর ইমাম মালেক রহ. এটাই পছন্দ করেছেন। দেখুন: আত-তারাবীহ, লেখক: আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালিম, পৃষ্ঠা ১৫৯-১৬০। ৪। শাফেয়ী মাজহাব:
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন,
فَأَمَّا قِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصَلاَةُ الْمُنْفَرِدِ أَحَبُّ إلى منه وَرَأَيْتهمْ بِالْمَدِينَةِ يَقُومُونَ بِتِسْعٍ وَثَلاَثِينَ وَأَحَبُّ إلى عِشْرُونَ لأَنَّهُ روى عن عُمَرَ وَكَذَلِكَ يَقُومُونَ بِمَكَّةَ وَيُوتِرُونَ بِثَلاَثٍ
অর্থ: রমজানের নামায একাকী পড়াই আমার নিকট উত্তম। আমি মদীনাবাসীদেরকে দেখেছি তারা ৩৯ রাকআত পড়ে । তবে বিশ রাকআত আমার নিকট অধিক প্রিয়। কেননা উমার রাযি. থেকে তা প্রামানিত। আর এমনই (২০ রাকআত) পড়ে মক্কাবাসীগন। আর তারা তিন রাকআত বিতর পড়ে। কিতাবুল উম্ম লিশ শাফেয়ী ১/১৪২। ৫। হাম্বলী মাজহাব:
প্রখ্যত হাম্বলী আলোম ইবনে কুদামা আল মুকাদ্দেসী (৬২০হি.) বলেন,
قَالَ ( وَقِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ عِشْرُونَ رَكْعَةً يَعْنِي صَلَاةَ التَّرَاوِيحِ وَهِيَ سُنَّةٌ مُؤَكَّدَةٌ অর্থ: রমজানের মাসের নাময অর্থাৎ তারবীহ বিশ রাকআত। এবং তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল মুগনী ফি ফিকহী ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল ৩/৩৮৭। ৬। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার রহ. বলেন,
فَإِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنَّ أبي بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُومُ بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ وَيُوتِرُ بِثَلَاثِ . فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ
الْعُلَمَاءِ أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ
অর্থ: এটা সাব্যস্ত যে, উবাই ইবন কাব রাযি. মানুদেরকে নিয়ে রমজানে বিশ রাকআত তারাবী ও তিন রাকআত বিতর পড়িয়েছিলেন। অধিকাংশ আলেম এটাকেই সুন্নত মনে করেন। কেননা তিনি তার করেছিলেন মুহাজির ও আনসারদের উপস্থিতিতে আর তার কোন রকম আপত্তি করেন নি। মাজমউল ফাতাওয়া ২৩/ ১১২। উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, তারাবীহ নামায রাসূলুল্লাহ সা. থেকে সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। যারা বেশী কোরআন পড়তে পারেন তারা বাড়িতে একা একা উক্ত নামায পড়বে। আর তারাবীহর রাকআত সংখা বিশ হযরত উমার রা. থেকে সহীহ সনদে সাব্যস্ত। আর অধিকাংশ আলেমও বিশ রাকআতকে সুন্নাত মনে করেন। তবে শাইখ আলবানী সহ কোন কোন আলেম আট রাকআতের মত গ্রহন করেছেন। সুতরাং আমাদের মত সাধারণ মানুষদের কর্তব্য হল অধিকাংশ আলোম যে বিষয়টিকে সুন্নাত বলেছেন সেটা মেনে নেয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। তবে কেউ যদি এর কম বা বেশী পড়তে চান তাতে কোন অসুবিধা নেই। এমনটিই বলেছেন বিশেষজ্ঞ আলেমগণ। কেননা এটা সুন্নত নামায, রাকআত সংখা উদ্দেশ্য নয়। বিস্তারিত জানতে ড.খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত আল-ফিকহুল আকবার দেখুন।
প্রশ্নঃ 177
1) Bank er ATM BOOTH e Service Support Engineer hisebe job kora jabe ki? 2) Government job ki halal hobe?
20 Dec 2025
জ্বী হা, ব্যাংকের এ টি এম বুথে সেবা বা সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করা যাবে। তাতে সমস্যা নেই। পাশাপাশি সরকারি চাকরিও করা যাবে যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে কাজটি হারাম না হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ 178
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, হজ্জের গুরুত্ব, ফযীলত, করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়গুলি নিম্নে সংক্ষেপে দেওয়া হল। হজ্জের গুরুত্বঃ হজ্জ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদির মত হজ্জও একটি ফরয আঈন ইবাদত। কেউ হজ্জের আবশ্যকীয়তা বা ফরয হওয়া অস্বীকার করলে তাকে অমুসলিম বলে গণ্য করা হবে। আর যদি কোন সক্ষম ব্যক্তি হজ্জ ফরয মানা সত্বেও তা আদায় না করেন তাহলে তিনি কঠিন পাপের মধ্যে নিপতিত হবেন এবং ঈমান নষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছে। আল্লাহ বলেছেন:
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلا
বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির উপর আল্লাহর জন্য হজ্জ আদায় করা ফরয। (সূরা আলে ইমরান,আয়াত ৯৭)
নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে মক্কা শরীফে যাওয়ার খরচ বহনের ক্ষমতা হলেই মুসলিম পুরষ ও মহিলার জন্য জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা ফরয হয়ে যায়। এমনকি কারো যদি নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি থাকে, যে জমির ফসল না হলেও তার বৎসর চলে যায়, অথবা অতিরিক্ত বাড়ি থাকে যে বাড়ি তার ব্যবহার করতে হয় না, বরং ভাড়া দেওয়া, অথচ যে বাড়ির ভাড়া না হলেও তার বছর চলে যায় তবে সেই জমি বা বাড়ি বিক্রয় করে হজ্জে যাওয়া ফরয হবে বলে অনেক ফকীহ সুস্পষ্টত উল্লেখ করেছেন। আর হজ্জ ফরয হওয়ার পরেও হজ্জ না করে মৃত্যুবরণ করাকে কোনো কোনো হাদীসে ইহূদী-খৃস্টান হয়ে মরা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন:
إِنَّ عَبْداً صَحَّحْتُ لَهُ جِسْمَهُ وَوَسَّعْتُ عَلَيْهِ فِيْ الْمَعِيْشَةِ تَمْضِيْ عَلَيْهِ خَمْسَةُ أَعْوَامٍ لاَ يَفِدُ إِلَيَّ لَمَحْرُوْمٌ
যে বান্দার শরীর আমি সুস্থ রেখেছি এবং তার জীবনযাত্রায় সচ্ছলতা দান করেছি, এভাবে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও সে আমার ঘরে আগমন করল না সে সুনিশ্চিত বঞ্চিত ও হতভাগা। (সহী ইবনে হিব্বান, তাহকীক, শুয়াইব আরনাউত, হাদীস নং ৩৭০৩) হাদীসটিকে শাইখ আলবানী সহী বলেছেন,সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ১১৬৬। যখন যে বয়সেই তা ফরয হোক তা যতশীঘ্র সম্ভব আদায় করতে হবে। প্রকৃত সত্য কথা হলো, হজ্জ যৌবনকাল ও শক্তির সময়ের ইবাদত। কোনো বৃদ্ধ মানুষ সঠিকভাবে হজ্জ আদায় করতে পারেন না। সম্পূর্ণ বৈরি আবহাওয়ায়, লক্ষলক্ষ মানুষের ভিড়ের মধ্যে মাইলের পর মাইল হাঁটা, দৌঁড়ানো, কাঁকর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি ইবাদতের সুন্নাত পর্যায় রক্ষা করা তো দূরের কথা ওয়াজিব পর্যায় ঠিক রাখাও বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য কষ্টকর। এজন্য যুবক বয়সের হজ্জই প্রকৃত ও পরিপূর্ণ হজ্জ হতে পারে। হজ্জের ফযীলতঃ কুরআন ও হাদীসে অগণিত স্থানে বারংবার হজ্জের গুরত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নিবেদিতভাবে, সর্বপ্রকার পাপ, অন্যায় ও অশ্লীলতা মুক্ত হয়ে হজ্জ আদায় করলো, সে নবজাতক শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরল। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৫২১)
الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلا الْجَنَّةُ
একবার উমরা আদায়ের পরে দ্বিতীয়বার যখন উমরা আদায় করা হয়, তখন দুই উমরার মধ্যবর্তী গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন। আর পুণ্যময়-পরোপকারময় হজ্জের একমাত্র পুরস্কার হলো জান্নাত। (বুখারী,হাদীস নং ১৭৭৩,মুসলীম হাদীস নং ৩৩৫৫)
تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ
তোমরা বারবার হজ্জ ও উমরা আদায় কর, কারণ কর্মকারের ও স্বর্ণকারের আগুন যেমন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা মুছে ফেলে তেমনিভাবে এ দুই ইবাদত দারিদ্র্য ও পাপ মুছে ফেলে। আর পুণ্যময়-পরোপকারময় হজ্জের একমাত্র পুরস্কার হলো জান্নাত। হাদীসটি সহীহ (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৮১০)
হজ্জের মাধ্যমে গোনাহ মাফ ছাড়াও রয়েছে অগণিত পুরস্কার ও সাওয়াব। হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, হাজী যখন বাড়ি থেকে বের হন তখন থেকে তার প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ তাকে অগণিত নেকী প্রদান করেন, তার ব্যয়িত প্রতিটি টাকার বহুগুণ এমনকি ৭০০ গুণ সাওয়াব প্রদান করেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ হাজীর দুআ ও ইসতিগফার কবুল করেন এবং হাজী সাহেব যাদের জন্য দুআ করেন তাদেরকেও আল্লাহ ক্ষমা করেন। হজ্জের সবচেয়ে বরকতময় দিন হলো আরাফাতের দিন। বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, আরাফাতের দিনে আল্লাহ যত মানুষকে ক্ষমা করেন অন্য কোনো দিনে অত মানুষকে ক্ষমা করেন না। আরাফাতের দিনে সমবেত হাজীদের জীবনের পাপগুলি তিনি ক্ষমা করেন। হাদীসটিকে শাইখ আলবানী হাসান লিগাইরিহী বলেছেন। (সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদীস নং ১১১২)
এছাড়াও হজ্জের মাধ্যমে ব্যক্তির মানসিকতা প্রশস্ততা লাভ করে, বৃহৎ মানব গোষ্ঠীর সকল জাতি ও বর্ণের পাশাপাশি সমাবেশ ঘটে। পরস্পরে বর্ণগত, ভাষাগত, দেশগত, জাতিগত সকল হিংসা, বিদ্বেষ ও রেষারেষি হজ্জপালনকারীর হৃদয় থেকে মুছে যায়। সে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে বিশ্ব কত বড় আর সকল মুসলিম কত আপন। মুসলিম জাতির মধ্যে সাম্য, ঐক্য ও সহযোগিতার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। হজ্জে করণীয় এবং বর্জণীয় বিষয় সমূহঃ নির্ধারিত স্থান থেকে ইহরাম করে মক্কায় যেয়ে জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে মক্কার প্রান্তরে আরাফাত নামক স্থানে অবস্থান করা ও এর আগে ও পরে কাবাঘর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা, মিনায় অবস্থান করা, মিনার জামারাতগুলিতে কাঁকর নিক্ষেপ করা, হজ্জের কুরবানী বা হাদী জবাই করা, মাথা মুন্ডন করা, এ সকল কর্মের মধ্যে আল্লাহর যিকির করা, দোয়া করা ইত্যাদি হলো হজ্জের কার্যসমূহ। মূলত আরাফাতের দিন দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের মাঠে অবস্থান করে আল্লাহর যিকর ও দুআয় কাটানোই মূলত হজ্জ। যারা হজ্জে যাচ্ছেন তারা এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। ফ্রী খাবার জোগাড় করতে, হাজীদের সাথে গল্প করতে বা খাওয়া দাওয়ার পিছনে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। যথাসাধ্য একাকী হয়ে জীবনের সকল পাপ স্মরণ করে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে পাপী মনে করে আল্লাহর কাছে দুআ ও ইসতিগফার করুন। ক্লান্তি লাগলে আল্লাহর যিকর করুন। রাসূলল্লাহ (সাঃ) বলেন:
خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي لا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
সর্বশ্রেষ্ট দুআ হলো আরাফাতের দিনের দুআ। আর আমি এবং আমার পূর্বের নবীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ যে কথাটি বলেছি তা হলো: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুআ আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, এবং প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হাদীসটি হাসান(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৮৫)
অধিকাংশ সময় হাজি সাহেব কিছু ইবাদত বন্দেগি, তাওয়াফ, সায়ী, দোয়া-মুনাজাত করেন। এরপর মানবীয় প্রকৃতি অনুসারে সাথীদের সাথে গল্পগুজব ও কথাবার্তায় রত হয়ে পড়েন। আর গল্প ও কথাবার্তার অর্থই হলো অকারণ বাজে কথায় সময় নষ্ট করা অথবা অনুপস্থিত কোনো মানুষের আলোচনা-সমালোচনা করে গীবত ও অপবাদের মত ভয়ঙ্কর পাপে লিপ্ত হওয়া। গল্প-গুজবের মধ্যে এ দুটি ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। কেউবা বাজারে ঘুরাঘুরি করে সময় নষ্ট করেন অথবা পাপময় দৃশ্য দেখে পাপ কামায় করেন। এস্ বিষয়, বিশেষ করে গীবত ও পরচর্চা করা বা শোনা, টেলিভিশনে বা বাস্তবে অসুন্দর, তাকওয়াবিহীন বা আপত্তিকর দৃশ্য দেখা বা গল্প করা বা আল্লাহর ভয় ও যিক্র মন থেকে সরিয়ে দেয় এমন গল্পগুজব থেকে যথাসাধ্য আত্মরক্ষা করুন। হজ্জের আহকামগুলি সুন্দরভাবে জেনে নেবেন। বিশেষ করে সুন্নাত জানার ও মানার জন্য প্রাণপনে চেষ্টা করবেন। অমুক কাজ জায়েয, ভাল ইত্যাদি বিষয় দেখবেন না। বরং দেখবেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীগণ কিভাবে কোন্ কাজটি করেছেন। তাঁরা যে কর্ম যেভাবে করেছেন হুবহু সেভাবে তা পালন করুন। তারা যা করেন নি তা বর্জন করুন। এভাবে হুবহু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর তরীকা অনুসারে ইবাদত পালন করতে পারা সৌভাগ্যের লক্ষণ। এতেই রয়েছে কবুলিয়্যাতের নিশ্চয়তা। বিশেষত মদীনা শরীফে ইবাদত-বন্দেগী, যিয়ারাত, দুআ ইত্যাদি সকল বিষয়ে অবশ্যই হুবহু সুন্নাতের মধ্যে থাকবেন। বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমাম সংকলিত হাদীসে রাসূলুল্লহ (সাঃ) বলেন:
الْمَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَائِرٍ إِلَى كَذَا مَنْ أَحْدَثَ فِيهَا فِيهَا حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلا عَدْلٌ
আইর থেকে অমুকস্থান পর্যন্ত মদীনার সমস্ত এলাকা মহাসম্মানিত হারাম বা পবিত্রস্থান। এ স্থানের মধ্যে যদি কেউ নব-উদ্ভাবিত কোনো কর্ম করে, অথবা কেনো নব-উদ্ভাবককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাহলে তার উপর আল্লাহর লানত, ফিরিশতাগণের লানত এবং সকল মানুষের লানত। তার থেকে তাওবা, কাফ্ফারা বা ফরয-নফল কোনো ইবাদতই কবুল করা হবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৩৬)
বড় ভয়ঙ্কর কথা। এত কষ্ট করে সাওয়াব অর্জনের জন্য সেই পবিত্রভূমিতে যেয়ে অভিশাপ অর্জন করে আসা! আরো ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, হাজীরা মদীনায় গেলেই নব-উদ্ভাবিত কর্ম বেশি করেন। মসজিদে নববীতে, রাওযা শরীফে, বাকী গোরস্থানে, উহদের শহীদদের গোরস্থানে, খন্দকের মসজিদগুলিতে, কুবা ও অন্যান্য মসজিদে ও অন্যান্য স্থানে যিয়ারত, সালাত, দুআ ইত্যাদি ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে হাজীগণ আবেগ ও অজ্ঞতার সংমিশ্রণে অনেকভাবে সুন্নাতের ব্যতিক্রম নব-উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করেন। সাবধান হোন! যিয়ারতের সময় রাসূলুল্লাহ ৎ কি বলতেন, কিভাবে দাঁড়াতেন, কি করতেন তা সহীহ হাদীসের আলোকে জেনে নিন। কুবা, খন্দক, কিবলাতাইন ও অন্যান্য স্থানে গমন ও সালাত আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীগণের হুবহু পদ্ধতি সহীহ হাদীসের আলোকে জেনে নিন। তাঁরা যা করেন নি তা বিষবৎ পরিত্যাগ করুন। সাওয়াব কামাতে গিয়ে অভিশাপ ও ধ্বংস কামাই করবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে হজ্জম পালন করার তাওফীক দান করুন । হজ্জের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াদির বিস্তারিত আলোচনা এ পরিসরে সম্ভব নয়। তবে অধিকাংশ হাজী হজ্জের নিয়মকানুন মেনে চললেও হজ্জ বিষয়ক মূল নির্দেশনার বিষয়ে সচেতন হন না। মহান আল্লাহ হজ্জ প্রসঙ্গে বলেছেন:
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ
এখানে মহান আল্লাহ হজ্জের সময় বিশেষ করে তিনটি বিষয় বর্জন করতে নির্দেশ দিলেন: (১) অশালীনতা, (২) পাপকর্ম ও (৩) ঝগড়া-বিতর্ক। অধিকাংশ হাজীই এ তিন প্রকারের পাপে লিপ্ত হয়ে পড়েন। (১) পর্দাহীনতা: হজ্জে লক্ষ লক্ষ নারী ও পুরুষ জমায়েত হন। অধিকাংশ হাজীই পর্দার বিধান জানেন না। বিশেষত মহিলাদের জামাতে ও মসজিদে সালাত আদায়ের সুন্নাত নির্দেশিত নিয়ম ও বিধান না জানার কারণে প্রায় সকল মহিলা হাজী এবং তাদের পুরুষ সাথী হজ্জের সফরে অনেক অনেক কবীরা গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়েন। যেমন পরিপূর্ণ পর্দা ছাড়া রাস্তায়, মসজিদে বা হজ্জের ময়দানে গমন, মসজিদে সালাত আদায় বা তাওয়াফের জন্য পুরুষদের ভীড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি ও ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হওয়া, পুরুষদের মধ্যে সালাতের জামাতে দাড়িয়ে পড়া, মসজিদের পুরুষদের দৃষ্টির মধ্যেই পরিধেয় পোশাক ঠিক করার জন্য নিজের ফরয সতর অনাবৃত করা, পুরুষদের মধ্যে ওযূ করা... ইত্যাদি। এছাড়া হজ্জের সময় হোটেল বা বাসায় এক কক্ষে কয়েকজন মহিলা অবস্থান করেন। স্বভাবতই এক মহিলার মাহরাম অন্য মহিলার মাহরাম নন। কিন্তু মহিলারা অনেক সময় গাইর মাহরাম পুরুষদের সামনে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করেন না। অন্যের মাহরামের সামনে নিজেকে পূর্ণ আবৃত করেন না। ফলে একজন মহিলা বা পুরুষ হজ্জের চল্লিশ দিনের সফরে পর্দাহীনতার এত পাপ করেন যা হয়ত তিনি দেশের চল্লিশ বছরেও করেন নি। হজ্জে আগত অধিকাংশ মানুষই এরূপ। ফলে অনেকে আবার মনে করতে থাকেন হজ্জের সময় হয়ত পর্দা তেমন লাগে না! মহান আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। (২) পাপকর্ম: হজ্জের সময় সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে, লক্ষলক্ষ মানুষের ভিড়ে হাজী সাহেব প্রায়ই বিরক্তি, রাগারাগি, গীবত, অন্যান্য হাদীসের সমালোচনা ইত্যাদি পাপে লিপ্ত হয়ে পড়েন। (৩) ঝগড়-বিতর্কঃ হজ্জের অন্যতম কর্ম ঝগড়া-বিতর্ক। হজ্জের সফরের ৩৫/৪০ দিনে হাজী সাহেব প্রায় ৪০ বৎসরের ঝগড়া-বিতর্ক করেন। দেশে সাংসারিক কাজে অতি ব্যস্ত থাকার কারণে বিতর্কের সময় পাওয়া যায় না। হজ্জের সময় অনেক অলস সময় পাওয়া যায়, ফলে বিতর্ক-ঝগড়া খুবই জমে। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের মধ্যে ভাল মানুষেরাও আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। বিমান বন্দরে, বিমানের মধ্যে, জিদ্দা হজ্জ টার্মিনালে, মক্কার আবাসস্থলে, মসজিদে হারামে, মিনা-মুযদালিফা-আরাফায়, মদীনায় ... সকল স্থানেই হাজী সাহেবগণ অতি সাধারণ বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিতর্কে জাড়িয়ে পড়েন। এগুলো সবই হজ্জের মূল সাওয়াব নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে হজ্জের সময় বিভিন্ন মাযহাব ও মতের মুসলিম একত্রিত হন। এজন্য ধর্মীয় মাসআলা নিয়ে ভয়ঙ্কর সব বিতর্ক ও বিদ্বেষ শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সর্বদা নিজের গোনাহ এবং মহান আল্লাহর সানিধ্যের কথা মনে করতে হবে। অন্যকে নিয়ে ভাবনা ত্যাগ করতে হবে। নিজের নিকট গ্রহণযোগ্য মাসআলা অনুসরণের পাশাপাশি অন্যদের মত নিয়ে বিতর্ক বা নিজের মতের প্রাধান্য প্রমাণের চেষ্টা বর্জন করতে হবে। আমরা সকলেই হজ্জ মাবরূর পরিভাষা ব্যবহার করি। কিন্তু হজ্জ মাবরূর কী? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:
إطعام الطعام وطيب الكلام/ لين الكلام
খাদ্য খাওয়ানো এবং সুন্দর-বিন কথা বলাই হলো হজ্জের র্বির বা হজ্জে মাবরূর। (আল মুজামুল আওসাত হাদীস নং ১৫২৪, হাইছামী হাদীসের সনদটিকে সহীহ বলেছেন, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ,হাদীস নং ৫২৬৬)
পানাহার নিয়ে সকল প্রকারের বিতর্ক পরিহার করে অন্যকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। পুরো হজ্জের সফরে যদি কারো সাথে কঠোর বা কর্কশ কথা না বলে সকল অবস্থায় সকলের সাথে সুন্দর, বিন্ম্র ও আন্তরীকতাময় কথা বলতে পারি তবে আমরা মাবরূর হজ্জ অর্জন করার আশা করতে পারি।
প্রশ্নঃ 179
আস-সালাম আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ । মুহতারাম ! রাসূল সাঃ কি যিলহজ্জ মাসে বিশেষ কোন আমলের তাকিদ দিয়েছেন? সংক্ষেপে জানালে উপকৃত হব।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মোবারক বাদ। রাসূল (সা.) তার উম্মতকে প্রতিটি মূহুর্তেই আমলের মধ্যে থাকার জন্য তাকিদ দিয়েছে। বিশেষকরে জিলহজ্জ মাসের প্রথম তের দিন সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখার ব্যাপারে অধিক পরিমাণে গুরুত্বারোপ করেছেন। নিম্নে যিলহজ্জ মাসের প্রথম তের দিনের আমলসমূহ কুরআন হাদীসের আলোকে তুলে ধরা হল:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
لإن شكرتم لأزيدنكم وإن كفرتم إن عذابي لشديد
অর্থঃ যদি তোমরা আমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর তাহলে আমি তোমাদের নিয়ামত বৃদ্ধি করে দিব । আর যদি তোমরা নাশুকরিয়া কর তাহলে (জেনে রেখ ) আমার আযাব বড় কঠিন। আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মাঝে অতি মুল্যবান একটি নিয়ামত হল জিবন,যা আল্লাহর বেধে দেয়া কিছু সময়ের সমষ্টি। মানুষের জিবনের প্রতিটি মুহূর্তই অতি মুল্যবান, অতি গুরুত্বপুর্ণ। সময়ের গুরুত্ব বর্ননা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন:
والعصر. إن الإنسان لفي خسر
সময়ের শফত। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। সূরা আসর,আয়াত ১-২। প্রথমতঃ কোরানে আল্লাহ যা কিছু বলেছেন সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনি যা শফত করে বলেছেন তা আরো এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আল্লাহ শফতের সাথে সময়কে উল্লেখ করার কারণে তাই সময়ের গুরুত্বও আধিক্যে পৌছেছে। দ্বিতীয়তঃ সময়ের শফত করার পরেই তিনি যা বলেছেন তা হল মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারি যে, মানুষের, বিশেষ করে মুসলমানদের সবচেয়ে বড়ক্ষতি তথা আখেরাত ধ্বংসের মূল কারণ হল সময়ের অবমূল্যায়ন। সময় নষ্ট করার ক্ষতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
لَمْ يَتَحَسَّـرْ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلاَّ عَلَى سَاعَةٍ مَرَّتْ بِهِمْ لَمْ يَذْكُـرُوْا اللهَ تَعَالَى فِيْهَا
জান্নাতের অধিবাসীগণ দুনিয়ার কোনো কিছুর জন্য আফসোস করবেন না, শুধুমাত্র যে মুহূর্তগুলি আল্লাহর যিক্র ছাড়া অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে সেগুলির জন্য তাঁরা আফসোস করবেন। (হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদদ ১০/৭৩ হাদীসটির সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য)। পৃথিবীর যে দেশের, যে জাতির, যে ধর্মের, যে বর্ণের যেই সময়ের মুল্যায়ন করবে তার জিবনই হয়ে উঠবে ধন্য,সাফল্যমন্ডিত। পৃথিবীর সব সফল ব্যক্তিদের জিবনীতে চোখ বুলালে সফলতার পেছনে মূল কারণ হিসেবে সময়ের গুরুত্ব এবং এর সঠিক ব্যবহারের বিষয়টিই পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়। তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বি ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে এসুসংবাদ কেবল দুনিয়ার জীবনেই বরাদ্দ। আখেরাতে তাদের কোন হিস্সা নেই। পক্ষান্তরে মুসলমানদের জন্য এসুসংবাদ কেবল দুনিয়ার জন্য নয় বরং আখেরাতেও তারা হবেন ধন্য যদি সময়ের মুল্যায়ন করে সময় নামক নিয়ামতের যথাযথ শুকরিয় আদায় করেন। উপরন্ত আল্লাহ অনুগ্রহ করে বান্দার জন্য কিছু সময়কে নির্ধারণ করেছেন, দিয়েছেন বিশেষ মর্যাদা, করেছেন মহিমাময়। জিলহজ্জের প্রথম তেরদিন ঠিক এমনই মহিমান্বিত,মহিমাময় । অতএব আমাদের উচিৎ কোরান হাদীসের আলোকে যিলহজ্জ মাসের আমল সমূহ জেনে নিয়ে বেশি বেশি নেক আমলের প্রতি মনোযোগি হওয়া। প্রথম দশদিনের আমলঃ এ মাসের দশ তারিখে আমরা ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ আদায় করি। এদিনে সামর্থবান মুসলমানদের উপর কোরবানী বা নির্ধারিত পশু জবেহ করা ওয়াজীব। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
فصل لربك وانحر
অর্থঃ তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কোরবানী কর। সূরা আল- কাউসার,আয়াত,২। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন :রাসূল সাঃ এরশাদ করেন,কোরবানীর দিন আদমের বেটা যত আমলই করে তার মধ্যে কোরবানীর আমলই হল আল্লাহর কাছে সবচে প্রিয় আমল । (তিরমিযী)
এছাড়াও এ মাসের প্রথম দশটি দিন মুমিনের জন্য অত্যন্ত ফযীলতের। সহী বুখারীতে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন:যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করা আল্লাহর নিকট যত প্রিয় আর কোন দিনের আমল তাঁর নিকট তত প্রিয় নয়। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্ল্হার রাসূল সাঃ আল্লাহর পথে জিহাদও কি এ দশদিনের নেক আমলের চেয়ে প্রিয় নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও প্রিয় নয়। তবে ঐ ব্যক্তি ছাড়া,যে ব্যক্তি নিজের প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে জিহাদে গেল এবং কোন কিছুই আর ফিরে এলো না। (বুখারী,আস-সহীহ,১/৩২৯) অন্য হাদীসে তিনি বলেন,দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ফযিলতের দিন হল যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিন। (হাদীসটি সহীহ,হাইসামী,মাজমাউয যাওয়ায়েদ,৩/২৫৩)
তাই আল্লাহর নযে়ামত ও বশিষে অনুগ্রহ মনে করে এই দশকে সাধ্যমতো নকে আমলরে পাবন্দী করা একান্ত প্রয়োজন। । সকল প্রকার ইবাদতই নেক আমল। ফরয ইবাদত তো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে করতেই হবে। পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদতের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন, যিকর,দুআ,ইসতিগফার,নফল নামজ,নফল রোযা,কুরান তেলাওয়াত,দান ইত্যাদি। হাদীস শরীফে বিশেষ করে তিন প্রকার ইবাদত এ দিনগুলিতে পালনের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে: কিয়ামুল্লাইল বা রাতের নামায,সিয়াম ও যিকর। বিশেষত যুলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখে যেদিন হাজিগন আরাফার মাঠে অবস্থান করেন সে দিন যারা হজ্জে যান না তাদেরকে সিয়াম পালন করতে বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূল সাঃ বলেন: আমি আশা করি আরাফার দিবসের সিয়াম বিগত বছর ও আগামী বছরের কাফ্ফারা হবে। (মুসলিম আস-সহীহ ২/৮১৯)। অপর একটি হাদীসে তিনি বলেন:যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাময় কোনদিন নেই। এবং এবং নেক আমল করার জন্য এগুলির চেযে বেশি প্রিয় দিন আর নেই। অতএব তোমরা এদিনগুলিতে বেশি বেশি তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) আদায় করবে। অন্য বর্ণনায়: বেশি বেশি তাহলীল, তাকবীল ও আল্লাহর যিকর করবে। (হাদীসটি সহীহ। হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৯) বিভিন্ন হাদীসে এই দশকে বিশেষ কছিু আমলরে কথাও র্বণতি হয়ছে। যেমন
১. চুল, নখ, মোচ ইত্যাদি না কাটা
যলিহজ্বরে চাঁদ দখোর পর থকেে কুরবানীর আগ র্পযন্ত নজিরে নখ, চুল, মোচ, নাভীর নচিরে পশম ইত্যাদি না কাটা। এটা মুস্তাহাব আমল। হযরত উম্মে সালামা রা. হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
إذا رأيتم هلال ذي الحجة وأراد أحدكم أن يضحي فليمسك عن شعره وأظفاره
তোমরা যদি যলিহজ্ব মাসরে চাঁদ দখেতে পাও আর তোমাদরে কউে কুরবানী করার ইচ্ছা করে তবে সে যনে স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাক। -সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১৯৭৭; জামে তরিমযিী, হাদীস : ১৫২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৯১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৪৩৬২; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৫৮৯৭
যে ব্যক্তি কুরবানী করতে সক্ষম নয় সেও এ আমল পালন করব। র্অথাৎ নজিরে চুল, নখ, গোঁফ ইত্যাদি কাটবে না; বরং তা কুরবানীর দিন কাটব। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে র্বণতি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেনে-
أمرت بيوم الأضحى جعله الله عيدا لهذه الأمة. قال له رجل :يا رسول الله! أرأيت إن لم أجد إلا منيحة أنثى أفأضحي بها؟ قال : لا، ولكن خذ من شعرك وأظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك، فذلك تمام أضحيتك
আমি কুরবানীর দনি সর্ম্পকে আদষ্টি হয়ছেি (অর্থাৎ এ দিবসে কুরবানী করার আদশে করা হয়ছে। আল্লাহ তাআলা তা এ উম্মতরে জন্য ঈদ হসিাবে নর্ধিারণ করছেনে। এক ব্যক্তি আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে র্অথাৎ যা শুধু দুধপানরে জন্য দওেয়া হয়ছে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললনে, না; বরং সদেনি তুমি তোমার চুল কাটবে (মুন্ডাবে বা ছোট করব), নখ কাটব, মোচ এবং নাভীর নিচে নচিরে পশম পরষ্কিার করব। এটাই আল্লাহর কাছে তোমার র্পূণ কুরবানী বলে গণ্য হব। মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৭৫; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৭৭৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৪৩৬৫
র্অথাৎ যারা কুরবানী করতে সক্ষম নয় তারাও যনে মুসলমানদরে সাথে ঈদরে আনন্দ ও খুশি উদযাপনে অংশীদার হয়। তারা এগুলো কর্তন করেও পরিপূর্ণ সওয়াবরে অধকিারী হব। অনুরূপভাবে হাজীদরে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী হব। ২. ঈদরে দনি ছাড়া বাকি নয় দনি রোযা রাখা
আশারায়ে যলিহজ্বরে আরকেটি বশিষে আমল হল, ঈদুল আযহার দনি ছাড়া প্রথম নয় দনি রোযা রাখা। হাদীস শরীফে র্বণতি হয়ছে,ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নয়টি দবিসে (যলিহজ্ব মাসরে প্রথম নয় দনি) রোযা রাখতনে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২২২৩৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৪১৬
অন্য হাদীসে হযরত হাফসা রা. র্বণনা করনে-
أربع لم يكن يدعهن النبي صلى الله عليه وسلم : صيام عاشوراء والعشر وثلاثة أيام من كل شهر وركعتين قبل الغداة
চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তনে না। আশুরার রোযা, যলিহজ্বরে প্রথম দশকরে রোযা, প্রত্যকে মাসরে তনি দনিরে রোযা, ফজররে আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস :২৪১৫; সহীহ ইবনে হবিবান, হাদীস : ৬৪২২; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৭০৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৬৩৩৯
৩. বশিষেভাবে নয় তারখিরে রোযা রাখা
যলিহজ্বরে প্রথম নয় দনিরে মধ্যে নবম তারখিরে রোযা র্সবাধকি ফযীলতর্পূণ। সহীহ হাদীসে এই দবিসরে রোযার ফযীলত র্বণতি হয়ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে-
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي بعده والسنة التي قبله
আরাফার দনিরে (নয় তারখিরে) রোযার বষিয়ে আমি আল্লাহর নকিট আশাবাদী য,ে তনিি এর দ্বারা বগিত এক বছর ও আগামী বছররে গুনাহ মটিযি়ে দবিনে। -সহীহ মুসলমি, হাদীস : ১১৬২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪২৫; জামে তরিমযিী, হাদীস : ৭৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৩০
আরকে হাদীসে এসেছে-
من صام يوم عرفة غفر له سنتين متتابعتين
যে ব্যক্তি আরাফার দনি রোযা রাখবে তার লাগাতার দুই বছররে (গুনাহ ক্ষমা করা হব। -মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৭৫৪৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫১৪১
এভাবে আমরা দেখেছি, যুলহাজ্জ মাসের এদশদিন মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মুমিনের চেষ্টা করা দরকার এদিনগুলিতে বেশি বেশি নেক আমল করার । যারা যলিহজ্বরে নয় রোযা রাখতে সক্ষম হবে না তারা যনে অন্তত এই দনিরে রোযা রাখা থকেে বঞ্চতি না হয়। আল্লাহ তাআলা আশারায়ে যলিহজ্বরে মতো অন্যান্য বশিষে বশৈষ্ট্যিমন্ডতি দনিগুলোতে ইবাদত-বন্দগেী করার তাওফীক দনি। আমীন
পরবর্তী তিন দিনের আমলঃ ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে আল্লাহর যিকরের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন:
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى
তোমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলিতে আল্লাহর যিক্র করবে। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দুদিনে চলে আসে তবে তার কোনো পাপ নেই, আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোনো পাপ নেই, এ তার জন্য যে তাকওয়া অবলম্বন করে । সূরা বাকারা: ২০৩ আয়াত। এভাবে আমরা দেখছি যে, যুলহাজ্জ মাসে প্রথম ১৩ দিন বিশেষভাবে আল্লাহর যিকরের জন্য নির্ধারিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উক্ত দিন সমূহে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফীক দিন । আমীন।
প্রশ্নঃ 180
কষ্ট করে ট্রেনে চড়ে গিয়ে কিশোর শোলাকিয়ায় নামাজ পড়া কি বেশি সওয়াব? বিশ্ব এজতেমার মুনাজাতে শরীক হওয়াতে কি বিশেষ কোন ফযীলত আছে?
20 Dec 2025
বেশি সওয়াবের আশায় ঈদের নামাজ পড়ার জন্য শোলাকিয়ায় যাওয়া একটি অনর্থক কাজ। কেননা সওয়াবের আশা করা যায় যদি সফরটি কোন নেক আমলের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। আর শোলাকিয়া গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া কোন ইবাদত বা নেক আমল নয়। অর্থাৎ অন্যমাঠে ঈদের নামায পড়া আর শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়া সমান বিষয়। সুতরাং শোলাকিয়া ঈদের মাঠে ঈদের নামায পড়ার মধ্যে বেশি সওয়ার আছে মনে করলে বিদআত হয়ে যাবে।তবে যদি এই উদ্দেশ্যে যাওয়া হয়ে থাকে যে, ইমাম সাহেবের বয়ানের মাধ্যমে কিছু এলেম অর্জন হবে বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত করা যাবে তাহলে সওয়াবের আশা করা যায়। কেননা এই নেক আমল বা সওয়াবের কাজ। বিশ্বএজতেমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমনই, অর্থাৎ এজতেমায় ওয়াজ শোনার জন্য, দাওয়াতের কাজে নাম লেখানোর জন্য অথবা বড় কোন আলেম এসেছেন, তার সাথে দেখা করে সালাম দেয়া ইত্যাদি এগুলো সওয়াবের কাজ। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে যাওয়া যে, সেখানে অনেক মানুষ দোয়া করছে ফলে উক্ত দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটা দোষণীয় এবং আপত্তিকর। কারন শেখার জন্য মানুষ লাগে, দোয়ার জন্য মানুষ লাগে না। বান্দা যখন যে অবস্থাতেই আল্লাহর কাছে একাগ্রচিত্তে চান আল্লাহ তার ডাকে সাড়ে দেন। আল্লাহ বলেন: وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
অর্থঃ আমার বান্দা যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দিই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। সূরা- বাকারা, আয়াত- ১৮৬। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।
প্রশ্নঃ 181
(খতমে বুখারী) সাওয়াব, বরকত, অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার আশায় খতমে বুখারী করা কি বিদআত?
20 Dec 2025
প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে যে, আমাদের দেশে খতমে বুখারীর অনুষ্ঠানের অবস্থা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ১)বছরের শেষে বুখারী শরীফ সমাপ্তির দিন বিশেষ দরস হয় যেখানে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অনেকে উপস্থিত হয়ে থাকেন । তবে কেউ এটাকে দ্বীনের বিষয় বা সওয়াবের উপলক্ষ মনে করে না। ২)বছরের শেষে বুখারী শরীফ সমাপ্তির দিন বিশেষ দরস হয় যেখানে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অনেকে উপস্থিত হয়ে থাকেন । পাশাপাশি এটাকে বিশেষ বরকতের কারন মনে করা হয়। ৩)কেউ কোন বালা-মসীবতে পড়লে বিপদ মুক্তির জন্য বা সওয়াবের আশায় বুখারী শরীফ খতম করা হয়। উপরে উল্লেখিত প্রথম প্রকারের খতমে বুখারী বৈধ, কোন সমস্যা নেই বরং এসে যতটুকু হাদীস শুনল বা দ্বীনের কথা শিখল ততোটুকু এলেম শিক্ষার সওয়াব পাবে। এর চেয়ে বেশি কিছু অর্থাৎ বিশেষ কোন বরকত লাভ হবে না। কিন্তু দিত্বীয় এবং তৃতীয় প্রকারের খতমে বুখারী সওয়াবের উপলক্ষ বা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির উপায় মনে করার কারনে বিদআত হিসাবে পরিগণিত হবে। কেননা ঈসালে সাওয়াবের জন্য হাদীস তেলাওয়াত করা, অসুস্থ হলে বা যে কোন মুসিবতে পড়লে হাদীস পাঠ করে দুআ করার কোন নজীর না রাসূলে শিক্ষায় রয়েছে, না সাহাবায়ে কেরামের জীবনে রয়েছে, না খাইরুল কুরুনে রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জীবনেও বালা-মসীবত এসেছে কিন্তু তাঁরা একদিনও একটি হাদীস পড়ে দুআ করেন নি। অথচ তাঁরা আমাদের তুলনায় রাসূল সা. কে বেশী ভাল বাসতেন, বেশী অনুসরণ করতেন। এমতাবস্থায় আমরা যদি একাজটিকে সওয়াব লাভের সতন্ত্র একটি উপায় মনে করি তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে বিদআতের মধ্যে নিপতিত হব। বিদআত থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে রাসূল সা. কঠিন ভাষায় সতর্ক করেছেন। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন, রাসূল সা. বলতেন:
شر الأمور محدثاتها وكل محدثةبدعة وكل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار
অর্থঃসবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল, যা (দ্বীনের নামে আবিষ্কৃত)নতুন বিষয়। আর(এমন) সব নতুন বিষয় বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে। শায়েখ আলবানী হাদীসটি কে সহীহ বলেছেন। সুনানে তিরমিযী,তাহকীক,আলবানী,৩/১৮৮(১৫৭৮),কিতাব, সালাতুল ঈদাইন, বাব, কায়ফাল খুতবা। আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণীত,তিনি বলেন,রাসূল সাঃ বলেছেন:
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
অথঃদ্বীনের বিষয় নয় এমন কোন বিষয়কে যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে সৃষ্টি করবে তা প্রত্যাক্ষাত হবে। বুখারী,আস সহীহ,হাদীস নং ২৬৯৭। বিপদ মুক্তির ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হলো, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ইউনূস (আ)-এর মত নিজে দুআ ইউনূস বা অন্যান্য সুন্নাহ সম্মত দুআ পড়ে মনের আবেগে আল্লাহর কাছে কাঁদবেন এবং বিপদমুক্তি প্রার্থনা করবেন। একজনের বিপদে অন্যজন কাঁদবেন, এমনটি নয়। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে, দুআ ইউনূস পাঠ করে দুআ করলে আল্লাহ্ কবুল করবেন। (লা ইলাহা ইলা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতুম মিনায যালিমীন) অর্থ- আপনি ছাড়া কোনো মাবূদ নেই, আপনি মহা-পবিত্র, নিশ্চয় আমি অত্যাচারীদের অন্তভূক্ত হয়েছি। নিজে দুআ করার পাশাপাশি জীবিত কোনো আলিম-বুজুর্গের কাছে দুআ চাওয়াতে অসুবিধা নেই। তবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নিজের জন্য নিজের দুআই সর্বোত্তম দুআ। এছাড়া দুআর ক্ষেত্রে মনের আবেগ ও অসহায়ত্বই দুআ কবুলের সবচেয়ে বড় অসীলা। আর বিপদগ্রস্ত মানুষ যতটুকু আবেগ নিয়ে নিজের জন্য কাঁদতে পারেন, অন্য কেউ তা পারে না। অনেকে মনে করেন,আলিম-বুজুর্গের সুপারিশ বা মধ্যস্ততা ছাড়া আল্লাহর নিকট দুআ বোধহয় কবুল হবে না। এ ধরনের চিন্তা সুস্পষ্ট শিরক। ইসলামের বিধিবিধান শিখতে, আত্মশুদ্ধির কর্ম শিখতে, কর্মের প্রেরণা ও উদ্দীপনা পেতে বা আল্লাহর জন্য ভালোবাসা নিয়ে আলেম ও বুজুর্গগণের নিকট যেতে হয়। প্রার্থনা, বিপদমুক্তি ইত্যাদির জন্য একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইতে হয়, অন্য কারো কাছে নয়। কথিত আছে ইমাম বুখারী রহঃ নাকি এই কিতাবের কাজ শেষ করার পর আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন যে, যে ব্যক্তি তাঁর এই কিতাব প্রথম থেশে পর্যন্ত পড়ে দুআ করবে আল্লাহ যেন তার দুআ কবুল করেন। অথচ বুখারী রহঃ এই কিতাব রচনার প্রেক্ষাপটের নির্ভরযগ্য কোন কিতাবে এমন কোন কথা পাওয়া যায় না। সহী বুখারী রচনার কয়েক শতাব্দি পর পর্যন্ত ইমাম বুখারী রচিত এ গ্রন্থের চর্চা, তার খেদমত অত্যন্ত ব্যাপকভাবে হয়েছে । কিন্তু কোথাও তা খতমের নজীর পাওয়া যায় না। তাছাড়া বুখারী রহঃ এর মত বিশুদ্ধ আকীদার ধারক ব্যক্তির দিকে এমন কথার নিসবত করা গর্হিত এবং বানোয়াট। আল্লাহ আমাদেরকে সর্বাবস্থায় বিদআত থেকে হেফাযত করুক। আমীন।
প্রশ্নঃ 182
আসসালামু আলাইকু,স্যার আপনার মতামতের জন্য একটি জরুরী বিষয় তুলে ধরলাম দয়া করে কুরআন, হাদিসের আলকে মতামত দিবেন ! যদি কেও বা কারো দর্শন বলে যে, কালিমা তয়াবা লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ এর সাথে মুহাম্মাদুর রাসুল উল আল্লাহ পড়লে শিরক হবে তাহলে কি করনীয়?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এপর্যন্ত কোন ব্যক্তি এবং কারো দর্শন এধরনের কথা বলেনি এবং কালেমায়ে তায়্যিবায় লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ এর সাথে মুহাম্মাদুর রাসুল উল আল্লাহ পড়লে শিরক হবে এধরনের কোন ঈঙ্গিত কোরআন হাদীসে কোথাও নেই। এক্ষেত্রে আপনার উচিৎ হল, উনি যেই রাজনৈতিক দলের ভক্ত সেই দলের কোন আলেমকে বিষয়টি অবহিত করে তাকে বোঝানের চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 183
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতু্ল্লাহ। পূর্ববতী নবীদের উপর ঈমান আনা কী জুরুরী?
20 Dec 2025
ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ । জনাব গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। নিম্নেআপনার উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। যেমনিভাবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর ঈমান আনা জরুরী এবং ঠিক তেমনি পূর্ববর্তি নবীগণের উপরও ঈমান আনা অনুরুপভাবে জরুরী। এবং তা দ্বীনের একটি রুকন। এমনকি তাদের একজনকে অস্বীকার করা প্রত্যেক নবীকে অস্বীকার করার শামিল। কোরআন ও হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় এব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরাআনের আলোকেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا (النساء:136)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ তোমরা ঈমান আনয়ন কর আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূল (সাঃ ) এর প্রতি, ঐ কিতাবের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাঁর রাসূল ( সাঃ) এর উপর এবং ঐ কিতাব সমূহের প্রতি যা তিনি তাঁর পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে আল্লাহকে, তাঁর ফিরিস্তাদেরকে, তাঁর কিতাব সমূহকে, তাঁর রাসূলগণকে আর শেষ দিবসকে তারা অবশ্যই তারা চরমপর্যায়ে বিভ্রান্ত। সূরা, আন-নিসা, আয়াত, ১৩৬। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
অর্থঃ তোমরা বল আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, এবং যা নাযিল হয়েছে আমাদের প্রতি, ইব্রাহীম, ঈসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব, ও তাঁর বংশধরদের নিকট তার প্রতি। এবং যা তাঁদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তার প্রতি। আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করিনা।সূরা বাকারা, আয়াত, ১৩৬। হাদীসের আলোকেঃ
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه ، ومما جاء فيه : ( قَالَ : فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِيمَانِ ؟ قَالَ : أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ ، وَمَلَائِكَتِهِ ، وَكُتُبِهِ ، وَرُسُلِهِ ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ
অর্থঃ (ওমর ইবনে খাত্তার রাঃ থেকে বর্ণীত এবং এটা হযরত জীবরিল আঃ ও নবী সাঃ এর মাঝে কথপোকথন মূলক) তিনি ( জীবরিল আঃ) বললেন : আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। তখন তিনি বললেন :আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন করা । আর ঈমান আনয়ন করা তাকদীরের ভাল মন্দের প্রতি।মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ১০২। উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে আমাদের নবী (সাঃ) এর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দেয়ার পাশাপাশি পূর্ববর্তি নবীদের উপরও ঈমান আনার আদেশ করেছেন। এবং হাদীসে জীবরীলের মধ্যে রাসূল (সাঃ) কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার কথা উল্লেখ করেছেন, যা দ্বারা বুঝা যায় আমাদের নবী সাঃ এর উপর ঈমান আনা যেমন জরুরী ঠিক তেমনিভাবে পূর্ববর্তি নবীদের উপরও ঈমান আনা জরুরী। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন । আমীন।
প্রশ্নঃ 184
কাউকে মুশরিক বলার অর্থ কি তাকে কাফিরও বলা? মুশরিক মাত্রই কি কাফির? শাসকের অন্যায় কাজের সমালোচনা করা কি জায়েজ?
20 Dec 2025
হ্যাঁ। কাউকে মুশরিক বলার অর্থ তাকে কাফেরও বলা। মুশরিক মাত্রই কাফের। বিষযটি নিচে বিস্তারিত আলোচনা হল। কুফ্র আরবী শব্দ। কুফ্র এর আভিধানিক অর্থ হলো অবিশ্বাস, অস্বীকার, অকৃতজ্ঞতা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (স.) উপর এবং ঈমানের রুকনগুলোতে বিশ্বাস না থাকাকেই কুফর বলে। শিরক শব্দটিও আরবী। শিরক এর আভিধানিক অর্থ হলো অংশীদার করা বা বানানো, সহযোগী বানানো ইত্যদী। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর কোনো বিষয়ে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা আল্লাহর প্রাপ্য কোনো ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য পালন করা বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকাকে ইসলামী পরিভাষায় শিরক বলে। ইসলামী পবিভাষায় বিশ্বাসের অবিদ্যমানতাই কুফর বা অবিশ্বাস। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং ঈমানের রুকনগুলিতে বিশ্বাস না থাকাকেই ইসলামের পরিভাষায় কুফর বলে গণ্য। অস্বীকার, সন্দেহ, দ্বিধা, হিংসা, অহংকার, ইত্যাদি যে কোন কারনে যদি কারো মধ্যে ঈমান বা দৃঢ় প্রত্যয়ের বিশ্বাস অনুপস্থিত থাকে তবে তাকে ইসলামী পরিভাষায় কুফর বলে গণ্য করা হয়। অনুরুপভাবে মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে তাঁর সমতুল বা সমকক্ষ বা তাঁর সাথে তুলনীয় বলে বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে আল্লাহর একত্ব ও অতুলনীয়ত্ব অস্বীকার করাও কুফর। তবে এ পর্যায়ের কুফরকে ইসলামের পরিভাষায় শিরক বলা হয়। কুফর ও শিরক পরস্পর অবিচ্ছ্যেভাবে জড়িত। কাউকে কোনোভাবে কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহর সমকক্ষ বা তুলনীয় মনে করার অর্থই তাঁর একত্বে অবিশ্বাস বা কুফরী করা। আল্লাহর তাওহীদ ও রাসূলগণের দাওয়াতে অবিস্বাস না করে কেউ শিরক করতে পারে না। কাজেই মুশরিক মাত্রই কাফের বলে গণ্য হবে। অপরদিকে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ না মেনে ঈমানের কোনো রুকন অবিশ্বাস করলে তা শুধু কুফর বলে গণ্য। সুতরাং কাফের মাত্রই মুশরিক নয়। যেমন যদি কেউ আল্লাহর অস্তিত্বে বা তাঁর প্রতিপালনের একত্বে অবিশ্বাস করে বা মুহাম্মাদ (স.) এর রিসালাত, খাতমুন নবুওয়াত ইত্যাদি অস্বীকার করে তবে তা কুফ্র হলেও বাহ্যত তা শিরক নয়। কারণ এরুপ ব্যক্তি সুস্পষ্ট ভাবে কাউকে আল্লাহর সাথে তুলনীয় দাবি করছে না। তবে প্রকৃতপক্ষে এরুপ কুফরের সাথেও শিরক জড়িত। কারন এরুপ ব্যক্তি কোন না কোন ভাবে এ জড় বিশ্বকে মহান আল্লাহর মত অনাদি-অনন্ত বলে বিশ্বাস করছে, বিশ্ব পরিচালনায় প্রকৃতি বা অন্য কোন শক্তিকে বিশ্বাস করছে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কাউকে মুশরিক বলার অর্থই হলো তাকে কাফেরও বলা। মুশরিক মাত্রই কাফের। তবে সকল কাফের সাধারণ ভাবে মুশরিক নয়। একটি কথা মনে রাখা জরুরী যে, কেউ কুফুরী কোন কাজ করলেই তাকে কাফের বলা যায় না। সমাজের অনেক মানুষই নিজেকে মুমিন ও তাওহীদে বিশ্বাসী বলে দাবি করার পরেও বিভিন্ন প্রকার শিরক ও কুফরের মধ্যে লিপ্ত থাকেন। এদের এ সকল কর্ম শিরক বা কুফর বলে আমরা নিশ্চিত জানার পরেও এদেরকে কাফির বা মুশরিক বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ইসলামের নির্দেশ। কোনো কর্মকে শিরক বা কুফর বলা এবং কোনো ব্যক্তিকে কাফের বা মুশরিক বলার মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, إِذَا كَفَّرَ الرَّجُلُ أَخَاهُ فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا যদি কোনো ব্যক্তি তার ভাইকে কাফের বলে,তবে এ কথা দুজনের একজনের উপর প্রযোয্য হবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০। আবু জার রা. বলেন, রাসূল সা. বরেছেন,
مَنْ دَعَا رَجُلاً بِالْكُفْرِ أَوْ قَالَ عَدُوَّ اللَّهِ. وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلاَّ حَارَ عَلَيْهِ যদি কেউ কোন মানুষকে কুফুরির সাথে জড়িত করে আহহ্বান করে অথবা তাকে বলে হে আল্লাহর শত্রু আর সে তা না হয়, তবে তা বক্তার উপর বর্তবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১
আরো বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন কুরআন সুন্নাহের আলোকে ইসলামী আকীদা এই বইটি। শাসকের অন্যায় কাজের সমালোচনা জায়েজ। শুধু জায়েজই নয় আবশ্যিক কর্তব্যও বটে। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার বা শাসক-প্রশাসকের পাপের ক্ষেত্রে মুমিনের দায়িত্ব ঘৃনা ও আপত্তি। শাসক বা প্রশাসকের পাপ বা অন্যায় কাজ দুপ্রকার, তাদের জীবনের ব্যক্তিগত অন্যায় কাজ এবং অন্যায় কাজের নির্দেশনা বা অন্যায় নির্ভর আইন,নীতি বা বিধান প্রণয়ন। সকলক্ষেত্রে মুমিনদের নূনতম দায়িত্ব অন্যায় কাজকে ঘৃনা করা। এরপর মুমিন সাধ্যমত আপত্তি ও প্রতিবাদ করবেন। এরুপ অন্যায় কাজ মেনে নেওয়া, স্বীকৃতি দেওয়া, এবিষয়ে তাদের অনুসরণ করা বা এর পক্ষে অবস্থান নেওয়া মুমিনের জন্য নিষিদ্ধ। তবে অন্যান্য বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আনুগত্য বজায় রেখে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে সমালোচনা করতে হবে,আপত্তি ও প্রতিবাত জানাতে হবে। কোন ভাবেই আইন অমান্য, শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। উম্মে সালামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إِنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِىَ وَتَابَعَ গ্ধ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لاَ مَا صَلَّوْا অচিরেই তোমাদের উপর অনে শাসক প্রশাসক আসবে যারা ন্যায় ও অন্যায় উভয় প্রকার কাজ করবে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায়কে ঘৃনা করবে সে অন্যায়ের অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি আপত্তি করবে সে (আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে ) নিরাপত্তা পাবে। কিন্তু যে এসকল অন্যায় কাজ মেনে নেবে বা তাদের অনুসরণ করবে (সে বাচঁতে পারবে না)। সাহাবীগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকরব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষন তারা সালাত আদায় করবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং১৮৫৪। আউফ ইবনে মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, أَلاَ مَنْ وَلِىَ عَلَيْهِ وَالٍ فَرَآهُ يَأْتِى شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِى مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلاَ يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ তোমরা হুশিয়ার! তোমাদের কারো উপর যদি কেন শাসক প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং সে দেখতে পায় যে,উক্ত শাসক বা প্রশাসক আল্লাহর অবাধ্যতার কোন কাজে লিপ্ত হচ্ছেন, তবে সে যেন আল্লাহর অবাধ্যতার উক্ত কর্মকে ঘৃনা করে, কিন্তু আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং১৮৫৫। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, সাধ্যমত শাসকের অন্যায় কাজের সমালোচনা করা, প্রতিবাদ করা প্রতেক মুমিনের দায়িত্ব। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে রাষ্টের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কাজ করা যাবে না । আল্লাহ সবাইকে তাওফীক দিন। কাউকে মুশরকি বলার র্অথ কি ত্যাকে কাফরিও বলা? মুশরকি মাত্রই কি কাফরি? শাসকরে অন্যায় কাজরে সমালোচনা করা কি জায়জে?
হ্যাঁ। কাউকে মুশরিক বলার অর্থ তাকে কাফেরও বলা। মুশরিক মাত্রই কাফের। বিষযটি নিচে বিস্তারিত আলোচনা হল। কুফ্র আরবী শব্দ। কুফ্র এর আভিধানিক অর্থ হলো অবিশ্বাস, অস্বীকার, অকৃতজ্ঞতা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (স.) উপর এবং ঈমানের রুকনগুলোতে বিশ্বাস না থাকাকেই কুফর বলে। শিরক শব্দটিও আরবী। শিরক এর আভিধানিক অর্থ হলো অংশীদার করা বা বানানো, সহযোগী বানানো ইত্যদী। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর কোনো বিষয়ে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা আল্লাহর প্রাপ্য কোনো ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য পালন করা বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকাকে ইসলামী পরিভাষায় শিরক বলে। ইসলামী পবিভাষায় বিশ্বাসের অবিদ্যমানতাই কুফর বা অবিশ্বাস। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং ঈমানের রুকনগুলিতে বিশ্বাস না থাকাকেই ইসলামের পরিভাষায় কুফর বলে গণ্য। অস্বীকার, সন্দেহ, দ্বিধা, হিংসা, অহংকার, ইত্যাদি যে কোন কারনে যদি কারো মধ্যে ঈমান বা দৃঢ় প্রত্যয়ের বিশ্বাস অনুপস্থিত থাকে তবে তাকে ইসলামী পরিভাষায় কুফর বলে গণ্য করা হয়। অনুরুপভাবে মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে তাঁর সমতুল বা সমকক্ষ বা তাঁর সাথে তুলনীয় বলে বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে আল্লাহর একত্ব ও অতুলনীয়ত্ব অস্বীকার করাও কুফর। তবে এ পর্যায়ের কুফরকে ইসলামের পরিভাষায় শিরক বলা হয়। কুফর ও শিরক পরস্পর অবিচ্ছ্যেভাবে জড়িত। কাউকে কোনোভাবে কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহর সমকক্ষ বা তুলনীয় মনে করার অর্থই তাঁর একত্বে অবিশ্বাস বা কুফরী করা। আল্লাহর তাওহীদ ও রাসূলগণের দাওয়াতে অবিস্বাস না করে কেউ শিরক করতে পারে না। কাজেই মুশরিক মাত্রই কাফের বলে গণ্য হবে। অপরদিকে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ না মেনে ঈমানের কোনো রুকন অবিশ্বাস করলে তা শুধু কুফর বলে গণ্য। সুতরাং কাফের মাত্রই মুশরিক নয়। যেমন যদি কেউ আল্লাহর অস্তিত্বে বা তাঁর প্রতিপালনের একত্বে অবিশ্বাস করে বা মুহাম্মাদ (স.) এর রিসালাত, খাতমুন নবুওয়াত ইত্যাদি অস্বীকার করে তবে তা কুফ্র হলেও বাহ্যত তা শিরক নয়। কারণ এরুপ ব্যক্তি সুস্পষ্ট ভাবে কাউকে আল্লাহর সাথে তুলনীয় দাবি করছে না। তবে প্রকৃতপক্ষে এরুপ কুফরের সাথেও শিরক জড়িত। কারন এরুপ ব্যক্তি কোন না কোন ভাবে এ জড় বিশ্বকে মহান আল্লাহর মত অনাদি-অনন্ত বলে বিশ্বাস করছে, বিশ্ব পরিচালনায় প্রকৃতি বা অন্য কোন শক্তিকে বিশ্বাস করছে। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কাউকে মুশরিক বলার অর্থই হলো তাকে কাফেরও বলা। মুশরিক মাত্রই কাফের। তবে সকল কাফের সাধারণ ভাবে মুশরিক নয়। একটি কথা মনে রাখা জরুরী যে, কেউ কুফুরী কোন কাজ করলেই তাকে কাফের বলা যায় না। সমাজের অনেক মানুষই নিজেকে মুমিন ও তাওহীদে বিশ্বাসী বলে দাবি করার পরেও বিভিন্ন প্রকার শিরক ও কুফরের মধ্যে লিপ্ত থাকেন। এদের এ সকল কর্ম শিরক বা কুফর বলে আমরা নিশ্চিত জানার পরেও এদেরকে কাফির বা মুশরিক বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ইসলামের নির্দেশ। কোনো কর্মকে শিরক বা কুফর বলা এবং কোনো ব্যক্তিকে কাফের বা মুশরিক বলার মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,
إِذَا كَفَّرَ الرَّجُلُ أَخَاهُ فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا যদি কোনো ব্যক্তি তার ভাইকে কাফের বলে,তবে এ কথা দুজনের একজনের উপর প্রযোয্য হবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০। আবু জার রা. বলেন, রাসূল সা. বরেছেন,
مَنْ دَعَا رَجُلاً بِالْكُفْرِ أَوْ قَالَ عَدُوَّ اللَّهِ. وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلاَّ حَارَ عَلَيْهِ যদি কেউ কোন মানুষকে কুফুরির সাথে জড়িত করে আহহ্বান করে অথবা তাকে বলে হে আল্লাহর শত্রু আর সে তা না হয়, তবে তা বক্তার উপর বর্তবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১
আরো বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন কুরআন সুন্নাহের আলোকে ইসলামী আকীদা এই বইটি। শাসকের অন্যায় কাজের সমালোচনা জায়েজ। শুধু জায়েজই নয় আবশ্যিক কর্তব্যও বটে। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার বা শাসক-প্রশাসকের পাপের ক্ষেত্রে মুমিনের দায়িত্ব ঘৃনা ও আপত্তি। শাসক বা প্রশাসকের পাপ বা অন্যায় কাজ দুপ্রকার, তাদের জীবনের ব্যক্তিগত অন্যায় কাজ এবং অন্যায় কাজের নির্দেশনা বা অন্যায় নির্ভর আইন,নীতি বা বিধান প্রণয়ন। সকলক্ষেত্রে মুমিনদের নূনতম দায়িত্ব অন্যায় কাজকে ঘৃনা করা। এরপর মুমিন সাধ্যমত আপত্তি ও প্রতিবাদ করবেন। এরুপ অন্যায় কাজ মেনে নেওয়া, স্বীকৃতি দেওয়া, এবিষয়ে তাদের অনুসরণ করা বা এর পক্ষে অবস্থান নেওয়া মুমিনের জন্য নিষিদ্ধ। তবে অন্যান্য বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আনুগত্য বজায় রেখে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে সমালোচনা করতে হবে,আপত্তি ও প্রতিবাত জানাতে হবে। কোন ভাবেই আইন অমান্য, শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। উম্মে সালামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, إِنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِىَ وَتَابَعَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لاَ مَا صَلَّوْا অচিরেই তোমাদের উপর অনে শাসক প্রশাসক আসবে যারা ন্যায় ও অন্যায় উভয় প্রকার কাজ করবে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায়কে ঘৃনা করবে সে অন্যায়ের অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি আপত্তি করবে সে (আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে) নিরাপত্তা পাবে। কিন্তু যে এসকল অন্যায় কাজ মেনে নেবে বা তাদের অনুসরণ করবে (সে বাচঁতে পারবে না)। সাহাবীগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকরব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষন তারা সালাত আদায় করবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং১৮৫৪। আউফ ইবনে মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
أَلاَ مَنْ وَلِىَ عَلَيْهِ وَالٍ فَرَآهُ يَأْتِى شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِى مِنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلاَ يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ তোমরা হুশিয়ার! তোমাদের কারো উপর যদি কেন শাসক প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং সে দেখতে পায় যে,উক্ত শাসক বা প্রশাসক আল্লাহর অবাধ্যতার কোন কাজে লিপ্ত হচ্ছেন, তবে সে যেন আল্লাহর অবাধ্যতার উক্ত কর্মকে ঘৃনা করে, কিন্তু আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং১৮৫৫। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, সাধ্যমত শাসকের অন্যায় কাজের সমালোচনা করা, প্রতিবাদ করা প্রতেক মুমিনের দায়িত্ব। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে রাষ্টের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কাজ করা যাবে না । আল্লাহ সবাইকে তাওফীক দিন।
প্রশ্নঃ 185
আমার একটি থ্রি পিচের দোকান আছে। এই দোকানে থ্রি পিচের শো র জন্য ডল ব্যবহার করি। এই গুলো কোন ভাল মন্দ বিশ্বাস থেকে নয় । এই টা জায়েয আছে কি না? বা এইভাবে ব্যবসা করলে হালাল হবে কি না? সহীহ ভাবে জানতে চাই। বিষয় টি জানা খুব জরুরী। আশা করি উত্তর দিবেন
20 Dec 2025
এই ধরনের ডল বা পুতুল বা মূর্তি যাই বলি না কেন ইসলামী শরীয়তে তা হারাম, যদিও ভাল বা মন্দ কোন বিশ্বাস না থাক কিংবা ইবাদত বা পূজার উদ্দেশ্যে না হয়। দলীল নিম্নরুপ:
১.عَنْ أَبِى الْهَيَّاجِ الأَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِى عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ
হযরত আবী হায়্যায র. বলেন, আমাকে আলী রা. বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করব না যে বিষয়ে রাসূল সা. আমাকে উৎসাহিত করেছেন যে, তুর্মি দেখা মাত্র মূর্তিভেঙ্গে ফেলবে আর উঁচু কবর সমান করে দিবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৬৯। ২.قَالَ عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ السُّلَمِىُّ فَقُلْتُ وَبِأَىِّ شَىْءٍ أَرْسَلَكَ قَالَ أَرْسَلَنِى بِصِلَةِ الأَرْحَامِ وَكَسْرِ الأَوْثَانِ وَأَنْ يُوَحَّدَ اللَّهُ لاَ يُشْرَكُ بِهِ شَىْءٌ
হযরত আমর ইবনে আবাসাহ আস-সুলামী রা. বলেন আমি রাসূল সা. কে বললাম, আল্লাহ তায়ালা কি দায়িত্ব দিয়ে আপনাকে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, আত্নীয়তার বন্ধন অটুট রাখার জন্য, মূর্তিভাঙ্গার জন্য আর আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য যে, তার সাথে কাউকে শরীক করা হবে না। ৩.أَبُو هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-أَتَانِى جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنِّى كُنْتُ أَتَيْتُكَ الْبَارِحَةَ فَلَمْ يَمْنَعْنِى أَنْ أَكُونَ دَخَلْتُ عَلَيْكَ الْبَيْتَ الَّذِى كُنْتَ فِيهِ إِلاَّ أَنَّهُ كَانَ فِى بَابِ الْبَيْتِ تِمْثَالُ الرِّجَالِ وَكَانَ فِى الْبَيْتِ قِرَامُ سِتْرٍ فِيهِ تَمَاثِيلُ وَكَانَ فِى الْبَيْتِ كَلْبٌ فَمُرْ بِرَأْسِ التِّمْثَالِ الَّذِى بِالْبَابِ فَلْيُقْطَعْ فَيَصِيرَ كَهَيْئَةِ الشَّجَرَةِ وَمُرْ بِالسِّتْرِ فَلْيُقْطَعْ وَيُجْعَلْ مِنْهُ وِسَادَتَيْنِ مُنْتَبَذَتَيْنِ يُوَطَآنِ وَمُرْ بِالْكَلْبِ فَيُخْرَجْ فَفَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَكَانَ ذَلِكَ الْكَلْبُ جَرْوًا لِلْحَسَنِ أَوِ الْحُسَيْنِ تَحْتَ نَضَدٍ لَهُ فَأَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ
قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَفِى الْبَابِ عَنْ عَائِشَةَ وَأَبِى طَلْحَةَ
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, আমার নিকট জিব্রীল আ. এসে বললেন, একটু আগে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম কিন্তু আপনার কাছে আপনার ঘরে আমাকে প্রবেশ করতে বিরত রেখেছিল ঘরের দরজায় থাকা মানুষের প্রতিমূতি, ঘরের ভিতরে থাকা ছবি যুক্ত পর্দা এবং কুকুর। সুতরাং আপনি দরজায় থাকা প্রতিমূর্তির ব্যাপারে নির্দেশ দিন যেন কেটে ফেলা হয় তখন সেটা গাছের আকৃতির মত হয়ে যাবে। আর পর্দার ব্যাপারে নির্দেশ দিন যেন তা কেটে ফেলা হয় এবং পাপোশ বানানো হয়। আর কুকুরটিকে বের করতে বলেন। তখন রাসূল সা. তা করলেন। আর কুকুরটি ছিল হাসান বা হুসাইনের, সেটি তাদের খাটের নিচে ছিল। তিনি তা বের করার নির্দেশ দিলেন আর তা বের করা হল। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৮০৬। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ আর শাইখ আলবানী বলেছেন, সহীহ। এই হাদীসটিতে সুস্পষ্ট যে ইবাদতের নিয়তে কিংবা ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়াও কোন মূর্তি বা পুতুল রাখা যাবে না। কেননা উক্ত ঘরে কোন মূর্তি ইবাদতের জন্য বা ভ্রান্ত বিশ্বাসে যে রাখা হয়নি এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। উপরের হাদীসগুলোর ভিত্তিতে আলেমগণ একমত যে, যে কোন প্রাণীর এবং মানুষের যে কোন ধরনের পুতুল বা মূর্তি রাখা বা বানানো হারাম। সুতরাং আপনার জন্য জায়েজ হবে না সেগুলো প্রদর্শন করা। তবে পুতুলের মুখের স্থানটি যদি সমান হয় অথবা মুখ না থাকে তাহলে সমস্যা নেই।কিন্তু এই মূর্তি থাকার কারণে মূল ব্যবসা হারাম হবে না। এই ধরনের গুনাহর কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 186
ঢাকায় পরীক্ষা দিতে যাব । পরিবেশ ভাল হরে থাকব এবং পরিবেশ খারাপ হলে ঝিনাইদহ চলে আসব। এমতাবস্থায় আমি মুকিম নাকি মুসাফির?
20 Dec 2025
প্রশ্নে বর্ণীত অবস্থায় আপনি মুসাফির। তবে যদি আপনি পনের দিন বা তার বেশি দিন অবস্থানের নিয়ত করেন তাহলে আপনি মুকিম হয়ে যাবেন এবং নামায পূর্ণ করে পড়তে হবে।
প্রশ্নঃ 187
বিড়ালের উচ্ছিষ্ট কি পাক? যদি কোন তরকারির ডিস থেকে বিড়াল ১ টুকরো মাছ উঠিয়ে খায় তবে কি ডিসের সব তরকারি নষ্ট হবে?
20 Dec 2025
হা বিড়ালের উচ্ছিষ্ঠ পাক,বিড়াল কোনকছিুতে মুখ দিলে বা খেলে তা নাপাক হয়ে যায় না বরং পাক থাকে। এব্যাপারে একটি হাদীসে এসেছে, আবু কাতাদাহ রাঃ বলেন: রাসূল সা. বলেছেন:
إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّمَا هِىَ مِنَ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ أَوِ الطَّوَّافَاتِ
র্অথঃ নিশ্চয় বিড়াল অপবিত্র নয়, সে তোমাদের নিকট বশেী বশেী বিচরনণকারী প্রাণীদের অন্তর্ভুক্ত। শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলছেন এবং তিরমিযী রহঃ হাসান সহী বলছেনে। তিরমিযী, আস সুনান, তাহকীক, আহমাদ শাকরে ও আলবানী-১/১৫৩ ;হাদীস নং-৯২,
ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন: অধকিাংশ সাহাবী, তাবেয়ী এবং শাফী রহঃ ও আহমাদ রহঃ সহ পরবর্তি উলামায়ে কেরাম এই মত পোষণ করছেনে। প্রগুক্ত। একবার দাউদ ইবনে সালেহ এর আম্মাকে দিয়ে তার মনিব হারিসা সহ (গোশত ও গম একত্রে মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত খাদ্য বিশেষ) আয়েশা (রা.) এর নিকট পাঠালেন। তিনি বলেন: আমি তাকে নামাযরত পেলাম। তিনি আমাকে তা রেখে দেওয়ার জন্য ইশারা করলেন। এরপর বিড়াল এসে তার থেকে খেলো । নামাজ শেষে আয়েশা (রা.) বিড়ালের মুখ দেয়া স্থান থেকে খেলেন এবং বললেন,, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় বিড়াল অপবিত্র নয়, সে তোমাদের নিকট বিচরনণকারী প্রাণীদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমি রাসুল (সা.) কে বিড়ালের ঝুটা মিশ্রিত পানি দ্বারা অযু করতে দেখেছি। আবু দাউদ-১/২৯; হাদীস নং-৭৬। আল্লামাহ ইবনে আব্দুল বার, শাইখ আলবানী সহ অন্যান্য আলেমগন হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আল্লামাহ ইবনে আব্দুল বার বলেন: ইরাক ও হিযাযের প্রায় সব তাবেঈ উক্ত মত ব্যক্ত করেছেন। পরবর্তি জমহুর উলামায়ে কেরাম ও ইমামগণ বিড়ালের ঝুটাকে পবিত্র বলেছেন। যেমন মালেক রহঃ, লাইছ রহঃ, আওযায়ী রহঃ, সুফিয়ান সাওরী রহঃ, শাফেয়ী রহঃ, আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহঃ ইত্যাদি। আলইসতিযকার-১/১৬৪। আবু হুরাইরা রাঃ অপর এক হাদীসে রাসূল সাঃ থেকে বর্ননা করেন, রাসূল সাঃ বলেন:
يُغْسَلُ الإِنَاءُ إِذَا وَلَغَ فِيهِ الْكَلْبُ سَبْعَ مَرَّاتٍ أُولاَهُنَّ أَوْ أُخْرَاهُنَّ بِالتُّرَابِ وَإِذَا وَلَغَتْ فِيهِ الْهِرَّةُ غُسِلَ مَرَّةً
অর্থঃ কুকুরে মুখ দিয়েছে এমন পাত্র সাতবার ধৌত করতে হবে,প্রথমবার বা (বর্ননাকারীর সন্দেহ) শেষবার মাটি দিয়ে। আর যেপাত্রে বিড়াল মুখ দিবে তা একবার ধৌত করতে হবে। ইমাম তিরমিযী রহঃ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন এবং শায়েখ আলবানী রহঃ সহীহ বলেছেন। তিরমিযী,আস-সুনান,তাহকীক,শায়েখ আলবানী রহঃ, ১/১৫১, হাদীস নং৯১। এহাদীসের আলোকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ বিড়ালের ঝুটাকে মাকরুহ বলেছেন। তবে অজু করলে তা যথেষ্ঠ হবে বলেও মত দিয়েছেন। ইবনে আব্দুল বার রহঃ বলেন:আবু হানীফা রহঃ এর বিপরীতে তার ছাত্ররা বিড়ালের ঝুটাকে পবিত্র বলেছেন। আল-ইসতিজকার,১/১৬৫, কিতাব,আত-তাহারাত, বাব,আত-তুহুর লিলউযুই।
প্রশ্নঃ 188
পিতা মাতার অনুমতি ছাড়া বিয়ের ব্যাপারে দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন। হবে কি হবে না। বিশেষ করে বর্তমানে যে সকল বিয়ে অলি ছাড়া হয়। যদি না হয় তাহলে যারা না জেনে করেছেন তাদের ব্যাপারে রুলিংস কি? ধন্যবাদ।
20 Dec 2025
আপনার প্রশ্নের জন্য শুকরান
ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের বিধান। বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী শরীয়তে এব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল সা. এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহগণের নিকট ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ নেই। তবে ইমাম আবু হানীফা রহ. সহ কতিপয় ফকীহ বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ বলেছেন। প্রখ্যাত মালেকী ফকীহ আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে রুশদ আন্দালুসী র. বলেন,
اختلف العلماء هل الولاية شرط من شروط صحة النكاح أم ليست بشرط؟ فذهب مالك إلى أنه لا يكون النكاح إلا بولي وأنها شرط في الصحة في رواية أشهب عنه وبه قال الشافعي وقال أبو حنيفة وزفر والشعبي والزهري: إذا عقدت المرأة نكاحها بغير ولي وكان كفؤا جاز وفرق داود بين البكر والثيب فقال باشتراط الولي في البكر وعدم اشتراطه في الثيب
অর্থ: বিবাহের ক্ষেত্রে ওলী শর্ত কি শর্ত নয় এই বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক র. মত পোষন করেছেন যে, ওলী ছাড়া বিবাহ হবে না। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য (ওলী) শর্ত। এমন মতই পোষন করেছেন ইমাম শাফেয়ী রা.। ইমাম আবু হানীফা, জুফার, শাবী ও জুহরী র. বলেছেন, যদি মহিলা ওলী ছাড়া বিবাহ করবে আর স্বামী যদি তার কুফু (সর্বদিক দিয়ে যোগ্য) হয় তাহলে জায়েজ হবে। বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৮(শামেলা)। এই সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন,
আলমাবসুত লিস-সারখসী, ৬/৫৩; আলমাউসায়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৯৪ও ৩১/৩২১; আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবা ৪/৪৫। কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেয়ী,৭/১৫৬। যে ইমামগন ওলী ছাড়া বিবাহ বাতিল বলেছেন তাদের দলীল:
আবু মুসা আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন,
অর্থাৎ ওলী ছাড়া বিবাহ নয়। لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ
আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৮৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১১০১;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৯৭৬১। হাদীসটি সহীহ। শায়খ আরনাউত এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ অর্থাৎযে মহিলা ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল। তিনি ৩ বার তা বলেছেন। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ১১০২; মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ২৫৩৬৫। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন আর শায়খ শুয়াইব আরনাউত সহীহ বলেছেন। উপরক্ত হাদীস সমূহের ভিত্তিতে ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ র. সহ অধিকাংশ আলেম ওলী ছাড়া বিবাহকে বাতিল বলেছেন। যে সব ইমাম ও ফকীহ ওলী ছাড়া বিবাহ জায়েজ বলেছেন তাদের দলীল:
তাবেঈদের মধ্যে ইমার জুহরী ও শাবী এরপরে ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ, জুফার সহ কিছু সংখক মুজতাহিদ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ওলী ছাড়া বিবাহ কে জায়েজ বলেছেন। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১.কুফু হতে হবে। ২.মেয়েটি বালেগা, বুঝমান হতে হবে। আলফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবায়া, ৪/৪৫; আলমাবসুত লিস-সারাখসী,৬/৬১ ও ৫/১৬। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فلا جناح عليكم فيما فعلن في أنفسهن بالمعروف অর্থাৎ মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে সৎ ভাবে যা করবে (বিয়ের ক্ষেত্রে) সে বিষয়ে তোমাদের কোন দোষ নেই। সূরা বাকারাহ-২৩৪
অন্য এক আয়াতে তালাক সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
تنكح زوجا غيره. حتى অথাৎ যতক্ষন না তারা অন্য স্বামীকে বিবাহ না করে। সূরা বাকারাহ-২৩০। অন্য প্রসংগে আল্লাহর বাণী, فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে তাদের স্বামীদের কে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না। সূরা বাকারাহ-২৩২
ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, الأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا অর্থাৎ মেয়েরা ওলীদের চেয়ে নিজের ব্যাপারে অধিক হকদার। সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৪২১। الأيم অর্থ স্বামীহীন মহিলা, পূর্বে স্বামী থাকুক বা না থাকুক। আলমজামুল ওয়াসীত। বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌদী আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনজিদ ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন,
المسألة اجتهادية ، واختلف فيها الأئمة ، فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا ، فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها
অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা, ইমামগণ এক্ষেত্রে ইখতিলাফ করেছেন। সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে, ওলী ছাড়া বিবাহবে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, পাকিস্থান ইত্যদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্মীকৃতি দেয়া হবে । বাতিল করতে বলা হবে না। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, শরীয়তে বিবাহে মেয়েদের জন্য ওলী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয় এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতমতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং মেয়েদের জন্য আবশ্যক হলো ওলীর অনুমতি নিয়ে বিবাহ করা। আর আমাদের উচিৎ বিবাহের সময় মানুষদের কে ওলীর অনুমতির বিষয়ে উৎসাহিত করা,ওলী ছাড়া বিয়ে করতে নিষেধ করা এবং ওলী থাকার কল্যান বর্ণনা করা। যারা ইতিমধ্যে ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করেছে তাদের বিষয়ে কথা হলো যেহেতু তারা একটি ফিকহী মত গ্রহন করেছেন আর বিষয়টি ইজতিহাদী এবং ইখতিলাফী তাই তাদেরকে নতুন করে বিবাহ করতে হবে না। তবে এই ঘৃনিত কাজের জন্য তাদের লজ্জিত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 189
Assalamualikum.amr questions holo outsorsing ki halal na haram?amr family financial support er jonno Ami out sorsing Kore income korte chai.at a ki kora have?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।প্রথমেই আমরা দেখব আউট সোর্সিং কি?
আউটর্সোসিং তথা ফ্রল্যিান্সিং শব্দরে মূল র্অথ হল মুক্ত পশো। র্অথাৎ মুক্তভাবে কাজ করে আয় করার পশো। আর একটু সহজ ভাবে বললে ইন্টারনেট ব্যাবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতষ্ঠিান বিভিন্ন ধরনরে কাজ করিয়ে নেয়। নিজের প্রতষ্ঠিানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে এসব কাজ করানোকে আউটর্সোসিং বলে আর যারা আউটর্সোসিংয়ের কাজ করে দেন, তাঁদরেকে ফ্রল্যিান্সার বলে। আউটসোর্সিং উপার্জন জায়েজ। তবে এই শর্তে যে, কাজটি হালাল হতে হবে, হারাম হতে পারবে না (সুদ ভিত্তিক ব্যাংক এবং হারাম পণ্যের কোম্পানীর কাজ হারামের অন্তর্ভূক্ত হবে) এবং যে সময়ে কাজ করবেন, ঐ সময়ে অন্যকারো কাজ করার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ থাকা যাবে না। যেমন, আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন, সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার চুক্তি হলো সকল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আপনি কাজ করবেন এই অবস্থায় আপনার জন্য জায়েজ হবে না ঐ সময়ের মধ্যে আউটসোর্সিং উপার্জন করা। কারণ আপনি প্রতিষ্ঠানের সাথে উক্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানের কাজ করবেন বলে ওয়াদা বদ্ধ। এবং ঐ সময়ে প্রতিষ্ঠানের কাজ করা আপনার আমানতের অন্তভ‚ক্ত। আর পবিত্র কোরআন ও হাদীসে ওয়াদা পালন ও আমানত রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমানত রক্ষা ও ওয়াদা পালনের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
১. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَوْفُواْ بِالْعُقُودِ হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের চুক্তি পূর্ণ কর। সূরা মায়েদা-১। ২. ا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَخُونُواْ اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُواْ أَمَانَاتِكُمْ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের খেয়ানত করবে না। এবং নিজেদের আমানতের খেয়ানত করবে না । এমন অবস্থায় যে, তোমরা জান। সূরা আনফাল-২৭
৩. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لا تَفْعَلُون كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لا تَفْعَلُونَ হে ঈমানদারগণ তোমরা যা করবে না তা বলবে কেন? আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃন্য বিষয় হলো তোমরা এমন বিষয় বলা যা তোমরা করবে না। সূরা সফ্- ১-২
৪. إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا - ৫৮নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা আমানতকে তার প্রাপ্য ব্যক্তির উপর পৌছে দিবে। সূরা নিসা-৫৮। মূমিনের গুণাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
، وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রæতি রক্ষা করে। সূরা মূমিনূন-৮। আর হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন,(আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত),
آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ.
মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি, ১. মিথ্যা কথা বলে, ২. ওয়াদা ভঙ্গ করে, ৩. আমানতের খেয়ানত করে। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩। উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে,আমানতের খেয়ানত করা এবং ওয়াদা ভঙ্গ করা খুবই ঘৃনিত কাজ। সুতরাং এই জঘন্য কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। মোটকথা শরীয়তে আউটসোর্সিং আয় জায়েজ। তবে শর্ত হলো ১. মূল কাজটি হালাল হতে হবে। ২. অন্যকারো সাথে চুক্তিবদ্ধ সময়ে করা যাবে না, নিজের অবসর সময়ে করতে হবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 190
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লা...এলাকায় একধরনের লোন প্রচলিত আছে কেউ এক বছরের জন্য ১ লাখ টাকা দিলে তাকে ১ বছর পর ১লাখ ২৫ হাজার টাকা ফেরত দিতে হয়,কখনো অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা লোন দেবার সময় কেটে নেয়া হয় অর্থাত ১ লাখ টাকা না দিয়ে অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা কেটে ৭৫ হাজার টাকা দেয়া হয় সেটাকে এলাকায় খাজনা বলে থাকে। প্রচলিত এই লোন ব্যক্তি পর্যায়ে আদান প্রদান হচ্ছে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে চাই
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। উল্লেখিত লেনদেন এক কথায় হারাম। কারণ এটা সুদ। নিচে দলীল সহ বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো:
এই লেনদেনটি যেহেতু সুদ তাই প্রথমে সুদ সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। সুদকে আরবীতে রিবা বলে। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত বা বেশী। ইসলামী পরিভাষায় সুদের অর্থ:
আল্লামা আব্দুল আযীয বিন বায বলেন,
هو الزيادة في أحد النوعين من المال على النوع الآخر، هذا إذا كانا من جنس واحد، كالذهب بالذهب والفضة بالفضة والبر بالبر والشعير بالشعير ونحو ذلك، إذا زاد أحدهما على الآخر يقال له ربا، شرع
অর্থাৎ লেনদেনের সময় একজাতীয় পণ্যের একটিকে আরেকটির তুলনায় বেশী দেয়া। যেমন, সোনার বিনিময়ে সোনা, রুপার বিনিমেয়ে রুপা, ....যখন একটিকে আরেকটির চেয়ে বেশী দেয়া হবে তখন তাকে সুদ বলা হবে। আল্লামা আবুল বারাকাত আন-নাসাফী আল হানাফী বলেন, فَضْلُ مَالٍ بِلَا عِوَضٍ فِي مُعَاوَضَةِ مَالٍ بِمَالٍ অর্থাৎ পণ্য লেনদেনের সময় বিনিময় ছাড়া অতিরিক্ত পণ্যই সুদ। আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ আলমাউসুলি আল হানাফী বলেন,
الزيادة المشروطة في العقد ، وهذا إنما يكون عند المقابلة بالجنس
অর্থাৎএক জাতীয় পণ্যের বিনিময়ের চুক্তিতে শর্তকৃত অতিরিক্ত অংশ হলো সুদ। মোট কথা সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা বা শস্য ইত্যাদির বিনিময়কালে কম-বেশি দেয়া নেয়াই হলো সুদ। এ থেকে আমরা জানতে পারছি যে, কাউকে টাকা, সোনা, রূপা ইত্যাদি প্রদান করে পরে তার থেকে প্রদত্ত পরিমানের চেয়ে বেশি টাকা, সোনা, রূপা ইত্যাদি গ্রহণ করাই সূদ। কাউকে ১ হাজার টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে ১ হাজার ১ টাকা নিলে এক টাকা সূদ বলে গন্য হবে। উপরে দেলনদেনে ৭৫ হাাজার টাকা দিয়ে ১ লক্ষ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা সুদ। অনুরূপভাবে এক লক্ষ টাকা দিয়ে পরে তার থেকে এক লক্ষের বেশি যে টাকাই নেওয়া হোক না কেন তা ইসলামী শরীয়াতে সূদ বলে গণ্য। সুদের সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন,
الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى الآخِذُ وَالْمُعْطِى فِيهِ سَوَاءٌ
অর্থ: সোনার বিনিময়ে সোনা, রুপার বিনিময়ে রুপা, গমের বিনিময়ে গম, জবের বিনিময়ে জব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর এবং লবণের বিনিময়ে লবন বিক্রি করবে সমান সমান নগদ নগদ। সুতরাং যে বেশী গ্রগন করবে কিংবা প্রদান করবে সে সুদী কারবার করল। দাতা ও গ্রহীতা এক্ষেত্রে সমান। উল্লেখ্য যে, তখনকার সময় সোনা-রুপাই ছিল মুদ্রা। হযরত আবু হুরাইরা রা. এবং আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তার বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم اسْتَعْمَلَ رَجُلاً عَلَى خَيْبَرَ فَجَاءَهُ بِتَمْرٍ جَنِيبٍ ، فَقَالَرَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كُلُّ تَمْرِ خَيْبَرَ هَكَذَا فَقَالَ : لاَ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا لَنَأْخُذُ الصَّاعَ مِنْ هَذَا بِالصَّاعَيْنِ {وَالصَّاعَيْنِ} بِالثَّلاَثَةِ فَقَالَ : لاَ تَفْعَلْ بِعِ الْجَمْعَ بِالدَّرَاهِمِ ثمَّ ابْتَعْ بِالدَّرَاهِمِ جَنِيبًا
রাসূল সা. খয়বারে এক ব্যক্তিকে জাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত করলেন। সে তাঁর নিকটে উৎকৃষ্টমানের খেজুর নিয়ে আসলো। রাসূল সা. বললেন, খয়বারের সব খেজুর কি একই মানের? সে বলল, আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর রাসূল! না, বিষয়টি এমন নয়। আমরা উন্নতমানের খেজুরের এক সা বিক্রি করি নিম্নমানের খেজুরের দুই সা এর বিনিময়ে এবং দুই সা কে তিন সা এর বিনিময়ে। রাসূল সা. বললেন, তুমি এমন করবে না।নিম্নমানের খেজুর বিক্রি করবে দিরহাম দ্বারা এরপর উন্নতমানের খেজুর ক্রয় করবে দিরহাম দ্বারা। সহীহ বুখারী: হাদীস নং ৪২৪৫। উবাদা ইবনে সামেত, উমার (রা.) সহ আরো অনেক সাহাবী থেকে এই অর্থের অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীস অনুধাবনের জন্য একটি উদাহরণ দেখুন। মনে করুন বাজারে খুব ভাল চাউল ৬০ টাকা এবং কমা চাউল ৪০ টাকা। তাহলে তিন কেজি কমা চাউল বিক্রয় করলে ২ কেজি ভাল চাউল কেনা যায়। কিন্তু ক্উে যদি ক্রয় বিক্রয় না করে সরাসরি তিন কেজি কমা চাউল দিয়ে দুই কেজি ভাল চাউল গ্রহণ করে তবে এক কেজি সূদ বলে গণ্য হবে। ইসলাম বাজারে ক্রয়বিক্রয়ে ধারা বৃদ্ধি করতে উৎসাহ দেয়। কোনো অজুহাতেই সূদ গ্রহণ বৈধ করে নি। এই সব হাদীসের ভিত্তিতে সমস্ত আলেম একমত যে, মুদ্রার বিনিময়ে মুদ্রা (যদি এক জাতীয় হয়) কমবেশী করে বিনিময় করা হারাম। আর টাকা যেহেতু মুদ্রা তাই টাকার ক্ষেত্রেও কমবেশী করে বিনিময় হারাম হবে। সুতরাং একলক্ষ টাকা দিয়ে পরবর্তীতে এর চেয়ে বেশী নেয়া নিঃসন্দেহ সুদ। এটা পরিহার করতে হবে। সুদের ভয়াবহাতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (২৭৫)
অর্থ: যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে সেভাবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, শয়তান যাকে মোহবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয় বিক্রয় ও তো সুদেরই মত! অথচ আল্লাহ তায়ালা ক্রয় বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেল এসেছে এবং বিরত হয়েছে, যা পূর্বে হয়ে গেছে তা তার এবং সেই বিষয়টি আল্লাহ তায়ালার জিম্মাই। আর যারা পূনরায় সুদ খাবে তারা জাহান্নামে যাবে। সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৭৬। হযরত জাবির রা. বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ.
রাসূল সা. সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক, সাক্ষীদ্বয় সবার উপর লানাত দিয়েছেন এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান। সহীহ মুসলিম, ৪১৭৭। আল্লাহ আমাদের যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বেঁেচ থাকার তাওফীক দান করুন।
প্রশ্নঃ 191
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, আপনার কাছে আমার কাছে আমার জানার বিষয় হল, আউস ও খাজরাজের লোকেরা কোন ধর্মের মানুষ ছিলেন?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদত্ত হল । আউস ও খাজরাজ গেত্রের লোকেরা আরবের অন্যান্য মানুষদের মতই ইব্রাহীম আঃ এর ধর্মের অনুসারী ছিলেন। এধর্মের ভিতরে তারা বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি সাধন করেন এবং তারা শিরকে লিপ্ত হন। তারা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য ফিরিশতা, জিন, নবী, ওলীগণ, তাদের প্রতিমা বা স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও দ্রব্যের পুজা করতেন। এছাড়া নানাবিধ কুসংস্কার তাদের মধ্যে প্রসার লাভ করে।
প্রশ্নঃ 192
Is Sheikh Albani the best muhaddis in thise century
20 Dec 2025
শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের অন্যতম ছিলেন। হাদীস শাস্ত্রে তাঁর খেদমত ব্যাপক।তবে তিনি বর্তমান সময়ের বেস্ট মুহাদ্দিস ছিলেন এটা এক কথায় বলা কঠিন। বিষয়টি আপেক্ষিক। কারো নিকট তিনি বেস্ট মুহাদ্দিস আবার কারো নিকট নন। আর এরূপ কথা বলা উচিতও নয়। এগুলো অতিভক্তিমূলক কথা মাত্র। শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী একজন বড় মুহাদ্দিস ছিলেন এক কথাটুকুই তাঁর মূল্যায়নের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন। আল্লাহ শাইখ আলবানীকে তাঁর কর্মের যোগ্য পুরস্কার দান করুন ও তাকে রহমত করুন। আমাদের আবেগকে সুন্নাতের অনুগত করার তাওফীক দান করুন।
প্রশ্নঃ 193
পরিবার পরিজন ছেড়ে ৪০ দিন বা এক বছরের জন্য তাবলীগে যাওয়া প্রসংগে কিছু জানতে চাই।
20 Dec 2025
তাবলীগে যাওয়া ভাল কাজ। যদি কেউ পরিবারের সাথে সমন্বয় করে তাদের ফরজ হক আদায় করে যেতে পারেন তাহলে হতে পারে। তবে এই ধরনের যাওয়ার ব্যাপারে দ্বীন শরীয়ত কোথাও উৎসাহ দেয়া হয়নি। রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরামের কেউ দ্বিনী দাওয়াতের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারন করেন নি।রাসূল সাঃ এর কাছে সাহাবায়ে কেরাম এসেছেন । বিশদিন থাকার পর পাঠিয়ে দিয়েছেন। বললেন না যে, চল্লিশ দিন বা একমাস বা দুই মাস পূর্ণ করে যাও। কোন নির্দ্দিষ্ট সময়সীমা না বেধে যে কয়দিন পারবেন থাকবেন এরপর চলে এসে পরবর্তিতে আবার যাবেন,এটার নাম হল দ্বীন এবং এটা নফল। সুতরাং এবিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা এবং নফলকে ফরযের পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়াই উচিৎ। যদি দিন তারিখের মধ্যে বিশেষ ফযিলত আছে মনে করা হয় তাহলে তা বিদআতে পরিনত হবে। আল্লাহ আমাদেরকে বিদআত থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 194
ফেতরার বন্টন ঈদের সালাতের আগে না পরে?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে নিচে সামান্য আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন, উলামায়ে কেরামের নিকট মুস্তাহাব হল, ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়ে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বপর্যন্ত সময়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে। কেননা রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে তা আদায় করতেন। পাশাপাশি দরিদ্রশ্রেণীর মানুষেরা মানুষের দ্বারে দ্বারে বেড়ানো থেকে মুক্ত হয়ে নামাজে শরীক হতে পারে। ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِإِخْرَاجِ زَكَاةِ الْفِطْرِ أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ.
(অর্থঃ)রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম, আস-সহীহ, কিতাব,আয-যাকাত, বাব, আল আমর বিইখরাজি যাকাতিল ফিতর ক্ববলাস সালাত, হাদীস নং ২৩৩৬। তবে যদি কেউ এক-দুইদিন পূর্বে তা দিয়ে দেয় তা যায়েয আছে এবং তার ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। আল-মুগনি, বাব, সাদাকাতুল ফিতর,মাসআলাতু তাকদীমুল ফিতর ক্ববলাল ঈদ বিইয়াওমাইনি খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৯৪। বুখারীতে এসেছে
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : فَرَضَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صَدَقَةَ الْفِطْرِ .....وَكَانُوا يُعْطُونَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ ، أَوْ يَوْمَيْنِ.
(অর্থঃ) ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ সাদাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন। ...আর সাহাবায়ে কেরাম ফিতরের পূর্বে(রমজানের রোজা একটি বা দুইটা বাকী থাকতে) তা আদায় করতেন। বুখারী, হাদীস নং ১৫১১। সহীহ ইবনে হিব্বানে এসেছে:
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر بإخراج زكاة الفطر أن تؤدى قبل خروج الناس، وأن عبد الله كان يؤديها قبل ذلك بيوم أو يومين
(অর্থঃ) রাসূল সাঃ ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আর আব্দুল্লাহ (ইবনে উমার) রাঃ ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা আদায় করতেন। সহীহ ইবনে হিব্বান, তাহকীক, শুয়াইব আরনাউত, খন্ড-৮,পৃষ্ঠা-৯৩। শায়েখ শুয়াইব আরনাউত বলেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, সহীহ মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী। আর নামাজের পরে দেয়ার বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মতামত দেখলে বুঝা যায় যে, তাদের মতে এবিষয়টি মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। ইবনে হাযাম রহঃ হারাম বলেছেন। ফাতহুল ক্বাদীরের লেখক আল্লামা ইবনে হুমাম রহঃ বলেন: যদি ঈদুল ফিতরের দিন ফিতরা কেউ না তাহলে তা তাদের থেকে রহিত হবে না, বরং পরবর্তিতে তা আদায় করা আবশ্যক। ফাতহুল ক্বাদীর খন্ড ৪ পৃষ্ঠা ২৬২। (শামিলা)। তাছাড়া পরবর্তিতে আদায় করলে ঈদের নামাজের পূর্বে দেয়ার যে ফযিলত ছিল তা পাওয়া যাবে না বরং তা সাধারন সদকা হিসাবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে:
مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِىَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِىَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ.
(অর্থঃ) নামাজের পূর্বে যেটা আদায় করা হল সেটা মাকবুল যাকাত আর যেটা নামাজের পরে আদায় করা হল দান। সুনানে আবু দাউদ,বাব, যাকাতুল ফিতর, খন্ড ২,পৃষ্ঠা ২৫,তাহকীক, শায়েখ আলবানী। উক্ত হাদীসের ব্যাক্ষায় ড. ঝুহাইলী বলেন: সাদকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল অন্যান্য সময়ের ন্যায় সাধারন দান। আল ফিকহুল ইসলামীয়্যু ওয়া আদিল্লাতুহু,খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬২, মাকতাবাতু থানবী, দেওবন্দ। ফাতহুল ক্বাদীরের লেখক আল্লামা ইবনে হুমাম রহঃ বলেন: যদি ঈদুল ফিতরের দিন ফিতরা কেউ না তাহলে তা তাদের থেকে রহিত হবে না, বরং পরবর্তিতে তা আদায় করা আবশ্যক। ফাতহুল ক্বাদীর খন্ড ৪পৃষ্ঠা ২৬২। (শামিলা)। মোটকথা, ঈদের দিন ফযরের পর থেকে ঈদের নামাজের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। তবে যদি কেউ এক-দুইদিন আগে তা দিয়ে দেয় তবে তা আদায় হয়ে যাবে। ঈদের নামাজের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা সকল ইমামদের মতে মাকরুহ। তবে তা যততাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে দিতে হবে এবং সেটা সাধারন দান হিসাবে গণ্য হবে। অতএব আমাদের উচিৎ ঈদের নামাজের পর্বেই তা আদায় করার মাধ্যমে রাসূল সা. এর সুন্নাতের অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় রাসূল সা. এর সুন্নাতের এত্তেবা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 195
আসসালামু আলাইকুম, আমার বাবা গত বছর (২০১৪ ইং) রমজানের রোজার ৩/৪ টি রাখার পর অসুস্থ হয়ে পরে। যার কারণে আর রোযা রাখা সম্ভব হয়নি। এখনো পুরাপুরি সুস্থ হয়নি। তবে আল্লাহ চাহেতো এবার রমযানের রোযা রাখার নিয়াত করেছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো এ অবস্থায় পূর্বের রোযার হুকুম কি হবে? তিনি পূর্বের রোযা রাখার ব্যাপারে অনেকটা (অসুস্থতার কারনে) অপারগতা প্রকাশ করছেন। পূর্বের রোযা কি ফিদিয়া কিংবা মিসকিনকে খাওয়ানোর দ্বারা আদায় হবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। অসুস্থতার জন্য রোজা রাখতে না পারলে সুস্থ হওয়ার পর তা আদায় করতে হবে। আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে ফিদিয়া দিতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে তাহলে তার জন্য অন্য দিনগুলো, (অর্থাৎ সে পরে সুস্থ হলে কিংবা সফর থেকে ফিরে আসলে যে রোজাগুলো রাখতে পারেনি সেগুলো রাখবে)। আর যারা রোজা রাখতে গিয়ে কষ্টের শিকার হবে তাদের উপর আবশ্যক হল ফিদিয়া একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো। সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৪। এই আয়াতের ভিত্তিতে আলেগণের সর্বাক্যমতে যদি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার জন্য ফিদিয়া দেয়া যাবে না। আর যদি সুস্থ হওয়ার আশা না থাকে তাহলে ফিদিয়া দিতে হবে। আধুনিক ফিকহী কিতাব আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু এর লেখক ড. ওহুবাহ আঝ-ঝুহায়লি বলেন, وتجب الفدية أيضاً بالاتفاق على المريض الذي لا يرجى برؤه، لعدم وجوب الصوم عليه، অর্থ: সর্বাক্যমতে ফিদিয়া ওয়াজিব হবে এমন অসুস্থ ব্যক্তির উপর যার সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে আশা করা যায় না। কেননা তার উপর তখন রোজা ওয়াজিব থাকে না। আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিল্লাতুহু, ২/৬০৫। আরো দেখুন: আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবা, ১/৪৪৫। উপরুক্ত দলীল সমূহে ভিত্তিতে যা বোঝা যায় তা হল, আপনার পিতা যেহেতু আগামী রমযানে রোযা রাখার ইচ্ছা করছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে তিনি এমন অসুস্থ নন যে, তার সুস্থ হওয়া অসম্ভব, তাই আপনার পিতাকে অপেক্ষা করতে হবে। যদি তিনি সুস্থ হয়ে যান তাহলে রোজা কাযা করবেন আর যদি পরবর্তিতে এমন হয় যে তার সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে কোন আশা করা যাচ্ছে না তখন ফিদিয়া দিতে হবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 196
সালাতুল জানাযায় তাকবীর গুলোর সময় হাত উঠাতে হবে কি না? দলীল সহ জানালে উপকৃত হব।
20 Dec 2025
গুরুত্বপূর্ণ এই পশ্নটি করার জন্য আপনারক শুকরান। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। উলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত যে, জানাযার নামাজে প্রথম তাকবীরে হাত উঠানো সুন্নাত। কিন্তু পরবর্তি তাকবীর গুলোরতে হাত উঠাতে হবে কিনা এব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে কিছুটা মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাযহাব
শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাযহাবের উলামায়ে কেরাম সহ ইবনুল মুনযিরী রহঃ, শায়েখ ইবনে বায রহঃ, ইবনে উসায়মীন রহঃ এর মতে পরবর্তি তাকবীর গুলোতেতে হাত উঠানো সুন্নাত। দলীলঃ : رأيتُ رسول الله - صلَّى الله عليه وسلَّم - يرفع يدَيْه مع التكبير عن وائل بن حُجْر قال
رواه أحمد (4/ 316) ونحوه الطيالسي (1021) والدَّارِمي (1/ 285).
অর্থঃ ওয়ায়েল ইবনে হজর রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন: রাসূল সাঃ কে তাকবীরের সাথে হাত উঠাতে দেখেছি। মুসনাদে আহামদ, ৪/৩১৬,তয়ালিসী, (১০২১), দারেমী, ১/ ২৮৫। শায়েখ আলবানী রহঃ হাদীসের সনদটিকে হাসান বলেছেন। উক্ত হাদীসটি ব্যাপক অর্থে এসেছে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট করে কোন নামাজের কথা উল্লেখ করা হয়নি । ফলে জানাযার নামাযকেও শামিল করবে বলে এমতের উলামায়ে কেরাম মত প্রকাশ করেছেন। حديث عمر:
أنَّه كان يَرفع يديه مع كلِّ تكبيرة في الجنازة وفي العيد، رواه البيهقيُّ (3/ 293) والأثرم، وفيه ابن لهيعة، وابن لهيعة ضعيفُ الحفظ، ولذلك فهو يعتبر به في الشَّواهد والمُتابَعات، ولا يكون حجَّة إذا تفرَّد، إلا إن روى عنه العبادلةُ كما عُرِف في محلِّه
ইবনে উমর রাঃ জানাজার নামাযে এবং ঈদের নামাযের প্রত্যেক তাকবীরে হাত উুঠাতেন । বায়হাকী, ৩/২৯৩,
হানাফী এবং মালেকী মাযহাব
জাহেরুর রেওয়াত অনূযায়ী হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরাম এবং মালেকী মাযাহাবের উলামায়ে কেরাম এবং সুফিয়ান ছাওরী রহঃ ও ইবনে আবি লাইলা রাহঃ এর মতে জানাযার অন্যান্য তাকবীর গুলোতে হাত উঠাতে হবে না। এমতের উলামায়ে কেরাম বলেন শরীয়তের কোন বিষয় সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দলীল প্রয়োজন। আর এব্যাপারে কোন দলীল পাওযা যায় না । ইবনে হাযাম রহঃ বলেন: প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য তাকবীর গুলোতে হাত উঠানোর বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে প্রমানীত নেই । তিনি বলেন: রাসূল সাঃ মাথা নিচু করার সময় এবং মাথা উঠানোর সময় হাত উঠাতেন। আর এই বিষয়টি জানাযায় নেই । তাই অন্যান্য তাকবীরের সময় হাত উঠাতে হবে না। আল্লাম শাওকনী রহঃ বলেন: এব্যাপারে প্রমাণযগ্য কোন কিছু রাসূল সাঃ খেকে প্রমাণীত নেই । এবং ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের বক্তব্যতেও এব্যাপারে কোন দলীল নেই। সুতরাং উচিৎ হল হাত উঠানোর বিষয়টি প্রথম তাকবীরের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা। নাইলুল আওতার ৫/ ৫৫ । শায়েখ আলবানী রহঃ বলেন: এটা (জানাযার প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য তাকবীরগুলোতে হাত উঠানো) সুন্নাত নয়। কারন রাসূল সাঃ এর থেকে প্রমানীত নয়। আর ইবনে ওমর এর বিষয়টি এটাকে সু্ন্নাত বানাতে পারেনা । তামামুল মিন্নাহ, ১/৩৪৮।
প্রশ্নঃ 197
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম আপনার কাছে কয়েকটি বিষয় জানতে চাই। অনুগ্রহ করে কোরআন হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব। ১)দাফনের সময় কোন মাসনূন দোয়া আছে কি না?২)দাফনের পর সুন্নাত সম্মত কাজগুলো কি কি?৩)দাফনের পর মাটির ঢিলা কবরের ভিতর রাখা সুন্নাত কি না?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণগুলো করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যাবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। আশাকরি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। ১) জ্বী হা, দাফনের সময় মাসনূন দোয়া আছে। যিনি কবরে মৃত ব্যাক্তিকে কবরে নামাবেন তিনি নামানোর সময় নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবেন। হাদীসেএসেছে রাসূল সাঃ যখন কোন ব্যাক্তিকে কবরে রাখতেন তখন তিনি এই দোয়াটি পাঠ করতেন। عن نافع عن ابن عمر : أن النبي صلى الله عليه و سلم كان إذا أدخل الميت القبر قال مرة بسم الله وبالله وعلى ملة رسول الله وقال مرة بسم الله وبالله وعلى سنة رسول الله صلى الله عليه و سلم
তিরমিযী রহঃ এই সনদে হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন এবং শায়েখ আলবানী রহঃ সহীহ বলেছেন। সুনানে তিরমিযী, ৩/৩৬৪,তাহকীক, আহমাদ শাকের এবং আলবানী। ২) দাফনের পর সুন্নাত হল, কিছুক্ষণ অবস্থান করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। এব্যাপারে হাদীসে এসেছে
عن عثمان بن عفان قال : كان النبي صلى الله عليه و سلم إذا فرغ من دفن الميت وقف عليه فقال استغفروا لأخيكم وسلوا له بالتثبيت فإنه الآن يسأل অথ....হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃ থেকে বণীত তিনি বলেন: নবী সাঃ যখন দাফনের কাজ শেষ করতেন তখন সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন: তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও । এবং তার জন্য দৃঢ়তা কামনা কর, কারন তাবে এখন জিজ্ঞাসা করা হবে। হাদীসটিকে শায়খ আরবানী সহীহ বলেছেন। সুনানে আবু দাউদ,২/২৩৪ (৩২২১)। হাকেম রহঃ সনদের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন। মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৭০ (১৩৭২)। ৩) দাফনের সময় মাটির ঢিলা নয়, বরং তিনবার স্বাভাবিকমাটি কবরে দেয়া মুস্তাহাব। এব্যাপারে একটি হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه : أَنَّ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلى عَلى جِنَازَةٍ، ثُمَّ أَتَى قَبْرَ المَيِّتِ فَحَثَى عَليهِ مِنْ قِبَل رَأْسِهِ ثَلاثاً
হযরত আবু হরায়রা রাঃ রাসূল সাঃ থেকে বননা করেন যে, তিনি একবার জানাজার নামাজ আদায় করে মৃত ব্যক্তির কবরের কাছে আসলেন এবং তার মাথার দিক থেকে তিন বার মাটি দিলেন। ইবনে মাজা ১/৪৯৯। ইবনুল কাত্তান হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন বায়ানুল ওহমী ওয়াল ইহাম,৫/২৭ নং পৃষ্ঠাতে। এবং হাদীসের সনদকে হাফেজ ইবনে হাজার সহীহ বলেছেন,তালখীসুল হাবীর ২/১৩৯ পৃষ্ঠা।
প্রশ্নঃ 198
Tahiyatul mosjid shuru korasi othoba ak rakat por jodi foroj namajer ekamot hoy,tokhon namaj sarar podhoti ki? salam firate hobe ki?
20 Dec 2025
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়া অবস্থায় ফরজ নামায শুরু হলে করণীয়এবং ফরজ নামাযের সময় নফল শুরু করার বিধান:
হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন,
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلاَّ الْمَكْتُوبَة অর্থ: যখন নামাযের ইকামত দেয়া হয় তখন ফরজ নামায ছাড়া অন্য কোন নামায নেই। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১০। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে আলেমগণ ঐক্যমত পোষন করেছেন যে ফরজ নামাযের ইকামত হলে কোন নফল নামায শুরু করা যাবে না। তবে হানাফী এবং মালেকী মাযহাবের আলেমগন বিশেষ সর্তসাপেক্ষে শুধুমাত্র ফজরের দুই রাকআত সুন্নত নামায পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। শর্তসমূহ নিম্মরুপ:
১. রাকআত পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা থাকা। ২. মসজিদের বাইরে অথবা পিছনের দিকে কাতার থেকে দূরে কোথাও পড়া। ইমাম নববী রহ. উক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন, فِيهَا النَّهْي الصَّرِيح عَنْ اِفْتِتَاح نَافِلَة بَعْد إِقَامَة الصَّلَاة ، سَوَاء كَانَتْ رَاتِبَة كَسُنَّةِ الصُّبْح وَالظُّهْر وَالْعَصْر أَوْ غَيْرهَا ، وَهَذَا مَذْهَب الشَّافِعِيّ وَالْجُمْهُور ، وَقَالَ أَبُو حَنِيفَة وَأَصْحَابه : إِذَا لَمْ يَكُنْ صَلَّى رَكْعَتَيْ سُنَّة الصُّبْح صَلَّاهُمَا بَعْد الْإِقَامَة فِي الْمَسْجِد مَا لَمْ يَخْشَ فَوْت الرَّكْعَة الثَّانِيَة . وَقَالَ الثَّوْرِيّ : مَا لَمْ يَخْشَ فَوْت الرَّكْعَة الْأُولَى . وَقَالَتْ طَائِفَة : يُصَلِّيهِمَا خَارِج الْمَسْجِد وَلَا يُصَلِّيهِمَا بَعْد الْإِقَامَة فِي الْمَسْجِ
এই হাদীসের ভিতর স্পষ্ট ভাবে ইকামতের পরে নফল নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। চাই সেটা সুন্নাতে রাতেব হোক, যেমন, ফজর, যোহর, আসরের সুন্নত হোক বা অন্য সুন্নত হোক (যেমন, তাহিয়্যাতুল মসজিদ)। এটাই ইমাম শাফেয়ী এবং জমহুর উলামায়ে কেরামের অভিমত। আবু হানিফা এবং তার ছাত্ররা বলেছেন, ফজরের সুন্নত না পড়তে পারলে মসজিদের মধ্যে পড়ে নিবে যদি দ্বিতীয় রাকআত ছুটে না যায়। ইমাম ছাওরি বলেছেন, যদি প্রথম রাকআত ছুটে না যায়। একদল আলেম এই অভিমত ব্যক্ত করেছন যে, ইকামতের পর মসজিদের বাইরে পড়বে, ভিতরে পড়বে ন। শরহুন নববী আলা সহীহ মুসলিম ৩/২৮। তিনি আরো বলেছেন, وقال مالك مثله ان لم يخف فوت الركعة فان خافه صلى مع الامام
এবং মালেক রহ. অনুরুপ মত পোষন করেন, যদি রাকআত ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকে। সুতরাং যদি নামায ছুটে যাওয়ার ভয় করে তাহলে ইমামের সাথে ফরজ নামায পড়বে। আলমাজমু ফি শরহিল মুহাযযাব ৪/২১২
আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশ্মীরী উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
قال الظواهر : من كان يصلي فأقيمت انقطعت صلاته وليس هذا عند أحد ، وأما إذا أقيمت فلا يشرع في صلاة إلا في سنتي الفجر عند الأحناف والموالك ، ومذهب الأحناف أن يأتي بهما بشرط وجدان الركعة وأدائهما خارج المسجد ، وأما الموالك فقال مالك : يأتي بهما خارج المسجد بشرط رجاء وجدان الركعتين
আহলে জাহেরগণ বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি (সুন্নত) নামায পড়ে আর ফরজ নামাযের ইকামত দেয়া হয় তখন সে সুন্নত নামায ছেড়ে দিবে। অন্য কেউ এমন কথা বলেনি। পক্ষান্তরে যখন ইকামত দেয়া হয় তখন সুন্নত নামায শুরু করা যাবে না। তবে হানাফী এবং মালেকীদের নিকটে ফজরের সুন্নত আদায় করবে। হানাফীদের অভিমত হলো রাকআত পাওয়া যাবে এবং মসজিদের বাইরে আদায় করবে এই শর্তে আদায় করা যাবে।আর ইমাম মালেক র. বলেছেন, মসজিদের বাইরে এই শর্তে আদায় করা যাবে যে, দুই রাকআত পাওয়ার আশা থাকবে। আলআরফুশ শাজি লিল কাশ্মীরী ১/৪৭০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.), আবু দারদা (রা.) প্রমুখ সাহাবী এবং কতিপয় তাবেয়ী থেকেও বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামায়াত শুরু হওয়ার পরেও মসজিদের বাইরে, রাস্তায় বা দূরবর্তী কোন কোণে সুন্নাত পড়ে জামাতে শরীক হতেন। শরহে মায়ানিল আছার ১/২৫৪-২৫৬। তবে অনেকগুলো হাদীসে রাসূল সা. ফজরের জামাতয়াত শুরু হলে সুন্নত পড়তে নিষেধ করেছেন। যেমন: মালিক ইবনে বুহাইনা (রা.) থেবে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন,
أُقِيمَتْ صَلاَةُ الصُّبْحِ فَرَأَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- رَجُلاً يُصَلِّى وَالْمُؤَذِّنُ يُقِيمُ فَقَالَ أَتُصَلِّى الصُّبْحَ أَرْبَعًا.
ফজরের ইকামত শুরু হলো।রাসূল (সা.) দেখেন মুয়াজ্জিনের ইকামতের সময় এক ব্যক্তি নামায (সুন্নত নামায) পড়ছে। তখন তিনি বলেন, তুমি কি ফজরের সালাহ চার রাকআত আদায় করবে। মুসলিম, হাদীস নং৭১১। অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন,
أقيمت صلاة الصبح فقام رجل يصلي الركعتين فجذب رسول الله صلى الله عليه و سلم بثوبه فقال أتصلي الصبح أربعا
ফজরের নামাযের ইকামতের পরে এক ব্যক্তি দু রাকআত সুন্নত পড়তে শুরু করে, তখন রাসূল (সা.) তার কাপড় ধরে টান দিয়ে বললেন,তুমি কি ফজর চার রাকআত পড়বে। মুসানাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১৩০। শায়খ শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে কিছু কিছু আলেম বলেন, সুন্নত বা নফল নামায পড়াকালীন সময়ে যদি ফরজ নামায শুরু হয়ে যায় তাহলে সুন্নত ছেড়ে দিয়ে ফরজে শরীক হতে হবে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে সুন্নাত ছেড়ে দিবে না বরং হালকাভাবে আদায় করবে। নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল:
আল্লামা কাশ্মীরী র. উক্ত হাদীসের আলোচনায় বলেন,
ذهب طائفةٌ من أهل الظواهر إلى ظاهر الحديث، وقالوا: إن أُقِيمَتِ الصلاةُ وهو في خلال الصلاة بَطَلَتِ صلاته، ولم يَذْهَب إليه أحدٌ من الأئمة غيرها. وقال الجمهور: بل يُتِمُّها ولا يقطعها
আহলে জাহেরদের একটি দল হাদীসের বাহ্যিক অর্থ গ্রহন করেন। তারা বলেন, সুন্নত নামায পড়া অবস্থায় ফরজ নামাযের ইকামত দিলে সুন্নত বাতিল হয়ে যায়। তারা ছাড়া ইমামদের কেউ এমন কথা বলেননি। অধিকাংশ আলেম বলেছেন, সুন্নত পূর্ণ করবে, ছেড়ে দিবে না। ফাইজুল বারী ফি শরহি সহীহ বুখারী ২/৪২২। প্রখ্যাত হাম্বলী ফকীহ শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে কুদামাহ আল মুকাদ্দেসী বলেন, وإذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة فإن كان نافلة أتمها إلا أن يخشى فوات الجماعة فيقطعها
যখন ফরজ নামাযের ইকামত দেয়া হয় তখন ফরজ ব্যতিত অন্য কোন নামায নেই। যদি ঐসময় নফল (সুন্নত) নামায পড়তে থাকে তাহলে পূর্ণ করবে। তবে জামায়াত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে ছেড়ে দিবে। ঝা-দুল মুসতাক্বনী ১/৫৩
সউদি আরবের প্রখ্যাত হাম্বলী ফকীহ আল্লামা শানকিতি বলেন,
أن تقام الصلاة وأنت في أثناء الصلاة، فإن غلب على ظنك أنك سوف تتم الصلاة قبل أن يركع الإمام ويمكنك أن تدرك الركعة معه فحينئذ تتم الصلاة على قول جماهير العلماء، خلافاً للظاهرية وأهل الحديث، حيث قالوا: إذا أقيمت الصلاة -حتى ولو غلب على ظنك أنك تدرك الإمام في ركوعه- فإنك تقطع هذه الصلاة، ولو كنت في آخرها؛ لظاهر قوله صلى الله عليه وسلم: ( فلا صلاة إلا المكتوبة ) والصحيح مذهب الجمهور؛ لأن الله يقول -كما في التنزيل- : { وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ } [محمد:৩৩]، فنهانا عن إبطال العمل، والنبي صلى الله عليه وسلم يقول: ( إن خير أعمالكم الصلاة )، فنهانا الله عن إبطال العمل، والصلاة عمل، فلا نبطلها إلا بوجه بين، فإنه إذا غلب على ظنك أنك مدرك للركعة جمعت بين الأمرين، والقاعدة: (الجمع بين النصين أولى من العمل بأحدهما وترك الآخر)
অর্থ: নামাযের ইকামত দেয়া হচ্ছে আর তুমি সুন্নত নামায পড়ছো এই অবস্থায় যদি তোমার ধারণায় প্রবল হয় যে, ইমাম সাহেব রুকু করার পূর্বেই তুমি সুন্নত শেষ করতে পারবে এবং তোমার পক্ষে তার সাথে রাকআত পাওয়া সম্ভব তাহলে জমহুর উলামায়ে কেরামের অভিমত হলো তুমি সুন্নত নামায পূর্ণ করবে। আহলে জাহের এবং আহলে হাদীসগণ এর বিপরীত মত পোষন করেন। তারা বলেন, যখন ইকামত দেয়া হবে তখন তুমি এই নামায ছেড়ে দিবে, যদিও তোমার ধারণায় প্রবল হয় যে, তুমি ইমাম কে রুকুতে পাবে, কিংবা তুমি নামাযের শেষ দিকে থাক। উক্ত হাদীসের জাহেরী অর্থ গ্রহন করে তারা একথা বলেন।সহীহ হলো জমহুরের মাজহাব। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,তোমরা তোমাদের আমলকে নষ্ট করো না। (সূরা মুহাম্মাদ:৩৩)। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল বাতিল করতে নিষেধ করেছেন। আর রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের সবচেয়ে উত্তম আমল হলো নামায। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৭৭)। হাদীসটি সহীহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল বাতিল করতে নিষেধ করেছেন আর নামায হলো আমল সুতরাং সুষ্পষ্ট কারণ ছাড়া আমরা আমল বাতিল করব না। তাই যখন তোমার ধারণায় প্রবল হবে যে, তুমি রাকআত পাবে তখন উভয়টিকে (কুরআন ও হাদীস) একত্রিত করবে। আর কায়দা হলো একটির উপর আমল করে আরেকটি ছেড়ে দেয়া থেকে দুই নসের মাঝে সমন্বয়সাধন করা উত্তম। শারহু ঝাদিল মুসতানকী ৬/৫৮ কুতুবুল ফিক্হ গ্রন্থাকার বলেছেন,
وإن أقيمت الصلاة وهو في صلاة نافلة قد أحرم بها من قبل ; أتمها خفيفة, ولا يقطعها ; إلا أن يخشى فوات الجماعة ; لقول الله تعالى : وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ فإن خشي فوت الجماعة, قطع النافلة ; لأن الفرض أهم আর যদি ব্যক্তি নফল নামায পড়া অবস্থায় ফরজের ইকামত দেয়া হয় যে নফলের তাহরীমা সে আগেই করেছিল তাহলে হালকা ভাবে সে তা পূর্ণ করবে।ছেড়ে দেবে না। তবে যদি জামায়াত ছুটে যাওয়ার আশংকা করে তাহলে ছেড়ে দিবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা তোমাদের আমলকে নষ্ট করো না। তবে যদি সে জামায়ত ছুটে যাওয়ার আশংক করে তাহলে নফল ছেড়ে দিবে। কেননা ফরজ অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কুতুবুল ফিক্হ ৩/৬৫। এই সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন আল ইনসাফ ২/১৫২
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, অধিকাংাশ আলেমের মতে ফরজ নামায শুরু হলেই তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ছেড়ে দেয়া যাবে না। বরং ফরজ ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকলে তা পূর্ণ করবে। তবে যদি ফরজ ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সহীহ মতানুযায়ী ছালামের মাধ্যমে সুন্নত ছেড়ে দিবে। কেননা আলী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন,
مفتاح الصلاة الطهور وتحريمها التكبير وتحليلها التسليم
অর্থ: নামাযের চাবি হলো পবিত্রতা আর তার সূচনা হলো তাকবীর আর শেষ হলো সালাম। আল্লাহ তায়লা সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 199
(সামনের কাতারের কাউকে টেনে নেয়ার পর উক্ত ফাকা জায়গা পূরণ করা) একা নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে যদি সামনের কাতারের কাউকে টেনে নেওয়া হয় তাহলে সামনের কাতারের ফাঁকা জায়গা কিভাবে পূরণ করবো?
20 Dec 2025
এক্ষেত্রে দুই পাশের মুসুল্লিরা চেপে এসে উক্ত ফাঁকা জায়গা পূরণ করবে। হাদীস শরীফে এভাবে সরে এসে ফাঁকা জায়গা পূরণ করাকে অনেক সওয়াবে বিষয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বারা ইবনে আযেব রাঃ থেকে বর্ণীত এক হাদীসে তিনি বলেন:
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول إن الله وملائكته يصلون على الذين يصلون الصفوف الأول وما من خطوة أحب إلى الله من خطوة يمشيها العبد يصل بها صفا
অর্থঃ রাসূল সা.বলতেন: নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দুয়া করেন ঐ ব্যক্তিদের জন্য যারা কাতারগুলোতে মিলেমিলে দাড়ায়। আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হাটা-চলা হল, যা কাতারের সাথে মিলে দাড়ানোর জন্য হয়ে থাকে। সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব,১/১২২, বাব, আত তারগীব ফী ওয়াসলিস সুফুফ ওয়া সাদ্দিল ফারজ। শায়েখ আলবানী হাদীসটি সহী লিগায়রিহী বলেছেন। আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণীত অপর একটি হাদীসে রাসূল সা. বলেন:
إن الله عز و جل وملائكته عليهم السلام يصلون على الذين يصلون الصفوف ومن سد فرجة رفعه الله بها درجة
অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য যারা কাতারের সাথে মিলে দাড়ায়। আর যারা ফাকা জায়গা বন্ধ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। শায়েখ শুয়াইব হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,তাহকীক,শুয়াইব আরনাইত, ৬/৮৯ (২৪৬৩১) বাব, হাদীসু সায়্যিদাতু আয়েশা রাঃ। আবু হুরাইরা রাঃ রাসূল সা. থেকে বর্ণানা করেন, তিনি বলেছেন:
من سد فرجة في صف رفعه الله بها في الجنة درجة، وبنى له في الجنة بيتاً
অর্থঃ যে ব্যক্তি কাতারের ফাকা জায়গা পূরণ করবে আল্লাহ জান্নাতে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মান করবেন। আত-তারগীব ওয়াত তারহীব,৩/৩০ (২০০৯)। নামাযের ভিতর প্রয়োজনে হাটা-চলা করার বৈধতার ব্যাপারে চারমাযহাবের উলামায়ে কেরাম একমত। হানাফী উলামায়ে কেরাম বলেন:যদি ব্যক্তি শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে নামাযের মধ্যে হাটা-চলা করে (কেবলামুখি অবস্থায়) তাহলে তার নামায নষ্ট হবে না। ফাতওয়াযে হিন্দিয়্যাতে এসেছে:
وَلَوْ مَشَى فِي صَلَاتِهِ مِقْدَارَ صَفٍّ وَاحِدٍ لَمْ تَفْسُدْ صَلَاتُهُ وَلَوْ كَانَ مِقْدَارَ صَفَّيْنِ إنْ مَشَى دَفْعَة وَاحِدَةً فَسَدَتْ صَلَاتُهُ وَإِنْ مَشَى إلَى صَفٍّ وَوَقَفَ ثُمَّ إلَى صَفٍّ لَا تَفْسُدُ كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ
অর্থঃযদি ব্যক্তি নামাযে এক কাতার পরিমান হেটে যায় তার নামায নষ্ট হবে না। আর যদি দুই কাতার পরিমান হেটে যায়,সেক্ষেত্রে মাঝের কাতারে না থামলে নামায হবে না। যদি থামে তাহলে নামায হয়ে যাবে ভাঙ্গবে না। ফাতওয়ায়ে কাজী খানে এমনই আছে। ৩/৩১৯, কিতাব, আস সালাম, বাব, ফী মা ইফছিদুহা। ফাতওয়ায়ে শামীতে ইবনে আবেদীন রহঃ বলেন:
مَشَى مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ هَلْ تَفْسُدُ إنْ قَدْرَ صَفٍّ ثُمَّ وَقَفَ قَدْرَ رُكْنٍ ثُمَّ مَشَى وَوَقَفَ كَذَلِكَ وَهَكَذَا لَا تَفْسُدُ ، وَإِنْ كَثُرَ مَا لَمْ يَخْتَلِفْ الْمَكَانُ
অর্থঃব্যক্তি কিবলামুখি হয়ে হাটলো, তার নামায কি নষ্ট হয়ে যাবে, যদি এক কাতার পরিমাণ হেটে এক রুকুন পরিমান থেমে থেকে আবার হাটে এবং এপরিমান থেমে থেকে এভাবে হাটতে থাকে? তার নামায নষ্ট হবে না যদিও হাটার পরিমান বেশী হয়ে থাকে, যদি নামাযের জায়গা ভিন্ন না হয়। (যেমন মসজিদের সীমানার বাইরে চলে যওয়া)। কিতাব, আস সালাত, বাব, মাশইউল মুসুল্লি মুস্তাকবিলাল কিবলাতি।
প্রশ্নঃ 200
(তাহিয়্যাতুল মাসজিদ) মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ার প্রয়োজনীয় সময় না পাওয়া যায় তাহলে মুসুল্লি জামাতের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকবে নাকি বসে থাকবে। বসে থাকা নাকি মাকরুহ। আবার কেউ কেই বলেন, ইমাম সাহেব দাড়ানোর আগে দাড়িয়ে থাকা আদবের খেলাফ। উত্তম পন্থা কোনটি । হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
20 Dec 2025
মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূল সাঃ বলেন: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ অর্থঃ তোমাদের কেউ যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন দুই রাকাত নামাজ পড়া বসে না পড়ে । বুখারী, আস সহীহ, কিতাব, আস সালাত, বাব,ইজা দাখালাল মাসজিদা। উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম নববী রহঃ বলেন:
أجمع العلماء على استحباب تحية المسجد ، ويكره أن يجلس من غير تحية بلا عذر؛ لحديث أبي قتادة المصرح بالنهي
অর্থঃ এব্যাপারে উলামায়ে কেরাম একমত যে, তাহিয়্যাতুল মসজিদ (মসজিদে ঢুকে দুই রাকাত নামাজ পড়া) মুস্তাহাব এবং কোন কারন ছাড়া নামাজ না পড়ে বসে পড়া মাকরুহ। মাজমু খন্ড ৩, র্পষ্ঠা ৫৫৪। অতএব এ নামাজের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। শুধু নামাজের আগে নয় বরং যখনই আমরা মসজিদে প্রবেশ করব তখনই দুই নামাজ পড়ে বসব । সময় যদি কম থাকে ফরয,ওয়াজীব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ঠিক রেখে নামাজ শেষ করব। প্রথম রাকাতে থাকা অবস্থায় ইক্বামত শুরু হয়ে গেলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবো। সর্বঅবস্থায় হাদীসের অনুস্বরণ করার চেষ্টা করব। তবে যদি একান্তই নামায পড়ার সুযোগ না থাকে তাহলে বসার তুলনায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করাই উত্তম। কারন না বসে দাড়িয়ে অপেক্ষা করাটা হাদীসের সাথে বেশি সামঞ্জস্য। এক্ষেত্রে হাদীসের ব্যাক্ষা না করে ফুক্বাহায়ে কেরামের কথার ব্যাক্ষা করে বলব, দাড়িয়ে অনর্থক হাটা চলা করা বা কোন কারন ছাড়া এদিকে সেদিকে তাকিয়ে থাকাকে তাঁরা মাকরুহ বা আদবের খেলাফ বলেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝে শুনে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 201
সললু কামা রয়াইতুমুনি উসলিল এখানে পুরুষ বা মহিলা আলাদা করা হয়নাই কোন জয়ীফ হাদীস দিয়েও পারথাক্য প্রমানিত নেই তাই দলিল সহ জানতে চাই যে মহিলাদের নামাজে কোন পারথাক্য আছে কি হাদীসে নামবার কিতাবের নাম রাবী সহ জানাবেন
20 Dec 2025
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসে পুরুষ ও মহিলার নামাযের মাঝে পার্থক্য না করা হলেও অন্যান্য অনেক হাদীসে, ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ী গণের কথার আলোকে জানতে পারি যে, কিছু কিছু বিষয়ে পুরুষ এবং মহিলার নাামাযের মাঝে পার্থক্য রয়েছে । নিম্নে কয়েকটি দলীল উল্লেখ করা হল। হাদীসের আলোকেঃ
أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل
অর্থঃ (ইমাম বায়হাকী রহঃ ) আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মাদ এর সুত্রে তাবেয়ী য়াযীদ ইবনে আবী হাবীব এর থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন । তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশে) বললেন, যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে । কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষের মত নয়। (সুনানে কুবরা ২ খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩০১৬। )
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আওনুল বারী (১/৫২০) তে লিখেছেন উল্লেখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসাবে পেশ করার যোগ্য । حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بن عَبْدِ اللَّهِ الْحَضْرَمِيُّ، قَالَ: حَدَّثَتْنِي مَيْمُونَةُ بنتُ حُجْرِ بن عَبْدِ الْجَبَّارِ بن وَائِلِ بن حُجْرٍ، قَالَتْ: سَمِعْتُ عَمَّتِي أُمَّ يَحْيَى بنتَ عَبْدِ الْجَبَّارِ بن وَائِلِ بن حُجْرٍ، عَنْ أَبِيهَا عَبْدِ الْجَبَّارِ، عَنْ عَلْقَمَةَ عَمِّهَا، عَنْ وَائِلِ بن حُجْرٍ، قَالَ: جِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: فساق الحديث . وفيه : يا وائل بن حجر: إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ، وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا.
অর্থঃ হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে হাজির হলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন হে ওয়াইল ইবনে হাজ্র ! যখন তুমি নামাজ শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে । আর মহিলারা হাত উঠাবে বুক বরাবর । (আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী ২২/২৭২, হাদীসটি হাসান। )
সাহাবায়ে কেরামের আছারের আলোকে
عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال : إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذها ببطنها
অর্থঃ হযরত আলী রাঃ বলেন মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে । মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৩/১৩৮ অনুচ্ছেদ মহিলার তাকবীর, কিয়াম, রুকু ও সিজদা । মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ২/৩০৮
তাবেয়ীগণের কথার আলোকেঃ قال هشيم : أخبرنا شيخ لنا قال :قال سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة ؟قال حذو ثديها অর্থঃ হযরত আতা ইবনে আবি রাবাহ এর কাছে জানতে চাওয়া হল নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে? তিনি বললেন বুক বরাবর । মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১/২৭০। মোটকথা, রাসূল সাঃ এর হাদীস, ছাহাবায়ে কেরামের কথা ও তাবেয়ীগণের ফাতাওয়ার আলোকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, মহিলাদের নামাজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। আর এই ভিন্নতার ভিত্তি হল মহিলাদের সতর ও পর্দার অধিক সংরক্ষণের বিবেচনা ।
প্রশ্নঃ 202
আস-সালামু আলাইকুম। মুহতারাম, আরশের উপর আল্লাহর সমাসীন হওয়ার বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানতে চাই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। মহান আল্লাহর বিশেষণ বিষয়ে চার ইমামসহ পূর্ববর্তী ইমামগণের মূলণীতি হলো কুরাআন ও হাদীসে মহান আল্লাহর বিষয়ে যা বলা হয়েছে তা সরল অর্থে বিশ্বাস করা, তুলনা ও ব্যাখ্যা বর্জন করা। বিষয়টি বিস্তারিত জানতে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) রচিত আলি-ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা বইটি পড়তে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এখানে মহান আল্লাহর আরশের উপর ইসতিওয়া প্রসঙ্গটি উল্লেখ করছি। কুরআনে সাত স্থানে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর ইসতিওয়া করেছেন।আরবীতে কোনো কিছুর উপর ইসতিওয়া অর্থ তার ঊর্ধ্বে অবস্থান (rise over, mount, settle)। সালাতের নিষিদ্ধ সময় বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন প্রশ্নকারীকে বলেন:
حَتَّى تَسْتَوِىَ الشَّمْسُ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ ، فَإِذَا اسْتَوَتْ عَلَى رَأْسِكَ كَالرُّمْحِ فَدَعِ الصَّلاَةَ
(সালাত বৈধ থাকবে) যতক্ষণ না সূর্য তোমার মাথার উপরে তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে। যখন সূর্য তোমার মাথার উপর তীরের মত ইসতিওয়া (ঊর্ধ্বে অবস্থান) করবে তখন সালাত পরিত্যাগ করবে। আমরা ইসতিওয়া-র অনুবাদে উপরে অবস্থান বা অধিষ্ঠান শব্দ ব্যবহার করব, ইনশা আল্লাহ। জাহমী-মুতাযিলীগণ এ বিশেষণ অস্বীকার করেছেন। তারা দাবি করেন, আরশের উপরে অধিষ্ঠান কোনোভাবেই মহান আল্লাহর বিশেষণ হতে পারে না; কারণ মহান আল্লাহর জন্য এভাবে অবস্থান পরিবর্তন বা কোনো কিছুর উপরে স্থিতি গ্রহণের মত মানবীয় কর্ম অশোভনীয় এবং তাঁর অতুলনীয়ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়া মহান আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি বান্দার সাথে ও নিকটে।কাজেই তিনি আরশের উপর থাকতে পারেন না। বরং তাঁরা দাবি করেন যে, মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান; তাঁকে কোনো স্থান বা দিকে সীমাবদ্ধ করা তাঁর অতুলনীয়ত্বের পরিপন্থী। তারা দাবি করেন, আরশে অধিষ্ঠান গ্রহণের অর্থ আরশের নিয়ন্ত্রণ, দখল বা ক্ষমতা গ্রহণ। সাহাবী, তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ী ইমামগণ মহান আল্লাহর আরশের উপর অধিষ্ঠান বা ইসতিওয়ার বিশেষণটি সরল অর্থে গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকেই তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ী ইমামগণ এবং পরবর্তী মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ জাহমীগণের এ মত কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং একে কুরআন অস্বীকার বলে গণ্য করেছেন। এ বিষয়ে তাঁরা বলেন: মহান আল্লাহর আরশের উপরে অবস্থান বা আরশের ঊর্ধ্বে থাকার বিশেষণটি কুরআন ও হাদীস দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত। তবে এর প্রকৃতি ও স্বরূপ অজ্ঞাত। অজ্ঞাতকে অজ্ঞাত রেখে কুরআনের অন্যান্য বক্তব্যের ন্যায় এ বক্তব্যও স্বীকার ও বিশ্বাস করা মুমিনের জন্য জরুরী। তাঁরা বলেন: মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন। তাঁর এ অধিষ্ঠান বা অবস্থানের স্বরূপ আমরা জানি না এবং জানতে চেষ্টাও করি না। বরং বিশ্বাস করি যে, তাঁর এ অধিষ্ঠান কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির বিশেষণ বা কর্মের মত নয়। তাঁর অতুলনীয়ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান তিনি গ্রহণ করেন। যখন মানুষ কল্পনা করে যে, মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মতই; তিনি একই সাথে আরশের উপরে এবং বান্দার নিকটবর্তী হতে পারেন না- তখনই কুরআনের এ দুটি নির্দেশনার মধ্যে বৈপরীত্য আছে বলে কল্পনা হয়। মূল বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহান আল্লাহ সৃষ্টির মত নন। কাজেই নৈকট্য ও ঊর্ধ্বত্ব উভয়কে সমানভাবে বিশ্বাস করে এর স্বরূপ ও প্রকৃতি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করলে কুরআনের সকল নির্দেশনা বিশ্বাস ও মান্য করা হয়। আর নৈকট্যের অজুহাতে তাঁকে সর্বত্র বিরাজমান বলে দাবি করলে, তিনি কোথায় আছেন তা জানি না বলে দাবি করলে, আরশ কোথায় তা জানি না বলে দাবি করলে বা তাঁর আরশের উপর অধিষ্ঠানের আয়াতগুলো ব্যাখ্যার নামে অস্বীকার করলে কুরআন ও হাদীসের অগণিত বক্তব্য অস্বীকার করা হয়, যা কুফরীর নামান্তর। ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ তাঁর ওসীয়াত গ্রন্থে লিখেছেন:
نُقِرُّ بِأَنَّ اللهَ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُوْنَ لَهُ حَاجَةٌ إِلَيْهِ وَاسْتِقْرَارٌ عَلَيْهِ، وَهُوَ الْحَافِظُ لِلْعَرْشِ وَغَيْرِ الْعَرْشِ، فَلَوْ كَانَ مُحْتَاجاً إِلَيْهِ لَمَا قَدِرَ عَلَى إِيْجَادِ الْعَالَمِ وَتَدْبِيْرِهِ كَالْمَخْلُوْقِين، وَلَوْ صَارَ مُحْتَاجاً إِلَى الْجُلُوْسِ وَالْقَرَارِ فَقَبْلَ خَلْقِ الْعَرْشِ أَيْنَ كَانَ اللهُ تَعَالَى؟ فَهُوَ مُنَزَّهٌ عَنْ ذَلِكَ عُلُوًّا كَبِيْراً.
আমরা স্বীকার ও বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন, আরশের প্রতি তাঁর কোনোরূপ প্রয়োজন ব্যতিরেকে এবং আরশের উপরে স্থিরতা-উপবেশন ব্যতিরেকে। তিনি আরশ ও অন্য সবকিছুর সংরক্ষক। তিনি যদি আরশের মুখাপেক্ষী হতেন তাহলে বিশ্ব সৃষ্টি করতে ও পরিচালনা করতে পারতেন না, বরং তিনি মাখলূকের মত পরমুখাপেক্ষী হতেন। আর যদি তাঁর আরশের উপরে উপবেশন করার প্রয়োজনীয়তা থাকে তবে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? কাজেই আল্লাহ এ সকল বিষয় থেকে পবিত্র ও অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। ইমাম আযমের এ বক্তব্য উল্লেখ করে মোল্লা আলী কারী হানাফী বলেন: এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রাহ) খুবই ভাল কথা বলেছেন। তাঁকে আল্লাহর আরশের উপরে ইসিতিওয়া বা অধিষ্ঠান বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:
اَلاِسْتِوَاءُ مَعْلُوْمٌ وَالْكَيْفُ مَجْهُوْلٌ وَالسُّؤَالُ عَنْهُ بِدْعَةٌ وَالإِيْمَانُ بِهِ وَاجِبٌ
ইসতিওয়া বা অধিষ্ঠান পরিজ্ঞাত, এর পদ্ধতি বা স্বরূপ অজ্ঞাত, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত এবং এ বিষয় বিশ্বাস করা জরুরী। ইমাম সায়িদ নাইসাপূরী হানাফী বলেন:
حكي عن أبي حنيفة t في رسالته إلى مقاتل بن سليمان جواب كتابه، في فصل منها: وأما قوله تعالى على العرش استوى حقا، فإنّما ننتهي من ذلك إلى ما وصف كتابُ ربنا في قوله تعالى {ثم استوى على العرش}، وتَعْلَمَنَّ أنه كما قال، ولا ندعي في استوائه على العرش علما، ونزعم أنه قد استوى، ولا يشبه استواؤه باستواء الخلق، فهذا قولنا في الاستواء على العرش.
ইমাম আবূ হানীফা থেকে বর্ণিত, তিনি (তাঁর সমসাময়িক দেহে বিশ্বাসী মুফাস্সির) মুকাতিল ইবন সুলাইমান (১৫০ হি)-এর পত্রের উত্তরে লেখা তাঁর পত্রের একটি অনুচ্ছেদে লিখেন: মহান আল্লাহ বলেছেন: তিনি আরশের উপর ইসিতওয়া (অধিষ্ঠান বা অবস্থান) গ্রহণ করেছেন। সত্যই তিনি তা করেছেন। আমাদের রবের কিতাব এ বিষয়ে যা বর্ণনা করেছেন সেখানেই আমরা থেমে যাই। আল্লাহ বলেছেন: অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করলেন। আপনি নিশ্চিত জানুন যে, তিনি যা বলেছেন বিষয়টি তা-ই। আমরা তাঁর অধিষ্ঠান বিষয়ে কোনো জ্ঞানের দাবি করি না। আমরা মনে করি তিনি অধিষ্ঠান গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর অধিষ্ঠান সৃষ্টির অধিষ্ঠানের অনুরূপ বা তুলনীয় নয়। আরশের উপর অধিষ্ঠানের বিষয়ে এটিই আমাদের বক্তব্য। আমরা বলেছি, মহান আল্লাহর আরশের ঊর্ধ্বে থাকা অস্বীকার করার জন্য জাহমী-মুতাযিলীগণ তাঁর নৈকট্য বিষয়ক আয়াতগুলোকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে দাবি করতেন যে, তিনি আত্মার মত বা বাতাসের মত। আত্মা যেমন দেহের সর্বত্র বিদ্যমান এবং বাতাস যেমন পৃথিবীর সর্বত্র বিদ্যমান তেমনি মহান আল্লাহ সৃষ্টি জগতের সর্বত্র বিরাজমান। এভাবে তাঁরা আল্লাহকে অতুলনীয় বলে প্রমাণ করার দাবিতে তাঁকে আত্মা ও বাতাসের সাথে তুলনা করতেন। উপরন্তু তারা তাঁকে সৃষ্টির অংশ বানিয়ে ফেলেন। বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বে মহান আল্লাহ তাঁর অনাদি সত্তায় বিদ্যমান ছিলেন। তিনি তাঁর সত্তার বাইরে ও নিম্নে বিশ্বজগত সৃষ্টি করেন। তাঁর সত্তা বিশ্বজগতের সর্বত্র বিরাজমান বলার অর্থ একথা দাবি করা যে, মহান আল্লাহ বিশ্ব জগতকে তাঁর সত্তার অভ্যন্তরে সৃষ্টি করেছেন!! অথবা বিশ্ব জগত সৃষ্টির পরে তিনি এর অভ্যন্তরে সর্বত্র প্রবেশ করেছেন!!! এগুলো সবই মহান আল্লাহর নামে ওহী-বহির্ভুত বানোয়াট অশোভনীয় ধারণা। আল্লাহর সত্তা যেমন সৃষ্টির মত নয়, তেমনি তাঁর বিশেষণাবলিও সৃষ্টির মত নয়। সকল মানবীয় কল্পনার ঊর্ধ্বে তাঁর সত্তা ও বিশেষণ। কাজেই মহান আল্লাহর আরশের উপরে অধিষ্ঠান এবং বান্দার নৈকট্য উভয়ই সত্য এবং মুমিন উভয়ই বিশ্বাস করেন। উভয়ের মধ্যে বৈপরীত্য কল্পনা করা মানবীয় সীমাবদ্ধতার ফসল। তদুপরি জাহমীদের এ বিভ্রান্তি দূর করতে ইমামগণ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক বলেন:
الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو من علمه مكان
আল্লাহ আসমানে (ঊর্ধ্বে) এবং তাঁর জ্ঞান সকল স্থানে। কোনো স্থানই মহান আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়। ইমাম আযম আবূ হানীফা থেকেও অনুরূপ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন ইমাম বাইহাকী।এ প্রসঙ্গে পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মালিকী ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইবন আব্দুল র্বার ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ (৪৬৩ হি) বলেন:
علماء الصحابة والتابعين الذين حملت عنهم التآويل في القرآن قالوا في تأويل هذه الآية هو على العرش وعلمه في كل مكان وما خالفهم في ذلك أحد يحتج بقوله
সাহাবী-তাবিয়ী আলিমগণ, যাদের থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়েছে, তারা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, তিনি আরশের উপরে এবং তাঁর জ্ঞান সর্বত্র। দলিল হিসেবে গ্রহণ করার মত একজন আলিমও তাঁদের এ মতের বিরোধিতা করেন নি। ইমামদ্বয়ের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, ইসতিওয়া শব্দটিকে তাঁরা সাধারণ আরবী অর্থেই গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে এ শব্দটির অর্থ অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থবোধক, মুতাশাবিহ, রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করেন নি। বরং তাঁরা বলেছেন যে, এ শব্দটির অর্থ জ্ঞাত বিষয়, এর মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা, রূপকতা বা দ্ব্যর্থতা নেই। অর্থাৎ আরবী ভাষায় অন্যন্য সকল ক্ষেত্রে ইসতিওয়া আলা বলতে যা বুঝানো হয় এখানেও সেই অর্থই গ্রহণ করতে হবে, অর্থাৎ ঊর্ধ্বত্ব। এখানে অর্থটি রূপক বা অজ্ঞাত বলে দাবি করার সুযোগ নেই। তবে ইসতিওয়ার স্বরূপ বা ব্যাখ্যা অজ্ঞাত (মুতাশাবিহ)। এ অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে জ্ঞাত বিষয়কে বিশ্বাস করাই মুমিনের দায়িত্ব। কুরআন কয়েকটি বিষয় আমাদেরকে জানায়: (১) মহান আল্লাহ অনাদি অনন্ত, কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নন এবং সবই তাঁর মুখাপেক্ষী, (২) মহান আল্লাহ কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন, (৩) মহান আল্লাহ সৃষ্টির এক পর্যায়ে আরশ সৃষ্টি করেন এবং আরশের উপর অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন এবং (৪) মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার নিকটবর্তী। সাহাবীগণ বিষয়গুলো সবই সরল অর্থে বিশ্বাস করেছেন এবং এ বিষয়ে কোনো বৈপরীত্য অনুভব করেন নি। কারণ আল্লাহর অমুখাপেক্ষী হওয়া, অতুলনীয় হওয়া, নিকটবর্তী হওয়া এবং আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া কোনোটিই মানবীয় বুদ্ধির সাথে সাংঘর্ষিক নয় বা অসম্ভব নয়। কাজেই ওহীর মাধ্যমে যা আল্লাহ জানিয়েছেন তা নিয়ে বিতর্ক করা বিভ্রান্তি বৈ কিছুই নয়। সমস্যার শুরু হয় যখন মানুষ এগুলোর গভীর স্বরূপ সন্ধানে ব্যস্ত হয়। আল্লাহ যদি অমুক্ষাপেক্ষী হন তাহলে আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠানের দরকার কি? আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠান গ্রহণ না করলে এ কথা বারবার বলার দরকার কী? অধিষ্ঠান অর্থ যদি ক্ষমতা গ্রহণ হয় তবে কাকে হটিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করলেন? শুধু আরশের ক্ষমতা গ্রহণের অর্থ কী? এরূপ জিজ্ঞাসা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এসবের সহজ সমাধান ওহীর সবগুলো বিষয় সরলভাবে বিশ্বাস করা। মহান আল্লাহ বলেছেন তিনি অমুক্ষাপেক্ষী ও অতুলনীয় এবং তিনিই বলেছেন তিনি আরশের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠান করেছেন। এ থেকে আমরা বুঝি যে, কোনোরূপ মুখাপেক্ষিতা বা প্রয়োজন ছাড়াই আল্লাহ তা করেছেন এবং তাঁর এ বিশেষণ কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নয়। তবে কেন করেছেন, কিভাবে করেছেন বা এর স্বরূপ কী তা তিনি আমাদের বলেন নি। এগুলি নিয়ে প্রশ্ন করা বা উত্তরের সন্ধান করা দীনের মধ্যে নব-উদ্ভাবন বা বিদআত। কারণ সাহাবীগণ কখনো এরূপ প্রশ্ন বা উত্তর সন্ধান করেন নি। ইমাম আবূ হানীফা উল্লেখ করেছেন যে, মানবীয় সহজাত প্রকৃতিই মহান আল্লাহর ঊর্ধ্বত্ব প্রমাণ করে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহকে ডাকতে ঊর্ধ্বমুখি হয়। এছাড়া হাদীসে এ ঊর্ধ্বত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন:
مَنْ قَالَ لاَ أَعْرِفُ رَبِّيْ فِيْ السَّمَاءِ أَوْ فِيْ الأَرْضِ فَقَدْ كَفَرَ وَكَذَا مَنْ قَالَ إَنَّهُ عَلَى الْعَرْشِ وَلاَ أَدْرِيْ الْعَرْشَ أَفِيْ السَّمَاءِ أَوْ فِيْ الأَرْضِ لأَنَّ اللهَ يَقُوْلُ: الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى وَاللهُ تَعَالَى يُدْعَى مِنْ أَعْلَى لاَ مِنْ أَسْفَلَ لَيْسَ مِنْ وَصْفِ الرُّبُوْبِيَّةِ وَالأُلُوْهِيَّةِ فِيْ شَيْءٍ وَعَلَيْهِ مَا رُوِىَ فِيْ الْحَدِيْثِ أَنَّ رَجُلاً أَتَى إِلَى النَّبِيِّ r بِأَمَةٍ سَوْدَاءَ فَقَالَ: وَجَبَ عَلَيَّ عِتْقُ رَقَبَةٍ، أَفَتُجْزِئُ هَذِهِ؟ فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ r: أَمُؤْمِنَةٌ أَنْتِ؟ فَقَالَتْ: نَعَمْ. فَقَالَ: أَيْنَ اللهُ فَأَشَارَتْ إِلَى السَّمَاءِ. فَقَالَ: اعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ.
যদি কেউ বলে যে, আমার রব্ব আকাশে না পৃথিবীতে তা আমি জানি না তবে সে কাফির হয়ে যাবে। যদি কেউ বলে যে, তিনি আরশের উপরে, কিন্তু আরশ কোথায়- আসমানে না যমিনে- তা আমি জানি না তবে সেও অনুরূপ। কারণ আল্লাহ বলেছেন: দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে সমাসীন। মহান আল্লাহকে ডাকতে হয় ঊর্ধে, নিম্নে নয়। নিম্নে থাকা রুবূবিয়্যাত বা উলূহিয়্যাতের কোনো বিশেষত্ব নয়। আর এ অর্থেই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট একটি কাফ্রী দাসীকে নিয়ে আগমন করে বলে যে, তাকে একটি দাস মুক্ত করতে হবে। এ দাসীকে মুক্ত করলে কি তার দায়িত্ব পালন হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত দাসীকে বলেন, তুমি কি ঈমানদার? সে বলে: হ্যাঁ। তিনি বলেন: আল্লাহ কোথায়? সে আসমানের দিকে ইশারা করে। তখন তিনি বলেন: একে মুক্ত করে দাও, এ নারী ঈমানদার। আকীদা তাহাবিয়ার ব্যাখ্যায় ইবন আবীল ইজ্জ হানাফী বলেন: শাইখুল ইসলাম আবূ ইসমাঈল আনসারী (৪৮১ হি) তাঁর আল-ফারূক গ্রন্থে আবূ মুতী বালখী পর্যন্ত সনদে উদ্ধৃত করেছেন, আবূ মুতী বলেন, আবূ হানীফাকে (রাহ) প্রশ্ন করলাম: যে ব্যক্তি বলে, আমার রব্ব আসমানে না যমীনে তা আমি জানি না, তার বিষয়ে আপনার মত কি? তিনি বলেন: এ ব্যক্তি কাফির। কারণ আল্লাহ বলেছেন: দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে সমাসীন, আর তাঁর আরশ সপ্ত আসমানের উপরে। আমি (আবু মুতী) বললাম: যদি সে বলে, তিনি আরশের উপরে, কিন্তু সে বলে: আরশ কি আসমানে না যমীনে তা আমি জানি না, তাহলে কি হবে? তিনি (আবূ হানীফা) বলেন: তাহলেও সে কাফির। কারণ সে তাঁর আসমানে বা ঊর্ধে হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে, আর যে ব্যক্তি তাঁর ঊর্ধ্বত্ব অস্বীকার করবে সে কাফির। ...
ইসতিওয়া ও অন্যান্য বিশেষণ বিষয়ে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বালের মূলনীতি ও আকীদা ব্যাখ্যা করে আবূ বাকর খাল্লাল আহমদ ইবন মুহাম্মাদ (৩১১ হি) বলেন:
وكان يقول إن الله عز وجل مستو على العرش المجيد ... وكان يقول في معنى الاستواء هو العلو والارتفاع ولم يزل الله تعالى عاليا رفيعا قبل أن يخلق عرشه فهو فوق كل شيء والعالي على كل شيء وإنما خص الله العرش لمعنى فيه مخالف لسائر الأشياء والعرش أفضل الأشياء وأرفعها فامتدح الله نفسه بأنه على العرش أستوى أي عليه علا ولا يجوز أن يقال أستوى بمماسة ولا بملاقاة تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا والله تعالى لم يلحقه تغير ولا تبدل ولا تلحقه الحدود قبل خلق العرش ولا بعد خلق العرش. وكان ينكر على من يقول إن الله في كل مكان بذاته لأن الأمكنة كلها محدودة وحكي عن عبد الرحمن بن مهدي عن مالك أن الله تعالى مستو على عرشه المجيد كما أخبر وأن علمه في كل مكان ولا يخلوا شيء من علمه وعظم عليه الكلام في هذا واستبشعه.
ইমাম আহমদ বলতেন, মহান আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত। ... অধিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ তিনি এর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ আরশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সকল কিছুর উপরে। এখানে আরশকে উল্লেখ করার কারণ আরশের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোনো কিছুর মধ্যে নেই। তা হলো আরশ সবচেয়ে মর্যাদাময় সৃষ্টি এবং সব কিছুর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ নিজের প্রশংসা করে বলেছেন যে, তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত, অর্থাৎ তিনি আরশের ঊর্ধ্বে। আরশের উপরে অধিষ্ঠানের অর্থ আরশ স্পর্শ করে অবস্থান করা নয়। মহান আল্লাহ এরূপ ধারণার অনেক ঊর্ধ্বে। আরশ সৃষ্টির পূর্বে এবং আরশ সৃষ্টির পরে মহান আল্লাহ একই অবস্থায় রয়েছেন; কোনোরূপ পরিবর্তন তাঁকে স্পর্শ করে নি, কোনো গণ্ডি বা সীমা তাঁকে সীমায়িত করতে পারে না। যারা বলেন যে, মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের কথা তিনি অস্বীকার ও প্রতিবাদ করতেন। কারণ সকল স্থানই গণ্ডি বা সীমায় আবদ্ধ। তিনি আব্দুর রাহমান ইবন মাহদী থেকে, তিনি ইমাম মালিক থেকে উদ্ধৃত করতেন: মহান আল্লাহ মহা-পবিত্র আরশের ঊর্ধ্বে সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞান-ইলম সর্বত্র বিদ্যমান। কোনো স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বাইরে নয়। আল্লাহর সর্বত্র বিরাজমান কথাটি ইমাম আহমদ ঘৃণ্য বলে গণ্য করতেন। ইমাম তাহাবী (রাহ) বলেন:
وَتَعَالَى عَنِ الْحُدُودِ وَالْغَايَاتِ، وَالأَرْكَانِ وَالأَعْضَاءِ وَالأَدَوَاتِ، لا تَحْوِيهِ الْجِهَاتُ السِّتُّ كَسَائِرِ الْمُبْتَدَعَاتِ. .... وَالْعَرْشُ وَالْكُرْسِيُّ حَقٌّ، وَهُوَ مُسْتَغْنٍ عَنِ الْعَرْشِ وَمَا دُونَهُ، مُحِيطٌ بِكُلِّ شَيْءٍ وَفَوْقَهُ
আল্লাহ্ তাআলা সীমা-পরিধি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও উপাদান-উপকরণের বহু ঊর্ধ্বে। যাবতীয় উদ্ভাবিত সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় তাঁকে ষষ্ঠ দিক পরিবেষ্টন করতে পারে না। আল্লাহর আরশ ও কুরসী (আসন) সত্য। আরশ ও তার নীচে যা কিছু বিদ্যমান সব কিছু থেকে তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি সকল কিছুকে পরিবেষ্টনকারী এবং সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ তিনি তাঁর সৃষ্ট দিক, স্থান ও সীমার ঊর্ধ্বে। তবে সৃষ্টির সীমা যেখানে শেষ তার ঊর্ধ্বে তাঁর মহান আরশ। আরশ সকল সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে বিদ্যমান। তিনি তারও ঊর্ধ্বে। কাজেই তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সকল কিছুকে পরিবেষ্টনকারী। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী বলেন:
وهو فوق العرش كما وصف نفسه، لكن لا بمعنى التحيز ولا الجهة، بل لا يعلم كنه هذا التفوق والاستواء إلا هو...
তিনি আরশের ঊর্ধ্বে, যেভাবে তিনি নিজের বিষয়ে বলেছেন। এর অর্থ কোনো দিক বা স্থানে সীমাবদ্ধ হওয়া নয়। বরং এ ঊর্ধ্বত্বের এবং অধিষ্ঠানের প্রকৃতি তিনি ছাড়া কেউ জানে না...। বস্তুত চার ইমামসহ সালাফ সালিহীন বা ইসলামের প্রথম চার প্রজন্মের সকল বুজুর্গ একই আকীদা অনুসরণ করতেন। তাঁরা সকলেই কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত বিশেষণগুলোকে সরল অর্থে বিশ্বাস করতে এবং ব্যাখ্যা ও তুলনা বর্জন করতে নির্দেশ দিতেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী প্রথম হিজরী শতকের দুজন প্রসিদ্ধ তাবিয়ীর মত উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন:
قال أبو العالية (استوى إلى السماء) ارتفع.. وقال مجاهد (استوى) علا (على العرش)
(প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুহাদ্দিস ও ফকীহ রুফাই ইবন মিহরান) আবুল আলিয়া (৯০ হি) বলেন: আসমানের প্রতি ইসতিওয়া করেছেন অর্থ: আসমানের উপরে থেকেছেন। (অন্য প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুফাস্সির ও ফকীহ ইমাম) মুজাহিদ (১০৪ হি) বলেন: আরশের উপর ইসতিওয়া করেছেন অর্থ আরশের ঊর্ধ্বে থেকেছেন। ইমাম আবূ হানীফার সমসাময়িক প্রসিদ্ধ তাবি-তাবিয়ী মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ফকীহ ইমাম আওযায়ী আব্দুর রাহমান ইবন আমর (১৫৭ হি) বলেন:
كنا والتابعون متوافرون نقول إن الله على عرشه ونؤمن بما وردت به السنة من صفاته
যে সময়ে তাবিয়ীগণ বহু সংখ্যায় বিদ্যমান ছিলেন সে সময়ে আমরা বলতাম: মহান আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে এবং সুন্নাতে (হাদীসে) মহান আল্লাহর যা কিছু বিশেষণ বর্ণিত হয়েছে তা আমার বিশ্বাস করি। মহান আল্লাহর বিশেষণ ব্যাখ্যায় কিছু বলার অর্থ মহান আল্লাহ সম্পর্কে মানবীয় যুক্তি, বুদ্ধি বা ইজতিহাদ দিয়ে কিছু বলা। আর মহান আল্লাহর বিষয়ে ইজতিহাদ করে কিছু বলা যাবে না। এজন্য ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন:
لا ينبغي لأحد أن ينطق في الله تعالى بشئ من ذاته، ولكن يصفه بما وصف سبحانه به نفسه، ولا يقول فيه برأيه شيئاً تبارك الله تعالى رب العالمين.
মহান আল্লাহর বিষয়ে নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলা কারো জন্য বৈধ নয়; বরং তিনি নিজের জন্য যে বিশেষণ ব্যবহার করেছেন তাঁর বিষয়ে শুধু সে বিশেষণই ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে নিজের মত, যুক্তি বা ইজতিহাদ দিয়ে কিছুই বলা যাবে না। মহাপবিত্র, মহাসম্মানিত-মহাকল্যাণময় আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক। ইমাম শাফিয়ীর ছাত্র আবূ সাওর বলেন, ইমাম শাফিয়ী বলেন:
القول في السُّنّة التي وردت وأنا عليها، ورأيتُ أصحابنا عليها أهل الحديث الذين رأيتُهم وأخذتُ عنهم ـ مثل: سفيان الثّوريّ ومالك وغيرهما ـ : الإقرار بشهادة أن لا إله إلا الله وأنّ محمّدًا رسول الله، وأنّ الله ـ تعالى ـ على عرشه في سمائه، يقرب من خلقه كيف شاء، وأنّ الله تعالى ينزل إلى السّماء الدُّنيا كيف شاء.
সুফিয়ান সাওরী, মালিক ও অন্যান্য যে সকল মুহাদ্দিসকে আমরা দেখেছি এবং তাঁদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, আমাদের সে সব সাথী এবং আমি যে সুন্নাত আকীদার উপর রয়েছি তা হলো এরূপ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই, এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, এবং মহান আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে তাঁর আসমানের ঊর্ধ্বে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে বান্দার নিকটবর্তী হন এবং তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এরূপ বিশ্বাসকে ইমামগণ অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। এ মতকে তারা সর্বেশ্বরবাদ বা সর্বজীবে ঈশ্বর মতবাদ বলে গণ্য করতেন। বাশ্শার ইবন মূসা খাফ্ফাফ বলেন:
جاء بشر بن الوليد الكندي إلى القاضي أبي يوسف فقال له تنهاني عن الكلام وبشر المريسي وعلي الأحول وفلان يتكلمون قال وما يقولون قال يقولون الله في كل مكان فقال أبو يوسف علي بهم فانتهوا إليهم وقد قام بشر فجيء بعلي الأحول وبالآخر شيخ فقال أبو يوسف ونظر إلى الشيخ لو أن فيك موضع أدب لأوجعتك فأمر به إلى الحبس وضرب الأحول وطوف به
বিশর ইবন ওলীদ কিন্দী কাযী আবূ ইউসুফের নিকট আগমন করে বলেন: আপনি তো আমাকে ইলমুল কালাম থেকে নিষেধ করেন, কিন্তু বিশর আল-মারীসী, আলী আল-আহওয়াল এবং অমুক ব্যক্তি কালাম নিয়ে আলোচনা করছে। আবূ ইউসুফ বলেন: তারা কী বলছে? তিনি বলেন: তারা বলছে যে, আল্লাহ সকল স্থানে বিরাজমান। তখন আবূ ইউসুফ বলেন: তাদেরকে ধরে আমার কাছে নিয়ে এস। তখন তারা তাদের নিকট গমন করে। ইত্যবসরে বিশর আল-মারীসী উক্ত স্থান পরিত্যাগ করেছিলেন। এজন্য আলী আহওয়াল এবং অন্য একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে ধরে আনা হয়। আবূ ইউসুফ বৃদ্ধ ব্যক্তিটির দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেন: আপনার দেহে শাস্তি দেওয়ার মত স্থান থাকলে আমি আপনাকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতাম। তিনি উক্ত বৃদ্ধকে কারারুদ্ধ করার নির্দেশ দেন এবং আলী আহওয়ালকে বেত্রাঘাত করা হয় এবং রাস্তায় ঘুরানো হয়। এ বিষয়ে উদ্ধৃতিগুলোর তথ্যসূত্র জানতে ও বিস্তারিত আলোচনা পড়তে আবারো আপপনকে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) রচিত আলি-ফিকহুল আকবার: বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা বইটি পড়তে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 203
জীবিত ব্যাক্তির অসীলা দিয়ে দোআ করা যাবে কি না?
20 Dec 2025
গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে শুকরান, মুবারকবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নের উত্তর সহ আরেকটু বিস্তারিত দেওয়ার প্রয়াস পাচ্ছি। বিষয়টি সহজে বুঝতে প্রথমে কয়েকটি ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সময় কোনো কিছুর দোহাই বা বা ওসীলা দেওয়া কয়েকভাবে হতে পারে:
১) মহান আল্লাহর পবিত্র নাম ও গুণাবলির দোহাই দেওয়া। ২) নিজের কোনো ভাল কর্মের দোহাই দেওয়া। ৩) কারো দুআর দোহাই দেওয়া। ৪) কারো ব্যক্তিগত মর্যাদা বা অধিকারের দোহাই দেওয়া। প্রথমত: মহান আল্লাহর পবিত্র নাম ও গুণাবলির দোহাই দেওয়া যেমন বলা যে, হে আল্লাহ, আপনার রহমান নামের গুণে, বা গাফ্ফার নামের ওসীলায় আমার দুআ কবুল করুন। এরূপ দোহাই দেওয়া কুরআন- হাদীসের নির্দেশ এবং দুআ কবুল হওয়ার কারণ। দিত্বীয়তঃ নিজের কোনো ভাল কর্মের দোহাই বা ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা। নিজের কোনো ভাল কর্মের দোহাই বা ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করলে কবুল হয় বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতীত যুগের তিনজন মানুষ বিজন পথে চলতে চলতে বৃষ্টির কারণে এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে। প্রবল বর্ষণে একটি বিশাল পাথর গড়িয়ে পড়ে তাদের গুহার মুখ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে গুহাটি তাদের জীবন্ত কবরে পরিণত হয়। এ ভয়ানক বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তারা দুআ করতে মনস্থ করেন। এবং আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং পাথরটি সরে যায়। অনুরূপভাবে নিজের ঈমান, মহব্বত ইত্যাদির ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়াও এ প্রকারের ওসীলার অন্তর্ভক্ত । বুরাইদাহ আসলামী (রা) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করে দেখেন এক ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় দুআ করছে হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, এ ওসীলায় (এদ্বারা) যে, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, আপনিই আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনিই একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি জন্মদান করেননি ও জন্মগ্রহণ করেননি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, নিশ্চয় এই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তাঁর ইসমু আযম ধরে প্রার্থনা করেছে, যে নাম ধরে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নাম ধরে চাইলে তিনি প্রদান করেন। তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫১৫; আবূ দাউদ, হাকিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এখানে আমরা দেখছি যে, ঈমান ও শাহাদতের ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে এরূপ দুআ করা যায়, যেমন: হে আল্লাহ, আমি গোনাহগার, আমি অমুক কর্মটি আপনার সন্তুষ্টির জন্য করেছিলাম, সেই ওসীলায় আমার প্রার্থনা কবুল করুন। তৃতীয়ত: কারো দুআর দোহাই দেওয়া। কারো দুআর ওসীলা দেওয়ার অর্থ এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ, অমুক আমার জন্য দুআ করেছেন, আপনি আমার বিষয়ে তাঁর দুআ কবুল করে আমার হাজত পূরণ করে দিন। নেককার মুত্তাকী মুমিনদের নিকট দুআ চাওয়া সুন্নাত সম্মত রীতি। এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণীত। হাদীসে আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন:
إِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ t كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنك r فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ
উমার (রা) যখন অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হতেন তখন আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবকে (রা) দিয়ে বৃষ্টির দুআ করাতেন, অতঃপর বলতেন: হে আল্লাহ আমরা আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওসীলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করতাম ফলে আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আপনার নিকট প্রার্থনা করছি আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচার ওসীলায়, অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। আনাস (রা) বলেন, তখন বৃষ্টিপাত হতো। বুখারী, আস-সহীহ ১/৩৪২, ৩/১৩৬০। আব্বাস (রা) নিম্নের বাক্যগুলি বলে দুআ করলে আল্লাহ বৃষ্টি দিতেন:
اللهم إنه لم ينزل بلاء إلا بذنب ولم يكشف إلا بتوبة وقد توجه القوم بي إليك لمكانى من نبيك وهذه أيدينا إليك بالذنوب ونواصينا إليك بالتوبة فاسقنا الغيث
হে আল্লাহ, পাপের কারণ ছাড়া বালা-মুসিবত নাযিল হয় না এবং তাওবা ছাড়া তা অপসারিত হয় না। আপনার নবীর সাথে আমার সম্পর্কের কারণে মানুষেরা আমার মাধ্যমে আপনার দিকে মুখ ফিরিয়েছে। এ আমাদের পাপময় হাতগুলি আপনার দিকে প্রসারিত এবং আমাদের ললাটগুলি তাওবায় আপনার নিকট সমর্পিত, অতএব আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ২/৪৯৭। এ হাদীসেও স্পষ্ট যে, আব্বাস (রা) বৃষ্টির জন্য দুআ করেছেন উমার (রা) আব্বাসের (রা) দুআর ওসীলা দিয়ে দুআ করেছেন। তাঁর কথা থেকে বুঝা যায় যে, যতদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ছিলেন, ততদিন খরা বা অনাবৃষ্টি হলে তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে দুআ চাইতেন এবং সে দুআর ওসীলায় আল্লাহ তাদের বৃষ্টি দান করতেন। তাঁর ওফাতের পরে যেহেতু আর তাঁর কাছে দুআ চাওয়া যাচ্ছে না, সেহেতু তাঁর চাচা আব্বাসের (রা) কাছে দুআ চাচ্ছেন এবং দুআর ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছেন। চতুর্থত: কোনো ব্যক্তি তাঁর মর্যাদা বা অধিকারের দোহাই দেওয়া। আল্লাহর কাছে দুআ করার ক্ষেত্রে ওসীলা বা দোহাই দেওয়ার চতুর্ত পর্যায় হলো, কোনো ব্যক্তির, বা তাঁর মর্যাদার বা তাঁর অধিকারের দোহাই দেওয়া। যেমন জীবিত বা মৃত কোনো নবী-ওলীর নাম উল্লেখ করে বলা: হে আল্লাহ অমুকের ওসীলায়, বা অমুকের মর্যাদার ওসীলায় বা অমুকের অধিকারের অসীলায় আমার দুআ কবুল করুন। এরূপ দুআ করার বৈধতার বিষয়ে আলিমদের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। অনেক আলিম এরূপ দুআ করা বৈধ বলেছেন। তাদের বর্ণনার সার-সংক্ষেপ যে, খলীফা হযরর উসমান (রা)-এর সময়ে এক ব্যক্তি তাঁর দরবারে একটি প্রয়োজনে যায়। কিন্তু খলীফা তার প্রতি দষ্টিৃপাত করেন না। লোকটি উসমান ইবনু হানীফের (রা) নিকট গমন করে তাকে খলীফা উসমানের নিকট তার জন্য সুপারিশ করতে অনুরোধ করে। তখন উসমান ইবনু হানীফ লোকটিকে একটি দোয়া শিখিয়ে দেন, যা রাসূল সাঃ এর এক অন্ধ ছাহাবী অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাসূল সাঃ এর কাছে দোয়া চাইলে তিনি তাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। লোকটি এভাবে দুআ করার পরে খলীফা উসমান (রা) তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। দোয়াটি নিম্নরূপঃ
أَنَّ رَجُلا ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ r فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي قَالَ إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قَالَ فَادْعُهْ قَالَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ (فيحسن ركعتين) وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ r نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، (يا محمد) إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِيَ (يا محمد إني أَتَوَجَّهُ بِكَ إلى اللهِ أَنْ يَقْضِيَ حَاجَتِيْ) (فَيُجْلِيْ لِيْ عَنْ بَصَرِي) اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ (وشَفِّعْنِي فِيْهِ) (اللهم شَفِّعْهُ فِيَّ وَشَفِّعْنِيْ فِيْ نَفْسِيْ)
একজন অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আগমনে করে বলে, আমার জন্য দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দান করেন। তিনি বলেন: তুমি যদি চাও আমি দুআ করব, আর যদি চাও তবে সবর কর, সেটাই তোমার জন্য উত্তম। লোকটি বলে: আপনি দুআ করুন। তখন তিনি তাকে নির্দেশ দেন, সে যেন সুন্দর করে ওযূ করে (অন্য বর্ণনায়: এবং দু রাকাত সালাত আদায় করে) এবং এই দুআ করে: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকে মুখ ফিরাচ্ছি (মনোনিবেশ করছি) আপনার নবী মুহাম্মাদের দ্বারা, যিনি রহমতের নবী, হে মুহাম্মাদ, আমি মুখ ফিরাচ্ছি (মনোনিবেশ করছি) আপনার দ্বারা আমার প্রতিপালকের দিকে আমার এ প্রয়োজনটির বিষয়ে, যেন তা মেটানো হয়। (অন্য বর্ণনায়: যেন তিনি তা মিটিয়ে দেন, যেন তিনি আমার দৃষ্টি প্রদান করেন। ) হে আল্লাহ আপনি আমার বিষয়ে তার সুপারিশ কবুল করুন (অন্য বর্ণনায়: আমার বিষয়ে তাঁর সুপারিশ কবুল করুন এবং তাঁর জন্য আমার সুপারিশ কবুল করুন। অন্য বর্ণনায়: আমার বিষয়ে তাঁর সুপারিশ কবুল করুন এবং আমার বিষয়ে আমার নিজের সুপারিশও কবুল করুন। ) তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৬৯; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৭০০, ১/৭০৭; হাকিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসণ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এ হাদীসে অন্ধ লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দুআ চেয়েছে। তিনি দুআ করেছেন এবং তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন তাঁর দুআর ওসীলা দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে নিজে দুআ করতে। লোকটি সেভাবে দুআ করেছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুআর ওসীলাই নয়, উপরন্তু তাঁর ইন্তেকালের পরেও তাঁর ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়াও বৈধ। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো ফিরিশতা, নবী, সাহাবী, তাবিয়ী বা ওলী-আল্লাহর ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়ার কোনো কথা কোনো হাদীসে বা সাহাবী-তাবিয়ীগণের বক্তব্যে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো আলিম কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যক্তিসত্তার ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা জায়েয বলেছেন। অন্য কারো ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়া নাজায়েয বলেছেন। তাঁদের মতে, কারো মৃত্যুর পরেও তাঁর ওসীলা দিয়ে দুআ করা জায়েয বলার পরে রাসূলুল্লাহ সা. কে বাদ দিয়ে অন্য কারো ওসীলা দিয়ে দুআ করা তাঁর সাথে বেয়াদবী ছাড়া কিছুই নয়। পক্ষান্তরে অন্য অনেক আলিম কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির, তাঁর মর্যাদার বা তাঁর অধিকারের দোহাই দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা অবৈধ ও নাজায়েয বলে গণ্য করেছেন। তাঁরা বলেন যে, এরূপ কোনো জীবিত বা মৃত কারো ব্যক্তিসত্তার ওসীলা দিয়ে দুআ চাওয়ার কোনোরূপ নযির কোনো সহীহ ও প্রসিদ্ধ হাদীসে বা সাহাবী-তাবিয়ীগণের মধ্যে পাওয়া যায় না। এছাড়া নবীগণ ও যাদের নাম মহান আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন তাঁরা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির বিষয়ে সুনিশ্চিতভাবে কখনোই বলা যায় না যে, উক্ত ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বা আল্লাহর কাছে তাঁর কোনো বিশেষ মর্যাদা বা অধিকার আছে। সর্বোপরি তাঁরা উপরে উল্লেখিত উমার (রা) কর্তৃক আব্বাসের ওসীলা প্রদানকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। যদি কারো দুআর ওসীলা না দিয়ে তাঁর সত্তার ওসীলা দেওয়া জায়েয হত তবে উমার (রা) ও সাহাবীগণ কখনোই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বাদ দিয়ে আব্বাস (রা)-এর দোয়ার ওসীলা পেশ করতেন না। শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী তাঁর আল-বালাগুল মুবীন গন্থে উমার (রা)-এর হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন: এই ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তিকে অসিলা করা শরীয়ত বিরোধী। যদি শরীয়ত সিদ্ধ হইত হযরত ওমর (রা) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অসিলা করিয়াই দোআ করিতেন। কারণ, মৃত বা জীবিত যে কোন ব্যক্তির চেয়েই হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ফযীলত সীমাহীন-অনন্ত। তাহই হযরত ওমর (রা) এই কথা বলেন নাই যে, হে আল্লাহ, ইতি পূর্বে তো আমরা তোমার নবীকে অসীলা করিয়া দোআ করিতাম। কিন্তু এখন তিনি আমাদের মধ্যে বিদ্যমান নাই তাই আমরা তাঁহার রুহু মোবারককে অসিলা করিয়া তোমার কাছে আরযী বেশ করিতেছি। তাই কোন মৃত ব্যক্তিকে অসিলা করা মোটেই বৈধ নহে। এবং জীবিত ব্যক্তির ব্যক্তি স্বত্তার ওসীলা দিয়ে দোয়া করার কথাও কোরান হাদীসে কোথাও পাওয়া যায় না। বরং জীবিত ব্যক্তির দোওয়ার ওসীলা দিয়ে দোয়া করার কথা একাধিক হাদীসে পাওয়া যায়। ইমাম আবূ হানীফা (রাহ), ইমাম আবূ ইউসূফ (রাহ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহ) সকলেই একমত যে কারো অধিকার বা মর্যাদার দোহাই দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ চাওয়া মাকরূহ। আল্লামা ইবনু আবিল ইয্য হানাফী বলেন:
قَالَ أَبُو حَنِيفَةَ وَصَاحِبَاهُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ : يُكْرَهُ أَنْ يَقُولَ الدَّاعِي: أَسْأَلُكَ بِحَقِّ فُلانٍ، أَوْ بِحَقِّ أَنْبِيَائِكَ وَرُسُلِكَ ، وَبِحَقِّ الْبَيْتِ الْحَرَامِ ، وَالْمَشْعَرِ الْحَرَامِ ، وَنَحْوِ ذَلِكَ
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) ও তাঁর সঙ্গীদ্বয় বলেছেন: আমি অমুকের অধিকার বা আপনার নবী-রাসূলগণের অধিকার, বা বাইতুল হারামের অধিকার বা মাশআরুল হারামের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি বা প্রার্থনা করছি বলে দুআ করা মাকরূহ। আল্লামা আলাউদ্দীন কাসানী (৫৮৭ হি) বলেন:
وَيُكْرَهُ لِلرَّجُلِ أَنْ يَقُولَ فِي دُعَائِهِ أَسْأَلُك بِحَقِّ أَنْبِيَائِك وَرُسُلِك وَبِحَقِّ فُلانٍ لأنَّهُ لا حَقَّ لأحَدٍ عَلَى اللَّهِ...
আমি আপনার নবী-রাসূলগণের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি এবং অমুকের অধিকারের দোহাই দিয়ে চাচ্ছি বলে দুআ করা মাকরূহ; কারণ মহান আল্লাহর উপরে কারো কোনো অধিকার নেই। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা যায় যে,প্রথম তিন প্রকারের ওসীলা গ্রহন করা বৈধ। এমনকি কোনটি উত্তম । কিন্তু চতুর্থ প্রকার তথা ব্যক্তি স্বত্তার ওসীলা দিয়ে দোয়া করা অপছন্দনিয় যা থেকে বেচে থাকা আমাদের উচিত্ জীবিত হোক বা মৃত হোক । আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 204
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত । এটা সহী কি না জানতে চাই?
20 Dec 2025
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য মুবারকবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোকপাত করা হল। الجنة تحت أقدام الأمهات মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত এখানে মায়ের মর্যাদা বুঝানো হয়েছে। তবে হাদীসটি উলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে এই শব্দে জাল বা বানোয়াট । রাসূল সাঃ থেকে সহীভাবে হাদীটি প্রমাণীত নয়। কারন এই হাদীসের সনদে মূসা ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আতা রয়েছে যিনি মিথ্যাবাদী এবং অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তি । তবে ভাবমর্ম সহী। পিতামাতার সাথে সদাচারন করার ব্যাপারে কোরআন এবং হাদীসে অসংখ্য জায়গায় স্পষ্টভাবে বারবার নির্দেশ এসেছে। যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম হাদীসটিকে জাল বলেছেন তাঁরা হলেন, হাফেজ ইবনে আদী রহঃ, ইমাম উকায়লী রহঃ, ইমাম আবু যুরআহ রহঃ, ইমাম দারেকুতনী রহঃ, ইবনে হিব্বান রহঃ, ইমাম যাহাবী রহঃ, ইবনে হাজার রহঃ, এবং আলবানী রহঃ হাদীসটি সিলসিলায়ে যয়ীফাহ এর ভিতর উল্লেখ করে হাদীসটিকে জাল বলেছেন। পিতামাতার সাথে সদাচারন করার ব্যাপারে কোরআনের বাণীঃ
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا
অর্থঃ আর তোমার প্রতিপালক ফয়সালা করেছেন যে, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতামাতার সাথে ভালব্যাবহার করবে। তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়েই বার্ধ্যকে পৌছে যায় তাহলে তাদের সামনে উফ শব্দটুকুও করবে না এবং তাদেরকে ধুমুক দিবে না । তাদের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলবে। সূরা আল-ইসরা, আয়াত,২৩। এব্যাপারে হাদীসের বাণীঃ
حديث معاوية بن جاهمة أنه جاء النبي صلى الله عليه وسلم قال : يا رسول الله أردتُ أن أغزو ، وقد جئت أستشيرك فقال : هل لك أم ؟ قال : نعم ، قال : فالزمها ؛ فإن الجنة تحت رجليها .
অর্থঃ মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা রাঃ নামের এক ছাহাবী রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাঃ আমি যুদ্ধ করতে চাই। আর আমি আপনার কাছে পরামর্শ চাইতে এসেছি। তখন রাসূল সাঃ বললেন: তোমার মা কি বেঁচে আছেন। তখন ছাহাবীটি বললেন হা আছেন। তখন রাসূলে আকরাম সাঃ বললেন: তুমি তার কাছেই থেকে যাও। কেননা জান্নাত তো তাঁর পায়ের নিচে।নাসায়ী, তাবারানী, হাদীসের সনদ হাসান । তবে হাকিম রহঃ এবং যাহাবী রহঃ সহীহ বলেছেন আর মুনযিরী রহঃ স্বীকৃতি দিয়েছেন। অতএব কোরআন এবং হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী সবসময় পিতামাতার সাথে ভালব্যাবহার করা এবং তারা কষ্ট পায় এমন কথা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 205
কোরআনে আছে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গেলে কাফের হয়ে যায় । তাহলে কি আমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গেলে কাফের হয়ে যাব?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিচে আপনর প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচানা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আাপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। মানব প্রকৃতির একটি বিশেষ দিক আনন্দের সময়ে আল্লাহকে ভুলে থাকা কিন্তু বিপদে পড়লে বেশি বেশি দুআ করা। নিঃসন্দেহে এ আচরণ মহান প্রতিপালকের প্রকৃত দাসত্বের অনুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক। কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ স্বভাবের নিন্দা করা হয়েছে। এক স্থানে আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاءٍ عَرِيضٍ
যখন আমি মানুষকে নিয়ামত প্রদান করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। আর যখন কোনো অমঙ্গল বা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে তখন সে লম্বা চওড়া দুআ করে। মুমিনের উচিত নিয়ামতের মধ্যে থাকলে তার স্থায়িত্ব প্রার্থনা করা ও সকল অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কোনো অসুবিধা থাকলে তার কাছে আশ্রয় ও মুক্তি চাওয়া। আর এরূপ অন্তরের দুআই আল্লাহ কবুল করেন। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ وَالْكَرْبِ فَلْيُكْثِرْ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ
যে ব্যক্তি চায় যে কঠিন বিপদ ও যন্ত্রণা-দুর্দশার সময় আল্লাহ তার প্রার্থনায় সাড়া দিবেন, সে যেন সুখশান্তির ও সচ্ছলতার সময় বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দুআ করে। হাদীসটি সহীহ। আবার যখন দুআ করি তখন তৎক্ষণাৎ ফল আশা করি। বিশেষত বিপদে, সমস্যায় বা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হলে। দুচার দিন দুআ করে ফল না পেলে আমরা হতাশ হয়ে দুআ করা ছেড়ে দি। এ হতাশা ও ব্যস্ততা ক্ষতি ও গোনাহের কারণ। কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। কোরআনে এসেছে : لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيم
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল,অতি দয়ালু। সূরা ঝুমার, আয়াত, ৫৩। অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَيْأَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না । কেবল মাত্র কাফের সম্প্রদায়ই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়। সূরা ইউসুফ,আয়াত-৮৭। আমাদের বুঝতে হবে যে, দুআ করা একটি ইবাদত ও অপরিমেয় সাওয়াবের কাজ। আমি যত দুআ করব ততই লাভবান হব। আমার সাওয়াব বৃদ্ধি পাবে, আল্লাহর সাথে আমার একান্ত রহমতের সম্পর্ক তৈরি হবে। সর্বোপরি আল্লাহ আমার দুআ কবুল করবেনই। তবে তিনিই ভাল জানেন কিভাবে ফল দিলে আমার বেশি লাভ হবে। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
لاَ يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ
বান্দা যতক্ষণ পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কোনো কিছু প্রার্থনা না করে ততক্ষণ তার দুআ কবুল করা হয়, যদি না সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বলা হলো : ইয়া রাসূলাল্লাহ, ব্যস্ততা কিরূপ? তিনি বলেন : প্রার্থনাকারী বলতে থাকে দুআ তো করলাম, দুআ তো করলাম ; মনে হয় আমার দুআ কবুল হলো না। এভাবে সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং তখন দুআ করা ছেড়ে দেয়। আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
لا يَزَالُ الْعَبْدُ بِخَيْرٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ قَالُوا وَكَيْفَ يَسْتَعْجِلُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ رَبِّي فَلَمْ يَسْتَجِبْ لِي
বান্দা যতক্ষণ না ব্যস্ত ও অস্থির হয়ে পড়ে ততক্ষণ সে কল্যাণের মধ্যে থাকে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন: ব্যস্ত হওয়া কিরূপ? তিনি বলেন: সে বলে আমি তো দুআ করলাম কিন্তু দুআ কবুল হলো না। হাদীসটি হাসান। প্রত্যেক মুমিনের উপর দায়িত্ব, আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও ভালবাসার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় রাখা। আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন, তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন এবং তিনি আমাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। এ দৃঢ় প্রত্যয় মুমিনের অন্যতম সম্বল ও মহোত্তম সম্পদ। অন্তরের গভীর থেকে মনের আকুতি ও সমর্পণ মিশিয়ে নিজের সবকিছু আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। সাথে সাথে সুদৃঢ় প্রত্যয় রাখতে হবে, আল্লাহ অবশ্যই আমার প্রার্থনা শুনবেন। ইবনু উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
إِذَا سَأَلْتُمْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَيُّهَا النَّاسُ فَاسْأَلُوهُ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَسْتَجِيبُ لِعَبْدٍ دَعَاهُ عَنْ ظَهْرِ قَلْبٍ غَافِلٍ
হে মানুষেরা, তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবে; কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দুআ করলে আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন না। হাদীসটি হাসান। অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاهٍ
তোমরা আল্লাহর কাছে দুআ করার সময় দৃঢ়ভাবে (একীন) বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ নিশ্চয় কবুল করবেন। আর জেনে রাখ, আল্লাহ কোনো অমনোযোগী বা অন্য বাজে চিন্তায় রত মনের প্রার্থনা কবুল করেন না। ব্যাক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক যে কোন প্রকৃত সম্ভাব্য সমস্যাকে নিয়েই আমাদের চিন্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খারাপ দিকটা নিয়েই আবর্তিত হয়। অথচ সমস্যা থেকে উত্তরণের বাস্তব চেষ্টার পাশাপাশি সকল অবস্থায় ভাল চিন্তা করা এবং আল্লাহর রহমতে সকল বিপদ কেটে যাবেই এরুপ সুদৃঢ় আশা রাখা মুমিনের ঈমানের দাবী এবং সাওয়াবের কাজ। যে বান্দা আল্লাহর রহমতের আশা করতে পারেনা সে তো আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করতে পারল না। হাদীসে এসেছে
حسن الظن ( بالله) من حسن العبادة
অর্থঃ আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করা উত্তম ইবাদত। আবু দাউদ,( কিতাবুল আদব,বাব, হুসনিয যন) ৪/৩০০ হাদীস নং ৪৯৯৩। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত অপর একটি হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন:
أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا دَعَانِي
আমার বান্দা আমার বিষয়ে যেরূপ ধারণা করে আমি সেখানেই থাকি। আমার বান্দা যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার সাথে থাকি। মোটকথা, বান্দার অন্তরে আল্লাহর রহমতের আশা তার ঈমানের পরিমান অনুপাতে থেকে থাকে। অর্থাৎ যার যতটুকু ঈমান আছে সে ততোটুকু আল্লাহর রহমতের আশা করে থাকে। কাফেরদের সামান্য পরিমানও ঈমান নেই তাই তারা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ । অনুরুপভাবে কোন মুসলামন যখন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায় তখন তার একাজটি কাফেরদের অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে যায় এবং এটাকে কুফুরী হিসাবে গণ্য করা হয়। অতএব আমাদের উচিত সবসময় সবধরনের হতাশা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। সঠিক বিষয় আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পাঠককে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 206
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ, আপনার কাছে আমার জানার বিষয় হল, রমযান মাসে কেউ মারা গেলে কি তার কোন সওয়াল-জওয়াব হবে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে শুকরান । নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে স্বল্পপরিসরে আলোচনা করা হল । আশা করি তাতে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। দুনিয়ার জীবনে যে ব্যাক্তিই গুনাহ বা অপরাধ করবে, কবরে সে ব্যক্তিই শাস্তির যগ্য (আল্লাহর কাছে তাওবা করে মাফ পেয়ে গেলে ভিন্ন কখা)। সে যেদিনেই মৃতবরণ করুক, এক্ষেত্রে দিন-তারিখ বা সময়ের কোন শ্রেষ্ঠত্য নেই। কারন সওয়াব বা ফযীলত বান্দার আমলের ওপর নির্ভর করে। একটি হাদীসে জুমআর দিনে মৃতবরনের ফযীলতের বিষয়ে বলা হলেও তা অত্যন্ত দুর্বল একাধিক সনদ একত্রিত করার পরও হাদীসটির দুর্বলতা দূর হয়নি। -হাদীসের আরবী উচ্চারণ নিম্নরুপ:
القبر ما من مسلم يموت يوم الجمعة أو ليلة الجمعة إلا وقاه الله فتنة
অর্থঃ যে ব্যাক্তিই জুমআর দিনে বা রাতে মৃত বরণ করবে আল্লাহ তাকে কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন। শায়খ আলবানী রহঃ হাদীসটি তার আহকামুল জানাইয গ্রন্থে এনে বলেছেন: সনদের সমষ্টির ভিত্তিতে হাদীসটি সহীহ বা হাসান। খন্ড,১ পৃষ্ঠ,৩৫। কিন্তু তুহফাতুল আহওযী গ্রন্থের লেখক তার কিতাবে হাদীসটিকে ইনকিতা এর ভিত্তিতে দুর্বল বলেছেন। খন্ড,৩ পৃষ্ঠ,১৩৮। আর শায়খ শুয়াইব আরনাউত বলেন: হাদীসটির সনদ দুর্বল্ । আলবানী রহঃআহকামুল জানাইজ গ্রন্থে হাদীসটিকে হাসান বা সহীহ বলার ক্ষেত্রে ভুল করেছেন। মুসনাদে আহমাদ,তাহকীক,শুয়াইব আরনাউত,খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬৯। তবে যদি কেউ রোজায় থাকা অবস্থায় মারা যায় তাহলে তার ব্যাপারে কল্যাণের আশা করা যেতে পারে। একটি হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন:
ومن صام يوما ابتغاء وجه الله ختم له بها دخل الجنة
অর্থঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখল, এ অবস্থাতে তার মৃত্যু ঘটল সে ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি সহীহ লিগয়রিহী এবং সনদের সকল রাবী ছিকাহ, তবে মুনকাতি। মুসনাদে আহমাদ, তাহকীক,শুয়াইব আরনাউত,খন্ড,৫ পৃষ্ঠা ৩৯১। শায়খ আলবানী বলেন: হাদীসের সনদটি সহীহ। আহকামুল জানাইজ, খন্ড,১ পৃষ্ঠা ৪৩। হায়সামী রহঃ বলেন:উসমান ইবনে মুসলিম ছাড়া সনদের সকল রাবী সহীহের রাবী। তবে তিনি ছিকাহ। মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খন্ড, ৭ পৃষ্ঠ,১৪০। উপরের আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায় যে, নিসক রমজানের দিবসে মারা যাওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বা দুর্বল হাদীস বর্ণীত হয়নি। যা আছে তা শুক্রুবার কিংবা রোজা থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে। আল্লা্হ আমাদেরকে উত্তম মৃত্যু দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 207
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গায়েবানা জানাযার বিধান সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে জাযা দান করুন। নিচে এ বিষয়ে সামান্য আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। বিষয়ে জানাযা শরীয়ত অনুমোদন করে কি না এব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযাহাবের উলামায়ে কেরামের মতে তা বৈধ। এব্যাপারে হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه: أن النبي صلى الله عليه وسلم نعى النجاشي في اليوم الذي مات فيه، وخرج بهم إلى المصلى فصف بهم وكبر عليه أربعاً.
অর্থঃ আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত, নবী সা.নাজ্জশীর মৃত্যুর দিন তার মৃত্যুর সংবাদ সাহাবীদেরকে জানালেন এবং তাদেরকে নিয়ে ঈদগাহে বের হলেন এবং তাদেরকে নিয়ে কাতার সোজা করে তার জানাযার নামাজ আদায় করলেন। বুখারী,আস সহীহ, বাব,আর রজুলু ইয়ানআ ইলা আহলিল মায়্যিত, হাদীস নং ১২৪৫। অপরদিকে হানাফী এবং মালেকী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মতে সাধারনভাবে গায়েবানা জানাযা বৈধ নয়। রাসূল সা.বাদশা নাজাশীর গায়েবানা জানাযা করার ঘটনাটি একান্তই রাসূল সা. এর সাথে বিশেষায়িত। কেননা রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় তাঁর অগণিত সাহাবী, আত্নীয়স্বজন ও আপনজন মৃত্যু বরণ করেছেন। অনেকেই তাঁর থেকে দূরে জিহাদের ময়দানে, বন্দি অবস্থায় বা দূরের কোন শহরে বা গ্রামে অবস্থান কালে ইন্তেকাল করেছেন। কেউ তাঁর কাছে থেকে ইন্তেকাল করলে তিনি সাধারনত তাঁর জানাযা পড়তেন। তিনি কখোন কারো মৃতদেহের অনুপস্থিতিতে তার জানাযা পড়াননি। শুধুমাত্র একটি ব্যতিক্রম ছিল আবিসিনিয়ার শাসক নাজাশীর ইন্তেকাল । সাহাবীগণ আবিসিনিয়ায় হিজরত করলে তাঁদের সংস্পর্শে এসে তিনি ইসলাম গ্রহন করেন । তাঁর দেশে আর কেউ ইসলাম গ্রহন করেনি। যেদিন নাজাশী ইন্তেকাল করেন। সেই দিনই রাসূলুল্লাহ সাঃ তাঁর ছাহাবীগণকে তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ প্রদান করেন এবং গায়েবানা জানাযার নামাজ আদায় করেন। তবে মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের মতে ব্যক্তি যদি এমন দেশে মৃত্যু বরণ করে যেখানে তার জানাযার নামাজ পড়ার মত কেউ নেই সেক্ষেত্রে তার জানাযার নামাজ পড়া যাবে, অন্যথায় নয়। এ মত গ্রহন করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ ও তাঁর ছাত্র ইবনে কায়্যিম রহঃ। ইবনে কায়্যিম রহঃ তাঁর যাদুল মাআদ নামক প্রসিদ্ধ কিতাবে বলেন
وقال شيخ الإسلام ابن تيمية: الصواب أن الغائب إن مات ببلدٍ لم يصلَّ عليه فيه، صلي عليه صلاة الغائب، كما صلى النبي صلى الله عليه وسلم على النجاشي لأنه مات بين الكفار ولم يُصلَّ عليه، وإن صلي عليه حيث مات لم يصلَّ عليه صلاة الغائب، لأن الفرض قد سقط بصلاة المسلمين عليه.
অর্থঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেছেন: সঠিক কথা হল, অনুপস্থিত ব্যক্তি যদি এমন দেশে মারা যায় যেখানে তার জানাযার নামাজ পড়ার মত কেউ নেই তাহলে তার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া হবে। যেমন রাসূল সা. নাজাশীর জন্য পড়েছিলেন। কেননা তিনি কাফেরদের মাঝে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং তার জানাযার নামাজ পড়া হয়েছিলো না। আর যদি ব্যক্তি যেখানে মৃত্যুবরণ করে সেখানে তার জানাযার নামাজ পড়া হয় তাহলে তার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া হবে না। কেননা অন্যান্য মুসলমানরা তার জানাযার নামাজ পড়ার কারণে অন্যদের উপর থেকে ফরযিয়্যাত রহিত হয়ে গেছে। বাব, আস সালাত আলাল জানাইয, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৫০০ (শামিলা)
আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 208
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সকল মানুষ পরস্পর ভাই ভাইএই হাদিসটি সুনানে আবু দাউদ,আদাব অধ্যায়ে বা অন্য কোন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে আছে কিনা? একজন ডঃ স্যার একটি আর্টিকেল এ হাদিসটি এনেছেন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিচে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়া হল । জ্বী হ্যা ভাই, এমর্মে একটি হাদীস আছে যার আরবী উচ্চারণ হল - الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ । আর অর্থ হল মুসলমান মুসলমানের ভাই। হাদীসটি সকল নির্ভরযগ্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে। নিম্নে কিছু গ্রন্থের তালিকা দেয়া হল। ১) বুখারী, আস- সহীহ, হাদিস নং, ২৪৪২, অধ্যায়, কিতাবু বাদ্ইল ওহী, পরিচ্ছেদ, লা ইয়াযলিমুল মুসলিমু...
২) মুসলিম, আস-সহীহ, হাদিস নং, ৬৭০৬, অধ্যায়, আল বির ওসসিলাহ, পরিচ্ছেদ, তাহরীমু জুলমিল মুসলিম। ৩) আবু দাউদ, আস-সুনান, কিতাবুল আদাব, বাবুল মুওয়াখাত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৭০। (ভারতীয় সংস্করন)
৪) সুনানে তিরমিযী, তাহকীক, শাকের ও আলবানী। কিতাব - তাফসীরুল কোরআন,বাব-সুরা তাওবা। হাদীস নং ৩০৮৭।
প্রশ্নঃ 209
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, ঈদের নামায সহীহ হওয়ার জন্য ঈদের মাঠ ওয়াক্ফ হওয়া শতী কিনা? কুরআনের হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। উক্ত ঈদের মাঠে ঈদের নামাজ সহীহ হবে। ঈদগাহের জন্য ওয়াক্বফকৃত জমি হওয়া শর্ত নয় বরং ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে এমন জমিতেও ঈদের নামাজ আদায় হবে। আর ঈদগাহ ওয়াক্বফকৃত হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় নামাজের সাওয়াবের মধ্যে কোন কম বেশি হবে না। প্রমাণ جاء في بفتح الباري (2/44كتاب العيدين)عن أبي سعيد الخدري قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يخرج يوم الفطر والأضحى إلى المصلى فأول شيئ يبدأ به الصلاة ...إلخ .
ঈদগাহের জন্য জমি ওয়াক্বফ শর্ত নয়ঃ সাধারণভাবে যে সকল শর্ত পাওয়া গেলে জুমআর সালাত ওয়াজীব হয় সে সকল শর্ত পাওয়া গেলে ঈদের সালাতও ওয়াজীব হয়। যেমন ঈদের সালাত এমন স্থানে আদায় করতে হবে, যেখানে সকলের প্রবেশ করার সাধারণ অনুমতি রয়েছে। তবে ঈদগাহের জমি ওয়াক্বফ হওয়া শর্ত নয় বরং মালিকানাধীন জায়গায় মালিকের অনুমতিতে ঈদের সালাত আদায় করা বৈধ হবে। (ফতুয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১২/৪৭৭-৪৭৮) এমনকি ঈদগাহ ব্যতীত যে কোন সাধারণ মাঠেও ঈদের সালাত আদায় করা বৈধ। সরকারী মাঠে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ঈদের সালাত আদায় করা যাবে। (ফতুয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১২/৪৮২-৪৮৩)
ঈদগাহের জমি ওয়াক্বফ হওয়া না হওয়ার পার্থক্যঃ ঈদগাহের জমি ওয়াক্বফ হওয়া না হওয়ার পার্থক্য হল, ওয়াক্বফিয়া ঈদগাহে কোন হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ঈদগাহ ওয়াক্বফ করা না হলে ঈদগাহ স্থানান্তর করে উক্ত জায়গাকে মসজিদ, মাদরাসা বা যে কোন কাজে মালিক ব্যবহার করতে পারবে। তবে ঈদগাহের জমি ওয়াক্বফিয়া হওয়া না হওয়ার সাথে ঈদের সালাতের সাওয়াবের কোন তারতম্য হবে না। (ফতুয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১২/৫১৪)
প্রশ্নঃ 210
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে মোনাজাত করা যাবে কি না এব্যাপারে কোরআন হাদীসের আলোকে আপনার মতামত জানতে চাই।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । নিচে এব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি । আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় আলোচ্য: (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা, (২) মুনাজাত করার সময় হাত উঠানো এবং (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিকর ও মুনাজাত করা। (১) নামাযের পরে মুনাজাত করা। নামায মুমিনের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাযের শেষে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি ও আবেগ আসে। এই সময়ে তাড়াহুড়ো করে উঠে চলে যাওয়া মুমিনের উচিত নয়। নামাযের পরে যতক্ষণ সম্ভব নামাযের স্থানে বসে দুআ মুনাজাত ও যিকিরে রত থাকা উচিত। মুমিন যদি কিছু না করে শুধুমাত্র বসে থাকেন তাও তাঁর জন্য কল্যাণকর। নামাযের পরে যতক্ষণ মুসল্লী নামাযের স্থানে বসে থাকবেন ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন:
إَذَا صَلَّى الْمُسْلِمُ ثُمَّ جَلَسَ فِيْ مُصَلاَّهُ لَمْ تَـزَلِ الْمَلاَئِكَةُ تَدْعُو لَهُ اَللَّهُمَّ اغْـفِـرْ لَـهُ اَللَّهُمَّ ارْحَـمْهُ مَا لَـمْ يُـحْدِثْ أَوْ يَـقُمْ
যদি কোনো মুসলিম সালাত আদায় করে, এরপর সে তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকে, তবে ফিরিশতাগণ অনবরত তাঁর জন্য দুআ করতে থাকেন : হে আল্লাহ একে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, একে রহমত করুন। যতক্ষণ না সে ওযু নষ্ট করে বা তাঁর স্থান থেকে উঠে যায় ততক্ষণ। হাদীসের শিক্ষার আলোকে আমারা দেখতে পাই যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরে কিছু সময় বসে যিক্র ও মুনাজাত করা সুন্নাত সম্মত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরের দুআ কবুল হয় বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। হযরত আবু উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো: কোন্ দুআ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়? তিনি উত্তরে বলেন :
جَـوْفُ الليـلِ الآخِـرُ، ودُبـُر الصلواتِ الـمكتـوبات
রাত্রের শেষ অংশ ও ফরয নামাযের শেষে (দুআ বেশি কবুল হয়)। এভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে দুআ করা একটি সুন্নাত সম্মত নেক আমল। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত নামাযের শেষে কিছু সময় যিকর ও মুনাজাতে কাটানো। এধরনের আরো কিছু দোয়া নামাযের পর রাসূল সাঃ করতেন। (২) হাত তুলে মুনাজাত করা। দুআ-মুনাজাতের একটি আদব হলো, দুই হাত তুলে দুআ করা। এই অর্থে একটি হাদীসে বলা হয়েছে: নিশ্চয় আল্লাহ লাজুক দয়াবান। যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দুখানা হাত উঠায় (দুআ করতে), তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। অন্য বর্ণনায় সালমান ফারসী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا رَفَـعَ قَـوْمٌ أَكُـفَّـهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُوْنَهُ شَيْئًا إِلاَّ كَـانَ حَـقًّا عَـلَى اللهِ أَنْ يَـضَـعَ فِـيْ أَيْدِيْـهِمْ الَّذِيْ سَأَلُوْا
যখনই কিছু মানুষ আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য তাদের হাতগুলিকে উঠাবে, তখনই আল্লাহর উপর হক্ক (রহমতের দায়িত্ব) হয়ে যাবে যে তারা যা চেয়েছে তা তিনি তাদের হাতে প্রদান করবেন। হাফিয হাইসামী উল্লেখ করেছেন যে, হাদীসটির সনদ সহীহ। অন্য হাদীসে মালিক ইবনু ইয়াসার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
إِذَا سَأَلْتُمْ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا
তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন হাতের পেট দিয়ে চাইবে, হাতের পিঠ দিয়ে চাইবে না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। রাসূলূল্লাহ ((সা.) বিভিন্ন সময়ে হাত উঠিয়ে দুআ করতেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন :
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ r يَرْفَعُ يَدَيْهِ يَدْعُو حَتَّى إِنِّي لأَسْأَمُ لَهُ مِمَّا يَرْفَعُهُمَا يَدْعُو اللَّهُمَّ فَإِنَّمَا أَنَا بَشْرٌ فَلا تُعَذِّبْنِي بِشَتْمِ رَجُلٍ شَتَمْتُهُ أَوْ آذَيْتُهُ
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত দুখানা উঠিয়ে দুআ করতেন, এমনকি আমি তাঁর (দীর্ঘ সময়) হাত উঠিয়ে দুআ করাতে ক্লান্ত ও অস্থির হয়ে পড়তাম; তিনি এভাবে দুআয় বলতেন : হে আল্লাহ, আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি কোনো মানুষকে গালি দিয়ে ফেললে বা কষ্ট দিলে আপনি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিবেন না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, অন্যান্য সময়ের ন্যায় নামাযের পরেও মুনাজাতের সময় হাত উঠানো উত্তম। তবে যে ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা ফযীলত বাদ দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে ফযীলত বাদ দেওয়াই সুন্নাত। যেমন, কিবলামুখী হয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। কিন্তু নামাযের পরে ইমামের জন্য এই মুস্তাহাব পরিত্যাগ করাই সুন্নাত। অনেক হাদীস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক সময়, বরং অধিকাংশ সময় দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত উঠাতেন না। বরং শুধু মুখে দুআ-মুনাজাত করতেন। সাহাবীগণ থেকেও আমরা অনুরূপ কর্ম দেখতে পাই। এ সকল ক্ষেত্রে আমরা কী করব? আমরা কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রেও হাত উঠিয়ে দুআ করা উত্তম এবং হাত না উঠানো অনুচিত? তাহলে তো স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্ম অনুচিত পর্যায়ের হয়ে গেল। না কি আমরা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো উত্তম, তবে না উঠালেও দোষ নেই? সেক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাজ অনুত্তম বলে গণ্য হলো। না কি বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত না উঠানোই উত্তম, তবে হাত উঠানোতে দোষ নেই? অথবা বলব যে, এ সকল ক্ষেত্রে হাত উঠানো জায়েয নয়? তাহলে হাত উঠানোর ফযীলতে বর্ণিত হাদীসের কী হবে?
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যে সকল সময়ে তিনি দুআ-মুনাজাতে হাত উঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত উঠানো সুন্নাত বলে গণ্য হবে। যেমন আরাফার মাঠে, ইসতিসকার দুআয়, যুদ্ধে শুরুতে, বিশেষ আবেগের ক্ষেত্রে, ইত্যাদি। আর যেখানে ও যে সময়ে তিনি হাত উঠাননি বলে জানা গিয়েছে সেখানে হাত না-উঠানো সুন্নাত। অধিকাংশ নিয়মিত মাসনূন দুআ এই প্রকারের। বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে, এ সকল মুনাজাত পালনের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দু হাত তুলে মুনাজাত করেন নি। আমরা দেখছি যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘুরে বসা, ঠোট নাড়া, কথা বলা ইত্যাদি সব কিছুর বর্ণনা দিচ্ছেন, কিন্তু কখনোই বলছেন না যে, তিনি দুই হাত তুলে এই কথাগুলি বলেছিলেন। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরের মুনাজাতের ক্ষেত্রেই নয়, অধিকাংশ নিয়মিত দুআ- মুনাজাতের ক্ষেত্রেই তিনি হাত উঠাতেন না। উপরের বিষয়গুলি সবই সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। এ সকল তথ্যের বিষয়ে কোনো মতভেদ আছে বলে জানি না। নামাযের পরে সামষ্টিক মুনাজাতের পক্ষের কোনো আলেমও কোথাও উল্লেখ করেন নি বা দাবী করেন নি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীগণ কখনো ফরয সালাতের সালাম ফেরানোর পরে উপস্থিত মুসাল্লীদের নিয়ে সমবেতভাবে দুআ করেছেন বলে কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নামাযের পরে দুআয় একাকী হাত উঠানোর বিষয়ে কিছু কথা বর্ণিত হয়েছে। গত শতাব্দীর কোন কোন আলেম উল্লেখ করেছেন যে, একদিন ফজরের নামাযের পরে ঘুরে বসে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলে দুআ করেছিলেন। তাঁরা বলেন, ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেছেন, ইয়াযিদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) বলেন: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ r الْفَجْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ انْحَرَفَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَدَعَا
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালামের পরে ঘুরে বসলেন এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন। এই হাদীসটি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ও অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। তবে এ সকল গ্রন্থে সংকলিত হাদীসের ভাষা নিুরূপ: আসওয়াদ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলান। তিনি সালাম ফেরানোর পরে ঘুরে বসলেন। কোন গ্রন্থেই এবং দুই হাত উঠালেন ও দুআ করলেন এই অতিরিক্ত কথাটুকু নেই। এজন্য আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান বলেছেন, হাদীসটি নাযীর হুসাইন মুঙ্গীরী এভাবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি কোনো গ্রন্থে তা খুঁজে পান নি এবং এর সনদ জানতে পারেন নি। অন্য হাদীসে ফাদল ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
الصَّلاةُ مَثْنَى مَثْنَى تَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَتَخَشَّعُ وَتَضَرَّعُ وَتَمَسْكَنُ وَتَذَرَّعُ وَتُقْنِعُ يَدَيْكَ يَقُولُ تَرْفَعُهُمَا إِلَى رَبِّكَ مُسْتَقْبِلا بِبُطُونِهِمَا وَجْهَكَ وَتَقُولُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهُوَ كَذَا وَكَذَا، (فَهِيَ خِدَاجٌ)
সালাত দুই রাকআত, দুই রাকআত করে, প্রত্যেক দুই রাকআতে তাশাহ্হুদ পাঠ করবে, বিনীত হবে, কাতর হবে, অসহায়ত্ব প্রকাশ করবে, বেশি করে সাহায্যা প্রার্থনা করবে এবং তোমার দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে দুই হাতের পেট তোমার মুখের দিকে করবে এবং বলবে: হে প্রভু, হে প্রভু। যে এরূপ না করলো তার সালাত অসম্পূর্ণ। এই হাদীসে নামাযের পরে হাত তুলে দোওয়া করার কথা বলা হয়েছে। তবে স্পষ্টতই হাদীসটি নফল নামাযের বিষয়ে, যা দুই রাকআত করে পড়তে হয়। সর্বোপরি হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম বুখারী, উকাইলী, যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটির দুর্বলতা উল্লেখ করেছেন। আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) এক ব্যক্তিকে দেখেন যে, সে সালাত শেষ করার পূর্বে তার দুই হাত উত্থিত করে রেখেছে। ঐ ব্যক্তি সালাত শেষ করলে তিনি বলেন:
إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ r لَـمْ يَكُـنْ يَرْفَـعُ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلاَتِهِ.
রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর দুই হাত উঠাতেন না। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। সালাত শেষের আগে হাত উঠাতেন না থেকে মনে হয় সালাত শেষের পরে রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত তুলতেন। এখানে ফরয বা নফল সালাতের কথা উল্লেখ করা নেই। তবে যে ব্যক্তিকে ইবনু যুবাইর কথাটি বলেছিলেন সে ব্যক্তি বাহ্যত নফল সালাত আদায় করছিল এবং এজন্যই একাকী সালাতের মধ্যে দুই হাত তুলে দোওয়া করছিল। তার পরেও এই হাদীসের ভিত্তিতে আমরা দাবি করতে পারি যে, তিনি নফল ও ফরয উভয় সালাতের পরেই হাত তুলে দুআ করতেন। তবে অন্যান্য অগণিত সহীহ হাদীস, যেগুলিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফরয সালাতের পরের দুআ, যিক্র, বক্তৃতা ও অন্যান্য কর্মের বিবরণ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে সেগুলি থেকে জানা যায় যে, তিনি ৫ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরের দুআ-মুনাজাত করার সময় হাত তুলতেন না। সে সকল হাদীস ও এ হাদীসটির সমন্বয়ে আমরা ধারণা করতে পারি যে, তিনি সম্ভবত মাঝে মাঝে সালাত শেষে দুআ-মুনাজাতের জন্য হাত তুলতেন বা নফল সালাতে দুআ করলে সালাত শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এ সবই একা একা হাত তুলে দুআ করার বিষয়ে। ফরয নামাযের পরে মুক্তাদীদেরকে নিয়ে সমবেতভাবে হাত তুলে বা হাত না তুলে দুআ তিনি কখনো করেননি। এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। (৩) উপস্থিত সকলেই সমবেতভাবে জামাতে যিক্র ও মুনাজাত করা। নামাযের পরে জামাতবদ্ধ মুনাজাত গত কয়েকশত বৎসর যাবৎ চালু হয়েছে। তাতে কোনো প্রকারের ফযীলত আছে বলে আমি জানতে পারি নি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের যুগে এইরূপ মুনাজাতের প্রচলন ছিল না বিধায় কোনো কোনো আলিম একে বিদআত বলেছেন। আমরা জানি যে, নামাযের পরে মুনাজাত করা ও মুনাজাতে হাত উঠানোর ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একাকী মুনাজাত করলে এই দুইটি ফযীলতই পলিত হয়। সমবেতভাবে মুনাজাত করার কোনো ফযীলত হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি। এক্ষেত্রে আমাদের আশা হলো, একজন মুনাজাত করবেন এবং সমবেত সকলেই আমিন বলবেন, এতে হয়ত আল্লাহ সকলের আবেদনে মুনাজাতটি কবুল করবেন। এ জন্য অবশ্যই ইমামকে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে মুনাজাত করতে হবে। এতে মাসবূক মুসাল্লীদের নামায আদায় বিঘিত হবে। আর ইমাম যদি মনে মনে মুনাজাত করেন তবে তো কিছুই হলো না। ইমাম একাকী মুনাজাত করলেন। মুক্তাদিগণ কিছুই না করে হাত তুললেন ও নামালেন। পক্ষান্তরে একাকী মুনাজাত করলে নিজের মনের আবেগ ও প্রয়োজন অনুসারে মুনাজাত করা যায়। এতে মুনাজাতের ফযীলত ও মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি সাধিত হয়, কিন্তু কারো নামাযের ক্ষতি হয় না। এভাবে আমরা বুঝতে পারছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতই উত্তম। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে উল্টে ফেলেছি। তাছাড়া রাসূল সাঃ পরের যুগগুলিতেও সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের যুগেও কেউ কখনো ফরয নামাযের পরে সমবেতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেননি। তাঁরা সুযোগ পেলে এই সময়ে ব্যক্তিগতভাবে যিক্র ও মুনাজাত করতেন। ) হাদীস থেকে বুঝা যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যিকর ও মুনাজাত একাকী পালন করতেন। জামাতে উপস্থিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে তা আদায় করতেন না। কখনোই সাহাবীগণ নামাযের পরের মুনাজাতে তাঁর সাথে শরীক হয়েছেন বলে বর্ণিত হয় নি। প্রায় অর্ধ শত সাহাবী থেকে বর্ণিত মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীসগুলির একটি হাদীসেও বর্ণিত হয় নি যে, একদিন একটি বারও তিনি মুক্তাদিগণের সাথে একত্রে মুনাজাত করেছেন। পক্ষান্তরে সাধারণ ফযীলত জ্ঞাপক হাদীসের আলোকে অনেক আলিম একে সমর্থন করেছেন। তাঁরা এই জামাতবদ্ধ মুনাজাত-কে মুস্তাহাব বলেছেন। চার ইমাম ও পূর্ববর্তী সকল ফকীহ বলেছেন যে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ হয়ে যায়। হাদীস শরীফেও বলা হয়েছে যে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু এবং সালামেই সালাত শেষ। এগুলির সাথে সঙ্গতি রক্ষার জন্য তাঁরা বলেছেন যে, এই মুনাজাত নামাযের কোনো অংশ নয়। নামাযের পরে অতিরিক্ত একটি মুস্তাহাব কাজ। নামায সালামের সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়, তবে কেউ যদি এর পরে অন্য কোনো মুস্তাহাব কাজ করে তাহলে দোষ নেই। এখানে মূল হলো মনের আবেগসহ মাসনূন মুনাজাতগুলি পালন করা। নামাযের পরে মুনাজাতের ক্ষেত্রে একাকী মুনাজাতই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রীতি। এছাড়া মনোযোগ আনয়ন ও মাসনূন বাক্য পালনের জন্যও একাকী মুনাজাত উত্তম। জামাতে ইমামের সাথেও মুনাজাত করা যেতে পারে। তবে সদাসর্বদা এইরূপ জামাতবদ্ধ মুনাজাত করা, একে জরুরী মনে করা বা তা পরিত্যাগকারীকে খারাপ মনে করা খুবই অন্যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন । আমীন। এব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত মুনাজাত ও নামাজ বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 211
tabij babohar kora ki shirk? kara tabij babohar korta parba?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া ওয়া রহমাতুল্লাহ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এপ্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। আশা করি তাতে আপনি আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইসলাম আমাদেরকে এমন একটি জীবন পদ্ধতি প্রদান করেছে যে, যদি কোনো মানুষ ইসলামের এ নিয়মগুলো ন্যূনতমভাবেও মেনে চলে তবে সাধারণভাবে সে সুস্বাস্থ্য লাভ ও রক্ষা করতে পারবে। পরিমিত পানাহার, পরিচ্ছন্নতা, অলসতা, অশ্লীলতা ও পাপ বর্জন, পরিমিত পরিশ্রম, বিশ্রাম, বিনোদন, ঘুম, স্বাস্থ্য সতর্কতা, পরিবার ও অন্যান্য মানুষের অধিকার পালন, নিয়মিত ইবাদত ও যিকর-দুআর মাধ্যমে আমরা দৈহিক ও মানসিক সুস্থতাময় একটি সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ জীবন লাভ করতে পারি। এরপরও রোগব্যাধি বা অসুস্থতা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিজেদের বা আপনজনদের অসুস্থতা আমাদের প্রায়ই আক্রান্ত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসুস্থতার কারণ আমাদের অনিয়ম বা অন্যায়। তবে অনেক সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবেও মানুষ সাময়িক রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। অসুস্থতার সাথে দুআ ও যিকরের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। সুস্থতা অর্জনে চিকিৎসার পাশাপাশি দুআর কার্যকরিতা পরীক্ষিত। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ অপারগ হওয়ার পর দুআর মাধ্যমে মানুষ সুস্থতা লাভ করেন। বিশেষত জিন বা যাদু সংশ্লিষ্ট অসুস্থতা এবং মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে যিকর ও দুআর উপরেই নির্ভর করা হয়। এক্ষেত্রে কুসংস্কার, অস্পষ্টতা ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেক মুমিন শিরক ও অন্যান্য পাপে জড়িয়ে পড়েন। এজন্য এখানে এ বিষয়ক কয়েকটি মূলনীতি অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করছি। ১. অসুস্থতার মধ্যেও মুমিনের কল্যাণ
অসুস্থতার ক্ষেত্রে মুমিনের সর্বপ্রথম করণীয় অস্থিরতা ও হতাশা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখা। মুমিন বিশ্বাস করেন যে, সকল বিপদ, কষ্ট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈমানী পরীক্ষা, গোনাহের ক্ষমা বা মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আসে। আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা যে, মুমিন দেহ, মন, সম্পদ ও পরিজনের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য সকল প্রকারের সতর্কতা ও নিয়মনীতি পালন করবেন। পাশাপাশি তিনি সর্বদা সর্বান্তকরণে সার্বক্ষণিক সুস্থতা ও সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য দুআ করবেন। এরপরও কোনো রোগব্যধিতে আক্রান্ত হলে বা কোনোরূপ বিপদাপদে নিপতিত হলে তাকে নিজের জন্য কল্যাণকর বলে সাধ্যমত প্রশান্তির সাথে গ্রহণ করবেন। দ্রুতই অসুস্থতা বা বিপদ কেটে যাবে বলে প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করবেন। জাগতিক জীবনের সামান্য কয়েক দিনের একটু কষ্টের পরীক্ষায় ধৈর্য ও প্রশান্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমত, প্রেম ও অনন্ত জীবনের অভাবনীয় মর্যাদা লাভ করা মুমিনের জন্য বড় নিয়ামত বলে গণ্য। অধৈর্য মূল অসুস্থতা বা বিপদের কষ্ট কমায় না। উপরন্তু অধৈর্যজনিত হতাশা, অস্থিরতা ও বিলাপের কারণে কষ্ট বৃদ্ধি পায়, মুমিন অফুরন্ত সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে পাপে নিপতিত হয়। সর্বোপরি হতাশা ও অস্থিরতার কারণে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়। পক্ষান্তরে ধৈর্য ও সাওয়াবের আশা মূল বিপদের কষ্ট না কমালেও কষ্টকে সহনীয় করে তোলে, মুমিন অফুরন্ত সাওয়াব ও বরকত লাভ করেন এবং বিপদ থেকে বের হওয়ার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আপনি সুসংবাদ প্রদান করুন ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের উপর বিপদ আসলে বলে, আমরা তো আল্লাহ্রই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্র্তনকারী। এরাই তো তারা যাদের প্রতি তাদের রবের কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর এরা সৎপথে পরিচালিত। আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে কিছু বিপদ-কষ্ট প্রদান করেন। সুহাইব (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ মুমিনের বিষয়টি বড়ই আজব! তার সকল অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউই এ অবস্থা অর্জন করতে পারে না। যদি সে আনন্দ-কল্যাণ লাভ করে তবে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং এর ফলে সে কল্যাণ লাভ করে। আর যদি সে বিপদ-কষ্টে পতিত হয় তবে সে ধৈর্য্যধারণ করে এবং এভাবে সে কল্যাণ লাভ করে। আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلا وَصَبٍ وَلا هَمٍّ وَلا حُزْنٍ وَلا أَذًى وَلا غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
যে কোনো ক্লান্তি, অসুস্থতা, দুশ্চিন্তা, মনোবেদনা, কষ্ট, উৎকণ্ঠা যাই মুসলিমকে স্পর্শ করুক না কেন, এমনকি যদি একটি কাঁটাও তাকে আঘাত করে, তবে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার গোনাহ থেকে কিছু ক্ষমা করবেন। আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জ্বর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তখন এক ব্যক্তি জ্বরকে গালি দেয় বা জ্বর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
لا تَسُبَّهَا فَإِنَّهَا تَنْفِي الذُّنُوبَ كَمَا تَنْفِي النَّارُ خَبَثَ الْحَدِيدِ
তুমি জ্বর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করো না; কারণ আগুন যেমন লোহার ময়লা দূর করে তেমনি জ্বর পাপ দূরীভূত করে। হাদীসটি সহীহ। আবূ মূসা আশআরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا
মানুষ সুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়ি বা শহরে অবস্থান কালে যত নেক আমল করে তার অসুস্থতা বা সফরের অবস্থায়ও তার আমলনামায় অনুরূপ সাওয়াব লেখা হয়। রোগমুক্তি আমাদের কাম্য। এরপরও অনেক সময় মুমিন অসুস্থতার অফুরন্ত সাওয়াবের দিকে তাকিয়ে দুনিয়ার অস্থায়ী অসুস্থতাকেই বেছে নেন। তাবিয়ী আতা বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) আমাকে বলেন:
أَلا أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ قُلْتُ بَلَى قَالَ هَذِهِ الْمَرْأَةُ السَّوْدَاءُ (امْرَأَةٌ طَوِيلَةٌ سَوْدَاءُ عَلَى سِتْرِ الْكَعْبَةِ) أَتَتْ النَّبِيَّ r فَقَالَتْ إِنِّي أُصْرَعُ وَإِنِّي أَتَكَشَّفُ فَادْعُ اللَّهَ لِي قَالَ إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الْجَنَّةُ وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَكِ فَقَالَتْ أَصْبِرُ فَقَالَتْ إِنِّي أَتَكَشَّفُ فَادْعُ اللَّهَ لِي أَنْ لا أَتَكَشَّفَ فَدَعَا لَهَا
আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম: হ্যাঁ, অবশ্যই দেখাবেন। তিনি বলেন: এ কাল মহিলা (কাবা ঘরের গিলাফ সংলগ্ন লম্বা কাল এ মহিলা)। সে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল, আমি অজ্ঞান হয়ে যায় (বঢ়রষবঢ়ংু মুর্ছারোগ/মৃগীরোগ আক্রান্ত) এবং অচেতন অবস্থায় আমার কাপড়চোপড় সরে যায়। আল্লাহর কাছে আমার জন্য দুআ করুন। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: তুমি যদি চাও তবে ধৈর্য ধারণ কর, তাহলে তুমি জান্নাত লাভ করবে। আর তুমি যদি চাও তবে আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে সুস্থতার দুআ করব। তখন মহিলা বলেন, আমি ধৈর্য ধরব; তবে অচেতন অবস্থায় আমার কাপড় সরে যায়, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন আমার কাপড় সরে না যায়। তখন তিনি তার জন্য দুআ করেন। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মহিলাকে দুনিয়ার সাময়িক কষ্টের বিনিময়ে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদ লাভের জন্য উৎসাহ দেন এবং মহিলাও সে পরামর্শ গ্রহণ করেন। তবে বিষয়টি ইচ্ছাধীন; কোনো মুমিন যদি ঈমানের এরূপ শক্তি অনুভব না করেন, অথবা সুস্থতার মাধ্যমে অন্যান্য ইবাদত করার সুদৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেন তবে তিনি অবশ্যই চিকিৎসার চেষ্টা করবেন। সর্বাবস্থায় হতাশা বা অতীত নিয়ে মনোকষ্ট অনুভব করা যাবে না। কখনোই মনে করা যাবে না যে, যদি আমি এরূপ করতাম তাহলে হয়ত এরূপ হতো, অথবা এরূপ না করলে হয়ত এরূপ হতো না। এ ধরনের আফসোস মুমিনের জন্য নিষিদ্ধ। বিপদ এসে যাওয়ার পর মুমিন আর অতীতকে নিয়ে আফসোস করবেন না। বরং আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। রাসূলুল্লাহ সা. এভাবেই নির্দেশনা দিয়েছেন। ২. চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁক
অসুস্থতার ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিতীয় দায়িত্ব চিকিৎসার চেষ্টা করা। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বারবার চিকিৎসার নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন, ঝাড়ফুঁক অনুমোদন করেছেন এবং তাবিজ-তাগা ইত্যাদি নিষেধ করেছেন। এক হাদীসে উসামা ইবন শারীক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
يَا عِبَادَ اللَّهِ تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلاَّ وَضَعَ لَهُ شِفَاءً أَوْ قَالَ دَوَاءً إِلاَّ دَاءً وَاحِدًا .... الْهَرَمُ
হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা ঔষধ ব্যবহার কর। আল্লাহ যত রোগ সৃষ্টি করেছেন সকল রোগেরই ঔষধ সৃষ্টি করেছেন, একটিমাত্র ব্যধি ছাড়া ... সেটি বার্ধক্য। হাদীসটি হাসান সহীহ। অন্য হাদীসে জাবির (রা) বলেন, রাসূলূল্লাহ সা. বলেন:
لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
প্রত্যেক রোগেরই ঔষধ বিদ্যমান। যদি কোনো রোগের সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তবে আল্লাহর অনুমতিতে রোগমুক্তি লাভ হয়। এ অর্থে আবূ দারদা (রা), আবূ খুযামা (রা), কাইস ইবন মুসলিম (রা), আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা), আবূ হুরাইরা (রা) ও অন্যান্য সাহাবী থেকে বিভিন্ন সহীহ সনদে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত। চিকিৎসা গ্রহণ ও প্রদানের পাশাপাশি তিনি নিজে মাঝে মাঝে ঝাড়-ফুঁক প্রদান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যবহৃত বা অনুমোদিত কিছু দুআ আমরা পরবর্তী অনুচ্ছেদে উল্লেখ করব, ইনশা আল্লাহ। এছাড়া তিনি শিরকমুক্ত সকল দুআ ও ঝাড়ফুঁক অনুমোদন করেছেন। আউফ ইবন মালিক (রা) বলেন, আমরা জাহিলী যুগে ঝাড়ফুঁক করতাম। আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, এ সকল ঝাড়ফুঁকের বিষয়ে আপনার মত কী? তিনি বলেন
اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ
তোমাদের ঝাড়ফুঁকগুলো আমার সামনে পেশ কর। যতক্ষণ না কোনো ঝাড়ফুঁকের মধ্যে শিরক থাকবে ততক্ষণ তাতে কোনো অসুবিধা নেই। জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা) বলেন:
لَدَغَتْ رَجُلا مِنَّا عَقْرَبٌ وَنَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ رَسُولِ اللَّه ِ rفَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرْقِي قَالَ مَنْ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ
আমরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তিকে একটি বিচ্ছু (ংপড়ৎঢ়রড়হ) কামড় দেয়। তখন এক ব্যক্তি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি একে ঝাড়ফুঁক প্রদান করব? তিনি বলেন: তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের উপকার করতে পারে তবে সে যেন তা করে। অন্য হাদীসে আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় একজন মহিলা তাঁকে ঝাড়ফুঁক করছিলেন। তখন তিনি বলেন:
عَالِجِيهَا بِكِتَابِ الله
তাকে কুরআন দিয়ে চিকিৎসা-ঝাড়ফুঁক কর। হাদীসটি সহীহ। উপরের হাদীসগুলোর আলোকে আমরা দেখছি যে, ঝাড়ফুঁকের দুটি পর্যায় রয়েছে: মাসনূন ও জায়েয বা মুবাহ। আমরা ইতোপূর্বে সুন্নাত ও জায়েযের পার্থক্য জেনেছি। ঝাড়ফুঁক একদিকে দুআ হিসেবে ইবাদত। অন্যদিকে চিকিৎসা হিসেবে জাগতিক কর্ম। রাসূলুল্লাহ সা. যে সকল দুআ ব্যবহার করেছেন বা অনুমোদন করেছেন তা মাসনূন ঝাড়ফুঁক হিসেবে গণ্য। এছাড়া যে কোনো ভাষার শিরক-মুক্ত যে কোনো বাক্য বা কথা দ্বারা ঝাড়ফুঁক দেওয়া বৈধ বলে তাঁর নির্দেশনা থেকে আমরা জানতে পারি। মাসনূন ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে সর্বদা ফুঁক দেওয়া প্রমাণিত নয় এবং জরুরীও নয়। রাসূলুল্লাহ সা. কর্ম ও অনুমোদন থেকে আমরা দেখি যে, তিনি ঝাড়ফুঁক-এর ক্ষেত্রে কখনো শুধু মুখে দুআটি পাঠ করেছেন, ফুঁক দেন নি। কখনো তিনি দুআ পাঠ করে ফুঁক দিয়েছেন, কখনো লালা মিশ্রিত ফুঁক দিয়েছেন, কখনো ফুঁক দেওয়া ছাড়াই রোগীর গায়ে হাত দিয়ে দুআ পাঠ করেছেন, অথবা দুআ পাঠের সময়ে বা দুআ পাঠের পরে রোগীর গায়ে বা ব্যাথ্যার স্থানে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন এবং কখনো ব্যাথা বা ক্ষতের স্থানে মুখের লালা বা মাটি মিশ্রিত লালা লাগিয়ে দুআ পাঠ করেছেন, অথবা তিনি এরূপ করতে শিক্ষা দিয়েছেন। সকল ক্ষেত্রে তিনি সশব্দে দুআ পাঠ করতেন বলেই প্রতীয়মান হয়। এজন্য ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে দুআটি জোরে বা সশব্দে পাঠ করাই সুন্নাত। ঝাড়ফুঁকের আয়াত বা দুআ সশব্দে পাঠের মাধ্যমে সুন্নাত পালন ছাড়াও অন্যান্য কল্যাণ বিদ্যমান। মনে মনে পড়লে অনেক সময় দ্রুততার আগ্রহে দুআর বাক্যগুলো বিশুদ্ধভাবে পড়া হয় না, আর সশব্দে পড়লে পাঠের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত হয়। এছাড়া রোগী ও উপস্থিত মানুষেরা আয়াত বা দুআ শ্রবণের বরকত লাভ করেন এবং তা নিজেরা শিখতে পারেন। আল্লাহর যিকর শ্রবণের মাধ্যমে রোগীর হৃদয়ের প্রশান্তি বাড়ে। সর্বোপরি শিরকযুক্ত বা দুর্বোধ্য-অবোধ্য দুআ পাঠের প্রবণতা রোধ হয়। কুরআনের আয়াত বা দুআ লিখে তা ধুয়ে পানি পান করার বিষয়ে সহীহ বা গ্রহণযোগ্য কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। তবে সাহাবী ও তাবিয়ীগণের যুগ থেকে অনেক আলিম তা করেছেন। অধিকাংশ ফকীহ এরূপ করা জায়েয বলে গণ্য করেছেন। তবে শর্ত হলো পবিত্র কালি দিয়ে পবিত্র দ্রব্যে এরূপ আয়াত বা দুআ লিখে তা পানি দিয়ে ধুয়ে পান করা। গোসলের বিষয়ে অনেকে আপত্তি করেছেন। অনেকে মূল বিষয়টিকেই না-জায়েয বলে গণ্য করেছেন। পানি পড়া, তেল পড়া ইত্যাদি বিষয় সুন্নাতে পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ সা. রোগীকে ফুঁক দিয়েছেন বা রোগীর সামনে দুআ পাঠ করেছেন। দুআ পড়ে পানি, তেল, কালজিরা, মধু বা অন্য কিছুতে ফুঁক দিয়ে সেগুলো ব্যবহার করার কোনো নমুনা আমরা হাদীসে পাই না। তবে কোনো কোনো সাহাবী থেকে এরূপ কর্ম বর্ণিত। তাবিয়ীগণের যুগেও তা বহুল প্রচলিত ছিল। এজন্য প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফকীহগণ-সহ প্রায় সকল আলিম ও ফকীহ তা বৈধ বলেছেন। ৩. তাবিজ ও সূতা
ঝাড়ফুঁক ও দুআর মাধ্যমে চিকিৎসা অনুমোদন করলেও তাবিজ, রশি, সুতা ইত্যাদির ব্যবহার রাসূলুল্লাহ সা. বারবার নিষেধ করেছেন। এক হাদীসে উকবা ইবনু আমির আল-জুহানী (রা) বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ r أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هَذَا قَالَ إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيمَةً فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا فَبَايَعَهُ وَقَالَ مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
একদল মানুষ রাসূলুল্লাহ সা. -এর কাছে আগমন করেন। তিনি তাদের নয় জনের বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং একজনের বাইয়াত গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি নয় জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন কিন্তু একে পরিত্যাগ করলেন? তিনি বলেন, এর দেহে একটি তাবিজ আছে। তখন তিনি তার হাত ঢুকিয়ে তাবিজটি ছিড়ে ফেলেন। এরপর তিনি তার বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং বলেন: যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা)-এর স্ত্রী যাইনাব (রা) বলেন,
انَ عَبْدُ اللَّهِ إِذَا جَاءَ مِنْ حَاجَةٍ فَانْتَهَى إِلَى الْبَابِ تَنَحْنَحَ ... وَإِنَّهُ جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ فَتَنَحْنَحَ قَالَتْ وَعِنْدِي عَجُوزٌ تَرْقِينِي مِنْ الْحُمْرَةِ فَأَدْخَلْتُهَا تَحْتَ السَّرِيرِ فَدَخَلَ فَجَلَسَ إِلَى جَنْبِي فَرَأَى فِي عُنُقِي خَيْطًا قَالَ مَا هَذَا الْخَيْطُ قَالَتْ قُلْتُ خَيْطٌ أُرْقِيَ لِي فِيهِ قَالَتْ فَأَخَذَهُ فَقَطَعَهُ ثُمَّ قَالَ إِنَّ آلَ عَبْدِ اللَّهِ لأَغْنِيَاءُ عَنْ الشِّرْكِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ r يَقُولُ: إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ قَالَتْ قُلْتُ لِمَ تَقُولُ هَذَا وَاللَّهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِي تَقْذِفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلانٍ الْيَهُودِيِّ يَرْقِينِي فَإِذَا رَقَانِي سَكَنَتْ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّمَا ذَاكَ عَمَلُ الشَّيْطَانِ كَانَ يَنْخُسُهَا بِيَدِهِ فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِي كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ r يَقُولُ: أَذْهِبْ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لا شِفَاءَ إِلا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا
ইবনু মাসঊদ (রা) যখন বাড়িতে আসতেন তখন আওয়াজ দিয়ে আসতেন। ... একদিন তিনি এসে আওয়াজ দিলেন।তখন আমার ঘরে একজন বৃদ্ধা আমাকে ঝাড়ফুঁক করছিল। আমি বৃদ্ধাকে চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখি। ইবনু মাসঊদ (রা) ঘরে ঢুকে আমার পাশে বসেন। এমতাবস্থায় তিনি আমার গলায় একটি সুতা দেখতে পান। তিন বলেন, এ কিসের সুতা? আমি বললাম, এ ফুঁক দেওয়া সুতা। যাইনাব বলেন, তখন তিনি সুতাটি ধরে ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন, আব্দুল্লাহর পরিবারের শিরক করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি: ঝাড়-ফুঁক, তাবীজ-কবজ এবং মিল-মহব্বতের তাবীজ শিরক। যাইনাব বলেন, তখন আমি আমার স্বামী ইবনু মাসঊদকে বললাম, আপনি এ কথা কেন বলছেন? আল্লাহর কসম, আমার চক্ষু থেকে পানি পড়ত। আমি অমুক ইহূদীর কাছে যেতাম। সে যখন ঝেড়ে দিত তখন চোখে আরাম বোধ করতাম। তখন ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন: এ হলো শয়তানের কর্ম। শয়তান নিজ হাতে তোমার চক্ষু খোচাতে থাকে। এরপর যখন ফুঁক দেওয়া হয় তখন সে খোচানো বন্ধ করে। তোমার জন্য তো যথেষ্ট ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সা. যা বলতেন তা বলবে। তিনি বলতেন: অসুবিধা দূর করুন, হে মানুষের প্রতিপালক, সুস্থতা দান করুন, আপনিই শিফা বা সুস্থতা দানকারী, আপনার শিফা (সুস্থতা প্রদান বা রোগ নিরাময়) ছাড়া আর কোনো শিফা নেই, এমনভাবে শিফা বা সুস্থতা দান করুন যার পরে আর কোনো অসুস্থতা-রোগব্যাধি অবশিষ্ট থাকবে না। তাবিয়ী ঈসা ইবনু আবি লাইলা বলেন,
دخلنا على عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُكَيْمٍ وَهُوَ مَرِيضٌ نَعُودُهُ فَقِيلَ لَهُ لَوْ تَعَلَّقْتَ شَيْئًا فَقَالَ أَتَعَلَّقُ شَيْئًا وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ r مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ
আমরা সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উকাইম আবূ মাবাদ জুহানীকে (রা) অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গেলাম। আমরা বললাম, আপনি কোনো তাবিজ ব্যবহার করেন না কেন? তিনি বলেন: আমি তাবিজ নেব? অথচ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: যদি কেউ দেহে (তাবিজ জাতীয়) কোনো কিছু লটকায় তবে তাকে উক্ত তাবিজের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। হাদীসটি হাসান। তাবিয়ী উরওয়া ইবনুয যুবাইর বলেন:
دَخَلَ حُذَيْفَةُ t عَلَى مَرِيْضٍ فَرَأَى فِيْ عَضُدِهِ سَيْراً فَقَطَعَهُ أَو انْتَزَعَهُ ثُمَّ قَالَ: وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَهُمْ مُشْرِكُوْنَ
সাহাবী হুযাইফা (রা) একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যান। তিনি লোকটির বাজুতে একটি রশি দেখতে পান। তিনি রশিটি কেটে দেন বা টেনে ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন : অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং তারা শিরকে লিপ্ত থাকে। আবূ বাশীর আনসারী (রা) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে ছিলাম। মানুষেরা সবাই যখন বিশ্রামরত ছিল তখন তিনি এক দূত পাঠিয়ে ঘোষণা করেন:
لا يَبْقَيَنَّ فِي رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلادَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ
কোনো উটের গলায় কোনো রশি, ধনুকের রশি (ংঃৎরহম, নড়ংিঃৎরহম) বা মালা থাকলে তা অবশ্যই কেটে ফেলতে হবে। ইমাম মালিক হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন: বদ-নযর থেকে রক্ষা পেতে এরূপ সুতা ব্যবহার করা হতো। রুআইফি ইবন সাবিত (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে বলেন:
يَا رُوَيْفِعُ لَعَلَّ الْحَيَاةَ سَتَطُولُ بِكَ بَعْدِي فَأَخْبِرْ النَّاسَ أَنَّهُ مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَهُ أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوْ اسْتَنْجَى بِرَجِيعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ فَإِنَّ مُحَمَّدًا r مِنْهُ بَرِيءٌ
হে রুআইফি, হয়ত তুমি আমার পরেও জীবিত থাকবে। তুমি মানুষদেরকে জানাবে যে, যদি কোনো ব্যক্তি তার দাড়ি বক্র করে বা গিট দেয়, সুতা, রশি বা ধনুকের রশি লটকায় অথবা গোবর বা হাড় দিয়ে ইসতিনজা করে তবে আমার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। হাদীসটি সহীহ। কূফার প্রসিদ্ধ তাবিয়ী ফকীহ ইবরাহীম নাখয়ী বলেন:
كَانُوا يَكْرَهُونَ التَّمَائِمَ كُلَّهَا ، مِنَ الْقُرْآنِ وَغَيْرِ الْقُرْآنِ.
তাঁরা (সাহাবীগণ) সকল তাবিজই মাকরূহ বা অপছন্দনীয় বলে গণ্য করতেন, কুরআনের তাবিজ হোক আর কুরআন ছাড়া অন্য কিছু হোক। এ সকল হাদীস থেকে জানা যায় যে, লিখিত কোনো কাগজ বা দ্রব্য তাবিজ হিসেবে লটকানো, দুআ বা মন্ত্রপূত কোনো সুতা শরীরে ব্যবহার, সাধারণ কোনো সুতা বদ-নযর কাটাতে মানুষ বা প্রাণীর দেহে লটকানো বা মনোবাসনা পূরণ করতে কোথাও সুতা বাঁধা বা লটকে রাখ সবই নিষিদ্ধ ও শিরক। এ বিষয়ক একটি অতি প্রাচীন শিরক মনোবাসনা পূরণের জন্য ইচ্ছা বা নিয়েত (রিংয) করে সুতা বেঁধে রাখা। বিশ্বের সকল দেশেই এরূপ কর্ম দেখা যায়। কোনো গাছ, মূর্তি, মন্দির, মাযার, দরগা, জলাশয় বা অনুরূপ স্থানে মনোবাঞ্চনা প্রকাশ করে (রিংয করে) সুতা বাঁধা, টাকা ফেলা, নাম বা ইচ্ছা লিখে কাগজ লিখে রাখা ইত্যাদি এ জাতীয় শিরক। আরবের কাফিরদের মধ্যেও এরূপ কর্ম প্রচলিত ছিল। এর একটি দিক ছিল তারা যাত আনওয়াত নামক একটি বৃক্ষে তাদের অস্ত্রাদি টাঙিয়ে রেখে দিত। এ প্রসঙ্গে আবু ওয়াকিদ লাইসি (রা) বলেন: মক্কা বিজয়ের পরে আমরা রাসূলুল্লাহ সা. -এর সাথে হুনাইনের যুদ্ধের জন্য যাত্রা করি। তখন আমরা নও মুসলিম। চলার পথে তিনি মুশরিকদের একটি (বরই) গাছের কাছ দিয়ে যান, যে গাছটির নাম ছিল যাত আনওয়াত। মুশরিকগণ এ গাছের কাছে বরকতের জন্য ভক্তিভরে অবস্থান করত এবং তাদের অস্ত্রাদি বরকতের জন্য ঝুলিয়ে রাখত। আমাদের কিছু মানুষ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, মুশরিকদের যেমন যাতু আনওয়াত আছে আমাদেরও অনুরূপ একটি যাতু আনওয়াত নির্ধারণ করে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন,
سُبْحَانَ اللَّهِ هَذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسَى اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম, মূসার কওম যেরূপ বলেছিল: মুশরিকদের মূর্তির মতো আমাদেরও মূর্তির দেবতা দাও, তোমরাও সেরূপ বললে। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম, তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের সুন্নাত (শিরক ও অবক্ষয়ের পথ ও পদ্ধতি) অনুসরণ করবে। হাদীসটি সহীহ। মুসলিম, হিন্দু, খৃস্টান ও সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেই এ শিরক প্রচলিত। চার্চ, মন্দির বা দরগার খাদিমগণ দুবার সেখানে যাওয়ার রীতি প্রচলন করে থাকেন। একবার মনোবাঞ্চনা বলে সুতা বেঁধে আসতে হবে। এরপর বাসনা পূর্ণ হলে দ্বিতীয়বার যে কোনো একটি সুতা খুলে আসতে হবে। এভাবে ভক্ত দুবারই কিছু হাদিয়া-নৈবদ্য নিয়ে যান। এতে পুরোহিত বা খাদিমগণ উপকৃত হন। আলিম ও ফকীগণ তাবিজের বিষয়ে কিছু মতভেদ করেছেন। তাঁদের মতে তাবিজ দু প্রকারের। প্রথমত: যে তাবিজে দুর্বোধ্য বা অবোধ্য কোনো নাম, শব্দ বা বাক্য, কোনো প্রকারের বৃত্ত, দাগ, আঁক অথবা বিভিন্ন সংখ্যা লেখা হয়। এগুলির সাথে অনেক সময় কুরআনের আয়াত বা হাদীস লেখা হয়। এ প্রকারের তাবিজ ফকীহগণের সর্বসম্মত মতে হারাম। এগুলোতে শিরক থাকার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কারণ এ সকল দুর্বোধ্য নাম, শব্দ, দাগ বা সংখ্যা শয়তানের নাম, প্রতীক বা শয়তানকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত বলেই বুঝা যায়। তা না হলে এ সকল অর্থহীন বিষয় তাবিজে সংযুক্ত করার দরকার কী?
দ্বিতীয় প্রকারের তাবিজ যে তাবিজে কুরআনের আয়াত, হাদীসের বাক্য অথবা সুস্পষ্ট অর্থের শিরকমুক্ত কোনো বাক্য লিখে দেওয়া হয়। এ ধরনের তাবিজ ব্যবহার কোনো কোনো সাহাবী-তাবিয়ী ও পরবর্তী অনেক আলিম ও ফকীহ জায়েয বলেছেন। তাঁরা তাবিজকে ঝাড়ফুঁকের মত একই বিধানের বলে গণ্য করেছেন। বিশেষত অমুসলিম গণক, সন্যাসী ও কবিরাজদের সুস্পষ্ট শিরক থেকে মুসলিমদেরকে রক্ষা করতে কুরআন ও হাদীসের দুআ দিয়ে তাবিজ ব্যবহার অনেক প্রসিদ্ধ আলিম বৈধ বলে গণ্য করেছেন। অন্যান্য অনেক আলিম দ্বিতীয় প্রকারের তাবিজকেও হারাম বলে গণ্য করেছেন। তাঁরা বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের হাদীসগুলোতে এরূপ কোনো পার্থক্য ছাড়াই তাবিজ ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে। ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে যেরূপ অনুমোদন তিনি প্রদান করেছেন সেরূপ কোনো অনুমোদন তাবিজের ক্ষেত্রে কোনো হাদীসে পাওয়া যায় না। কাজেই কুরআন, হাদীস বা সুস্পষ্ট অর্থবোধক শিরকমুক্ত বাক্য দ্বারা ঝাড়ফুঁক বৈধ হলেও এগুলো দ্বারা তাবিজ ব্যবহার বৈধ নয়। সামগ্রিক বিবেচনায় তাবিজ ব্যবহার বর্জন করা এবং শুধু ঝাড়ফুঁক ও দুআর উপর নির্ভর করাই মুমিনের জন্য উত্তম ও নিরাপদ। কারণ:
(১) এতে শিরকে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যায়। যে বিষয়টি শিরক অথবা জায়েয হতে পারে তা বর্জন করা নিরাপদ। (২) রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণের সুন্নাত পালন করা হয়। তাঁরা ঝাড়ফুঁক করেছেন, কিন্তু তাবিজ ব্যবহার করেছেন বলে সহীহ বর্ণনা নেই। (৩) ঝাড়ফুঁক ও দুআর মাধ্যমে মুমিনের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক গভীর হয়। মুমিন নিজে কুরআনের আয়াত বা দুআ পাঠ করেন অথবা শুনেন। এতে অফুরন্ত সাওয়াব ছাড়াও আল্লাহর যিকরের মাধ্যমে আত্মার শক্তি অর্জিত হয়, যা জিন, যাদু ও মনোদৈহিক রোগ দূরীকরণে খুবই সহায়ক। ঝাড়ফুঁক বা দুআর অর্থ চিকিৎসা পরিত্যাগ নয়। যেহেতু চিকিৎসা গ্রহণ সুন্নাতের বিশেষ নির্দেশনা সেহেতু চিকিৎসার পাশাপাশি দুআ করতে হবে। দুআর মাধ্যমে সঠিক ঔষধ প্রয়োগের তাওফীক লাভ হতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ দান করুন। আমীন। আরো বিস্তারিত জানতে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত রাহে বেলায়াত বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 212
সপ্তম দিনের আগে কি আকিকা দেওয়া যাবে?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন। উল্লেখিত বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করা হল। আশাকরি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন, ইনশাল্লাহ। উলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, শিশুর জন্মের ৭ ম দিনে আকীকা দেয়া সুন্নাত। ছেলের পক্ষথেকে ২ টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১ টি ছাগল। এপ্রসঙ্গে আয়শা রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে রাসূল সাঃ বলেন:
عن الغلام شاتان مكافئتان وعن الجارية شاة
অর্থঃ ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুইটি উপযুক্ত ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল। সুনানে তিরমিযী, তাহকীক আহমাদ শাকের এবং আলবানী, হাদীস নং ১৫১৩। তিরমিযী রহঃ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ৭ ম দিনের পূর্বে বা পরে আকীকা দিলে তা যথেষ্ঠ হবে কি না এব্যাপারে উলামায়ে কেরামের দুই ধরনের মত রয়েছে। তবে গ্রহনযগ্য মত হল, ৭ ম দিনের আগে বা পরে দিলেও তা যথেষ্ঠ হবে। যেমন ইবনে কাইয়্যিম রহ বলেন:
اليوم السابع - استحباب وإلا فلو ذبح عنه في الرابع أو الثامن أو العاشر أو ما بعده : أجزأت
تحفة المودود بأحكام المولود ) ص 63 )
অর্থঃ সপ্তম দিন সুন্নাত, তবে যদি ৪ র্থ দিনে বা ৮ ম দিনে কিংবা ১০ বা তার পরবর্তি দিনে তার পক্ষ থেকে আকীকা দেয়া হয় তাহলে তা যথেষ্ঠ হবে। তুহফাতুল মাওদূদ বি আহকামীল মাওলূদ পৃষ্ঠা নং ৬৩ ( শামিলা)
তবে আমাদের উচিৎ সর্বাস্থায় আল্লাহর রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 213
Is it strongly prohibited to touch the Holy Quran without wudu (ablution)? Would you please cite reference from Hadis? We want to memorize from Quran while we are travelling. It is quite tough to have wudu all time in that state. What will be your suggestion?
20 Dec 2025
মূল্যবান একটি প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর সহজে বোধগম্য হওয়ার জন্য আমরা প্রথমে অপবিত্রতাকে দুইভাগে ভাগ করে নিতে পারি । একঃ হদসে আসগার বা ছোট পবিত্রতা যে ক্ষেত্রে ওজু করলেই পবিত্রতা হাসিল হয়ে যায়, গোছলের প্রয়োজন হয় না। দুইঃ হদসে আকবার বা বড় ধরনের অপবিত্রতা যে ক্ষেত্রে ব্যক্তির উপর গোছল আবশ্যক হয়। চার মাযহাব,শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, হদসে আসগার অথবা হদসে আকবার কোন অবস্থাতেই ব্যক্তি কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না। দলীলঃ মহান আল্লাহ বলেনঃ
(لا يمسه إلا المطهرون (الواقعة
অর্থঃ তা (কোরআন) কেবলমাত্র পবিত্র ব্যক্তিরাই স্পর্শ করতে পারবে। (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৯)। আর কোরআন স্পর্শ করা ছাড়া প্রথম প্রকারের অপবিত্র ব্যক্তি মুখে মুখে তেলাওয়াত করতে পারবে। কিন্তু দিত্বীয় প্রকারের অপবিত্র ব্যক্তির জন্য এটাও বৈধ নয়। দলীলঃ عن علي رضي الله عنه : أن النبي صلى الله عليه وسلم خرج من الغائط وقرأ شيئا من القرآن وقال :هذا لمن ليس بجنب أما الجنب فلا ولا آية
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন যে,নবী সাঃ ইস্তেঞ্জাখানা (বাথরুম) থেকে বের হয়ে কোরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন:এটা (অপবিত্র অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করার বিধান) ঐ ব্যক্তির জন্য যে জুনুবি (২ য় প্রকারের অপবিত্র ব্যক্তি) নয়। পক্ষান্তরে জুনুবী ব্যক্তির জন্য একটি আয়াতও বৈধ নয়।মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল, হাদীস নং ৮৭২,তাহকীক শুয়াইব আরনাউত,হাদীসের সনদটি হাসান।
প্রশ্নঃ 214
kaporar mojar upor mas a kora jaby ki na. aktu janaly upokrito hobo.
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে উত্তর খুজে পাবেন ইনশা আল্লাহ। মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের (চামড়ার মোজার উপর) মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীত।ফাতহুল বারী (খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫)। এব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবরে শুবা রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন: وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ وَمَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ
অর্থঃ আর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং(২০৪)। মুসলিম, আস - সহীহ, হাদীস নং (৬৪৯)। বুখারী এবং মুসলিম দ্বিতীয় প্রাকারের মোজা তথা জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর রাসূল সা. মাসাহ করেছেন কিনা তা সহীসূত্রে পাওয়া যায় না। ফলে এবিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহনযোগ্য মত হল, যদি মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই । (ইবনে কুদামা, আল মুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৬। )
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয। ইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেন। যেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন: وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ رَجَعَ إلَى قَوْلِهِمَا فِي آخِرِ عُمُرِهِ তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই । আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ। বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেন।বাদাইউস সানাইয়ী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০। আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
سمعت صالح بن محمد الترمذي قال سمعت أبا مقاتل السمرقندي يقول دخلت على أبي حنيفة في مرضه الذي مات فيه فدعا بماء فتوضأ وعليه جوربان فمسح عليهما ثم قال فعلت اليوم شيئا لم أكن أفعله مسحت على الجوربين وهما غير منعلين .
অর্থঃ (ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:) আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলাম। তিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন । আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন। এরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনি। আমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম । তিরমিযী, আস-সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯, তাহকীক, আহমাদ শাকের । (প্রকাশক, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন)। মোটকথাঃ জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 215
AMRA JY KAPORAR MUGA PORI TAR UPOR MAS KORA JABY KI NA. DOLIL SOHO ANS DILY UPKRITO HOBO.
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে উত্তর খুজে পাবেন ইনশা আল্লাহ। মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। প্রথম প্রকারের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন: একদল হাফেজে হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হল খুফ্ফাইনের (চামড়ার মোজার উপর) মাসাহ করার বিষয়টি রাসূল সাঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণীত।ফাতহুল বারী (খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫)। এব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবরে শুবা রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন: وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ وَمَسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ
অর্থঃ আর তিনি তাঁর মাথা মাসাহ করলেন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করলেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং(২০৪)। মুসলিম, আস - সহীহ, হাদীস নং (৬৪৯)। বুখারী এবং মুসলিম
দ্বিতীয় প্রাকারের মোজা তথা জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর রাসূল সা. মাসাহ করেছেন কিনা তা সহীসূত্রে পাওয়া যায় না। ফলে এবিষয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহনযোগ্য মত হল, যদি মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহঃ বলেছেন : যদি তার উপর হাটাচলা যায় এবং তা পায়ের সাথে লেগে থাকে তাহলে তার উপর মাসাহ করতে কোন সমস্যা নেই । (ইবনে কুদামা, আল মুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৬। )
হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরামের মধ্য হতে ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে মোজা যদি মোটা হয় তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েয। ইমাম আবু হানীফা রহঃ ভিন্নমত পোষণ করলেও শেষ জীবনে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেন। যেমন আল্লামা কাসানী রহঃ বলেন: وَإِنْ كَانَا ثَخِينَيْنِ لَا يَجُوزُ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ يَجُوزُ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ رَجَعَ إلَى قَوْلِهِمَا فِي آخِرِ عُمُرِهِ
তবে যদি পুরু এবং মোটা হয় সে ক্ষেত্রে আবু হানীফার মতে জায়েজ নেই । আর ছাহেবাইন রহঃ এর নিকট তার উপর মাসাহ করা বৈধ। বর্ণীত আছে যে, আবু হানীফা রহঃ জীবনের শেষ দিকে ছাহেবাইনের মত গ্রহন করেছেন।বাদাইউস সানাইয়ী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০। আবু হানীফা রহঃ ছাহেবাইনের মত গ্রহন করার বিষয়টি তিরমিযী রহঃ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:
سمعت صالح بن محمد الترمذي قال سمعت أبا مقاتل السمرقندي يقول دخلت على أبي حنيفة في مرضه الذي مات فيه فدعا بماء فتوضأ وعليه جوربان فمسح عليهما ثم قال فعلت اليوم شيئا لم أكن أفعله مسحت على الجوربين وهما غير منعلين .
অর্থঃ (ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন:) আমি সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ কে বলতে শুনেছি, আমি আবু মুকাতিলকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবু হানিফার নিকটে তার মৃত্যু পূর্ব অবস্থায় গমন করলাম। তিনি ওজু করার জন্য পানি আনতে বললেন অতপর ওজু করলেন । আর তিনি তার পায়ে থাকা জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন। এরপর বললেন : আমি আজ যেটা করলাম তা ইতিপূর্ব কখন করিনি। আমি শুধু জাওরাবের উপর মাসাহ করলাম । তিরমিযী, আস-সুনান, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ১৬৯,তাহকীক, আহমাদ শাকের। (প্রকাশক, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বইরুত, লেবানন)। মোটকথাঃ জাওরাব বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ আছে, তবে গ্রহনযগ্য মত হল,যদি তা মোটা হয়,মজবুত হয়, পায়ের সাথে এটে থাকে, চলাচল করার মত হয় তাহলে আশা করা যায় মাসাহ করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয়ের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 216
নাকের পানি টানলে যদি তা গলা দিয়ে চলে যায় তাহলে রোজা ভাঙ্গবে কি না?
20 Dec 2025
হা, রোজা অবস্থায় যদি নাকের পানি টানা হয় এবং তা গলা দিয়ে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
প্রশ্নঃ 217
আসসালামু আলাইকুম. রাসূলুল্লাহ সঃ কিসের তৈরি? কেউ বলেন তিনি নুরের তৈরি; আবার কেউ বলেন তিনি মাটির তৈরি। তিনি মুলত কিসের তৈরি এসম্পর্ক্যে কুরআন ও হাদিসে যে বর্ণনা আছে তা উল্লেখ পূর্বক প্রশ্নের সঠিক উত্তর চাই! ধন্যবাদ।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। নিচে এবিষয়ে সামান্য আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন ইনশাল্লাহ। রাসূল সাঃ সৃষ্টিগতভাবে আমাদের মতই মানুষ ছিলেন নূরের তৈরি ছিলেন না। কুরআন-হাদীসে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সা. অন্যদের মতই মানুষ। এমনকি যুগে যুগে নবী-রাসূলদের দাওআত অস্বীকার করার ক্ষেত্রে অবিশ্বাসীদের প্রধান দাবি ছিল যে নবীগণ তো মানুষ মাত্র এরা আল্লাহর নবী হতে পারেন না। আল্লাহ যদি কাউকে পাঠাতেই চাইতেন তবে ফিরিশতা পাঠিয়ে দিতেন। যেহেতু এরা মানুষ সেহেতু এদের নুবুওয়াতের দাবি মিথ্যা। এদের কথার প্রতিবাদে নবীগণ তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে আমরা তোমাদের মত মানুষ এ কথা ঠিক তবে এর অর্থ এই নয় যে মানুষ হলে আল্লাহর ওহী ও নুবুওয়াতের মর্যাদা লাভ করা যায় না। বরং আল্লাহ মানুষদের মধ্য থেকেই যাকে ইচ্ছা নবী বা রাসূল হিসেবে বেছে নেন
এ বিষয়ে এখানে কয়েকটি আয়াত এবং হাদীস উল্লেখ করা হল। বাশার بَشَرٌ অর্থ মানুষ মানুষগণ বা মানুষজাতি (man, human being, men, mankind(
কুরআন কারীমে প্রায় ৪০ স্থানে বাশারশব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এই একই অর্থে। একবচন ও বহুবচন উভয় অর্থেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সা. বাশার বা মানুষ। এছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি অন্যদের মত মানুষ। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
وَقَالُوا لَنْ نُؤْمِنَ لَكَ حَتَّى تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الأَرْضِ يَنْبُوعًا أَوْ تَكُونَ لَكَ جَنَّةٌ مِنْ نَخِيلٍ وَعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الأَنْهَارَ خِلالَهَا تَفْجِيرًا أَوْ تُسْقِطَ السَّمَاءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا أَوْ تَأْتِيَ بِاللَّهِ وَالْمَلائِكَةِ قَبِيلا أَوْ يَكُونَ لَكَ بَيْتٌ مِنْ زُخْرُفٍ أَوْ تَرْقَى فِي السَّمَاءِ وَلَنْ نُؤْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتَّى تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَقْرَؤُهُ قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنْتُ إِلا بَشَرًا رَسُولا وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَى إِلا أَنْ قَالُوا أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَسُولا
এবং তারা বলে কখনই আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব না যতক্ষণ না আপনি আমাদের জন্য ভূমি হতে একটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত করবেন। অথবা আপনার একটি খেজুরের ও আঙ্গুরের বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে আপনি নদী-নালা প্রবাহিত করে দেবেন। অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন তদনুযায়ী আকাশকে খণ্ড-বিখণ্ড করে আমাদের উপর ফেলবেন অথবা আল্লাহ ও ফিরিশতাগণকে আমাদের সামনে এনে উপস্থিত করবেন। অথবা আপনার একটি অলংকৃত স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে। অথবা আপনি আকাশে আরোহণ করবেন তবে আমরা আপনার আকাশ আরোহণে কখনো বিশ্বাস করব না যতক্ষণ না আপনি আমাদের (আসমান থেকে) একটি কিতাব অবতীর্ণ করবেন যা আমরা পাঠ করব। বল পবিত্র আমার প্রতিপালক (সুবহানাল্লাহ!)! আমি তো কেবলমাত্র একজন মানুষ একজন রাসূল। আর মানুষের কাছে যখন হেদায়েতের বানী আসে তখন তো তারা শুধু একথা বলে ঈমান আনয়ন করা থেকে বিরত থাকে যে আল্লাহ কি একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন সূরা-আল ইসরা আয়াত ৯০-৯৪। অর্থাৎ কাফিরদের দাবি যে, আল্লাহর রাসূল হওয়ার অর্থ আল্লাহর ক্ষমতার কিছু অংশ লাভ করা। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ জানালেন যে, রাসূল হওয়ার অর্থ আল্লাহর নিদের্শ অনুসারে প্রচারের দায়িত্ব লাভ, ক্ষমতা লাভ নয়; ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلا صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
বল:আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র আমার প্রতি ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদের মা বুদ (উপাস্য) একমাত্র একই মা বুদ। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। সূরা-আল কাহাফ, আয়াত, ১১০। রাসূলুল্লাহ সা. বারবার তাঁর উম্মতকে বিষয়টি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি একদিকে যেমন আল্লাহ তাঁকে যে মর্যাদা দান করেছেন তা তাঁর উম্মতরক জানিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে বারবার তাঁর উম্মতকে শিখিয়েছেন যে, তিনি একজন মানুষ। এক হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সা. সালাতের মধ্যে ভুল করেন। সালামের পরে সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল, সালাতের কি কোনো নতুন বিধান নাযিল হয়েছে? তিনি বলেন: তোমরা এ প্রশ্ন করছ কেন? তারা বলেন: আপনি এমন এমন করেছেন। তখন তিনি সালাত পূর্ণ করেন এবং বলেন:
إِنَّهُ لَوْ حَدَثَ فِي الصَّلاةِ شَيْءٌ لَنَبَّأْتُكُمْ بِهِ وَلَكِنْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ فَإِذَا نَسِيتُ فَذَكِّرُونِي
সালাতের নিয়ম পরিবর্তন করা হলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে জানাতাম। কিন্তু আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ মাত্র। তোমরা যেমন ভুল কর আমিও তেমনি ভুল করি। যদি আমি কখনো ভুল করি তবে তোমরা আমাকে মনে করিয়ে দেবে। বুখারী, আস সাহীহ,কিতাব, বাদউল ওহী, বাব,আত তাওয়াজ্জুহু নাহওয়াল কিবলাতি, হাদীস নং ৪০১। উপরের অর্থে আবূ হুরাইরা, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, আনাস ইবনু মালিক, ও অন্যান্য সাহাবী (রাদিয়াল্লাহুম) থেকে অনেক হাদীস সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও সিহাহ সিত্তার অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। উপরের আয়াত ও হাদীসসমূহে আমরা দেখতে পেলাম যে, আল্লাহ রাসূল সা. কে বিভিন্ন আয়াতে মানুষ বলেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিভিন্ন হাদীসে নিজেকে মানুষ বলেছেন। রাসূল সা. কে মানুষ বলার পাশাপাশি অনেক আয়াতে মহান মর্যাদার দিক লক্ষ্য করে নূর, বা আল্লাহর নূর,বলা হয়েছে এবং মুফাস্সিরগণ সেখানে নূর অর্থ কুরআন, ইসলাম,মুহাম্মাদ (সা.),ইত্যাদি অর্থ গ্রহণ করেছেন । তবে সেসমস্ত স্থানে রাসূল সা. কে হেদায়াতের আলো ও সঠিক পথের নির্দেশক হিসেবে,নূরবলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُـنِيرًا
হে নবী, আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং আলোকোজ্জ্বল (নূর-প্রদানকারী) প্রদীপরূপে। সূরা- আল আহযাব, আয়াত, ৪৫-৪৬। অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
يَاأَهْلَ الْكِـتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُـبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنْ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثـِيـرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنْ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِيـنٌ
হে কিতাবীগণ, আমার রাসূল তোমাদের নিকট এসেছেন, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে তিনি তার অনেক তোমাদের নিকট প্রকাশ করেন এবং অনেক উপেক্ষা করে থাকেন। আল্লাহর নিকট হতে এক নূর ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। সূরা-আল মায়েদা, আয়াত ১৫। এই আয়াতে নূর বা জ্যোতি বলতে কি বুঝানো হয়েছে সে বিষয়ে মুফাস্সিরগণ মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন,এখানে নূর অর্থ কুরআন, কেউ বলেছেন, ইসলাম, কেউ বলেছেন, মুহাম্মাদ (সা.)। যারা এখানে নূরঅর্থ মুহাম্মাদ (সা.) বুঝিয়েছেন, তাঁরা দেখেছেন যে, স্পষ্ট কিতাববলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। কাজেই নূরবলতে মুহাম্মাদ (সা.)- কে বুঝানোই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে ইমাম তাবারী বলেন,
يَعْنِي بِالنُّورِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, الَّذِي أَنَارَ اللَّهُ بِهِ الْحَقَّ, وَأَظْهَرَ بِهِ الإِسْلاَمَ, وَمَحَقَ بِهِ الشِّرْكَ فَهُوَ نُورٌ لِمَنِ اسْتَنَارَ بِهِ يُبَيِّنُ الْحَقَّ, وَمِنْ إِنَارَتِهِ الْحَقَّ تَبْيِينُهُ لِلْيَهُودِ كَثِيرًا مِمَّا كَانُوا يُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ . নূর (আলো) বলতে এখানে মুহাম্মাদ (সা.)-কে বুঝানো হয়েছে, যাঁর দ্বারা আল্লাহ হক্ক বা সত্যকে আলোকিত করেছেন,ইসলামকে বিজয়ী করেছেন এবং র্শিককে মিটিয়ে দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর দ্বারা আলোকিত হতে চায় তার জন্য তিনি আলো। তিনি হক্ক বা সত্য প্রকাশ করেন।তাঁর হক্ককে আলোকিত করার একটি দিক হলো যে, ইহূদীরা আল্লাহর কিতাবের যে সকল বিষয় গোপন করত তার অনেক কিছু তিনি প্রকাশ করেছেন। তাফসীর, তাবারী,৬/১৬১। উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পেলাম যে, কুরআন কারীমে সত্যের দিশারী, হেদায়াতের আলো ও সঠিক পথের নির্দেশক হিসেবে কুরআন কারীমকে নূরবলা হয়েছে। অনুরূপভাবে কোনো কোনো আয়াতে নূর শব্দের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো মুফাস্সির রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বা ইসলামকে বুঝানো হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। কুরআন কারীমের এ সকল বর্ণনা থেকে বুঝা যায় না যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.), কুরআন বা ইসলাম নূরের তৈরী বা নূর থেকে সৃষ্ট। আমরা বুঝতে পারি যে, এখানে কোনো সৃষ্ট, জড় বা মূর্ত নূর বা আলো বুঝানো হয় নি। রাসূলুল্লাহ সা., ইসলাম ও কুরআন কোনো জাগতিক, জড়, ইন্দ্রিয়গাহ্য বা মূর্ত আলো নয়। এ হলো বিমূর্ত, আত্মিক, আদর্শিক ও সত্যের আলোকবর্তিকা, যা মানুষের হৃদয়কে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে বিশ্বাস, সত্য ও সুপথের আলোয় জ্যোতির্ময় করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এব্যাপারে সঠিক আকীদা পোষণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন। এব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য পাঠককে ইসলামী আকীদা ও হাদীসের নামে জালিয়াতি বইটি পড়তে অনুরোধ করছি।
প্রশ্নঃ 218
কোন ধরণের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলে মুছাফির হওয়া যায় । এবং দুরুত্ব কতটুকু?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। কোন ব্যক্তি যদি ১৫ দিনের কমসময় অবস্থানের নিয়তে কমপক্ষে ৪৮ মাইল(যা কিলোমিটার হিসাবে প্রায় সাড়ে ৭৭ কিলোমিটার) দূরুত্বে গমন করার ইচ্ছাকরে, তাহলে শহরবাসী নিজ শহরের সীমা ও গ্রামবাসী নিজ ইউনিয়ন বা পৌরসভার সীমা অতিক্রম করার পর থেকে মুসাফির বলে গন্য হবে। তখন থেকেই নামাজের কসর সহ মুসাফিরের অন্যান্য হুকুম তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। (শামী-২/৫৯৯-৬০২, হিন্দিয়া-১/১৩৭, আহসানুল ফাতাওয়া-৪/৯৪-৯৫)
সফরের দূরুত্ব বিষয়ে আলেমদের মাছে কিছুটা মতভেদ আছে তবে গ্রহনযগ্য মতানুসারে ৪৮ মাইল বা সাড়ে ৭৭ কিলোমিটার। এবিষয়ক অধিকাংশ রেওয়ায়েতগুলোতে সফরের দূরুত্বসীমা প্রসঙ্গে আরবাআতু বুরুদ শব্দ (চার বুরদ)এসেছে। আর ৪ বারিদ হল, ৪৮ মাইল যা, কিলোমিটার হিসাবে প্রায় সাড়ে ৭৭ কিলোমিটার। ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণীত -
بلغه أن عبد الله بن عباس :كان يقصر الصلاة في مثل ما بين مكة والطائف وفي مثل ما بين مكة وعسفان وفي مثل ما بين مكة وجدة قال مالك وذلك أربعة برد وذلك أحب ما تقصر إلى فيه الصلاة قال مالك لا يقصر الذي يريد السفر الصلاة حتى يخرج من بيوت القرية ولا يتم حتى يدخل أول بيوت القرية أو يقارب ذلك
موطأ مالك ما يجب فيه قصر الصلاة
আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ সম্পর্কে জেনেছি যে, তিনি মক্কা ও তায়েফ, মক্কা ও আসফান, এবং মক্কা ও জিদ্দার সফরে নামাজ কসর করতেন। ইমাম মালেক রহঃ বলেন: এ দূরুত্ব হচ্ছে চার বারীদ। আমার মতে এটাই হচ্ছে কসরের দূরুত্ব। তিনি আরো বলেন: নিজ এলাকার বসতি থেকে বের হওয়ার পর কসর আরম্ভ করবে এবং পুনরায় বসতিতে ফিরে আসার পর পূর্ণ নামাজ পড়বে। ইমাম মালেক, মুয়াত্তা,বাব,মা ইযাজীবু ফীহি ক্বসরুস সালাত। উল্লেখ্য, মক্কা থেকে জিদ্দার দূরুত্ব হল ৭২ কিলোমিটার । মক্কা থেকে তায়েফের দূরুত্ব হল ৮৮ কিলোমিটার এবং মক্কা থেকে আসফানের দূরুত্ব হল ৮০ কিলোমিটার । বুখারীতে এসেছে-
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ ، وَابْنُ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُم ، يَقْصُرَانِ وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ وَهْيَ سِتَّةَ عَشَرَ فَرْسَخًا. َ.
باب فِي كَمْ يَقْصُرُ الصَّلاَة
অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ চার বারীদ দূরুত্বের সফরে নামাজ কসর করতেন এবং রোযা না রাখার অবকাশ গ্রহন করতেন। চার বারীদ হল ষোল ফারসাখ। বাব, ফী কাম ইউকসারুস সালাত। তিন মাইল সমান এক ফরসাখ। তাহলে ১৬ ফরসখ = ৪৮ মাইল। অন্য এক বর্ননায় এসেছে:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ سُئِلَ أنقصر ا لصلاة إلَى عَرَفَةَ قَالَ لَا وَلَكِنْ إلَى عُسْفَانَ وَإِلَى جُدَّةَ وَإِلَى الطَّائِفِ2 وَإِسْنَادُهُ صَحِيحٌ
التلخيص الحبير في تخريج أحاديث الرافعي الكبير
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল, আরাফার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করলে কি পথিমধ্যে কি নামাজ কসর করতে যাবে? তিনি উত্তরে বললেন না। তবে আসফান, জিদ্দা ইত্যাদি স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করলে নামাজ কসর করা যাবে। কিতাব,সালাতুল মুসাফীরনি। ইবনে হাজার হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তালখীসুর হাবীর, ২/৪৬। আল্লাহ আমাদেরকে সব আমল জেনে বুঝে করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 219
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা। প্রশ্ন : আমার গ্রামের বাড়ী রাজশাহী শহর হতে ৮০ - ৯০ কিঃমিঃ দূরে। গ্রামে আমার আব্বা-আম্মা ও অন্যান্য ভাইয়েরা বসবাস করে। আমি রাজশাহী শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করি। আমি ও আমার স্ত্রী গ্রামের বাড়ী গেলে নামায আমরা কি কসর করবো না স্বাভাবিক ভাবে পড়বো। কোরআন ও হাদীসের আলোকে বিস্তারিত ভাবে জানাবেন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটি করার জন্য আল্লাহ আপনাকে পুরুষ্কৃত করুন। নিচে এব্যাপারে আলোচনা করা হল,আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন, ইনশাল্লাহ। আপনি যেহেতু রাজশাহী শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং শহর থেকে আপনার গ্রমের বাড়ীর দূরুত্ব ৮০-৯০ কিলোমিটার তাই আপনি ১৫ দিনের কম সময় অবস্থানের নিয়তে গ্রমের বাড়ীতে গেলে নামাজ কসর করে পড়বেন যদি গ্রামের বাড়িতে আপনার জন্য নির্ধারিত পৃথক কোন ঘর না থাকে। আর যদি পৃথক কোন ঘর আপনার জন্য আপনি করে থাকেন বা আপনার পিতা করে রাখেন তাহলে আপনি পথে মুসাফির থাকবেন এবং গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পরে মুকিম হয়ে যাবেন এবং নামায পূর্ণকরে আদায় করবেন । এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে দেয়া হল। মূল আলোচনা সহজে বুঝার জন্য ভূমিকা স্বরুপ কয়েকটি জরুরী বিষয় জেনে রাখা দরকার। ১) মানুষ যেখানে জন্মগ্রহন করে বা স্থায়ীভাবে বসবাস করে সেটা হলো তার স্থায়ী বাসস্থান বা ওয়াতনে আসলী, আর যেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে, হোক পনেরো দিন বা তার বেশি সেটা হল তার ওয়াতনে ইক্বামাত বা অস্থায়ী বাসস্থান। ২) মুসাফির যখন সফর থেকে তার স্থায়ী বাসস্থানে ফিরে আসে তখন ইকামত বা অবস্থানের নিয়ত না করলেও মুকীম হয়ে যায়। ৩) যদি কেউ স্থায়ী বসবাসের স্থান ত্যাগ করে অন্য কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তাহলে সেটাই তার স্থায়ী বসবাসের স্থানের হিসাবে গন্য হবে এবং নামাজ পূর্ণভাবে আদায় করতে হবে। এবং আগের ওয়াতনে আসলী বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং আগের ওয়াতনে আসলী বা স্থায়ী বসবাসের স্থানে পনের দিনের কম সময়ের জন্য বেড়াতে গেলে সেখানে ব্যক্তি মুসাফির হিসাবে গন্য হবে এবং কসর পড়তে হবে। ৪) যদি ব্যাক্তি ওয়াতনে ইকামত বা অস্থায়ী অবস্থান স্থান থেকে সফর করে বা আরেকটি অবস্থানস্থান গ্রহন করে অথবা পূর্বের স্থায়ী বাসস্থানে ফিরে আসে তাহলে আগের অস্থায়ী বাসস্থান বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং আগের ওয়াতনে ইকামতে অল্প সময়ের জন্য ফিরে এলে কসর পড়তে হবে। কসরের দূরুত্বসীমা সফর বিষয়ক অধিকাংশ রেওয়ায়েতগুলোতে সফরের দূরুত্বসীমা প্রসঙ্গে আরবাআতু বুরুদ শব্দ (চার বুরদ)এসেছে। আর ৪ বারিদ হল, ৪৮ মাইল। ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণীত - بلغه أن عبد الله بن عباس :كان يقصر الصلاة في مثل ما بين مكة والطائف وفي مثل ما بين مكة وعسفان وفي مثل ما بين مكة وجدة قال مالك وذلك أربعة برد وذلك أحب ما تقصر إلى فيه الصلاة قال مالك لا يقصر الذي يريد السفر الصلاة حتى يخرج من بيوت القرية ولا يتم حتى يدخل أول بيوت القرية أو يقارب ذلك موطأ مالك ما يجب فيه قصر الصلاة আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ সম্পর্কে জেনেছি যে, তিনি মক্কা ও তায়েফ, মক্কা ও আসফান, এবং মক্কা ও জিদ্দার সফরে নামাজ কসর করতেন। ইমাম মালেক রহঃ বলেন: এ দূরুত্ব হচ্ছে চার বারীদ। আমার মতে এটাই হচ্ছে কসরের দূরুত্ব। তিনি আরো বলেন: নিজ এলাকার বসতি থেকে বের হওয়ার পর কসর আরম্ভ করবে এবং পুনরায় বসতিতে ফিরে আসার পর পূর্ণ নামাজ পড়বে। ইমাম মালেক, মুয়াত্তা,বাব,মা ইযাজীবু ফীহি ক্বসরুস সালাত। উল্লেখ্য, মক্কা থেকে জিদ্দার দূরুত্ব হল ৭২ কিলোমিটার । মক্কা থেকে তায়েফের দূরুত্ব হল ৮৮ কিলোমিটার এবং মক্কা থেকে আসফানের দূরুত্ব হল ৮০ কিলোমিটার । বুখারীতে এসেছে- وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ ، وَابْنُ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُم ، يَقْصُرَانِ وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ وَهْيَ سِتَّةَ عَشَرَ فَرْسَخًا. َ. باب فِي كَمْ يَقْصُرُ الصَّلاَة অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ চার বারীদ দূরুত্বের সফরে নামাজ কসর করতেন এবং রোযা না রাখার অবকাশ গ্রহন করতেন। চার বারীদ হল ষোল ফারসাখ। বাব, ফী কাম ইউকসারুস সালাত। তিন মাইল সমান এক ফরসাখ। তাহলে ১৬ ফরসখ = ৪৮ মাইল। অন্য এক বর্ননায় এসেছে: عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ سُئِلَ أنقصر ا لصلاة إلَى عَرَفَةَ قَالَ لَا وَلَكِنْ إلَى عُسْفَانَ وَإِلَى جُدَّةَ وَإِلَى الطَّائِفِ2 وَإِسْنَادُهُ صَحِيحٌ التلخيص الحبير في تخريج أحاديث الرافعي الكبير আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল, আরাফার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করলে কি পথিমধ্যে কি নামাজ কসর করতে যাবে? তিনি উত্তরে বললেন না। তবে আসফান, জিদ্দা ইত্যাদি স্থানের উদ্দেশ্যে সফর করলে নামাজ কসর করা যাবে। কিতাব,সালাতুল মুসাফীরনি। ইবনে হাজার হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তালখীসুর হাবীর, ২/৪৬। আর কিলোমিটারের হিসাবে ৪৮ মাইল প্রাই সাড়ে ৭৭ কিলোমিটারের সমান। কসরের সময়সীমা এব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ আছে। তবে গ্রহনযগ্য মত হল, সফরে কোন স্থানে পনেরো দিন বা তার বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে পূর্ণ নামাজ পড়বে। আর যদি পনের দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তাহলে কসর করবে। যদি এমন হয় যে, সুনির্দিষ্টভাবে কত দিন অবস্থান করবে তা নির্ধারন করা সম্ভব হল না। আর আজ যাব, কালা যাব করতে করতে পনের দিনের বেশি অতিবাহিত হয়ে গেল তবুও কসরই করতে থাকবে। আলমুগনী গ্রন্থে এসছে: عَنْ ابْنِ عُمَرَ ، وَابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّهُمَا قَالَا : إذَا قَدِمْتَ وَفِي نَفْسِكَ أَنْ تُقِيمَ بِهَا خَمْسَ عَشْرَةَ لَيْلَةً فَأَكْمِلْ الصَّلَاةَ . অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, যদি তুমি কোন স্থানে পনেরো দিন অবস্থানের নিয়ত কর তাহলে পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। কিতাব,সালাতুল মুসাফীরনি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন; من أقام خمسة عشر يوما أتم الصلاة যে পনের দিন অবস্থানের নিয়ত করল সে পূর্ণ নামাজ আদায় করবে জামে তিরমিযীতে, বাব, কাম তুকসারুস সালাত, তাহকীক, আহমাদ শাকের এবং আলবানী। কোন জায়গা থেকে কসর শুরু করব? মুসাফরি যখন শহররে মহল্লা বা গ্রামরে সীমানা অতক্রিম করবে এবং শহররে আবাসকি বাড়ঘির ছেড়ে যাবে তখন থেকে নামায কসর করতে পারবেন। কেননা নবী (সা.) মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় মাদীনার বাইরে জুলহুলায়ফা নামক স্থানে এসে কসর পড়েছেন। হাদীসে এসেছে হজরত আলী (রা.) বসরা থেকে সিফ্ফিনের উদ্দেশ্যে বের হলেন তিনি জোহর পড়লনে চার রাকাত। তারপর বললনে, আমরা যদি এ বাড়িটি অতিক্রম করতাম তবে দুই রাকাতই পড়তাম। (মুসান্নাফু আবি শাইবা : ৮২৫৩, তাহজবিুল আছার : ১১৭২, মুয়াত্তা মালকে, আছারুস সুনান : ৬৪/২)। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীন মানার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 220
বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়লে কোরআন পড়া হবে কি না?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে জাযাকাল্লাহ। নিম্নে এ বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করা হল, আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন ইনশাল্লাহ। বাংলা উচ্চারন দেখে পড়লে কোরআন পড়া তো হবেই না, বরং কোরআন পড়তে গিয়ে ঈমানবিরেধি কথা বলার কারনে ঈমান চলে যেতে পারে। কারন কোরআন একটি ভাষা, একটি কথা যার উচ্চারণের ভুলত্রুটির কারনে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন, ه এবং ح উভয়েরই বাংলা উচ্চারনে হা বলি বা লিখি। অথচ আরবীতে উভয়ের উচ্চারণস্থল ভিন্ন ভিন্ন(ه উচ্চরণ করতে হয় হলক বা কন্ঠনালির শুরু হতে আর ح উচ্চারণ করতে হয় কন্ঠনালির মাঝখান হতে) এবং উচ্চারণের এ ভিন্নতার কারণে অর্থের মাঝেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরুপ, আলহামদু লিল্লাহ বলার সময় যদি হা এর উচ্চরন কন্ঠনালির শুরু থেকে হয় তাহলে আল্লাহকে গালি দেয়া হল আর যদি উচ্চারনটি কন্ঠনালির মাঝখান থেকে হয় তাহলে আল্লাহর প্রশংসা করা হল। বিষয়টি শুধু এস্থানের সাথেই সীমাবদ্ধ নয় বরং কোরআনের প্রত্যেকটি স্থানের সাথেই গভীরভাবে জড়িত। সুতরাং এব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। কোরআন আরবীতেই শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা করবেন । যদি কোথাও ভুল হয়ে যায় তাহলে বান্দা আন্তরিক হলে আশা করা যায় আল্লাহ মাফ করবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহী শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 221
সাহরী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কেউ যদি অপবিত্র হয়ে যায় তাহলে তার রোযা হবে কি না।
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। আশা করি তাতে আপনি আপনার উত্তর পাবেন। ইনশাল্লাহ।
রোজা সহীহ হওয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। সুতরাং কেউ যদি স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে বা স্বপ্নদোষের মাধ্যমে জুনুবী বা বড় ধরনের অপবিত্র হয়ে যায় এবং এ অবস্থাতে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায় (যেমন কেউ ফজরের পূর্বে বা রাতে স্ত্রী সহবাস করে ঘুমিয়ে গেল এবং ফজরের আযানের পর ঘুম থেকে জাগ্রত হল বা সাহরী খেয়ে ঘুমিয়ে গেল এবং স্বপ্নদোষ হল। এরপর সে ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠল) তাহলে তার রোজার কোন ক্ষতি হবে না। এ মর্মে আয়েশা রাঃ এবং উম্মে সালামা রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে তারা বলেন:
كَانَ يُدْرِكُهُ الْفَجْرُ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ أَهْلِهِ ثُمَّ يَغْتَسِلُ وَيَصُوم
(অর্থ) রাসূল সা. স্ত্রী সহবাসের কারনে জুনুবী, এঅবস্থাতে ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যেত। এরপর তিনি গোছল করতেন এবং রোজা রাখতেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৯২৬। ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন: অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের আমল এ হাদীস অনুযায়ী ছিলো। তিরমিযী, আস সুনান,কিতাব, আস সাওম,বাব, আল জুনুবু ইদরিকুহুল ফাজরু। তবে এ অবস্থায় থেকে ফজরের নামাজ কাজা করা বা জামাত তরক করা একেবারেই অনুচিত । বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোছল সেরে পবিত্র হয়ে জামাতে শরীক হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 222
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, যে ব্যক্তি আত্যহত্যা করে মৃত্যুবরণ করে তার সাথে আমাদের মুয়ামালা বা আচরণ কেমন হবে দয়া করে কুরআন হাদীসের আলোকে জানাবেন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিম্নে উক্ত বিষয়ে আলোচনা করা হল। আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন ইনশাল্লাহ। আত্যহত্যা করার হুকুমঃ
আত্যহত্যা নিঃসন্দেহে কবীরা গুনাহ এবং মূলত এটি একটি কুফরী গোনাহ যার শাস্তি অনন্তকাল জাহান্নাম। একজন মানুষ আত্যহত্যা করার কারণ কয়েকটি হতে পারে। প্রথমতঃব্যক্তি যখন আত্যহত্যা করে তখন সে সাধারনত আলাহর রহমত হতে নিরাশ হয়েই এই জঘন্য পাপকাজে লিপ্ত হয়। কারণ কোনোরূপ আশা থাকলে কেউ আত্মহত্যা করেন না। যখন কেউ চিন্তা করে যে, আমার জীবনের উন্নতির, কল্যাণের বা ভালর কোনো আশা আর নেই তখনই সে আত্মহত্যা করে। আর এ হলো মহান আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কুফুরী। কোরআনে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَيْأَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না । কেবল মাত্র কাফের সম্প্রদায়ই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়। সূরা ইউসুফ,আয়াত-৮৭। দ্বিতীয়তঃ সে বৈধ মনে করে আত্যহত্যা করবে। এক্ষেত্রেও তার এ কাজ কোরআন হাদীসের দৃষ্টিতে কুফুরী হিসাবে বিবেচিত হবে। কোরআন ও হাদীসে হালালকে হারাম মনে করা এবং হারামকে হালাল বা বৈধ মনে করাকে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে এবং এটাকে কুফুরী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। তৃতীয়তঃ উক্তব্যক্তি নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এই ভয়াবহ অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। উপরের দুটি অবস্থায় আত্মহত্যাকারীর ক্ষমার কোনোই আশা থাকে না। তৃতীয় পর্যায়ের লোকটির ক্ষমার সামান্য একটু সম্ভাবনা থাকে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির বিষয়ে আমরা জানিনা যে, সে কোন অবস্থাতে আত্যহত্যার পথ বেছে নিল। সে যে অবস্থাতে বা যে কারনেই আত্যহত্যা করুক নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং কবীরাহ গুনাহ। রাসূল সা. আত্যহত্যাকারীর ব্যাপারে চিরদিন জাহান্নামে থাকার মত ভয়াবহ শাস্তির কথাও হাদীস শরীফে একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত এক হাদীসে রাসূল সা. বলেন:
مَن تردى من جبل فقتل نفسه فهو في نار جهنم يتردى فيه خالداً مخلداً فيها أبداً ، ومَن تحسَّى سمّاً فقتل نفسه فسمُّه في يده يتحساه في نار جهنم خالداً مخلداً فيها أبداً ، ومَن قتل نفسه بحديدة فحديدته في يده يجأ بها في بطنه في نار جهنم خالداً مخلداً فيها أبداً
অর্থঃ যে ব্যক্তি আত্যহত্যার উদ্দেশ্যে পাহাঢ় থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামের আগুনে চিরোদিন পড়তে থাকবে। আর যে বিষ পান করে আত্যহত্যা করবে বিষ তার হাতে থাকবে এবং জাহান্নামের আগুনে চিরদিন সে তা পান করতে থাকবে। আর যে লোহার টুকরা দিয়ে আত্যহত্যা করবে উক্ত লোহার টুকরা তার হাতে থাকবে এবং জাহান্নামের আগুনে সে চিরদিন তা পেটের ভিতর ঢুকাতে থাকবে। বুখারী,আস সহীহ, বাব, শুরবিস সাম্মি, হাদীস নং ৫৭৭৮। সাবেত ইবনে দহহাক রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে তিনি বলেন:
مَن قتل نفسه بشيء في الدنيا عذب به يوم القيامة অর্থঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন জিনিস দ্বারা আত্যহত্যা করল কিয়ামতের দিন তাকে তা দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। বুখারী, আস সাহীহ, হাদীস নং ৬৬৪৭। মুসলিম, আস সহীহ, হাদীস নং ৩১৬। জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ এর সূত্রে বর্ণীত একটি হাদীসে আছে:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : كان فيمن كان قبلكم رجل به جرح فجزع فأخذ سكيناً فحز بها يده فما رقأ الدم حتى مات . قال الله تعالى : بادرني عبدي بنفسه حرمت عليه الجنة
অর্থঃ তোমাদের পূর্বে একব্যক্তির শরীরে যখম ছিলো সে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ল একটি ছুরি দ্বারা নিজের হাত কেটে ফেলল এবং রক্ত বন্ধ হলনা। অবশেষে লোকটি মারা গেল। আল্লাহ তায়ালা বললেন: আমার বান্দা তাড়াহুড়া করেছে তার জন্য জান্নাত হারাম। বুখারী, আস সহীহ, হাদীস নং ৩৪৬৩। এ সকল হাদীস প্রমাণ করে যে, আত্মহত্যাকারীর জন্য মুক্তির আশা নেই। সে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। রাসূল সা. আত্যহত্যা কারীর জানাযার নামাজে শরীক হতে অস্বীকার করেন। জাবের ইবনে সামুরা রাঃ থেকে বর্ণীত তিনি বলেন:
أُتي النبي صلى الله عليه وسلم برجل قتل نفسه بمَشاقص فلم يصل عليه অর্থঃ তীর দ্বারা আত্যহত্যা করেছে এমন এক ব্যক্তিকে রাসূল সাঃ এর কাছে আনা হল ক্ন্তিু তিনি তার জানাযার নামাজ পড়লেন না। বুখারী আস সহীহ, বাব,তারকুস সালাতি আলা ক্বাতিলি নাফসিহী, হাদীস নং ২৩০৯। তার জানাযার নামাজঃ
ইমাম নববী রহঃ বলেন: উপরোক্ত হাদীসের আলোকে উমার ইবনে আব্দুল আজীজ এবং আওজায়ী রহঃ বলেন আত্যহত্যা কারীর জানাজার নামাজ পড়া যাবে না। পক্ষান্তরে হাসান বসরী, ইমাম নাখয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম শাফী রহঃ সহ অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে আত্যহত্যা কারীর জানাযার নামাজ পড়তে হবে। কেননা রাসূল সা. নিজে এমন ব্যক্তির জানাযার নামাজে শরীক না হলেও সাহাবয়ে কেরামকে এব্যাপারে অনুমতি প্রদান করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম তার জানাযার নামাজ পড়েছেন। যেমন তিনি ইসলামের শুরুর যুগে কেউ ঋনি হয়ে মারা গেলে (ঋন আদায়ে অবহেলা করার ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য) তার জানাযায় শরীক হতেন না এবং সাহাবায়ে কেরামকে তার জানাযায় শরীক হতে আদেশ করতেন। তিনি বলতেন: صَلُّوا عَلَى صَاحِبكُمْ (তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযার নামাজ পড়)। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ২২৮৯। কাজী ইয়াজ বলেন, সকল উলামায়ে কেরামের মত হল, প্রত্যেক মুসলমানের জানাযার নামাজ পড়া হবে। ব্যাক্তি হোক হদের শাস্তি প্রাপ্ত, রজমকৃত, আত্যহত্যাকারী কিংবা অবৈধ সন্তান। (শরহুন নববী আলা মুসলিম, ৩/৪০৫। কিতাব, আলজানাইয, বাব, তারকুস সালাত আলাল কাতিলি নাফসিহি। (শামিলা)
এ হিসাবে উলামায়ে কেরামের মতে সুন্নাত হল, আলেম বা শ্রেষ্ঠব্যাক্তিরা আত্যহত্যাকারীর জানাযায শরীক হবেনা বরং সাধারন মানুষদের মাধ্যমে তার জানাযার নামাজ সম্পূর্ণ করা হবে। চিরোদিন জাহান্নামে থাকাঃ
উপরের হাদীসগুলোতে আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ .... বারবার বলেছেন যে, আত্মহত্যাকারী অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। এর বিপরীতে মূলত কোনো হাদীস নেই। তবে দু-একটি হাীসের প্রাসঙ্গিক নিরর্শনা ও ইসলামের মূলনীতির আলোকে আলিমগণ বলেছেন যে, যে ব্যক্তি তাওহীদের উপর মৃত্যুবরণ করবে সে চিরদিন জাহান্নামে থাকবে না যদিও সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। উপরে উাল্লেখিত হাদীসগুলোতে আত্যহত্যাকারীর চিরদিন জাহান্নামে থাকার যে কথা এসেছে উলামায়ে কেরাম এ হাদীসের ব্যাক্ষায় বলেন, যে ব্যক্তি বৈধমনে করে আত্যহত্যা করবে সে তা বৈধ মনে করার কারণে কাফের হয়ে যাবে। অথবা যদি কেউ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে আত্মহত্যা করে তবে তাকে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকতে হবে। যদি সে এটাকে বৈধ মনে না করে বা আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ মহাপাপ করে ফেলে তবে তার মুক্তির আশা করা যায়। আল্লাহর ইচ্ছায় সে একদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে ইনশাল্লাহ। কারন কোরআনে মহান দয়াময় আল্লাহ একমাত্র শিরক ছাড়া অন্য সকল গুনাহ মাফ করে দেয়ার ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
(অর্থঃ) নিশ্চই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার বিষয়কে ক্ষমা করবেন না। আর তিনি অন্যান্য গুনাহের ব্যাপারে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। সূরা নিসা-১১৬। আর আত্মহত্যা শিরক বা কুফর পর্ায়ে না গেলে আমার আশা করতে দয়াময় আল্লাহ তাকে একদিন মাফ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াঃ
হা তাদের জন্য দোয়া করা যেতে পারে। একটি হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ এমন ব্যাক্তির জন্য দোয়া করেছেন। হযরত তুফাইল ইবরে আমর দাউসি রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে এসেছে:
: فلما هاجر النبي صلى الله عليه وسلم إلى المدينة هاجر إليه الطفيل بن عمرو وهاجر معه رجل من قومه فاجتووا المدينة فمرض فجزع فأخذ مشاقص له فقطع بها براجمه فشخبت يداه حتى مات، فرآه الطفيل بن عمرو في منامه فرآه وهيئته حسنة، ورآه مغطيا يديه! فقال له: ما صنع بك ربك؟ فقال: غفر لي بهجرتي إلى نبيه صلى الله عليه وسلم. فقال: ما لي أراك مغطيا يديك؟ قال: قيل لي: لن نصلح منك ما أفسدت. فقصها الطفيل على رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اللهم وليديه فاغفر...
অর্থঃ যখন নবী সাঃ মদীনায় হিজরত করলেন তুফাইল ইবরে আমর রাঃ রাসূল সাঃ এর কাছে হিজরত করলেন এবং তার গোত্রের একটি লোক তার সাথে হিজরত করল। যখন তারা মদীনায় পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হল তখন সে কয়েকটি তির নিয়ে তা দ্বারা আঙ্গুলের গিরা কেটে ফেলল এবং দুইহাতা দিয়ে বিরামহীনভাবে রক্ত ঝরতে লাগল এবং অবশেষে সে মৃত্যুবরণ করল। হযরত তুফাইল রাঃ স্বপ্নে তাকে ভাল অবস্থায় দেখতে পেলেন। তবে তার দুই হাত ঢাকা ছিলো। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার প্রতিপালক তোমার সাথে কেমন আচরণ করেছেন। উত্তরে তিনি বললেন রাসূল সাঃ এর কাছে হিজরত করার কারণে আমাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। তখন তুফাইল রাঃ তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল তোমার হাত ঢাকা দেখছি কেন? তিনি বললেন, আমাকে বলা হল, তোমার যে অংশ তুমি নষ্ট করেছে তা আমি ঠিক করে দিবনা। রাসূল সাঃ এর কাছে এঘটনা শোনানের পর রাসূল সাঃ আল্লাহর কাছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে বললেন, হে আল্লাহ তুমি তার দুই হাতকে মাফ করে দাও। মুসলিম, আস সহীহ খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৭৬ হাদীস নং ৩২৬। মোটকথা, আত্যহত্যা অত্যন্ত মারত্নক একটি কবীরাহ গুনাহ। এব্যাপারে রাসূল সা. এর পক্ষথেকে চিরদিন জাহান্নামে থাকার মত কঠোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি কাজটি কুফুরী হিসাবে গণ্য হওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যদি আল্লাহ দয়া করে তাকে অন্য কোন ভাল কাজের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করেন তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। তবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা একেবারেই কম। কিন্তু কেউ যদি একাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে তার জন্য দোয়া করাতে কোন দোষ নেই। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে মাফ করলেও করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম মৃত্যু দান করুন। আমীন।
প্রশ্নঃ 223
আস- সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, কবর, মাজার, রওজা এবং জিয়ারত এগুলো কি আরবী শব্দ? তাহলে এগুলোর সহজ-সরল বাংলা অর্থগুলো কী হবে এবং এগুলোর সংজ্ঞাগুলো কী হবে দয়া করে জানাবেন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত শব্দগুলো আরবী। নিচে শব্দগুলোর অর্থ দেয়া হল। জিয়ারত = পরিদর্শন করা, সাক্ষাত করা । মাজার = পরিদর্শনস্থল। যে সমস্ত ওলী আওলিয়াদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মানুষ সেখানে গমন করে থাকে মাজার বলতে আমরা সে সমস্ত কবর স্থানকে বুঝে থাকি।কবর = যেখানে মৃতব্যক্তিকে দাফন করা হয়। রওজা = বাগান, কবর।
প্রশ্নঃ 224
আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা কোন ধর্মের মানুষ ছিল?
20 Dec 2025
আউস ও খাজরাজ গেত্রের লোকেরা আরবের অন্যান্য মানুষদের মতই ইব্রাহীম আঃ এর ধর্মের অনুসারী ছিলেন। এধর্মের ভিতরে তারা বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি সাধন করেন এবং তারা শিরকে লিপ্ত হন। তারা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য ফিরিশতা, জিন, নবী, ওলীগণ, তাদের প্রতিমা বা স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও দ্রব্যের পুজা করতেন। এছাড়া নানাবিধ কুসংস্কার তাদের মধ্যে প্রসার লাভ করে।
প্রশ্নঃ 225
জিনা প্রমাণিত হওয়ার জন্য ৪ জন স্বাক্ষী কেন প্রয়োজন?
20 Dec 2025
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল। আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। মহান আল্লাহ সমস্ত মাখলুকাতের মধ্য হতে মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ লাভ করেছে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকাতের সুমহান মর্যাদা। উদ্দেশ্য একটাই, মানুষ তাঁর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর ইবাদত করবে। সবসময় সবক্ষেত্রে তাঁর এবং তাঁর রাসূল সাঃ এর দিকনির্দেশনা মেনে চলবে। সর্বাত্নক চেষ্টা করবে নিজেকে জান্নাতিদের সফলকাম কাঁতারে শামিল করার জন্য। শতচেষ্টার পরেও প্রকাশ্য দুশমন শয়তানের প্ররোচনায়, প্রবৃত্তির তাড়নায় কখন কখন মানুষ তার প্রতিপালককে ভুলে যায়। বিচ্যুত হয় সঠিক পথ থেকে, আর লিপ্ত হয় নানা রকম অপকর্মে। হাতছাড়া করে ফেলে শ্রেষ্ঠত্যের মহান গুন। তারপরেও ইসলাম চাই মানুষ তার পাপ কর্মের ব্যাপারে লজ্জিত আর অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসুক আল্লাহর দিকে। তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফিরে পাক তার হারানো সম্মান। আর তার পাপকর্মটি গোপন থাকুক অন্যান্য মানুষের নিকট। কেউ যদি তার দোষত্রুটি জেনে ফেলে তাকে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে উক্ত দোষ গোপন রাখতে। উপরোন্ত তা গোপন রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এক হাদীসে তিনি বলেন:
مَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَة
যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ২৪৪২। মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ৬৭৪৩। পাশাপাশি কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে দোষচর্চা করতে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলে কারীম সাঃ বলেন:
فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ
অর্থঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের সম্মান পরষ্পরের জন্য হারাম (সম্মানিত)। বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ৬৭। মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ৪৪৭৮। কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ কারো দোষচর্চা বা গীবত করাকে মৃতভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছে।এরশাদ হয়েছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ
অর্থঃ হে মুমিনগণ ! তোমরা অধিকাংশ ধারনা থেকে বিরত থাক ; কারণ কিছু কিছু ধারণা পাপ। আর তোমরা একে অপরের দোষ তালাশ করনা। আর কেউ যেন কারো পশ্চাতে দোষচর্চা না করে। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? বস্তুত তোমরা তো এটাকে অপছন্দই করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ; আল্লাহ তাওবা কবুল কারী, পরম দয়ালু। সূরা-হুজরাত, আয়াত-১২। অনুরুপভাবে অযৌক্তিক বা বিনা কারনে কাউকে হত্যা করার ব্যাপারে ইসলাম ঘোর বিরোধী। কোরআনে কারীমে বিনা কারনে একজনের হত্যাকে সমস্ত মানুষকে হত্যা করার সাথে তুলনা করেছে। মহান আল্লাহ বলেন:
مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا
অর্থঃ যে ব্যাক্তি কোন হত্যাকান্ড ছাড়া বা দুনিয়ায় কোন ধবংসাত্ম ক কাজ করা ছাড়া কাউকে হত্যা করল সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করল। সূরা মায়িদা, আয়াত নং ৩২। কোন অপরাধ অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন বিচারকাজ সম্পাদন করার জন্য ইসলাম উক্ত বিষয়ে নিশ্চিত হতে বা শক্তিশালী করতে সাক্ষীর ব্যাবস্থা করেছে। সকল ক্ষেত্রে এক, দুই বা তিনজন সাক্ষী নির্ধারণ করলেও যিনার ক্ষেত্রে চারজন সাক্ষীর শর্তরোপ করা হয়েছে। কোরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে :
وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِنْكُمْ
অর্থঃ তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হতে চারজন সাক্ষী তলব কর। সূরা নিসা, আয়াত-১৫। চারজনের কম হলে উক্ত সাক্ষ্য গ্রহনযগ্য তো হবেই না, উল্টা তাদের উপরই অপবাদের শাস্তি হিসাবে আশিবার বেত্রাঘাতের বিধান দিয়েছে ইসলাম । এপ্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন:
لَوْلَا جَاءُوا عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا بِالشُّهَدَاءِ فَأُولَئِكَ عِنْدَ اللَّهِ هُمُ الْكَاذِبُونَ
অর্থঃ তারা কেন এব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি সে কারনে তারা আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী। সূরা নূর,আয়াত-১৩। অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
অর্থঃ যাহার সাধ্ববী নারীদের ব্যাপারে অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনা, তাদেরবে আশিটি বেত্রঘাত করবে এবং কখন তাদের সাক্ষ্য গ্রহন করবে না । মুমিনের জন্য এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সূরা নূর, আয়াত-৪। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত একটি হাদীসে আছে
سعد بن عبادة قال لرسول الله صلى الله عليه وسلم: يا رسول الله، أرأيت إن وجدت مع امرأتي رجلا، أمهل حتى آتي بأربعة شهداء؟ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: نعم হযরত সাদ ইবনে উবাদাহ রাঃ রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাঃ আমি যদি আমার স্ত্রীর সাথে কাউকে দেখি তাহলে আমি কি চারজন সাক্ষী উপস্থিত করা পর্যন্ত ছেড়ে দিব? উত্তরে রাসূল সাঃ বললেন : হা।শায়েখ শুয়াইব আরনাউত বলেন; হাদীসের সনদটি সহীহ। সহী ইবনে হিব্বান, তাহকীক, শুয়াইব আরনাউত, হাদীস নং ৪৪০৯। মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৪৯৮। কাউকে কোন অপরাধে লিপ্ত দেখে তাকে বিচারকের নিকট সোপর্দ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আতপক্ষ সমর্থনের মাধ্যমে বিচার ছাড়া কেউ শাস্তি দিতে পারবে না। এ প্রক্রিয়ার বাইরে স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধান বিচারপতিও কাউকে শাস্তি দিতে পারবে না । খলীফা উমার রাঃ আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ কে বলেন:
لَوْ رَأَيْتَ رَجُلاً عَلَى حَدٍّ زِنًا ، أَوْ سَرِقَةٍ وَأَنْتَ أَمِيرٌ فَقَالَ شَهَادَتُكَ شَهَادَةُ رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ قَالَ صَدَقْتَ
অর্থঃ আপনি শাসক থাকা অবস্থায় যদি কাউক ব্যভিচারের অপরাধে বা চুরির অপরাধে রত দেখতে পান তাহলে তার বিচারের বিধান কী? ( নিজের দেখাতেই কি বিচার করতে পারবেন?) আব্দুর রহমান রাঃ বললেন, আপনার সাক্ষ্যও একজন সাধারন মুসলিমের সাক্ষ্যের সমান। উমার রাঃ বলেন,আপনি ঠিকই বলেছেন। বুখারী আস-সহীহ, কিতাবুল ফিতান, বাব, আশ্ শাহাাদাত তাকুনু ইনদাল হাকীম। অর্থৎ রাষ্ট্রপ্রধান নিজের হাতে বিচার তুলে নিতে পারবেন না । এমনকি তার সাক্ষ্যের অতিরিক্ত কোন মূল্যও নেই। রাষ্ট্রপ্রধানের একার সাক্ষ্যে কোন বিচার হবে না । বিধিমোতাবেক দুই জন বা চারজন সাক্ষীর কমে বিচারক কারো বিচার করতে পারবেন না। অন্য ঘটনায় উমার রাঃ রাত্রে মদীনায় ঘোরাফেরা করার সময় একব্যাক্তিকে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখতে পান। তিনি পরদিন সাহাবীগণকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাউকে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখতে পান তাহলে তিনি কি শাস্তি প্রদান করতে পারবেন? তখন আলী রাঃ বলেন, কখনই না। আপনি ছাড়া আরো তিনজন প্রত্যক্ষ্য সাক্ষী যদি অপরাধের সাক্ষ্য না দেয় তাহলে আপনার উপরের মিথ্যা অপবাদের শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। আল কানযুল আকবার ১/২২৭ । এটা স্পষ্ট বিষয় যে, চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্যর ভিত্তিতে জিনা প্রমাণীত হওয়া এক বিরাট কঠিন বিষয়। একারনেই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন:ইসলামের শুরু থেকে এপর্যন্ত সাক্ষ্যর ভিত্তিতে জিনা প্রমাণীত হয়নি। যা হয়েছে তা স্বীকরোক্তির ভিত্তিতে হয়েছে। এব্যাপারে ইসলামের সর্বোচ্চ এ সতর্কতা গ্রহন বা কঠিন শর্তারোপের কারন হল, মানুষের জীবন অতি মূল্যাবান। আর ইসলামের উদ্দে্শ্য হল, অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করা, অপরাধীকে নির্মুল করা নয়। বিচারকের ভুলে অপরাধী বেচে যাক কিন্তু তার ভুলে যেন নিরাপরাধ শাস্তি না পাই এবং কম অপরাধী বেশি শাস্তি না পাই। এজন্য ইসলামে হুদুদকে কঠিন করা হয়েছে এবং হুদুদের ব্যাবস্থাপনা আরো বেশি কঠিন করা হেয়েছে। বিচারক সর্বাত্নক চেষ্টা করবে মৃত্যুদন্ড না দেয়ার জন্য। ফুক্বাহায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, অপরাধের পূর্ণতার ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ থাকলেও আর মৃত্যুদন্ড দেয়া যাবে না। কারন, বিচারকের ভুলে নিরাপরাধের বা কম অপরাধীর বেশি শাস্তি হওয়ার চেয়ে অপরাধীর মুক্তি বা বেশি অপরাধের জন্য কম শাস্তি বাঞ্চনীয়। তারপরেও যখন এই জঘণ্য কর্মটি চারজন ব্যাক্তি প্রত্যক্ষ্য করতে সক্ষম হয় তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যাক্তি অধঃপতনের সর্বনিম্ম পর্যয়ে পৌছে গেছে এবং এই কর্মটি প্রকাশ্যে করেছে। এই অবস্থায় ব্যাপক স্বার্থে ইসলাম তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় দেয়ার অনুমতি প্রদান করে। আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জন করার তাওফীক দান করুন।
প্রশ্নঃ 226
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মুহতারাম, রুকু এবং সেজদায় সর্বাধিক কতবার তাসবীহ পাঠ করা যায়? জোড় বিজোড়ের ব্যাপারে কোরআন হাদীস কি বলে?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা করা হল । আশা করি আপনি তাতে আপনার উত্তর খুঁজে পাবেন। ইনশাল্লাহ। রুকু এবং সেজদায় কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করা সুন্নাত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণীত আছে যে, রাসূল সাঃ বলেন:
: إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيمِ وَذَلِكَ أَدْنَاهُ وَإِذَا سَجَدَ فَلْيَقُلْ سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلَى ثَلاَثًا وَذَلِكَ أَدْنَاهُ
অর্থঃ যখন তোমাদের কেউ রুকু করবে তখন সে যেন তিনবার সুবহানা রাব্বীয়াল আযীম বলে। আর এটা হল সর্বনিম্ম পরিমান। আর যখন সেজদা করে তখন সে যেন তিনবার বলে সুবহানা রাব্বীয়াল আলা। আর এটা হল সর্বনিম্ম পরিমান। সুনানে আবু দাউদ, কিতাব,আস-সালাত, বাব, মা ইয়াকুলু ফিররুকুঈ ওয়াস সুজুদী। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে একবার পড়লেও যথেষ্ঠ হবে। এক্ষেত্রে ফরয হল রুকু এবং সেজদায় এক তাসবীহ পরিমান সময় কাটানো। হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত এক হাদীসে এসেছে
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّي كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِي فَقَالَ إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلاَةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا وَافْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلاَتِكَ كُلِّهَا.
অর্থঃ রাসূল সাঃ মসজিদে প্রবেশ করার পর এক ব্যাক্তি প্রবেশ করে রাসূল সাঃ কে সালাম দিলেন এবং রাসূল সাঃ সালামের জবাব দিয়ে বলেন:ফিরে গিয়ে নামাজ পড় কেননা তুমি নামাজ পড়নি। লোকটি ফিরে গিয়ে পূর্বের ন্যায় আবার নামাজ আদায় করলেন এবং ফিরে এসে রাসূল সাঃ কে সালাম প্রদান করলেন। রাসূল সাঃ আবার লোকটিকে বললেন: তুমি ফিরে গিয়ে নামাজ পড়। কেননা তুমি নামাজ পড়নি। এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর লোকটি বললেন: ঐ সত্বার কসম, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, আমি এর চেয়ে সুন্দর করে নামাজ আদায় করতে পারিনা। সুতরাং আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন রাসূল সাঃ বললেন: যখন তুমি নামাজে দাড়াবে তখন তাকবির দিবে। এরপর কোরআনের যে অংশ তোমার কাছে সহজ সে অংশ থেকে পড়বে। অতঃপর রুকু করবে শান্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত, তারপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাড়াবে। এরপর সেজদা করবে শান্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে শান্ত হয়ে বসবে। আর পুরা নামাজ এভাবে আদায় করবে।বুখারী,আস-সহীহ, হাদীস নং ৭৫৭। তবে সর্বাধিক কতবার পড়া যায় এব্যাপারে হাদীসে সীমাবদ্ধ করা হয়নি । যে যেই পরিমান পড়বে সে সেই পরিমান সাওয়াবের অধিকারী হবে। ইনশাল্লাহ। তাছাড়া রাসূলে কারীম সাঃ রুকু এবং সেজদায় অধিক সময় ব্যায় করতেন বলে বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়। এ অধিক সময়ে তিনি কতবার তাসবীহ পাঠ করেছে তা গননা করাও একটি দুঃসাধ্য ব্যাপার। অনুরুপভাবে জোড়-বিজোড়ের ব্যাপারেও কোরআন ও নির্ভরযগ্য কোন হাদীসে কিছু বলা হয়নি। একটি হাদীসে এসেছে رُوِيَ أَنَّهُ عليه السلام كَانَ يَخْتِمُ بِالْوِتْرِ يَعْنِي فِي تَسْبِيحَاتِ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ،
অর্থঃ বর্ণীত আছে যে, রাসূল সাঃ বিজোড়ের মাধ্যমে শেষ করতেন।অর্থাৎ রুকু ও সেজদার তাসবীহ এর ক্ষেত্রে। হাদীসটি মারগিনানী রহঃ তার হেদায়া গ্রন্থে আল আওকাত তুকরাহু ফিহাস সালাত পরিচ্ছেদে এনেছেন। আল্লামা ঝাইলায়ী রহঃ হাদীসটির ব্যাপারে বলেন: গরীব জিদ্দান। নাসবুর রাইয়াহ, বাবু সিফাতিস সালাহ। আর ইবনে হাজার আস ক্বালানী রহঃ বলেন: লাম আজিদহু (হাদীসটি আমি পাইনি)। আদ দিরায়াহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৭, হাদীস নং ১৭৬। হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণীত আছে তিনি বলেন:
ما رأيت أحدا أشبه صلاة بصلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم من هذا الفتى يعني عمر بن عبد العزيز فحزرنا في ركوعه عشر تسبيحات وفي سجوده عشر تسبيحات
অর্থঃ আমি রাসূল সাঃ এর নামাজের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নামাজ এই যুবক ছাড়া (অর্থৎ ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহঃ) কাউকে পড়তে দেখিনি। আমি তার রুকুতে দশ তাসবীহ গণনা করলাম এবং সেজদায় দশ তাসবীহ গণনা করলাম। নাসায়ী, আস-সুনান, তাহকীক, আলবানী রহঃ, হাদীস নং ১১৩৫। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সবক্ষেত্রে তাাঁর রাসূল সাঃ এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন । আর সঠিক বিষয় একমাত্র তিনিই ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ 227
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। শায়েখ, কোন একটি ভোজসভার কিছু লোক খাবারের পর একটি ড্রামে হাত ধুলে উক্ত ড্রামের পানি দ্বারা অজু করা যাবে কিনা?
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে মুবারকবাদ। নিম্নে আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা হল। আশা করি আপনি তাতে আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন । ইনশাল্লাহ। যদি এক দুইজন ব্যাক্তি হাত ধোয় তাহলে পানির রং, ঘ্রাণ, স্বাদ পরিবর্তন না হওয়ার কারনে তা দ্বারা অজু করা বৈধ হবে । কিন্তু যদি এমন হয় যে, হাত ধোয়ার কারনে পানির রং, ঘ্রাণ, স্বাদ পরিবর্তন হয়েগেছে তাহলে উক্ত পানি দ্বার পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ হবে না।
প্রশ্নঃ 228
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হচ্ছে নামায এ আমরা সেজদাই যে দুয়া গুলো পরি, আমি কি সে দুয়া গুলর পাশাপাশি নিজের মত করে বাংলাতে দুয়া করতে পারব। দয়া করে উত্তর দিবেন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন আমিন।
20 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। ভাই আপনি এই ভিডিওটা দেখুন আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে আশা করি। সিজদায় বাংলা দুআ করা যাবে কি?
প্রশ্নঃ 229
আসসালামু আলাইকুম,।
একজনের বাবা এবং বোন যেনায় জরিত ১৫ বছর যাবত সে দেখছে। তার বোনের পেটে তার বাবার একটা সন্তানও হয় সেটাকে তারা এবর্সন করে।তার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে মেয়েও আছে এখন ও তারা বাবা মেয়ে যেনা করে৷ এটা সে জানে যে এটা কেউ জানে না। এখন সে কি তার পরিবার থেকে আলাদা থাকবে। একজন দ্বায়ী বলেছে তার পরিবার তার জন্য হারাম।তাকে চলে যেতে বলছে। কিন্ত সে তো বলতেছে তারা যায় করুক তাদের মাঝেই তো জান্নাত।
তার পরিবারের সবাই প্রায় যেনাই লিপ্ত। তার বড় বোনের একটা মেয়ে আছে। হয়ত তার নানাই তার বাবা।
04 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ঐ ব্যক্তি অবিলম্বে ঐ পরিবার ছেড়ে চলে যাবে। এই পাপিষ্ঠ পরিবারে থাকলে সেও পাপী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং সে অন্য কোথাও বসবাস করবে। এবং প্রয়োজন ছাড়া তাদের সাথে যোগাযোগ রাখারও দরকার নেই।
প্রশ্নঃ 230
একদিন জুমার নামাজের সময় ইমাম সাহেব ভুল করেন, সাথে সাথে কিছু মুসল্লী তকবির দেয় এবং ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে সেজদাহে সাহু দিয়ে দিয়ে নামাজ শেষ করেন। কিন্তু সালাম ফিরানোর পরে কিছু মুসল্লী নামাজ দ্বিতীয় বার পড়তে জোর করে এবং ইমাম তাদের কথায় দ্বিতীয় বার নামাজ পড়ান। আমি দ্বিতীয় বার নামাজ পড়ি নাই।
04 Dec 2025
ভুল হলে সাজদায়ে সাহু দিলে নামায সহীহ হবে। সুতরাং নতুন করে আর পড়ার দরকার নেই। ইমাম সাহেবে সাথে জোরাজুরি করা ঠিক হয় নি।
প্রশ্নঃ 231
আসসালামুআলাইকুম,আমি একজন মেয়ে।আমরা তিন বোন ।কোন ভাই নেই।দুইবোনের বিয়ে হয়ে গেছে।আমার আব্বুর বয়স হয়েছে । আমরা তিন বোন ছাড়া আব্ব্বু আম্মুকে দেখার আর কেউ নেই।আপুরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।তারা খেয়াল রাখতে পারেনা।আব্বু চাচ্ছেন আমি যেন পড়াশোনাটা কম্পিলিট করে বিসিএস পরীক্ষা দেই।আমি পরিপূর্ণ পর্দা করি।আমার প্রশ্নটা হলো ,আমি যদি নিজেকে ফেতনা মুক্ত রেখে,সরকারী চাকরী করতে চাই সেটা কি জায়েজ হবে।আমি স্কুল,কলেজের পড়াশোনা পর্দা ঠিক রেখেই সম্পন্ন করেছি আলহামদুলিল্লাহ
03 Dec 2025
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। চাকুরী করা ছাড়া যদি আপনার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে চাকুরী করতে পারেন। বিয়ের পরে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। বাইরে কাজ করা মূলত পুরুষদের কাজ। বিশেষ জরুরী পরিস্থিতিতে মেয়েরা পূর্ণ পর্দার সাথে বাইরে কাজ করতে পারে। বিস্তারিত জানতে আমাদের দেয়া 5387 নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।